Announcement

Collapse
No announcement yet.

জিহাদ প্রসঙ্গে মাওলানা আব্দুল মালেক হাফিজাহুল্লাহর বয়ান এবং কিছু অভিব্যক্তি (শেষ পর্ব)

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • জিহাদ প্রসঙ্গে মাওলানা আব্দুল মালেক হাফিজাহুল্লাহর বয়ান এবং কিছু অভিব্যক্তি (শেষ পর্ব)

    বক্তব্য ১৩ (দুয়েক কালিমা বাদে হুবহু নস): [শরীয়তের জিহাদ রহমত শরীয়তের জিহাদ, কুরআন সুন্নাহ এবং সালাফে সালিহিনের মাঝে যে তাসাব্বুর ছিল জিহাদের, ঐভাবে জিহাদকে পেশ করতে হবে জিহাদের যে সমস্ত নতুন নতুন মাসআলা আবিষ্কার করেছে গাইরে আলেম মুজাহিদরা; জিহাদ করেছেন উনি, কিন্তু গাইরে আলেম; গাইরে আলেম মুজাহিদরা যেসমস্ত নতুন মাসআলা আবিষ্কার করেছে, বা মু’তাদিল নয় এমন শুধু রেওয়ায়েতি আলেম, নকল আর রেওয়াতে বড় আলেম, তাদের আবিষ্কৃত মাসআলা: এগুলো দ্বারা জিহাদের শরাহ করা, জিহাদকে চিনানো, জিহাদের তাআরুফ করানো অন্যায় সে জন্য আমাদের জামে মানে মুতালাআ থাকা জরুরী আল্লাহ তাআলা ঐ রকম মুতালাআ আমাদেরকে দান করেন] (মাগরিব বাদ বয়ান, ২৮-৩০ মিনিট)

    অভিব্যক্তি
    হুজুরের বক্তব্য থেকে যে কেউ বুঝবে, বর্তমান জিহাদিরা জিহাদের যে ব্যাখ্যা করে, জিহাদের যে তাসাব্বুর তারা পেশ করে, জিহাদ বলতে তারা যে জিনিস বুঝাতে চায়, তা কুরআন সুন্নাহ এবং সালাফে সালিহিনের বুঝের পরিপন্থী শরীয়তের জিহাদের সাথে তাদের এ বুঝের কোনো মিল নেই

    পাশাপাশি এও বুঝবে যে, জিহাদিদের কোনো আলেম নেই কয়েকটা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার আর ব্যবসায়ী জমা হয়ে জিহাদ শুরু করে দিয়েছে (হুজুরের সামনের বক্তব্যে এমন কথা আসছে) আর এসব অজ্ঞ লোক নিজেরা জিহাদের বিকৃত একটা রূপ উম্মতের সামনে পেশ করছে

    কিংবা কয়েকটা রেওয়ায়েতি ও গতানুগতিক আলেম তাদের সাথে আছে শরীয়তের সহীহ সঠিক রূপ অনুধাবন করতে অক্ষম এসব অপরিপক্ক আলেম না জেনে না বুঝে জিহাদকে বিকৃত করেছে আর সে বিকৃত জিহাদ উম্মতের সামনে পেশ করছে

    হুজুর এর আগে দুঃখ করে এসেছেন যে, এসব বিকৃত ধ্যান ধারণা এখন কওমি মাদ্রাসায় প্রচার হচ্ছে এবং তালিবুল ইলমরা এগুলো গিলেও নিচ্ছে, ফিরানো যাচ্ছে না

    সত্য কথা বলতে গেলে, জিহাদি বলতে হুজুর কাদের বুঝাতে চাচ্ছেন সেটাই ‍বুঝা যাচ্ছে না নয়তো প্রকৃত জিহাদিদের খোঁজ-খবর যদি হুজুরের থাকতো, আশাকরি হুজুর এমন মন্তব্য করতে পারতেন না

    আরেকটা কথা হলো, বর্তমান প্রজন্মের যেসব উলামা তুলাবা জিহাদে জড়াচ্ছে, তারা কিন্তু একেবারে গতানুগতিক না বরং ইলমি দিক দিয়ে তারা আর দশজন উলামা তুলাবা থেকে কোনো অংশে কম না, দুনিয়ার হালচাল জানাশুনার দিক থেকেও কম না, বরং অনেক ক্ষেত্রে তারা দুনিয়ার হালচালের খবরাখবর একটু বেশি জানে যদি চলমান জিহাদের তাসাব্বুরটা একেবারেই শরীয়ত পরিপন্থী হতো, জাহেল মূর্খদের আবিষ্কৃত নতুন বিদআত হতো, তাহলে ব্যাপকভাবে যি-ইস্তি’দাদ এবং দ্বীনের গাইরতওয়ালা উলামা তুলাবারা তা কবুল করতো না

    সবচে’ ভাল হতো হুজুর যদি দেখাতেন যে, জিহাদিরা জিহাদের এই তাসাব্বুর পেশ করছে, আর শরীয়তের সহীহ জিহাদের তাসাব্বুর হচ্ছে এই সহীহ রূপটা তুলে না ধরে প্রচলিতটাকে শুধু ভুল বলে গেলে তো আর উম্মত সহীহটা পাবে না

    যেমন ধরুন একজন লোক ভুলভাবে নামায পড়ছে একজন আলেম যদি বারবার শুধু বলেন, তোমার নামায হচ্ছে না, কিন্তু সহীহ নামাযটা তাকে শিক্ষা না দেন, তাহলে ঐ লোক হয় নামায ছেড়ে দেবে, না হয় ভুল তরিকায়ই নামায পড়তে থাকবে যেটাই করুক, এর দায়ভারের একাংশ ঐ আলেমকেও নিতে হবে

    জিহাদের বেলায়ও যদি উলামায়ে কেরাম, যারা জিহাদের সহীহ রূপ জানেন, তারা যদি সে সহীহটা উম্মতের সামনে পেশ না করেন, তাহলে উম্মত হয় জিহাদ ছেড়ে গুনাহগার হবে, না হয় এ ভুল তরিকায়ই জিহাদ করতে থাকবে তখন এর দায়ভার সেসকল জাননে ওয়ালা উলামাদেরও গ্রহণ করতে হবে
    ***
    বক্তব্য ১৪ (দুয়েক কালিমা বাদে হুবহু নস): [আরেকটা কথা বলে আমি শেষ করছি, সেটা হলো: মুজতাহাদ ফিহ মাসআলা আর মানুসুস আলাইহ মাসআলা দুইটায় ফরক আছে কি’না? মানসুস আলাইহ আর মুজতাহাদ ফিহ, মুজমা আলাইহ আর মুখতালাফ ফিহ একই স্তরের সব? যেই মাসআলাটা মুজতাহাদ ফিহ আবার মুখতালাফ ফিহ, সেই মাসআলার মধ্যে আমি একটা রায়ের উপর এসরার করতে পারি?

    আমি ঐ ভাইদের মধ্যে একজনকে জিজ্ঞেস করেছি যে, বিলাদু ইসলামিয়ার মধ্যে যে হুককাম, শাসকগোষ্ঠী, বিচার বিভাগের হুককাম আর প্রশাসনের হুককাম, এই যে হুককামকে পাইকারীভাবে –যেহেতু দেশের মধ্যে কানুনে ওয়াজয়ি আছে-; কানুনে ওয়াজয়ি ওয়ালা দেশ, গণতান্ত্রিক দেশে ঐটার হুককাম সব মুরতাদ মুরতাদ্দুন একটা মত আছে কি’না? এই মত প্রচার করা হচ্ছে কি’না এখন কওমি মাদ্রাসার ভিতরে? হচ্ছে

    তো আমি বললাম, এই মাসআলাটা কি মুজতাহাদ ফিহ? না মানসুস আলাইহি? ওয়ামান লাম ইয়াহকুম বিমা আনযাল্লাহ ফাউলাইকা হুমুল কাফিরুন- এইটা তো নস কিন্তু এই নসের মধ্যে কি কুফরে আমলি না কুফরে মুখরিজ মিনাল মিল্লাহ, লাম ইয়াহকুমের কোন সূরতের জন্য মুখরিজ মিনাল মিল্লাহ আর কোন সূরতের জন্য কুফরে আমলি কুফরুন দুওনা কুফরিন: এইখানে দুই তাফসির আছে তো? তাহলে এইখানে তো দালালতের দিক থেকে নসসে কতয়ি হইল না ঠিক না? দালালতের দিক থেকে নসসে কতয়ি হয়েছে? না তাহলে একবারে আম ভাষায়, পাইকারি হারে মুরতাদ্দুন, হুককামুল বিলাদিল ইসলামিয়া আললাতি ইয়াসুদু ফিহাল কানুনুল ওয়াদয়ি মুরতাদদুন বলা হচ্ছে কি’না? এই যে পাইকারীভাবে মুরতাদ্দুন বলা হচ্ছে, এই কওলটা গলদ কিন্তু আমি তাকে হালকা করে বললাম, গলদ এ কথা বলি নাই

    আমি বলছি, তোমাদের এই আয়াতটা কি মুজতাহাদ ফিহ না মানসুস আলাইহ? বলে মুজতাহাদ ফিহ আরে! আচ্ছা, কিচ্ছা সব কথা শেষ! যদি মুজতাহাদ ফিহ হয় তাহলে তুমি কে একবারে এই মুজতাহাদ ফি মাসআলার মধ্যে তুমি যে ইজতিহাদ গ্রহণ করলা সে ইজতিহাদ সব ছাত্রকে গিলিয়ে দিতে হবে, খাইয়ে দিতে হবে, মাদ্রাসার ইনতেজামিয়ার বিরুদ্ধে, উস্তাদদের বিরুদ্ধে? উস্তাদদের ভিন্ন ইজতিহাদ তোমার ভিন্ন ইজতিহাদ তোমার ইজতিহাদ সব কওমি মাদ্রাসার হার ফরদকে গিলায়া দিতে হবে, এইটা কে বললো? কে ফরয করেছে এটা? মুজতাহাদ ফিহ মাসআলার মধ্যে এটার অবকাশ আছে একজন তালিবুল ইলম একজন মাওলানা সাহেব, উলুমুল হাদিস পড়ছে ইফতা পড়ছে, ধরেন ভাল যি-ইস্তি’দাদ, দ্বীনি গাইরত আছে, খুব ভাল কিন্তু উনি উনার যে ইজতিহাদ বা রায়কে তারজিহ দিবেন সেইটা সবার উপর মুসাল্লাত করে দেয়ার কি অধিকার রাখেন?


    … আজকাল কোনো ইঞ্জিনিয়ার, কোনো ডাক্তার, কোনো ব্যবসায়ী, তাদের থেকে মাসআলা নিয়ে, নয় সাহাবা বিদ্বেষীদের থেকে মাসআলা নিয়ে, সেই মাসআলা সবাইকে খুব গিলাইতে চাচ্ছ, খাওয়াইতে চাচ্ছ, আর তুমি নিজেই বল সেই মাসআলা মুজতাহাদ ফিহ এইটার অবকাশ আছে? সবার উপরে মুসাল্লাত করা? তোমার রায় নিয়ে তুমি থাকো শেষ ছাত্রদেরকে তার উস্তাদদের সাথে ছেড়ে দাও ছাত্র তোমার মতো আল্লামা হলে ঠিক আছে তোমার রায় গ্রহণ করুক ছাত্রকে কেন পেরেশান কর? মা’কুল কি মা’কুল না কথাটা? তো তালিবুল ইলমদের এইটা বুঝার সালাহিয়াত হয় না কেন? এতটুকু জ্ঞান নেই কেন যে এইটা যদি আয়াতের বদিহি মাসআলা হতো, তো আমাদের হুজুররা সবাই বেখবর থাকতো এটা কেমন কথা? … কি এ সমস্ত জাহালত শুরু হয়েছে!! কিছু আকল আর বসিরত পয়দা কর] (মাগরিব বাদ বয়ান, ৩২-৩৮ মিনিট)

    অভিব্যক্তি
    ## হুজুর অন্য এক মুহাজারায় পরিষ্কার করেছেন, সাহাবি বিদ্বেষী দ্বারা উস্তাদ সায়্যিদ কুতুব রহ. উদ্দেশ্য

    ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যবসায়ী দ্বারা কারা উদ্দেশ্য বুঝতে পারলাম না

    সম্ভবত ডাক্তার দ্বারা আলকায়েদার বর্তমান আমীর শায়খ আইমান আলজাওয়াহিরি (হাফিজাহুল্লাহ) আর ইঞ্জিনিয়ার দ্বারা আলকায়েদার সাবেক আমীর শায়খ উসামা বিন লাদেন (রাহিমাহুল্লাহ) উদ্দেশ্য নিশ্চিত করে বলি না হতেও পারে, নাও হতে পারে

    তবে গাইরে আলেম হলেও উম্মতের দরদে, উম্মতের জন্য যারা নিজেদের জান জীবন ধন সম্পদ সুখ শান্তি সব কুরবানি দিয়ে দিলেন, তাদের ব্যাপারে আরেকটু নরম ভাষা ব্যবহার করলে তো হুজুর পারতেন



    আর উস্তাদ সায়্যিদ কুতুবকে হুজুর বেশ জোরেসোরে সাহাবি বিদ্বেষী বলেন উসমান রাদি.র না’কি তিনি সমালোচনা করেছেন

    এ বিষয়টা একটু ভাবা দরকার ভুলের সমালোচনা করলে কি ব্যক্তির সমালোচনা হয়? সাহাবায়ে কেরাম ভুলের উর্ধ্বে নন তাদের থেকে কিছু বিষয়ে ভুল হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক সে ভুল উম্মতের আদর্শ নয় উম্মতকে আদবের সাথে তা বুঝিয়ে বলতে হবে কেউ যদি সে ভুলের সমালোচনা করে কিন্তু করতে গিয়ে যতটুকু আদব ইহতিরাম বজায় রাখার দরকার ছিল তা রাখতে না পারে: তাহলে কি আমরা তাকে সাহাবি বিদ্বেষী বলতে পারি?


    এমনিভাবে সাহাবায়ে কেরামের কোনো মাওকিফকে যদি কেউ ভুল মনে করে অথচ বাস্তবে তা ভুল ছিল না, তাহলেও কি এ কারণে আমরা তাকে সাহাবি বিদ্বেষী বলতে পারি?

    ইমাম জাসসাস রহ. মুআবিয়া রাদি.র ব্যাপারে শক্ত কথা বলেছেন এ কারণে কি আমরা তাকে সাহাবি বিদ্বেষী বলে দিয়েছি? হুজুর তো প্রায়ই জাসসাসের হাওয়ালা দিয়ে থাকেন

    এমনিভাবে ইমাম তাবারি, নাসায়ি, হাকেম আবু আব্দুল্লাহ নিশাপুরিসহ অসংখ্য ইমামের মাঝে টুকটাক শি-ইয়্যাত ও ই’তিযাল বিদ্যমান মুআবিয়া রাদি. ও আমর বিন আস রাদি.র মতো কয়েকজন সাহাবির ব্যাপারে তাদের কেমন অবস্থান তা সকলের জানা কই, আমরা তো তাদেরকে সাহাবি বিদ্বেষী বলি না কেন বলি না?

    আসলে তারা সাহাবিদের সমালোচনা করেন না, সাহাবিদের থেকে হয়ে যাওয়া ভুলের সমালোচনা করেন এবং এমনভাবে করেন যা না করা উচিত ছিল
    উস্তাদ সায়্যিদ ‍কুতুবের বিষয়টাও আমি যতটুকু বুঝি এমনই সায়্যিদ কুতুব রহ.র কিতাবাদি তো প্রকাশ্যেই আছে দেখলেই তো বিচার করা যাবে


    আসলে সাহাবি বিদ্বেষী হচ্ছে ঢালাওভাবে শিয়া রাফিজিরা আর ছিল তখনকার খাওয়ারেজরা, যারা আলী রাদি. ও মুআবিয়া রাদি.সহ উভয় গ্রুপের সাহাবিদের কাফের মনে করতো এছাড়া আহলে সুন্নাহর কেউ সাহাবি বিদ্বেষী না ভুলের সমালোচনা আর ব্যক্তির সমালোচনা এক না কিন্তু এরপরও কেন জানি আব্দুল মালেক সাহেব হুজুর সায়্যিদ ‍কুতুবকে সাহাবি বিদ্বেষী বলে প্রচার করেন

    এক শায়খ বলেছেন, সায়্যিদ কুতুব যামানার ভাষায় তাওহিদ পেশ করেছেন তিনি সাহিত্যিক মানুষ ছিলেন যামানার কুফরি শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে ওয়াকিফহাল ছিলেন সে কুফরকে তিনি সাহিত্যের আঁচড়ে যামানার ভাষায় বোধগম্য করে মুসলিম জনসাধারণের সামনে পেশ করেছেন এ অপরাধেই তাকে আজীবন নির্যাতন সহইতে হয়েছে এবং শেষে তাগুতি আদালত তাকে ফাঁসি দিয়ে শহীদ করেছে একজন মাজলুম মুসলিমের ব্যাপারে হুজুর যদি আরেকটু নরম ভাষা ব্যবহার করতেন
    ***

    ## মুজাহিদিনে কেরাম ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার থেকে মাসআলা নেন না, ডাক্তার ইঞ্জিনিয়াররা নিজেরাও মাসআলা দেন না জিহাদ গোটা উম্মাহর উপর ফরয উম্মাহর ডাক্তার ইঞ্জিনিয়াররা উম্মাহর গ্রহণযোগ্য উলামাদের ফতোয়ার উপর ভিত্তি করে জিহাদে নেমেছে পাশাপাশি নিজেরাও জিহাদে নিয়ে পড়াশুনা করেছে জেনেছে বুঝেছে নিজেদের সব কিছু জিহাদের পথে, দ্বীনের পথে কুরবান করেছে

    ## আমরা আলেম বলতে যারা মাদ্রাসায় পড়েছে, দাওরা ইফতা বা এমন কোনো সনদ আছে তাদেরকে বুঝি সমাজে স্বাভাবিক এমন লোকদেরকেই আলেম মনে করা হয় কিন্তু যতটুকু জানি হুজুরের মাওকিফ এমন না দাওরা পাশ করে বেড়িয়ে গেলেই হুজুর আলেম মনে করেন মনে হয় না বর্তমানে যারা দাওরা ইফতার সনদ গ্রহণ করে, যোগ্যতার বিচারে তাদের ক’জনকে আলেম বা মুফতি বলা যায়?

    আলেম, মুফতি- এগুলো তো মূলত যোগ্যতার নাম যদি যোগ্যতার হিসাব হয়, তাহলে প্রচলিত মাদ্রাসায় পড়েছে কি’না তার হিসাব হবে না হিসাব হবে যোগ্যতার এ দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে হুজুর যাদের ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার ব্যবসায়ী বলছেন, তাদের অনেকেই প্রচলিত হাজারো আলেমের চেয়ে বড় আলেম ধর্তব্য হবেন
    আরব বিশ্বে আলেম হওয়ার জন্য আমাদের উপমহাদেশের মতো আলাদা মাদ্রাসা নেই সেখানে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, তারাই আলেম হতে পারে, আবার তারাই ইঞ্জিনিয়ার হতে পারে

    এরপরও বলি, মুজাহিদিনে কেরাম ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ারদের থেকে মাসআলা নেয় না, নেয় মানহাজ। শায়খ উসামা বা জাওয়াহিরি থেকে মুজাহিদরা মাসআলা নেয় না, নেয় মানহাজ, কাজের পন্থা আর কর্মপন্থা তো অভিজ্ঞতার বিষয় তার জন্য আলেম হওয়া জরুরী না, এমনকি মুসলিম হওয়াও জরুরী না ইসলাম এ ব্যাপারে উদার এটি জাগতিক বিষয় জাগতিক বিষয় কারও নিজের কামাই না, আল্লাহর দান আল্লাহ তাআলা যেখানে যেটা রেখেছেন সেখান থেকে সেটা গ্রহণ করে সমৃদ্ধ কর্মপন্থা গ্রহণ করাই শরীয়তের নির্দেশ

    এ কারণে আমরা দেখতে পাই:
    • খন্দকের যুদ্ধে রাসূল পরিখা খনন করেছেন এ পরিখা খনন আরবের মাঝে প্রচলিত ছিল না পারস্যের অগ্নিপূজারি মুশরিকদের তরিকা এটা রাসূল সেটাই গ্রহণ করেছেন
    • রাসূল সাহাবায়ে কেরামকে দাব্বাবা (তখনকার যামানার এক প্রকার ক্ষেপণাস্ত্র জাতীয় যুদ্ধাস্ত্র) শিখার জন্য জুরাশে পাঠিয়েছেন
    • উমর রাদি. সর্বপ্রথমি আদমশুমারি ও দিওয়ান ব্যবস্থা জারি করেন এটিও মূলত তখনকার কাফেরদের তরিকা ছিল
    • একই কারণে সমরবিশেষজ্ঞগণ মাওঁ সেতুং থেকে গেরিলা যুদ্ধের পদ্ধতি গ্রহণ করেন
    এ হচ্ছে মানহাজ কাজের পন্থা যারা এ বিষয়ে অভিজ্ঞ তাদের থেকে তা গ্রহণ করা হবে

    ইসলামের ইতিহাসে খালিদ বিন ওয়ালিদ রাদি. ইলমের ময়দানের বড় কেউ না, কিন্তু যুদ্ধ বিদ্যায় তার জুরি নেই এজন্য রাসূল আলাইহিস সালাম ও আবু বকর রাদি. তাকেই আমীর বানাতেন, যদিও তার থেকে বেশ কিছু ভুলভ্রান্তি ঘটে যেতো

    হুজুর সায়্যিদ আহমাদ শহীদ রহ.র জিহাদকে ফিতরি জিহাদের মডেল হিসেবে পেশ করেন (যদিও এ বিষয়ে আমার আপত্তি আছে, আপাতত সেদিকে যাচ্ছি না) সায়্যিদ আহমাদ শহীদ রহ. তো আলেম নন আমরা তার থেকে মাসআলা নেব না, নেব মানহাজ কাজের পন্থা মুজাহিদরা এমনটাই করেন আলহামদুলিল্লাহ মাসআলা আলেমদের থেকে নেন; মানহাজ সমরবিশেষজ্ঞ উলামা, উমারা ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ থেকে নেন
    ***

    ## আর তাকফিরের ব্যাপারে কথা হলো, মুজাহিদিনে কেরাম আলহামদুলিল্লাহ তাকফিরের ক্ষেত্রে আহলুস সুন্নাহর মাযহাব মেনে চলেন তবে আমাদের উচিত খাওয়ারেজদের আইএসের মানহাজ দিয়ে সবাইকে বিচার না করা

    হুজুর তাকফিরে হুককামের মাসআলা এনেছেন হুজুর অন্য এক মুহাজারাতেও ব্যাপারে কথা বলেছেনহুজুরের কথা থেকে বুঝা যাচ্ছে একমাত্র আয়াত ছাড়া অন্য কোনো দলীল নেই আসলে বিষয়টি এমন নয় অনেক দলীলের মাঝে এটিও একটি দলীল এজন্য এক শায়খ বলেছেন: ‘অনেকে আয়াতটি নিয়ে সংশয় সৃষ্টি করে এজন্য তাকফিরে হুককামের ক্ষেত্রে আয়াতটি দিয়ে আমি দলীলই দিই না

    আয়াতের কিছু সূরত কুফরে আমলি আর কিছু সূরত মুখরিজ মিনাল মিল্লাহ মুজাহিদিনে কেরাম ঢালাওভাবে সব সূরতকে মুখরিজ মিনাল মিল্লাহ বলেন না, বিশেষ সূরতকে বলেন

    আর হুজুর যেভাবে পেশ করছেন যে, ঢালাওভাবে সব মুরতাদ: আসলে মুজাহিদিনে কেরামের মাসআলা এমনটাও না কারণেই ইসলামী দলগুলোকে তাকফির করা হয় না বিচারকদেরকেও সবাই কাফের বলেন যে তা না এমনকি কোনো কোনো শাসককেও কাফের বলেন না, যাদের নিয়ত ভাল বুঝা যায় যেমন জিয়াউল হককে আব্দুল্লাহ আযযাম রহ. কাফের বলেননি কারণ, সার্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে বুঝা যায়, তিনি সামর্থ্য পেলে ইসলাম কায়েম করতেন সামর্থ্য না থাকায় যতটুকু পেরেছেন করেছেন হুজুর যেভাবে পাইকারি হারের কথা বলছেন আসলে সে রকম না

    তবে এখানে একটা লক্ষণীয় বিষয় হলো: দাওয়াত ওয়াজ এক জিনিস, ফিকহি হুকুম আরেক জিনিস গণতন্ত্র কুফর, শাসকরা মুরতাদ: এগুলো মূলত দাওয়াতের ভাষা, ওয়াজের ভাষা দাওয়াতের সময় বিষয়টি এভাবে ভয়াবহ করে পেশ করাই কাম্য ফিকহি তাহকিক তাদকিকের সময় অনেকে মুস্তাসনা হবে সেটা ভিন্ন কথা

    ## তাগুত শাসকরা কাফের: মাসআলাটি যতটুকু বুঝতে পারছিহুজুরের দৃষ্টিতে মুখতালাফ ফিহও না বরং বলতে গেলে অনেকটা মুজমা আলাইহি যে, তারা কাফের না

    আসলে শত বছরের কুফরি তাগুতি শাসন আমাদের মন মনন মস্তিষ্ক সব পরিবর্তন করে দিয়েছে ঈমান আমলের পাশাপাশি ইলমের ময়দানেও ভয়াবহ অধঃপতন হয়েছে যে কারণে এক সময় যেসব মাসআলা উম্মাহর কাছে স্বীকৃত মুজমা আলাইহি ছিল, আজ সেগুলোর কথা মানুষ জানেও না জানলেও সন্দেহযুক্ত মনে হয় তাগুত শাসকরদের মাসআলটার ব্যাপারে এমনটাই ঘটেছে যেখানে শুধু কুফরি আইন অনুযায়ী বিচার চাইতে গেলেই বেঈমান হয়ে যাবে বলে উম্মাহর উলামায়ে কেরাম ফতোয়া দিয়ে রেখেছেন, সেখানে স্বয়ং সে শাসকের হুকুম কি হবে তা তো বলাই বাহুল্য কিন্তু যামানার আবর্তনে অনেক কিছুই বিকৃতির শিকার

    ## হুজুর মুখতালাফ ফিহ মাসআলার একটি উসূল বয়ান করেছেন যে, নিজের রায় অন্যের উপর চাপিয়ে দেয়া যায় না

    কথা সঠিক কিন্তু যেমনটা আগেও বলেছি- আমি যেমন আমার রায় অন্যের উপর চাপাতে পারবো না, আমার উপরও অন্য কেউ তার নিজের রায় চাপাতে পারবে না কিন্তু এখন তো অবস্থা দাঁড়িয়েছে: মুজমা আলাইহ, মানসুস আলাইহ, সুস্পষ্ট কুরআন সুন্নাহর মাসআলা বলতে গেলেও আমাকে বহিষ্কার করা হয় জিহাদের কথা বলাই তো অপরাধ, হাকিমিয়ার মাসআলা তো পরের কথা

    আরাকান, আফগান, কাশ্মির, ইরাক, শাম: এসব ভূমিতে জিহাদ ফরয হওয়ার ব্যাপারে কার সন্দেহ আছে? কিন্তু আমাকে সেটাও কি বলতে দেয়া হয়? বা মানসিকতা রাখতে দেয়া হয়?

    হয়তো বলবেন, সরকারের ভয়ে নিষেধ করা হয়; উত্তরে বলবো: কথাটা বিশ্বাস করতে পারলাম না পূর্ণ যারা সরকারের ভয়ে নিষেধ করেন, তারা আমাকে গোপনে ডেকে নিয়ে বলেন, বাবা পরিস্থিতি ভাল না, মাদ্রাসায় এগুলো বলতে গেলে মাদ্রাসা বন্ধ হয়ে যাবে তুমি ফারেগ হয়ে গিয়ে নিজের মতো করে কাজ করো

    পক্ষান্তরে যারা আমাকে জিহাদের নাম উচ্চারণ করার মহা (!) অপরাধে জনসম্মুখে পিটিয়ে বহিষ্কার করে দেয়, আমি কি বিশ্বাস করতে পারি যে, তিনি সব কিছু মানেন, শুধু সরকারের ভয়ে ….??

