কাফের হত্যার সবব: কুফর না মুহারাবা?
বক্তব্য ১১: [একবার আলকাউসারে লেখা হয়েছিল, ‘শুধু কাফের হওয়ার কারণে কাউকে হত্যা করা যায় না।’ এটার উপর নারাজ হয়ে গেছে অনেকে। শুধু কাফের, এজন্য কতল করে দিবা যেখানেই পাও? তাদের নিকট শুধু কুফরটাই মুজিবে কতল। শুধু কুফরটাই মুজিবে কতল হলে জাযিরাতুল আরবের কাফেরদের জালাওয়াতন করা হল কেন? শুধু কুফর কতলের ইল্লত হলে রিজাল নিসার ফরক কেন? এরা ধরেছে যে, শুধু কুফরটাই হচ্ছে মুজিবে কতল। তাহলে মুতালাআ কি পরিমাণ তাদের!] (বাদ মাগরিব বয়ান, ১৩-১৪ মিনিট)
অভিব্যক্তি
মুজাহিদিনে কেরাম কখনও বলেন না যে, রিজাল নিসায় ফরক নেই, জালাওয়াতনের সুযোগ নেই। নারী-পুরুষ, মুকাতিল-ফানি সব কাফেরকে মেরে দুনিয়া কাফেরমুক্ত করে ফেলতে হবে এমন কথা মুজাহিদিনে কেরাম বলেন না। শুধু আলকাউসারের লেখার উপর একজন আপত্তি করেছেন সে ভিত্তিতে মুজাহিদিনে কেরামের ব্যাপারে এমন কথা বলাটা কি শোভা পায়? হুজুরের কাছে আবেদন থাকলো: যেন দু’চারজন গ্রহণযোগ্য মুজাহিদ শায়খের বক্তব্য বা লেখা দেখান যারা বলেছেন, সব কাফেরকে হত্যা করে ফেলতে হবে; নারী পুরুষেও ফরক নাই, জালাওয়াতন বা জিযিয়ারও সুযোগ নাই।
হুজুর আলকাউসারের যে লেখাটার কথা বলেছেন, সেটা গুলশান হামলার পর ছেপেছিল। শিরোনাম ছিল:- (প্রসঙ্গ : গুলশান-হত্যাকাণ্ড : “সর্বস্তরে দ্বীনীতালীমের বিস্তার ঘটানো সময়ের দাবি” : “কোনো অমুসলিমকে শুধু অমুসলিমহওয়ার কারণে হত্যা করা বৈধ নয়” : “জিহাদের সঠিক ব্যাখ্যা মুসলমানদেরজানানো উচিত। এটি নিষিদ্ধ করলে সমস্যার সমাধান হবে না।”
মুফতি আবুল হাসান মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ, মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক)
প্রথমত: গুলশান হামলা আমরা সমর্থন করি না। আলকায়েদার মুজাহিদিনে কেরাম এ হামলার ব্যাপারে দীর্ঘ খণ্ডন লিখেছেন। ধরে ধরে দেখিয়েছেন যে, এ হামলা কৌশলগত দিক থেকে ভুল ছিল।
এ হামলায় কয়েকজন বিদেশি কাফেরকে হত্যা করা হয়েছিল। নিহতদের মাঝে দুয়েকজন মহিলাও সম্ভবত ছিল। আলকাউসারে এ হামলার নিন্দা জানানো হয়েছে। তবে নিন্দা যে দৃষ্টিকোণ থেকে এবং যে শিরোনামে জানানো হয়েছে, তাতে আপত্তির সুযোগ আছে। এ হিসেবেই হয়তো কেউ আপত্তি করেছিল। আর সে আপত্তির জের ধরেই হুজুর এ অভিযোগ উঠাচ্ছেন যে, জিহাদিরা মনে করে সব কাফেরকে হত্যা করে ফেলতে হবে বা হত্যা করা জায়েয; মহিলা পুরুষেও কোনো ব্যবধান নেই।
আলকাউসারের একটি ভাষ্য ছিল এমন: “হাদীস শরীফের পরিষ্কার ঘোষণা-
مَنْ قَتَلَ مُعَاهَدًا فِي غَيْرِ كُنْهِه حَرَّمَ الله عَلَيْهِ الْجَنَّةَ.
