জিহাদের জন্য দল গঠন করা, সৎ কাজে একে অপরকে সাহায্য করার অন্তুর্ভুক্ত, যার নির্দেশ কুরআন-সুন্নাহ আমাদেরকে দিয়েছে। মক্কার কিছু লোক মাজলুমকে সাহায্য করা, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা ইত্যাদি সৎ কাজের জন্য দল গঠন করেছিল। ইতিহাসে যা হিলফুল ফুযুল বা হিলফুল মুতাইয়াবিন নামে প্রসিদ্ধ। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাতে নবুওয়াত প্রাপ্তির পূর্বে তাতে অংশগ্রহণ করেছেন এবং রাসুল বলেছেন, যদি ইসলামের যমানায়ও আমাকে এমন কোন চুক্তির দিকে আহ্বান জানানো হয়, তবে আমি তাতে সাড়া দিবো। -দেুখুন, মুসনাদে আহমদ, ১৬৫৫ ফাতহুল বারী, ৪/৪৭৩ দারুল ফিকর। যাই হোক, এ বিষয়ে বিস্তারিত দলিলাদি পূর্বেও সহ লেখা হয়েছে, আমি সেগুলোর লিংক প্রবন্ধের শেষে দিয়ে দিবো ইনশাআল্লাহ।
আমার আজকের প্রবন্ধের উদ্দেশ্য হলো, যারা জিহাদের জন্য তানযীম গঠনকে নাজায়েয বলেন, তাদের সংশয় নিরসন করা। যারা এ সংশয় ছড়ান তারা নিম্নোক্ত হাদিস দিয়ে দলিল দেয়ার চেষ্টা করেন,
“হুযাইফাহ ইবনু ইয়ামান রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, লোকেরা রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কল্যাণের বিষয়াবলী জিজ্ঞেস করত। কিন্তু আমি তাঁকে অকল্যাণের বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতাম এ ভয়ে যে, অকল্যাণ আমাকে পেয়ে না বসে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা তো জাহিলিয়্যাত ও অকল্যাণের মাঝে ছিলাম। এরপর আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে এ কল্যাণের মধ্যে নিয়ে আসলেন। এ কল্যাণের পর আবারও কি অকল্যাণ আসবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তবে এর মধ্যে কিছুটা অসচ্ছতা থাকবে। আমি প্রশ্ন করলাম, সেই অসচ্ছতা কিরূপ? তিনি বললেন, একটা জামাত আমার তরীকা ছেড়ে লোকদেরকে অন্য পথে পরিচালিত করবে। তাদের থেকে ভাল কাজও দেখবে এবং মন্দ কাজও দেখবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, সে কল্যাণের পর কি আবার অকল্যাণ আসবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। জাহান্নামের দিকে আহ্বানকারী কিছু লোকের আবির্ভাব ঘটবে। যে ব্যক্তি তাদের আহ্বানে সাড়া দেবে, তাকে তারা জাহান্নামে নিক্ষেপ করে ছাড়বে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের নিকট তাদের বিবরণ প্রদান করুন (যেন আমরা তাদেরকে চিনতে পারি)। তিনি বললেন, তারা আমাদের লোকই এবং আমাদের ভাষায়ই কথা বলবে। আমি বললাম, যদি আমি সেই যমানা পাই তবে আমি কি করবো? তিনি বললেন, মুসলিমদের জামা‘আত ও তাদের ইমামকে আঁকড়ে থাকবে। আমি আরজ করলাম, যদি তখন মুসলিমদের কোন জামাত ও ইমাম না থাকে? তিনি বললেন, তাহলে তুমি তখন ঐ সকল দল পরিত্যাগ করে আলাদা হয়ে যাবে। এ কারণে যদি কোন গাছের শিকড় কামড়িয়ে পড়ে থাকতে হয়-তাহলেও। যতক্ষণ না সে (বিচ্ছিন্ন) অবস্থায় তোমার মৃত্যু উপস্থিত হয়।” – সহিহ বুখারী, কিতাবুল ফিতান, হাদিস নং ৬৬৭৩