    যদিও জিহাদের মাসআলার অনেক কিছুই মুজমা আলাইহি, তথাপি ধরলাম অনেক বিষয় মুখতালাফ ফিহ আছে সেগুলোর ক্ষেত্রে আমি আমার মতো আমল করবো, আরেকজন তার নিজের মতানুযায়ী আমল করবে যেমন তাকফিরের মাসআলা যদি ধরি, তাহলে দলীল প্রমাণের আলোকে কারও মনে হতে পারে যে, এসব শাসক মূলত ব্রিটিশ, আমেরিকা, ভারতের এজেন্ট তাদের কুফরি ধর্ম (আধুনিক সংবিধানের নামে) মুসলিমদের উপর চাপিয়ে দিতে এসব শাসককে তারা ব্যবহার করছে এরা মূলত মুসলিম উম্মাহর কেউ না এরা দ্বীনে ইসলামকে অবশ্যপালনীয় মনে করে না, বরং মানবতার সাথে সাংঘর্ষিক মনে করে এমন লোক ঈমানদার হতে পারে না এরা বেঈমান

    যাদের বিশ্বাস এমন, তারা এদেরকে মুরতাদ মনে করবে, এদের বিরুদ্ধে কিতাল করা ফরয মনে করবে সে অনুযায়ীই হবে তাদের কর্মপন্থা

    পক্ষান্তরে যারা দলীল প্রমাণের আলোকে এদেরকে বিদেশীদের এজেন্ট বা বেঈমান মনে করবে না বা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জিহাদ আবশ্যক মনে করবে না, তাদের কর্মপন্থা হয়তো সে রকম হবে না। কিন্তু যারা জিহাদ ফরয মনে করে তাদেরকে বাধায় দিতে পারবে না প্রত্যেকে আপন মতানুযায়ী আমল করবে যেমনটা থানবি রহ. বলেছেন,
    کسی امر موجبِ کفر کی دلالت علی الکفر یا اس امر موجب کفر کا ثبوت قرائن مقامیہ یا مقالیہ کے اختلاف سے مختلف فیہ ہو سکتا ہے۔ اور خود قطعیت بھی کبھی مختلف فیہ ہو سکتی ہے کحرمۃ متروک التسمیۃ عامداً اسی طرح کبھی اجماع مختلف فیہ ہو سکتا ہے ۔۔۔اس صورت میں ہر عامل اپنے عمل میں معذور ہوگا۔ امداد الفتاوی جدید ۔ جدید مطول حاشیہ شبیر احمد القاسمی جلد 11 صفحہ نمبر: 167
    “কোনো কুফরি বিষয় পরিষ্কার কুফর বুঝাচ্ছে কিনা এবং কুফরি বিষয়টি (ব্যক্তি থেকে) সুস্পষ্ট প্রমাণিত কিনা; কথাবার্তার ধরন পারিপার্শ্বিক অবস্থার ভিন্নতার ভিত্তিতে তাতে মতভেদ হতে পারে তদ্রূপ বিষয়টি অকাট্য কুফর কিনা তাতেও মতভেদ হতে পারে ... বিষয়টি সর্বসম্মত মুজমা আলাইহি কুফর কিনা তাতেও দ্বিমত হতে পারে ধরনের ক্ষেত্রে যে ব্যক্তি যে মত অনুযায়ী আমল করবে, সেক্ষেত্রে তাকে মাজুর ধরা হবে (সমালোচনা করা যাবে না) -ইমদাদুল ফাতাওয়া (জাদিদ): ১১/১৬৭

    মুজতাহাদ ফিহ মুখতালাফ ফিহ বিষয়ের এটিই হলো মূলনীতি কিন্তু এখন অবস্থা দাঁড়িয়েছে, জিহাদের বিষয়ে কোনো উসূল জাওয়াবিত নাই জিহাদ শব্দটাই অপরাধ

    ## হুজুর বলেছেন, “তোমার রায় নিয়ে তুমি থাকো শেষ ছাত্রদেরকে তার উস্তাদদের সাথে ছেড়ে দাও ছাত্র তোমার মতো আল্লামা হলে ঠিক আছে তোমার রায় গ্রহণ করুক ছাত্রকে কেন পেরেশান কর?”

    আসলে জিহাদ কাউকে জোর করে গ্রহণ করানো হয় না প্রত্যেকে নিজের ইচ্ছায় গ্রহণ করে যে কাজে পা দিলেই মরণের ভয়, তা কি কাউকে কেউ জোর করে গ্রহণ করাতে পারে? তাছাড়া মুজাহিদিনে কেরামের নিজেদেরই তো মাথা গুঁজার ঠাই নাই, আরেকজনকে কিভাবে জিহাদে আসতে বাধ্য করবে?

    বরং তানজিমুল কায়েদার তো উসূল হলো, কেউ নিজে থেকে আসতে চাইলেও না নেয়া
    সর্ব দিক বিচেনায় প্রয়োজন মনে করলে নেয়া হবে, নয়তো নেয়া হবে না কোনো তালিবুল ইলমকে পেরেশান করে মুজাহিদিনে কেরাম কাউকে নেয় না আলহামদুলিল্লাহ বরং মুজাহিদিনে কেরামই পদে পদে পেরেশানির শিকার হন


    ## হুজুর বলেছেন তালিবুল ইলমদেরকে উস্তাদদের হাতে ছেড়ে দিতে যতটুকু বুঝতে পারছি এ কথার উদ্দেশ্য: উস্তাদদের যে মত, যে রায়, তালিবুল ইলমরা সে মত গ্রহণ করে থাকতে চাইলে আমরা যেন তাদেরকে সে মত থেকে ঘুরানোর চেষ্টা না করি

    যদি এমনটাই উদ্দেশ্য হয়, তাহলে এখানে কিছু কথা আছে:
    * এমন অনেক উস্তাদ আছেন আলহামদুলিল্লাহ যারা প্রচলিত জিহাদে বিশ্বাসী সেসব উস্তাদের ভক্ত ছাত্র যারা আছে, তাদেরকে কি তাদের উস্তাদের জঙ্গিবাদি মত গ্রহণে স্বাধীনতা দেয়া হবে? না হবে না? হুজুরের কথামতো তো স্বাধীনতা দেয়ার কথা যদি এমনটাই হয়, তাহলে জঙ্গি উস্তাদ শাগরেদদেরকে কেন স্বাধীনতা দেয়া হয় না? কেন তাকফিরের মাসআলা উঠানোই বা জিহাদের কথা বলাই অপরাধ?

    * “ছাত্র তোমার মতো আল্লামা হলে ঠিক আছে তোমার রায় গ্রহণ করুক” এ উসূলটি কি শুধু জিহাদের মাসআলায়? না সব মাসআলায়? ধরুন ব্যাংকের কোনো মাসআলায় দুইজন আলেমের দ্বিমত হলো। একজন বলছেন জায়েয, অন্যজন বলছেন নাজায়েয। একজন তালিবুল ইলম উভয় আলেমের শাগরেদ। সে কোনটা গ্রহণ করবে? দুই উস্তাদের কোনো একটা গ্রহণ করার অধিকার তার আছে কি? না’কি যে উস্তাদের রায় গ্রহণ করতে চাইবে, আগে তাকে সে উস্তাদের মতো বড় আল্লামা হতে হবে? এখানে তো কেউ বলবে না যে, এখন সে জায়েয নাজায়েয কোনোটাই গ্রহণ করতে পারবে না, আগে তাকে দুই উস্তাদের কোনে একজনের মতো আল্লামা হতে হবে, তারপর গ্রহণ করবে। জীবনের বহু মাসআলাতেই উস্তাদদের দ্বিমত হবে, তখন সে আল্লামা হওয়ার আগ পর্যন্ত চলবে কিভাবে? আর যারা সাধারণ মানুষ তারাই বা চলবে কিভাবে? অন্য সব মাসআলায় যদি একটা গ্রহণ করতে উস্তাদের সমান আল্লামা হতে না হয়, তাহলে জিহাদের মাসআলায় কেন এমন শর্ত? তাহলে কি আমরা জিহাদ বন্ধ করে দেয়ার পথে হাঁটছি?

    * “ছাত্রদেরকে তার উস্তাদদের সাথে ছেড়ে দাও কথাটা রাগের মাথায় হুজুর বলেছেন। হুজুর কি বলবেন যে, ফরিদ মাসউদের শাগরেদদেরকে ফরিদ মাসউদের হাতে ছেড়ে দেয়া হোক?

    অনেক উস্তাদ আছে, যাদের না মাসআলার জ্ঞান আছে, না বাস্তব দুনিয়ার কিছু জ্ঞান আছে। গতানুগতিক কিতাব পড়া পড়ানোর বাইরে কিছু ‍বুঝে না। এমনকি কোনো ইলমী সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিতে গেলেও তারা বাধ সাধেন। হুজুর কি বলবেন, শাগরেদদেরকে এমন উস্তাদের হাতে ছেড়ে দেয়া হোক?

    উস্তাদদের মধ্যে কোনো মুনাফিক থাকা বা ইয়াহুদিদের মানস সন্তান মুহাররিফ থাকা এবং দ্বীন বিক্রি করে দুনিয়াকামানেওয়ালা থাকার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যায় না। শাগরেদদেরকে তাদের হাতে ছেড়ে দেয়ার কথা হুজুর সমর্থন করবেন? আসলে এটা কোনো উসূলই না, এটা রাগের মাথার কথা।

    ## “যদি মুজতাহাদ ফিহ হয় তাহলে তুমি কে একবারে এই মুজতাহাদ ফি মাসআলার মধ্যে তুমি যে ইজতিহাদ গ্রহণ করলা সে ইজতিহাদ সব ছাত্রকে গিলিয়ে দিতে হবে, খাইয়ে দিতে হবে, মাদ্রাসার ইনতেজামিয়ার বিরুদ্ধে, উস্তাদদের বিরুদ্ধে?”

    মুজাহিদিনি কেরাম কাউকে খাইয়ে গিলিয়ে দেন না, প্রত্যেকে নিজেই খায়, নিজেই গিলে কিন্তু আমি কি আমারটা বলার অধিকার রাখি না? বর্তমানে জিহাদের বিষয়টা শুধু কিতাবের পাতায় সীমাবদ্ধ থাকার মতো বিষয় না আমলী ময়দানের বিষয় আমি মনে করি এসব শাসকের বিরুদ্ধে জিহাদ ফরয এরা দ্বীনের দুশমন এদেরকে না সরালে দ্বীন প্রতিষ্ঠা সম্ভব না আমি আমার মতের কথা কি কাউকে বলতে পারবো না যে, ভাই আমার এই মত, আপনি কি বলেন? এরপর সে আমার মত সমর্থন করতেও পারে, নাও করতে পারে না করলে তার মতো সে চলবে, আমি আমার মতো চলবো কিন্তু আমার অভিমত বলার কারণে আমাকে অপরাধী বলা হচ্ছে কেন? এটা কোন উসূল?
    ***
    আসলে এখানে আরও কিছু কথা আছে হুজুর তাকফিরের মাসআলাটা হাইলাইট করছেন আমরা তাকফিরের মাসআলা আপাতত বাদ দিলাম তাকফিরের মাসআলা বাদ দিলেই কি কিচ্ছা খতম?

    আরাকান, কাশ্মির, ভারত, আফগান, ইরাক, শাম, তুর্কিস্তান: পৃথিবীর অসংখ্য মুসলিম ভূমি কাফেরদের দখলে এবং মুসলিমরা ফিলহাল কাফেরদের হাতে চরমভাবে নির্যাতিত এই নির্যাতিত মুসলিমদের জন্য আমার করণীয় কি? এদের জন্য কি জিহাদ করা জরুরী না? এই জিহাদের কথা কি আমি বলতে পারছি? এখানে কি সমস্যা? এটা বলতে গেলে কেন আমি অপরাধী?

    আমাদের এই শাসকগুলো শরীয়াহ কায়েমের পূর্ণ সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও শরীয়াহ কায়েম করছে না আমি যদি বলি শরীয়াহর কথা, আমি হয়ে যাবো তাদের দৃষ্টিতে দুনিয়ার সবচে’ বড় বিদ্রোহী সবচে’ বড় অপরাধী আমার কোনো নিরাপত্তা নাই, নাই কোনো অধিকার আমার জানমাল তাদের জন্য হালাল

    দুনিয়ার যত জায়গায় শরীয়াহর আওয়াজ উঠেছে, এই শাসকগোষ্ঠী তত জায়গায় তাদেরকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে তাবত কুফফার বিশ্বের সাথে মিলে এদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে

    দুনিয়ার যত জায়গায় মুসলিম নির্যাতিত, কোথাও আমি কিছু করতে পারছি না প্রধান বাধা এই শাসকগোষ্ঠী
    এরা আমাকে সব ধরনের কুফর ও ফিসকের বেলায় সহায়তা দেবে কুফরের দরজা, পাপাচারের দরজা এরা জাতির জন্য উন্মুক্ত করে দিবে সর্ব প্রকারের সহযোগিতার দরজা তারা কাফের মুরতাদ বেঈমানদের জন্য খোলা রাখবে, কিন্তু আমি আমার নিজের ফ্যাক্টরিতে নামায বাধ্যতামূলক করতে গেলেও তারা বাধা দিবে

    তাকফিরের মাসআলা যদি হুজুর মুখতালাফ ফিহ মনে করেন, তাহলে তাতে দ্বিমত করতে পারেন; কিন্তু এই তাগুত শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে হাতিয়ার উঠানো, এদের বিরুদ্ধে জিহাদের আওয়াজ উঠানো কি শরীয়তে নাজায়েয? হুজুর কি কতয়িভাবে নাজায়েয বলতে পারবেন? কাফের হিসেবে হাতিয়ার উঠালাম না, অন্য সব দিক বিবেচনা করে উঠালে কি নাজায়ে হবে কতআন? আমার বোন আরাকানে, কাশ্মিরে, হিন্দে ধর্ষিত হতে থাকবে; আমি জিহাদে যেতে চাইলে তাগুত আমাকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে আমার জান মাল হালাল ঘোষণা দেবে: এদের বিরুদ্ধে অস্ত্র উঠালে নাজায়েয হবে?

    আসলে এসব শাসক কাফেরদের বাহিনি কাফেররা নিজ নিজ ভূখণ্ডের মুসলিমদের নিজেরা নিপীড়ন করে, আর বাহির থেকে যাতে কোনো মুসলিম সাহায্যের জন্য যেতে না পারে সেজন্য এসব শাসককে খড়গ হাতে পাহারায় বসিয়ে দিয়েছে আমি এদের খড়গ প্রতিহত করতে গেলে তাদের কাছে আমি হয়ে যাবো সন্ত্রাসী, আর উস্তাদের কাছে হয়ে যাবে পথভ্রষ্ট, গোমরাহ, জযবাতি হায়রে বিচার!!

    বেশির চেয়ে বেশি বলতে পারেন, এসব শাসকের হুকুম কি হবে তাতে দ্বিমত হতে পারে কিন্তু দুঃখের বিষয় এসব কথা হুজুরদের সামনে উঠানোই যায় না এসব বিষয়ে কোনো কথাই বলা যায় না এরপরও অভিযোগ আমি আমার নিজের মত সবার উপর চাপিয়ে দিতে চাচ্ছি বাস্তব কথা হলো, দলীল এবং বাস্তবতার তোয়াক্তা না করে ছাত্ররা গিলতে না চাইলেও উস্তাদরা জোর করে নিজেরা যা চান সবাইকে গিলাতে চান। যার ফলে ছাত্র উস্তাদের এই টানা-পোড়ন সৃষ্টি হয়েছে নতুবা ছাত্র উস্তাদ সবাই যদি উম্মাহর এহেন জরুরী বিষয়গুলো সামনে নিয়ে দলীল ও বাস্তবতার আলোকে কি পদক্ষেপ নেয়া যায় বসতেন- তাহলে এ টানাপোড়ন সৃষ্টি হতো না
    ***

    বক্তব্য ১৫ (দুয়েক কালিমা বাদে হুবহু নস): [আচ্ছা, এরপরে বলে দারুল হরব সব দারুল হরব ওরে আল্লারে! সব দারুল হরব! এক দেশ ছাড়া সব কি? দারুল হরব আচ্ছা তো আবার এইটা কেন? এই দারুল হরবের মাসআলা কি মুজতাহাদ ফিহ না মানসুস আলাইহ? ওইটা যদি হয় মুজতাহাদ ফিহ এইটাও কি হবে? ওই কারণেই তো এইটাকে দারুল হরব বলে আগের মাসআলার কারণেই তো দারুল হরব বলবে ঐটা তো মুজতাহাদ ফিহ মাসআলা অথচ এটা এতো দাকিক এবং নাজুক মাসআলা!