অর্থাৎ যে কোনো মুআহাদকে অন্যায়ভাবে হত্যা করবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিবেন। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২০৩৭৭; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৭৬০; সুনানে নাসায়ী ৮/২৪-২৫
অন্য হাদীসে ইরশাদ হয়েছে-
مَنْ قَتَلَ نَفْسًا مُعَاهَدًا لَمْ يَرِحْ رَائِحَةَ الجَنَّةِ، وَإِنَّ رِيحَهَا لَيُوجَدُ مِنْ مَسِيرَةِ أَرْبَعِينَ عَامًا.
অর্থাৎ যে কেউ কোনো মুআহাদকে হত্যা করল সে জান্নাতের খুশবুও পাবেনা। অথচ জান্নাতের খুশবু চল্লিশ বছর দূরের রাস্তা থেকেও পাওয়া যাবে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৯১৪ কিতাবুদ দিয়াত, অধ্যায় ৩০
মুআহাদ বলতে যে বা যাদের সাথে আহ্দ বা চুক্তি হয়েছে তাদেরকে বুঝায়। ফিকহী ভাষায় সে যিম্মি হোক বা সুলাহকারী মুআহাদ বা মুসতা’মান (আশ্রয় গ্রহণকারী)।যারা মুসলিম দেশে ভিসা নিয়ে অন্য ভাষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদননিয়ে থাকছে তারা যে মুআহাদের অন্তর্ভুক্ত এতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।”
বুঝা যাচ্ছে, মারকাজের মূল আপত্তিটা ছিল, ভিসা নিয়ে আসা কাফেরদের হত্যা করা জায়েয হয়নি।
কিন্তু এখান থেকে এ নতিজা বের করা যায় না যে, জিহাদিরা কাফের মাত্রই হত্যা করে ফেলা জায়েয মনে করে: চাই সে মহিলা হোক বা শায়খে ফানি বা চুক্তিবদ্ধ কাফের।
বিষয়টি একটু গোঁড়া থেকে বুঝানোর চেষ্টা করছি ইনশাআল্লাহ।
কাফেরকে হত্যা করা কেন জায়েয এবং এর কি সবব- এ ব্যাপারে মুজতাহিদিনে কেরামের মাঝে মতভেদ আছে। মৌলিকভাবে এখানে দুই কওল:
ক. কারও কারও মতে কুফরটাই সবব (যতটুকু জানি, ইমাম শাফিয়ি রহ. এর মত এটি)। অতএব, প্রতিটি কাফেরের মাঝেই হত্যার সবব বিদ্যমান। এর অর্থ হচ্ছে: হত্যার শর্ত পাওয়া গেলে এবং ভিন্ন কোনো দলীল না পাওয়া গেলে প্রত্যেক কাফেরকেই হত্যা করা যাবে। এ হিসেবে শায়খে ফানি, অন্ধ, পঙ্গু, বিকলাঙ্গ কাফেরদেরকেও তারা হত্যা করা জায়েয বলেন।
তবে তারাও মহিলাদের হত্যা করা জায়েয বলেন না, যদি মহিলারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনোভাবে কিতালে অংশ না নেয়। কারণ, মহিলাদের হত্যা করতে পরিষ্কার হাদিসে নিষেধ এসেছে।
এমনিভাবে নাবালেগ শিশুদের হত্যা করাও জায়েয বলেন না। কারণ, হত্যা জায়েয হওয়ার একটি শর্ত হলো, বালেগ হওয়া। শুধু সবব পাওয়া গেলেই হত্যা করা যায় না, যদি শর্তগুলো ঠিকমতো পাওয়া না যায়। যেমন যাকাত ফরয হওয়ার সবব হচ্ছে সম্পদ। কিন্তু সম্পদ থাকলেই যাকাত দিতে হয় না। শর্ত হলো, এ বিশেষ সম্পদের উপর এক বছর অতিবাহিত হতে হবে।
খ. জুমহুরের মতে কাফেরকে হত্যা করা জায়েয হওয়ার সবব হচ্ছে মুহারাবা। তবে মুহারাবা বিল ফে’ল না, মুহারাবা বিল কুওয়াহ। অর্থাৎ যেসব কাফের মুহারাবা তথা যুদ্ধে অংশ নেয়ার মতো সামর্থ্য রাখে তাদেরকে হত্যা করা জায়েয, যদিও তারা যুদ্ধে না আসে।
ইমাম মারগিনানি রহ. (৫৯৩ হি.) বলেন,
المبيح للقتل عندنا هو الحراب. –الهداية في شرح بداية المبتدي (2/ 380)
