আমার মন ও সমগ্র জীবন জুড়ে রয়েছে জিহাদ, জিহাদপ্রেমের আধিপত্য।
এর কারণ সূরা তওবা যা জিহাদের সর্বশেষ চূড়ান্ত বিধান, যা পাঠ করে আমার হৃদয়ে সৃষ্টি হয় রক্তক্ষরণ, অনুভূত হয় অশেষ বেদনা ও আফসােস। কারণ তখন আমার সামনে স্পষ্ট হয়ে উঠে কিতাল ফী সাবীলিল্লাহ'র ব্যাপারে আমার ও উম্মাহর অমার্জনীয় উদাসীনতা। ‘কিতাল ফী সাবীলিল্লাহ' সম্পর্কিত আয়াতসমূহের বিকৃত ব্যাখ্যা অথবা তার অকাট্য বিধানাবলী থেকে অন্যত্র দৃষ্টি সরানাের দুঃসাহস যারা প্রদর্শন করেন, তাদের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়েছে সূরা তাওবার ‘আয়াতুস সাইফ', যে আয়াতে আল্লাহ সরাসরি নির্দেশ দিয়েছেন:-
وَقَٰتِلُوا۟ ٱلْمُشْرِكِينَ كَآفَّةً كَمَا يُقَٰتِلُونَكُمْ كَآفَّةًۚ وَٱعْلَمُوٓا۟ أَنَّ ٱللَّهَ مَعَ ٱلْمُتَّقِينَ
“আর মুশরিকদের সাথে তােমরা যুদ্ধ কর সমবেতভাবে, যেমন তারাও যুদ্ধ করেছে তােমাদের সাথে সমবেতভাবে। আর মনে রেখ, আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে রয়েছেন।” (তাওবা ও ৩৬)।
এই সেই আয়াত, যা দ্বারা পূর্বে অবতীর্ণ জিহাদ বিষয়ক বাইশ বা ততােধিক আয়াত রহিত হয়েছে এবং রুদ্ধ হয়েছে কিতাল নিয়ে ভিন্ন। ব্যাখ্যার সমূহ অবকাশ।
পবিত্র কুরআনে আরও বলা হয়েছে:-
فَإِذَا ٱنسَلَخَ ٱلْأَشْهُرُ ٱلْحُرُمُ فَٱقْتُلُوا۟ ٱلْمُشْرِكِينَ حَيْثُ وَجَدتُّمُوهُمْ وَخُذُوهُمْ وَٱحْصُرُوهُمْ وَٱقْعُدُوا۟ لَهُمْ كُلَّ مَرْصَدٍۚ فَإِن تَابُوا۟ وَأَقَامُوا۟ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتَوُا۟ ٱلزَّكَوٰةَ فَخَلُّوا۟ سَبِيلَهُمْۚ إِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
“অতপর নিষিদ্ধ মাস অতিবাহিত হলে তাদের বন্দী কর এবং অবরােধ কর। আর প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাদের সন্ধানে ওঁৎপেতে থাক। কিন্তু যদি তারা তাওবা করে, নামায কায়েম করে এবং যাকাত আদায় করে, তবে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চয় আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (তাওবা-৫)
আল্লাহর পথে জিহাদে বের না হয়ে অজুহাত দেখিয়ে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টা করা আত্মপ্রবঞ্চনা ছাড়া কিছুই নয়। বরং তা আল্লাহর দ্বীনের সাথে বিদ্রুপ করার শামিল। এ জাতীয় কর্মকাণ্ডে যারা লিপ্ত, তাদের থেকে দূরে থাকাই কুরআনের নির্দেশ, আল্লাহ তায়ালা স্পষ্ট
ভাষায় বলেছেনঃ-
وذر الذين اتخذوا دينهم لعبا ولهوا وغرتهم الحيواة
الدنيا
“তাদেরকে পরিত্যাগ কর, যারা নিজেদের ধর্মকে ক্রীড়া ও কৌতুকরূপে গ্রহণ করেছে এবং পার্থিব জীবন যাদেরকে ধোঁকায় ফেলে রেখেছে।” (আন'আম:৭০)
আমাদের মর্যাদার সুউচ্চ স্থানে আসীন হওয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা অপরিহার্য। নিরেট আশা-আকাঙ্খা দ্বারা কখনও মর্যাদা অর্জিত হয়নি এবং হবেও না। মর্যাদাশীল আত্মার অধিকারী হতে হলে আরামপ্রিয়তা ও বিলাসিতা ত্যাগ করতে হবে অবশ্যই। মনে রাখা উচিত, সবচেয়ে বেশী মর্যাদাশীল ইবাদত হচ্ছে জিহাদ। অন্য কোন ইবাদত এর সমান মর্যাদার নয়। এমনকি মসজিদুল হারাম নির্মাণ ও তথায় নিয়মিত অবস্থানেও জিহাদের সমপরিমাণ পুণ্যের আশা করা যায় না।
মুসলিম শরীফে বর্ণিত হয়েছে : “একদিন সাহাবীদের মধ্যে বাদানুবাদ শুরু হয়, একজন বললেন, ইসলাম ও ঈমানের পর আমার দৃষ্টিতে হাজীদের পানি সরবরাহের মত আর মর্যাদাসম্পন্ন আমল নেই। অপরজন মসজিদুল হারাম নির্মাণকে সর্বোচ্চ মর্যাদাবান আমল বলে দাবী করেন। তাঁর উক্তি খণ্ডন করে তৃতীয় জন বললেন, আমার দৃষ্টিতে আল্লাহর রাহে জিহাদই বড় আমল। অতঃপর সাহাবীদের এই ভিন্ন ভিন্ন মতামত অবসানের উদ্দেশ্যে অবতীর্ণ হয় এই আয়াত :
أَجَعَلْتُمْ سِقَايَةَ ٱلْحَآجِّ وَعِمَارَةَ ٱلْمَسْجِدِ ٱلْحَرَامِ كَمَنْ ءَامَنَ بِٱللَّهِ وَٱلْيَوْمِ ٱلْءَاخِرِ وَجَٰهَدَ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِۚ لَا يَسْتَوُۥنَ عِندَ ٱللَّهِۗ وَٱللَّهُ لَا يَهْدِى ٱلْقَوْمَ ٱلظَّٰلِمِينَ -
ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَهَاجَرُوا۟ وَجَٰهَدُوا۟ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ بِأَمْوَٰلِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ أَعْظَمُ دَرَجَةً عِندَ ٱللَّهِۚ وَأُو۟لَٰٓئِكَ هُمُ ٱلْفَآئِزُونَ-
يُبَشِّرُهُمْ رَبُّهُم بِرَحْمَةٍ مِّنْهُ وَرِضْوَٰنٍ وَجَنَّٰتٍ لَّهُمْ فِيهَا نَعِيمٌ مُّقِيمٌ
“তােমরা কি হাজীদের পানি সরবরাহ ও মসজিদুল হারাম আবাদকরণকে সেই লােকের সমান মনে কর, যে ঈমান রাখে আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি এবং যুদ্ধ করে আল্লাহ রাহে, এরা আল্লাহর দৃষ্টিতে সমান নয়। আর আল্লাহ জালেম লােকদের হেদায়েত করেন। যারা ঈমান এনেছে, দেশ ত্যাগ করেছে এবং আল্লাহর পথে নিজেদের মাল ও জান দিয়ে জিহাদ করেছে, তাদের বড় মর্যাদা রয়েছে আল্লাহর কাছে, আর তারাই সফলকাম। তাদের সুসংবাদ দিচ্ছেন স্বয়ং তাঁদের পরওয়ারদেগার দয়া, সন্তোষ ও জান্নাতের, সেখানে আছে তাদের জন্য স্থায়ী শান্তি।” (তাওবাঃ ১৯-২১)।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুসলমানদেরকে নির্বিচারে জবাই করা হচ্ছে আর আমরা দূর থেকে 'লা হাওলা' এবং ইন্নালিল্লাহ' পাঠ করেই আপন দায়িত্ব পালন করছি বলে আত্মতৃপ্ত হচ্ছি। জুলুম প্রতিরােধে এক পা-ও এগুতে আমরা প্রস্তুত নই। এটা আল্লাহর বিধানের সাথে বিদ্রুপ ছাড়া আর কি। এ আত্মপ্রবঞ্চনা আমাদেরকে ঈমানী দায়িত্ব পালন থেকে যুগ যুগ ধরে গাফেল করে রেখেছে।
কবির ভাষায়ঃ
পাপিষ্ঠ শত্রুর কবলে মুসলিম নারীর
আর্তচিৎকারে ধরণী প্রকম্পিত
আর মুসলমান নিদ্রার কোলে শায়িত।
এটা কি করে সম্ভব? আশ্চর্য!
