বক্তব্য ১০: [জিহাদিদের মুতালাআ যে নাকেস-অসম্পূর্ণ তা বুঝাতে হুজুর কয়েকটি আয়াত, কয়েকটি হাদিস এবং কয়েকটি মাসআলা সামনে এনেছেন:
আয়াত
{فَإِنِ انْتَهَوْا فَلَا عُدْوَانَ إِلَّا عَلَى الظَّالِمِينَ} [البقرة: 193]
{ فَإِنِ انْتَهَوْا فَإِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ} [البقرة: 192]
{وَاقْتُلُوهُمْ حَيْثُ ثَقِفْتُمُوهُمْ} [البقرة: 191]
{فَاقْتُلُوا الْمُشْرِكِينَ حَيْثُ وَجَدْتُمُوهُمْ} [التوبة: 5]
{أَلَمْ تَرَ إِلَى الْمَلَإِ مِنْ بَنِي إِسْرَائِيلَ مِنْ بَعْدِ مُوسَى إِذْ قَالُوا لِنَبِيٍّ لَهُمُ ابْعَثْ لَنَا مَلِكًا نُقَاتِلْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ قَالَ هَلْ عَسَيْتُمْ إِنْ كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِتَالُ أَلَّا تُقَاتِلُوا قَالُوا وَمَا لَنَا أَلَّا نُقَاتِلَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَقَدْ أُخْرِجْنَا مِنْ دِيَارِنَا وَأَبْنَائِنَا فَلَمَّا كُتِبَ عَلَيْهِمُ الْقِتَالُ تَوَلَّوْا إِلَّا قَلِيلًا مِنْهُمْ وَاللَّهُ عَلِيمٌ بِالظَّالِمِينَ (246)} [البقرة: 246]
হাদিস
# ফাতহে মক্কায় কাফেরদের নিরাপত্তা প্রদান।
# বীরে মাউনায় সাহাবায়ে কেরামের শহীদ হওয়া ও রাসূল আলাইহিস সালামের কুনুতে নাযেলা পড়ার হাদিস।
# ছুলহে হুদায়বিয়া ও মক্কার মুস্তাদআফিনদের প্রসঙ্গ।
# আলজিহাদু মাদিন ইলা ইয়াউমিল কিয়ামাহ- খাবারিয়া না বিধান?
মাসআলা
# মাসআলার মধ্যে দিফায়ি জিহাদের প্রসঙ্গটা একটু দীর্ঘ টেনেছেন। দিফায়ি জিহাদের হাকিকত কি এবং দিফায়ি জিহাদে কি কোনো শর্ত নেই? একজন মুসলিম বন্দী হলে বা কোনো ভূখণ্ড দখল হলে জিহাদ ফরযে আইন। কিন্তু ফরযে আইনটা কে বাস্তবায়ন করবে, কিভাবে করা হবে, কোনো শর্ত শারায়েত ও নিয়ম নীতি আছে কি’না? ইত্যাদি প্রসঙ্গ এনেছেন।
# দারুল ইসলাম দারুল হারব প্রসঙ্গ।
# মানব রচিত কুফরি আইন দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা ]
অভিব্যক্তি
এ প্রত্যেকটা বিষয়ই দীর্ঘ আলোচনার দাবি রাখে। হয়তো প্রসঙ্গক্রমে এসেছে তাই হুজুর কিছু কথা বলেছেন। নতুবা এসব আয়াত, হাদিস ও মাসআলার ক্ষেত্রে হুজুরের মাওকিফ কি- তা হুজুর খুব একটা পরিষ্কার করেননি। হুজুর যদি পরিষ্কার করে বলেন: এ আয়াতের ব্যাপারে আমার মাওকিফ এই আর জিহাদিদের মাওকিফ এই, কিংবা এই হাদিস বা মাসআলার ক্ষেত্রে আমার মাওকিফ এই আর জিহাদিদের মাওকিফ এই- এমন পরিষ্কার ও সুস্পষ্ট অবস্থান থাকলে হয়তো আলোচনায় যাওয়া যেতো। হুজুরের মাওকিফ যেহেতু পরিষ্কার না তাই এ ব্যাপারে