“আমাদের (হানাফি মাযহাব) মতে কতলের বৈধতাদানকারী হচ্ছে মুহারাবা।” –হিদায়া: ২/৩৮০
ইবনুল হুমাম রহ. (৮৬১ হি.) বলেন,
فلزم قتل ما كان مظنة له، بخلاف ما ليس إياه. –فتح القدير للكمال ابن الهمام (5/ 453)
“অতএব, মুহারাবার সম্ভাব্য শক্তি যার মধ্যে আছে, আবশ্যিকভাবেই তাকে কতল করা জায়েয সাব্যস্ত হয়।” –ফাতহুল কাদির: ৫/৪৫৩
কাসানী রহ. (৫৮৭ হি.) বলেন,
والأصل فيه أن كل من كان من أهل القتال يحل قتله، سواء قاتل أو لم يقاتل، وكل من لم يكن من أهل القتال لا يحل قتله إلا إذا قاتل حقيقة أو معنى بالرأي والطاعة والتحريض، وأشباه ذلك على ما ذكرنا. بدائع الصنائع في ترتيب الشرائع (7/ 101)
“এক্ষেত্রে মূলনীতি হলো, যে কিতালের উপযোগী তাকে কতল করা হালাল; সে কিতালে আসুক না আসুক। আর যে কিতালের উপযোগী নয় তাকে হত্যা করা হালাল নয়। তবে যদি সে সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে কিংবা মতামত, নেতৃত্বদান, উদ্বুদ্ধকরণ বা এ জাতীয় অন্য কোন মাধ্যমে -যা আমরা উল্লেখ করেছি- পরোক্ষভাবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে তাহলে তাকেও হত্যা করা হালাল হয়ে যাবে।” -বাদায়িউস সানায়ে ৭/১০১
সারাখসী রহ. (৪৯০ হি.) বলেন,
المقاتلة من له بنية صالحة للقتال إذا أراد القتال؛ وليس للنساء والصغار بنية صالحة للقتال، فلا يكونون من المقاتلة وإن باشروا قتالا بخلاف العادة. ألا ترى أن من لا يقاتل من الرجال البالغين فهو من جملة المقاتلة باعتبار أن له بنية صالحة للقتال وإن كان لا يباشر القتال لمعنى. . شرح السير الكبير (ص: 1808، 1809)
“মুকাতিল হচ্ছে যার শারীরিক গঠন এমন উপযোগী যে, কিতাল করতে চাইলে করতে পারবে। মহিলা ও শিশুদের শারীরিক গঠন কিতালের উপযোগী নয়। কাজেই ... তারা মুকাতিল শ্রেণীভুক্ত হবে না। ... বালেগ পুরুষরা কিতাল না করলেও মুকাতিল শ্রেণীভুক্ত। কারণ, কোনো কারণে কিতালে না আসলেও কিতাল করার মতো শারীরিক যোগ্যতা তার আছে।” –শারহুস সিয়ারিল কাবির, পৃষ্ঠা ১৮০৮, ১৮০৯
তবে হানাফি মাযহাবের নীতি হলো, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনোভাবেই যেসব কাফের কিতালে অংশ নেয় না এবং কিতালের ব্যাপারে তাদের কোনো ফিকিরও নেই, এমন কাফেরকে হত্যা না করাই ভাল। তবে হত্যা করলে নাজায়েয হবে না।
***
যেহেতু স্বাভাবিক দুনিয়ার নিয়মানুয়ী মহিলা ও শিশুরা যুদ্ধের উপযোগী নয় তাই যুদ্ধে অংশ না নিলে তাদের হত্যা করা জায়েয নেই। এমনিভাবে এ মতানুযায়ী বিকলাঙ্গ, অন্ধ, পঙ্গু ও শায়খে ফানিকে হত্যা করাও নাজায়েয। কারণ, তারা যুদ্ধে শরীক হওয়ার মতো সামর্থ্য রাখে না।
তবে স্বাভাবিক নিয়ম ভঙ্গ করে কোনো নারী বা শিশু বা অক্ষম কাফের যদি যুদ্ধে অংশ নিয়ে বসে, তাহলে তাকে হত্যা করা জায়েয। বিস্তারিত ফিকহের কিতাবে দ্রষ্টব্য।
উপরোক্ত দুই মত অনুযায়ী নতিজা দাঁড়াচ্ছে:
ক. স্বাভাবিক অবস্থায় নারী ও শিশুদের হত্যা করা উভয় মতানুযায়ীই নাজায়েয। তবে যদি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুদ্ধে অংশ নেয় বা সহযোগিতা করে তাহলে হত্যা জায়েয।
