Announcement

Collapse
No announcement yet.

জিহাদ প্রসঙ্গে মাওলানা আব্দুল মালেক হাফিজাহুল্লাহর বয়ান এবং কিছু অভিব্যক্তি (৫-৬-৭)

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • জিহাদ প্রসঙ্গে মাওলানা আব্দুল মালেক হাফিজাহুল্লাহর বয়ান এবং কিছু অভিব্যক্তি (৫-৬-৭)

    বক্তব্য০৫: [গাইরে আলেম, সাহাবি বিদ্বেষী এবং কট্টর সালাফিদের থেকে জিহাদ-সিয়াসত-খিলাফত সম্পর্কে নতুন নতুন আফকার শুরু হয়েছে কিছু রিসালাতে সমস্ত আফকার এখন পেশ করা হচ্ছে এসব রিসালা পেয়ে তালিবুল ইলমরা মনে করছে বড় একটা কিছু পেয়ে গেছে মনে করছে আসমানে পৌঁছে গেছে, জান্নাতে পৌঁছে গেছে]

    অভিব্যক্তি
    সেই ইজমাল আর শূন্যতাটা এখানেও অনুভূত হচ্ছে:
    # গাইরে আলেম, সাহাবি বিদ্বেষী এবং কট্টর সালাফি লোকগুলো কারা?
    # জিহাদ-সিয়াসত-খিলাফতের ব্যাপারে তারা কি কি নতুন আফকার পেশ করছে?
    # সে আফকারগুলোর পক্ষে দলীল কি?
    # সেগুলো ভুল হলে শরীয়তে সহীহটা কি? এবং সে সহীহটার পক্ষে দলীল কি?
    # ভ্রান্ত আফকারের পক্ষে পেশকৃত দলীলগুলোর খণ্ডন কি?

    বিষয়গুলো বিস্তারিত না আসলে তালিবুল ইলমদেরকে রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে বিশেষত ইতোমধ্যে ব্যাপকভাবেই লক্ষ করা যাচ্ছে যে, তালিবুল ইলমরা আপন উস্তাদদের অনেকের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছে এখন উস্তাদ একটা কথা বললে শুধু উস্তাদ হওয়ার কারণে কথাটা মেনে নেবে- পরিস্থিতি আর থাকছে না তাই দলীল প্রমাণের আলোকে আলোচনা সমালোচনাই এখন সমাধানের একমাত্র পথ

    # হয়তো বলা হবে, দলীল বুঝার যোগ্যতা তোমার আছে?
    উত্তরে বলবো, নতুন করে দলীল বের করতে হবে না আইম্মায়ে কেরাম যেসব দলীল দিয়ে গেছেন সেগুলো নিয়ে কথা বললেই হবে আর ফিকহ ফাতাওয়ার এটাও একটা উসূল যে, তারজিহে তাআরুজ হলে তখন প্রত্যেক ইমাম তার নিজের পক্ষে যে দলীল পেশ করে গেছেন, আমরা আমাদের যোগ্যতা অনুযায়ী সেগুলোর একটা যাচ-পরতাল করে আমল করার চেষ্টা করবো

    যেমন হাসকাফি রহ. ফতোয়ার মূলনীতি আলোচনা করতে গিয়ে বলেছেন,
    فإن قلت: قد يحكون أقوالا بلا ترجيح، وقد يختلفون في الصحيح. قلت: يعمل بمثل ما عملوا من اعتبار تغير العرف وأحوال الناس، وما هو الأوفق وما ظهر عليه التعامل وما قوي وجهه. اهـ
    “যদি বলা হয়, অনেক সময় তো বেশ কয়েকটা মত থাকে কিন্তু কোনোটার পক্ষে কারও তারজিহ থাকে না এমনিভাবে তারজিহ দিতে গিয়ে কখনও কখনও দ্বিমত হয়ে যায় (তখন কিভাবে আমল হবে? কোন মতের উপর আমল হবে?)
    উত্তরে বলবো: মুজতাহিদিনে কেরাম নিজেরা (কোনো মত ব্যক্ত করতে গিয়ে বা পূর্ববর্তী মুজতাহিদদের একাধিক মতের কোনো একটাকে তারজিহ দিতে গিয়ে) যেসব নীতি মেনে চলেছেন, আমরাও সেগুলোও অনুসরণ করবো যেমন: উরফ-যামানা এবং জন-মানুষের জীবনাচারের পরিবর্তন লক্ষ রাখা, (এবং লক্ষ রাখা) কোনটি (যামানা মানুষের জীবনাচারের সাথে) অধিক খাপ খায়, কোনটির উপর আমল চলে আসছে এবং কোনটির দলীল শক্তিশালী।” -আদদুররুল মুখতার (রদ্দুল মুহতারের সাথে মুদ্রিত): /৭৭-৭৮

    অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি কোনটার দলীল শক্তিশালী সেটাও তিনি লক্ষ রাখতে বলেছেন

    ইবনু আবিদিন শামি রহ. কথাটির ব্যাখ্যায় বলেছেন,
    (قوله: وما قوي وجهه) أي دليله المنقول الحاصل لا المستحصل؛ لأنه رتبة المجتهد. -الدر المختار وحاشية ابن عابدين (رد المحتار) (1/ 78)
    “অর্থাৎ মুজতাহিদিনে কেরাম (নিজেদের মতের পক্ষে) যেসব দলীল দিয়েছেন বলে বর্ণিত আছে, সেগুলো সরাসরি (কুরআন সুন্নাহ থেকে) নতুন ইসতিম্বাত নয় কেননা, সরাসরি ইসতিম্বাত তো মুজতাহিদের কাজ (আর আমরা মুজতাহিদ নই)।” -রদ্দুল মুহতার: /৭৮

    # যদি বলা হয়, উস্তাদ দলীল দিতে পারবেন, কিন্তু বোঝার যোগ্যতা তোমার নেই
    বলবো, কথাটা সেসব বিদআতি বক্তার মতো হয়ে গেল না, যারা নিজেদের বিদআতের পক্ষে বলতে গিয়ে বলে, হাদিস শরীফে দলীল আছে, কিন্তু বোঝার যোগ্যতা তোমার নাই?!

    তাছাড়া অজু গোসল, নিকাহ তালাকের কত জটিল বিষয়েও তো আমরা আসাতিযায়ে কেরামের পেশকৃত দলীল বুঝতে পারি, তাহলে জিহাদ কিতাল সিয়াসাতের বিষয়ে বুঝতে পারবো না কেন? অথচ কুরআনে কারীমে অযু তালাকের মতো বিষয়ে আয়াত কয়টা আর জিহাদের বিষয়ে আয়াত কয়টা?
    ***

    # এখানে অত্যন্ত রহস্যজনক একটা বিষয় লক্ষ করার মতো: ইদানিং অনেক বিজ্ঞজনই অভিযোগ করছেন যে, তালিবুল ইলমরা উস্তাদদের আওতার বাহিরে চলে যাচ্ছে উস্তাদদের কথা শুনছে না এর বিশেষ শক্তিশালী কোনো কারণও তারা খোঁজে পাচ্ছেন না যতটুকু সবাই বলছেন, কিছু উগ্রবাদি লোকের দাওয়াত, কিছু উগ্রবাদি বয়ান, কিছু কিতাব-রিসালা: এগুলোই মূল কারণ

    প্রশ্ন: /১০ বছর তারবিয়াত দেয়ার পর মাত্র দুয়েকটা কিতাব রিসালা আর বয়ান দাওয়াত কিভাবে আমার সন্তানকে আমার কোল থেকে কেড়ে নিল? তাহলে কি এতোদিন আমার তারবিয়াতে কোনো ইল্লতে খফিয়া, ইল্লতে কাদেহা ছিল; যার কারণে এত দীর্ঘ তারবিয়াতের পরও আমি আস্থার পাত্র হতে পারলাম না, দুয়েকটা উগ্রবাদি বয়ান রিসালা আমার কোল খালি করে দিল? এত অল্প সময়ে কয়টা বয়ান রিসালা এত আস্থার পাত্র হলো কিভাবে? বিষয়টা ভাবার দরকার

    এখানে একটা কাহিনি মনে পড়ে গেল মনে আসছে তাই প্রসঙ্গক্রমে বলছি হাকিকত আছে কিনা আল্লাহ মালুম:

    এক লোক ইমামে আজ আবু হানিফা রহ. সমালোচনা করতে গিয়ে (লোকমুখে শ্রুত সেই অবাস্তব কথাটি) বললো, আবু হানিফা মাত্র সতেরটি হাদিস জানতেন! শ্রোতা উত্তর দিল, আচ্ছা! তাই নাকি? সতেরটি হাদিস থেকেই তিনি এত হাজার হাজার মাসআলা বের করেছেন? সুবহানাল্লাহ! এমন ইমামই তো আমাদের দরকার!
    বেচারা আস্থা নষ্ট করতে গিয়ে আস্থা আরও বাড়িয়ে দিল

    অতএব, কোনো জিদাল মিরার কথা না, আসলেই আমাদের আরও একটু ভাবা উচিত: আমাদের সন্তানদের তারবিয়াতে আমাদের কোনো ঘাটতি হচ্ছে কিনা? প্রকৃতই তাদের ইলমি, রুহানি খোরাক দিতে আমাদের কোনো কমতি হচ্ছে কিনা? নতুবা কেন একজনের একটা বয়ান তাকে আসমানে উঠিয়ে দিচ্ছে? জান্নাতে পৌঁছে দিচ্ছে? আর আমার ১০ বছরের তারবিয়াত তাকে আটকাতে পারছে না?

    আর এটাও জানা কথা, কওমির সন্তানরা আসাতিযায়ে কেরামকে পিতা মাতার চেয়েও বেশি তাজিম করে, ‍শ্রদ্ধা করে এখনও আলহামদুলিল্লাহ এর ব্যতিক্রম তেমন কিছু হয়নি তাহলে কেন এই অদৃশ্য দূরত্ব দিন দিন শুধু বেড়েই চলেছে?

    বক্তব্য০৬: [কেউ কেউ বলে, ছাত্ররা শরহুস সিয়ারিল কাবির পুরা পড়েছে, আপনারা তো পড়েন না! আমি বলি, শরহুস সিয়ার পড়লেও হবে না, আরও দশ কিতাব পড়লেও হবে না পড়া যদি হজম করতে না পার তাহলে এর দ্বারা কাজ হবে না]

    অভিব্যক্তি
    মুতালাআর গণ্ডি বৃদ্ধি করাকে হুজুর আলহামদুলিল্লাহ সব সময়ই প্রশংসা করেন এবং উৎসাহ দেন এমনকি জিহাদের বিষয়ের পড়াশুনার ক্ষেত্রেও এটা হুজুরের ইমতিয়াজ আলহামদুলিল্লাহ সব উস্তাদের যদি এটা থাকতো অনেক ভাল হতো

    কিন্তু জিহাদের বিষয়ে অনেক উস্তাদ কেন জানি একটু সংকীর্ণতার পরিচয় দেন কোনো শাগরেদকে জিহাদের বিষয়ে কিছু পড়তে দেখলেই মনে করেন, শেষ! সে গোমরাহ হয়ে গেছে আল্লাহ তাআলার মাজলুম ফরযটির ব্যাপারে সংকীর্ণতা অবশ্যই কাম্য না আর কারও কারও হাল তো এমন, দরসি কিতাবের শরাহ পড়তে দেখলেও মনে করেন, গেছে! বেশি পেকে গেছে তার আর পড়াশুনা হবে না হাসবুনাল্লাহু ওয়া নিমাল ওয়াকিল!
    ধরনের সংকীর্ণ মনস্কতার কারণে জিহাদ কিতালের মতো হাল যামানার সর্বাপেক্ষা জরুরী আলোচ্য বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে আসাতিযায়ে কেরামের অনেকের মুতালাআ-জানাশুনা থেকে যাচ্ছে শূন্যের কোটায়, সে তুলনায় অবাধ্য ছাত্ররা এগিয়ে যাচ্ছে অনেক দূর এরপর পরিণতি দাঁড়াচ্ছে: উস্তাদ যখন হজম করার মতো কোনো কিছু তালিবুল ইলমদের দিতে পারছেন না, তখন শাগরেদরা নিজেদেরটা উস্তাদদের হজম করাতে চাচ্ছে আর উস্তাদ তখন তালিবুল ইলমদের রোগের সুচিকিৎসার বদলে রাগ, হুমকি ধমকি, মান অভিমান দিয়ে সারতে চাচ্ছেন নসীহত করতে গিয়ে এমনসব অবাস্তব কথা বলছেন, যেগুলো তালিবুল ইলমদেরকে উস্তাদের ব্যাপারেআল্লাহ মাফ করুন- আরও বদজনের সম্মুখীন করছে

