আমার উদ্ভাদে মুহতারামের কথার তৃতীয়াংশ 'যখন পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যাবে, তখন আমরাও ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়ব।' কখনো কখনো তিনি বলে থাকেন, “জিহাদের পরিবেশ তৈরি হয়েগেলে আমরাই থাকব প্রথম সারিতে।
মা-শা আল্লাহ অনেক উত্তম কথা। আজকাল জিহাদ ভীতির যুগে এমন কথাইবা কয়জনের মুখ থেকে শোনা যায়! কিন্তু সমস্যা হল, আল্লাহ তাআলা শুধু এজাতীয় মৌখিক কথায় আশ্বস্ত হন না। মৌখিক জমা-খরচে আল্লাহকে আশ্বস্ত করা যায় না। জিহাদের প্রশিক্ষণ, প্রয়োজনীয় সামগ্রীর ইন্তিজাম এবং যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ ব্যতীত আল্লাহ তাআলা কারো এই দাবি গ্রহণ করেন না। যে, সময় হলে আমরাই প্রথম সারিতে থাকব। অন্তসারশূণ্য, বাস্তবতা বিবর্জিত এই দাবি খণ্ডনে আল্লাহ তাআলা বলছেন,
لا يستأذنك الذين يؤمنون بالله واليوم الآخر أن يجاهدوا بأموالهم وأنفسهم والله عليم بالمثقين (88) إنما يستأذنك الذين لا يؤمنون بالله واليوم الآخر وارثابت ولكن ولو أرادوا الخروج لأعدوا له عدة قلوبهم فهم في ريبهم يترددون(86) كره الله انبعاثهم فثبطهم وقيل اقعدوا مع القاعدين
“আল্লাহ ও রোজ কেয়ামতের প্রতি যাদের ঈমান রয়েছে তারা মাল ও জান দ্বারা জিহাদ করা থেকে আপনার কাছে অব্যাহতি কামনা করবে না, আর আল্লাহ মুত্তাকীদের ভাল জানেন। নিঃসন্দেহে তারাই আপনার কাছে (জিহাদে না যাওয়ার ব্যাপারে) অব্যাহতি চায়, যারা আল্লাহ ও রোজ কেয়ামতে ঈমান রাখে না এবং তাদের অন্তর সন্দেহগ্রস্ত হয়ে পড়েছে, সুতরাং সন্দেহের আবর্তে তারা ঘুরপাক খেয়ে চলেছে। আর যদি তারা বের হবার সংকল্প নিত, তবে অবশ্যই কিছু সরঞ্জাম প্রস্তুত করতো। কিন্তু তাদের উত্থান আল্লাহর পছন্দ নয়, তাই তাদের নিবৃত রাখলেন এবং আদেশ হল বসা লোকদের সাথে তোমরা বসে থাক।" (তাওবা:৪৪-৪৬)
ইমাম কুরতুবী রহ. এই আয়াতে ব্যাখ্যায় বলেন,
) أي لو أرادوا الجهاد لتأهبوا قوله تعالى (:ولو أرادوا الخروج لأعدوا له عدة أهبة السفر. فتركهم الاستعداد دليل على إرادتهم التخلف.