আলোচনায় যেতে চাচ্ছি না। শুধু ইজমালি কয়েকটা কথা বলতে চাই।
হুজুর যেসব প্রসঙ্গ এনেছেন, মৌলিকভাবে সেগুলো দুইভাগে বিভক্ত:
ক. কিছু আছে শরয়ী মাসআলাগত বিষয়।
খ. কিছু আছে মানহাজ ও কর্মপন্থা। এগুলো অনেকটা তাজরিবা ও অভিজ্ঞতার সাথে সম্পৃক্ত। কখন, কোন পরিস্থিতিতে, কোন ধরনের কর্মপন্থা ফলপ্রসু তা সমরবিশেষজ্ঞগণ নির্ধারণ করবেন। আমরা যারা যুদ্ধবিশেষজ্ঞ নই, আমাদের উচিত বিশেষজ্ঞদের মেনে চলা।
ধরুন, বন্দী মুসলিমদের মুক্ত করা, দখলকৃত ভূখণ্ডগুলো উদ্ধার করা এবং তাগুতি শাসনের অবসান ঘটিয়ে খিলাফাহ প্রতিষ্ঠা করা ফরয। কুরআন সুন্নাহর আলোকে এটি পরিষ্কার। উলামায়ে কেরাম এ বিষয়ে ফতোয়া দিবেন। কুরআন সুন্নাহর আলোকে ফতোয়া দেয়ার কাজটা তারা করতে পারবেন।
কিন্তু এ ফরয বাস্তবায়নের ত্বরিকা কি হবে- সে এক দীর্ঘ অধ্যায়। এখানে একেক জনের একেক রায় হতে পারে। তবে এ বিষয়ে রায় দেয়ার জন্য শুধু আলেম হওয়া যথেষ্ট নয়, সমরবিশেষজ্ঞতা জরুরী। ব্যবসার শরয়ী মাসায়েল বুঝলেই ভাল ব্যবসায়ী হওয়া যায় না, কৃষির শরয়ী বিধান জানলেই ভাল কৃষক হওয়া যায় না। এগুলো অনেকটা অভিজ্ঞতার বিষয়। যে যেটা করে, সে সেটা ভাল বুঝে।
এখানে এসে অনেক জিহাদি ভাই এবং আলেম উলামাদের অনেকে বিভ্রাটে পড়ে যান। উভয়েই কিছু ইফরাত তাফরিতের শিকার হন। যেমন:
অনেক দায়ী ভাই মনে করেন, জিহাদ ফরয তাহলে আলেমরা মাদ্রাসা মসজিদে বসে আছেন কেন? কেন অস্ত্র হাতে মাঠে নামছেন না?
অপরদিকে অনেক আলেম মনে করেন, এখন তো আমাদের কিতাল করার মতো শক্তি নেই, তাহলে অনর্থক জিহাদের কথা বলে লাভ কি? এমনকি জিহাদের কথা যারা বলে, তারা তাদের বিরোধিতা করতেও অনেক ক্ষেত্রে দ্বিধা করেন না।
আসলে এ উভয় ধারণাই গলদ। জিহাদ ফরয শুনতেই অস্ত্র হাতে মাঠে নামতে হবে যেমন সঠিক নয়, শক্তি নেই বলে জিহাদের হুকুম বয়ান করে কোনো ফায়েদা নেই মনে করাও সঠিক নয়। আমরা আসলে মাসায়েলও সঠিক বুঝতে পারিনি, মানহাজও সঠিক বুঝতে পারিনি।
