Announcement

Collapse
No announcement yet.

"ইসলাম শান্তির ধর্ম" একটু পর্যালোচনা...

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • "ইসলাম শান্তির ধর্ম" একটু পর্যালোচনা...

    "ইসলাম শান্তির ধর্ম"। আলোচিত এক টপিক। এটা একে তো শুনা যায় কাফেরদের মুখে। আরেক তো শুনা যায় মডারেট ও মুরজিয়াদের মুখে। পার্থক্য হল, সাধারণ কাফের ও মডারেটরা এর দ্বারা বিশেষত জিহাদ ও কিতালকে সরাসরি প্রশ্নবিদ্ধ করে, কিন্তু ইরজাগ্রস্তরা করে একটু ঘুরিয়ে ; যেমন, এরা জিহাদ ও কিতালের স্থলে সন্ত্রাস বা ফাসাদ বসিয়ে এরপর জিহাদ ও কিতালকে সুকৌশলে প্রশ্নবিদ্ধ করে। (সামান্য ব্যতিক্রম বাদে)

    প্রশ্ন হল, ইসলাম শান্তির ধর্ম উক্তিটি কি আসলে যথার্থ না আসলেই যথার্থ নয়? এর আগে জানতে হবে যে, ইসলাম কি কেবল শান্তির ধর্ম? আমার মতে এর উত্তর হল, অত্র উল্লেখিত শান্তি শব্দের বিপরীতে যদি অশান্তি শব্দ বসানো হয়, তবে সন্দেহাতীত ও দ্বর্থ্যহীনভাবে আমরা এ দাবি করতে পারি যে, হ্যাঁ, ইসলাম কেবল শান্তিরই ধর্ম। কারণ, কুরআনুল কারিমের ভাষ্যমতে একস্থানে আল্লাহ তায়ালা মুমিনিন শব্দের বিপরীতে কাফেরদেরকে(সোয়াদ) ও অন্যস্থানে মুনাফেকদেরকে(বাকারা) মুফসিদিন অভিধায় ভূষিত করেছেন, যার অর্থ হল, পৃথিবীতে মুমিনরাই শান্তিবাদী আর কাফের ও মুনাফেকরাই হল অশান্তি সৃষ্টিকারী দাঙ্গাবাজ। এ থেকে এটাই প্রমাণিত হয় যে, ইসলামই হল শান্তির মূল আর বাদবাকি সব অশান্তি ও অরাজকতা বৈ কিছুই নয়। আর যদি শান্তিকে একটি গুণ বা বিশেষণ ধরা হয়, তবে বলা যায় যে কেবল শান্তি নয়, ইসলামে শান্তি আছে। আছে ইনসাফ ও সত্য, ন্যায় ও সাম্য, সভ্যতা ও মানবতা, কল্যাণ ও সফলতা। মোটকথা, যাবতীয় উত্তম গুণাবলী ও শ্রেষ্ঠতর সব বৈশিষ্টে ইসলাম পরিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ।

    তবে সামগ্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে ইসলামকে শান্তির ধর্ম বলে বিশেষায়িত-মুল্যায়িত করা যাবে কিনা? তো এর উত্তরে শায়খ ইয়াদ আল কুনাইবি দাঃবাঃ নীতিবাচক বলে উত্তর দিয়েছেন। প্রিয় ভাই মুহতারাম শায়খ তামীম আদনানী দাঃবাঃ স্বীয় লেকচারে এ প্রসঙ্গে বলেছেন যে, 'আপনি যদি সামগ্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে ইসলামকে কোনোএকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যে বিশেষায়িত-মূল্যায়িত করতে চান, তবে সে বৈশিষ্ট্যটি ইসলামের সামগ্রিক শিক্ষায় বিদ্যমান থাকতে হবে। আর তা হল কোরআনের আয়াত বা কোন হাদীসের সাথে সাংঘর্ষিক হতে পারবে না। তাই আপনি যদি পুরো ইসলামকে একবাক্যে তুলে ধরতে চান, তবে সে ক্ষেত্রে এভাবে বলা সঠিক হবে না যে, ইসলাম শান্তির ধর্ম। কেননা ইসলাম অনেক ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক যুদ্ধের নির্দেশ প্রদান করে। তাই আমাদের যেটা বলতে হবে এবং যেটা মানুষের সামনে প্রচার করতে হবে তা হল, ইসলাম সত্য ও ন্যায়ের ধর্ম। ইসলাম হক ইনসাফের ধর্ম। এ দুটি বৈশিষ্ট্য ইসলামের সামগ্রিক শিক্ষাকে ধারণ করে। ইসলামের প্রতিটি শিক্ষায় হক ও ইনসাফ বিদ্যমান রয়েছে। সব আয়াত, সকল হাদীস এবং শরীয়ার সবগুলো মূলনীতির সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ। আপনি কোরআনে এমন একটি আয়াতও পাবেন না, যেটি ভুল কোনো নির্দেশ দিচ্ছে কিংবা সত্যের বিরুদ্ধে কথা বলছে। আপনি এমন একটি আয়াতও পাবেন না, যেটি জুলুম করার নির্দেশ দিচ্ছে এবং ইনসাফের বিপক্ষে কথা বলছে। এটি কখনই সম্ভব নয়। ইসলাম তার যাবতীয় নীতিমালা ও হুকুম আহকাম হক ও ইনসাফের ভিত্তিতে প্রণয়ন করেছে। তাই ইসলামের যাবতীয় বিধিবিধান সত্য ন্যায়ের মাপকাঠিতে শতভাগ উত্তীর্ণ'।

