মাসজিদ বন্ধ, বন্ধ মাদারিসও। নবআবিষ্কৃত প্রচলিত দাওয়াত-তাবলিগ আর খানকারাজিও করোনালীলার সামনে মুখ থুবড়ে পড়েছে। কিন্তু উম্মাহর শ্রেষ্ঠ সন্তানদের বিজয়াভিযান আর কালেমায়ে তাওহীদখচিত ঝান্ডার ফরফর আওয়াজ বিহামদিল্লাহ থামে নি। সত্যিকার জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর সামনে কোন কিছু যে ধোপে টিকে না তা আরেকবার প্রমাণিত হয়েছে। সকল প্রশংসা আল্লাহর।
তবে এ জন্য প্রয়োজন ইখলাস ও তাকওয়া আর দৃঢ় মনোবল ও বাহ্যিক প্রস্তুতির অভূতপূর্ব সমন্বয়। প্রয়োজন কোরআন-সুন্নাহ সমর্থিত ইলমি এক সিলেবাস ও পথনির্দেশ। কৌশল নির্ধারণ আর টার্গেট নির্ণয়েও থাকতে হবে নতুনত্ব, স্পষ্টতা ও সমীকরণের সমাহার।
কিন্তু আমাদের অনেক ভাইই এই করোনার অজুহাতে নিজ কর্তব্য থেকে পিছিয়ে পড়েছেন। বিশাল গ্যাপ ও ধীরতার জালে অনেক ভাইই আটকে পড়েছেন। ভাইগণ, কর্তব্যপরায়ণতা রুচিশীল মানুষদের সহজাত একটি গুণ। তদুপরি তা যদি হয় অর্পিত ফরজ দায়িত্ব এবং দায়িত্বপালনে অবহেলার পরিণতিতে থাকে পালনকর্তা আল্লাহর ভয়ানক শাস্তি, তবে তা যথাযথ সম্পাদন তো তীব্রভাবে প্রয়োজন! অন্যথায় ক্ষতির হাত থেকে নিজেকে বাঁচানো অসম্ভব!!
অনেক ভাই নিজেদের সাধারণ ও বিশেষ করণীয়সমূহকে নিজস্ব পরিমন্ডলে ও ব্যাক্তিগত স্বাধীন দায়িত্ব হিসেবে ভাবেন। তাই অবহেলা-অলসতার ফাঁদে পা দিয়ে নিজেদের কাজে ত্রুটি করেন। এমন ধারণা-ভাবনা অশুদ্ধ, অমঙ্গলজনক। প্রথমতঃ জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ মহান আল্লাহর মহান বিধান, ব্যাক্তিগত পরিসরে ও স্বাধীনভাবে পালনীয় কোন বিধান নয়। হাদিসের ভাষ্যমতে জিহাদের পরিপূর্ণ ফল আহরণে জামাতবদ্ধতা অপরিহার্য। হয় তো কোন জামাআহ'র সহযাত্রী হবে নয় তো নিষ্ঠার সহিত কোন জামাআহ'র গোড়াপত্তনে কাজ করে যাবে। আমাদের উপর অর্পিত করণীয়গুলো এরই এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।
দ্বিতীয়তঃ আমাদের এ সব পদক্ষেপ ও করণীয় আঞ্চলিক বা বর্ণবাদী কোন কর্মসংঘ নয়, বরং বিশ্বের প্রান্তভাগের জিহাদের প্রতিজন মুজাহিদ ও রিবাতের প্রতিজন অতন্দ্রপ্রহরীর নিরবচ্ছিন্ন গ্লোবাল নেটওয়ার্কিংয়ের এক একটি অংশ। এটা বিশ্বযুদ্ধ। শুধু বিশ্বযুদ্ধ নয়; বরং মহাবিশ্বযুদ্ধ। ভয়াবহতায় এটি বিগত কালের সকল উন্মাদনা অতিক্রম করবে। নিশ্চিত, সন্দেহ নেই।