তারা এ হাদিসের ভিত্তিতে দাবী করেন, মুসলমানদের যখন ইমাম থাকবে না, তখন জিহাদের জন্য কোন দল বা তানযীম গঠন করা যাবে না, বরং সব দল থেকে পৃথক থাকতে হবে। কিন্তু এ কথাটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং তা হাদিসের মনগড়া ব্যাখ্যা।
সহিহ মুসলিমে আবু সাল্লাম রহ. এর সূত্রে হুযাইফা রাযি. এর হাদিসটি এভাবে এসেছে,
“আমার পরে এমন শাসকরা আসবে যারা আমার আদর্শের অনুসরণ করবে না, আমার সুন্নাহ অনুযায়ী চলবে না। তাদের মাঝে এমন কিছু লোকও থাকবে যারা হবে মানুষরূপী শয়তান। (হুযাইফা রাযি. বলেন,) আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, যদি আমি সেই যমানা পাই তবে তখন আমার করণীয় কি? রাসূল বললেন, তুমি আমিরের আনুগত্য করবে, যদিও সে তোমার পিঠে আঘাত করে এবং তোমার ধন-সম্পদ কেড়ে নেয়, তবুও তুমি তার আনুগত্য করো।” -সহিহ মুসলিম, ১৮৪৭
ইমাম বুখারী হাদিসটির শিরোনাম দিয়েছেন এভাবে,
“জামাত না থাকলে কি করনীয়”। -সহিহ বুখারী, ৯/৫১
হাফেয ইবনে হাজার রহ. সহিহ বুখারীর বিখ্যাত ভাষ্যগ্রন্থ ফাতহুল বারীতে এই শিরোনামের ব্যাখ্যায় বলেন,
“অর্থাৎ একজন খলিফার ব্যাপারে সকলে একমত হওয়ার পূর্বে তাদের মধ্যে পরস্পর হানাহানির সময়ে একজন মুসলিমের করণীয় কি? –ফাতহুল বারী, ২৩/৭০ শুয়াইব আরনাউত রহ. এর তাককিককৃত *নুসখা।
হাদিসের ব্যাখ্যায় হাফেয ইবনে হাজার রহ. আরো বলেন,
“ইমাম তবারী রহ. বলেন, হাদিসের উদ্দেশ্য হলো, ঐ দলকে আঁকড়ে ধরা যারা সম্মিলিতভাবে কাউকে আমির হিসেবে মেনে নেয়। সুতরাং যদি কেউ তার বাইয়াত ভঙ্গ করে তবে সে জামাত হতে বের হয়ে যাবে। হাদিস থেকে বুঝে আসে, যদি মুসলমানদের কোন একক ইমাম-শাসক না থাকে এবং মানুষ বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে যায়, তবে বিভক্তি ও হানাহানির সময় কোন দলের অনুসরণ করা যাবে না। বরং মন্দ হতে বাঁচার জন্য সেই সবগুলো দল থেকে পৃথক থাকতে হবে।” –ফাতহুল বারী, ২৩/৭১ শুয়াইব আরনাউত রহ. এর তাককিককৃত *নুসখা।
دُعَاةٌ عَلَى أَبْوَابِ جَهَنَّمَ مَنْ أَجَابَهُمْ إِلَيْهَا قَذَفُوهُ فِيهَا ‘ জাহান্নামের দিকে আহ্বানকারী কিছু লোকের উদ্ভব ঘটবে। যে ব্যক্তি তাদের আহ্বানে সাড়া দেবে, তাকে তারা জাহান্নামে নিক্ষেপ করে ছাড়বে।’ হাদিসের এ অংশের ব্যাখ্যায় হাফেয ইবনে হাজার রহ. বলেন,
“জাহান্নামের দিকে আহ্বানকারী কিছু লোক’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, খারেজী ও অন্যান্য যারা রাজত্ব লাভের জন্য যুদ্ধ করেছে। হাদিসে ‘তুমি মুসলমানদের জামাত ও তাদের ইমামকে আঁকড়ে ধরবে’ বলে এ দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। অর্থাৎ যদিও ইমাম জুলুম-অত্যাচার করে, এ বিষয়টি আবু সাল্লাম এর বর্ণনা হতে স্পষ্ট হয়, তাতে এসেছে, ‘যদিও সে তোমার পিঠে বেত্রাঘাত করে এবং তোমার সম্পদ কেড়ে নেয়’। হাজ্জাজ ও তার মত অনেক শাসক এরকম জুলুম-অত্যাচার করতো। -ফাতহুল বারী, ২৩/৭১ শুয়াইব আরনাউত রহ. এর তাককিককৃত *নুসখা।
আর হাদিসে যে সব দল থেকে পৃথক থাকার কথা বলা হয়েছে এটা শুধু তখনই যখন মুসলমানদের সবগুলো দলই শুধু রাজত্বের লোভে পরস্পর হানাহানিতে লিপ্ত হয়। একেই অন্যান্য হাদিসে ফিতনা বলা হয়েছে এবং এ সময় পাহাড়-পর্বতে পালিয়ে যেতে কিংবা তরবারী ভেঙ্গে ঘরে বসে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যেমন এক হাদিসে এসেছে,