    কিন্তু আমার ক্ষুদ্র দৃষ্টিভঙ্গিতে বিষয়টি ইতিবাচক বলে প্রমাণিত হয়। এক ভাই আমাকে বিষয়টি নিয়ে জানতে চেয়েছিলেন। ভাইকেও আমি ইতিবাচক উত্তর দিয়েছিলাম। এর কয়েকটি কারণ : প্রথমতঃ ইসলাম আসলেই শান্তির ধর্ম। কিন্তুর শান্তির ব্যাখ্যা তা নয়, যা ইউরোপ-আমেরিকার অসভ্যরা বলে। শান্তির সংজ্ঞা তা নয়, যা মডারেটদের মুখ ফুটে বেরোয়। বরং শান্তির সংজ্ঞা তো সেটাই, যা আমার আল্লাহ বলেন। শান্তির ব্যাখ্যা তো তাই, যা শান্তির স্রষ্টা আল্লাহ দেন। আল্লাহ জিহাদ ফরজ করেছেন, হ্যাঁ এটাই শান্তি। আল্লাহ কিতাল ফরজ করেছেন হ্যাঁ, এটাই শান্তি। আল্লাহ বলেছেন, কাফেররা নাপাক-কুকুর। অতএব, তাদের যেখানেই পাও, ধরে ধরে জবাই কর। এটাই আল্লাহর বিধান। এটাই শান্তি। আমরা শান্তির ব্যাখ্যা আল্লাহ থেকেই নিই। তাতে কাফেরদের যতই গা জ্বলুক! মডারেট ও মুরজিয়াদের যতই চুলকানি বাড়ুক! তুই কে আবার এতদিন পর ছাগলের শিংয়ের মতো উদয় হয়ে এসে আমাদের শান্তির ব্যাখ্যা দিচ্ছিস যে, ইসলামে তো জিহাদ আছে, তাইলে তা শান্তির ধর্ম কেমনে হয়!!? অতএব জিহাদ ও কিতাল, খিলাফাহ ও ইমারাহ, আল ওয়ালা ওয়াল বারা এগুলোই শান্তি। পশ্চিমের ঐ বস্তাপঁচা শান্তির ব্যাখ্যাকে তাদের মুখেই ছুঁড়ে মারি!!!

    দ্বিতীয়তঃ জিহাদ ও অন্যান্য যুদ্ধের মাঝে বিরাট ফারাক রয়েছে। অন্যান্য যুদ্ধ অনিষ্ট অশান্তি মারাত্মক পর্যায়ের সীমালঙ্ঘন হলেও জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ কোনোদিন অশান্তি-অনিষ্টের কারণ হতে পারে না। বরং জিহাদের অন্যতম উদ্দেশ্য হল হল ফাসাদ ও অশান্তি দমন করা। এখন জিহাদই যদি অশান্তি হয়য়, তবে অশান্তি দিয়ে শান্তি আনয়ন বা অশান্তি দমন কিভাবে সম্ভব!

    এ জন্যেই উসূলে ফেকহের ভাষায় জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহকে 'হাসান লি গায়রিহী' (অন্যের কারণে হাসান) অভিধায় ভূষিত করা হয়েছে। আর এটা তো সুবিদিত যে, হাসান লি গাইরিহী কোনোদিন অশান্তি সৃষ্টিকারী হতে পারে না। অতএব, শরিয়তসম্মত জিহাদকে সামনে এনে ইসলাম যে শান্তির ধর্ম তা প্রশ্নবিদ্ধ করা যায় না।

    তৃতীয়তঃ জিহাদকে সামনে রেখে যে দৃষ্টিকোণ থেকে পশ্চিমা ও মডারেটরা 'ইসলাম শান্তির ধর্ম' উক্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে আর আমরা তা থেকে বাঁচতে এর পরিবর্তে 'ইসলাম সত্য ও ন্যায়ের ধর্ম' উক্তিটিকে সংগতিপূর্ণ বলছি, ঠিক একি দৃষ্টিকোণ থেকে তো ইসলামের সত্যতা ও ইনসাফিয়্যাতকেও প্রশ্নবিদ্ধ করা যায়। কারণ, যদি আমরা প্রচার করি যে, ইসলাম সত্য ইনসাফের ধর্ম, তখন অসভ্যরা এই প্রশ্ন উথাপন করতে পারে যে, কিভাবে তোমরা ইসলামকে হক ও ইনসাফের ধর্ম বলো, অথচ ইসলাম যুদ্ধে মানুষের রক্তপাত করতে বলে? যদিও অসভ্যদের মাথায় এ প্রশ্ন আসে না। কিন্তু যদি করে ফেলে, তখন আমাদের উত্তর কী হবে? আমার মতে উত্তর এটাই হবে যে, যুদ্ধ আছে তো কী হয়েছে? আল্লাহপ্রদত্ব জিহাদের এ বিধানই হক ও ইনসাফ। এ থেকে বাঁচতে আশা করি কেউ অন্যকোনো থিউরি সামনে আনবে না। তো এ ক্ষেত্রে আমাদের উত্তর যদি এমনই হয়, তাহলে এটাই তো আমরা শান্তির বেলায় আগবাড়িয়ে বলতে পারি যে, জিহাদ ও কিতাল, আল ওয়ালা ওয়াল বারা এসব চমৎকার চমৎকার বিধান নিয়েই ইসলাম পূর্ণ শান্তিতে সমৃদ্ধ!