আল্লামা ইবনে তাইমিয়া বলেন, ঈমানের পরে সর্বাপেক্ষা গুরুত্ত্বপূর্ণ ওয়াজিব দায়িত্ব হচ্ছে আক্রমণকারী শত্রুকে প্রতিরােধ করা, যার হাতে আমাদের ইহ ও পরকালীন স্বার্থ বিনষ্ট হওয়ার আশংকা রয়েছে। ইবনে তাইমিয়ার এ বক্তব্য আমি সম্পূর্ণ সমর্থন করি।
আমার গ্রন্থ ‘আদদিফা আন আরাদিল মুসলিমীন আহাম্মু ফুরুযিল আয়ান'-এ এ বিষয়ে বিস্তারিত আলােচনা করেছি। এ প্রসঙ্গে আমার অভিমত হচ্ছে:
• সালাত, যাকাত ও সিয়াম পরিত্যাগকারী ও কিতাল পরিত্যাগকারীর মধ্যে পার্থক্য নেই।
• জিহাদ থেকে বিরত থাকার অপরাধ ক্ষমার অযােগ্য; তালিম, তারবিয়াত, দাওয়াত ও গ্রন্থ রচনাসহ কোন কাজই জিহাদের দায়িত্ব পালন থেকে অব্যাহতি দেয় না।
• দুনিয়ার প্রায় সকল মুসলিম আজ জিহাদ পরিত্যাগের অভিযােগে অভিযুক্ত, তারা বন্দুক বহন না করার অপরাধে অপরাধী। নিতান্ত অক্ষম লােক ছাড়া যারাই আজ বন্দুক ছাড়া আল্লাহর সান্নিধ্যে যাবে, তারা পাপী হিসেবেই আল্লাহর সম্মুখে নীত হবে। কারণ, এরা কিতাল করেনি।
কিতাল এখন ফরজে আইন। রােগাক্রান্ত ও অক্ষম ব্যক্তিগণ ব্যতীত সকল মুসলিম এ ফরজ আদায়ে বাধ্য।
• আমার বিশ্বাস, আল্লাহর কাছে জিহাদ হতে অব্যাহতি পাবে শুধু। চার প্রকারের মানুষ (১) অন্ধ (২) বিকলাঙ্গ (৩) অসুস্থ এবং (৪) যারা ব্যয়ভার বহনে অসমর্থ। এরা ছাড়া বাকী সকল মুসলমানকে জিহাদ ত্যাগের কারণে আল্লাহর নিকট জবাবদিহির সম্মুখীন হতে হবে। চাই এ জিহাদ আফগানিস্তানে বা ফিলিস্তিনে (বা আরাকানে) হােক অথবা পৃথিবীর যে কোন ভূমিতে হােক, যা কাফের দ্বারা অপবিত্র হচ্ছে।
• আমি মনে করি, জিহাদে যােগদান করতে আজ পিতা, স্ত্রী কিংবা কর্জদাতার অনুমতির প্রয়ােজন নেই। এমনিভাবে কোন উস্তাদ বা নেতার সম্মতি নেয়াও ওয়াজিব নয়। অতীত ইতিহাসের প্রতিটি ক্রান্তিলগ্নে উপরােক্ত বিষয়ে উলামায়ে উম্মতের ইজমা বা ঐকমত্য রয়েছে। আজ যদি এ বিষয়ে কেউ ভুল বুঝানাের অপচেষ্টায় মেতে ওঠে, তবে তা হবে জুলুম এবং তা হবে আল্লাহর নির্দেশিত পথ ছেড়ে প্রবৃত্তির অনুসরণ। বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং একে গুরুত্বহীন মনে করা কিংবা বিকৃত ব্যাখ্যা দিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির কোন সুযােগ এখানে নেই।
• আফগানিস্তানে নির্যাতিত প্রতিটি মুসলিমের রক্ত ও লাঞ্ছিতা নারীর ইজ্জত লুণ্ঠনের জন্য আমরাই দায়ী। শক্তি-সামর্থ থাকা সত্ত্বেও আমরা তাদের সাহায্যে অগ্রসর হইনি। আমাদের উচিৎ ছিল, তাদের জন্য অস্ত্র, অন্ন ও চিকিৎসা সামগ্রী প্রেরণ করা এবং যাবতীয় যুদ্ধোপকরণ
সরবরাহ করা।
দাসুকী-শরহুল কাবীরের টীকায় লিখিত হয়েছে, “যদি কারও কাছে অতিরিক্ত খাদ্য থাকে এবং কোন অভুক্ত ব্যক্তিকে দেখা সত্ত্বেও সে তাকে খেতে না দেয় এবং সে যদি অনাহারে মৃত্যুবরণ করে তবে ঐ ব্যক্তি শাস্তির যােগ্য হবে। যদি খাদ্যের মালিক এ কথা মনে করে অনাহারী ব্যক্তিকে খাদ্য না দিয়ে থাকে যে, আমি আমার এ খাদ্য না দিলে সে ক্ষুধার যন্ত্রণায় মৃত্যুবরণ করবে না। অতঃপর যদি অনাহারী ব্যক্তি এ কারণেই মৃত্যুবরণ করে, তবে কি তার কোন শাস্তি হবে? এ প্রসঙ্গে আলিমগণ দু'টি অভিমত ব্যক্ত করেছেনঃ
(১) উক্ত ব্যক্তি তার সম্পদ হতে মৃত ব্যক্তির দিয়াত আদায়ে বাধ্য থাকবে।
(২) আর কারও মতে, উক্ত ব্যক্তির শাস্তি কিসাস'; তাকে হত্যা করা হবে। কারণ সে খাদ্য না দেয়ার কারণে লােকটি ক্ষুধার যন্ত্রণায় মৃত্যুবরণ করেছে। হায়, পরকালে কি পরিণাম অপেক্ষা করছে সম্পদশালী ও বিত্তবানদের জন্য যারা নিজেদের মনােবৃত্তির জন্য অর্থের অপচয় করছে অথচ অনাহারী মুসলমানদের জন্য তারা সামান্য অনুদান দিতেও কুণ্ঠিত।
ও হে মুসলমান! তােমাদের জীবন মানেই জিহাদ, তােমাদের সম্মান মানেই জিহাদ। জিহাদের সাথেই জড়িত তােমাদের অস্তিত্ব।
হে দাওয়াত কর্মীগণ! তােমাদের অস্ত্র ব্যবহার করতে হবে এবং কাফির, অত্যাচারী ও তাগুতের জনপদ বিরান করে দিতে হবে। নতুবা এ আকাশের ছায়ায় তােমাদের কানাকড়ি মূল্যও থাকবে না ।
যাদের ধারণা, কিতাল, জিহাদ ও রক্ত দেয়া ছাড়াই দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হবে, তারা বােকার স্বর্গে বাস করে। দ্বীনের মর্ম ও প্রকৃতি সম্পর্কে তারা অবগত নন। কিতাল ব্যতীত দাওয়াত কর্মীর প্রতাপ, দাওয়াতের প্রভাব ও মুসলমানের গৌরব অক্ষুন্ন থাকতে পারে না।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন, “আল্লাহ শক্রর হৃদয় হতে তােমাদের প্রভাব দূরীভূত করে দেবেন।
