Announcement

Collapse
No announcement yet.

প্রতিরোধ - আক্রমণাত্মক বনাম নিস্ক্রিয়তার জিহাদ!!!

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • প্রতিরোধ - আক্রমণাত্মক বনাম নিস্ক্রিয়তার জিহাদ!!!


    কিম সাং মিং। একজন কমিউনিস্ট। এমিনিস্টি ইন্টারন্যাশনালের হিসাব মতে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক রাজনৈতিক বন্দী। প্রায় ৪৪ বছর তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার একটি জেলে বন্দী ছিলেন। ৪৪ বছর! চিন্তা করা যায়!!


    তার অপরাধ কি ছিল?


    তার অপরাধ হলো সে কমিউনিস্ট মতবাদে বিশ্বাসী। এই মতবাদের প্রচারক, প্রসারক এবং একজন বিপ্লবী নেতা। ৭০ বছর বয়সে যখন সে জেল থেকে রের হোন; তখন তিনি শারীরিকভাবে বিদ্ধস্ত। দুই জনের সাহায্য ছাড়া ঠিক মত দাড়াতে পারছেন না। কমিউনিস্টের মত অন্তঃসারশূন্য মতবাদ ও বিশ্বাসের জন্য তার প্রায় পুরোটা জীবনই জেলে কাটিয়েছেন।


    অথচ, আমাদের বিশ্বাস, আমাদের ইমান-আকীদা যা ইনসানী ফিতরাতের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যার ভিত্তি স্বয়ং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা। তাহলে আমরা কিভাবে আমাদের জীবনাদর্শ থেকে ফিরে আসতে পারি?


    আমরা যারা আল্লাহর রাহে বিশেষ করে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ দিকে দাওয়াত দিয়ে থাকি, যারা সমাজে আল্লাহর দ্বীন-আল্লাহর শরীয়ত কায়েম করতে চায় তাদের অনেকের মুখেই বর্তমান তাগুত সরকার, শাসনব্যবস্থা ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে শোনা যায় যে, তারা আমাদের উপর অতিরিক্ত জুলুম করছে, আমাদের গুম করছে, হত্যা করছে।


    তাই নিরাপত্তার স্বার্থে আমাদের দাওয়াতী ও আসকারী কার্যক্রমের গতি আরো শ্লথ করা উচিত। কিছু ভাইতো নিরাপত্তার নামে জিহাদী কার্যক্রম থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ গুটিয়ে নেন।


    অথচ,
    এধরনের মৃত্যুতূল্য স্থবিরতা নিরাপত্তার সংকটের চেয়ে কোনো অংশে কম মারাত্মক নয়।

    বাংলাদেশের ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা বর্তমান অবস্থার চেয়ে অনেকে বেশি খুন-গুমের উপ্যাখান দেখতে পাবো। ৭১ থেকে ৭৫ পর্যন্ত রক্ষীবাহিনী আর সশস্ত্র রাজনৈতিক কর্মীরা বিরুদ্ধে গড়ে উঠা গণ-অসন্তোষকে তারা অত্যান্ত কঠোরভাবে দমন করতো।


    স্বাধীনতার দ্বিতীয় বছর। ১৯৭৩ সাল। এই বছরের শেষ নাগাদ বাংলাদেশে কেবল রাজনৈতিক হত্যার সংখ্যা ২০০০ অতিক্রম করেছিল। নিহতের সংখ্যা দিয়ে গুম আর নিরুদ্দেশের সংখ্যা সহজেই অনুমেয়।


    মুজিব নিজেই স্বীকার করেছিল যে, বিরোধীদের আক্রমণে ৪০০০ এর অধিক আওয়ামী লীগ কর্মী নিহত হয়েছিল।


    চিন্তার বিষয় হচ্ছে, যদি সরকারপন্থী কর্মীদের নিহতের সংখ্যা ৪০০০ হয় তাহলে সরকার বিরোধীদের নিহতের সংখ্যা কত হতে পারে?


    এব্যাপারে দ্বিমতের কোন অবকাশ নেই যে, সম্প্রতিকালে গুমের সংখ্যা বেড়েছে,। কিন্তু ১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ সালের মধ্যবর্তী সময়ের গুমের সংখ্যা থেকে অনেক কম। এমনকি বাংলাদেশ সরকারের প্রধান শেখ মুজিব যুদ্ধ শেষে দেশে ফিরে আসার পূর্বেই এই দেশে সরকার বিরোধীদের গুমের কালচার গড়ে উঠেছিল। যার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছেন, জহির রায়হান।

    কেন এত জুলুম, খুন, গুম? কোন কুফরি শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য? না, বরং প্রতিষ্ঠিত কুফরি-তাগুত ব্যবস্থাপনায় ক্ষমতার পালাবর্তনের জন্য এত জুলুম আর রক্তের প্রবাহ। গণতন্ত্রের মত কুফরি ও দেউলিয়া এক সমাজ ব্যবস্থার জন্য যদি মানুষ এত কষ্ট সহ্য করতে পারে, প্রাণদিতে পারে, তাহলে আমাদের কি হলো?