আসলে ই’তিদাল ছিল জিহাদের হুকুম বয়ান করা, জিহাদের তাহরিদ করা। পাশাপাশি ই’দাদ ও জিহাদের মানহাজ-কর্মপন্থা কি হবে: তা সমরবিশেষজ্ঞ উলামা ও উমারাদের হাতে ছেড়ে দেয়া। কথায় আছে, ‘লি কুল্লি ফান্নিন রিজাল’। তা না হয়ে এখন হচ্ছে কি: আলেম উলামারা জিহাদি মানসিকতার যুবকদের দোষ দিচ্ছেন যে তারা জযবাতি, আর জযবাতিরা উলামাদের নাম দিচ্ছে যে তারা জিহাদবিমুখ আরামপ্রিয় মানসাবপছন্দী। উভয় তায়েফার বিভ্রাটের সম্মিলন থেকে উৎপত্তি হচ্ছে জিদাল, নিজা, মিরা এবং নানা রকম ফিতনা।
হুজুর যেসব বিষয়ের কথা উঠিয়েছেন, সেগুলোর মধ্যে যেগুলো সরাসরি শরয়ী মাসআলাগত বিষয়: মৌলিকভাবে সাধারণ আলেম উলামাদের আলোচ্য বিষয় সেগুলোই। আর মানহাজগত বিষয়গুলোর মৌলিক ভার আমরা সেসব উলামা, উমারা ও দায়িত্বশীলদের উপর ছাড়তে পারি, যারা আল্লাহর রহমতে রাশিয়া-আমেরিকা উভয় সুপার পাওয়ারকে নাকানি চুবানি খাইয়েছেন। যাদের আছে এক সুবিশাল ও দীর্ঘদিনের জিহাদি অভিজ্ঞতা। শত্রুকে কোথায় কিভাবে মার দিতে হয়, সে ব্যাপারে তারাই ভাল বুঝেন।
যেমন ধরুন, কোনো কুলাঙ্গার দীর্ঘদিন ধরে সরকারের ছত্রছায়ায় রাসূলের সাথে বেয়াদবি করে আসছে। তাকে হত্যা করা যে জায়েয (বরং সামর্থ্য থাকলে জরুরী) তা ইসলামী শরীয়তে পরিষ্কার। সাধারণ আলেম উলামাদের দায়িত্ব হুকুম বয়ান করা এবং উম্মাহকে এ ধরনের কুলাঙ্গার ও তার আশ্রয়দাতাদের থেকে প্রতিশোধ নিতে উদ্বুদ্ধ করা।
কিন্তু এ প্রতিশোধ কিভাবে নেবে কিংবা এখন নেয়া হবে, না’কি তাখির করা ভাল হবে: এসব মানহাজগত বিষয় সমরবিশেষজ্ঞ উলামা উমারাদের দায়িত্বে ছেড়ে দিই।
আমি যতটুকু বুঝতে পারছি – ওয়াল্লাহু আ’লাম- শরয়ী বিষয়গুলোর পাশাপাশি মানহাজগত বিষয়েও হুজুর একটা মত পোষণ করেন। আর স্পষ্ট যে বর্তমান তাগুতি দুনিয়া যেভাবে সমগ্র বিশ্বকে কন্ট্রোল করছে, আমাদের মতো সাধারণদের দৃষ্টিতে জিহাদ ই’দাদের কোনো কাজই সম্ভব মনে হয় না। বরং জিহাদি কাজ করতে গেলে মসজিদ মাদ্রাসার ক্ষতি হবে এবং দ্বীনের উপর আঘাত আসবে মনে হয়। এসব বিবেচনা করে জিহাদের ব্যাপারে কোনো কথা না বলাই ভাল মনে হয়। আমাদের মতো সাধারণদের ক্ষুদ্র দৃষ্টি এর বাহিরে কিছু দেখে না। বেশি ভাবতে গেলে আরও বেশি পেরেশানি ঘিরে ধরে।
তবে যারা সুদীর্ঘ তিন চার দশক ধরে সুপার পাওয়ারদের কোমর ভেঙে দিয়ে আসছেন, তাদের দৃষ্টি আরও প্রশস্ত। এই কোণঠাসা হালতেও কিভাবে উত্তরণ সম্ভব তা তারা ভাল বুঝেন। আমরা যদি এ ধরনের বিষয়াশয়ে নিজেরা কোনো মতের উপর বসে না থেকে বিশেষজ্ঞদের অনুসরণ করি, তাহলে আমাদের জন্য সহজ হবে ইনশাআল্লাহ। সাপও মরবে, লাঠিও ভাঙবে না। পক্ষান্তরে আমাদের মতো অনভিজ্ঞরা যদি আমাদের ক্ষুদ্র দৃষ্টিভঙ্গি সবার উপর চাপিয়ে দিতে চাই, তাহলেই সমস্যা পেয়ে বসবে।
