জিহাদের জন্যে প্রস্তুতি গ্রহণ
জিহাদ যেমন ফরজ, জিহাদের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করাও ফরজ। জিহাদের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করাকে শর’য়ি পরিভাষায় ই’দাদ বলা হয়।
আমাদের পক্ষে জিহাদ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে ই’দাদ থেকেও হাত গুটিয়ে বসে থাকবো, তা রাব্বুল আলামিনের দরবারে গ্রহণযোগ্য হবে না। বরং জিহাদের প্রবল তামান্না অন্তরে রেখে ই’দাদের ফরজ আদায়ে অগ্রগামী হতে হবে। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেছেন,
وَ لَوۡ اَرَادُوا الۡخُرُوۡجَ لَاَعَدُّوۡا لَہٗ عُدَّۃً وَّ لٰکِنۡ کَرِہَ اللّٰہُ انۡۢبِعَاثَہُمۡ فَثَبَّطَہُمۡ وَ قِیۡلَ اقۡعُدُوۡا مَعَ الۡقٰعِدِیۡنَ-
‘আর যদি তারা (যুদ্ধে) যাত্রা করার ইচ্ছা করতো তাহলে এরজন্য কিছু সরঞ্জাম তো প্রস্তুত করত, কিন্তু আল্লাহ তাদের যাত্রাকে অপছন্দ করেছেন, এ জন্য তাদেরকে তাওফিক দেননি এবং বলে দেয়া হলো, তোমরা অক্ষম লোকদের সাথে এখানেই বসে থাকো।’ (সুরা তাওবা : ৪৬)
আল্লাহ তাআলা অন্যত্র বলেছেন,
وَ اَعِدُّوۡا لَہُمۡ مَّا اسۡتَطَعۡتُمۡ مِّنۡ قُوَّۃٍ وَّ مِنۡ رِّبَاطِ الۡخَیۡلِ تُرۡہِبُوۡنَ بِہٖ عَدُوَّ اللّٰہِ وَ عَدُوَّکُمۡ وَ اٰخَرِیۡنَ مِنۡ دُوۡنِہِمۡ ۚ لَا تَعۡلَمُوۡنَہُمۡ ۚ اَللّٰہُ یَعۡلَمُہُمۡ ؕ وَ مَا تُنۡفِقُوۡا مِنۡ شَیۡءٍ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ یُوَفَّ اِلَیۡکُمۡ وَ اَنۡتُمۡ لَا تُظۡلَمُوۡنَ-
‘তোমরা কাফিরদের মুকাবিলা করার জন্য যথাসাধ্য শক্তি ও সদাসজ্জিত অশ্ববাহিনী প্রস্তুত রাখবে, যার মাধ্যমে আল্লাহর শক্র ও তোমাদের শক্রদেরকে ভীত সন্ত্রস্ত করবে, এছাড়া অন্যান্যদেরকেও যাদের (শত্রুতার) ব্যাপারে তোমরা জানো না, কিন্তু আল্লাহ জানেন। আর তোমরা আল্লাহর পথে যা কিছু ব্যয় কর, তার প্রতিদান তোমাদেরকে পুরোপুরি প্রদান করা হবে, তোমাদের প্রতি (কম দিয়ে) অবিচার করা হবেনা।’ (সুরা আনফাল : ৬০)
ই’দাদ বা জিহাদের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ এভাবে হতে পারে :
১. জ্ঞানগত প্রস্তুতি :
প্রথমত জিহাদ বিষয়ে নির্ভেজাল জ্ঞানার্জনের চেষ্টা করতে হবে। এ জন্য বর্তমান মুজাহিদ ভাইদের লেকচার শোনা, তাদের রচিত কিতাবাদী অধ্যয়ন করা জরুরি। সালাফদের রেখে যাওয়া কিতাবগুলোও অবশ্যই আমাদের পাঠ্যতালিকায় রাখতে হবে।
কিতাবি জ্ঞানের পাশাপাশি ব্যবহারিক জ্ঞানও অত্যন্ত জরুরি। ব্যবহারিক জ্ঞানের আওতায় আমরা নিম্নোক্ত বিষয়গুলো আনতে পারি।
– নিজ এলাকার মানচিত্র জানা।
– নিজ এলাকার প্রবেশপথ এবং এর বিকল্প পথ সম্পর্কে জানা।
– স্থলপথের পাশাপাশি নদীপথ সম্পর্কে জ্ঞান রাখা।
– পুলিশ স্টেশনসহ তাগুত সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভবন সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখা।
– নিজ এলাকার নির্জন স্থান চিনে রাখা। ইত্যাদি।
উপর্যুক্ত বিষয়গুলো কেবল নিজ এলাকাভিত্তিক, তবে বৈশ্বিক ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
২. মানসিক প্রস্তুতি :
যারা জানে আর যারা জানে না, দায়িত্ব এবং মর্যাদার দিক থেকে তারা তো কখনো সমপর্যায়ের নয়৷ সুতরাং আমরা যখন জিহাদ সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করবো, তখন আমাদের দায়িত্ব আরো বেড়ে যাবে। এ পর্যায়ে জিহাদের জন্য আমাদেরকে মানসিক প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। রিবাতের ভূমিতে কতটা কষ্ট স্বীকার করতে হয়, জিহাদের ময়দানে কতটা ত্যাগ স্বীকার করতে হয়, তা আমাদের মনে গেঁথে নিতে হবে এবং সেভাবেই মনোজগতকে প্রস্তুত করতে হবে। এছাড়াও পরিবার থেকে দূরে থাকার জন্য মনকে প্রস্তুত রাখা জরুরি।
৩. আর্থিক প্রস্তুতি :
জিহাদের জন্য আর্থিক প্রস্তুতি গ্রহণ করাও প্রয়োজন। নিজের জন্য, মুজাহিদ ভাইদের জন্য, এমনকি রেখে যাওয়া নিজ পরিবারের জন্যও আর্থিক সঞ্চয় করা আমাদের কর্তব্য। এ ক্ষেত্রে নিজের রোজগার থেকে অল্প কিছু করে হলেও নিয়মিত সঞ্চয় করতে হবে। তবে সবচেয়ে ভালো হয়, সঞ্চিত অর্থ দিয়ে যতটুকু সম্ভব স্বর্ণ কিনে রাখা।
৪. শারীরিক প্রস্তুতি :
শারীরিক প্রস্তুতি জিহাদের জন্য সবচেয়ে জরুরি একটি পর্যায়। রুগ্ন-ভগ্ন শরীর নিয়ে জিহাদের ময়দানে টিকে থাকা দুরূহ ব্যাপার। তাই শরীর ফিট রাখা কর্তব্য। এজন্য সুষম খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত শরীরচর্চা, পরিমিত বিশ্রাম অত্যন্ত দরকারি। তাছাড়া যুদ্ধের উপযোগী নানাবিধ শারীরিক কসরতও রপ্ত করা প্রয়োজন।
উপরে যা উল্লেখ করা হলো তা ইদা’দের কিছু উদাহরণ মাত্র। এগুলোর বাইরেও আরো বিভিন্নরকম প্রস্তুতি গ্রহণ করার ফিকির করতে হবে। মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন আমাদেরকে মুজাহিদ ভাইদের সাথে শামিল করুন। আমিন।
লেখক: আবদুল্লাহ আবু উসামা
Comment