    তারা যদি এত জুলুম-নির্যাতন সহ্য করতে পারে তাহলে আমরা কেন নয়? অথচ কিতাবুল্লাহর এই আয়াতের উপর ইমান আনায়ন আমাদের আকীদার অংশ। যেখানে আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জাত বলেছেনঃ
    اَحَسِبَ النَّاسُ اَنۡ یُّتۡرَکُوۡۤا اَنۡ یَّقُوۡلُوۡۤا اٰمَنَّا وَ ہُمۡ لَا یُفۡتَنُوۡنَ
    অর্থঃ মানুষ কি মনে করেছে যে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’ এ কথা বললেই তাদেরকে পরীক্ষা না করে অব্যাহতি দেয়া হবে? [সূরা আনকাবুত - ২]


    তাগুতি শাসন ব্যবস্থায় আমাদের, আমাদের ভাইদের বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় ঘোষণা করা হচ্ছে। বলাই বাহুল্য, ফাঁসির রায় জুলুম আর প্রতিহিংসার চূড়ান্ত রূপ।


    কিন্তু তাগুতী আইনী ব্যবস্থাপনা নিয়ে সামান্য অধ্যায়ণ করলে আমরা দেখতে পারবো যে, ফাসির রায়গুলো প্রদান করা হচ্ছে নিম্ম আদালত থেকে। তারপর উচ্চ আদালত, সুপ্রীম কোর্ট হয়ে রায় কার্যকর হতে আরো অনেক অনেক বছর লেগে যায়। অর্থাৎ, রায় ঘোষণা থেকে কার্যকর পর্যন্ত অনেক সময় পাওয়া যায়।

    কিন্তু ১৯৭৭ সালে জিয়ার শাসন আমলে বিমান বাহিনীর এয়ার ম্যানদের একটি ব্যর্থ অভ্যুত্থানের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে জুলুম ও প্রতিহিংসার এমন এক জঘন্য দৃষ্টান্ত দেখতে পারবো যা বর্তমান জুলুম ও প্রতিহিংসার সম্মুখে কিছুই না।


    সরকারী হিসাব মতে মাত্র দুই মাসে ১১৪৩ জন (এক হাজার এক শত তেতাল্লিশ জন) সৈন্যকে ফাসির দড়িতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়।


    প্রচলিত আইনগত পদ্ধতি ও বিচার ব্যাবস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে অত্যন্ত তড়িঘড়ি করে এ শাস্তি-কার্যক্রম সমাপন করা হয়। রায় ঘোষণার ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই রায় কার্যকর করা হতো।

    কিন্তু বাংলাদেশের জিহাদী তানজিমের ইতিহাস আর বর্তমানের দিকে তাকালে আমরা ২০ জন মুজাহিদদেরও নাম পাবো না যাদের ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়েছে। ক্রশ ফায়ার বা প্রশাসনের হেফাজতে মৃত্যুর সংখ্যাও খুব বেশি তাও কিন্তু না।


    আমার, আপনার, আমাদের সকলের নিরাপত্তা গ্রহণ করা অত্যাবশকীয়। নিরাপত্তা গ্রহণ অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই তো সকাল-সন্ধ্যার আসকারে আমরা আল্লাহর নিকট নিরাপত্তার দোয়া করি আর দুনিযাবী আসবাব গ্রহণ করি। কিন্তু নিরাপত্তার নামে স্থবিরতা কখনো কাম্য নয়। নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে জিহাদী দাওয়াত ও অন্যান্য কার্যক্রম থেকে নিজেকে খোলসাবদ্ধ করে নেয়ার চেয়ে বড় কোনো আত্নপ্রবঞ্চনা হতে পারে না।


    আলহামদুলিল্লাহ, আমরা তো সেই জান্নাতের আশা করি যার আশা উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু করতেন। যিনি ইসলাম গ্রহণের সাথে সাথে প্রকাশ্যের সালাত আদায়ের অনুমতি চান। যিনি মক্কার প্রতিটি মুশরিকের দরজায় করাঘাত করে তার হিজরতের এলান করেন।