“যদি তারা বাস্তবেই জিহাদে বের হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করত, তাহলে জিহাদী সফরের প্রস্তুতি গ্রহণ করত, সরাঞ্জাম প্রস্তুত করত। অতএব, প্রস্তুতি গ্রহণ না করাটাই এ কথার প্রমাণ বহন করে যে, তারা বাস্তবে জিহাদে বের হতে চায় না।" (দেখুন, তাফসীরে কুরতুবী)
যেকোনো ইবাদাত কারো উপর ফরয হওয়ার পূর্বেই তা শিক্ষা করতে হয় এবং সে সম্পর্কে প্রয়োজনীয় ইলম হাসিল করতে হয়। আমরা সকলেই জানি যে, বালেগ হওয়ার পূর্বে নামায ফরয হয় না। কিন্তু নবীজী সা. চান্দ্র মাস হিসাবে বাচ্চাদের বয়স সাত বছর হওয়ার সাথে সাথে তাদেরকে নামাযের আদেশ দিতে বলেছেন। আবার দশ বছর বয়সে নামায না পড়লে পিটাই করতে বলেছেন। অথচ দশ বছরে যেহেতু বাচ্চারা সাধারণত বালেগ হয় না, তাই তাদের উপর তখনও নামায ফরয নয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও রহমতের সাগর প্রিয় নবীজী সা. বাচ্চাদেরকে মারতে বলেছেন। কী এর রহস্য? রহস্য একটাই, যেহেতু আনাগত ভবিষ্যতে তার উপর নামায ফরয হতে যাচ্ছে, তাই সে যেন বালেগ হওয়ার পূর্বের এই ৫/৬ বছরে ধীরে ধীরে নামাযের জরুরী মাসায়েল শিক্ষার সাথে সাথে আমলী মশকের মাধ্যমে নামায শিখে নেয়। আর তার যেন নামাযের অভ্যাস গড়ে ওঠে এবং বালেগ হওয়ার পর সে যেন নামাযে কোনো রকম অবহেলার সুযোগ না পায়। সেজন্যই মূলত সাত বছর বয়স থেকেই নামাযের আদেশ করতে বলা হয়েছে। সাত বছর বয়সেই যাকে নামাযের আদেশ করতে বলা হয়েছে, তাকে অবশ্যই সাত বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই নামাযের মৌলিক বিষয়গুলোও শিখিয়ে দিতে হবে। এই বর্ণনা দ্বারা বুঝাগেল, যে কোনো ইবাদাত ফরয হওয়ার পূর্বেই সেই ইবাদাত সম্পর্কে যথেষ্ট পরিমাণ ইলম ও প্রস্তুতি গ্রহণ করে রাখা জরুরী। যাতে ফরয হয়ে যাওয়ার পর ফরয আদায়ে কোনোরূপ বিলম্ব না হয়। কোনো বিঘ্ন না ঘটে।
জিহাদ একটি ফরয ইবাদাত। কখনো ফরযে কিফায়া থাকে। আবার কখনো ফরযে আইন হয়, যেমন এখন বিশ্ব মুসলিমদের উপর জিহাদ ফরযে আইন।
কিন্তু জিহাদ ফরযে কিফায়ার স্তরে থাকুক কিংবা ফরযে আইন এর স্তরে সর্বাবস্থায় জিহাদের যথেষ্ট পরিমাণ প্রস্তুতি গ্রহণ করে রাখা ফরয। এটা যেমন উপরে বর্ণিত নামাযের বিষয়টি থেকে সাব্যস্ত হয়, তেমনি যুক্তিও এটাকে সমর্থন করে। কারণ, শত্রু যখন হামলা করে বসবে, হাজার হাজার আলেম উলামা ও মুসলিমকে কতল করতে শুরু করে দিবে, গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিবে। মা-বোনদের ইজ্জত লুণ্ঠন করতে শুরু করবে, মূল্যবান মূল্যহীন সমস্ত সম্পদ লুট করে নিয়ে যাবে, আরাকানীদের মত রিক্ত হস্তে উদ্বাস্তু জীবন যাপনে বাধ্য করবে, তখন তো হত্যাকারী, লুণ্ঠনকারী ও ধর্ষক ঐ পিশাচকে প্রতিহত করাই ফরযে আইন হবে। তখন যদি আপনি শত্রুকে প্রতিহত করা বাদ দিয়ে, নিজের বৃদ্ধ বাবা-মা, ছোট্ট ভাই-বোন, অসহায় স্ত্রী-সন্তানকে শত্রুর হামলা থেকে না বাঁচিয়ে গাজীপুর কিংবা পার্বত্য চট্টগ্রামের বন-জঙ্গল আর পাহাড়ে গিয়ে প্রস্তুতি গ্রহণে লিপ্ত হন, তাহলে তো আপনি ফরয তরককারী বলে বিবেচিত হবেন। তাছাড়া কোনোরূপ পূর্ব প্রস্তুতি ব্যতীত আপনি কি নিজে নিজেকে শত্রুর হামলা থেকে রক্ষা করতে পারবেন? আপনিই যদি আত্মরক্ষা করতে না পারেন, নিজেকে নিজে বাঁচাতে নাপারেন, তাহলে আপনি শত্রুর হাত থেকে ফঁসকে গিয়ে কীভাবে প্রস্তুতি অর্জন করবেন? সে সুযোগ আপনার কীভাবে অর্জন হবে?