    এটাকে দারুল হরব নাম দিলেন আপনি, নাম দেয়ার পরে হুকুম কি? বলে দিলেন দারুল হরব, তার পরে করণীয় কি? ওইটা কি দিয়েছেন? করণীয়টা পেশ করেছেন? আপনি করণীয়টা করেছেন? আপনি নিজে করেছেন করণীয়টা? এগুলোকে বলে শুযুয লা-ইয়ানি মিন হুসনি ইসলামিল মারয়িতরকুহু মা-লা-ইয়ানি সূরাতান তাহকিক, সূরাতান ইলম, এমনে এগুলো ইলম না, এগুলো লা ইয়ানি মহজ নেজা, মহজ জিদালমুজতাহাদ ফিহ হলে তুমি তোমার রায় সবার উপর মুসাল্লাত করতে পার না অন্য কাউকে বলতে পারো না এরা জিহাদ বিরোধী এরা হক বিরোধী এরা ইলম বিরোধী এরা গাফেল, মুদাহিন] (মাগরিব বাদ বয়ান, ৩৮-৪০ মিনিট)

    অভিব্যক্তি
    মাসআলায় দ্বিমত হলেই জিহাদ বিরোধী, হক বিরোধী, ইলম বিরোধী, গাফেল, মুদাহিন বলে দেওয়া শরীয়তেও জায়েয নেই, মুজাহিদদের মানহাজেও তা নিষেধ দুয়েক জনের ভুল আচরণ গোটা জামাতের উপর চাপানো ঠিক না

    আমি এখানে একজন মুজাহিদ শায়খের বিবৃতি উল্লেখ করছি শায়খ আবু মুসআব উমাইর আল-আওলাক্বী রহ. বলেন,
    قد يقول قائل: إذا كنتم تقولون يسع الخلاف في التنزيل فلماذا القاعدة تشنع على العلماء الذين لا يكفرون الحكام؟ نقول: هذا سؤال جيد ولابد من بيانه، فأقول: إن القاعدة لا تشنع على كل من لم يكفر الحكام، فعندهم الذين لا يكفرون الحكام من العلماء على قسمين:-
    أ عالم بعيد عن سلطانهم، تجرد واجتهد ولم يصل إلى تكفيرهم، ولم يُستخدم كوسيلة لحرب المجاهدين، فهذا يقدر عند القاعدة وله اجتهاده.
    ب عالم لم يكفر الحكام واستُخدم لحرب المجاهدين، ووصفهم بالفئة الضالة ومدح الطواغيت وخذل الأمة الإسلامية، فهذا الذي تحذر منه القاعدة؛ لأن ضرره على الأمة خطير. -لماذا اخترت القاعدة؟ ـ أبي مصعب محمد عمير الكلوي العولقي، ص: 46
    “হয়তো কেউ আপত্তি উঠাতে পারে যে, আপনারা যখন বলে থাকেন, ফতোয়া প্রদানের ক্ষেত্রে মতবিরোধের অবকাশ রয়েছে, তখন যেসব আলেম শাসকদেরকে কাফের মনে করে না, আলকায়েদা তাদের সমালোচনা করে কেন?

    উত্তরে বলবো, এটি একটি সুন্দর প্রশ্ন এটি স্পষ্ট করা জরুরী আমি বলি, শাসকদেরকে কাফের বলে না এমন সকলেরই আলকায়েদা সমালোচনা করে না যেসকল আলেম শাসকদেরকে কাফের মনে করে না, আলকায়েদার দৃষ্টিতে তারা দুই ভাগে বিভক্ত:

    . এমন আলেম যিনি শাসকদের থেকে দূরে ঐকান্তিক চেষ্টা গবেষণা সত্বেও যার কাছে শাসকরা কাফের বলে মনে হলো না তবে তাকে মুজাহিদদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের কোন মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা যাচ্ছে না আলকায়েদা তার কদর করে তিনি তার নিজের ইজতিহাদ মতো চলবেন

    . এমন আলেম যে শাসকদেরকে কাফের মনে করে না, তবে মুজাহিদদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে তাদেরকে গোমরাহ ফেরকা বলে আখ্যায়িত করছে তাগুতদের প্রশংসা করছে প্রয়োজন মুহূর্তে মুসলিম উম্মাহকে সাহায্য করছে না এই আলেমের ব্যাপারেই আলকায়েদা সতর্ক করে থাকে কেননা, উম্মতের জন্য সে মারাত্নক ক্ষতিকর।” -লিমা যা ইখতারতুল কায়েদা: ৪৬

    হল মুজাহিদদের মানহাজ যদি কেউ এর ব্যতিক্রম করে, সেটা মুজাহিদদের উপর চাপানো ঠিক হবে না

    দ্বিতীয়ত: দারুল হারব হওয়া না হওয়ার ব্যবধানে শাসকদের বিরুদ্ধে কিতালে কোনো ব্যবধান আসবে না এসব রাষ্ট্র দারুল হারব হলেও শাসকদের বিরুদ্ধে কিতাল করতে হবে, না হলেও করতে হবে হ্যাঁ, জুযয়ি কিছু মাসআলায় ব্যবধান আসবে, সেটা ভিন্ন কথা

    তৃতীয়ত: দারুল হারবের মাসআলাটাকে হুজুর এত বেশি খতরনাক কেন ভাবছেন বুঝতে পারছি না যতটুকু বুঝতে পারছি, দারুল হরব নাম দিলে বিশেষ একটা করণীয় চলে আসবে, সে করণীয়টা করা অত সহজ হবে না মনে করছেন হুজুর কিন্তু প্রশ্ন, বাস্তবে যদি দারুল হারব হয়ে থাকে, তাহলে শুধু নাম না দেয়ার কারণে কি হুকুমে ফরক হবে? করণীয়তে ফরক হবে? দারুল হারব হয়ে যাওয়ার পর আমি নাম দিলাম না দারুল হারব, তাই বলে কি করণীয় বদলে যাবে? করণীয় তো নামের সাথে সম্পৃক্ত না, করণীয় তো বাস্তবের সাথে সম্পৃক্ত- নাম যাই হোক

    তাছাড়া করণীয় করতে পারবো না- এই ভয়ে কি হুকুম বয়ান করাও তরক করতে হবে?

    যেমন ধরুন একটা লোক খতমে নবুওয়াতের আকিদা পরিত্যাগ করে গোলাম আহমদ কাদিয়ানিকে নবী মেনে কাদিয়ানি হয়ে গেল সে মুরতাদ এ মত থেকে ফিরে না আসলে তাকে হত্যা করা জরুরী

    আমি তাকে মত থেকে ফিরিয়ে আনতে পারবো না বা তাকে হত্যা করতে পারবো না- তাই বলে কি আমি তাকে মুরতাদ আখ্যা দিতে পারবো না? আমি তাকে সমাজে একজন মুসলিম হিসেবেই প্রকাশ করবো? কিংবা অন্য দশজন লোক তাকে মুসলিম বললে, তার সাথে বিবাহ শাদির মুআমালা করলে আমি কি চুপ করে থাকবো কিংবা সমর্থন করে যাব?

    তাছাড়া মুজাহিদিনে কেরাম দারুল হারব বলেই ক্ষান্ত থাকেননি, করণীয়টাও বলেছেন সে করণীয় সামনে রেখে কাজও করে যাচ্ছেন আলহামদুলিল্লাহ।

    সবচেবড় কথা হলো, দারুল হারব হয়ে গেলে বিশেষ কোনো করণীয় সামনে চলে আসবে, আর না হলে আসবে না- এমন না

    অনেকে মনে করেন, দারুল হারব হয়ে গেলে সেখান থেকে হিজরত করা জরুরী সেখানে অবস্থান করা নাজায়েয হুজুর কি এমন কোনো মত পোষণ করেন কিনা জানি না তবে বাস্তব হচ্ছে মাসআলা গলদ মুজাহিদিনে কেরাম বলেন না যে, দারুল হারব হয়ে গেলে আর সেখানে থাকা জায়েয নেই বরং মুজাহিদিনে কেরামের মানহাজ তো হলো, প্রত্যেকে নিজ নিজ দেশে থেকে সেখানে জিহাদ কায়েমের ফিকির করবে একান্ত বিশেষ কোনো দরকারে কাউকে হিজরত করতে হলে শুধু সেই হিজরত করবে অন্য সকলে নিজ নিজ ভূমিতে জিহাদ কায়েমের ফিকির করবে দারুল হারব হয়ে গেলেই হিজরত করতে হবে এমন কথা মুজাহিদিনে কেরাম বলেন না শরীয়তেরও এটি মাসআলা না।

    হাঁ, দারুল হারব থেকে হিজরত করে দারুল ইসলামে চলে যাওয়ার সুযোগ থাকলে সেটা ভিন্ন কথা ধরনের ক্ষেত্রে চলে যাওয়াটা মু্স্তাহাব- যদি দারুল হারবে দ্বীন পালনের সুযোগ থাকে সুযোগ না থাকলে হিজরত করা ওয়াজিব সে ওয়াজিব মূলত দারুল হারব হওয়ার কারণে না, দ্বীন পালন না করতে পারার কারণে ধরনের হিজরত অনেক সময় দারুল ইসলামেও আবশ্যক হয় যেমন দারুল ইসলামের কোনো এলাকা চরম বিদআতি কিংবা পাপাচারে ভরা ঈমান আমল বাঁচানোই কষ্ট ধরনের জায়গা থেকে ভাল জায়গায় হিজরত করা আবশ্যক

    অতএব, কোনো ভূমি দলীলের আলোকে দারুল হারব হয়ে গেলে, সেটা বয়ান করাই কাম্য সে বয়ান করাটাও এক প্রকার করণীয় এর বাহিরে আরও যেসব করণীয় আছে, সেগুলো শক্তি থাকলে ফিল হাল করবে, শক্তি না থাকলে শক্তি সঞ্চয় করবে এটি লা-ইয়ানিহওয়ার কোনো কারণ দেখছি না

    এখানে ইমাম জাসসাস রহ. (৩৭০ হি.) এর একটি বক্তব্য তুলে ধরা সমীচিন মনে করছি। বাতিনি ফেরকার হুকুম বয়ান করতে গিয়ে তিনি বলেন,
    وأما قوله عليه الصلاة والسلام ...: "قاتلوا من كفر بالله": فإنه يدل على وجوب قتال جميع أصناف الكفار وقتلهم، وأن أحدًا منهم لا يقر على ما هو عليه من الكفر إلا بالجزية ممن يجوز أخذ الجزية منهم، وإلا: فالإسلام أو السيف، كنحو من يعطي الإقرار بجملة التوحيد وتصديق النبي عليه الصلاة والسلام، وينقصه برد النصوص، مثل القرامطة المتسمية بالباطنية، فإن استحقاق القتل لا يزوال عنهم بزعمهم أنهم مقرون بجملة التوحيد والنبوة ... وكذلك أشباههم من سائر الملحدين ... فأردنا أن نبين حكمهم، لكي إن اتفق في مستقبل الزمان إمام للمسلمين يغضب لدين الله تعالى، أن يتلاعب به الملحدون، أو يسعوا في إطفاء نوره: أجرى عليهم حكم الله، وإن كان وجود ذلك بعيدًا في عصرنا، والله تعالى ولي دينه، وناصر شريعته.اهـ
    “রাসূল আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালামের বাণী-"قاتلوا من كفر بالله" ‘যে আল্লাহ তাআলার সাথে কুফরী করেছে তার বিরুদ্ধে কিতাল কর’ বুঝাচ্ছে যে, সব শ্রেণীর কাফেরের বিরুদ্ধে কিতাল করা এবং তাদেরকে কতল করা ফরযতাদের কাউকেই তার কুফরের উপর বহাল রাখা যাবে নাযার থেকে জিযিয়া নেয়া জায়েয তার থেকে জিযিয়া নেয়া হবেএছাড়া বাকিদের থেকে ‘ইসলাম ও তরবারি’ ব্যতীত অন্য কিছু গ্রহণ করা হবে নাযেমন যারা তাওহীদ এবং রাসূল আলাইহিস সালাতু ওয়াসসালামের সত্যায়নের মৌখিক স্বীকৃতি তো দেয়, কিন্তু (শরীয়তের) নুসূসকে প্রত্যাখ্যান করার দ্বারা তা ভঙ্গ করেযেমন-‘বাতিনিয়া’ নামধারী ‘কারামেত্বা’রাকেননা, শুধু তাওহীদ ও নবুওয়্যাতের স্বীকৃতি দেওয়ার কারণেই তাদের থেকে তাদের প্রাপ্য হত্যার বিধান দূর হয়ে যাবে না… এ জাতীয় অন্য সকল মুলহিদের বিধানও এমনই… আমি এদের বিধান বর্ণনা করে যাওয়ার ইচ্ছা এ জন্য করেছি যে, ভবিষ্যতে যদি মুসলমানদের এমন কোন ইমাম আসেন, যিনি মুলহিদদেরকে আল্লাহ তাআলার দ্বীন নিয়ে ছিনি-মিনি খেলতে দেখে এবং তার নূরকে নিভিয়ে দেয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত দেখে ফোঁসে উঠবেন: তাহলে তিনি যেন তাদের ‍উপর আল্লাহ তাআলার বিধান জারি করতে পারেনযদিও আমাদের বর্তমান যমানায় এমন ইমাম পাওয়া দূরুহ ব্যাপারআল্লাহ তাআলাই তাঁর দ্বীনের রক্ষকতাঁর শরীয়তের হেফাজতকারী” -শারহু মুখতাসারিত ত্বহাবী: ৭/৪১-৪৩

    ফিলহাল বাতিনি কাফেরদের হত্যা করা তার পক্ষে সম্ভব ছিল না, কিন্তু ভবিষ্যতে কাজে আসবে মনে করে তিনি হুকুম বয়ান করে গেছেন।

    হাঁ, একটা ব্যাপার আছে যে, হক কথা সব জায়গায় বলা যায় না। মওকা বুঝে কথা বলতে হয়। এ হিসেবে দারুল হারব হয়ে গেলে সেটা বয়ান করা হবে কি হবে না তা মাসলাহাতের উপর নির্ভরশীল। এতে দ্বিমত হতে পারে। কেউ যদি মনে করেন, এখন না বলা মুনাসিব; তিনি বয়ান না করলেন। আর যাদের কাছে বলা মুনাসিব মনে হয় তারা বয়ান করবেন। একজনের ইজতিহাদ আরেকজনের উপর চাপানো তো ঠিক হবে না। মুজাহিদিনে কেরাম মনে করছেন বয়ান করলে ফায়েদা তাই বয়ান করছেন, করণীয়ও বলছেন। এটা লা-ইয়ানি’ বা নেজা জিদাল বলে তো কিছু মনে হচ্ছে না। ওয়াল্লাহু আ’লাম।
    الحمد لله الذي بنعمته تتم الصالحات. وصلى الله تعالى على خير خلقه محمد وعلى آله وأصحابه أجمعين.