বিগত বিশ্বযুদ্ধের তুলনায় এবারের ওয়্যারের নতুনত্ব কী জানেন? বিগত যুদ্ধগুলো ছিল কাফেরদের নিজেদের মাঝে সংগঠিত নিছক স্বার্থযুদ্ধ কিংবা পাওয়ারিংয়ের ফিল্ড মহড়া, যেখানে বিভিন্ন মুরতাদ রাষ্ট্র ও অনেক মুসলমানরাও সহপ্রতিপক্ষের ভূমিকায় ছিল। কিন্তু এবারের লড়াই নিছক কোন স্বার্থযুদ্ধ নয়, নয় কোন দলীয় ও প্রভাববিস্তারের শৈল্পিক মহড়া, বরং এবারের যুদ্ধ ইসলাম ও কুফরের মধ্যকার অভূতপূর্ব এক লড়াই। এ লড়াই আকিদা ও আদর্শের লড়াই। কুফফারজোটের প্রতিপক্ষ হিসেবে এ পর্বে থাকছে এমন এক যোদ্ধা, উথান ঘটছে এমন এক রাইফেলধারীর, যাদের ব্যপারে কুফফাররা ভেবেছিল যে, অনেক আগেই শেষ করে দিয়েছে। এ যুদ্ধের সবচে' আশ্চর্যজনক ও চাঞ্চল্যকর দিক কী জানেন? নেতৃত্ব দেবার লক্ষ্যে এবার স্বয়ং কমান্ডিংয়ের বাগডোর হাতে ময়দানে নেমেছে এমন দু' দু' জেনারেল উস্তাদ, হাজার বছর ধরে যাদের পথ সুগম করে আসছিল স্বয়ং তাদের চেতনাধারী অনুসারীরা। এরা আর কেউ নয়, বীর সিংহদের নেতৃত্বে স্বয়ং মাসীহ ঈসা ও ঈমাম মাহদী (আ.) আর কাপুরুষ শিয়ালদের নেতৃত্বে স্বয়ং অভিশপ্ত ইবলিস আর তার কানা সহচর মাসীহ দাজ্জাল। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রামের অশিক্ষিত পরিবেশের এক বিরান ছাদের নিচে শুয়ে কিবোর্ডে রাখা আপনার নরম হাতের সেই চকচক ছাপ যে কানা দাজ্জালের কানা চোখে তীরের ফলার ন্যায় আঘাত হানছে তা আপনি বিস্মৃত হয়ে গিয়েছেন? অতএব অবহেলা কিসের? কেন আসে ধীরতা? আপনার নিত্যদিনের দাওয়াতি কাজ আর একটুখানি কষ্টস্বীকার অদ্য নেটওয়ার্কের এক একটি ইট, যা ছাড়া এ লড়াই সফলতা দেখে না। যেখানে একটু ধীরতা আর খানিকটা অবহেলা ঈমাম মাহদীর বাহিনীর সাময়িক পতন ডেকে আনতে পারে। আপনি কি তা চান? (অবশ্য ইমাম মাহদীর বাহিনী-ই চূড়ান্ত বিজয়ী হবে। তবে আপনার ধীরতা ও অলসতা আপনার নিজের পতন ডেকে আনতে পারে নিশ্চিতরূপে? আপনি কি আপনার পতন চান? যদি না চান, তাহলে ধীরতা ও অলসতা ছাড়ুন!)
