কিতাবুস সিয়ার: কানযুদ দাকায়িক: ০১ ভূমিকা ও জিহাদের হুকুম
بسم الله، والحمد لله، والصلاة والسلام على رسول الله. أما بعد:
ফিকহে হানাফির কোনো একটা মুখতাসার মতন থেকে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ কিতাবুস সিয়ার পেশ করার ইচ্ছা অনেক দিন থেকে ছিল। কিন্তু কিছু ব্যস্ততা আর কিছু অলসতায় কাজটি হয়নি। এখন মনে হলো, দেরি না করে শুরু করে দিই। আস্তে আস্তে চলতে থাকুক। এ থেকেই আজ শুরু করা।
ইমাম নাসাফি রহ. (৭১০ হি.)-এর মুবারক কিতাব ‘কানযুক দাকায়িক’ ফিকহে হানাফির একটি প্রসিদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য মতন। কিতাবটির ভাষা যদিও অনেক সংক্ষেপ, এবং এ কারণে তালিবুল ইলমদের তা বুঝে উঠতেও একটু কষ্ট হয়, তথাটি এ মতনটি নির্বাচন করার কারণ হচ্ছে:
ক. অন্যান্য মতনের তুলনায় এ কিতাবে মাসআলার সংখ্যা একটু বেশি।
খ. তাবয়িন, বাহর, নাহর- এর মতো প্রসিদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য বেশ অনেকগুলো শরাহ এ কিতাবের রয়েছে। যেকোনো মাসআলায় তাফসিল দেখতে চাইলে সহজেই মুরাজাআত সম্ভব।
তাছাড়া কানযে মাসআলার তারতিব অনেকটা হিদায়ার তারতিবের কাছাকাছি। তাফসিল দেখতে চাইলে সহজেই হিদায়া, ফাতহুল কাদির, বিনায়া ইত্যাদি মুরাজাআত করা সম্ভব।
***
মাসআলাগুলো আমি খুব সংক্ষেপে এবং দলীল প্রমাণ ও কিতাবাদির হাওয়ালা-রেফারেন্স ব্যতীত বলে যাবো। মতনে যতটুকু আছে, সামান্য ব্যাখ্যা করে বুঝানোর চেষ্টা করবো। প্রসঙ্গক্রমে হয়তো কিছু অতিরিক্ত মাসআলা এবং মাঝে মধ্যে কিছু কিতাবের হাওয়ালা আসবে। কেউ বিস্তারিত দেখতে চাইলে বাহর, ফাতহুল কাদির, শামি, মাবসূত, বাদায়ে ইত্যাদি কিতাব মুরাজাআত করতে পারেন ইনশাআল্লাহ। ভাইদের কাছে আবেদন, কোনো মাসআলায় কোনো ভুল ধরা পড়লে যেন অবশ্যই মন্তব্য করে জানিয়ে দেন, যাতে আমি শুধরে নিতে পারি।
সত্য কথা হচ্ছে, আমি বড় কোনো আলেম নই। তবে এদেশে জিহাদের উপর বেশ কাজ হলেও এখন পর্যন্ত ফিকহের কোনো কিতাব থেকে কিতাবুস সিয়ারের নিয়মতান্ত্রিক কাজ হয়নি। এ শূন্যতা অনুভব করেই আল্লাহর উপর ভরসা করে হাত দেয়া।
আল্লাহ তাআলার কাছে প্রার্থনা, তিনি যেন নিজ অনুগ্রহে কাজটি কবুল করেন। পূর্ণতায় পৌঁছার তাওফিক দেন। এর দ্বারা মুসলিম ও মুজাহিদ ভাইদের উপকৃত করেন। আখেরাতে নাজাতের অসিলা বানান। আমীন।
***
كتاب السّير |
الجهاد فرض كفايةٍ ابتداءً. فإن قام به بعضٌ سقط عن الكلّ، وإلّا أثموا بتركه. “(কাফেরদের বিরুদ্ধে) আগে বেড়ে জিহাদ করা ফরযে কিফায়া। কিছু মুসলিম এ দায়িত্ব (পূর্ণরূপে) আঞ্জাম দিয়ে দিলে সকলে দায়িত্বমুক্ত হয়ে যাবে। অন্যথায় সকলে জিহাদ তরকের কারণে গুনাহগার হবে।” |