হুজুরের কাছে আমার আবেদন, বর্তমান কোণঠাসা হালতে জিহাদ ই’দাদ সম্ভব কি সম্ভব না: এ বিষয়ে হুজুর নিজের মতের উপর অটল না থেকে যেন তা অভিজ্ঞদের উপর ছেড়ে দেন। তারাই ইনশাআল্লাহ একটা সুসংবদ্ধ সুনিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থাপনা দিবেন (এবং ইতোমধ্যে দিয়েও যাচ্ছেন, যদিও আমাদের অনেকেরই তা জানা নেই বা খুঁজে পাচ্ছি না)। এভাবে মিলেমিশে চললে ইনশাআল্লাহ অমানিশার অন্ধকার কাটতে বেশি দিন লাগবে না।
বড়দের কাছে আমরা নগণ্যদের করজোর আবেদন: উম্মাহর স্বার্থে আমরা আরও একটু নত হই। যে বিষয়ে যে জ্ঞানী সে বিষয় তার থেকে নিতে অভ্যস্ত হই। এভাবে মিলেমিশে উম্মাহকে এক প্লাটফর্মে নিয়ে আসার চেষ্টা করি।
আমরা যদি সীরাত দেখি, দেখতে পাবো, যায়দ বিন হারেসা ও উসামা বিন যায়দের মতো কালো বর্ণের গোলাম ও অল্পবয়স্কদের অধীনে আবু বকর উমরের মতো জলিলকদর সাহাবিরা জিহাদ করেছেন। পক্ষান্তরে মুনাফিক শ্রেণীই কেবল সমালোচনা উঠিয়েছিল যে, এ হচ্ছে গোলাম, এ হচ্ছে অল্প বয়সের বালক, আমাদের মতো বড়রা তাদের অধীনে যাওয়া মানায় না ইত্যাদি। আল্লাহর দোহাই, আমরা যেন মুনাফিকদের নকশে কদম অনুসরণ না করি।
(হুজুর যেসব বিষয় এনেছেন, সেগুলোর দুয়েকটার ব্যাপারে কিছু কথা ইনশাআল্লাহ সামনের মজলিসে আরজ করবো।)
আয়াত
{فَإِنِ انْتَهَوْا فَلَا عُدْوَانَ إِلَّا عَلَى الظَّالِمِينَ} [البقرة: 193]
{ فَإِنِ انْتَهَوْا فَإِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ} [البقرة: 192]
{وَاقْتُلُوهُمْ حَيْثُ ثَقِفْتُمُوهُمْ} [البقرة: 191]
{فَاقْتُلُوا الْمُشْرِكِينَ حَيْثُ وَجَدْتُمُوهُمْ} [التوبة: 5]
{أَلَمْ تَرَ إِلَى الْمَلَإِ مِنْ بَنِي إِسْرَائِيلَ مِنْ بَعْدِ مُوسَى إِذْ قَالُوا لِنَبِيٍّ لَهُمُ ابْعَثْ لَنَا مَلِكًا نُقَاتِلْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ قَالَ هَلْ عَسَيْتُمْ إِنْ كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِتَالُ أَلَّا تُقَاتِلُوا قَالُوا وَمَا لَنَا أَلَّا نُقَاتِلَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَقَدْ أُخْرِجْنَا مِنْ دِيَارِنَا وَأَبْنَائِنَا فَلَمَّا كُتِبَ عَلَيْهِمُ الْقِتَالُ تَوَلَّوْا إِلَّا قَلِيلًا مِنْهُمْ وَاللَّهُ عَلِيمٌ بِالظَّالِمِينَ (246)} [البقرة: 246]