    শায়খ আইমান যখন জনসম্মুখে ঘটা করে আমীরুল মুমিনিন মোল্লা আখতার মানসুরের হাতে বাইয়াত দিচ্ছেন, আর তালিবুল ইলমরা সে ভিডিও বার বার দেখে উল্লাসে ফেটে পড়ছে, মিষ্টিও খাচ্ছে, তখন যদি পর দিন দরসে এসে উস্তাদ বলেন, তালেবান ঠিক আছে, আলকায়েদা জঙ্গি: তখন তালিবুল ইলমদের মনে বাসা বাঁধতেই পারে, হাল যামানার অনেক কিছুই হুজুর জানেন না কেউ কেউ যদি আরও আগে বেড়ে বলে ফেলে, হলুদ মিডিয়া যেভাবে বুঝায়, হুজুর সেভাবেই বুঝেন: তখন আমরা তাকে বারণ করলেও মনের সংশয় কি একেবারে দূর করতে পারি? যখন ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটতে থাকে, তখন সংশয়ের মাত্রাটা বাড়তেই থাকে


    যাহোক, যদিও দূরত্ব কাম্য নয়, তথাপি এটা আমাদের হাতের কামাই বলতে হবে বাস্তবতা এড়িয়ে যাওয়া যায় না সমাধানের সঠিক পথে অগ্রসর না হয়ে যতই আমরা ভিন্ন কিছু করতে যাবো, দূরত্ব ততই বেড়ে চলবে আল্লাহ মাফ করুন
    ***
    # আর হজমের ব্যাপারে যদি বলি, তাহলে এটি শুধু তালিবুল ইলমদের এক তরফা দোষ না আমরা তো আসাতিযায়ে কেরামের সব কিছুই হজম করতে পারছি উস্তাদজি অজুর ফরয চারটি পড়িয়েছেন, আমরা তো চারটিই হজম করেছিলাম মুগনি, শারহুল মুহাযযাব বা হাত্তাব পড়ে যখন দেখলাম সংখ্যা চার, না কম, না বেশি- অনেক কথা: তখনও তো উস্তাদের ব্যাপারে বদজন হয়নি এবং আমার বিশ্বাসও নড়েনি যে, অজুর ফরয চারটিই আমলও আমি সেভাবেই করে যাচ্ছি তাহলে জিহাদের বিষয়ে কেন আমাদের হজম হচ্ছে না?

    বাস্তবতা বলতে গেলে, তীব্র ক্ষুধায় খালি পেটে তালিবুল ইলমরা যা পেয়েছে তাই খেয়ে ফেলছে এবং অনেক বেশি খেয়ে ফেলছে, বিধায় হজমটা হচ্ছে না কিন্তু আমি যে ক্ষুধার্ত, এটা উস্তাদজির আরও আগেই বুঝা দরকার ছিলবুঝার পরও তিনি আমাকে দরকার মতো খাবার না দিয়ে ধমক দিয়ে ক্ষান্ত করতে চেয়েছেন তখন আমি যা পেয়েছি তাই খেয়েছি বদ হজমের দায় শুধু আমি একার উপর বর্তানো ঠিক হবে না

    বক্তব্য০৭: [কুরআনে কারীমে ওয়াসেতা বেলা ওয়াসেতা জিহাদের আলোচনা যেসব আয়াতে এসেছে, সেগুলোর কয়টা আমি কয়টা তাফসিরের কিতাব থেকে থেকে পড়েছি? জিহাদের আয়াতগুলো তাফসিলি মুতালাআ করিনি অথচ আমি আল্লামা হয়ে গেছি]

    অভিব্যক্তি
    বলতে গেলে জিহাদি মানসিকতা পোষণকারী অধিকাংশ তালিবুল ইলমেরই এ হাল। তেমন কিছু মুতালাআ না করেই গলা বাড়িয়ে কথা বলে। এটি অবশ্যই পরিত্যাজ্য। তবে এখানে কিছু বিষয় ভাবার মতো:

    # তালিবুল ইলমদের স্বাভাবিক তবিয়ত, কওমি মাদ্রাসার চিরাচরিত রীতি এবং অন্য দশটা বিষয়ে উস্তাদের সাথে তালিবুল ইলমদের আচরণ তো দাবি করে, জিহাদের বিষয়েও তারা নিজেদের নাকেস মনে করবে এবং আসাতিযায়ে কেরামকে কামেল মনে করে তাদের কথাই নির্দ্বিধায় মেনে নেবে। হবার তো কথা এটাই ছিল, কিন্তু উল্টো হচ্ছে কেন?