ابتداءً (আগে বেড়ে)
কাফেররা যখন তাদের নিজেদের ভূমিতে অবস্থান করে, মুসলিমদের কোনো ক্ষতি করছে না বা কোনো আগ্রাসানও চালাচ্ছে না, তখন মুসলিমদের উপর ফরয, আগে বেড়ে কাফেরদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা। এ জিহাদের উদ্দেশ্য আল্লাহর দ্বীন ও জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ও বিজয়ী করা।
কাফেরদেরকে অপশন দেয়া হবে:
ক. তোমরা মুসলমান হয়ে যাও। ইসলামের সত্যতা ও সৌন্দর্য তাদের সামনে তুলে ধরা হবে। ইসলামের ব্যাপারে তাদের কোনো কিছু জানার থাকলে জওয়াব দেয়া হবে।
খ. তারা মুসলমান হতে রাজি না হলে অপশন দেয়া হবে যে, তোমরা তোমাদের রাষ্ট্রের কতৃত্ব মুসলিমদের হাতে সমর্পণ কর। রাষ্ট্রের কতৃত্ব মুসলমানদের হাতে থাকবে। তোমরা ইসলামী শাসনের অধীনে সুখে শান্তিতে বাস করবে। মুসলমানদেরকে জিযিয়া দিয়ে যাবে। জিযিয়া কখন এবং কি পরিমাণ নেয়া হয় ইত্যাদি তাফসিল তাদের জানানো হবে।
গ. যদি এ দুই অপশনের কোনোটি গ্রহণ না করে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কিতাল করা হবে। কিতাল করে তাদের রাষ্ট্র দখল করে তা দারুল ইসলামের অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
কাফেরদের ভূমিতে আল্লাহর দ্বীন বিজয়ী করার জন্য এ জিহাদ ফরয। অর্থাৎ তারা আমাদের বিরুদ্ধে না আসলেও আগে বেড়ে জিহাদ করা আমাদের ফরয দায়িত্ব।
فرض كفايةٍ (ফরযে কিফায়া)
ফরয দুই প্রকার:
ক. ফরযে আইন। যেমন নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত ইত্যাদি। যাদের উপর ফরয, তাদের সকলকেই তা আদায় করতে হবে। কিছু মানুষের আদায়ের দ্বারা বাকিরা দায়িত্বমুক্ত হবে না।
খ. ফরযে কিফায়া। যেগুলো মূলত সকলের উপরই ফরয। তবে সকলের পক্ষ থেকে কিছু মানুষ আদায় করে ফেললে সকলেই দায়িত্বমুক্ত হয়ে যাবে। যেমন জানাযা-কাফন দাফন। কিছু মুসলমান; মুসলিম মৃতকে গোসল দিয়ে জানাযা পড়ে কাফন দাফন যথাযথ করলে বাকি সকল মুসলিম দায়িত্বমুক্ত হয়ে যাবে। কেউই না করলে এবং লাশ পড়ে থাকলে সবাই গুনাহগার হবে।
فإن قام به بعضٌ (কিছু মুসলিম এ দায়িত্ব পূর্ণরূপে আঞ্জাম দিয়ে দিলে)
পূর্ণরূপে বলা হয়েছে, কারণ, শুধু কিছু মানুষ শরীক হলেই দায়িত্ব আদায় হবে না, যদি কাজটি পূর্ণরূপে আঞ্জাম না পায়। কাজেই কিছু মুসলিম জিহাদ করলেই যে উম্মতের সকলের দায়িত্ব আদায় হয়ে যাবে তা না। বরং কাফেরদের শক্তি চূর্ণ করে তাদের ভূমিতে ইসলামী শাসন জারি করতে যে সীমান্তে যতটুকু জিহাদ (প্রতি বছর) প্রয়োজন, ততটুকু করতে হবে। বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে শরীক হতে পারে। কেউ জান দিয়ে, কেউ মাল দিয়ে, কেউ বুদ্ধি পরামর্শ দিয়ে। সকলে মিলে কাