Announcement

Collapse
No announcement yet.

না, গুয়ানতানামোকে ঘিরে কোনো কেলেঙ্কারি নেই!!!

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • না, গুয়ানতানামোকে ঘিরে কোনো কেলেঙ্কারি নেই!!!



    ১১ জানুয়ারি, ২০২২ গুয়ানতানামো বে-এর জুলুমের ২০ বছর পূর্ণ হয়েছে। যদি স্ট্যাচু অফ লিবার্টি আমেরিকার স্বাধীনতার প্রতীক হয়; তাহলে মার্কিন ভূখণ্ড থেকে অনেক দূরে অবস্থিত এই কুখ্যাত জেলটি আমেরিকার আগ্রাসন, জুলুম, নির্যাতন ও দ্বিমুখীতার জ্বলন্ত প্রমাণ। এখনও এই বন্দী শিবিরে ৩৯ জন বন্দী রয়ে গেছেন। তারা কত দিন যাবত বন্দী আছেন এবং আর কতদিন বন্দী থাকবেন তার কোন হিসাব নেয়; কেননা, গুয়ান্তানামো বে বন্দী শিবিরের বন্দীদের জন্য কোন বিচারিক কার্যক্রম নেয়।

    জনসাধারণের মাঝে গুয়ানতানামো বে নিয়ে খুব বেশি আলোচনা হয় না। মার্কিন প্রশাসন, পশ্চিমা ও পশ্চিমা ঘেষা মিডিয়াসমূহ ও বিশ্ব মানবাধিকার সংস্থাগুলোর নির্লিপ্ততা এই বন্দীশালার মজলুম বন্দীদের সাথে প্রতারণা ও কটাক্ষের সামিল। তারপরও বিভিন্ন সময়ে গুয়ানতানামো বে-কে নিয়ে কিছু বক্তব্য বিশ্ব মিডিয়ার শিরোনাম হয়েছে। আজ আমরা এই বক্তব্যগুলোর পিছের সত্যতা জানার চেষ্টা করবো। ইনশা আল্লাহ।

    'আমরা অত্যন্ত বিপজ্জনক লোকদের আটক করি'

    গুয়ানতানামো বন্দী শিবিরে যাদের বন্দী হিসেবে রাখা হয়েছিল বা এখনো যারা বন্দী হিসেবে আছেন তার কারণ হচ্ছে, 'তারা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হিসেবে বিবেচিত হয়েছিলেন'।

    ২০০২ সালে, তৎকালীন প্রতিরক্ষা সচিব ডোনাল্ড রামসফেল্ড বলেছিল যে, 'সাইটটি (গুয়ানতানামো) অত্যন্ত বিপজ্জনক লোকদের আটক করার জন্য, বন্দীদেরকে একটি সর্বোত্তম পরিবেশে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য এবং যুদ্ধাপরাধের জন্য বন্দীদের বিচার করার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।' কিন্তু মাত্র চার বছর পর, মার্কিন সামরিক বাহিনী স্বীকার করে যে, ক্যাম্পে ৭৭৯ জন বন্দী রয়েছেন। তাদের অপরাধ হলো হয় তারা আল-কায়েদা নতুবা শায়খ ওসামা বিন লাদেন (رحمه الله)-এর সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ।

    কিন্তু উইকিলিকস যখন 'গুয়ানতানামো পেপারস' এর মাধ্যমে এই বন্দীশিবিরের আসল তথ্য ও মার্কিনিদের মিথ্যাচার সারা বিশ্বের সামনে তুলে ধরে তখন মুসলিম বিশ্ব ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর আমলে আসে যে, 'কিভাবে বিনা বিচারে, শুধুমাত্র সন্দেহের বশীবত জিজ্ঞাসাবাদের নামে বছরের পর বছর নির্যাতন চালানো হচ্ছে।'

    উইকিলিকসের ফাঁস করা তথ্য মতে,
    আটককৃতদের মধ্যে মাত্র ২৫-৩০ জন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আল-কায়েদার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিল।
    কিন্তু মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ সন্দেহবশত বন্দী করা নিরীহ ব্যক্তিদের সাথে আল-কায়েদার সম্পৃক্ততার প্রমাণ না করতে পারলেও, মাজলুম বন্দীদের নির্দোষ তালিকাভুক্ত করতে নারাজ। বন্দীদের পক্ষেও নিজেদের নির্দোষ দাবি করার সুযোগ নেয়। কেননা, তার জন্য প্রয়োজন বিচার কার্য।


    তারচেয়েও লজ্জাজনক বিষয় হচ্ছে, যাদের বিরুদ্ধে কোন প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না; তাদের ব্যাপারে বলা হচ্ছে, 'তারা জিজ্ঞাসাবাদ প্রতিরোধের জন্য উচ্চ প্রশিক্ষিত'

    ২০১০ সালে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী কলিন পাওয়েলের একজন প্রাক্তন সহকারী কর্নেল লরেন্স উইলকারসন, একটি হলফনামায় বলেছিলেন যে,
    'সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ, ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনি এবং প্রতিরক্ষা সচিব রামসফেল্ড সহ শীর্ষ মার্কিন কর্মকর্তারা জানতেন যে সংখ্যাগরিষ্ঠ গুয়ানতানামোতে পাঠানো বন্দিরা নির্দোষ।'


    'তারা সর্বোত্তম পরিবেশে অবস্থান করছে'

    ২০০৫ সালে, সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট চেনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিল, "পৃথিবীতে আমেরিকান ছাড়া এমন অন্য কোন জাতি নেই যারা তাদের হত্যা করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ লোকদের সাথে এমন (উত্তম) আচরণ করবে যেভাবে আমরা (আমেরিকানরা) এই লোকদের সাথে করছি। তারা সর্বোত্তম পরিবেশে অবস্থান করছে।"