আর আপনি এমনটা কীভাবে আশা করছেন যে, শত্রু হামলা করার সাথে সাথে আপনাদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার মত যোগ্য মুজাহিদও পাওয়া যাবে? পূর্ব থেকেই যদি জিহাদী কাফেলা বিদ্যমান না থাকে, সহীহ জিহাদী সংগঠনগুলো সামান্য পরিসরে হলেও যদি জিহাদের চর্চা করতে না পারে, আলেম-উলামাগণ যদি পূর্ব থেকেই জিহাদকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা না করেন, তাহলে তখন আপনাকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য কি আল্লাহ তাআলা আসমান থেকে মুজাহিদ পাঠিয়ে দিবেন? নাকি জমিন ফুঁড়ে কোনো প্রশিক্ষক বের হয়ে আসবে? এখন শান্তিপূর্ণ অবস্থায় যদি আপনারা জিহাদ বাস্তবায়নের জন্য একজন আমীর খুঁজে না পান, তখনকার সেই উত্তাল অবস্থায় আপনারা কীভাবে একজন সর্বসম্মত আমীর নির্বাচন করবেন? কীভাবে সেই সর্বসম্মত আমীরের অধীনে আপনারা একত্রিত হয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবেন? সেই আমীর সাহেবেরই যদি জিহাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা না থাকে, তখন সে কীভাবে লাখ লাখ আলেম উলামা ও তলাবায় পরিপূর্ণ একটি জিহাদী কাফেলা পরিচালনা করবেন? একদম আনাড়ি, অনভিজ্ঞ, বিশৃঙ্খল বিরাট জনশক্তি কি তখন আমীর সাহেবের জন্য বিশাল বোঝা হয়ে দাঁড়াবে না? আর এই বিশাল জনগোষ্ঠিকে আমীর সাহেব রাতারাতি কীভাবে এই পর্যায়ে উন্নীত করবেন যে, তারা ২/৩ বছর প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত, বহু বছরের অভিজ্ঞ সুশৃঙ্খল একটি বাহিনীর সাথে লড়ার যোগ্য হয়ে উঠবে?
ভাবছেন পরিবেশ কায়েম হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে ৭১ এর মত ভারত সৈন্য ও অস্ত্র নিয়ে আপনাদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে? কিংবা সরকারের সেনাবাহিনী আপনাদের পক্ষে দাড়াবে? কস্মিনকালেও না। মনে রাখতে হবে, হিন্দুস্তান হক ও বাতিলের মধ্যকার এক চূড়ান্ত যুদ্ধের অপেক্ষায় আছে। ইতিমধ্যে জায়গায় জায়গায় যুদ্ধের আগুন জ্বলতে শুরু করেছে। এই আগুন আর নিভানো যাবে না। ধীরে ধীরে এই আগুন পুরো ভারত উপমহাদেশকে গ্রাস করবে। এই যুদ্ধ হবে হিন্দুস্তানের ইতিহাসের হক ও বাতিলের সর্বশেষ যুদ্ধ। এই যুদ্ধে ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তানসহ হিন্দুস্তানে অবস্থিত অন্যান্য রাষ্ট্র শক্তি একজোট হয়ে মিত্র বাহিনীর রূপ ধারণ করবে। আপনাদের স্বাক্ষরিত ‘শান্তির ফতওয়ায়’ (?) যাদেরকে জঙ্গী ও সন্ত্রাসী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে এই সম্মিলিত কাফের ও তাগুতী বাহিনীর বিরুদ্ধে হকের ঝাণ্ডা হাতে তাঁরাই বুক টান করে লড়বে ইনশাআল্লাহ । বিপদের দিনে সেই সূর্য সন্তানদেরকেই আপনারা পাশে পাবেন। কেউ যদি সেদিন আপনাদের দুরাবস্থায় আপনাদের সঙ্গী হয়, আপনাদের সাহায্যে এগিয়ে আসে, তাহলে সেই জঙ্গীরাই আপনাদের সঙ্গী হবে। অবশ্য তাদের সংখ্যা