হাদিস
# ফাতহে মক্কায় কাফেরদের নিরাপত্তা প্রদান।
# বীরে মাউনায় সাহাবায়ে কেরামের শহীদ হওয়া ও রাসূল আলাইহিস সালামের কুনুতে নাযেলা পড়ার হাদিস।
# ছুলহে হুদায়বিয়া ও মক্কার মুস্তাদআফিনদের প্রসঙ্গ।
# আলজিহাদু মাদিন ইলা ইয়াউমিল কিয়ামাহ- খাবারিয়া না বিধান?
মাসআলা
# মাসআলার মধ্যে দিফায়ি জিহাদের প্রসঙ্গটা একটু দীর্ঘ টেনেছেন। দিফায়ি জিহাদের হাকিকত কি এবং দিফায়ি জিহাদে কি কোনো শর্ত নেই? একজন মুসলিম বন্দী হলে বা কোনো ভূখণ্ড দখল হলে জিহাদ ফরযে আইন। কিন্তু ফরযে আইনটা কে বাস্তবায়ন করবে, কিভাবে করা হবে, কোনো শর্ত শারায়েত ও নিয়ম নীতি আছে কি’না? ইত্যাদি প্রসঙ্গ এনেছেন।
# দারুল ইসলাম দারুল হারব প্রসঙ্গ।
# মানব রচিত কুফরি আইন দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা ]
অভিব্যক্তি
এ প্রত্যেকটা বিষয়ই দীর্ঘ আলোচনার দাবি রাখে। হয়তো প্রসঙ্গক্রমে এসেছে তাই হুজুর কিছু কথা বলেছেন। নতুবা এসব আয়াত, হাদিস ও মাসআলার ক্ষেত্রে হুজুরের মাওকিফ কি- তা হুজুর খুব একটা পরিষ্কার করেননি। হুজুর যদি পরিষ্কার করে বলেন: এ আয়াতের ব্যাপারে আমার মাওকিফ এই আর জিহাদিদের মাওকিফ এই, কিংবা এই হাদিস বা মাসআলার ক্ষেত্রে আমার মাওকিফ এই আর জিহাদিদের মাওকিফ এই- এমন পরিষ্কার ও সুস্পষ্ট অবস্থান থাকলে হয়তো আলোচনায় যাওয়া যেতো। হুজুরের মাওকিফ যেহেতু পরিষ্কার না তাই এ ব্যাপারে
আলোচনায় যেতে চাচ্ছি না। শুধু ইজমালি কয়েকটা কথা বলতে চাই।
হুজুর যেসব প্রসঙ্গ এনেছেন, মৌলিকভাবে সেগুলো দুইভাগে বিভক্ত:
ক. কিছু আছে শরয়ী মাসআলাগত বিষয়।
খ. কিছু আছে মানহাজ ও কর্মপন্থা। এগুলো অনেকটা তাজরিবা ও অভিজ্ঞতার সাথে সম্পৃক্ত। কখন, কোন পরিস্থিতিতে, কোন ধরনের কর্মপন্থা ফলপ্রসু তা সমরবিশেষজ্ঞগণ নির্ধারণ করবেন। আমরা যারা যুদ্ধবিশেষজ্ঞ নই, আমাদের উচিত বিশেষজ্ঞদের মেনে চলা।
ধরুন, বন্দী মুসলিমদের মুক্ত করা, দখলকৃত ভূখণ্ডগুলো উদ্ধার করা এবং তাগুতি শাসনের অবসান ঘটিয়ে খিলাফাহ প্রতিষ্ঠা করা ফরয। কুরআন সুন্নাহর আলোকে এটি পরিষ্কার। উলামায়ে কেরাম এ বিষয়ে ফতোয়া দিবেন। কুরআন সুন্নাহর আলোকে ফতোয়া দেয়ার কাজটা তারা করতে পারবেন।
কিন্তু এ ফরয বাস্তবায়নের ত্বরিকা কি হবে- সে এক দীর্ঘ অধ্যায়। এখানে একেক জনের একেক রায় হতে পারে। তবে এ বিষয়ে রায় দেয়ার জন্য শুধু আলেম হওয়া যথেষ্ট নয়, সমরবিশেষজ্ঞতা জরুরী। ব্যবসার শরয়ী মাসায়েল বুঝলেই ভাল ব্যবসায়ী হওয়া যায় না, কৃষির শরয়ী বিধান জানলেই ভাল কৃষক হওয়া যায় না। এগুলো অনেকটা অভিজ্ঞতার বিষয়। যে যেটা করে, সে সেটা ভাল বুঝে।
এখানে এসে অনেক জিহাদি ভাই এবং আলেম উলামাদের অনেকে বিভ্রাটে পড়ে যান। উভয়েই কিছু ইফরাত তাফরিতের শিকার হন। যেমন:
অনেক দায়ী ভাই মনে করেন, জিহাদ ফরয তাহলে আলেমরা মাদ্রাসা মসজিদে বসে আছেন কেন? কেন অস্ত্র হাতে মাঠে নামছেন না?