  • #2
    জাজাকাল্লাহু আহসানাল জাজা

    Comment


    • #3
      জাযাকাল্লাহ প্রিয় ভাই। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সকল ভ্রান্তি, বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ি থেকে হেফাজত করুন। ইলম ও আমলে বারাকাহ দান করুন। এবং তাঁর সত্য দ্বীনের বিজয়ের জন্য কবুল করে নিন।...
      হে মু'মিনগণ! তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারী হও।

      Comment


      • #4
        Originally posted by ইলম ও জিহাদ View Post
        বক্তব্য ১৩ (দুয়েক কালিমা বাদে হুবহু নস): [শরীয়তের জিহাদ রহমত শরীয়তের জিহাদ, কুরআন সুন্নাহ এবং সালাফে সালিহিনের মাঝে যে তাসাব্বুর ছিল জিহাদের, ঐভাবে জিহাদকে পেশ করতে হবে জিহাদের যে সমস্ত নতুন নতুন মাসআলা আবিষ্কার করেছে গাইরে আলেম মুজাহিদরা; জিহাদ করেছেন উনি, কিন্তু গাইরে আলেম; গাইরে আলেম মুজাহিদরা যেসমস্ত নতুন মাসআলা আবিষ্কার করেছে, বা মু’তাদিল নয় এমন শুধু রেওয়ায়েতি আলেম, নকল আর রেওয়াতে বড় আলেম, তাদের আবিষ্কৃত মাসআলা: এগুলো দ্বারা জিহাদের শরাহ করা, জিহাদকে চিনানো, জিহাদের তাআরুফ করানো অন্যায় সে জন্য আমাদের জামে মানে মুতালাআ থাকা জরুরী আল্লাহ তাআলা ঐ রকম মুতালাআ আমাদেরকে দান করেন] (মাগরিব বাদ বয়ান, ২৮-৩০ মিনিট)

        অভিব্যক্তি
        হুজুরের বক্তব্য থেকে যে কেউ বুঝবে, বর্তমান জিহাদিরা জিহাদের যে ব্যাখ্যা করে, জিহাদের যে তাসাব্বুর তারা পেশ করে, জিহাদ বলতে তারা যে জিনিস বুঝাতে চায়, তা কুরআন সুন্নাহ এবং সালাফে সালিহিনের বুঝের পরিপন্থী শরীয়তের জিহাদের সাথে তাদের এ বুঝের কোনো মিল নেই

        পাশাপাশি এও বুঝবে যে, জিহাদিদের কোনো আলেম নেই কয়েকটা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার আর ব্যবসায়ী জমা হয়ে জিহাদ শুরু করে দিয়েছে (হুজুরের সামনের বক্তব্যে এমন কথা আসছে) আর এসব অজ্ঞ লোক নিজেরা জিহাদের বিকৃত একটা রূপ উম্মতের সামনে পেশ করছে

        কিংবা কয়েকটা রেওয়ায়েতি ও গতানুগতিক আলেম তাদের সাথে আছে শরীয়তের সহীহ সঠিক রূপ অনুধাবন করতে অক্ষম এসব অপরিপক্ক আলেম না জেনে না বুঝে জিহাদকে বিকৃত করেছে আর সে বিকৃত জিহাদ উম্মতের সামনে পেশ করছে

        হুজুর এর আগে দুঃখ করে এসেছেন যে, এসব বিকৃত ধ্যান ধারণা এখন কওমি মাদ্রাসায় প্রচার হচ্ছে এবং তালিবুল ইলমরা এগুলো গিলেও নিচ্ছে, ফিরানো যাচ্ছে না

        সত্য কথা বলতে গেলে, জিহাদি বলতে হুজুর কাদের বুঝাতে চাচ্ছেন সেটাই ‍বুঝা যাচ্ছে না নয়তো প্রকৃত জিহাদিদের খোঁজ-খবর যদি হুজুরের থাকতো, আশাকরি হুজুর এমন মন্তব্য করতে পারতেন না

        আরেকটা কথা হলো, বর্তমান প্রজন্মের যেসব উলামা তুলাবা জিহাদে জড়াচ্ছে, তারা কিন্তু একেবারে গতানুগতিক না বরং ইলমি দিক দিয়ে তারা আর দশজন উলামা তুলাবা থেকে কোনো অংশে কম না, দুনিয়ার হালচাল জানাশুনার দিক থেকেও কম না, বরং অনেক ক্ষেত্রে তারা দুনিয়ার হালচালের খবরাখবর একটু বেশি জানে যদি চলমান জিহাদের তাসাব্বুরটা একেবারেই শরীয়ত পরিপন্থী হতো, জাহেল মূর্খদের আবিষ্কৃত নতুন বিদআত হতো, তাহলে ব্যাপকভাবে যি-ইস্তি’দাদ এবং দ্বীনের গাইরতওয়ালা উলামা তুলাবারা তা কবুল করতো না

        সবচে’ ভাল হতো হুজুর যদি দেখাতেন যে, জিহাদিরা জিহাদের এই তাসাব্বুর পেশ করছে, আর শরীয়তের সহীহ জিহাদের তাসাব্বুর হচ্ছে এই সহীহ রূপটা তুলে না ধরে প্রচলিতটাকে শুধু ভুল বলে গেলে তো আর উম্মত সহীহটা পাবে না

        যেমন ধরুন একজন লোক ভুলভাবে নামায পড়ছে একজন আলেম যদি বারবার শুধু বলেন, তোমার নামায হচ্ছে না, কিন্তু সহীহ নামাযটা তাকে শিক্ষা না দেন, তাহলে ঐ লোক হয় নামায ছেড়ে দেবে, না হয় ভুল তরিকায়ই নামায পড়তে থাকবে যেটাই করুক, এর দায়ভারের একাংশ ঐ আলেমকেও নিতে হবে

        জিহাদের বেলায়ও যদি উলামায়ে কেরাম, যারা জিহাদের সহীহ রূপ জানেন, তারা যদি সে সহীহটা উম্মতের সামনে পেশ না করেন, তাহলে উম্মত হয় জিহাদ ছেড়ে গুনাহগার হবে, না হয় এ ভুল তরিকায়ই জিহাদ করতে থাকবে তখন এর দায়ভার সেসকল জাননে ওয়ালা উলামাদেরও গ্রহণ করতে হবে
        ***
        বক্তব্য ১৪ (দুয়েক কালিমা বাদে হুবহু নস): [আরেকটা কথা বলে আমি শেষ করছি, সেটা হলো: মুজতাহাদ ফিহ মাসআলা আর মানুসুস আলাইহ মাসআলা দুইটায় ফরক আছে কি’না? মানসুস আলাইহ আর মুজতাহাদ ফিহ, মুজমা আলাইহ আর মুখতালাফ ফিহ একই স্তরের সব? যেই মাসআলাটা মুজতাহাদ ফিহ আবার মুখতালাফ ফিহ, সেই মাসআলার মধ্যে আমি একটা রায়ের উপর এসরার করতে পারি?

        আমি ঐ ভাইদের মধ্যে একজনকে জিজ্ঞেস করেছি যে, বিলাদু ইসলামিয়ার মধ্যে যে হুককাম, শাসকগোষ্ঠী, বিচার বিভাগের হুককাম আর প্রশাসনের হুককাম, এই যে হুককামকে পাইকারীভাবে –যেহেতু দেশের মধ্যে কানুনে ওয়াজয়ি আছে-; কানুনে ওয়াজয়ি ওয়ালা দেশ, গণতান্ত্রিক দেশে ঐটার হুককাম সব মুরতাদ মুরতাদ্দুন একটা মত আছে কি’না? এই মত প্রচার করা হচ্ছে কি’না এখন কওমি মাদ্রাসার ভিতরে? হচ্ছে

        তো আমি বললাম, এই মাসআলাটা কি মুজতাহাদ ফিহ? না মানসুস আলাইহি? ওয়ামান লাম ইয়াহকুম বিমা আনযাল্লাহ ফাউলাইকা হুমুল কাফিরুন- এইটা তো নস কিন্তু এই নসের মধ্যে কি কুফরে আমলি না কুফরে মুখরিজ মিনাল মিল্লাহ, লাম ইয়াহকুমের কোন সূরতের জন্য মুখরিজ মিনাল মিল্লাহ আর কোন সূরতের জন্য কুফরে আমলি কুফরুন দুওনা কুফরিন: এইখানে দুই তাফসির আছে তো? তাহলে এইখানে তো দালালতের দিক থেকে নসসে কতয়ি হইল না ঠিক না? দালালতের দিক থেকে নসসে কতয়ি হয়েছে? না তাহলে একবারে আম ভাষায়, পাইকারি হারে মুরতাদ্দুন, হুককামুল বিলাদিল ইসলামিয়া আললাতি ইয়াসুদু ফিহাল কানুনুল ওয়াদয়ি মুরতাদদুন বলা হচ্ছে কি’না? এই যে পাইকারীভাবে মুরতাদ্দুন বলা হচ্ছে, এই কওলটা গলদ কিন্তু আমি তাকে হালকা করে বললাম, গলদ এ কথা বলি নাই

        আমি বলছি, তোমাদের এই আয়াতটা কি মুজতাহাদ ফিহ না মানসুস আলাইহ? বলে মুজতাহাদ ফিহ আরে! আচ্ছা, কিচ্ছা সব কথা শেষ! যদি মুজতাহাদ ফিহ হয় তাহলে তুমি কে একবারে এই মুজতাহাদ ফি মাসআলার মধ্যে তুমি যে ইজতিহাদ গ্রহণ করলা সে ইজতিহাদ সব ছাত্রকে গিলিয়ে দিতে হবে, খাইয়ে দিতে হবে, মাদ্রাসার ইনতেজামিয়ার বিরুদ্ধে, উস্তাদদের বিরুদ্ধে? উস্তাদদের ভিন্ন ইজতিহাদ তোমার ভিন্ন ইজতিহাদ তোমার ইজতিহাদ সব কওমি মাদ্রাসার হার ফরদকে গিলায়া দিতে হবে, এইটা কে বললো? কে ফরয করেছে এটা? মুজতাহাদ ফিহ মাসআলার মধ্যে এটার অবকাশ আছে একজন তালিবুল ইলম একজন মাওলানা সাহেব, উলুমুল হাদিস পড়ছে ইফতা পড়ছে, ধরেন ভাল যি-ইস্তি’দাদ, দ্বীনি গাইরত আছে, খুব ভাল কিন্তু উনি উনার যে ইজতিহাদ বা রায়কে তারজিহ দিবেন সেইটা সবার উপর মুসাল্লাত করে দেয়ার কি অধিকার রাখেন?


        … আজকাল কোনো ইঞ্জিনিয়ার, কোনো ডাক্তার, কোনো ব্যবসায়ী, তাদের থেকে মাসআলা নিয়ে, নয় সাহাবা বিদ্বেষীদের থেকে মাসআলা নিয়ে, সেই মাসআলা সবাইকে খুব গিলাইতে চাচ্ছ, খাওয়াইতে চাচ্ছ, আর তুমি নিজেই বল সেই মাসআলা মুজতাহাদ ফিহ এইটার অবকাশ আছে? সবার উপরে মুসাল্লাত করা? তোমার রায় নিয়ে তুমি থাকো শেষ ছাত্রদেরকে তার উস্তাদদের সাথে ছেড়ে দাও ছাত্র তোমার মতো আল্লামা হলে ঠিক আছে তোমার রায় গ্রহণ করুক ছাত্রকে কেন পেরেশান কর? মা’কুল কি মা’কুল না কথাটা? তো তালিবুল ইলমদের এইটা বুঝার সালাহিয়াত হয় না কেন? এতটুকু জ্ঞান নেই কেন যে এইটা যদি আয়াতের বদিহি মাসআলা হতো, তো আমাদের হুজুররা সবাই বেখবর থাকতো এটা কেমন কথা? … কি এ সমস্ত জাহালত শুরু হয়েছে!! কিছু আকল আর বসিরত পয়দা কর] (মাগরিব বাদ বয়ান, ৩২-৩৮ মিনিট)

        অভিব্যক্তি
        ## হুজুর অন্য এক মুহাজারায় পরিষ্কার করেছেন, সাহাবি বিদ্বেষী দ্বারা উস্তাদ সায়্যিদ কুতুব রহ. উদ্দেশ্য

        ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যবসায়ী দ্বারা কারা উদ্দেশ্য বুঝতে পারলাম না

        সম্ভবত ডাক্তার দ্বারা আলকায়েদার বর্তমান আমীর শায়খ আইমান আলজাওয়াহিরি (হাফিজাহুল্লাহ) আর ইঞ্জিনিয়ার দ্বারা আলকায়েদার সাবেক আমীর শায়খ উসামা বিন লাদেন (রাহিমাহুল্লাহ) উদ্দেশ্য নিশ্চিত করে বলি না হতেও পারে, নাও হতে পারে

        তবে গাইরে আলেম হলেও উম্মতের দরদে, উম্মতের জন্য যারা নিজেদের জান জীবন ধন সম্পদ সুখ শান্তি সব কুরবানি দিয়ে দিলেন, তাদের ব্যাপারে আরেকটু নরম ভাষা ব্যবহার করলে তো হুজুর পারতেন



        আর উস্তাদ সায়্যিদ কুতুবকে হুজুর বেশ জোরেসোরে সাহাবি বিদ্বেষী বলেন উসমান রাদি.র না’কি তিনি সমালোচনা করেছেন

        এ বিষয়টা একটু ভাবা দরকার ভুলের সমালোচনা করলে কি ব্যক্তির সমালোচনা হয়? সাহাবায়ে কেরাম ভুলের উর্ধ্বে নন তাদের থেকে কিছু বিষয়ে ভুল হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক সে ভুল উম্মতের আদর্শ নয় উম্মতকে আদবের সাথে তা বুঝিয়ে বলতে হবে কেউ যদি সে ভুলের সমালোচনা করে কিন্তু করতে গিয়ে যতটুকু আদব ইহতিরাম বজায় রাখার দরকার ছিল তা রাখতে না পারে: তাহলে কি আমরা তাকে সাহাবি বিদ্বেষী বলতে পারি?


        এমনিভাবে সাহাবায়ে কেরামের কোনো মাওকিফকে যদি কেউ ভুল মনে করে অথচ বাস্তবে তা ভুল ছিল না, তাহলেও কি এ কারণে আমরা তাকে সাহাবি বিদ্বেষী বলতে পারি?

        ইমাম জাসসাস রহ. মুআবিয়া রাদি.র ব্যাপারে শক্ত কথা বলেছেন এ কারণে কি আমরা তাকে সাহাবি বিদ্বেষী বলে দিয়েছি? হুজুর তো প্রায়ই জাসসাসের হাওয়ালা দিয়ে থাকেন

        এমনিভাবে ইমাম তাবারি, নাসায়ি, হাকেম আবু আব্দুল্লাহ নিশাপুরিসহ অসংখ্য ইমামের মাঝে টুকটাক শি-ইয়্যাত ও ই’তিযাল বিদ্যমান মুআবিয়া রাদি. ও আমর বিন আস রাদি.র মতো কয়েকজন সাহাবির ব্যাপারে তাদের কেমন অবস্থান তা সকলের জানা কই, আমরা তো তাদেরকে সাহাবি বিদ্বেষী বলি না কেন বলি না?