“অচিরেই ফিতনা আসবে, যে সময় বসে থাকা ব্যক্তি দাড়িয়ে থাকা ব্যক্তি হতে উত্তম হবে। দন্ডায়মান ব্যক্তি হাটতে থাকা ব্যক্তি থেকে উত্তম হবে আর হাটতে থাকা ব্যক্তি দৌড়াতে থাকা ব্যক্তির চেয়ে উত্তম হবে। যে এ ফিতনার দিকে চোখ তুলে তাকাবে ফিতনা তাকে নিজের দিকে টেনে নিবে। যে (এ থেকে পরিত্রানের জন্য) কোন আশ্রয়স্থল পায় সে যেন তাতে আশ্রয় নেয়। -সহিহ বুখারী, ৩৬০১ সহিহ মুসলিম, ২৮৮৬
উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় হাফেয ইবনে হাজার রহিমাহুল্লাহ বলেন,
পক্ষান্তরে যদি একপক্ষ হক হয় আর অপক্ষ পক্ষ বাতিল, একপক্ষ দ্বীন কায়েম করার জন্য যুদ্ধ করে, অপরপক্ষ গণতন্ত্র ও মানবরচিত বিধান প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করে তখন হক দলকে সাহায্য করা ওয়াজিব। ইমাম নববী রহ. বলেন,
“অধিকাংশ সাহাবী, তাবেয়ী ও আলেমদের মতে ফিতনার সময় হকের অনুসারীকে সাহায্য করা এবং তার সাথে মিলে সীমালঙ্ঘনকারীদের বিপক্ষে যুদ্ধ করা ওয়াজিব, কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘তোমরা সীমালঙ্ঘন কারীদের বিপক্ষে যুদ্ধ করো’, এটাই সহিহ মত, আর ফিতনার সময় যেসব হাদিসে যুদ্ধ করতে নিষেধ করা হয়েছে সেগুলো ঐ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে যাদের নিকট কোন পক্ষ হক তা স্পষ্ট নয়, কিংবা যখন উভয় পক্ষই জালেম (ও রাজত্বলোভী) হয়, (যুদ্ধের জন্য) তাদের কোন তাবীল ও শরিয়তসম্মত কারণ না থাকে। -শরহে মুসলিম, ১৮/১০
আলী রাযিআল্লাহু আনহু তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহকারীদের সাথে যুদ্ধ করেছেন, এবং সহিহ হাদিসের আলোকে ও সংখ্যাগরিষ্ঠ আলেমদের মতে তিনিই হকের *উপর ছিলেন, তিনি বিদ্রোহীদের বিপক্ষে যুদ্ধ করাকে ফিতনা মনে করেননি, অথচ তখন মুসলমানদের একক আমীর ছিল না। শামের লোকেরা আলী রাযি. এর নিকট বাইয়াত দেননি।
তেমনিভাবে আলী রাযি. এর বিপক্ষে যারা যুদ্ধ করেছেন তারাও এই যুদ্ধকে হক মনে করেই করেছেন, ফিতনা মনে করেননি। অন্যান্য সাহাবীদের অধিকাংশই কোন এক পক্ষ অবলম্বন করেছেন, যাদের কাছে আলী রাযিআল্লাহু আনহুকে হক মনে হয়েছে তারা আলী রাযিআল্লাহু আনহুর দলে যোগ দিয়েছেন, আর যাদের কাছে আলীর বিরোধীদের হক মনে হয়েছে তারা বিরোধীদের দলে যোগ দিয়েছেন। তারা কেউ হুযাইফা রাযি. এর হাদিসের এ অর্থ বুঝেননি যে, মুসলমানদের একক শাসক না থাকলে পৃথক হয়ে বসে থাকতে হবে, হক দলকেও সাহায্য করা যাবে না।
বরং হাদিসের বর্ণনাকারী হোযাইফা রাযি. নিজেই আলী রাযি. এর পক্ষে যুদ্ধ করার প্রতি উৎসাহিত করেছেন। তাহলে তার বর্ণিত হাদিসের ভিত্তিতে কিভাবে এ কথা বলা সম্ভব যে, মুসলমানদের একক আমীর না থাকলে সব দল থেকে পৃথক হয়ে থাকতে হবে, হক দলকেও সাহায্য করা যাবে না? হাফেয ইবনে হাজার রহ. বলেন,
“হুযাইফা রাযি. আলী রাযি. এর হাতে বাইয়াত হন। তার নিকট বাইয়াত হওয়া এবং তাকে সাহায্য করার জন্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেন। তিনি আলী রাযি. এর খেলাফতের শুরুর দিকে ইন্তিকাল করেন।” -ফাতহুল বারী, ২৩/৭৯
