Announcement

Collapse
No announcement yet.

পশ্চিমা সভ্যতাঃ কপটতা ও দ্বিমুখীতার মিশ্রণ

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • পশ্চিমা সভ্যতাঃ কপটতা ও দ্বিমুখীতার মিশ্রণ

    বর্তমানে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তক ও ইন্টারনেট থেকে ইসলামী ভাবাদর্শের উপর প্রাপ্ত তথ্যসমূহের সারসংক্ষেপ করলে দেখা যাবে, ইসলামী সভ্যতা সংক্রান্ত সম্পূর্ণ আলোচনা তিনটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি বা বৈশিষ্ট্যকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। মূলত, এই নীতি বা বৈশিষ্ট্যগুলোর উপর নির্ভর করে ইসলামী সভ্যতা এবং ইসলামী শাসন ব্যবস্থাকে বিশ্বের সবচেয়ে 'বর্বর' ব্যবস্থা বলে আখ্যায়িত করা হয়। সেই বৈশিষ্ট্যসমূহ হলোঃ


    এক, কট্টর ইসলামী সাম্রাজ্যবাদ বা উপনিবেশবাদ নীতি;
    দুই, সর্বদা আগ্রাসী বা যুদ্ধ মনোভাব পোষণ ; এবং
    তিন, দাস প্রথা।

    কিন্তু, যদি পক্ষপাতহীনভাবে বিবেচনা করা হয় তাহলে দেখা যাবে উল্লেখিত এই বৈশিষ্ট্যগুলো প্রকৃতপক্ষেই ইসলামী সভ্যতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আর ঠিক এখানেই এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপিত হয়। তা এই যে, 'উল্লেখিত তিনটি বৈশিষ্ট্য কি শুধুমাত্র ইসলামী সভ্যতার মাঝেই পাওয়া যায়?' 'নাকি তা অন্যান্য সভ্যতার মাঝেও এই বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান রয়েছে?'


    উত্তর অত্যন্ত সহজ। যারা মানব সভ্যতার ইতিহাস ও বর্তমান সম্পর্কে সামান্যতম জ্ঞান রাখেন; তারা এইকথার সাথে একমত হবেন যে, পৃথিবীর বুকে বড় বা ছোট যত সভ্যতা বা জাতি এসেছে প্রত্যেকের মাঝে উল্লেখিত বৈশিষ্ট্যগুলো বিদ্যমান ছিল এবং আছে।


    যেমনঃ গ্রিক, রোমান, পারস্য, ব্রিটিশ, পর্তুগিজ, জার্মানি। প্রত্যেক জাতির বা সভ্যতার সাম্রাজ্যবাদ, যুদ্ধ ও দাস প্রথার ইতিহাস রয়েছে।


    এমনকি, নিজেকে বিশ্বের সবচেয়ে সভ্য জাতির দাবিদার ও সারা বিশ্বের সভ্যতার শিক্ষিক হিসেবে মাতব্বরি করা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস ও বর্তমান শুধুই যুদ্ধ ও আগ্রাসন দিয়ে পরিপূর্ণ। আমেরিকা বিগত একশ বছরে ৫২ টি যুদ্ধে জড়িয়েছে। এবং পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশে তারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আগ্রাসন চালিয়েছে। (তথ্যঃ উইকিপিডিয়া।)


    তাছাড়া, আমেরিকায় বিশ্বের একমাত্র রাষ্ট্র যারা দাস প্রথাকে কেন্দ্র করে গৃহযুদ্ধে জড়িয়েছে। যে যুদ্ধে দুই পক্ষের প্রায় ৬,৫৫,০০০ লোক নিহিত এবং প্রায় ১৭ লক্ষ লোক আহত হয়। (তথ্যঃ উইকিপিডিয়া।)


    তাহলে কেন একই বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকার কারণে ইসলামী সভ্যতাকে বর্বর বলে আখ্যায়িত করা হবে? আর পশ্চিমা সভ্যতাকে সভ্য বলে বিবেচনা করা হবে?