আর তােমাদের হৃদয়ে প্রবিষ্ঠ করিয়ে দেবেন ‘ওয়াহান'। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল, “ওয়াহান’ কি? তিনি বললেন, দুনিয়া-প্রীতি ও মৃত্যু-ঘৃণা।” অন্য বর্ণনা মতে ওয়াহান মানে কিতালের প্রতি অনীহা ও ঘৃণা পােষণ করা।
কুরআনের ঘােষণা :
فَقَٰتِلْ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ لَا تُكَلَّفُ إِلَّا نَفْسَكَۚ وَحَرِّضِ ٱلْمُؤْمِنِينَۖ عَسَى ٱللَّهُ أَن يَكُفَّ بَأْسَ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ۚ وَٱللَّهُ أَشَدُّ بَأْسًا وَأَشَدُّ تَنكِيلًا
“হে রাসূল, আল্লাহর রাহে যুদ্ধ করতে থাকুন, আপনি নিজ সত্তা ব্যতীত অন্য কোন বিষয়ের যিম্মাদার নন। আর আপনি মুমিনদের উৎসাহিত করতে থাকুন, শীঘ্রই আল্লাহ কাফিরের শক্তি সামর্থ খর্ব করে দিবেন। আর আল্লাহ শক্তি সামর্থের দিক দিয়ে অত্যন্ত কঠোর ও কঠিন শাস্তিদাতা।” (নিসাঃ ৮৪)।
কিতালের অনুপস্থিতিতে শিরক ও ফিতনার সয়লাব বয়ে যাবে এবং প্রতিষ্ঠিত হবে শিরকের বিজয় পতাকা। এ জন্যই আল্লাহ বলেছেন:-
وَقَٰتِلُوهُمْ حَتَّىٰ لَا تَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ ٱلدِّينُ كُلُّهُۥ لِلَّهِۚ فَإِنِ ٱنتَهَوْا۟ فَإِنَّ ٱللَّهَ بِمَا يَعْمَلُونَ بَصِيرٌ
“আর তাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাক যতক্ষণ না ফিতনা দূর হয়ে যায় এবং আল্লাহর সমস্ত হুকুম প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়।” (আনফাল:-৩৯)।
জিহাদই পৃথিবীর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার একমাত্র গ্যারান্টি।
প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে;-
ولولا دفع الله الناس بفضهم ببفض لفسدت الأرض
“আল্লাহ যদি এককে অন্যের দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তাহলে গােটা দুনিয়া বিধ্বস্ত হয়ে যেত।” (বাকারা : ২৫১ আয়াতাংশ)।
জিহাদই ইবাদাতখানা ও পবিত্র স্থানসমূহের সম্মান নিশ্চিত করতে পারে এবং এর অবমাননা রােধ করতে পারে। আল্লাহ ইরশাদ করেছেন:-
ولولا دفع الله الناس بعضهم ببعض لهدمت صوامع
وبيع وصوت ومساجد يذكر فيها اسم الله كثيرا
“আল্লাহ যদি মানবজাতির একদলকে অপর দল দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তবে (খৃস্টানদের) নির্জন গির্জা, ইবাদতখানা, (ইহুদীদের) উপাসনালয় এবং মসজিদসমূহ বিধ্বস্ত হয়ে যেত। যেগুলােয় আল্লাহর নাম অধিক স্মরণ করা হয়।” (হজ্ব:-৪০)
অতএব হে মুসলিম! মসজিদসমূহের পবিত্রতা ও আপন অস্তিত্বের স্বার্থেই তােমাদের জিহাদ করতে হবে।
হে ইসলামের মহান দায়ী! মৃত্যুর আকাঙখী হও, পাবে তুমি অমর জীবন, আশা ও বিলাস প্রতারণার শিকার হয়াে না, আর আল্লাহ সম্পর্কে প্রতারক শয়তানের প্রবঞ্চনা হতে বেঁচে থাক । নফল ইবাদত ও কিতাব অধ্যয়ন যেন কিতাল সম্পর্কে তােমাকে ধোকায় না ফেলে। সাবধান!
বিলাসিতা যেন তােমাকে এ মহান দায়িত্ব থেকে বিচ্যুত করতে না পারে।
আল্লাহ বলেছেন:-
وتودون أن غير ذات الشوكة تكون لكم
“আর তােমরা কামনা করছিলে তা, যাতে কোন রকম কন্টক নেই।”(আনফাল : ৭)।
জিহাদের ব্যাপারে কারও অন্যায়-অনুসরণ কর না। জিহাদের সার্বজনীন আহ্বানে সাড়া দিতে নেতার অনুমতি নেয়ার প্রয়ােজন হয় না। নিশ্চয় জিহাদ দাওয়াতী মিশনের স্তম্ভ, তােমার ধর্মের মজবুত আশ্রয় কেন্দ্র ও তােমার শরীয়তের অতন্দ্র প্রহরী।
উলামায়ে ইসলামকে বলছিঃ
আপন প্রভূর পানে ফিরে আসতে চায় এ প্রজন্ম। এদের নেতৃত্বদানে এগিয়ে আসুন। দুনিয়ার আসক্তি হতে নিজেকে মুক্ত রাখুন।
সাবধান! তাগুত ও খােদাদ্রোহী শক্তির পৃষ্ঠপােষকতা করবেন না। তাহলে আপনার
হৃদয়ালােক হেঁয়ে যাবে অমানিশায়, আপনার আত্মার ঘটবে অপমৃত্যু এবং জনগণ ও আপনার মাঝে সৃষ্টি হবে বিচ্ছিন্নতার বিশাল প্রাচীর।
হে মুসলমান! অলসদ্ৰিায় কেটেছে তােমাদের বহু যুগ। তােমাদের জন্মভূমিতে আজ পাপিষ্ঠদের পদচারণা, তারা আবৃত্তি করছে বিজয়ের গান।
কবি কত সুন্দর উক্তি করেছেন ?
“গ্লানির নিদ্রা অতি দীর্ঘ হয়ে গেছে, কিন্তু কোথায় বাঘের হুংকার?