হাঁ, কিছু সাহাবী কোনপক্ষই অবলম্বন করেননি, উলামায়ে কেরাম বলেছেন, তাদের কাছে কোন পক্ষ হক তা স্পষ্ট হয়নি, তাই তারা কোনো পক্ষ অবলম্বন হতে বিরত রয়েছেন। ইমাম নববী রহ. বলেন,
“সাহাবীদের মধ্যে যে রক্তপাত হয়েছে তা হাদিসে বর্ণিত ধমকী ‘দুই মুসলমান যুদ্ধ করলে হত্যাকারী ও নিহত ব্যক্তি উভয়েই জাহান্নামে যাবে’ এর আওতাভুক্ত নয়। আহলুস সুন্নাহ ও জামাআর মাযহাব হলো সাহাবীদের ব্যাপারে সুধারণা পোষণ করা, তাদের পরস্পর মতানৈক্য নিয়ে (সমালোচনা) থেকে বিরত থাকা এবং তাদের যুদ্ধের তাবীল বা শরিয়তসম্মত কারণ বর্ণনা করা এবং এ কথা বলা যে তারা দুনিয়াবী (রাজত্বের লোভে) যুদ্ধ করেননি। বরং তারা ইজতেহাদ করেছেন, এবং প্রত্যেক দল এই বিশ্বাস করেছেন যে তারাই হক এবং তাদের বিরোধীরা হলো সীমালঙ্ঘনকারী, সুতরাং তাদের বিপক্ষে যুদ্ধ করা ওয়াজিব, যতক্ষণ না তারা আল্লাহর বিধানের দিকে ফিরে আসে। তাদের কারো ইজতেহাদ সঠিক ছিল, আরো কারো ইজতেহাদ ভুল। আর ইজতেহাদী ভুলের কারণে মুজতাহিদের কোন গুনাহ হয় না। আহলুস সুন্নাহর মতে এই যুদ্ধগুলোতে আলী রাযিআল্লাহু আনহুই হকের উপর ছিলেন, কিন্তু বিষয়গুলো গোলমেলে ছিল, এমনকি সাহাবীদের একটি দলও কারা হক তা অনুধাবণ করতে পারেননি। তাই তারা কোন পক্ষ অবলম্বন থেকে বিরত থেকেছেন।” -শরহে মুসলিম, ১৮/১১
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য নিচের লিংকগুলো দেখা যেতে পারে,
https://dawahilallah.com/showthread....B%26%232478%3B
আমার আজকের প্রবন্ধের উদ্দেশ্য হলো, যারা জিহাদের জন্য তানযীম গঠনকে নাজায়েয বলেন, তাদের সংশয় নিরসন করা। যারা এ সংশয় ছড়ান তারা নিম্নোক্ত হাদিস দিয়ে দলিল দেয়ার চেষ্টা করেন,
عن حُذَيْفَةَ بْنَ الْيَمَانِ يَقُولُ كَانَ النَّاسُ يَسْأَلُونَ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَنْ الْخَيْرِ وَكُنْتُ أَسْأَلُهُ عَنْ الشَّرِّ مَخَافَةَ أَنْ يُدْرِكَنِي فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ إِنَّا كُنَّا فِي جَاهِلِيَّةٍ وَشَرٍّ فَجَاءَنَا اللهُ بِهَذَا الْخَيْرِ فَهَلْ بَعْدَ هَذَا الْخَيْرِ مِنْ شَرٍّ قَالَ نَعَمْ قُلْتُ وَهَلْ بَعْدَ ذَلِكَ الشَّرِّ مِنْ خَيْرٍ قَالَ نَعَمْ وَفِيهِ دَخَنٌ قُلْتُ وَمَا دَخَنُهُ قَالَ قَوْمٌ يَهْدُونَ بِغَيْرِ هَدْيِي تَعْرِفُ مِنْهُمْ وَتُنْكِرُ قُلْتُ فَهَلْ بَعْدَ ذَلِكَ الْخَيْرِ مِنْ شَرٍّ قَالَ نَعَمْ دُعَاةٌ عَلَى أَبْوَابِ جَهَنَّمَ مَنْ أَجَابَهُمْ إِلَيْهَا قَذَفُوهُ فِيهَا قُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ صِفْهُمْ لَنَا قَالَ هُمْ مِنْ جِلْدَتِنَا وَيَتَكَلَّمُونَ بِأَلْسِنَتِنَا قُلْتُ فَمَا تَأْمُرُنِي إِنْ أَدْرَكَنِي ذَلِكَ قَالَ تَلْزَمُ جَمَاعَةَ الْمُسْلِمِينَ وَإِمَامَهُمْ قُلْتُ فَإِنْ لَمْ يَكُنْ لَهُمْ جَمَاعَةٌ وَلاَ إِمَامٌ قَالَ فَاعْتَزِلْ تِلْكَ الْفِرَقَ كُلَّهَا وَلَوْ أَنْ تَعَضَّ بِأَصْلِ شَجَرَةٍ حَتَّى يُدْرِكَكَ الْمَوْتُ وَأَنْتَ عَلَى ذَلِكَ.