        আসলে তারা সাহাবিদের সমালোচনা করেন না, সাহাবিদের থেকে হয়ে যাওয়া ভুলের সমালোচনা করেন এবং এমনভাবে করেন যা না করা উচিত ছিল
        উস্তাদ সায়্যিদ ‍কুতুবের বিষয়টাও আমি যতটুকু বুঝি এমনই সায়্যিদ কুতুব রহ.র কিতাবাদি তো প্রকাশ্যেই আছে দেখলেই তো বিচার করা যাবে


        আসলে সাহাবি বিদ্বেষী হচ্ছে ঢালাওভাবে শিয়া রাফিজিরা আর ছিল তখনকার খাওয়ারেজরা, যারা আলী রাদি. ও মুআবিয়া রাদি.সহ উভয় গ্রুপের সাহাবিদের কাফের মনে করতো এছাড়া আহলে সুন্নাহর কেউ সাহাবি বিদ্বেষী না ভুলের সমালোচনা আর ব্যক্তির সমালোচনা এক না কিন্তু এরপরও কেন জানি আব্দুল মালেক সাহেব হুজুর সায়্যিদ ‍কুতুবকে সাহাবি বিদ্বেষী বলে প্রচার করেন

        এক শায়খ বলেছেন, সায়্যিদ কুতুব যামানার ভাষায় তাওহিদ পেশ করেছেন তিনি সাহিত্যিক মানুষ ছিলেন যামানার কুফরি শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে ওয়াকিফহাল ছিলেন সে কুফরকে তিনি সাহিত্যের আঁচড়ে যামানার ভাষায় বোধগম্য করে মুসলিম জনসাধারণের সামনে পেশ করেছেন এ অপরাধেই তাকে আজীবন নির্যাতন সহইতে হয়েছে এবং শেষে তাগুতি আদালত তাকে ফাঁসি দিয়ে শহীদ করেছে একজন মাজলুম মুসলিমের ব্যাপারে হুজুর যদি আরেকটু নরম ভাষা ব্যবহার করতেন
        ***

        ## মুজাহিদিনে কেরাম ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার থেকে মাসআলা নেন না, ডাক্তার ইঞ্জিনিয়াররা নিজেরাও মাসআলা দেন না জিহাদ গোটা উম্মাহর উপর ফরয উম্মাহর ডাক্তার ইঞ্জিনিয়াররা উম্মাহর গ্রহণযোগ্য উলামাদের ফতোয়ার উপর ভিত্তি করে জিহাদে নেমেছে পাশাপাশি নিজেরাও জিহাদে নিয়ে পড়াশুনা করেছে জেনেছে বুঝেছে নিজেদের সব কিছু জিহাদের পথে, দ্বীনের পথে কুরবান করেছে

        ## আমরা আলেম বলতে যারা মাদ্রাসায় পড়েছে, দাওরা ইফতা বা এমন কোনো সনদ আছে তাদেরকে বুঝি সমাজে স্বাভাবিক এমন লোকদেরকেই আলেম মনে করা হয় কিন্তু যতটুকু জানি হুজুরের মাওকিফ এমন না দাওরা পাশ করে বেড়িয়ে গেলেই হুজুর আলেম মনে করেন মনে হয় না বর্তমানে যারা দাওরা ইফতার সনদ গ্রহণ করে, যোগ্যতার বিচারে তাদের ক’জনকে আলেম বা মুফতি বলা যায়?

        আলেম, মুফতি- এগুলো তো মূলত যোগ্যতার নাম যদি যোগ্যতার হিসাব হয়, তাহলে প্রচলিত মাদ্রাসায় পড়েছে কি’না তার হিসাব হবে না হিসাব হবে যোগ্যতার এ দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে হুজুর যাদের ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার ব্যবসায়ী বলছেন, তাদের অনেকেই প্রচলিত হাজারো আলেমের চেয়ে বড় আলেম ধর্তব্য হবেন
        আরব বিশ্বে আলেম হওয়ার জন্য আমাদের উপমহাদেশের মতো আলাদা মাদ্রাসা নেই সেখানে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, তারাই আলেম হতে পারে, আবার তারাই ইঞ্জিনিয়ার হতে পারে

        এরপরও বলি, মুজাহিদিনে কেরাম ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ারদের থেকে মাসআলা নেয় না, নেয় মানহাজ। শায়খ উসামা বা জাওয়াহিরি থেকে মুজাহিদরা মাসআলা নেয় না, নেয় মানহাজ, কাজের পন্থা আর কর্মপন্থা তো অভিজ্ঞতার বিষয় তার জন্য আলেম হওয়া জরুরী না, এমনকি মুসলিম হওয়াও জরুরী না ইসলাম এ ব্যাপারে উদার এটি জাগতিক বিষয় জাগতিক বিষয় কারও নিজের কামাই না, আল্লাহর দান আল্লাহ তাআলা যেখানে যেটা রেখেছেন সেখান থেকে সেটা গ্রহণ করে সমৃদ্ধ কর্মপন্থা গ্রহণ করাই শরীয়তের নির্দেশ

        এ কারণে আমরা দেখতে পাই:
        • খন্দকের যুদ্ধে রাসূল পরিখা খনন করেছেন এ পরিখা খনন আরবের মাঝে প্রচলিত ছিল না পারস্যের অগ্নিপূজারি মুশরিকদের তরিকা এটা রাসূল সেটাই গ্রহণ করেছেন
        • রাসূল সাহাবায়ে কেরামকে দাব্বাবা (তখনকার যামানার এক প্রকার ক্ষেপণাস্ত্র জাতীয় যুদ্ধাস্ত্র) শিখার জন্য জুরাশে পাঠিয়েছেন
        • উমর রাদি. সর্বপ্রথমি আদমশুমারি ও দিওয়ান ব্যবস্থা জারি করেন এটিও মূলত তখনকার কাফেরদের তরিকা ছিল
        • একই কারণে সমরবিশেষজ্ঞগণ মাওঁ সেতুং থেকে গেরিলা যুদ্ধের পদ্ধতি গ্রহণ করেন
        এ হচ্ছে মানহাজ কাজের পন্থা যারা এ বিষয়ে অভিজ্ঞ তাদের থেকে তা গ্রহণ করা হবে

        ইসলামের ইতিহাসে খালিদ বিন ওয়ালিদ রাদি. ইলমের ময়দানের বড় কেউ না, কিন্তু যুদ্ধ বিদ্যায় তার জুরি নেই এজন্য রাসূল আলাইহিস সালাম ও আবু বকর রাদি. তাকেই আমীর বানাতেন, যদিও তার থেকে বেশ কিছু ভুলভ্রান্তি ঘটে যেতো

        হুজুর সায়্যিদ আহমাদ শহীদ রহ.র জিহাদকে ফিতরি জিহাদের মডেল হিসেবে পেশ করেন (যদিও এ বিষয়ে আমার আপত্তি আছে, আপাতত সেদিকে যাচ্ছি না) সায়্যিদ আহমাদ শহীদ রহ. তো আলেম নন আমরা তার থেকে মাসআলা নেব না, নেব মানহাজ কাজের পন্থা মুজাহিদরা এমনটাই করেন আলহামদুলিল্লাহ মাসআলা আলেমদের থেকে নেন; মানহাজ সমরবিশেষজ্ঞ উলামা, উমারা ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ থেকে নেন
        ***

        ## আর তাকফিরের ব্যাপারে কথা হলো, মুজাহিদিনে কেরাম আলহামদুলিল্লাহ তাকফিরের ক্ষেত্রে আহলুস সুন্নাহর মাযহাব মেনে চলেন তবে আমাদের উচিত খাওয়ারেজদের আইএসের মানহাজ দিয়ে সবাইকে বিচার না করা

        হুজুর তাকফিরে হুককামের মাসআলা এনেছেন হুজুর অন্য এক মুহাজারাতেও ব্যাপারে কথা বলেছেনহুজুরের কথা থেকে বুঝা যাচ্ছে একমাত্র আয়াত ছাড়া অন্য কোনো দলীল নেই আসলে বিষয়টি এমন নয় অনেক দলীলের মাঝে এটিও একটি দলীল এজন্য এক শায়খ বলেছেন: ‘অনেকে আয়াতটি নিয়ে সংশয় সৃষ্টি করে এজন্য তাকফিরে হুককামের ক্ষেত্রে আয়াতটি দিয়ে আমি দলীলই দিই না

        আয়াতের কিছু সূরত কুফরে আমলি আর কিছু সূরত মুখরিজ মিনাল মিল্লাহ মুজাহিদিনে কেরাম ঢালাওভাবে সব সূরতকে মুখরিজ মিনাল মিল্লাহ বলেন না, বিশেষ সূরতকে বলেন

        আর হুজুর যেভাবে পেশ করছেন যে, ঢালাওভাবে সব মুরতাদ: আসলে মুজাহিদিনে কেরামের মাসআলা এমনটাও না কারণেই ইসলামী দলগুলোকে তাকফির করা হয় না বিচারকদেরকেও সবাই কাফের বলেন যে তা না এমনকি কোনো কোনো শাসককেও কাফের বলেন না, যাদের নিয়ত ভাল বুঝা যায় যেমন জিয়াউল হককে আব্দুল্লাহ আযযাম রহ. কাফের বলেননি কারণ, সার্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে বুঝা যায়, তিনি সামর্থ্য পেলে ইসলাম কায়েম করতেন সামর্থ্য না থাকায় যতটুকু পেরেছেন করেছেন হুজুর যেভাবে পাইকারি হারের কথা বলছেন আসলে সে রকম না

        তবে এখানে একটা লক্ষণীয় বিষয় হলো: দাওয়াত ওয়াজ এক জিনিস, ফিকহি হুকুম আরেক জিনিস গণতন্ত্র কুফর, শাসকরা মুরতাদ: এগুলো মূলত দাওয়াতের ভাষা, ওয়াজের ভাষা দাওয়াতের সময় বিষয়টি এভাবে ভয়াবহ করে পেশ করাই কাম্য ফিকহি তাহকিক তাদকিকের সময় অনেকে মুস্তাসনা হবে সেটা ভিন্ন কথা

        ## তাগুত শাসকরা কাফের: মাসআলাটি যতটুকু বুঝতে পারছিহুজুরের দৃষ্টিতে মুখতালাফ ফিহও না বরং বলতে গেলে অনেকটা মুজমা আলাইহি যে, তারা কাফের না

        আসলে শত বছরের কুফরি তাগুতি শাসন আমাদের মন মনন মস্তিষ্ক সব পরিবর্তন করে দিয়েছে ঈমান আমলের পাশাপাশি ইলমের ময়দানেও ভয়াবহ অধঃপতন হয়েছে যে কারণে এক সময় যেসব মাসআলা উম্মাহর কাছে স্বীকৃত মুজমা আলাইহি ছিল, আজ সেগুলোর কথা মানুষ জানেও না জানলেও সন্দেহযুক্ত মনে হয় তাগুত শাসকরদের মাসআলটার ব্যাপারে এমনটাই ঘটেছে যেখানে শুধু কুফরি আইন অনুযায়ী বিচার চাইতে গেলেই বেঈমান হয়ে যাবে বলে উম্মাহর উলামায়ে কেরাম ফতোয়া দিয়ে রেখেছেন, সেখানে স্বয়ং সে শাসকের হুকুম কি হবে তা তো বলাই বাহুল্য কিন্তু যামানার আবর্তনে অনেক কিছুই বিকৃতির শিকার

        ## হুজুর মুখতালাফ ফিহ মাসআলার একটি উসূল বয়ান করেছেন যে, নিজের রায় অন্যের উপর চাপিয়ে দেয়া যায় না

        কথা সঠিক কিন্তু যেমনটা আগেও বলেছি- আমি যেমন আমার রায় অন্যের উপর চাপাতে পারবো না, আমার উপরও অন্য কেউ তার নিজের রায় চাপাতে পারবে না কিন্তু এখন তো অবস্থা দাঁড়িয়েছে: মুজমা আলাইহ, মানসুস আলাইহ, সুস্পষ্ট কুরআন সুন্নাহর মাসআলা বলতে গেলেও আমাকে বহিষ্কার করা হয় জিহাদের কথা বলাই তো অপরাধ, হাকিমিয়ার মাসআলা তো পরের কথা

        আরাকান, আফগান, কাশ্মির, ইরাক, শাম: এসব ভূমিতে জিহাদ ফরয হওয়ার ব্যাপারে কার সন্দেহ আছে? কিন্তু আমাকে সেটাও কি বলতে দেয়া হয়? বা মানসিকতা রাখতে দেয়া হয়?

        হয়তো বলবেন, সরকারের ভয়ে নিষেধ করা হয়; উত্তরে বলবো: কথাটা বিশ্বাস করতে পারলাম না পূর্ণ যারা সরকারের ভয়ে নিষেধ করেন, তারা আমাকে গোপনে ডেকে নিয়ে বলেন, বাবা পরিস্থিতি ভাল না, মাদ্রাসায় এগুলো বলতে গেলে মাদ্রাসা বন্ধ হয়ে যাবে তুমি ফারেগ হয়ে গিয়ে নিজের মতো করে কাজ করো

        পক্ষান্তরে যারা আমাকে জিহাদের নাম উচ্চারণ করার মহা (!) অপরাধে জনসম্মুখে পিটিয়ে বহিষ্কার করে দেয়, আমি কি বিশ্বাস করতে পারি যে, তিনি সব কিছু মানেন, শুধু সরকারের ভয়ে ….??