    কিন্তু, গুয়ানতামো থেকে মুক্তি প্রাপ্ত ব্যক্তিদের সাক্ষ্য থেকে জানা যায় যে, 'উঁচু উঁচু দেয়ালের আড়ালে এত বেশি শারিরীক, মানসিক এবং যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে যে, আল্লাহর প্রতি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ এই বন্দীরা আত্নহত্যার কথা চিন্তা করতে বাধ্য হয়েছেন" (حفظهم الله)।

    পেন্টাগনের কর্মকর্তা ও গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্টদের পাশাপাশি, বিভিন্ন সরকারী-বেসকারী এনজিও সাথে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জিজ্ঞাসাবাদে সময় নৈতিক মান উপেক্ষা করেছেন। মার্কিন 'ডিপার্টমেন্ট অফ ডিফেন্স' এর তথ্য মতে ২০০২ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে, নয়জন বন্দী হেফাজতে মারা গেছেন; তার মধ্যে দুইজন প্রাকৃতিক কারণে এবং সাতজন আত্মহত্যা করেছে বলে জানা গেছে।" (والله أعلم)

    'আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষা করি'

    ৯/১১ মুবারক হামলার পর অনেক নিরীহ, নিরাপরাধ ও সাধারণ মুসলিমও ব্ল্যাক লিস্ট (কালো তালিকা) ভুক্ত হয়। যার মাঝেই অধিকাংশের অবস্থান হয় 'গুয়ানতানামো ও অন্যান্য বিশেষ কারাগারে'। তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ কখনোই ছিল না। কিন্তু, বছরের পর বছর তারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন কারণ নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বা প্রশাসনকে চ্যালেঞ্জ কোন আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার মত সুযোগ তাদের দেওয়া হয়নি। তাদেরকে নির্বিচারে "সন্ত্রাসী" হিসাবে মনোনীত করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, শুধুমাত্র "জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার" নামে।

    উইকিলিকসের তথ্য ফাস করার পর যখন সারা বিশ্ব গুয়ানতানামোর নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারে জানতে পারলো তারপর মার্কিন প্রশাসন কর্মকর্তাদের বিপক্ষে কোন পদক্ষেপই নিলো না। কর্মকর্তাদের অপরাধমূলক কাজগুলো শাস্তিবিহীন রয়ে গেছে, এবং সেই ব্যক্তিদের ক্ষমতা এখনও অফিসের ভেতরে ও বাইরে বহাল রয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের সমস্ত রেকর্ড ভাজ্ঞা এবং বিশ্বব্যাপী তীব্র সমালোচনার পরেও, গুয়ানতানামো বে কারাগার এখন পর্যন্ত বন্ধ করা হয়নি, একমাত্র "জাতীয় নিরাপত্তার" দোহাই দিয়ে।

    জাতীয় নিরাপত্তার নামে মায়াকান্না করা মার্কিন প্রশাসন কিন্তু অন্য দেশের নিরাপত্তা বা সার্বভৌম আমলেই নেয় না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মার্কিন ভূখণ্ড থেকে অনেক দূরে কিউবার মাটিতে অবস্থিত এই বন্দীশালাটি কিউবার স্বাধীনতা ও সার্বভৌম ও জাতীয় নিরাপত্তার উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্লজ্জ হস্তক্ষেপ।

    সেক্রেটারি অফ স্টেট অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন সম্প্রতি বলেছে যে "রাশিয়া একবার আপনার দেশে প্রবেশ করলে, তাদের উৎখাত করা কখনো কখনো খুবই কঠিন।" আমার মনে হয় বিবৃতিটি সামান্য পরিবর্তন করা উচিত, "আমেরিকা বা রাশিয়া একবার আপনার দেশে প্রবেশ করলে, তাদের উৎখাত করা কখনো কখনো খুবই কঠিন। কারণ তারা আপনার সার্বভৌমত্ব ও মূল্যবোধকে সম্মাণ করে না।"

    তারপরও কেউ যদি বলে, "না, গুয়ানতানামো বে কারাগারকে ঘিরে কোনো কেলেঙ্কারি নেই।"
    তাহলে প্রতিউত্তর হচ্ছে,
    "হ্যাঁ, এটা সত্য। কারণ গুয়ান্তানামো নিজেই একটি কেলেঙ্কারি।"

  • #2
    তাগুতের বন্দিশালায় নির্যাতিত হওয়া অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়।হয়ত নির্যাতন থেকে বাঁচতে আত্মহত্যা করে জাহান্নামে যাবে নতুবা এই ভয়াবহ কষ্ট সহ্য করে জান্নাত কামাবে।এর অবস্থায় আমি মনে করে এভাব দোয়া করা উচিৎ প্রথম আল্লাহর কাছে দৃঢ়তা চাইবে দ্বিতীয়ত মুক্তির জন্য দোয়া এবং চেষ্টা করবে।

    Comment


    • #3
      যদি স্ট্যাচু অফ লিবার্টি আমেরিকার স্বাধীনতার প্রতীক হয়; তাহলে মার্কিন ভূখণ্ড থেকে অনেক দূরে অবস্থিত এই কুখ্যাত জেলটি আমেরিকার আগ্রাসন, জুলুম, নির্যাতন ও দ্বিমুখীতার জ্বলন্ত প্রমাণ।
      মা-শা-আল্লাহ, অসাধারণ!!!
      মিডিয়ার সাফল্য অনেকাংশেই তার প্রচারণার উপর নির্ভরশীল।

      Comment

      Working...
      X