তৃতীয়তঃ পুরো উম্মাহ তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে। আমরা যদি হেরে যাই, পুরো জাতি হেরে যাবে। পুরো জাতি আমাদের উপর ভরসা করে ঘুমায়। আমরা তো আফিয়া সিদ্দীকা'র রক্তের প্রতিশোধগ্রহণকারীর খাতায় নাম লিখিয়েছি। তাঁর যে রগগুলো আমেরিকা ব্লেড দিয়ে কেটে দিয়েছিল, আমরা তো সেসব ধমনী জোড়া লাগাতে মাঠে নেমেছি। যালিমের সেই কারা দেয়াল ভেঙ্গে ফাতিমাকে উদ্ধারের মিশন নিয়ে আমরা মাঠে নেমেছি। জামেয়া হাফসার সেই সোনালী দরসগাহে আবারও আল্লাহু আকবারের তপ্তধ্বনির সুর বাজাতে ঘোড়ার পিটে জিন কষেছি। ভূস্বর্গে কেন বীর কমান্ডার জাকির মুসা (রহ.) র তাজা খুনের বন্যা বইল দানব মোদীর জবান থেকে এর জবাব নিতে রওয়ানা হয়েছি। কেন ঝুলল শহীদ মুফতি হান্নানের লাশ, কেন বের হল মাওলানা ইয়াহইয়ার নিথর দেহ, এমন কী অপরাধে খাঁচায় বন্দী শায়খ রহমানী ত্বাগুত হাসিনার কাছ থেকে এর সদুত্তর খুজতে ঘর ছেড়েছি। উম্মাহর এসব রক্তক্ষতের প্রতিশোধ আর যালেমদের মুখ থেকে এসব প্রশ্নের সদুত্তর না নিয়ে আমাদের এবারের যাত্রা থামছে না বিইযনিল্লাহ। কিন্তু এমন ধীরগতি আর অবহেলার নীতি নিয়ে কি আদৌও মানযিলে মাকসুদে পৌঁছা সম্ভব? আমার তো মনে হয় না। তাই ভাই, কর্মক্ষেত্রে আরো দ্রুততর হোন। অনুধাবনী আর উদ্ভাবনী শক্তিকে দক্ষহাতে কাজে লাগান। অলসতা আর ধীরতার এই অশুভ কাঁথা ছুঁড়ে ফেলে উঠুন নতুনভাবে। হ্যাঁ, হে চাদরাবৃত, উঠুন, স্বজাতিকে সতর্ক করুন। আর যালেমদের ধমকিয়ে দিন।
আমরা উত্তরসূরীরা আসলেই অবিবেচক, অযোগ্য। না হয় হিসেব-নিকেশ কি অদ্য শেষ হয়ে গেছে? মুকুল রানা ভাইয়ের ফাঁসির হিসেব কি চুকিয়ে দেওয়া হয়েছে? শাতিমে রাসূলের ঘাড়ে খঞ্জরের শানদাতারা কি আমাদের মাঝে এখনো ফিরে এসেছেন? শামীম ভাইদের উপর চালিত ক্রসফায়ারের বুলেটগুলো কি সততার সাথে ত্বাগুতদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে? না তো? কিছুই তো এখনও হয় নি। হিসেব-নিকেশ তো এখনো অনেক বাকি আছে! এগুলো কি চুকাতে হবে না? তাহলে কেন এত ধীরতা? পায় কেন অলসতা? কিভাবে এক হয় দুচোখের পাতা? যাবতীয় প্রযুক্তি আর ট্রেনিং-প্রশিক্ষণ থাকা সত্ত্বেও এরা তো বসে নেই। নিরলসভাবে আমাদের দমনে কৌশল এঁটে যাচ্ছে। তাহলে আমরা কেন ধীরবশে অবহেলা-অলসতা করে বসে থাকবো!? পূর্বসূরিদের আত্মা আমাদের অভিশাপ দিয়ে বেড়াবে!!!
ভাল লাগে না? বিরক্তিকর? কাল করবো? পারিবারিক ঝামেলা? পড়ালেখার ব্যস্ততা? ক্যারিয়ারের স্বার্থচিন্তা? এগুলোই তো অজুহাত, না ভাই? দুটি প্রশ্ন করে যাচ্ছি। বলুন, কোনো কালে কি মরণ হবে, কখন হবে বলে ধারণা? হাশরের মাঠে এসব অজুহাত আসলেও কি টিকবে? না টিকলে কেমন করে বাঁচাবেন নিজেকে মহান রবের পাকড়াও থেকে?