        যদিও জিহাদের মাসআলার অনেক কিছুই মুজমা আলাইহি, তথাপি ধরলাম অনেক বিষয় মুখতালাফ ফিহ আছে সেগুলোর ক্ষেত্রে আমি আমার মতো আমল করবো, আরেকজন তার নিজের মতানুযায়ী আমল করবে যেমন তাকফিরের মাসআলা যদি ধরি, তাহলে দলীল প্রমাণের আলোকে কারও মনে হতে পারে যে, এসব শাসক মূলত ব্রিটিশ, আমেরিকা, ভারতের এজেন্ট তাদের কুফরি ধর্ম (আধুনিক সংবিধানের নামে) মুসলিমদের উপর চাপিয়ে দিতে এসব শাসককে তারা ব্যবহার করছে এরা মূলত মুসলিম উম্মাহর কেউ না এরা দ্বীনে ইসলামকে অবশ্যপালনীয় মনে করে না, বরং মানবতার সাথে সাংঘর্ষিক মনে করে এমন লোক ঈমানদার হতে পারে না এরা বেঈমান

        যাদের বিশ্বাস এমন, তারা এদেরকে মুরতাদ মনে করবে, এদের বিরুদ্ধে কিতাল করা ফরয মনে করবে সে অনুযায়ীই হবে তাদের কর্মপন্থা

        পক্ষান্তরে যারা দলীল প্রমাণের আলোকে এদেরকে বিদেশীদের এজেন্ট বা বেঈমান মনে করবে না বা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জিহাদ আবশ্যক মনে করবে না, তাদের কর্মপন্থা হয়তো সে রকম হবে না। কিন্তু যারা জিহাদ ফরয মনে করে তাদেরকে বাধায় দিতে পারবে না প্রত্যেকে আপন মতানুযায়ী আমল করবে যেমনটা থানবি রহ. বলেছেন,
        کسی امر موجبِ کفر کی دلالت علی الکفر یا اس امر موجب کفر کا ثبوت قرائن مقامیہ یا مقالیہ کے اختلاف سے مختلف فیہ ہو سکتا ہے۔ اور خود قطعیت بھی کبھی مختلف فیہ ہو سکتی ہے کحرمۃ متروک التسمیۃ عامداً اسی طرح کبھی اجماع مختلف فیہ ہو سکتا ہے ۔۔۔اس صورت میں ہر عامل اپنے عمل میں معذور ہوگا۔ امداد الفتاوی جدید ۔ جدید مطول حاشیہ شبیر احمد القاسمی جلد 11 صفحہ نمبر: 167
        “কোনো কুফরি বিষয় পরিষ্কার কুফর বুঝাচ্ছে কিনা এবং কুফরি বিষয়টি (ব্যক্তি থেকে) সুস্পষ্ট প্রমাণিত কিনা; কথাবার্তার ধরন পারিপার্শ্বিক অবস্থার ভিন্নতার ভিত্তিতে তাতে মতভেদ হতে পারে তদ্রূপ বিষয়টি অকাট্য কুফর কিনা তাতেও মতভেদ হতে পারে ... বিষয়টি সর্বসম্মত মুজমা আলাইহি কুফর কিনা তাতেও দ্বিমত হতে পারে ধরনের ক্ষেত্রে যে ব্যক্তি যে মত অনুযায়ী আমল করবে, সেক্ষেত্রে তাকে মাজুর ধরা হবে (সমালোচনা করা যাবে না) -ইমদাদুল ফাতাওয়া (জাদিদ): ১১/১৬৭

        মুজতাহাদ ফিহ মুখতালাফ ফিহ বিষয়ের এটিই হলো মূলনীতি কিন্তু এখন অবস্থা দাঁড়িয়েছে, জিহাদের বিষয়ে কোনো উসূল জাওয়াবিত নাই জিহাদ শব্দটাই অপরাধ

        ## হুজুর বলেছেন, “তোমার রায় নিয়ে তুমি থাকো শেষ ছাত্রদেরকে তার উস্তাদদের সাথে ছেড়ে দাও ছাত্র তোমার মতো আল্লামা হলে ঠিক আছে তোমার রায় গ্রহণ করুক ছাত্রকে কেন পেরেশান কর?”

        আসলে জিহাদ কাউকে জোর করে গ্রহণ করানো হয় না প্রত্যেকে নিজের ইচ্ছায় গ্রহণ করে যে কাজে পা দিলেই মরণের ভয়, তা কি কাউকে কেউ জোর করে গ্রহণ করাতে পারে? তাছাড়া মুজাহিদিনে কেরামের নিজেদেরই তো মাথা গুঁজার ঠাই নাই, আরেকজনকে কিভাবে জিহাদে আসতে বাধ্য করবে?

        বরং তানজিমুল কায়েদার তো উসূল হলো, কেউ নিজে থেকে আসতে চাইলেও না নেয়া
        সর্ব দিক বিচেনায় প্রয়োজন মনে করলে নেয়া হবে, নয়তো নেয়া হবে না কোনো তালিবুল ইলমকে পেরেশান করে মুজাহিদিনে কেরাম কাউকে নেয় না আলহামদুলিল্লাহ বরং মুজাহিদিনে কেরামই পদে পদে পেরেশানির শিকার হন


        ## হুজুর বলেছেন তালিবুল ইলমদেরকে উস্তাদদের হাতে ছেড়ে দিতে যতটুকু বুঝতে পারছি এ কথার উদ্দেশ্য: উস্তাদদের যে মত, যে রায়, তালিবুল ইলমরা সে মত গ্রহণ করে থাকতে চাইলে আমরা যেন তাদেরকে সে মত থেকে ঘুরানোর চেষ্টা না করি

        যদি এমনটাই উদ্দেশ্য হয়, তাহলে এখানে কিছু কথা আছে:
        * এমন অনেক উস্তাদ আছেন আলহামদুলিল্লাহ যারা প্রচলিত জিহাদে বিশ্বাসী সেসব উস্তাদের ভক্ত ছাত্র যারা আছে, তাদেরকে কি তাদের উস্তাদের জঙ্গিবাদি মত গ্রহণে স্বাধীনতা দেয়া হবে? না হবে না? হুজুরের কথামতো তো স্বাধীনতা দেয়ার কথা যদি এমনটাই হয়, তাহলে জঙ্গি উস্তাদ শাগরেদদেরকে কেন স্বাধীনতা দেয়া হয় না? কেন তাকফিরের মাসআলা উঠানোই বা জিহাদের কথা বলাই অপরাধ?

        * “ছাত্র তোমার মতো আল্লামা হলে ঠিক আছে তোমার রায় গ্রহণ করুক” এ উসূলটি কি শুধু জিহাদের মাসআলায়? না সব মাসআলায়? ধরুন ব্যাংকের কোনো মাসআলায় দুইজন আলেমের দ্বিমত হলো। একজন বলছেন জায়েয, অন্যজন বলছেন নাজায়েয। একজন তালিবুল ইলম উভয় আলেমের শাগরেদ। সে কোনটা গ্রহণ করবে? দুই উস্তাদের কোনো একটা গ্রহণ করার অধিকার তার আছে কি? না’কি যে উস্তাদের রায় গ্রহণ করতে চাইবে, আগে তাকে সে উস্তাদের মতো বড় আল্লামা হতে হবে? এখানে তো কেউ বলবে না যে, এখন সে জায়েয নাজায়েয কোনোটাই গ্রহণ করতে পারবে না, আগে তাকে দুই উস্তাদের কোনে একজনের মতো আল্লামা হতে হবে, তারপর গ্রহণ করবে। জীবনের বহু মাসআলাতেই উস্তাদদের দ্বিমত হবে, তখন সে আল্লামা হওয়ার আগ পর্যন্ত চলবে কিভাবে? আর যারা সাধারণ মানুষ তারাই বা চলবে কিভাবে? অন্য সব মাসআলায় যদি একটা গ্রহণ করতে উস্তাদের সমান আল্লামা হতে না হয়, তাহলে জিহাদের মাসআলায় কেন এমন শর্ত? তাহলে কি আমরা জিহাদ বন্ধ করে দেয়ার পথে হাঁটছি?

        * “ছাত্রদেরকে তার উস্তাদদের সাথে ছেড়ে দাও কথাটা রাগের মাথায় হুজুর বলেছেন। হুজুর কি বলবেন যে, ফরিদ মাসউদের শাগরেদদেরকে ফরিদ মাসউদের হাতে ছেড়ে দেয়া হোক?

        অনেক উস্তাদ আছে, যাদের না মাসআলার জ্ঞান আছে, না বাস্তব দুনিয়ার কিছু জ্ঞান আছে। গতানুগতিক কিতাব পড়া পড়ানোর বাইরে কিছু ‍বুঝে না। এমনকি কোনো ইলমী সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিতে গেলেও তারা বাধ সাধেন। হুজুর কি বলবেন, শাগরেদদেরকে এমন উস্তাদের হাতে ছেড়ে দেয়া হোক?

        উস্তাদদের মধ্যে কোনো মুনাফিক থাকা বা ইয়াহুদিদের মানস সন্তান মুহাররিফ থাকা এবং দ্বীন বিক্রি করে দুনিয়াকামানেওয়ালা থাকার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যায় না। শাগরেদদেরকে তাদের হাতে ছেড়ে দেয়ার কথা হুজুর সমর্থন করবেন? আসলে এটা কোনো উসূলই না, এটা রাগের মাথার কথা।

        ## “যদি মুজতাহাদ ফিহ হয় তাহলে তুমি কে একবারে এই মুজতাহাদ ফি মাসআলার মধ্যে তুমি যে ইজতিহাদ গ্রহণ করলা সে ইজতিহাদ সব ছাত্রকে গিলিয়ে দিতে হবে, খাইয়ে দিতে হবে, মাদ্রাসার ইনতেজামিয়ার বিরুদ্ধে, উস্তাদদের বিরুদ্ধে?”

        মুজাহিদিনি কেরাম কাউকে খাইয়ে গিলিয়ে দেন না, প্রত্যেকে নিজেই খায়, নিজেই গিলে কিন্তু আমি কি আমারটা বলার অধিকার রাখি না? বর্তমানে জিহাদের বিষয়টা শুধু কিতাবের পাতায় সীমাবদ্ধ থাকার মতো বিষয় না আমলী ময়দানের বিষয় আমি মনে করি এসব শাসকের বিরুদ্ধে জিহাদ ফরয এরা দ্বীনের দুশমন এদেরকে না সরালে দ্বীন প্রতিষ্ঠা সম্ভব না আমি আমার মতের কথা কি কাউকে বলতে পারবো না যে, ভাই আমার এই মত, আপনি কি বলেন? এরপর সে আমার মত সমর্থন করতেও পারে, নাও করতে পারে না করলে তার মতো সে চলবে, আমি আমার মতো চলবো কিন্তু আমার অভিমত বলার কারণে আমাকে অপরাধী বলা হচ্ছে কেন? এটা কোন উসূল?
        ***
        আসলে এখানে আরও কিছু কথা আছে হুজুর তাকফিরের মাসআলাটা হাইলাইট করছেন আমরা তাকফিরের মাসআলা আপাতত বাদ দিলাম তাকফিরের মাসআলা বাদ দিলেই কি কিচ্ছা খতম?

        আরাকান, কাশ্মির, ভারত, আফগান, ইরাক, শাম, তুর্কিস্তান: পৃথিবীর অসংখ্য মুসলিম ভূমি কাফেরদের দখলে এবং মুসলিমরা ফিলহাল কাফেরদের হাতে চরমভাবে নির্যাতিত এই নির্যাতিত মুসলিমদের জন্য আমার করণীয় কি? এদের জন্য কি জিহাদ করা জরুরী না? এই জিহাদের কথা কি আমি বলতে পারছি? এখানে কি সমস্যা? এটা বলতে গেলে কেন আমি অপরাধী?

        আমাদের এই শাসকগুলো শরীয়াহ কায়েমের পূর্ণ সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও শরীয়াহ কায়েম করছে না আমি যদি বলি শরীয়াহর কথা, আমি হয়ে যাবো তাদের দৃষ্টিতে দুনিয়ার সবচে’ বড় বিদ্রোহী সবচে’ বড় অপরাধী আমার কোনো নিরাপত্তা নাই, নাই কোনো অধিকার আমার জানমাল তাদের জন্য হালাল

        দুনিয়ার যত জায়গায় শরীয়াহর আওয়াজ উঠেছে, এই শাসকগোষ্ঠী তত জায়গায় তাদেরকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে তাবত কুফফার বিশ্বের সাথে মিলে এদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে

        দুনিয়ার যত জায়গায় মুসলিম নির্যাতিত, কোথাও আমি কিছু করতে পারছি না প্রধান বাধা এই শাসকগোষ্ঠী
        এরা আমাকে সব ধরনের কুফর ও ফিসকের বেলায় সহায়তা দেবে কুফরের দরজা, পাপাচারের দরজা এরা জাতির জন্য উন্মুক্ত করে দিবে সর্ব প্রকারের সহযোগিতার দরজা তারা কাফের মুরতাদ বেঈমানদের জন্য খোলা রাখবে, কিন্তু আমি আমার নিজের ফ্যাক্টরিতে নামায বাধ্যতামূলক করতে গেলেও তারা বাধা দিবে

        তাকফিরের মাসআলা যদি হুজুর মুখতালাফ ফিহ মনে করেন, তাহলে তাতে দ্বিমত করতে পারেন; কিন্তু এই তাগুত শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে হাতিয়ার উঠানো, এদের বিরুদ্ধে জিহাদের আওয়াজ উঠানো কি শরীয়তে নাজায়েয? হুজুর কি কতয়িভাবে নাজায়েয বলতে পারবেন? কাফের হিসেবে হাতিয়ার উঠালাম না, অন্য সব দিক বিবেচনা করে উঠালে কি নাজায়ে হবে কতআন? আমার বোন আরাকানে, কাশ্মিরে, হিন্দে ধর্ষিত হতে থাকবে; আমি জিহাদে যেতে চাইলে তাগুত আমাকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে আমার জান মাল হালাল ঘোষণা দেবে: এদের বিরুদ্ধে অস্ত্র উঠালে নাজায়েয হবে?

        আসলে এসব শাসক কাফেরদের বাহিনি কাফেররা নিজ নিজ ভূখণ্ডের মুসলিমদের নিজেরা নিপীড়ন করে, আর বাহির থেকে যাতে কোনো মুসলিম সাহায্যের জন্য যেতে না পারে সেজন্য এসব শাসককে খড়গ হাতে পাহারায় বসিয়ে দিয়েছে আমি এদের খড়গ প্রতিহত করতে গেলে তাদের কাছে আমি হয়ে যাবো সন্ত্রাসী, আর উস্তাদের কাছে হয়ে যাবে পথভ্রষ্ট, গোমরাহ, জযবাতি হায়রে বিচার!!

        বেশির চেয়ে বেশি বলতে পারেন, এসব শাসকের হুকুম কি হবে তাতে দ্বিমত হতে পারে কিন্তু দুঃখের বিষয় এসব কথা হুজুরদের সামনে উঠানোই যায় না এসব বিষয়ে কোনো কথাই বলা যায় না এরপরও অভিযোগ আমি আমার নিজের মত সবার উপর চাপিয়ে দিতে চাচ্ছি বাস্তব কথা হলো, দলীল এবং বাস্তবতার তোয়াক্তা না করে ছাত্ররা গিলতে না চাইলেও উস্তাদরা জোর করে নিজেরা যা চান সবাইকে গিলাতে চান। যার ফলে ছাত্র উস্তাদের এই টানা-পোড়ন সৃষ্টি হয়েছে নতুবা ছাত্র উস্তাদ সবাই যদি উম্মাহর এহেন জরুরী বিষয়গুলো সামনে নিয়ে দলীল ও বাস্তবতার আলোকে কি পদক্ষেপ নেয়া যায় বসতেন- তাহলে এ টানাপোড়ন সৃষ্টি হতো না
        ***

        বক্তব্য ১৫ (দুয়েক কালিমা বাদে হুবহু নস): [আচ্ছা, এরপরে বলে দারুল হরব সব দারুল হরব ওরে আল্লারে! সব দারুল হরব! এক দেশ ছাড়া সব কি? দারুল হরব আচ্ছা তো আবার এইটা কেন? এই দারুল হরবের মাসআলা কি মুজতাহাদ ফিহ না মানসুস আলাইহ? ওইটা যদি হয় মুজতাহাদ ফিহ এইটাও কি হবে? ওই কারণেই তো এইটাকে দারুল হরব বলে আগের মাসআলার কারণেই তো দারুল হরব বলবে ঐটা তো মুজতাহাদ ফিহ মাসআলা অথচ এটা এতো দাকিক এবং নাজুক মাসআলা!