খােদাদ্রোহী গােষ্ঠী গাইছে বিজয়ের সংগীত আর আমরা করছি দাসত্ব।
হায় কবে ভাঙ্গব বন্দীশালা, কবে পাব মুক্তির রাজপথ।
আমি শুনতে পাই, মানবতার কারাগারে বন্দী নির্যাতিত মুসলিম
উম্মাহ কবির সাথে সুর মিলিয়ে বলছে, মুক্তি চাই, মুক্তি চাই।
হে মহীয়সী নারী সমাজ! আপনারা বিলাসপ্রিয় হবেন না, যা একান্ত প্রয়ােজন তাই করুন। অল্পে তুষ্ট থাকুন। আপনার সন্তানকে নির্ভীক, দুর্জয়, সাহসী মুজাহিদরূপে গড়ে তুলুন। আপনার ঘর যেন হয় সিংহ-শাবকের লালনভূমি। তাকে ভীরু মুরগীর চারণক্ষেত্রে পরিণত করবেন না, যারা
তাজা ও পুষ্ট হয় অন্য জীবের উদরপূর্তির জন্য।
আপনার সন্তানের মাঝে সৃষ্টি করুন জিহাদপ্রেম, তারুণ্যের তেজ ও দিগ্বিজয়ের দূরন্ত নেশা। মুসলমানদের সমস্যা সম্পর্কে সজাগ থাকুন, আপনার জীবনে সপ্তাহের একটি দিন অন্তত এমনভাবে কাটান, যা মুহাজিরীন ও মুজাহিদীনের জীবনাচারের পরিচয় বহন করে। তাদের ন্যায় শুকনাে রুটি ও সামান্য তরকারী আপনি আহার করুন। এভাবে ঘরে বসেও আপনি লালন করতে
পারেন জিহাদী চিন্তা, বিজয়ীর চেতনা।
ওহে শিশু কিশাের দল! তােমরাই আগামী দিনের তরুণ যুবক, মিল্লাতের আশা-আকাঙ্খার প্রতীক, আজ হতে সামরিক প্রশিক্ষণ নাও। রপ্ত কর যাবতীয় সমর কৌশল। ট্যাংক ও অস্ত্রই হােক তােমার খেলনা। বিলাসবহুল জীবন নয়, তােমার প্রয়ােজন কষ্টসহিষ্ণু মুক্ত বিহঙ্গের জীবন। এড়িয়ে চল ফুলশয্যা, বরণ কর কন্টকপূর্ণ গৃহাঙ্গন। সংগীতের সুরের চেয়ে তরবারীর ঝংকার হােক তােমার প্রিয় বিষয়। তবেই ছুড়তে পারবে শত্রুর প্রতি চ্যালেঞ্জ। একদিন তােমার দ্বারা সূচিত হবে মুসলিম মিল্লাতের ঐতিহাসিক বিজয়।
সুপ্রিয়া! হে মাের সহধর্মিনী।
১৯৬৯ এর সে কষ্টকর সময়ের কথা আমার আজও মনে পড়ে। আমাদের ঘরে ছিল দু'কিশাের ও এক শিশুসন্তান, কাঁচা ইটের তৈরী ছিল আমাদের আবাসঘর। ছিল না কোন আলাদা রান্নাঘর। তােমার উপরই ন্যস্ত করেছিলাম পুরাে সংসার।
একদিন সন্তানরা বড় হল, আমাদের পরিচিতিও বৃদ্ধি পেল, অতিথিতে সরগরম হয়ে উঠল আমাদের ঘর। আর তুমি ছিলে তখন সন্তান-সম্ভাবা। তােমার কষ্ট ও পরিশ্রমের অন্ত ছিল না।
কিন্তু সবকিছুই তুমি হাসিমুখে বরণ করে নিয়েছিলে। তােমার উদ্দেশ্য ছিল আল্লাহর সন্তুষ্টি, লক্ষ্য ছিল আমার সহায়তা করা। আল্লাহ তােমাকে সর্বোত্তম প্রতিদানে ভূষিত করুন। সত্যিই আল্লাহর দয়া ও তােমার ধৈর্য না হলে আমার একার পক্ষে এ বিরাট বােঝা উঠান সম্ভব ছিল না।
হে প্রিয়া আমার!
এ জীবনে তােমাকে দেখেছি দুনিয়াবিমুখ, পার্থিব বস্তুর প্রতি ছিল না তােমার কোন অনুরাগ, দরিদ্রতার প্রতি ছিল না তােমার কোন অভিযােগ।
আর স্বচ্ছল সময়েও দেখিনি তােমাকে বিলাসিতায় ডুবে থাকতে। দুনিয়াকে সব সময় তুমি রেখেছিলে হাতের মুঠোয়, হৃদয়ে ছিল না দুনিয়ার কোন স্থান।
মনে রাখবে, জিহাদী জীবনই আনন্দ ও সুখের জীবন। জীবনকে বিলাসিতার গড্ডালিকা- প্রবাহে ভাসিয়ে দেয়ায় কোন সুখ নেই। কষ্ট ক্লেশে ধৈর্য ধারণ করা মহত্ত্বের পরিচয়।
তাই দুনিয়ার মােহ বর্জন কর, আল্লাহর ভালবাসা পাবে। মানুষের সম্পদ দেখে লােভ কর না, তারা তােমায় ভালবাসবে।
আল-কুরআন মানব জীবনের সেরা সাথী ও সর্বশ্রেষ্ঠ পাথেয়। রাত্রির নামায, নফল রােযা ও গভীর রজনীর ইস্তিগফার অন্তরলােকে আনে
স্বচ্ছতা, সৃষ্টি করে ইবাদাতের অনুরাগ এবং পুণ্যবানদের সৎসঙ্গ, স্বল্প সম্পদ, দুনিয়াদারদের থেকে দূরে থাকা এবং ভনিতা থেকে বিরত থাকলে হৃদয়ে প্রশান্তি অনুভূত হয়।
হে প্রিয়া! আল্লাহর কাছে একান্ত কামনা, জান্নাতুল ফিরদাউসে পুনঃ আমাদের মিলন হােক, যেমনিভাবে দুনিয়াতে মিলিত হয়েছিলাম আমরা দু'টি প্রাণ!
হে আমার কলিজার টুকরা সন্তান-সন্তুতি!
মন ভরে কোন দিন তােমাদের সঙ্গ দিতে পারিনি। আমার শিক্ষা ও তারবিয়াত তােমাদের ভাগ্যে কমই জুটেছে। অধিকাংশ সময় আমি তােমাদের থেকে বহু দূরে থেকেছি, কিন্তু আমি ছিলাম নিরুপায়। তােমরা। জান, মুসলমানদের উপর বিপদের কালাে মেঘ ছেয়ে আছে, যার গর্জনে দুগ্ধদানকারী মায়ের কোল থেকে তার দুগ্ধপােষ্য শিশু ভয়ে ছিটকে পড়ে যাচ্ছে।
উম্মতের সংকটের ব্যাপকতা চিন্তা করলে কিশাের ললাটেও ভেসে উঠছে বার্ধক্যের বলিরেখা । মুরগীর ন্যায় তােমাদের নিয়ে আমি খাচায়
বাস করিনি। মুসলমানদের অন্তর বেদনায় জ্বলবে আর আমি আরামে বিশ্রাম নিব, সংসারসুখ উপভােগ করব? দুর্দশায় মুসলমানদের হৃদয় বিদীর্ণ হবে, নির্যাতনে জ্ঞান বিলুপ্ত হবে আর আমি ঘরে বসে থাকব? তা আমার
পছন্দ নয়। কোনদিন আমি কামনা করিনি বিলাসী জীবন, সুস্বাদু ভুনা গােস্ত এবং স্ত্রী সন্তান-সন্তুতিদের নিয়ে সংসার-সুখ উপভােগ ।
তােমাদের প্রতি আমার অসিয়াতঃ
(ক) আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকীদা আঁকড়ে থাকবে।
(খ) নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াত করবে ও কুরআন হিফ্জ করার চেষ্টা করবে ।
(গ) জিহ্বার হিফাযত করবে, সংযত কথা থাকবে।
(ঘ) নিয়মিত সালাত ও সিয়াম পালনসহ সৎসঙ্গ গ্রহণ করবে।
(ঙ) জিহাদী আন্দোলনের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকবে। মনে রাখবে, কোন নেতার অধিকার নেই তােমাকে জিহাদ থেকে বিরত রাখার। অথবা দাওয়াত ও ইরশাদের সাথে জড়িত রেখে তােমাকে ভীরু কাপুরুষ ও জিহাদবিমুখ করার। জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহর ব্যাপারে কারও অনুমতির
অপেক্ষা করবে না। হাতে অস্ত্র তুলে নাও।
ঘােড়সওয়ার হও। তবে ঘােড়সওয়ারীর চেয়ে তীরন্দাযী আমার অধিক প্রিয়।
(চ) শরীয়াতের উপকারী ইলম অর্জন করবে।
(ছ) তােমরা সদা তােমাদের বড় ভাই মুহাম্মদকে মান্য করবে, তাকে সম্মান করবে, পরস্পর পােষণ করবে গভীর প্রীতি, শ্রদ্ধা ও ঐকান্তিক ভালবাসা।
(জ) তােমরা তােমাদের দাদা-দাদীর সাথে উত্তম আচরণ করবে, তােমাদের দু’ফুফু উম্মে ফইজ ও উম্মে মুহাম্মদকে শ্রদ্ধা করবে। আল্লাহর পরে তাদের অনুগ্রহ আমার উপর অনেক।