    বলতে হবে, ইল্লতে খফিয়া একটা অবশ্যই আছে এখানে। আর সে ইল্লত, শুরু থেকে যেটা বলে আসছি: জিহাদের বিষয়ে তালিবুল ইলমদের ক্ষুধা আমরা বুঝতে পারিনি। ফলে ফাতাওয়া হিন্দিয়া কিংবা ফতোয়া শামি দিয়ে আহলে হাদিসের রদ করতে গিয়ে আমরা যে সমস্যায় পড়েছি: আমাদের নিজেদের সন্তানদের সাথেও আমাদের সে পরিস্থিতির শিকার হতে হচ্ছে।

    আল্লাহ মাফ করুন, যদি আসাতিযায়ে কেরাম সময় থাকতে না বুঝেন, তাহলে তালিবুল ইলমরা হয়তো এক সময় এমন ভয়ানক কথাও মনে আনতে পারে যে, আল্লাহ তাআলার সুন্নতে ইস্তিবদাল শুরু হয়ে গেছে:

    {وَإِنْ تَتَوَلَّوْا يَسْتَبْدِلْ قَوْمًا غَيْرَكُمْ ثُمَّ لَا يَكُونُوا أَمْثَالَكُمْ} [محمد: 38]

    তখন আমরা তালিবুল ইলমদের যতই দোষারোপ করি, যতই বেয়াদব বলি: ভাঙা কাচে জোড়া লাগানো অত সহজ হবে না।
    এজন্য সবচেয়ে উত্তম পদ্ধতি হবে, হাল যামানার পরিস্থিতির উপর নজর দেয়া। তাগুতি মিডিয়ার বাহিরে থেকেও খবর সংগ্রহের চেষ্টা করা। উম্মাহর হাকিকি দুরবস্থাটা বুঝতে চেষ্টা করা। পাশাপাশি কুরআন সুন্নাহ ও ফিকহ ফাতাওয়ার কিতাবাদি নতুন করে সামনে আনা। আল্লাহর ফরযকৃত এ মাজলুম বিধানটি অন্য দশটা বিষয়ের মতোই ইনসাফ ও দরদে দিলের সাথে অধ্যয়ন করা। তালিবুল ইলমদের সাথে নিয়েই কাজটি করতে হবে। প্রত্যেকে আপন আপন বুঝ অপরের সাথে শেয়ার করবে। বিনা দলীলে শুধু উস্তাদ হয়েছি বলে শাগরেদের বুঝটাকে খাটো করে দেখা যাবে না (বিশেষত যখন তালিবুল ইলমরা জ্ঞান করতে শুরু করেছে যে, এ বিষয়ে উস্তাদের জানাশুনা তাদের চেয়ে বেশি না)

    এরপর কতটুকু মুত্তাফাক আলাইহি আর কতটুকু মুজতাহাদ ফিহি নির্ধারণ করা। মুত্তাফাক আলাইহিটা সকলে আমল করবো, মুজতাহাদ ফিহিটায় প্রত্যেককে তার আপন ইখতিয়ারের উপর ছেড়ে দেব।

    তা না করে যদি জোর করে সমাধান করতে যাই, তাহলে সেই পুরান সমস্যা আবার দেখে দেবে। তালিবুল ইলমরা উস্তাদদেরকে জিহাদবিমুখ ভাবতে শুরু করবে।