        এটাকে দারুল হরব নাম দিলেন আপনি, নাম দেয়ার পরে হুকুম কি? বলে দিলেন দারুল হরব, তার পরে করণীয় কি? ওইটা কি দিয়েছেন? করণীয়টা পেশ করেছেন? আপনি করণীয়টা করেছেন? আপনি নিজে করেছেন করণীয়টা? এগুলোকে বলে শুযুয লা-ইয়ানি মিন হুসনি ইসলামিল মারয়িতরকুহু মা-লা-ইয়ানি সূরাতান তাহকিক, সূরাতান ইলম, এমনে এগুলো ইলম না, এগুলো লা ইয়ানি মহজ নেজা, মহজ জিদালমুজতাহাদ ফিহ হলে তুমি তোমার রায় সবার উপর মুসাল্লাত করতে পার না অন্য কাউকে বলতে পারো না এরা জিহাদ বিরোধী এরা হক বিরোধী এরা ইলম বিরোধী এরা গাফেল, মুদাহিন] (মাগরিব বাদ বয়ান, ৩৮-৪০ মিনিট)

        অভিব্যক্তি
        মাসআলায় দ্বিমত হলেই জিহাদ বিরোধী, হক বিরোধী, ইলম বিরোধী, গাফেল, মুদাহিন বলে দেওয়া শরীয়তেও জায়েয নেই, মুজাহিদদের মানহাজেও তা নিষেধ দুয়েক জনের ভুল আচরণ গোটা জামাতের উপর চাপানো ঠিক না

        আমি এখানে একজন মুজাহিদ শায়খের বিবৃতি উল্লেখ করছি শায়খ আবু মুসআব উমাইর আল-আওলাক্বী রহ. বলেন,
        قد يقول قائل: إذا كنتم تقولون يسع الخلاف في التنزيل فلماذا القاعدة تشنع على العلماء الذين لا يكفرون الحكام؟ نقول: هذا سؤال جيد ولابد من بيانه، فأقول: إن القاعدة لا تشنع على كل من لم يكفر الحكام، فعندهم الذين لا يكفرون الحكام من العلماء على قسمين:-
        أ عالم بعيد عن سلطانهم، تجرد واجتهد ولم يصل إلى تكفيرهم، ولم يُستخدم كوسيلة لحرب المجاهدين، فهذا يقدر عند القاعدة وله اجتهاده.
        ب عالم لم يكفر الحكام واستُخدم لحرب المجاهدين، ووصفهم بالفئة الضالة ومدح الطواغيت وخذل الأمة الإسلامية، فهذا الذي تحذر منه القاعدة؛ لأن ضرره على الأمة خطير. -لماذا اخترت القاعدة؟ ـ أبي مصعب محمد عمير الكلوي العولقي، ص: 46
        “হয়তো কেউ আপত্তি উঠাতে পারে যে, আপনারা যখন বলে থাকেন, ফতোয়া প্রদানের ক্ষেত্রে মতবিরোধের অবকাশ রয়েছে, তখন যেসব আলেম শাসকদেরকে কাফের মনে করে না, আলকায়েদা তাদের সমালোচনা করে কেন?

        উত্তরে বলবো, এটি একটি সুন্দর প্রশ্ন এটি স্পষ্ট করা জরুরী আমি বলি, শাসকদেরকে কাফের বলে না এমন সকলেরই আলকায়েদা সমালোচনা করে না যেসকল আলেম শাসকদেরকে কাফের মনে করে না, আলকায়েদার দৃষ্টিতে তারা দুই ভাগে বিভক্ত:

        . এমন আলেম যিনি শাসকদের থেকে দূরে ঐকান্তিক চেষ্টা গবেষণা সত্বেও যার কাছে শাসকরা কাফের বলে মনে হলো না তবে তাকে মুজাহিদদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের কোন মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা যাচ্ছে না আলকায়েদা তার কদর করে তিনি তার নিজের ইজতিহাদ মতো চলবেন

        . এমন আলেম যে শাসকদেরকে কাফের মনে করে না, তবে মুজাহিদদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে তাদেরকে গোমরাহ ফেরকা বলে আখ্যায়িত করছে তাগুতদের প্রশংসা করছে প্রয়োজন মুহূর্তে মুসলিম উম্মাহকে সাহায্য করছে না এই আলেমের ব্যাপারেই আলকায়েদা সতর্ক করে থাকে কেননা, উম্মতের জন্য সে মারাত্নক ক্ষতিকর।” -লিমা যা ইখতারতুল কায়েদা: ৪৬

        হল মুজাহিদদের মানহাজ যদি কেউ এর ব্যতিক্রম করে, সেটা মুজাহিদদের উপর চাপানো ঠিক হবে না

        দ্বিতীয়ত: দারুল হারব হওয়া না হওয়ার ব্যবধানে শাসকদের বিরুদ্ধে কিতালে কোনো ব্যবধান আসবে না এসব রাষ্ট্র দারুল হারব হলেও শাসকদের বিরুদ্ধে কিতাল করতে হবে, না হলেও করতে হবে হ্যাঁ, জুযয়ি কিছু মাসআলায় ব্যবধান আসবে, সেটা ভিন্ন কথা

        তৃতীয়ত: দারুল হারবের মাসআলাটাকে হুজুর এত বেশি খতরনাক কেন ভাবছেন বুঝতে পারছি না যতটুকু বুঝতে পারছি, দারুল হরব নাম দিলে বিশেষ একটা করণীয় চলে আসবে, সে করণীয়টা করা অত সহজ হবে না মনে করছেন হুজুর কিন্তু প্রশ্ন, বাস্তবে যদি দারুল হারব হয়ে থাকে, তাহলে শুধু নাম না দেয়ার কারণে কি হুকুমে ফরক হবে? করণীয়তে ফরক হবে? দারুল হারব হয়ে যাওয়ার পর আমি নাম দিলাম না দারুল হারব, তাই বলে কি করণীয় বদলে যাবে? করণীয় তো নামের সাথে সম্পৃক্ত না, করণীয় তো বাস্তবের সাথে সম্পৃক্ত- নাম যাই হোক

        তাছাড়া করণীয় করতে পারবো না- এই ভয়ে কি হুকুম বয়ান করাও তরক করতে হবে?

        যেমন ধরুন একটা লোক খতমে নবুওয়াতের আকিদা পরিত্যাগ করে গোলাম আহমদ কাদিয়ানিকে নবী মেনে কাদিয়ানি হয়ে গেল সে মুরতাদ এ মত থেকে ফিরে না আসলে তাকে হত্যা করা জরুরী

        আমি তাকে মত থেকে ফিরিয়ে আনতে পারবো না বা তাকে হত্যা করতে পারবো না- তাই বলে কি আমি তাকে মুরতাদ আখ্যা দিতে পারবো না? আমি তাকে সমাজে একজন মুসলিম হিসেবেই প্রকাশ করবো? কিংবা অন্য দশজন লোক তাকে মুসলিম বললে, তার সাথে বিবাহ শাদির মুআমালা করলে আমি কি চুপ করে থাকবো কিংবা সমর্থন করে যাব?

        তাছাড়া মুজাহিদিনে কেরাম দারুল হারব বলেই ক্ষান্ত থাকেননি, করণীয়টাও বলেছেন সে করণীয় সামনে রেখে কাজও করে যাচ্ছেন আলহামদুলিল্লাহ।

        সবচেবড় কথা হলো, দারুল হারব হয়ে গেলে বিশেষ কোনো করণীয় সামনে চলে আসবে, আর না হলে আসবে না- এমন না

        অনেকে মনে করেন, দারুল হারব হয়ে গেলে সেখান থেকে হিজরত করা জরুরী সেখানে অবস্থান করা নাজায়েয হুজুর কি এমন কোনো মত পোষণ করেন কিনা জানি না তবে বাস্তব হচ্ছে মাসআলা গলদ মুজাহিদিনে কেরাম বলেন না যে, দারুল হারব হয়ে গেলে আর সেখানে থাকা জায়েয নেই বরং মুজাহিদিনে কেরামের মানহাজ তো হলো, প্রত্যেকে নিজ নিজ দেশে থেকে সেখানে জিহাদ কায়েমের ফিকির করবে একান্ত বিশেষ কোনো দরকারে কাউকে হিজরত করতে হলে শুধু সেই হিজরত করবে অন্য সকলে নিজ নিজ ভূমিতে জিহাদ কায়েমের ফিকির করবে দারুল হারব হয়ে গেলেই হিজরত করতে হবে এমন কথা মুজাহিদিনে কেরাম বলেন না শরীয়তেরও এটি মাসআলা না।

        হাঁ, দারুল হারব থেকে হিজরত করে দারুল ইসলামে চলে যাওয়ার সুযোগ থাকলে সেটা ভিন্ন কথা ধরনের ক্ষেত্রে চলে যাওয়াটা মু্স্তাহাব- যদি দারুল হারবে দ্বীন পালনের সুযোগ থাকে সুযোগ না থাকলে হিজরত করা ওয়াজিব সে ওয়াজিব মূলত দারুল হারব হওয়ার কারণে না, দ্বীন পালন না করতে পারার কারণে ধরনের হিজরত অনেক সময় দারুল ইসলামেও আবশ্যক হয় যেমন দারুল ইসলামের কোনো এলাকা চরম বিদআতি কিংবা পাপাচারে ভরা ঈমান আমল বাঁচানোই কষ্ট ধরনের জায়গা থেকে ভাল জায়গায় হিজরত করা আবশ্যক

        অতএব, কোনো ভূমি দলীলের আলোকে দারুল হারব হয়ে গেলে, সেটা বয়ান করাই কাম্য সে বয়ান করাটাও এক প্রকার করণীয় এর বাহিরে আরও যেসব করণীয় আছে, সেগুলো শক্তি থাকলে ফিল হাল করবে, শক্তি না থাকলে শক্তি সঞ্চয় করবে এটি লা-ইয়ানিহওয়ার কোনো কারণ দেখছি না

        এখানে ইমাম জাসসাস রহ. (৩৭০ হি.) এর একটি বক্তব্য তুলে ধরা সমীচিন মনে করছি। বাতিনি ফেরকার হুকুম বয়ান করতে গিয়ে তিনি বলেন,
        وأما قوله عليه الصلاة والسلام ...: "قاتلوا من كفر بالله": فإنه يدل على وجوب قتال جميع أصناف الكفار وقتلهم، وأن أحدًا منهم لا يقر على ما هو عليه من الكفر إلا بالجزية ممن يجوز أخذ الجزية منهم، وإلا: فالإسلام أو السيف، كنحو من يعطي الإقرار بجملة التوحيد وتصديق النبي عليه الصلاة والسلام، وينقصه برد النصوص، مثل القرامطة المتسمية بالباطنية، فإن استحقاق القتل لا يزوال عنهم بزعمهم أنهم مقرون بجملة التوحيد والنبوة ... وكذلك أشباههم من سائر الملحدين ... فأردنا أن نبين حكمهم، لكي إن اتفق في مستقبل الزمان إمام للمسلمين يغضب لدين الله تعالى، أن يتلاعب به الملحدون، أو يسعوا في إطفاء نوره: أجرى عليهم حكم الله، وإن كان وجود ذلك بعيدًا في عصرنا، والله تعالى ولي دينه، وناصر شريعته.اهـ
        “রাসূল আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালামের বাণী-"قاتلوا من كفر بالله" ‘যে আল্লাহ তাআলার সাথে কুফরী করেছে তার বিরুদ্ধে কিতাল কর’ বুঝাচ্ছে যে, সব শ্রেণীর কাফেরের বিরুদ্ধে কিতাল করা এবং তাদেরকে কতল করা ফরযতাদের কাউকেই তার কুফরের উপর বহাল রাখা যাবে নাযার থেকে জিযিয়া নেয়া জায়েয তার থেকে জিযিয়া নেয়া হবেএছাড়া বাকিদের থেকে ‘ইসলাম ও তরবারি’ ব্যতীত অন্য কিছু গ্রহণ করা হবে নাযেমন যারা তাওহীদ এবং রাসূল আলাইহিস সালাতু ওয়াসসালামের সত্যায়নের মৌখিক স্বীকৃতি তো দেয়, কিন্তু (শরীয়তের) নুসূসকে প্রত্যাখ্যান করার দ্বারা তা ভঙ্গ করেযেমন-‘বাতিনিয়া’ নামধারী ‘কারামেত্বা’রাকেননা, শুধু তাওহীদ ও নবুওয়্যাতের স্বীকৃতি দেওয়ার কারণেই তাদের থেকে তাদের প্রাপ্য হত্যার বিধান দূর হয়ে যাবে না… এ জাতীয় অন্য সকল মুলহিদের বিধানও এমনই… আমি এদের বিধান বর্ণনা করে যাওয়ার ইচ্ছা এ জন্য করেছি যে, ভবিষ্যতে যদি মুসলমানদের এমন কোন ইমাম আসেন, যিনি মুলহিদদেরকে আল্লাহ তাআলার দ্বীন নিয়ে ছিনি-মিনি খেলতে দেখে এবং তার নূরকে নিভিয়ে দেয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত দেখে ফোঁসে উঠবেন: তাহলে তিনি যেন তাদের ‍উপর আল্লাহ তাআলার বিধান জারি করতে পারেনযদিও আমাদের বর্তমান যমানায় এমন ইমাম পাওয়া দূরুহ ব্যাপারআল্লাহ তাআলাই তাঁর দ্বীনের রক্ষকতাঁর শরীয়তের হেফাজতকারী” -শারহু মুখতাসারিত ত্বহাবী: ৭/৪১-৪৩

        ফিলহাল বাতিনি কাফেরদের হত্যা করা তার পক্ষে সম্ভব ছিল না, কিন্তু ভবিষ্যতে কাজে আসবে মনে করে তিনি হুকুম বয়ান করে গেছেন।

        হাঁ, একটা ব্যাপার আছে যে, হক কথা সব জায়গায় বলা যায় না। মওকা বুঝে কথা বলতে হয়। এ হিসেবে দারুল হারব হয়ে গেলে সেটা বয়ান করা হবে কি হবে না তা মাসলাহাতের উপর নির্ভরশীল। এতে দ্বিমত হতে পারে। কেউ যদি মনে করেন, এখন না বলা মুনাসিব; তিনি বয়ান না করলেন। আর যাদের কাছে বলা মুনাসিব মনে হয় তারা বয়ান করবেন। একজনের ইজতিহাদ আরেকজনের উপর চাপানো তো ঠিক হবে না। মুজাহিদিনে কেরাম মনে করছেন বয়ান করলে ফায়েদা তাই বয়ান করছেন, করণীয়ও বলছেন। এটা লা-ইয়ানি’ বা নেজা জিদাল বলে তো কিছু মনে হচ্ছে না। ওয়াল্লাহু আ’লাম।
        الحمد لله الذي بنعمته تتم الصالحات. وصلى الله تعالى على خير خلقه محمد وعلى آله وأصحابه أجمعين.
        শুকরিয়া মুহতারাম! অনেক গুরুত্বপূর্ণ লেখা । আলহামদুলিল্লাহ অনেক উপকৃত হয়েছি

        Comment


        • #5
          মোহতারাম সবগুলো পর্ব পিডিএফ আকারে আপলোড দিলে ভালো হতো।

          Comment

          Working...
          X