খুব কম হবে। কারণ, এখন যারা প্রথম সারিতে থাকার ওয়াদা দিচ্ছে, তখন তাদেরকে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হবে। তারা কম হলেও তাদের কোয়ালিটি খুব উন্নত হবে। সবর ও তাকওয়ার গুণে গুণান্বিত হওয়ার সাথে সাথে তারা সামরিক ক্ষেত্রেও বেশ দক্ষ হবে। আল্লাহর শত্রুদের সংখ্যার তুলনায় তাদের সাংখ্যা খুব নগণ্য হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ তাআলা এই অল্প সংখ্যক মুজাহিদের হাতেই কাফের-মুরতাদদের বিশাল পরাক্রমশালী বাহিনীকে কচুকাটা করাবেন। হিন্দুস্তানের ভূমি কাফের-মুরতাদদের পদচারণা মুক্ত হবে। আল্লাহর দ্বীন কায়েম হবে। সর্বত্র কালিমা খচিত সাদা ও কালো পতাকা উড্ডীন হবে। কাফের-মুরতাদদের নেতাদেরকে মুজাহিদগণ বন্দী করবেন। তাদের গলায় ও পায়ে শিকল ও বেড়ি পরিয়ে মুজাহিদদের হেডকোর্টার ‘শামে’ নিয়ে যাওয়া হবে। হিন্দুস্তান বিজয়ী বাহিনী যখন শামে গিয়ে পৌঁছবে, তখন তারা জানতে পারবেন যে, দাজ্জালকে হত্যা করতে ঈসা.আ. আসমান থেকে অবতরণ করেছেন। (ইতি পূর্বে স্ট দাজ্জালেরও আত্মপ্রকাশ ঘটবে)।
তথ্যসূত্র : নেদায়ে তওহীদ
মা-শা আল্লাহ অনেক উত্তম কথা। আজকাল জিহাদ ভীতির যুগে এমন কথাইবা কয়জনের মুখ থেকে শোনা যায়! কিন্তু সমস্যা হল, আল্লাহ তাআলা শুধু এজাতীয় মৌখিক কথায় আশ্বস্ত হন না। মৌখিক জমা-খরচে আল্লাহকে আশ্বস্ত করা যায় না। জিহাদের প্রশিক্ষণ, প্রয়োজনীয় সামগ্রীর ইন্তিজাম এবং যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ ব্যতীত আল্লাহ তাআলা কারো এই দাবি গ্রহণ করেন না। যে, সময় হলে আমরাই প্রথম সারিতে থাকব। অন্তসারশূণ্য, বাস্তবতা বিবর্জিত এই দাবি খণ্ডনে আল্লাহ তাআলা বলছেন,
لا يستأذنك الذين يؤمنون بالله واليوم الآخر أن يجاهدوا بأموالهم وأنفسهم والله عليم بالمثقين (88) إنما يستأذنك الذين لا يؤمنون بالله واليوم الآخر وارثابت ولكن ولو أرادوا الخروج لأعدوا له عدة قلوبهم فهم في ريبهم يترددون(86) كره الله انبعاثهم فثبطهم وقيل اقعدوا مع القاعدين
“আল্লাহ ও রোজ কেয়ামতের প্রতি যাদের ঈমান রয়েছে তারা মাল ও জান দ্বারা জিহাদ করা থেকে আপনার কাছে অব্যাহতি কামনা করবে না, আর আল্লাহ মুত্তাকীদের ভাল জানেন। নিঃসন্দেহে তারাই আপনার কাছে (জিহাদে না যাওয়ার ব্যাপারে) অব্যাহতি চায়, যারা আল্লাহ ও রোজ কেয়ামতে ঈমান রাখে না এবং তাদের অন্তর সন্দেহগ্রস্ত হয়ে পড়েছে, সুতরাং সন্দেহের আবর্তে তারা ঘুরপাক খেয়ে চলেছে। আর যদি তারা বের হবার সংকল্প নিত, তবে অবশ্যই কিছু সরঞ্জাম প্রস্তুত করতো। কিন্তু তাদের উত্থান আল্লাহর পছন্দ নয়, তাই তাদের নিবৃত রাখলেন এবং আদেশ হল বসা লোকদের সাথে তোমরা বসে থাক।" (তাওবা:৪৪-৪৬)
ইমাম কুরতুবী রহ. এই আয়াতে ব্যাখ্যায় বলেন,
) أي لو أرادوا الجهاد لتأهبوا قوله تعالى (:ولو أرادوا الخروج لأعدوا له عدة أهبة السفر. فتركهم الاستعداد دليل على إرادتهم التخلف.