(ঝ) আমার রক্ত সম্পর্ক বজায় রাখবে। আমার পরিবারের সাথে নেক আচরণ করবে এবং আমার বন্ধু-বান্ধবদের হক আদায় করবে।
আবার দেখা হবে বেহেশতের পুস্পকাননে।
-আব্দুল্লাহ আযযাম।
এর কারণ সূরা তওবা যা জিহাদের সর্বশেষ চূড়ান্ত বিধান, যা পাঠ করে আমার হৃদয়ে সৃষ্টি হয় রক্তক্ষরণ, অনুভূত হয় অশেষ বেদনা ও আফসােস। কারণ তখন আমার সামনে স্পষ্ট হয়ে উঠে কিতাল ফী সাবীলিল্লাহ'র ব্যাপারে আমার ও উম্মাহর অমার্জনীয় উদাসীনতা। ‘কিতাল ফী সাবীলিল্লাহ' সম্পর্কিত আয়াতসমূহের বিকৃত ব্যাখ্যা অথবা তার অকাট্য বিধানাবলী থেকে অন্যত্র দৃষ্টি সরানাের দুঃসাহস যারা প্রদর্শন করেন, তাদের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়েছে সূরা তাওবার ‘আয়াতুস সাইফ', যে আয়াতে আল্লাহ সরাসরি নির্দেশ দিয়েছেন:-
وَقَٰتِلُوا۟ ٱلْمُشْرِكِينَ كَآفَّةً كَمَا يُقَٰتِلُونَكُمْ كَآفَّةًۚ وَٱعْلَمُوٓا۟ أَنَّ ٱللَّهَ مَعَ ٱلْمُتَّقِينَ
“আর মুশরিকদের সাথে তােমরা যুদ্ধ কর সমবেতভাবে, যেমন তারাও যুদ্ধ করেছে তােমাদের সাথে সমবেতভাবে। আর মনে রেখ, আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে রয়েছেন।” (তাওবা ও ৩৬)।
এই সেই আয়াত, যা দ্বারা পূর্বে অবতীর্ণ জিহাদ বিষয়ক বাইশ বা ততােধিক আয়াত রহিত হয়েছে এবং রুদ্ধ হয়েছে কিতাল নিয়ে ভিন্ন। ব্যাখ্যার সমূহ অবকাশ।
পবিত্র কুরআনে আরও বলা হয়েছে:-
فَإِذَا ٱنسَلَخَ ٱلْأَشْهُرُ ٱلْحُرُمُ فَٱقْتُلُوا۟ ٱلْمُشْرِكِينَ حَيْثُ وَجَدتُّمُوهُمْ وَخُذُوهُمْ وَٱحْصُرُوهُمْ وَٱقْعُدُوا۟ لَهُمْ كُلَّ مَرْصَدٍۚ فَإِن تَابُوا۟ وَأَقَامُوا۟ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتَوُا۟ ٱلزَّكَوٰةَ فَخَلُّوا۟ سَبِيلَهُمْۚ إِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
“অতপর নিষিদ্ধ মাস অতিবাহিত হলে তাদের বন্দী কর এবং অবরােধ কর। আর প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাদের সন্ধানে ওঁৎপেতে থাক। কিন্তু যদি তারা তাওবা করে, নামায কায়েম করে এবং যাকাত আদায় করে, তবে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চয় আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (তাওবা-৫)
আল্লাহর পথে জিহাদে বের না হয়ে অজুহাত দেখিয়ে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টা করা আত্মপ্রবঞ্চনা ছাড়া কিছুই নয়। বরং তা আল্লাহর দ্বীনের সাথে বিদ্রুপ করার শামিল। এ জাতীয় কর্মকাণ্ডে যারা লিপ্ত, তাদের থেকে দূরে থাকাই কুরআনের নির্দেশ, আল্লাহ তায়ালা স্পষ্ট
ভাষায় বলেছেনঃ-
وذر الذين اتخذوا دينهم لعبا ولهوا وغرتهم الحيواة
الدنيا
“তাদেরকে পরিত্যাগ কর, যারা নিজেদের ধর্মকে ক্রীড়া ও কৌতুকরূপে গ্রহণ করেছে এবং পার্থিব জীবন যাদেরকে ধোঁকায় ফেলে রেখেছে।” (আন'আম:৭০)
আমাদের মর্যাদার সুউচ্চ স্থানে আসীন হওয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা অপরিহার্য। নিরেট আশা-আকাঙ্খা দ্বারা কখনও মর্যাদা অর্জিত হয়নি এবং হবেও না। মর্যাদাশীল আত্মার অধিকারী হতে হলে আরামপ্রিয়তা ও বিলাসিতা ত্যাগ করতে হবে অবশ্যই। মনে রাখা উচিত, সবচেয়ে বেশী মর্যাদাশীল ইবাদত হচ্ছে জিহাদ। অন্য কোন ইবাদত এর সমান মর্যাদার নয়। এমনকি মসজিদুল হারাম নির্মাণ ও তথায় নিয়মিত অবস্থানেও জিহাদের সমপরিমাণ পুণ্যের আশা করা যায় না।
মুসলিম শরীফে বর্ণিত হয়েছে : “একদিন সাহাবীদের মধ্যে বাদানুবাদ শুরু হয়, একজন বললেন, ইসলাম ও ঈমানের পর আমার দৃষ্টিতে হাজীদের পানি সরবরাহের মত আর মর্যাদাসম্পন্ন আমল নেই। অপরজন মসজিদুল হারাম নির্মাণকে সর্বোচ্চ মর্যাদাবান আমল বলে দাবী করেন। তাঁর উক্তি খণ্ডন করে তৃতীয় জন বললেন, আমার দৃষ্টিতে আল্লাহর রাহে জিহাদই বড় আমল। অতঃপর সাহাবীদের এই ভিন্ন ভিন্ন মতামত অবসানের উদ্দেশ্যে অবতীর্ণ হয় এই আয়াত :
أَجَعَلْتُمْ سِقَايَةَ ٱلْحَآجِّ وَعِمَارَةَ ٱلْمَسْجِدِ ٱلْحَرَامِ كَمَنْ ءَامَنَ بِٱللَّهِ وَٱلْيَوْمِ ٱلْءَاخِرِ وَجَٰهَدَ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِۚ لَا يَسْتَوُۥنَ عِندَ ٱللَّهِۗ وَٱللَّهُ لَا يَهْدِى ٱلْقَوْمَ ٱلظَّٰلِمِينَ -
ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَهَاجَرُوا۟ وَجَٰهَدُوا۟ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ بِأَمْوَٰلِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ أَعْظَمُ دَرَجَةً عِندَ ٱللَّهِۚ وَأُو۟لَٰٓئِكَ هُمُ ٱلْفَآئِزُونَ-
يُبَشِّرُهُمْ رَبُّهُم بِرَحْمَةٍ مِّنْهُ وَرِضْوَٰنٍ وَجَنَّٰتٍ لَّهُمْ فِيهَا نَعِيمٌ مُّقِيمٌ
“তােমরা কি হাজীদের পানি সরবরাহ ও মসজিদুল হারাম আবাদকরণকে সেই লােকের সমান মনে কর, যে ঈমান রাখে আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি এবং যুদ্ধ করে আল্লাহ রাহে, এরা আল্লাহর দৃষ্টিতে সমান নয়। আর আল্লাহ জালেম লােকদের হেদায়েত করেন। যারা ঈমান এনেছে, দেশ ত্যাগ করেছে এবং আল্লাহর পথে নিজেদের মাল ও জান দিয়ে জিহাদ করেছে, তাদের বড় মর্যাদা রয়েছে আল্লাহর কাছে, আর তারাই সফলকাম। তাদের সুসংবাদ দিচ্ছেন স্বয়ং তাঁদের পরওয়ারদেগার দয়া, সন্তোষ ও জান্নাতের, সেখানে আছে তাদের জন্য স্থায়ী শান্তি।” (তাওবাঃ ১৯-২১)।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুসলমানদেরকে নির্বিচারে জবাই করা হচ্ছে আর আমরা দূর থেকে 'লা হাওলা' এবং ইন্নালিল্লাহ' পাঠ করেই আপন দায়িত্ব পালন করছি বলে আত্মতৃপ্ত হচ্ছি। জুলুম প্রতিরােধে এক পা-ও এগুতে আমরা প্রস্তুত নই। এটা আল্লাহর বিধানের সাথে বিদ্রুপ ছাড়া আর কি। এ আত্মপ্রবঞ্চনা আমাদেরকে ঈমানী দায়িত্ব পালন থেকে যুগ যুগ ধরে গাফেল করে রেখেছে।
কবির ভাষায়ঃ
পাপিষ্ঠ শত্রুর কবলে মুসলিম নারীর
আর্তচিৎকারে ধরণী প্রকম্পিত
আর মুসলমান নিদ্রার কোলে শায়িত।
এটা কি করে সম্ভব? আশ্চর্য!