“হুযাইফাহ ইবনু ইয়ামান রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, লোকেরা রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কল্যাণের বিষয়াবলী জিজ্ঞেস করত। কিন্তু আমি তাঁকে অকল্যাণের বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতাম এ ভয়ে যে, অকল্যাণ আমাকে পেয়ে না বসে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা তো জাহিলিয়্যাত ও অকল্যাণের মাঝে ছিলাম। এরপর আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে এ কল্যাণের মধ্যে নিয়ে আসলেন। এ কল্যাণের পর আবারও কি অকল্যাণ আসবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তবে এর মধ্যে কিছুটা অসচ্ছতা থাকবে। আমি প্রশ্ন করলাম, সেই অসচ্ছতা কিরূপ? তিনি বললেন, একটা জামাত আমার তরীকা ছেড়ে লোকদেরকে অন্য পথে পরিচালিত করবে। তাদের থেকে ভাল কাজও দেখবে এবং মন্দ কাজও দেখবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, সে কল্যাণের পর কি আবার অকল্যাণ আসবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। জাহান্নামের দিকে আহ্বানকারী কিছু লোকের আবির্ভাব ঘটবে। যে ব্যক্তি তাদের আহ্বানে সাড়া দেবে, তাকে তারা জাহান্নামে নিক্ষেপ করে ছাড়বে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের নিকট তাদের বিবরণ প্রদান করুন (যেন আমরা তাদেরকে চিনতে পারি)। তিনি বললেন, তারা আমাদের লোকই এবং আমাদের ভাষায়ই কথা বলবে। আমি বললাম, যদি আমি সেই যমানা পাই তবে আমি কি করবো? তিনি বললেন, মুসলিমদের জামা‘আত ও তাদের ইমামকে আঁকড়ে থাকবে। আমি আরজ করলাম, যদি তখন মুসলিমদের কোন জামাত ও ইমাম না থাকে? তিনি বললেন, তাহলে তুমি তখন ঐ সকল দল পরিত্যাগ করে আলাদা হয়ে যাবে। এ কারণে যদি কোন গাছের শিকড় কামড়িয়ে পড়ে থাকতে হয়-তাহলেও। যতক্ষণ না সে (বিচ্ছিন্ন) অবস্থায় তোমার মৃত্যু উপস্থিত হয়।” – সহিহ বুখারী, কিতাবুল ফিতান, হাদিস নং ৬৬৭৩
তারা এ হাদিসের ভিত্তিতে দাবী করেন, মুসলমানদের যখন ইমাম থাকবে না, তখন জিহাদের জন্য কোন দল বা তানযীম গঠন করা যাবে না, বরং সব দল থেকে পৃথক থাকতে হবে। কিন্তু এ কথাটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং তা হাদিসের মনগড়া ব্যাখ্যা।
হাদিসে যে মুসলমানদের জামাত এবং ইমামের কথা বলা হয়েছে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, ইমামুল মুসলিমিন এবং মুসলমানদের জামাত যারা তার হাতে বাইয়াত হয়েছেন। হাদিসের উদ্দেশ্য হলো, যদি মুসলমানগণ ঐক্যবদ্ধভাবে কাউকে ইমাম হিসেবে মেনে নেয়, তবে সকলের জন্য উচিত তার আনুগত্য করা, তার বিপক্ষে বিদ্রোহ না করা। যদিও তার মাঝে কিছু ফিসক, জুলুম-অত্যাচার বা অন্য কোন ক্রুটি-বিচ্যুতি থাকে, যতক্ষণ না তা সুস্পষ্ট কুফরের সীমায় পৌঁছে যায়। আর যদি মুসলমানদের কোন একক ইমাম না থাকে, বরং তারা শুধু রাজত্বের লোভে পরস্পর হানাহানিতে লিপ্ত হয়, তাহলে মুসলমানদের জন্য আবশ্যক হলো, এই হানাহানিতে না জড়ানো, বরং সবগুলো দল থেকে পৃথক থাকা। সহিহ মুসলিমের বর্ণনা হতে বিষয়টি একেবারেই সুষ্পষ্ট এবং হাদিসের ব্যাখ্যাদাতা মুহাদ্দিস ও ফকিহগণও বিষয়টি সুস্পষ্টরূপে বলেছেন
«يكون بعدي أئمة لا يهتدون بهداي، ولا يستنون بسنتي، وسيقوم فيهم رجال قلوبهم قلوب الشياطين في جثمان إنس»، قال: قلت: كيف أصنع يا رسول الله، إن أدركت ذلك؟ قال: «تسمع وتطيع للأمير، وإن ضرب ظهرك، وأخذ مالك، فاسمع وأطع» صحيح مسلم (3/ 1476 رقم الحديث 1847ت مفؤاد عبد الباقي ط: دار إحياء التراث العربي)
“আমার পরে এমন শাসকরা আসবে যারা আমার আদর্শের অনুসরণ করবে না, আমার সুন্নাহ অনুযায়ী চলবে না। তাদের মাঝে এমন কিছু লোকও থাকবে যারা হবে মানুষরূপী শয়তান। (হুযাইফা রাযি. বলেন,) আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, যদি আমি সেই যমানা পাই তবে তখন আমার করণীয় কি? রাসূল বললেন, তুমি আমিরের আনুগত্য করবে, যদিও সে তোমার পিঠে আঘাত করে এবং তোমার ধন-সম্পদ কেড়ে নেয়, তবুও তুমি তার আনুগত্য করো।” -সহিহ মুসলিম, ১৮৪৭