    মুহতারাম শায়খের আলোচনা থেকে বুঝা যায় যে, ইসলামের প্রতিটি বিধান সত্য ও ইনসাফের মানে উত্তীর্ণ। এর মানে হল, জিহাদ - কিতাল, আলওয়ালা ওয়াল বারা'সহ ইসলামের প্রতিটা বিধানই সত্য ও ইনসাফের মানে উত্তীর্ণ। প্রশ্ন হল, যে বিধান সত্য ও ইনসাফের মানে উত্তীর্ণ, তা কি শান্তির পক্ষে না বিপক্ষে? যদি পক্ষে হয়, তবে জিহাদের বিধানও তো শান্তিতে কানায় কানায় ভরপুর। আর যদি বিপক্ষে হয়, তবে তা হক ও ইনসাফের মানে উত্তীর্ণ হয় কিভাবে!

    আল্লাহ তায়ালা বলেন, "আল্লাহ মানুষকে ডাকেন শান্তির গৃহপানে"। —(ইউনুস) অতএব যে বিধান ও উপদেশ দিয়ে আল্লাহ মানুষকে শান্তির গৃহে আহ্বান করেন, তা কস্মিনকালেও অশান্তিপূর্ণ হতে পারে না। অতএব বুঝা গেল, আল্লাহর প্রতিটি বিধান ও প্রতিটি নির্দেশে শান্তি ভরপুর বিরাজ করছে। আল্লাহর প্রতিটি বিধান ও শিক্ষায় এই শান্তির উপস্থিতি বিদ্যমান হবার কারণে আমরা সামগ্রিকভাবে এই দাওয়াহ দিতে পারি যে, ইসলাম পরিপূর্ণ শান্তির ধর্ম। ইসলাম হক ও ন্যায়ের ধর্ম, ইনসাফ ও সত্যের ধর্ম।

    এর একদম ওয়াযেহ মেছাল তো হল কুরআনের সে আয়াত, যেখানে বলা হয়েছে যে, জিহাদ না থাকলে পুরো পৃথিবীটাই অশান্তিতে ভরে যেত। —(বাকারা) অত্র আয়াতের ইশারা হিসেবে তো আমার কাছে জিহাদকেই ঢেরবেশি শান্তিপূর্ণ ও শান্তিপ্রতিষ্ঠাকারী হিসেবে বিবেচিত হয়। যদিও তা আমাদের কাছে অপ্রীতিকর ঠেকবে, যদি আমরা অসভ্যদের চোখে বিষয়টির মূল্যায়ণ করি! আমাদের সকলেরই এই বিশ্বাস আছে যে, পরিণামে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ শান্তি বয়ে আনে। তবে আমি বিশ্বাস করি পরিণামে নয় ; বরং সত্বাগতভাবেই জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ শান্তিপূর্ণ ; যদি শরিয়তসম্মত হয়।

    আরো বিভিন্ন আঙ্গিকে বিষয়টি বিস্তারিত আলোচনা করা যায়। কিন্তু বিষয়টির আলোচনাই ছিল অধমের মূল উদ্দেশ্য, যাতে করে ভুল-ভ্রান্তি চিহ্নিত হয়ে যায়। অতএব, কোনো ভুলত্রুটি পরিলক্ষিত হলে জানিয়ে বাধিত করবেন ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক পথের দিশা দিন। আমিন!!!

    ভুল-ত্রুটি জানানোর অনুরোধ রইল!!!

  • #2
    মাশাআল্লাহ,,,জাযাকাল্লাহ,,,।
    অনেক সুন্দর ও উপকারী পোষ্ট করেছেন।
    আল্লাহ তা'য়ালা আপনার মেহনতকে কবুল করুন,আমীন।
    ’’হয়তো শরিয়াহ, নয়তো শাহাদাহ,,

    Comment


    • #3
      আল্লাহ তা‘আলা আপনার ইলম ও আমলে আরো ব্যাপক বারাকাহ দান করুন, জাযাকুমুল্লাহ।
      نحن الذين بايعوا محمدا، على الجهاد ما بقينا أبدا

      Comment


      • #4
        মাশাআল্লাহ, সুন্দর আলোচনা।
        আল্লাহ তা‘আলা আপনার মেহনতকে কবুল করুন। আমীন
        ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

        Comment

        Working...
        X