কত আগে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠিত হতো, যদি আমরা পঙ্কিলতা, অলসতা-বিলাসিতা আর বাজে কল্পনার রাজ্য থেকে বের হয়ে কর্তব্যের পাঠে আত্মনিয়োগ করতাম!! দিন দিন পিছিয়ে যায় উম্মাহর শরীয়াহ আর আমাদের শাহাদাহ, নিজেদের কর্মত্রুটির ফলে!!! আমাদেরকে আরো ত্যাগী, উদ্যমী ও সর্বস্বউজাড়ী হতে হবে।
মনে আছে কি মুহাদ্দিস সাহাবী আবু হোরায়রা (র.) র কথা? 'আমি যদি সে যুদ্ধ পেয়ে যাই, তবে আমার নতুন-পুরাতন সব আসবাবপত্র বিক্রি করে দিয়ে সেই জিহাদে শামিল হয়ে যাবো' কত দীপ্তিমান শপথ! ইনি কিন্তু যোদ্ধানবীর সহচর। অঙ্গীকার যাদের পরিবর্তন হয় না। স্বয়ং কোরআনই এর স্বীকৃতিদাতা। হযরত আবু হোরায়রার জন্য সে গাজওয়াতুল হিন্দ সুদূর ছিল। কিন্তু আমাদের জন্য? বহুদূর, না হাতের নাগালে? আমরা কি পারি না সবধরণের পাপ-পঙ্কিলতা আর অলস-বিলাসিতার নাগপাশমুক্ত হয়ে এ লড়াইয়ে অংশ নিতে? পারি না নতুন-পুরাতন সব আসবাবপত্র বিক্রি করে দিয়ে এ জিহাদের শাহাদাত ভাগাভাগি করে আবু হোরায়রার 'কুনতু আফজালুশ শুহাদা'র কোটাটি সংস্কার করতে? তাহলে আর কেন অলসতা? কেন আর বিলাসিতা? উঠুন, জাগুন, আর এক কঠোর সাধনায় আত্মনিয়োগ করুন।
সেদিন বেশি দূরে নয়, আপনার তপ্তরঙিন মেশক যেদিন উম্মাহর মুখে হাসি ফোটাবে। নাফনদীর ওপারে পিচ্ছিগুলো ভোরে কোরআন হাতে গলিবেয়ে মক্তবে পড়তে যাবে। ভায়েরা হয়তো বায়তুল মুকাদ্দাসে নয়তো মদীনা মুনাওয়্যারায় ঈসা মসীহের (আ.) র কাছে ইলম আর হিকমাহ শিখতে যাবে। আয়েশা সিদ্দিকা ও উম্মে সালামাহ'র (রযি.) কন্যাজয়ারা হাদিসের দরস দেবে। মুহাম্মদ ইবনে সীরীনের (রহি.) বোনেরা হাদিস বিশ্লেষণে বাজার মাতাবে।
শুরু হয়েছে জাগরণ। ঐ শুনা যায় বর্বর আমেরিকার কোমর ভাঙ্গার মর্মর আওয়াজ। শীঘ্রই অনুষ্ঠিত হবে রাশিয়ার সাথে শাম আর উইঘুর ভাইদের চূড়ান্ত বোঝাপাড়া। অচিরেই ভেসে আসবে চীনের কাশগড় থেকে কুতায়বা বিন মুসলিমের ঘোড়ার হ্রেষাধ্বনি। এই তো রাজা দাহিরের উত্তরসূরী কষাই মোদীর গলদেশে শিকল পরাতে কোমর বেঁধে নিচ্ছেন আনসার গাজওয়াতুল হিন্দের বিন কাসিমেরা। এবার সিদ্ধান্ত আপনার, তাঁদের সাথে খেলাটা কি আপনি নিজেও খেলবেন? না গলা উচু করে দূর থেকে দৃশ্যটা একটু উপভোগ করবেন????!!! ( খেলতে চাইলে অলসতা-ধীরতা ছাড়তে হবে)
