Announcement

Collapse
No announcement yet.

রায় ঘোষণা এবং অসন্তোষের বাধ্যবাধকতা

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • রায় ঘোষণা এবং অসন্তোষের বাধ্যবাধকতা


    গত ৮ই ডিসেম্বর, ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১, শহীদ আবরার ফাহাদ ভাইয়ের হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করে। রায়ে ২০ জনকে মৃত্যুদন্ড ও ৫ জনকে যাবত জীবন প্রদান করা হয়েছে।

    ৯ তারিখ ডেইলি স্টার পত্রিকায় প্রথম পাতায় আবরার ভাইয়ের বাবার ছবি প্রকাশ করা হয়। ছবিতে দেখা যায়, তিনি বিজয় (v) চিহ্ন দেখাচ্ছেন কিন্তু তার মলিন চেহারা বলে দিচ্ছে এই বিজয়ের জন্য তাকে কত চড়া মূল্য দিতে হয়েছে। আবরারের মা (আমাদের মাজলুম মা) এক সাংবাদিককে বলেন, "আমার বাবাকে আমি ভুলি না, চোখের সামনে ভেসে আসে সব।"

    যদিও রায়ের পর আবরার ভাইয়ের বাবা-মা, আত্নীয়-স্বজন ও আইনজীবিরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। রায় দ্রুত কার্যকর করার ব্যাপারে আশাও ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু অবাক করার ব্যাপার হচ্ছে, আমাদের মাঝেও অনেকই এই রায়ের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করছেন।

    আসলেই কি আমাদের জন্য সন্তুষ্টির কিছু আছে এই রায়ের মধ্যে? আমার ব্যাক্তিগত মত হচ্ছে, 'না'।
    এর মতের পিছে অনেক কারণ উল্লেখ করা যেতে পারে।
    যেমন ধরুনঃ

    এক, যদিও রায়ের প্রকৃতি দেখতে ইসলামী শরিয়তের কিসাসের অনুরূপ। জানের বদলা জান। কিন্তু আমাদের ভালোভাবে বুঝতে হবে এই রায় আল্লাহদ্রোহী তাগুতি আইনের অধীনে প্রদান করা হয়েছে। তাই, আমরা যদি এক মুহুর্তের জন্যও এই রায়ের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করলে তাহলে তা তাগুতী আইনের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশের নামান্তর।

    দুই, এই রায় চূড়ান্ত রায় না। নিম্ম আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্ট তারপর সুপ্রিমকোর্টে আপিল করা যায়। এই রায় পরিবর্তনের যথেষ্ট সু্যোগ রয়েছে।

    বাংলাদেশশের ফাসির রায়ের পরিসংখ্যান দেখলে বুঝা যাবে, নিম্ম আদালতের রায় উচ্চ আদালতে পরিবর্তনের হার কত বেশি। আর মামলায় যদি রাজনৈতিক কোন যোগসাজশ থাকে তাহলে তো রায় পরিবর্তনের হার কয়েক গুণ বেড়ে যায়। তাই, হয়ত ৪-৫ বছর পর যখন আমরা আবরার ভাইকে ভুলে যাবো, তখন সরকার আমাদের অগোচরে ফাসির আসামীদের বের করার কোন না কোন পলিশি তৈরি করেই ফেলবে।

    প্রশ্ন থাকতে পারে, নিম্ম আদালতের রায় যদি উচ্চ আদালতে পরিবর্তনের সুযোগ থাকে তাহলে 'খতমে মুলহেদিন আন্দোলন'-এর ভাইদের রায়ের পরে এত হৈচৈ কেন শুরু হয়েছিল?

    মনে রাখবেন, যে আইনের বলে সেনাপ্রধানের ভাইয়ের মৃত্যুদন্ড রহিত করা হয়েছে, সেই আইনের আওতায় কিন্তু মুফতি হান্নান (রাহিঃ) বা শায়খ আব্দুর রহমান (রাহিঃ)-দের মৃত্যুদন্ড খারিজ করা হয়নি।

    যে ধারা মোতাবেক উচ্চ আদালত থেকে বিশ্বজিৎ দাসের হত্যাকারীদের বেকসুর খালাস দেওয়া হয়, সেই ধারা মোতাবেক সাতিমে রাসূল রাজীব হায়দার ওরফে থাবা বাবা -কে হত্যাকারী রেদোয়ানুল আজাদ রানা ও ফয়সাল বিন নাঈম দীপ (وفقهم الله سريعا) ভাইদের রায় স্থগিত করা হবে না।

    যে অজুহাতে খালেদা জিয়া বাসায় বসে চিকিৎসা নিতে পারে; ঠিক একই কারণ পাওয়া যাওয়ার পরও কিন্তু মুফতি মো. জসীম উদ্দিন রাহমানী (وفقه الله سريعا)-কে চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না।