খ. সুস্থ বালেগ কাফের পুরুষদের হত্যা করা উভয় মতানুযায়ী জায়েয, যদিও তারা যুদ্ধে না আসে।
গ. পঙ্গু, বিকলাঙ্গ, শায়খে ফানি, অন্ধ: এসব কাফেরকে, যারা বলেন, হত্যার সবব হচ্ছে কুফর তাদের মতে হত্যা করা জায়েয। আর জুমহুরের মতে স্বাভাবিক অবস্থায় তাদের হত্যা করা নাজায়েয, যেমন নারী শিশুদের নাজায়েয। তবে যদি তারা তাদের অক্ষমতা সত্ত্বেও যুদ্ধে অংশ নিয়ে বসে তাহলে তাদের হত্যা করা জায়েয, যেমনটা নারী শিশুদের বেলায় জায়েয।
তাহলে দুই মাযহাবের ব্যবধানটা দাঁড়াচ্ছে শুধু অক্ষম কাফেরদের বেলায়। অন্যথায় যুদ্ধোপোযোগী বালেগ কাফেরদের হত্যা করা সবার মতেই বৈধ- যদিও তারা যুদ্ধে না আসে। এ ব্যাপারে আরও কিছু তাফসিল আছে, আমরা আপাতত সে আলোচনায় যাচ্ছি না।
***
এবার গুলশান হামলায় আমরা দেখছি কয়েকটা কাফের পুরুষ আর মহিলাকে হত্যা করা হয়েছে।
পুরুষগুলোকে হত্যা করা বৈধ, তা তো বলাই বাহুল্য।
আর মহিলাগুলোর ক্ষেত্রেও নাজায়েয বলা মুশকিল। কারণ, কুফরি বিশ্ব থেকে আগত এসব মহিলা মূলত মুসলিমদের বিরুদ্ধে কোনো এজেন্ডার অংশ হিসেবে আসে। নতুবা এতো স্বাদের দুনিয়া ছেড়ে তারা আমাদের বাংলাদেশের মতো অপরিচ্ছন্ন গরীব রাষ্ট্রে এসে পড়ে থাকতো না। এসব মহিলা মূলত কাফেরদের হাতিয়ার। এ হিসেবে এগুলোও মুবাহুদদম।
তাছাড়া তাদেরকে টার্গেট করে হত্যা করা হয়েছে, না’কি বিশেষ পরিস্থিতিতে হত্যা করতে হয়েছে, না’কি ঘটনাক্রমে মারা গেছে: অনেক রকমের সম্ভাবনা আছে। অতএব, নাজায়েয হয়েছে পরিষ্কার বলা যায় না।
***
রইল ভিসা। যেহেতু তাগুত শাসকরা মুরতাদ বলে অসংখ্য গ্রহণযোগ্য উলামার ফতোয়া আছে, আর যারা হত্যা করেছে তারা এসব তাগুতকে মুরতাদ মনেও করে: এ হিসেবে তাগুতদের ভিসার কোনো মূল্য হত্যাকারীদের কাছে নেই। এক কাফের আমান দিয়ে অন্য কাফেরকে এনেছে, এতে হত্যাকারীদের কিছু যায় আসে না। ভিসা প্রদানকারীরা হত্যাকারীদের আমীরুল মুমিনিন বা সুলতান নয় যে তারা ভিসা দিলে তা হত্যাকারীদের উপর বর্তাবে। এ হিসেবে ধরা হবে, এসব মুহারিব কাফের কোনো আমান ছাড়াই হত্যাকারীদের সামনে ছিল। তাদের হত্যা করা শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে নাজায়েয ছিল না।
তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি: গুলশান হামলা কৌশলগত দিক থেকে সমালোচনার যোগ্য হলেও আলকাউসারে যেভাবে সমালোচনা করা হয়েছে সেভাবে সমালোচনাযোগ্য ছিল না।
অধিকন্তু হারবি দেশের কয়েকটা কাফের হত্যায় মারকাজ এত কড়া সমালোচনা করতে পারলো, হাজার হাজার মুসলিমকে যে এরাই নৃশংসভাবে প্রতিনিয়ত হত্যা করে চলছিল তখন কেন এমন দু’চারটা সমালোচনা মারকাজ থেকে আসলো না? কাফেরদের তুলনায় মুসলিমদের রক্তের কি তেমন কোনো মূল্য নেই? এখনও তো প্রতিবেশি ভারতে মুসিলমদের উপর দিয়ে কত কি বয়ে যাচ্ছে। কই, মারকাজকে তো এসব নিয়ে সরগরম দেখা যায় না, যতটা জিহাদিদের বিরুদ্ধে দেখা যায়।
এখানে একটা কথা মনে পড়লো। আমি নিজে দেখিনি, শুনেছি: একটা ইসলামী দলের কনসার্টে একবার মিশা সওদাগরকে দাওয়াত করে আনা হয়েছিল। প্রসঙ্গক্রমে বক্তারা না’কি বলেছিলেন, দাড়ি না রাখলেই কি মানুষ খারাপ হয়ে যায়?