আল্লামা ইবনে তাইমিয়া বলেন, ঈমানের পরে সর্বাপেক্ষা গুরুত্ত্বপূর্ণ ওয়াজিব দায়িত্ব হচ্ছে আক্রমণকারী শত্রুকে প্রতিরােধ করা, যার হাতে আমাদের ইহ ও পরকালীন স্বার্থ বিনষ্ট হওয়ার আশংকা রয়েছে। ইবনে তাইমিয়ার এ বক্তব্য আমি সম্পূর্ণ সমর্থন করি।
আমার গ্রন্থ ‘আদদিফা আন আরাদিল মুসলিমীন আহাম্মু ফুরুযিল আয়ান'-এ এ বিষয়ে বিস্তারিত আলােচনা করেছি। এ প্রসঙ্গে আমার অভিমত হচ্ছে:
• সালাত, যাকাত ও সিয়াম পরিত্যাগকারী ও কিতাল পরিত্যাগকারীর মধ্যে পার্থক্য নেই।
• জিহাদ থেকে বিরত থাকার অপরাধ ক্ষমার অযােগ্য; তালিম, তারবিয়াত, দাওয়াত ও গ্রন্থ রচনাসহ কোন কাজই জিহাদের দায়িত্ব পালন থেকে অব্যাহতি দেয় না।
• দুনিয়ার প্রায় সকল মুসলিম আজ জিহাদ পরিত্যাগের অভিযােগে অভিযুক্ত, তারা বন্দুক বহন না করার অপরাধে অপরাধী। নিতান্ত অক্ষম লােক ছাড়া যারাই আজ বন্দুক ছাড়া আল্লাহর সান্নিধ্যে যাবে, তারা পাপী হিসেবেই আল্লাহর সম্মুখে নীত হবে। কারণ, এরা কিতাল করেনি।
কিতাল এখন ফরজে আইন। রােগাক্রান্ত ও অক্ষম ব্যক্তিগণ ব্যতীত সকল মুসলিম এ ফরজ আদায়ে বাধ্য।
• আমার বিশ্বাস, আল্লাহর কাছে জিহাদ হতে অব্যাহতি পাবে শুধু। চার প্রকারের মানুষ (১) অন্ধ (২) বিকলাঙ্গ (৩) অসুস্থ এবং (৪) যারা ব্যয়ভার বহনে অসমর্থ। এরা ছাড়া বাকী সকল মুসলমানকে জিহাদ ত্যাগের কারণে আল্লাহর নিকট জবাবদিহির সম্মুখীন হতে হবে। চাই এ জিহাদ আফগানিস্তানে বা ফিলিস্তিনে (বা আরাকানে) হােক অথবা পৃথিবীর যে কোন ভূমিতে হােক, যা কাফের দ্বারা অপবিত্র হচ্ছে।
• আমি মনে করি, জিহাদে যােগদান করতে আজ পিতা, স্ত্রী কিংবা কর্জদাতার অনুমতির প্রয়ােজন নেই। এমনিভাবে কোন উস্তাদ বা নেতার সম্মতি নেয়াও ওয়াজিব নয়। অতীত ইতিহাসের প্রতিটি ক্রান্তিলগ্নে উপরােক্ত বিষয়ে উলামায়ে উম্মতের ইজমা বা ঐকমত্য রয়েছে। আজ যদি এ বিষয়ে কেউ ভুল বুঝানাের অপচেষ্টায় মেতে ওঠে, তবে তা হবে জুলুম এবং তা হবে আল্লাহর নির্দেশিত পথ ছেড়ে প্রবৃত্তির অনুসরণ। বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং একে গুরুত্বহীন মনে করা কিংবা বিকৃত ব্যাখ্যা দিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির কোন সুযােগ এখানে নেই।
• আফগানিস্তানে নির্যাতিত প্রতিটি মুসলিমের রক্ত ও লাঞ্ছিতা নারীর ইজ্জত লুণ্ঠনের জন্য আমরাই দায়ী। শক্তি-সামর্থ থাকা সত্ত্বেও আমরা তাদের সাহায্যে অগ্রসর হইনি। আমাদের উচিৎ ছিল, তাদের জন্য অস্ত্র, অন্ন ও চিকিৎসা সামগ্রী প্রেরণ করা এবং যাবতীয় যুদ্ধোপকরণ
সরবরাহ করা।
দাসুকী-শরহুল কাবীরের টীকায় লিখিত হয়েছে, “যদি কারও কাছে অতিরিক্ত খাদ্য থাকে এবং কোন অভুক্ত ব্যক্তিকে দেখা সত্ত্বেও সে তাকে খেতে না দেয় এবং সে যদি অনাহারে মৃত্যুবরণ করে তবে ঐ ব্যক্তি শাস্তির যােগ্য হবে। যদি খাদ্যের মালিক এ কথা মনে করে অনাহারী ব্যক্তিকে খাদ্য না দিয়ে থাকে যে, আমি আমার এ খাদ্য না দিলে সে ক্ষুধার যন্ত্রণায় মৃত্যুবরণ করবে না। অতঃপর যদি অনাহারী ব্যক্তি এ কারণেই মৃত্যুবরণ করে, তবে কি তার কোন শাস্তি হবে? এ প্রসঙ্গে আলিমগণ দু'টি অভিমত ব্যক্ত করেছেনঃ
(১) উক্ত ব্যক্তি তার সম্পদ হতে মৃত ব্যক্তির দিয়াত আদায়ে বাধ্য থাকবে।
(২) আর কারও মতে, উক্ত ব্যক্তির শাস্তি কিসাস'; তাকে হত্যা করা হবে। কারণ সে খাদ্য না দেয়ার কারণে লােকটি ক্ষুধার যন্ত্রণায় মৃত্যুবরণ করেছে। হায়, পরকালে কি পরিণাম অপেক্ষা করছে সম্পদশালী ও বিত্তবানদের জন্য যারা নিজেদের মনােবৃত্তির জন্য অর্থের অপচয় করছে অথচ অনাহারী মুসলমানদের জন্য তারা সামান্য অনুদান দিতেও কুণ্ঠিত।
ও হে মুসলমান! তােমাদের জীবন মানেই জিহাদ, তােমাদের সম্মান মানেই জিহাদ। জিহাদের সাথেই জড়িত তােমাদের অস্তিত্ব।
হে দাওয়াত কর্মীগণ! তােমাদের অস্ত্র ব্যবহার করতে হবে এবং কাফির, অত্যাচারী ও তাগুতের জনপদ বিরান করে দিতে হবে। নতুবা এ আকাশের ছায়ায় তােমাদের কানাকড়ি মূল্যও থাকবে না ।
যাদের ধারণা, কিতাল, জিহাদ ও রক্ত দেয়া ছাড়াই দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হবে, তারা বােকার স্বর্গে বাস করে। দ্বীনের মর্ম ও প্রকৃতি সম্পর্কে তারা অবগত নন। কিতাল ব্যতীত দাওয়াত কর্মীর প্রতাপ, দাওয়াতের প্রভাব ও মুসলমানের গৌরব অক্ষুন্ন থাকতে পারে না।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন, “আল্লাহ শক্রর হৃদয় হতে তােমাদের প্রভাব দূরীভূত করে দেবেন।