    কারণ, এই আল্লাহদ্রোহী তাগুতী আইনের প্রতিটি ধারা-উপধারাকে তারা ব্যবহার করছে মুসলমানদের কষ্ট দেওয়া জন্য। আমাদের উপর অন্যায়-অবিচার ও জুলুমের বোঝা চাপিয়ে দেওয়ার জন্য। আর যে সকল রায়ে তাদের ন্যায় বিচার ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে (যেমনঃ নুসরাত বা আবরার ফাহাদ), সেই রায়গুলো হচ্ছে মরিচিকা। সময়ের সাথে সাথে যা বাতাসে মিলিয়ে যাবে।

    তিন, ইসরায়েলী সৈন্য বা গাড়ি বহরর উদ্দেশ্যে গুলতি আর পাথর মেরে আন্দোলন করা ফিলিস্তিনের নাগরিকদের কাছে প্রতিবাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। কিন্তু এক ফিলিস্তিন মা তার সন্তানকে কখনো ইসরায়েলী সৈন্যদের উদ্দেশ্য পাথর ছুড়তে দিতেন না। তার কাছে এর কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, "আমি চায় না আমার ছেলের মাঝে জায়নিষ্টদের বিরুদ্ধে যে রাগ-ক্ষোভ, আক্রশ রয়েছে, পাথর মাধ্যমে সেই আক্রশ যাতে বের হয়ে যায়। আমি চায় সে এই আক্রশ নিয়ে বড় হোক যাতে জায়নিষ্ট উপর ফিদায়ী হামলা করতে পারে।"

    আলহামদুলিল্লাহ, সেই মা তার কথাই সত্যবাদী ছিলেন, তাই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা তার সন্তানকে ফিদায়ী করার সম্মান দান করেছিলেন।

    একইভাবে, আজ আমরা যদি এই রায়ের উপর সন্তুষ্ট হয়ে যায় তাহলে আল্লাহর শত্রু 'এই সরকার ও তার অনুসারী'দের প্রতি যে আক্রশ আছে তা ধীরে ধীরে প্রশমিত হয়ে যাবে। আর এইটাই তো সরকার চাচ্ছে। যাতে তারা বলতে পারে আমরা তো বিচার করেছি এখন কিসের আন্দোলন - কিসের বিক্ষোভ?

    সরকারের এই ছল চাতুরীর প্রমাণের জন্য বেশি পুরানো কোন উদাহরণ টানার দরকার নেয়।

    ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন হয়ত সকলের স্মরণে আছে। সরকার যখন ছাত্র আন্দোলনের ফলে নাজেহাল হওয়ার উপক্রম হলো, তখনি তারা ছাত্রদের সকল দাবী মেনে নিল। কিন্তু একটু হিসাবে করে দেখুন, বিগত ৩ বছরে তাদের কয়টি দাবী পূরণ করা হয়েছে?

    একই চল-চাতুরী সরকার হেফাজতের সাথেও করেছে। দাবী মেনে নেওয়ার প্রতারণামূলক আশ্বাস দিয়ে হেফাজত কর্মীদের রাজপথ থেকে মাদ্রাসামুখী করেছে। তারপর তারা একে একে হেফাজত নেতাদের মিথ্যা-বানোয়াট মামলায় জেলে বন্দী করে দুর্বিষহ জীবন যাপনে বাধ্য করছে।

    তাই, আল্লাহর ইজ্জতের কসম এই রায়ে আমাদের সন্তুষ্ট হওয়ার কিছু নেয়। আমরা সন্তুষ্ট হবো সেই দিন, যেদিন আমাদের ভাইদের হত্যার আর বোনদের বে-আব্রু করার বিচার ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক হবে। আমরা সে দিন শান্ত হবো, যেদিন এই কুলাঙ্গারদের আমরা নিজ হাতে হত্যা করবো।
    যারা এই কথা বলতে চান যে, বর্তমানে তো ইসলামী শাসন ব্যবস্থা চালু নেই। আমরা শরীয়ত মোতাবেক বিচার বা হদ কায়েম করতে পারছি না। তাহলে এই রায়ের মাধ্যমে যদি সমাজে মুসলমানদের উপর অত্যাচার কিছুটা হ্রাস পায় তাতে অসন্তোষের কি আছে?

    পরিশেষে, এই প্রশ্নের জবাবে বলতে চায়,
    আল্লাহদ্রোহী আইনের আশ্রয় গ্রহণের চেষ্টা কোন বিকল্প পন্থা নয় বরং আমাদের অক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ।


    আবু দানিয়াল উসামা
    ৬ জমাদিউল আউয়াল,
    ১৪৪৩ হিজরি।।

  • #2
    আমাদের জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই যথেষ্ট। দুনিয়ার মানুষ আমাদেরকে ছুড়ে মেরে ফেলে দিলে আমাদের কিছুই আসে যায় না যদি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল আমাদেরকে গ্রহন করে নেন।

    Comment


    • #3
      এ রায় প্রহসন বৈ কিছুই নয়। আমাদের ভাই আবরার হত্যার প্রতিশোধ আমাদেরকেই নিতে হবে। আমরা অচিরেই আওয়ামী মুশরিক লীগকে এ হত্যার প্রাপ্য মূল্য বুঝিয়ে দিব বি-ইযনিল্লাহ।

      Comment

      Working...
      X