“যদি তারা বাস্তবেই জিহাদে বের হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করত, তাহলে জিহাদী সফরের প্রস্তুতি গ্রহণ করত, সরাঞ্জাম প্রস্তুত করত। অতএব, প্রস্তুতি গ্রহণ না করাটাই এ কথার প্রমাণ বহন করে যে, তারা বাস্তবে জিহাদে বের হতে চায় না।" (দেখুন, তাফসীরে কুরতুবী)
যেকোনো ইবাদাত কারো উপর ফরয হওয়ার পূর্বেই তা শিক্ষা করতে হয় এবং সে সম্পর্কে প্রয়োজনীয় ইলম হাসিল করতে হয়। আমরা সকলেই জানি যে, বালেগ হওয়ার পূর্বে নামায ফরয হয় না। কিন্তু নবীজী সা. চান্দ্র মাস হিসাবে বাচ্চাদের বয়স সাত বছর হওয়ার সাথে সাথে তাদেরকে নামাযের আদেশ দিতে বলেছেন। আবার দশ বছর বয়সে নামায না পড়লে পিটাই করতে বলেছেন। অথচ দশ বছরে যেহেতু বাচ্চারা সাধারণত বালেগ হয় না, তাই তাদের উপর তখনও নামায ফরয নয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও রহমতের সাগর প্রিয় নবীজী সা. বাচ্চাদেরকে মারতে বলেছেন। কী এর রহস্য? রহস্য একটাই, যেহেতু আনাগত ভবিষ্যতে তার উপর নামায ফরয হতে যাচ্ছে, তাই সে যেন বালেগ হওয়ার পূর্বের এই ৫/৬ বছরে ধীরে ধীরে নামাযের জরুরী মাসায়েল শিক্ষার সাথে সাথে আমলী মশকের মাধ্যমে নামায শিখে নেয়। আর তার যেন নামাযের অভ্যাস গড়ে ওঠে এবং বালেগ হওয়ার পর সে যেন নামাযে কোনো রকম অবহেলার সুযোগ না পায়। সেজন্যই মূলত সাত বছর বয়স থেকেই নামাযের আদেশ করতে বলা হয়েছে। সাত বছর বয়সেই যাকে নামাযের আদেশ করতে বলা হয়েছে, তাকে অবশ্যই সাত বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই নামাযের মৌলিক বিষয়গুলোও শিখিয়ে দিতে হবে। এই বর্ণনা দ্বারা বুঝাগেল, যে কোনো ইবাদাত ফরয হওয়ার পূর্বেই সেই ইবাদাত সম্পর্কে যথেষ্ট পরিমাণ ইলম ও প্রস্তুতি গ্রহণ করে রাখা জরুরী। যাতে ফরয হয়ে যাওয়ার পর ফরয আদায়ে কোনোরূপ বিলম্ব না হয়। কোনো বিঘ্ন না ঘটে।
জিহাদ একটি ফরয ইবাদাত। কখনো ফরযে কিফায়া থাকে। আবার কখনো ফরযে আইন হয়, যেমন এখন বিশ্ব মুসলিমদের উপর জিহাদ ফরযে আইন।
কিন্তু জিহাদ ফরযে কিফায়ার স্তরে থাকুক কিংবা ফরযে আইন এর স্তরে সর্বাবস্থায় জিহাদের যথেষ্ট পরিমাণ প্রস্তুতি গ্রহণ করে রাখা ফরয। এটা যেমন উপরে বর্ণিত নামাযের বিষয়টি থেকে সাব্যস্ত হয়, তেমনি যুক্তিও এটাকে সমর্থন করে। কারণ, শত্রু যখন হামলা করে বসবে, হাজার হাজার আলেম উলামা ও মুসলিমকে কতল করতে শুরু করে দিবে, গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিবে। মা-বোনদের ইজ্জত