    হায়েযের আয়াত কুরআনে কারীমে মাত্র দুয়েকটা থাকার পরও সেই ছোট কাল থেকে ফিকহের হার কিতাবে
    , হাদিসের হার কিতাবে, প্রত্যেক বছর একাধিক দরসে এর বিত-তাফসিল তাকরির হচ্ছে; আগেও পড়ানো হচ্ছে পরেও পড়ানো হচ্ছে, কিন্তু মাঝখানে কিতাবুল জিহাদটা এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে: এগুলো দেখতে দেখতে এক সময় দূরত্ব আরও বাড়তে থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়। বিশেষত ইচ্ছায় অনিচ্ছায় তালিবুল ইলমদের মাঝে যখন ব্যাপকভাবে একটা বদ ধারণা তৈয়ার হয়েই গেছে যে, জিহাদ কিতাল জাতীয় বিষয়ে তারা একটু বেশিই জানে বুঝে: তখন এর প্রতিবিধানে একটা বড়সড় পদক্ষেপ যদি আসাতিযায়ে কেরামের পক্ষ থেকে না নেয়া হয়, তাহলে এ ফিতনার (!!) মোকাবিলা করা সম্ভব হবে না, বরং দিন দিন তা বেড়েই চলবে।

    বিশেষত যখন তালিবুল ইলমরা নিজেদেরকে এ হাদিসের মিসদাক মনে করে
    :
    لا يضرهم من خذلهم ولا من خالفهم. -صحيح البخاري (3/ 1331)
    ***
    # আর কিতাব না পড়েও আল্লামা হয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গটা যদি বলি, তাহলে বলতে হবে, এটা অবশ্যই কাম্য নয়। কিন্তু কথায় আছে, বাঘ নাই বনে শিয়াল রাজা।

    বিষয়টা হয়েছে কি
    : আসাতিযায়ে কেরামের অনেকে এক বিষয়ে জ্ঞান রেখে দশ বিষয়ে নিজেকে জাহির করছেন বলে একটা ধারণা ইতোমধ্যে তালিবুল ইলমদের তৈয়ার হয়ে গেছে। বিশেষত যখন তারা জানতে পেরেছে যে, ইলম তাজাযযি কবুল করে। নুবুওয়াত ওয়াহবি হলেও (মৌলিকভাবে) ইলম কাসবি। যিনি যে বিষয়ে মেহনত করেন, তিনি সে বিষয়ে বড়, অন্য বিষয়ে তিনি শূন্যের কোটায়ও থাকতে পারেন।

    বিশেষত মারকাযুদ দাওয়াহর উলূমে হাদিস চর্চার মোবারক মেহনতেরে বরকতে এ ধারণা আল্লাহর রহমতে পাকাপোক্তা হতে শুরু করেছে। বড় মসজিদের খতিব হলেই
    , বড় খানকার পীর হলেই কিংবা বড় মাদ্রাসার শাইখুল হাদিস হলেই যে বড় আলেম: এ বদ ধারণার দিনটা শেষ হতে শুরু করেছে।


    এখন তালিবুল ইলমরা বুঝতে শুরু করেছে: হাদিস, ফিকহ, তাফসির, উসূল, আদব- সব কূল একসঙ্গে রক্ষা করা যায় না বললেই চলে। ইল্লা মান শা-আল্লাহ। যিনি মুহাদ্দিস (হাকিকি অর্থে, প্রচলিত অর্থে না) ফিকহ ফতোয়ায় মেহনত না করলে তিনি মুফতি নন, আর যিনি মুফতি (হাকিকি অর্থে, প্রচলিত অর্থে না) মেহনত না করলে তিনি হাদিস বিশারদ নন।

    এমনিভাবে তালিবুল ইলমরা বুঝতে শুরু করেছে, ফিকহের যে বাবে যিনি মেহনত করেছেন, তিনি তা ভাল জানেন, অন্য বিষয়ে ভাল নাও জানতে পারেন। কাওসারি রহ. ও শায়খ আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রহ.র এ বিষয়ে জোরদার আলোচনার পর বিষয়টা আরও বেশি পাকাপোক্তা হয়ে গেছে। ফলে বাকি দশটা বিষয়ে ভাল জ্ঞান গরিমা থাকার পরও তালিবুল ইলমরা ভাবতে দ্বিধা করছে না যে, তিনি জিহাদের ব্যাপারে শূন্য।

    এর বিপরীতে যে উস্তাদ বাকি দশ বিষয়ে এত জ্ঞান-গরিমা রাখেন না, কিন্তু জিহাদের বিষয়ে তিনি দিন রাত এক করে পড়েছেন, ভেবেছেন: তার ব্যাপারে ভাবতেও সংকোচ হচ্ছে না যে, তিনি এ বিষয়ে আল্লামাবরং দুঃখজনকভাবে অনেকে তো নিজে নিজে কয়টা পাতা পড়ে আর কয়টা বয়ান শুনেই মনে করে বসেছে: আর দশজন বিশেষজ্ঞের চেয়ে জিহাদের ব্যাপারে সে বড় আল্লামাযদিও এটা বড়ই দুঃখের বিষয়, কিন্তু এর দায়ভার এক তরফা আমরা তালিবুল ইলমদের উপর চাপাতে পারি না। আমরা নিজেরাই আমাদের আস্থা নষ্ট করেছি।