ইমাম বুখারী হাদিসটির শিরোনাম দিয়েছেন এভাবে,
بَاب كَيْفَ الأَمْرُ إِذَا لَمْ تَكُنْ جَمَاعَةٌ
“জামাত না থাকলে কি করনীয়”। -সহিহ বুখারী, ৯/৫১
হাফেয ইবনে হাজার রহ. সহিহ বুখারীর বিখ্যাত ভাষ্যগ্রন্থ ফাতহুল বারীতে এই শিরোনামের ব্যাখ্যায় বলেন,
والمعنى ما الذي يفعل المسلم في حال الاختلاف من قبل ألا يقع الإجتماع على خليفة. (فتح الباري23/70 ت شعيب الأرنؤوط ط. الرسالة العالمية)
“অর্থাৎ একজন খলিফার ব্যাপারে সকলে একমত হওয়ার পূর্বে তাদের মধ্যে পরস্পর হানাহানির সময়ে একজন মুসলিমের করণীয় কি? –ফাতহুল বারী, ২৩/৭০ শুয়াইব আরনাউত রহ. এর তাককিককৃত *নুসখা।
হাদিসের ব্যাখ্যায় হাফেয ইবনে হাজার রহ. আরো বলেন,
قال الطبري: والصواب أن المراد من الخبر لزوم الجماعة الذين في طاعة من اجتمعوا على تأميره، فمن نكث بيعته خرج عن الجماعة، قال: وفي الحديث أنه متى لم يكن للناس إمام فافترق الناس أحزابا فلا يتبع أحدا في الفرقة ويعتزل الجميع إن استطاع ذلك خشية من الوقوع في الشر، وعلى ذلك يتنزل ما جاء في سائر الأحاديث، وبه يجمع بين ما ظاهره الاختلاف منها، ويؤيده رواية عبد الرحمن بن قرط المتقدم ذكرها (فتح الباري23/71 ت شعيب الأرنؤوط ط. الرسالة العالمية)
“ইমাম তবারী রহ. বলেন, হাদিসের উদ্দেশ্য হলো, ঐ দলকে আঁকড়ে ধরা যারা সম্মিলিতভাবে কাউকে আমির হিসেবে মেনে নেয়। সুতরাং যদি কেউ তার বাইয়াত ভঙ্গ করে তবে সে জামাত হতে বের হয়ে যাবে। হাদিস থেকে বুঝে আসে, যদি মুসলমানদের কোন একক ইমাম-শাসক না থাকে এবং মানুষ বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে যায়, তবে বিভক্তি ও হানাহানির সময় কোন দলের অনুসরণ করা যাবে না। বরং মন্দ হতে বাঁচার জন্য সেই সবগুলো দল থেকে পৃথক থাকতে হবে।” –ফাতহুল বারী, ২৩/৭১ শুয়াইব আরনাউত রহ. এর তাককিককৃত *নুসখা।
دُعَاةٌ عَلَى أَبْوَابِ جَهَنَّمَ مَنْ أَجَابَهُمْ إِلَيْهَا قَذَفُوهُ فِيهَا ‘ জাহান্নামের দিকে আহ্বানকারী কিছু লোকের উদ্ভব ঘটবে। যে ব্যক্তি তাদের আহ্বানে সাড়া দেবে, তাকে তারা জাহান্নামে নিক্ষেপ করে ছাড়বে।’ হাদিসের এ অংশের ব্যাখ্যায় হাফেয ইবনে হাজার রহ. বলেন,
والذي يظهر أن المراد بالدعاة على أبواب جهنم من قام في طلب الملك من الخوارج وغيرهم، وإلى ذلك الإشارة بقوله: "الزم جماعة المسلمين وإمامهم " يعني ولو جار ويوضح ذلك رواية أبي سلام: " ولو ضرب ظهرك وأخذ مالك " وكان مثل ذلك كثيرا في إمارة الحجاج ونحوه. (فتح الباري 23/71 ت شعيب الأرنؤوط ط. الرسالة العالمية)
“জাহান্নামের দিকে আহ্বানকারী কিছু লোক’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, খারেজী ও অন্যান্য যারা রাজত্ব লাভের জন্য যুদ্ধ করেছে। হাদিসে ‘তুমি মুসলমানদের জামাত ও তাদের ইমামকে আঁকড়ে ধরবে’ বলে এ দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। অর্থাৎ যদিও ইমাম জুলুম-অত্যাচার করে, এ বিষয়টি আবু সাল্লাম এর বর্ণনা হতে স্পষ্ট হয়, তাতে এসেছে, ‘যদিও সে তোমার পিঠে বেত্রাঘাত করে এবং তোমার সম্পদ কেড়ে নেয়’। হাজ্জাজ ও তার মত অনেক শাসক এরকম জুলুম-অত্যাচার করতো। -ফাতহুল বারী, ২৩/৭১ শুয়াইব আরনাউত রহ. এর তাককিককৃত *নুসখা।
আর হাদিসে যে সব দল থেকে পৃথক থাকার কথা বলা হয়েছে এটা শুধু তখনই যখন মুসলমানদের সবগুলো দলই শুধু রাজত্বের লোভে পরস্পর হানাহানিতে লিপ্ত হয়। একেই অন্যান্য হাদিসে ফিতনা বলা হয়েছে এবং এ সময় পাহাড়-পর্বতে পালিয়ে যেতে কিংবা তরবারী ভেঙ্গে ঘরে বসে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যেমন এক হাদিসে এসেছে,
«ستكون فتن القاعد فيها خير من القائم والقائم فيها خير من الماشي، والماشي فيها خير من الساعي، ومن يشرف لها تستشرفه، ومن وجد ملجأ أو معاذا فليعذ به». صحيح البخاري (3601) صحيح مسلم (2886)