লুণ্ঠন করতে শুরু করবে, মূল্যবান মূল্যহীন সমস্ত সম্পদ লুট করে নিয়ে যাবে, আরাকানীদের মত রিক্ত হস্তে উদ্বাস্তু জীবন যাপনে বাধ্য করবে, তখন তো হত্যাকারী, লুণ্ঠনকারী ও ধর্ষক ঐ পিশাচকে প্রতিহত করাই ফরযে আইন হবে। তখন যদি আপনি শত্রুকে প্রতিহত করা বাদ দিয়ে, নিজের বৃদ্ধ বাবা-মা, ছোট্ট ভাই-বোন, অসহায় স্ত্রী-সন্তানকে শত্রুর হামলা থেকে না বাঁচিয়ে গাজীপুর কিংবা পার্বত্য চট্টগ্রামের বন-জঙ্গল আর পাহাড়ে গিয়ে প্রস্তুতি গ্রহণে লিপ্ত হন, তাহলে তো আপনি ফরয তরককারী বলে বিবেচিত হবেন। তাছাড়া কোনোরূপ পূর্ব প্রস্তুতি ব্যতীত আপনি কি নিজে নিজেকে শত্রুর হামলা থেকে রক্ষা করতে পারবেন? আপনিই যদি আত্মরক্ষা করতে না পারেন, নিজেকে নিজে বাঁচাতে নাপারেন, তাহলে আপনি শত্রুর হাত থেকে ফঁসকে গিয়ে কীভাবে প্রস্তুতি অর্জন করবেন? সে সুযোগ আপনার কীভাবে অর্জন হবে?
আর আপনি এমনটা কীভাবে আশা করছেন যে, শত্রু হামলা করার সাথে সাথে আপনাদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার মত যোগ্য মুজাহিদও পাওয়া যাবে? পূর্ব থেকেই যদি জিহাদী কাফেলা বিদ্যমান না থাকে, সহীহ জিহাদী সংগঠনগুলো সামান্য পরিসরে হলেও যদি জিহাদের চর্চা করতে না পারে, আলেম-উলামাগণ যদি পূর্ব থেকেই জিহাদকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা না করেন, তাহলে তখন আপনাকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য কি আল্লাহ তাআলা আসমান থেকে মুজাহিদ পাঠিয়ে দিবেন? নাকি জমিন ফুঁড়ে কোনো প্রশিক্ষক বের হয়ে আসবে? এখন শান্তিপূর্ণ অবস্থায় যদি আপনারা জিহাদ বাস্তবায়নের জন্য একজন আমীর খুঁজে না পান, তখনকার সেই উত্তাল অবস্থায় আপনারা কীভাবে একজন সর্বসম্মত আমীর নির্বাচন করবেন? কীভাবে সেই সর্বসম্মত আমীরের অধীনে আপনারা একত্রিত হয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবেন? সেই আমীর সাহেবেরই যদি জিহাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা না থাকে, তখন সে কীভাবে লাখ লাখ আলেম উলামা ও তলাবায় পরিপূর্ণ একটি জিহাদী কাফেলা পরিচালনা করবেন? একদম আনাড়ি, অনভিজ্ঞ, বিশৃঙ্খল বিরাট জনশক্তি কি তখন আমীর সাহেবের জন্য বিশাল বোঝা হয়ে দাঁড়াবে না? আর এই বিশাল জনগোষ্ঠিকে আমীর সাহেব রাতারাতি কীভাবে এই পর্যায়ে উন্নীত করবেন যে, তারা ২/৩ বছর প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত, বহু বছরের অভিজ্ঞ সুশৃঙ্খল একটি বাহিনীর সাথে লড়ার যোগ্য হয়ে উঠবে?