আল্লাহ মাফ করুন, আলকাউসারের শিরোনামটা “কোনো অমুসলিমকে শুধু অমুসলিম হওয়ার কারণে হত্যা করা বৈধ নয়”- অনেকটা যেন এমনই।
***
আমরা দেখতে পাচ্ছি: গুলশান হামলা কৌশলগতভাবে যাই হোক, মৌলিকভাবে শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে তাকে জায়েয বলার দালিলিক ভিত্তি আছে। কিংবা বলা যায় অন্তত তাবিল করলে একে জায়েয বলা যায়। যেসব যুবক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হামলাটি করেছে, আর যাই হোক, যেহেতু তাবিল করার সুযোগ আছে, বিষয়টাকে একেবারে এভাবে সমালোচনার মুখে না দাঁড় করানো কি ভাল ছিল না? বিশেষত যখন মুসলিম উম্মাহর দরদই তাদেরকে জীবন দিতে উদ্বুদ্ধ করেছে। আমাদের কি উচিত না মুমিনদের প্রতি সুধারণা রাখা? তাবিল করে হলেও তো মুমিনের কাজ সহীহ করার চেষ্টা করা চাই।
***
দেখতে পাচ্ছি: কাফের হলেই হত্যা করা জায়েয- এমন ধারণা গুলশানে পাওয়া যায়নি। বরং তাবিল করে হলেও হত্যার একটা দালিলিক ভিত্তি আছে। শুধু কাফের হলেই হত্যা করে ফেলা জায়েয- এমন দৃষ্টিকোণে থেকে হত্যা করেছে বলা যায় না।
আর আলকাউসারের লেখার উপর যিনি আপত্তি করেছেন, তিনি কি শব্দে কেমন আপত্তি করেছেন, তা না দেখে মন্তব্য করা যায় না। যদি ধরে নিই তিনি এমনটাই বলেছেন যে, কাফের হলেই হত্যা করা যায়: তাহলে এর দায়ভার আমভাবে মুজাহিদিনে কেরামের উপর কেন চাপানো হচ্ছে? মারকাজের ধারণামতে যেসব শাগরেদ বিচ্যুতির শিকার তাদের দায়ভার তো মারকাজ নেয় না, তাহলে দুয়েক জনের বিচ্যুতি (যদি বাস্তবে বিচ্যুতি হয়ে থাকে) কেন গোটা জামাতের উপর চাপানো হবে?
হুজুরের প্রতি আবারও আবেদন: গ্রহণযোগ্য দু’চারজন মুজাহিদ শায়খের উদ্ধৃতি যেন হুজুর দেন, যারা বলেছেন, কাফের হলেই হত্যা করা জায়েয, পুরুষ নারীর ব্যবধান নেই, সক্ষম অক্ষমের ব্যবধান নেই, কিংবা আমানের কোনো ই’তিবার নেই।
আলকায়েদা তালেবান আলহামদুলিল্লাহ চল্লিশ বছর ধরে গোটা দুনিয়াব্যাপী জিহাদ করে আসছে। তাদের সীরাত কি বলে? তাদের মাশায়েখদের শত শত কিতাব, বয়ান, রিসালা বিদ্যমান। হুজুর যেন মেহেরবানি করে নিজের দাবির স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ হাজির করেন, না হয় যেন হুজুর পরিষ্কার করেন যে, এটা দুচারজনের বিচ্যুতি, আমভাবে মুজাহিদদের অভিমত না। না হয় হুজুরের বক্তব্য থেকে অনেকে ভুল বুঝবে। আর এর দায়ভার তখন দুনিয়া আখেরাতে হুজুরের কাঁধেই বর্তাবে।
***
Comment