তবে এ জন্য প্রয়োজন ইখলাস ও তাকওয়া আর দৃঢ় মনোবল ও বাহ্যিক প্রস্তুতির অভূতপূর্ব সমন্বয়। প্রয়োজন কোরআন-সুন্নাহ সমর্থিত ইলমি এক সিলেবাস ও পথনির্দেশ। কৌশল নির্ধারণ আর টার্গেট নির্ণয়েও থাকতে হবে নতুনত্ব, স্পষ্টতা ও সমীকরণের সমাহার।
কিন্তু আমাদের অনেক ভাইই এই করোনার অজুহাতে নিজ কর্তব্য থেকে পিছিয়ে পড়েছেন। বিশাল গ্যাপ ও ধীরতার জালে অনেক ভাইই আটকে পড়েছেন। ভাইগণ, কর্তব্যপরায়ণতা রুচিশীল মানুষদের সহজাত একটি গুণ। তদুপরি তা যদি হয় অর্পিত ফরজ দায়িত্ব এবং দায়িত্বপালনে অবহেলার পরিণতিতে থাকে পালনকর্তা আল্লাহর ভয়ানক শাস্তি, তবে তা যথাযথ সম্পাদন তো তীব্রভাবে প্রয়োজন! অন্যথায় ক্ষতির হাত থেকে নিজেকে বাঁচানো অসম্ভব!!
অনেক ভাই নিজেদের সাধারণ ও বিশেষ করণীয়সমূহকে নিজস্ব পরিমন্ডলে ও ব্যাক্তিগত স্বাধীন দায়িত্ব হিসেবে ভাবেন। তাই অবহেলা-অলসতার ফাঁদে পা দিয়ে নিজেদের কাজে ত্রুটি করেন। এমন ধারণা-ভাবনা অশুদ্ধ, অমঙ্গলজনক। প্রথমতঃ জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ মহান আল্লাহর মহান বিধান, ব্যাক্তিগত পরিসরে ও স্বাধীনভাবে পালনীয় কোন বিধান নয়। হাদিসের ভাষ্যমতে জিহাদের পরিপূর্ণ ফল আহরণে জামাতবদ্ধতা অপরিহার্য। হয় তো কোন জামাআহ'র সহযাত্রী হবে নয় তো নিষ্ঠার সহিত কোন জামাআহ'র গোড়াপত্তনে কাজ করে যাবে। আমাদের উপর অর্পিত করণীয়গুলো এরই এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।
দ্বিতীয়তঃ আমাদের এ সব পদক্ষেপ ও করণীয় আঞ্চলিক বা বর্ণবাদী কোন কর্মসংঘ নয়, বরং বিশ্বের প্রান্তভাগের জিহাদের প্রতিজন মুজাহিদ ও রিবাতের প্রতিজন অতন্দ্রপ্রহরীর নিরবচ্ছিন্ন গ্লোবাল নেটওয়ার্কিংয়ের এক একটি অংশ। এটা বিশ্বযুদ্ধ। শুধু বিশ্বযুদ্ধ নয়; বরং মহাবিশ্বযুদ্ধ। ভয়াবহতায় এটি বিগত কালের সকল উন্মাদনা অতিক্রম করবে। নিশ্চিত, সন্দেহ নেই।