ভাবছেন পরিবেশ কায়েম হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে ৭১ এর মত ভারত সৈন্য ও অস্ত্র নিয়ে আপনাদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে? কিংবা সরকারের সেনাবাহিনী আপনাদের পক্ষে দাড়াবে? কস্মিনকালেও না। মনে রাখতে হবে, হিন্দুস্তান হক ও বাতিলের মধ্যকার এক চূড়ান্ত যুদ্ধের অপেক্ষায় আছে। ইতিমধ্যে জায়গায় জায়গায় যুদ্ধের আগুন জ্বলতে শুরু করেছে। এই আগুন আর নিভানো যাবে না। ধীরে ধীরে এই আগুন পুরো ভারত উপমহাদেশকে গ্রাস করবে। এই যুদ্ধ হবে হিন্দুস্তানের ইতিহাসের হক ও বাতিলের সর্বশেষ যুদ্ধ। এই যুদ্ধে ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তানসহ হিন্দুস্তানে অবস্থিত অন্যান্য রাষ্ট্র শক্তি একজোট হয়ে মিত্র বাহিনীর রূপ ধারণ করবে। আপনাদের স্বাক্ষরিত ‘শান্তির ফতওয়ায়’ (?) যাদেরকে জঙ্গী ও সন্ত্রাসী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে এই সম্মিলিত কাফের ও তাগুতী বাহিনীর বিরুদ্ধে হকের ঝাণ্ডা হাতে তাঁরাই বুক টান করে লড়বে ইনশাআল্লাহ । বিপদের দিনে সেই সূর্য সন্তানদেরকেই আপনারা পাশে পাবেন। কেউ যদি সেদিন আপনাদের দুরাবস্থায় আপনাদের সঙ্গী হয়, আপনাদের সাহায্যে এগিয়ে আসে, তাহলে সেই জঙ্গীরাই আপনাদের সঙ্গী হবে। অবশ্য তাদের সংখ্যা খুব কম হবে। কারণ, এখন যারা প্রথম সারিতে থাকার ওয়াদা দিচ্ছে, তখন তাদেরকে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হবে। তারা কম হলেও তাদের কোয়ালিটি খুব উন্নত হবে। সবর ও তাকওয়ার গুণে গুণান্বিত হওয়ার সাথে সাথে তারা সামরিক ক্ষেত্রেও বেশ দক্ষ হবে। আল্লাহর শত্রুদের সংখ্যার তুলনায় তাদের সাংখ্যা খুব নগণ্য হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ তাআলা এই অল্প সংখ্যক মুজাহিদের হাতেই কাফের-মুরতাদদের বিশাল পরাক্রমশালী বাহিনীকে কচুকাটা করাবেন। হিন্দুস্তানের ভূমি কাফের-মুরতাদদের পদচারণা মুক্ত হবে। আল্লাহর দ্বীন কায়েম হবে। সর্বত্র কালিমা খচিত সাদা ও কালো পতাকা উড্ডীন হবে। কাফের-মুরতাদদের নেতাদেরকে মুজাহিদগণ বন্দী করবেন। তাদের গলায় ও পায়ে শিকল ও বেড়ি পরিয়ে মুজাহিদদের হেডকোর্টার ‘শামে’ নিয়ে যাওয়া হবে। হিন্দুস্তান বিজয়ী বাহিনী যখন শামে গিয়ে পৌঁছবে, তখন তারা জানতে পারবেন যে, দাজ্জালকে হত্যা করতে ঈসা.আ. আসমান থেকে অবতরণ করেছেন। (ইতি পূর্বে স্ট দাজ্জালেরও আত্মপ্রকাশ ঘটবে)।
তথ্যসূত্র : নেদায়ে তওহীদ
Comment