আর তােমাদের হৃদয়ে প্রবিষ্ঠ করিয়ে দেবেন ‘ওয়াহান'। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল, “ওয়াহান’ কি? তিনি বললেন, দুনিয়া-প্রীতি ও মৃত্যু-ঘৃণা।” অন্য বর্ণনা মতে ওয়াহান মানে কিতালের প্রতি অনীহা ও ঘৃণা পােষণ করা।
কুরআনের ঘােষণা :
فَقَٰتِلْ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ لَا تُكَلَّفُ إِلَّا نَفْسَكَۚ وَحَرِّضِ ٱلْمُؤْمِنِينَۖ عَسَى ٱللَّهُ أَن يَكُفَّ بَأْسَ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ۚ وَٱللَّهُ أَشَدُّ بَأْسًا وَأَشَدُّ تَنكِيلًا
“হে রাসূল, আল্লাহর রাহে যুদ্ধ করতে থাকুন, আপনি নিজ সত্তা ব্যতীত অন্য কোন বিষয়ের যিম্মাদার নন। আর আপনি মুমিনদের উৎসাহিত করতে থাকুন, শীঘ্রই আল্লাহ কাফিরের শক্তি সামর্থ খর্ব করে দিবেন। আর আল্লাহ শক্তি সামর্থের দিক দিয়ে অত্যন্ত কঠোর ও কঠিন শাস্তিদাতা।” (নিসাঃ ৮৪)।
কিতালের অনুপস্থিতিতে শিরক ও ফিতনার সয়লাব বয়ে যাবে এবং প্রতিষ্ঠিত হবে শিরকের বিজয় পতাকা। এ জন্যই আল্লাহ বলেছেন:-
وَقَٰتِلُوهُمْ حَتَّىٰ لَا تَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ ٱلدِّينُ كُلُّهُۥ لِلَّهِۚ فَإِنِ ٱنتَهَوْا۟ فَإِنَّ ٱللَّهَ بِمَا يَعْمَلُونَ بَصِيرٌ
“আর তাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাক যতক্ষণ না ফিতনা দূর হয়ে যায় এবং আল্লাহর সমস্ত হুকুম প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়।” (আনফাল:-৩৯)।
জিহাদই পৃথিবীর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার একমাত্র গ্যারান্টি।
প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে;-
ولولا دفع الله الناس بفضهم ببفض لفسدت الأرض
“আল্লাহ যদি এককে অন্যের দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তাহলে গােটা দুনিয়া বিধ্বস্ত হয়ে যেত।” (বাকারা : ২৫১ আয়াতাংশ)।
জিহাদই ইবাদাতখানা ও পবিত্র স্থানসমূহের সম্মান নিশ্চিত করতে পারে এবং এর অবমাননা রােধ করতে পারে। আল্লাহ ইরশাদ করেছেন:-
ولولا دفع الله الناس بعضهم ببعض لهدمت صوامع
وبيع وصوت ومساجد يذكر فيها اسم الله كثيرا
“আল্লাহ যদি মানবজাতির একদলকে অপর দল দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তবে (খৃস্টানদের) নির্জন গির্জা, ইবাদতখানা, (ইহুদীদের) উপাসনালয় এবং মসজিদসমূহ বিধ্বস্ত হয়ে যেত। যেগুলােয় আল্লাহর নাম অধিক স্মরণ করা হয়।” (হজ্ব:-৪০)
অতএব হে মুসলিম! মসজিদসমূহের পবিত্রতা ও আপন অস্তিত্বের স্বার্থেই তােমাদের জিহাদ করতে হবে।
হে ইসলামের মহান দায়ী! মৃত্যুর আকাঙখী হও, পাবে তুমি অমর জীবন, আশা ও বিলাস প্রতারণার শিকার হয়াে না, আর আল্লাহ সম্পর্কে প্রতারক শয়তানের প্রবঞ্চনা হতে বেঁচে থাক । নফল ইবাদত ও কিতাব অধ্যয়ন যেন কিতাল সম্পর্কে তােমাকে ধোকায় না ফেলে। সাবধান!
বিলাসিতা যেন তােমাকে এ মহান দায়িত্ব থেকে বিচ্যুত করতে না পারে।
আল্লাহ বলেছেন:-
وتودون أن غير ذات الشوكة تكون لكم
“আর তােমরা কামনা করছিলে তা, যাতে কোন রকম কন্টক নেই।”(আনফাল : ৭)।
জিহাদের ব্যাপারে কারও অন্যায়-অনুসরণ কর না। জিহাদের সার্বজনীন আহ্বানে সাড়া দিতে নেতার অনুমতি নেয়ার প্রয়ােজন হয় না। নিশ্চয় জিহাদ দাওয়াতী মিশনের স্তম্ভ, তােমার ধর্মের মজবুত আশ্রয় কেন্দ্র ও তােমার শরীয়তের অতন্দ্র প্রহরী।
উলামায়ে ইসলামকে বলছিঃ
আপন প্রভূর পানে ফিরে আসতে চায় এ প্রজন্ম। এদের নেতৃত্বদানে এগিয়ে আসুন। দুনিয়ার আসক্তি হতে নিজেকে মুক্ত রাখুন।
সাবধান! তাগুত ও খােদাদ্রোহী শক্তির পৃষ্ঠপােষকতা করবেন না। তাহলে আপনার
হৃদয়ালােক হেঁয়ে যাবে অমানিশায়, আপনার আত্মার ঘটবে অপমৃত্যু এবং জনগণ ও আপনার মাঝে সৃষ্টি হবে বিচ্ছিন্নতার বিশাল প্রাচীর।
হে মুসলমান! অলসদ্ৰিায় কেটেছে তােমাদের বহু যুগ। তােমাদের জন্মভূমিতে আজ পাপিষ্ঠদের পদচারণা, তারা আবৃত্তি করছে বিজয়ের গান।
কবি কত সুন্দর উক্তি করেছেন ?
“গ্লানির নিদ্রা অতি দীর্ঘ হয়ে গেছে, কিন্তু কোথায় বাঘের হুংকার?