    সম্মানিত ভাই আমার, আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন যে গোয়ান্তনামো বে, আবু গারিব, শিবারগান এবং ইহুদি ও সালাবীদের গোপন সেলগুলোতে আমাদের মুজাহিদ শায়খ, আমাদের মুজাহিদ কমান্ডার, আমাদের মুজাহিদ দাঈীদের উপর যে পরিমাণ জুলুম করা হয় তার একাংশও আমাদের করা হয় না।


    প্রতি বছর আমেরিকা, ইউরোপ, কাশ্মীর, ফিলিস্তিনে যে পরিমাণ মুসলিম ভাই ও বোনদের গুম ও হত্যা করা হয় তার তুলনা বাংলাদেশের সাথে করলে তাদের অপমান করা হবে।


    আমরা সমাজে বিপ্লব আনতে চাই। সমাজে নব্য জাহিলিয়্যাত দূর করে সমাজে আল্লাহর আইন, আল্লাহর খিলাফাত প্রতিষ্ঠা করতে চাই, তাহলে শুধু জেল-জুলুম নয় বরং জীবনের কুরবানীকে অত্যন্ত নগন্য একটি বিষয় ধরে নিয়ে আমাদের বিপ্লবের পথে পা দিতে হবে।


    আপনার আমার শাহাদাত যদি জিহাদী কার্যক্রমকে সামান্যতম গতিশীল করে, সাধারণ জনগণকে দ্বীন ও আল্লাহর শরিয়ত নিয়ে অতি অল্প সময়ও ভাবতে বাধ্য করে তাহলে আমার ভাই,
    বছরের পর বছর নিস্ক্রিয় জীবন যাপন করে বা অতি-নিরাপদভাবে জিহাদি বা দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনার চেয়ে আমাদের শাহাদাত মোবারক হোক।

    আমাদের সামগ্রিক বিবেচনার জন্য শায়খ সাইয়্যিদ কুতুব রাহিমামুল্লাহ -এর একটি ঘটনা নিয়ে চিন্তা করতে পারি। শায়খের শাহাদাতের পূর্বে জামাল আব্দুন নাসের শায়খকের কাছে খবর পাঠাই যে শায়খ কুতুব (রাহিঃ) যদি তার মতবাদ থেকে ফিরে আসেন তাহলে তাকে জেল থেকে মুক্ত করে দেওয়ার পাশাপাশি পুনরায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রদান করা হবে।


    ফাসির পুর্বে প্রশাসন শায়খের বোন হামিদা কুতুব (রাহিঃ)- কে শায়খের সাথে সাক্ষাৎতের জন্য জেলখানায় নিয়ে আসে। হামিদা কুতুব শায়খ (রাহিঃ) - কে বলেন যে, "এই ইসলামী বিপ্লবকে তোমার প্রয়োজন আছে।"


    তিনি শায়খ (রাহিঃ) কে আরো অনুরোধ করেন যে, তিনি যেন জামাল আব্দুন নাসেরের সাথে আপাতত আপসহীনতা থেকে সরে আসেন এবং আবারো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।


    শায়খের বোনের যুক্তি ছিল যদি শায়খ জেল থেকে বের হতে পারেন তাহলে আরো অধিক হারে কিতাবাদি রচনা করতে পারবেন, ইসলামী বিপ্লবের মতবাদকে শক্ত রূপ দিতে পারবেন, নব্য জাহিলিয়্যাতের বিরুদ্ধে সাধারণ জনগণকে সচেতন করতে পারবেন।


    কিন্তু সাইয়্যিদ কুতুব (রাহিঃ) তার বোনের অনুরোধের জবাবে বলেন,
    "আমার শব্দগুলো (মতবাদ) আরো শক্তিশালী হবে, যদি তারা আমাকে হত্যা করে."

    এখানে আমাদের বেপরোয়া হওয়ার দিকে আহবান করা হচ্ছে না, বরং ফয়সালাকারী বা দোদুল্যমান পরিস্থিতিতে যেন নিরাপত্তার অজুহাতে যেন আমরা সুযোগ হাতছাড়া না করি।


    যেন আমরা সমাজের বাস্তব পরিবর্তনের ব্যাপারে সঠিক চিন্তাধারায় নিজেদের মনোনিবেশ করতে পারি।


    নিরাপত্তা ও হিম্মতের মাঝে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ ভারসাম্যতা আনয়নই হোক আমাদের ফিকর ও চেস্টার অন্যতম মূলনীতি- এ ই হচ্ছে আমার আহবান।


    আর আল্লাহ তা আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
Working...
X