“অচিরেই ফিতনা আসবে, যে সময় বসে থাকা ব্যক্তি দাড়িয়ে থাকা ব্যক্তি হতে উত্তম হবে। দন্ডায়মান ব্যক্তি হাটতে থাকা ব্যক্তি থেকে উত্তম হবে আর হাটতে থাকা ব্যক্তি দৌড়াতে থাকা ব্যক্তির চেয়ে উত্তম হবে। যে এ ফিতনার দিকে চোখ তুলে তাকাবে ফিতনা তাকে নিজের দিকে টেনে নিবে। যে (এ থেকে পরিত্রানের জন্য) কোন আশ্রয়স্থল পায় সে যেন তাতে আশ্রয় নেয়। -সহিহ বুখারী, ৩৬০১ সহিহ মুসলিম, ২৮৮৬
উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় হাফেয ইবনে হাজার রহিমাহুল্লাহ বলেন,
والمراد بالفتنة ما ينشأ عن الاختلاف في طلب الملك حيث لا يعلم المحق من المبطل… قال الطبري: والصواب أن يقال إن الفتنة أصلها الابتلاء، وإنكار المنكر واجب على كل من قدر عليه، فمن أعان المحق أصاب ومن أعان المخطئ أخطأ، وإن أشكل الأمر فهي الحالة التي ورد النهي عن القتال فيها. (فتح الباري: 23/61 ت شعيب الأرنؤوط)
“ফিতনা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, রাজত্ব লাভের জন্য মুসলমানদের পরস্পর যুদ্ধ, যেখানে কোন দল হক আর কোন দল বাতিল তা বুঝা যায় না।… ইমাম তবারী বলেন, এ ব্যাপারে সঠিক মত হলো, ফিতনার আসল অর্থ পরীক্ষা, আর প্রত্যেক সামর্থ্যবান ব্যক্তির উপর বাতিলের প্রতিরোধ করা ওয়াজিব, সুতরাং যে হকের অনুসারীর সাহায্য করবে সে সঠিক কাজ করলো, আর যে বাতিলের সাহায্য করল সে ভুল করলো, আর যদি হক-বাতিল অস্পষ্ট হয়ে যায় তাহলে এই অবস্থায় যুদ্ধ করার ব্যাপারেই হাদিসে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। -ফাতহুল বারী, ১৩/৩১
وقال معظم الصحابة والتابعين وعامة علماء الإسلام: يجب نصر المحق في الفتن والقيام معه بمقاتلة الباغين كما قال تعالى {فقاتلوا التي تبغي} الاَية. وهذا هو الصحيح وتتأول الأحاديث على من لم يظهر له المحق أو على طائفتين ظالمتين لا تأويل لواحد منهما. (شرح مسلم للنووي: 18/10 ط. دار إحياء التراث)
“অধিকাংশ সাহাবী, তাবেয়ী ও আলেমদের মতে ফিতনার সময় হকের অনুসারীকে সাহায্য করা এবং তার সাথে মিলে সীমালঙ্ঘনকারীদের বিপক্ষে যুদ্ধ করা ওয়াজিব, কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘তোমরা সীমালঙ্ঘন কারীদের বিপক্ষে যুদ্ধ করো’, এটাই সহিহ মত, আর ফিতনার সময় যেসব হাদিসে যুদ্ধ করতে নিষেধ করা হয়েছে সেগুলো ঐ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে যাদের নিকট কোন পক্ষ হক তা স্পষ্ট নয়, কিংবা যখন উভয় পক্ষই জালেম (ও রাজত্বলোভী) হয়, (যুদ্ধের জন্য) তাদের কোন তাবীল ও শরিয়তসম্মত কারণ না থাকে। -শরহে মুসলিম, ১৮/১০
আলী রাযিআল্লাহু আনহু তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহকারীদের সাথে যুদ্ধ করেছেন, এবং সহিহ হাদিসের আলোকে ও সংখ্যাগরিষ্ঠ আলেমদের মতে তিনিই হকের *উপর ছিলেন, তিনি বিদ্রোহীদের বিপক্ষে যুদ্ধ করাকে ফিতনা মনে করেননি, অথচ তখন মুসলমানদের একক আমীর ছিল না। শামের লোকেরা আলী রাযি. এর নিকট বাইয়াত দেননি।
তেমনিভাবে আলী রাযি. এর বিপক্ষে যারা যুদ্ধ করেছেন তারাও এই যুদ্ধকে হক মনে করেই করেছেন, ফিতনা মনে করেননি। অন্যান্য সাহাবীদের অধিকাংশই কোন এক পক্ষ অবলম্বন করেছেন, যাদের কাছে আলী রাযিআল্লাহু আনহুকে হক মনে হয়েছে তারা আলী রাযিআল্লাহু আনহুর দলে যোগ দিয়েছেন, আর যাদের কাছে আলীর বিরোধীদের হক মনে হয়েছে তারা বিরোধীদের দলে যোগ দিয়েছেন। তারা কেউ হুযাইফা রাযি. এর হাদিসের এ অর্থ বুঝেননি যে, মুসলমানদের একক শাসক না থাকলে পৃথক হয়ে বসে থাকতে হবে, হক দলকেও সাহায্য করা যাবে না।
বরং হাদিসের বর্ণনাকারী হোযাইফা রাযি. নিজেই আলী রাযি. এর পক্ষে যুদ্ধ করার প্রতি উৎসাহিত করেছেন। তাহলে তার বর্ণিত হাদিসের ভিত্তিতে কিভাবে এ কথা বলা সম্ভব যে, মুসলমানদের একক আমীর না থাকলে সব দল থেকে পৃথক হয়ে থাকতে হবে, হক দলকেও সাহায্য করা যাবে না? হাফেয ইবনে হাজার রহ. বলেন,
بايع لعلي وحرض على المبايعة له والقيام فيه نصره، ومات في أوائل خلافته (فتح الباري: 23/79 ت شعيب الأرنؤوط).