    এজন্য এখন দশ বিষয়ে হাকিকি অর্থে আল্লামা হওয়ার পরও তালিবুল ইলমরা জিহাদের ব্যাপারে নিজেদেরকে বড় আল্লামা ভাবতে শুরু করেছে। এ ভুল ভাঙাতে যদি আমরা জিহাদ কিতালের বিষয়টাতে অনর্থক জেদ না ধরে বরং নতুন করে ইনহিমাক
    , ইনসাফ ও দরদে দিলের সাথে নজর দিই তো ভাল, নতুবা দিন দিন এ ভুল ধারণা গাঢ়ই হতে থাকবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে মাফ করুন।
    ***
    # আরেকটি বিষয় হলো, মুতাআল্লিকা অনেক বিষয় আমরা তালিবুল ইলমদের পড়াই, যেগুলো আমাদের এ মূহুর্তে অত বেশি দরকার না। কিন্তু যেসব বিষয় হার-হামেশাই তালিবুল ইলমদের অন্তর তাড়া করে বেড়াচ্ছে, আমরা সেগুলোর কোনো আলোচনাই উঠাই না। আম মজলিসে তো না-ই, খাস মজলিসেও না। নিজের একান্ত ঘনিষ্ঠ শাগরেদের সাথেও না। বরং যদি কোনো সময় ঘটনাক্রমে আলোচনা উঠে যায়, বিষয়টাতে এমনসব লা-ইলমি মন্তব্য করে তালিবুল ইলমকে ক্ষান্ত করতে চাই, যার ফলে একান্ত ঘনিষ্ঠ শাগরেদও মনে করে: বুঝেছি, হুজুর তাগুতের ভয়ে ঘুরিয়ে বলেন, কিংবা হুজুর না জেনেই কথা বলেন।

    যখন নির্ভরযোগ্য কারও কাছেই তাকে প্রতি মূহুর্তে তাড়া করে বেড়ানো বিষয়টার কোনো সঠিক সমাধান পাচ্ছে না, বরং যতটুকু পাচ্ছে ততটুকু লা-ইলমি কিংবা তাহরিফ বলে মনে হচ্ছে, কিংবা কিতাব ও বাস্তবতার সাথে তার কোনো যোগসূত্র খোঁজে পাচ্ছে না: তখন অনেকটা অবচেতনভাবেই নিজেদেরকে আল্লামা ভেবে বসছে (অন্তত আপন উস্তাদের তুলনায়)। যদিও এটি ক্ষতির কারণ হওয়া স্বাভাবিক, তথাপি এর দায়ভার এককভাবে তালিবুল ইলমদের উপর বর্তালে দূরত্ব বাড়ার সম্ভাবনা আরও বেশি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে মাফ করুন।
    ***
    (চলমান ইনশাআল্লাহ …)

  • #2
    সুবহানাল্লা-হ!
    উনার মত কেহ কেবল একটা বিষয়েই এমন কম ইলমি ও কম আকলের পরিচয় দিলে মনে না চাইলেও তাসাওওরে এটা অটোমেটিকলি এসে যায় যে হয়তো হুজুর ইচ্ছাকৃত ভাবেই এর ব্যাপারে প্রোপাগাণ্ডা ছড়াচ্ছেন। আল্লাহ এমন না করুন আমিন!

    আল্লাহ তা'য়ালা হুজুরের সমীপে এই লিখাগুলো হুবাহু পৌঁছে দিক ও হুজুরের ঘোর কাটিয়ে আলোর দীশা দিক আমিন!