খােদাদ্রোহী গােষ্ঠী গাইছে বিজয়ের সংগীত আর আমরা করছি দাসত্ব।
হায় কবে ভাঙ্গব বন্দীশালা, কবে পাব মুক্তির রাজপথ।
আমি শুনতে পাই, মানবতার কারাগারে বন্দী নির্যাতিত মুসলিম
উম্মাহ কবির সাথে সুর মিলিয়ে বলছে, মুক্তি চাই, মুক্তি চাই।
হে মহীয়সী নারী সমাজ! আপনারা বিলাসপ্রিয় হবেন না, যা একান্ত প্রয়ােজন তাই করুন। অল্পে তুষ্ট থাকুন। আপনার সন্তানকে নির্ভীক, দুর্জয়, সাহসী মুজাহিদরূপে গড়ে তুলুন। আপনার ঘর যেন হয় সিংহ-শাবকের লালনভূমি। তাকে ভীরু মুরগীর চারণক্ষেত্রে পরিণত করবেন না, যারা
তাজা ও পুষ্ট হয় অন্য জীবের উদরপূর্তির জন্য।
আপনার সন্তানের মাঝে সৃষ্টি করুন জিহাদপ্রেম, তারুণ্যের তেজ ও দিগ্বিজয়ের দূরন্ত নেশা। মুসলমানদের সমস্যা সম্পর্কে সজাগ থাকুন, আপনার জীবনে সপ্তাহের একটি দিন অন্তত এমনভাবে কাটান, যা মুহাজিরীন ও মুজাহিদীনের জীবনাচারের পরিচয় বহন করে। তাদের ন্যায় শুকনাে রুটি ও সামান্য তরকারী আপনি আহার করুন। এভাবে ঘরে বসেও আপনি লালন করতে
পারেন জিহাদী চিন্তা, বিজয়ীর চেতনা।
ওহে শিশু কিশাের দল! তােমরাই আগামী দিনের তরুণ যুবক, মিল্লাতের আশা-আকাঙ্খার প্রতীক, আজ হতে সামরিক প্রশিক্ষণ নাও। রপ্ত কর যাবতীয় সমর কৌশল। ট্যাংক ও অস্ত্রই হােক তােমার খেলনা। বিলাসবহুল জীবন নয়, তােমার প্রয়ােজন কষ্টসহিষ্ণু মুক্ত বিহঙ্গের জীবন। এড়িয়ে চল ফুলশয্যা, বরণ কর কন্টকপূর্ণ গৃহাঙ্গন। সংগীতের সুরের চেয়ে তরবারীর ঝংকার হােক তােমার প্রিয় বিষয়। তবেই ছুড়তে পারবে শত্রুর প্রতি চ্যালেঞ্জ। একদিন তােমার দ্বারা সূচিত হবে মুসলিম মিল্লাতের ঐতিহাসিক বিজয়।
সুপ্রিয়া! হে মাের সহধর্মিনী।
১৯৬৯ এর সে কষ্টকর সময়ের কথা আমার আজও মনে পড়ে। আমাদের ঘরে ছিল দু'কিশাের ও এক শিশুসন্তান, কাঁচা ইটের তৈরী ছিল আমাদের আবাসঘর। ছিল না কোন আলাদা রান্নাঘর। তােমার উপরই ন্যস্ত করেছিলাম পুরাে সংসার।
একদিন সন্তানরা বড় হল, আমাদের পরিচিতিও বৃদ্ধি পেল, অতিথিতে সরগরম হয়ে উঠল আমাদের ঘর। আর তুমি ছিলে তখন সন্তান-সম্ভাবা। তােমার কষ্ট ও পরিশ্রমের অন্ত ছিল না।
কিন্তু সবকিছুই তুমি হাসিমুখে বরণ করে নিয়েছিলে। তােমার উদ্দেশ্য ছিল আল্লাহর সন্তুষ্টি, লক্ষ্য ছিল আমার সহায়তা করা। আল্লাহ তােমাকে সর্বোত্তম প্রতিদানে ভূষিত করুন। সত্যিই আল্লাহর দয়া ও তােমার ধৈর্য না হলে আমার একার পক্ষে এ বিরাট বােঝা উঠান সম্ভব ছিল না।
হে প্রিয়া আমার!
এ জীবনে তােমাকে দেখেছি দুনিয়াবিমুখ, পার্থিব বস্তুর প্রতি ছিল না তােমার কোন অনুরাগ, দরিদ্রতার প্রতি ছিল না তােমার কোন অভিযােগ।
আর স্বচ্ছল সময়েও দেখিনি তােমাকে বিলাসিতায় ডুবে থাকতে। দুনিয়াকে সব সময় তুমি রেখেছিলে হাতের মুঠোয়, হৃদয়ে ছিল না দুনিয়ার কোন স্থান।
মনে রাখবে, জিহাদী জীবনই আনন্দ ও সুখের জীবন। জীবনকে বিলাসিতার গড্ডালিকা- প্রবাহে ভাসিয়ে দেয়ায় কোন সুখ নেই। কষ্ট ক্লেশে ধৈর্য ধারণ করা মহত্ত্বের পরিচয়।
তাই দুনিয়ার মােহ বর্জন কর, আল্লাহর ভালবাসা পাবে। মানুষের সম্পদ দেখে লােভ কর না, তারা তােমায় ভালবাসবে।
আল-কুরআন মানব জীবনের সেরা সাথী ও সর্বশ্রেষ্ঠ পাথেয়। রাত্রির নামায, নফল রােযা ও গভীর রজনীর ইস্তিগফার অন্তরলােকে আনে
স্বচ্ছতা, সৃষ্টি করে ইবাদাতের অনুরাগ এবং পুণ্যবানদের সৎসঙ্গ, স্বল্প সম্পদ, দুনিয়াদারদের থেকে দূরে থাকা এবং ভনিতা থেকে বিরত থাকলে হৃদয়ে প্রশান্তি অনুভূত হয়।
হে প্রিয়া! আল্লাহর কাছে একান্ত কামনা, জান্নাতুল ফিরদাউসে পুনঃ আমাদের মিলন হােক, যেমনিভাবে দুনিয়াতে মিলিত হয়েছিলাম আমরা দু'টি প্রাণ!
হে আমার কলিজার টুকরা সন্তান-সন্তুতি!
মন ভরে কোন দিন তােমাদের সঙ্গ দিতে পারিনি। আমার শিক্ষা ও তারবিয়াত তােমাদের ভাগ্যে কমই জুটেছে। অধিকাংশ সময় আমি তােমাদের থেকে বহু দূরে থেকেছি, কিন্তু আমি ছিলাম নিরুপায়। তােমরা। জান, মুসলমানদের উপর বিপদের কালাে মেঘ ছেয়ে আছে, যার গর্জনে দুগ্ধদানকারী মায়ের কোল থেকে তার দুগ্ধপােষ্য শিশু ভয়ে ছিটকে পড়ে যাচ্ছে।
উম্মতের সংকটের ব্যাপকতা চিন্তা করলে কিশাের ললাটেও ভেসে উঠছে বার্ধক্যের বলিরেখা । মুরগীর ন্যায় তােমাদের নিয়ে আমি খাচায়
বাস করিনি। মুসলমানদের অন্তর বেদনায় জ্বলবে আর আমি আরামে বিশ্রাম নিব, সংসারসুখ উপভােগ করব? দুর্দশায় মুসলমানদের হৃদয় বিদীর্ণ হবে, নির্যাতনে জ্ঞান বিলুপ্ত হবে আর আমি ঘরে বসে থাকব? তা আমার
পছন্দ নয়। কোনদিন আমি কামনা করিনি বিলাসী জীবন, সুস্বাদু ভুনা গােস্ত এবং স্ত্রী সন্তান-সন্তুতিদের নিয়ে সংসার-সুখ উপভােগ ।
তােমাদের প্রতি আমার অসিয়াতঃ
(ক) আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকীদা আঁকড়ে থাকবে।
(খ) নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াত করবে ও কুরআন হিফ্জ করার চেষ্টা করবে ।
(গ) জিহ্বার হিফাযত করবে, সংযত কথা থাকবে।
(ঘ) নিয়মিত সালাত ও সিয়াম পালনসহ সৎসঙ্গ গ্রহণ করবে।
(ঙ) জিহাদী আন্দোলনের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকবে। মনে রাখবে, কোন নেতার অধিকার নেই তােমাকে জিহাদ থেকে বিরত রাখার। অথবা দাওয়াত ও ইরশাদের সাথে জড়িত রেখে তােমাকে ভীরু কাপুরুষ ও জিহাদবিমুখ করার। জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহর ব্যাপারে কারও অনুমতির
অপেক্ষা করবে না। হাতে অস্ত্র তুলে নাও।
ঘােড়সওয়ার হও। তবে ঘােড়সওয়ারীর চেয়ে তীরন্দাযী আমার অধিক প্রিয়।
(চ) শরীয়াতের উপকারী ইলম অর্জন করবে।
(ছ) তােমরা সদা তােমাদের বড় ভাই মুহাম্মদকে মান্য করবে, তাকে সম্মান করবে, পরস্পর পােষণ করবে গভীর প্রীতি, শ্রদ্ধা ও ঐকান্তিক ভালবাসা।
(জ) তােমরা তােমাদের দাদা-দাদীর সাথে উত্তম আচরণ করবে, তােমাদের দু’ফুফু উম্মে ফইজ ও উম্মে মুহাম্মদকে শ্রদ্ধা করবে। আল্লাহর পরে তাদের অনুগ্রহ আমার উপর অনেক।
(ঝ) আমার রক্ত সম্পর্ক বজায় রাখবে। আমার পরিবারের সাথে নেক আচরণ করবে এবং আমার বন্ধু-বান্ধবদের হক আদায় করবে।
আবার দেখা হবে বেহেশতের পুস্পকাননে।
-আব্দুল্লাহ আযযাম।
Comment