“হুযাইফা রাযি. আলী রাযি. এর হাতে বাইয়াত হন। তার নিকট বাইয়াত হওয়া এবং তাকে সাহায্য করার জন্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেন। তিনি আলী রাযি. এর খেলাফতের শুরুর দিকে ইন্তিকাল করেন।” -ফাতহুল বারী, ২৩/৭৯
হাঁ, কিছু সাহাবী কোনপক্ষই অবলম্বন করেননি, উলামায়ে কেরাম বলেছেন, তাদের কাছে কোন পক্ষ হক তা স্পষ্ট হয়নি, তাই তারা কোনো পক্ষ অবলম্বন হতে বিরত রয়েছেন। ইমাম নববী রহ. বলেন,
واعلم أن الدماء التي جرت بين الصحابة رضي الله عنهم ليست بداخلة في هذا الوعيد، ومذهب أهل السنة والحق: إحسان الظن بهم، والإمساك عما شجر بينهم، وتأويل قتالهم، وأنهم مجتهدون متأولون لم يقصدوا معصية ولا محض الدنيا، بل اعتقد كل فريق أنه المحق ومخالفه باغ، فوجب عليه قتاله ليرجع إلى أمر الله، وكان بعضهم مصيبا وبعضهم مخطئا معذورا في الخطأ، لأنه اجتهاد، والمجتهد إذا أخطأ لا إثم عليه، وكان علي رضي الله عنه هو المحق المصيب في تلك الحروب، هذا مذهب أهل السنة، وكانت القضايا مشتبهة حتى إن جماعة من الصحابة تحيروا فيها، فاعتزلوا الطائفتين، ولم يقاتلوا، ولم يتيقنوا الصواب، ثم تأخروا عن مساعدته منهم. (شرح مسلم للنووي: 18/11 ط. دار إحياء التراث)
“সাহাবীদের মধ্যে যে রক্তপাত হয়েছে তা হাদিসে বর্ণিত ধমকী ‘দুই মুসলমান যুদ্ধ করলে হত্যাকারী ও নিহত ব্যক্তি উভয়েই জাহান্নামে যাবে’ এর আওতাভুক্ত নয়। আহলুস সুন্নাহ ও জামাআর মাযহাব হলো সাহাবীদের ব্যাপারে সুধারণা পোষণ করা, তাদের পরস্পর মতানৈক্য নিয়ে (সমালোচনা) থেকে বিরত থাকা এবং তাদের যুদ্ধের তাবীল বা শরিয়তসম্মত কারণ বর্ণনা করা এবং এ কথা বলা যে তারা দুনিয়াবী (রাজত্বের লোভে) যুদ্ধ করেননি। বরং তারা ইজতেহাদ করেছেন, এবং প্রত্যেক দল এই বিশ্বাস করেছেন যে তারাই হক এবং তাদের বিরোধীরা হলো সীমালঙ্ঘনকারী, সুতরাং তাদের বিপক্ষে যুদ্ধ করা ওয়াজিব, যতক্ষণ না তারা আল্লাহর বিধানের দিকে ফিরে আসে। তাদের কারো ইজতেহাদ সঠিক ছিল, আরো কারো ইজতেহাদ ভুল। আর ইজতেহাদী ভুলের কারণে মুজতাহিদের কোন গুনাহ হয় না। আহলুস সুন্নাহর মতে এই যুদ্ধগুলোতে আলী রাযিআল্লাহু আনহুই হকের উপর ছিলেন, কিন্তু বিষয়গুলো গোলমেলে ছিল, এমনকি সাহাবীদের একটি দলও কারা হক তা অনুধাবণ করতে পারেননি। তাই তারা কোন পক্ষ অবলম্বন থেকে বিরত থেকেছেন।” -শরহে মুসলিম, ১৮/১১
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য নিচের লিংকগুলো দেখা যেতে পারে,
https://dawahilallah.com/showthread....B%26%232478%3B
Comment