    জাযা-কাল্ল-হু খইরন আহসানাল জাযা- মুহতারাম!
    হয় শাহাদাহ নাহয় বিজয়।

    Comment


    • #3
      জাজাকাল্লাহ খাইরান। হে আল্লাহ! আপনি লেখাগুলো হুজুরের কাছে পৌঁছে দিন।আমীন।

      Comment


      • #4
        বারাকাল্লাহ।

        Comment


        • #5
          আল্লাহর আদেশের বিপরীতে কোন উস্তাদের আদেশ মান্য হারাম।
          পৃথিবীর রঙ্গে রঙ্গিন না হয়ে পৃথিবীকে আখেরাতের রঙ্গে রাঙ্গাই।

          Comment


          • #6
            সুবহানাল্লাহ!
            আল্লাহ তাআলা আপনার ইলম ও আমলে বারাকাহ দান করুন। কতইনা চমৎকারভাবে বিষয়গুলো উপস্থাপন করেছেন!
            আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন। সংকীর্ণ মানসিকতা ও গোড়ামি থেকে হেফাজত করুন।
            যারা মনোনিবেশ সহকারে কথা শুনে, অতঃপর যা উত্তম, তার অনুসরণ করে। তাদেরকেই আল্লাহ সৎপথ প্রদর্শন করেন এবং তারাই বুদ্ধিমান। (সূরা যুমার-18)

            Comment


            • #7
              জাজাকাল্লহু খইরন, আল্লাহ তা'আলা আপনার ইলম ও আমালে বারাকাহ দান করুন,
              আমাদের বাড়াবাড়ি ছাড়াছাড়ি হতে হিফাযত করুন। আমিন ইয়া রব্বাল আলামীন
              আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসেন, যারা তার পথে সারিবদ্ধভাবে লড়াই করে, যেন তারা সীসাগালানো প্রাচীর।

              Comment


              • #8
                জাযাকাল্লাহ, বারাকাল্লাহ ফি ইলমিক।
                এলেখাতে উস্তাযদের যেমন কিছু লক্ষনীয় বিষয় আছে তেমন ছাত্রদেরও কিছু বিষয় শিখার আছে।

                Comment


                • #9
                  আল্লাহ মাফ করুন, যদি আসাতিযায়ে কেরাম সময় থাকতে না বুঝেন, তাহলে তালিবুল ইলমরা হয়তো এক সময় এমন ভয়ানক কথাও মনে আনতে পারে যে, আল্লাহ তাআলার সুন্নতে ইস্তিবদাল শুরু হয়ে গেছে:

                  {وَإِنْ تَتَوَلَّوْا يَسْتَبْدِلْ قَوْمًا غَيْرَكُمْ ثُمَّ لَا يَكُونُوا أَمْثَالَكُمْ} [محمد: 38]

                  তখন আমরা তালিবুল ইলমদের যতই দোষারোপ করি, যতই বেয়াদব বলি: ভাঙা কাচে জোড়া লাগানো অত সহজ হবে না।

                  সত্যি বলতে আমার মনে এ কথা অনেক আগেই এসে গেছে।বিশেষত শুরুর দিকে তখন একটু বেশি ব্যাপকভাবে বদ-যন রাখতাম। আল্লাহ তাআলা রহম করেছেন বদ-যন এখন কিছুটা দূর হয়েছে। যখন দেখেছি উলামায়ে কেরামদের অনেকে বিষয় গুলো জানার পর এসব মজলুম বিধানের পক্ষে বলেছেন। কিন্ত এখনও কোন কারণে বা ঘটনায়

                  يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ مَن يَرْتَدَّ مِنكُمْ عَن دِينِهِ فَسَوْفَ يَأْتِي اللّهُ بِقَوْمٍ

                  إِلاَّ تَنفِرُواْ يُعَذِّبْكُمْ عَذَابًا أَلِيمًا وَيَسْتَبْدِلْ قَوْمًا غَيْرَكُمْ وَلاَ تَضُرُّوهُ شَيْئًا وَاللّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ আয়াত গুলো স্বরনে আসে।হাল যামানার প্রেক্ষাপটে এর ব্যাখ্যা এবং প্রয়োগ ক্ষেত্র বুঝতে হতে পারে আমি ভুল করেছি।আশা করি হালযামানার উলামায়ে কওমি-ই এর ব্যাখ্যা ভাল বুঝবেন।

                  Comment


                  • #10
                    হে আল্লাহ আমাদেরকে সত্যটা দেখাও সত্য হিসাবে আর মিথ্যাকে দেখাও মিথ্যা রূপে।আমীন

                    Comment

                    Working...
                    X