অপরদিকে অনেক আলেম মনে করেন, এখন তো আমাদের কিতাল করার মতো শক্তি নেই, তাহলে অনর্থক জিহাদের কথা বলে লাভ কি? এমনকি জিহাদের কথা যারা বলে, তারা তাদের বিরোধিতা করতেও অনেক ক্ষেত্রে দ্বিধা করেন না।
আসলে এ উভয় ধারণাই গলদ। জিহাদ ফরয শুনতেই অস্ত্র হাতে মাঠে নামতে হবে যেমন সঠিক নয়, শক্তি নেই বলে জিহাদের হুকুম বয়ান করে কোনো ফায়েদা নেই মনে করাও সঠিক নয়। আমরা আসলে মাসায়েলও সঠিক বুঝতে পারিনি, মানহাজও সঠিক বুঝতে পারিনি।
আসলে ই’তিদাল ছিল জিহাদের হুকুম বয়ান করা, জিহাদের তাহরিদ করা। পাশাপাশি ই’দাদ ও জিহাদের মানহাজ-কর্মপন্থা কি হবে: তা সমরবিশেষজ্ঞ উলামা ও উমারাদের হাতে ছেড়ে দেয়া। কথায় আছে, ‘লি কুল্লি ফান্নিন রিজাল’। তা না হয়ে এখন হচ্ছে কি: আলেম উলামারা জিহাদি মানসিকতার যুবকদের দোষ দিচ্ছেন যে তারা জযবাতি, আর জযবাতিরা উলামাদের নাম দিচ্ছে যে তারা জিহাদবিমুখ আরামপ্রিয় মানসাবপছন্দী। উভয় তায়েফার বিভ্রাটের সম্মিলন থেকে উৎপত্তি হচ্ছে জিদাল, নিজা, মিরা এবং নানা রকম ফিতনা।
***
হুজুর যেসব বিষয়ের কথা উঠিয়েছেন, সেগুলোর মধ্যে যেগুলো সরাসরি শরয়ী মাসআলাগত বিষয়: মৌলিকভাবে সাধারণ আলেম উলামাদের আলোচ্য বিষয় সেগুলোই। আর মানহাজগত বিষয়গুলোর মৌলিক ভার আমরা সেসব উলামা, উমারা ও দায়িত্বশীলদের উপর ছাড়তে পারি, যারা আল্লাহর রহমতে রাশিয়া-আমেরিকা উভয় সুপার পাওয়ারকে নাকানি চুবানি খাইয়েছেন। যাদের আছে এক সুবিশাল ও দীর্ঘদিনের জিহাদি অভিজ্ঞতা। শত্রুকে কোথায় কিভাবে মার দিতে হয়, সে ব্যাপারে তারাই ভাল বুঝেন।
যেমন ধরুন, কোনো কুলাঙ্গার দীর্ঘদিন ধরে সরকারের ছত্রছায়ায় রাসূলের সাথে বেয়াদবি করে আসছে। তাকে হত্যা করা যে জায়েয (বরং সামর্থ্য থাকলে জরুরী) তা ইসলামী শরীয়তে পরিষ্কার। সাধারণ আলেম উলামাদের দায়িত্ব হুকুম বয়ান করা এবং উম্মাহকে এ ধরনের কুলাঙ্গার ও তার আশ্রয়দাতাদের থেকে প্রতিশোধ নিতে উদ্বুদ্ধ করা।
কিন্তু এ প্রতিশোধ কিভাবে নেবে কিংবা এখন নেয়া হবে, না’কি তাখির করা ভাল হবে: এসব মানহাজগত বিষয় সমরবিশেষজ্ঞ উলামা উমারাদের দায়িত্বে ছেড়ে দিই।
আমি যতটুকু বুঝতে পারছি – ওয়াল্লাহু আ’লাম- শরয়ী বিষয়গুলোর পাশাপাশি মানহাজগত বিষয়েও হুজুর একটা মত পোষণ করেন। আর স্পষ্ট যে বর্তমান তাগুতি দুনিয়া যেভাবে সমগ্র বিশ্বকে কন্ট্রোল করছে, আমাদের মতো সাধারণদের দৃষ্টিতে জিহাদ ই’দাদের কোনো কাজই সম্ভব মনে হয় না। বরং জিহাদি কাজ করতে গেলে মসজিদ মাদ্রাসার ক্ষতি হবে এবং দ্বীনের উপর আঘাত আসবে মনে হয়। এসব বিবেচনা করে জিহাদের ব্যাপারে কোনো কথা না বলাই ভাল মনে হয়। আমাদের মতো সাধারণদের ক্ষুদ্র দৃষ্টি এর বাহিরে কিছু দেখে না। বেশি ভাবতে গেলে আরও বেশি পেরেশানি ঘিরে ধরে।