বিগত বিশ্বযুদ্ধের তুলনায় এবারের ওয়্যারের নতুনত্ব কী জানেন? বিগত যুদ্ধগুলো ছিল কাফেরদের নিজেদের মাঝে সংগঠিত নিছক স্বার্থযুদ্ধ কিংবা পাওয়ারিংয়ের ফিল্ড মহড়া, যেখানে বিভিন্ন মুরতাদ রাষ্ট্র ও অনেক মুসলমানরাও সহপ্রতিপক্ষের ভূমিকায় ছিল। কিন্তু এবারের লড়াই নিছক কোন স্বার্থযুদ্ধ নয়, নয় কোন দলীয় ও প্রভাববিস্তারের শৈল্পিক মহড়া, বরং এবারের যুদ্ধ ইসলাম ও কুফরের মধ্যকার অভূতপূর্ব এক লড়াই। এ লড়াই আকিদা ও আদর্শের লড়াই। কুফফারজোটের প্রতিপক্ষ হিসেবে এ পর্বে থাকছে এমন এক যোদ্ধা, উথান ঘটছে এমন এক রাইফেলধারীর, যাদের ব্যপারে কুফফাররা ভেবেছিল যে, অনেক আগেই শেষ করে দিয়েছে। এ যুদ্ধের সবচে' আশ্চর্যজনক ও চাঞ্চল্যকর দিক কী জানেন? নেতৃত্ব দেবার লক্ষ্যে এবার স্বয়ং কমান্ডিংয়ের বাগডোর হাতে ময়দানে নেমেছে এমন দু' দু' জেনারেল উস্তাদ, হাজার বছর ধরে যাদের পথ সুগম করে আসছিল স্বয়ং তাদের চেতনাধারী অনুসারীরা। এরা আর কেউ নয়, বীর সিংহদের নেতৃত্বে স্বয়ং মাসীহ ঈসা ও ঈমাম মাহদী (আ.) আর কাপুরুষ শিয়ালদের নেতৃত্বে স্বয়ং অভিশপ্ত ইবলিস আর তার কানা সহচর মাসীহ দাজ্জাল। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রামের অশিক্ষিত পরিবেশের এক বিরান ছাদের নিচে শুয়ে কিবোর্ডে রাখা আপনার নরম হাতের সেই চকচক ছাপ যে কানা দাজ্জালের কানা চোখে তীরের ফলার ন্যায় আঘাত হানছে তা আপনি বিস্মৃত হয়ে গিয়েছেন? অতএব অবহেলা কিসের? কেন আসে ধীরতা? আপনার নিত্যদিনের দাওয়াতি কাজ আর একটুখানি কষ্টস্বীকার অদ্য নেটওয়ার্কের এক একটি ইট, যা ছাড়া এ লড়াই সফলতা দেখে না। যেখানে একটু ধীরতা আর খানিকটা অবহেলা ঈমাম মাহদীর বাহিনীর সাময়িক পতন ডেকে আনতে পারে। আপনি কি তা চান? (অবশ্য ইমাম মাহদীর বাহিনী-ই চূড়ান্ত বিজয়ী হবে। তবে আপনার ধীরতা ও অলসতা আপনার নিজের পতন ডেকে আনতে পারে নিশ্চিতরূপে? আপনি কি আপনার পতন চান? যদি না চান, তাহলে ধীরতা ও অলসতা ছাড়ুন!)