    উল্লেখিত বৈশিষ্ট্য বা নীতি গ্রহণের ক্ষেত্রে সভ্যতাদ্বয়ের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের মধ্যে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া যাবে।


    ইসলামী সভ্যতার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে,
    এই বৈশিষ্ট্য বা নীতিগুলো যথাযথভাবে গ্রহণের মাধ্যমে আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলার সন্তুষ্টি অর্জন করা এবং দুনিয়ায় আল্লাহ বিধান কায়েমের মাধ্যমে সকল প্রকার ফিতনা দূর করে মানব সভ্যতার জন্য ন্যায়পরায়ণতা নিশ্চিত করা। সর্বোপরি পরকালের অনন্ত সুখ-শান্তি নিশ্চিত করা।

    অন্যদিকে, পশ্চিমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে,
    এই বৈশিষ্ট্য বা নীতিগুলোকে প্রায়োগিক পর্যায়ে ব্যবহারের মাধ্যমে নিজের নফসকে সন্তুষ্ট করা। এবং এই নীতিগুলো ব্যবহার করে আধিপত্য ও ক্ষমতা বিস্তারের মাধ্যমে দুনিয়ার সর্বোচ্চ ভোগবিলাস নিশ্চিত করা।

    ইসলাম আলোচ্য প্রত্যেকটি বিষয়ের (হুকুমত, জিহাদ ও দাস) জন্য একটি নির্দিষ্ট নিয়ম বা আইন প্রদান করেছে। যার কারণে ইসলামী সাম্রাজ্যের একজন প্রজা ও সম্রাটের অধিকার সমান যদিও তাদের দায়িত্বে অনেক তারতাম্য রয়েছে। ইসলামী শরীয়ত এই সকল বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে স্বৈরশাসন ও স্বার্থের শাসনের সকল পথ অবরুদ্ধ করে।


    অন্যদিকে, পশ্চিমা সভ্যতা তাদের আধিপত্য ও ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য একের পর এক নতুন আইন প্রণয়ন করে এই বৈশিষ্ট্যগুলোকে নির্যাতনে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। কেননা, এই পশ্চিমারাই কখনও সাম্রাজ্যবাদের জন্য যুদ্ধ করছে; আবার কখনো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য হাতিয়ার তুলে নিচ্ছে।


    যদি কোনভাবে উল্লেখিত বিষয়গুলো ক্ষেত্রে ইসলামী দৃষ্টিকোণ সাধারন জনগনের সামনে প্রকাশিত হয়; তাহলে মুহূর্তের মধ্যেই পশ্চিমা সভ্যতা ও তাদের মতাদর্শ বালির দুর্গের মত ধসে পড়বে। যেমনটা, ৯/১১ এর মোবারক হামলার পর হয়েছিল। হামলার পর যতবেশি পশ্চিমারা ইসলামকে জানতে চেয়েছে; ততবেশি তারা ইসলামের দিকে আকৃষ্ট হয়েছে। আর ততবেশি পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোতে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের হার বৃদ্ধি পেয়েছে।


    তাই, পশ্চিমা সভ্যতা যতটা না নিজেদের নীতিসমূহ সাধারন জনগণের সামনে তুলে ধরতে আগ্রহী; তার চেয়ে অনেক বেশি আগ্রহী হচ্ছে, ইসলামের ইতিহাস, রীতিনীতি ও মূল্যবোধকে বিকৃতভাবে নতুন প্রজন্মের সামনে উপস্থাপন করার ক্ষেত্রে। যাতে নতুন প্রজন্ম বিশেষ করে মুসলিম প্রজন্ম তাদের বিকৃত তথ্যের উপর নির্ভর করে মুসলিমদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস এবং আগ্রাসনের শিকার বর্তমানকে ঘৃণা করতে শুরু করে।


    তাই, মুসলিম আলেম-উলামা এবং দায়িত্বশীলদের উচিত উল্লেখিত গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলোর আলোচনা না এড়িয়ে; বরং গর্বের সাথে সম্মত হওয়া। কেননা, পশ্চিমাদের চক্রান্ত কতই না দুর্বল।
Working...
X