তবে যারা সুদীর্ঘ তিন চার দশক ধরে সুপার পাওয়ারদের কোমর ভেঙে দিয়ে আসছেন, তাদের দৃষ্টি আরও প্রশস্ত। এই কোণঠাসা হালতেও কিভাবে উত্তরণ সম্ভব তা তারা ভাল বুঝেন। আমরা যদি এ ধরনের বিষয়াশয়ে নিজেরা কোনো মতের উপর বসে না থেকে বিশেষজ্ঞদের অনুসরণ করি, তাহলে আমাদের জন্য সহজ হবে ইনশাআল্লাহ। সাপও মরবে, লাঠিও ভাঙবে না। পক্ষান্তরে আমাদের মতো অনভিজ্ঞরা যদি আমাদের ক্ষুদ্র দৃষ্টিভঙ্গি সবার উপর চাপিয়ে দিতে চাই, তাহলেই সমস্যা পেয়ে বসবে।
হুজুরের কাছে আমার আবেদন, বর্তমান কোণঠাসা হালতে জিহাদ ই’দাদ সম্ভব কি সম্ভব না: এ বিষয়ে হুজুর নিজের মতের উপর অটল না থেকে যেন তা অভিজ্ঞদের উপর ছেড়ে দেন। তারাই ইনশাআল্লাহ একটা সুসংবদ্ধ সুনিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থাপনা দিবেন (এবং ইতোমধ্যে দিয়েও যাচ্ছেন, যদিও আমাদের অনেকেরই তা জানা নেই বা খুঁজে পাচ্ছি না)। এভাবে মিলেমিশে চললে ইনশাআল্লাহ অমানিশার অন্ধকার কাটতে বেশি দিন লাগবে না।
***
শোনতে খারাপ লাগলেও এখানে একটা বাস্তব কথা বলে নিই। -আল্লাহ আমাদের মাফ করুন: বড়কে মেনে চলার আদত আমাদের খুব একটা নেই। আপনি দেখতে পাবেন, গোটা বাংলাদেশে আলেম উলামাদের কোনো ঐক্য এবং একক কোনো বোর্ড নেই। বলতে গেলে প্রত্যেকে কিংবা প্রত্যেক মাদ্রাসা ও প্রতিষ্ঠান নিজের মতো করে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বরং আল্লাহর ফজলে কেউ বড় হয়ে গেলে চতুর্মুখী সমালোচনা আর ভুলভ্রান্তি খুঁটিয়ে খুটিয়ে ধরতে ধরতে তাকে নাজেহাল করে তবে ক্ষান্ত হই। আর তাগুতরাও এই অনৈক্যের আগুনটা জ্বালিয়ে রাখতে সচেষ্ট। তারা চায় না কোনোভাবে উম্মাহ এক প্লাটফর্মে আসুক। বড়দের কাছে আমরা নগণ্যদের করজোর আবেদন: উম্মাহর স্বার্থে আমরা আরও একটু নত হই। যে বিষয়ে যে জ্ঞানী সে বিষয় তার থেকে নিতে অভ্যস্ত হই। এভাবে মিলেমিশে উম্মাহকে এক প্লাটফর্মে নিয়ে আসার চেষ্টা করি।
আমরা যদি সীরাত দেখি, দেখতে পাবো, যায়দ বিন হারেসা ও উসামা বিন যায়দের মতো কালো বর্ণের গোলাম ও অল্পবয়স্কদের অধীনে আবু বকর উমরের মতো জলিলকদর সাহাবিরা জিহাদ করেছেন। পক্ষান্তরে মুনাফিক শ্রেণীই কেবল সমালোচনা উঠিয়েছিল যে, এ হচ্ছে গোলাম, এ হচ্ছে অল্প বয়সের বালক, আমাদের মতো বড়রা তাদের অধীনে যাওয়া মানায় না ইত্যাদি। আল্লাহর দোহাই, আমরা যেন মুনাফিকদের নকশে কদম অনুসরণ না করি।
(হুজুর যেসব বিষয় এনেছেন, সেগুলোর দুয়েকটার ব্যাপারে কিছু কথা ইনশাআল্লাহ সামনের মজলিসে আরজ করবো।)
***
Comment