তৃতীয়তঃ পুরো উম্মাহ তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে। আমরা যদি হেরে যাই, পুরো জাতি হেরে যাবে। পুরো জাতি আমাদের উপর ভরসা করে ঘুমায়। আমরা তো আফিয়া সিদ্দীকা'র রক্তের প্রতিশোধগ্রহণকারীর খাতায় নাম লিখিয়েছি। তাঁর যে রগগুলো আমেরিকা ব্লেড দিয়ে কেটে দিয়েছিল, আমরা তো সেসব ধমনী জোড়া লাগাতে মাঠে নেমেছি। যালিমের সেই কারা দেয়াল ভেঙ্গে ফাতিমাকে উদ্ধারের মিশন নিয়ে আমরা মাঠে নেমেছি। জামেয়া হাফসার সেই সোনালী দরসগাহে আবারও আল্লাহু আকবারের তপ্তধ্বনির সুর বাজাতে ঘোড়ার পিটে জিন কষেছি। ভূস্বর্গে কেন বীর কমান্ডার জাকির মুসা (রহ.) র তাজা খুনের বন্যা বইল দানব মোদীর জবান থেকে এর জবাব নিতে রওয়ানা হয়েছি। কেন ঝুলল শহীদ মুফতি হান্নানের লাশ, কেন বের হল মাওলানা ইয়াহইয়ার নিথর দেহ, এমন কী অপরাধে খাঁচায় বন্দী শায়খ রহমানী ত্বাগুত হাসিনার কাছ থেকে এর সদুত্তর খুজতে ঘর ছেড়েছি। উম্মাহর এসব রক্তক্ষতের প্রতিশোধ আর যালেমদের মুখ থেকে এসব প্রশ্নের সদুত্তর না নিয়ে আমাদের এবারের যাত্রা থামছে না বিইযনিল্লাহ। কিন্তু এমন ধীরগতি আর অবহেলার নীতি নিয়ে কি আদৌও মানযিলে মাকসুদে পৌঁছা সম্ভব? আমার তো মনে হয় না। তাই ভাই, কর্মক্ষেত্রে আরো দ্রুততর হোন। অনুধাবনী আর উদ্ভাবনী শক্তিকে দক্ষহাতে কাজে লাগান। অলসতা আর ধীরতার এই অশুভ কাঁথা ছুঁড়ে ফেলে উঠুন নতুনভাবে। হ্যাঁ, হে চাদরাবৃত, উঠুন, স্বজাতিকে সতর্ক করুন। আর যালেমদের ধমকিয়ে দিন।
আমরা উত্তরসূরীরা আসলেই অবিবেচক, অযোগ্য। না হয় হিসেব-নিকেশ কি অদ্য শেষ হয়ে গেছে? মুকুল রানা ভাইয়ের ফাঁসির হিসেব কি চুকিয়ে দেওয়া হয়েছে? শাতিমে রাসূলের ঘাড়ে খঞ্জরের শানদাতারা কি আমাদের মাঝে এখনো ফিরে এসেছেন? শামীম ভাইদের উপর চালিত ক্রসফায়ারের বুলেটগুলো কি সততার সাথে ত্বাগুতদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে? না তো? কিছুই তো এখনও হয় নি। হিসেব-নিকেশ তো এখনো অনেক বাকি আছে! এগুলো কি চুকাতে হবে না? তাহলে কেন এত ধীরতা? পায় কেন অলসতা? কিভাবে এক হয় দুচোখের পাতা? যাবতীয় প্রযুক্তি আর ট্রেনিং-প্রশিক্ষণ থাকা সত্ত্বেও এরা তো বসে নেই। নিরলসভাবে আমাদের দমনে কৌশল এঁটে যাচ্ছে। তাহলে আমরা কেন ধীরবশে অবহেলা-অলসতা করে বসে থাকবো!? পূর্বসূরিদের আত্মা আমাদের অভিশাপ দিয়ে বেড়াবে!!!
ভাল লাগে না? বিরক্তিকর? কাল করবো? পারিবারিক ঝামেলা? পড়ালেখার ব্যস্ততা? ক্যারিয়ারের স্বার্থচিন্তা? এগুলোই তো অজুহাত, না ভাই? দুটি প্রশ্ন করে যাচ্ছি। বলুন, কোনো কালে কি মরণ হবে, কখন হবে বলে ধারণা? হাশরের মাঠে এসব অজুহাত আসলেও কি টিকবে? না টিকলে কেমন করে বাঁচাবেন নিজেকে মহান রবের পাকড়াও থেকে?
কত আগে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠিত হতো, যদি আমরা পঙ্কিলতা, অলসতা-বিলাসিতা আর বাজে কল্পনার রাজ্য থেকে বের হয়ে কর্তব্যের পাঠে আত্মনিয়োগ করতাম!! দিন দিন পিছিয়ে যায় উম্মাহর শরীয়াহ আর আমাদের শাহাদাহ, নিজেদের কর্মত্রুটির ফলে!!! আমাদেরকে আরো ত্যাগী, উদ্যমী ও সর্বস্বউজাড়ী হতে হবে।
মনে আছে কি মুহাদ্দিস সাহাবী আবু হোরায়রা (র.) র কথা? 'আমি যদি সে যুদ্ধ পেয়ে যাই, তবে আমার নতুন-পুরাতন সব আসবাবপত্র বিক্রি করে দিয়ে সেই জিহাদে শামিল হয়ে যাবো' কত দীপ্তিমান শপথ! ইনি কিন্তু যোদ্ধানবীর সহচর। অঙ্গীকার যাদের পরিবর্তন হয় না। স্বয়ং কোরআনই এর স্বীকৃতিদাতা। হযরত আবু হোরায়রার জন্য সে গাজওয়াতুল হিন্দ সুদূর ছিল। কিন্তু আমাদের জন্য? বহুদূর, না হাতের নাগালে? আমরা কি পারি না সবধরণের পাপ-পঙ্কিলতা আর অলস-বিলাসিতার নাগপাশমুক্ত হয়ে এ লড়াইয়ে অংশ নিতে? পারি না নতুন-পুরাতন সব আসবাবপত্র বিক্রি করে দিয়ে এ জিহাদের শাহাদাত ভাগাভাগি করে আবু হোরায়রার 'কুনতু আফজালুশ শুহাদা'র কোটাটি সংস্কার করতে? তাহলে আর কেন অলসতা? কেন আর বিলাসিতা? উঠুন, জাগুন, আর এক কঠোর সাধনায় আত্মনিয়োগ করুন।
সেদিন বেশি দূরে নয়, আপনার তপ্তরঙিন মেশক যেদিন উম্মাহর মুখে হাসি ফোটাবে। নাফনদীর ওপারে পিচ্ছিগুলো ভোরে কোরআন হাতে গলিবেয়ে মক্তবে পড়তে যাবে। ভায়েরা হয়তো বায়তুল মুকাদ্দাসে নয়তো মদীনা মুনাওয়্যারায় ঈসা মসীহের (আ.) র কাছে ইলম আর হিকমাহ শিখতে যাবে। আয়েশা সিদ্দিকা ও উম্মে সালামাহ'র (রযি.) কন্যাজয়ারা হাদিসের দরস দেবে। মুহাম্মদ ইবনে সীরীনের (রহি.) বোনেরা হাদিস বিশ্লেষণে বাজার মাতাবে।
শুরু হয়েছে জাগরণ। ঐ শুনা যায় বর্বর আমেরিকার কোমর ভাঙ্গার মর্মর আওয়াজ। শীঘ্রই অনুষ্ঠিত হবে রাশিয়ার সাথে শাম আর উইঘুর ভাইদের চূড়ান্ত বোঝাপাড়া। অচিরেই ভেসে আসবে চীনের কাশগড় থেকে কুতায়বা বিন মুসলিমের ঘোড়ার হ্রেষাধ্বনি। এই তো রাজা দাহিরের উত্তরসূরী কষাই মোদীর গলদেশে শিকল পরাতে কোমর বেঁধে নিচ্ছেন আনসার গাজওয়াতুল হিন্দের বিন কাসিমেরা। এবার সিদ্ধান্ত আপনার, তাঁদের সাথে খেলাটা কি আপনি নিজেও খেলবেন? না গলা উচু করে দূর থেকে দৃশ্যটা একটু উপভোগ করবেন????!!! ( খেলতে চাইলে অলসতা-ধীরতা ছাড়তে হবে)
Comment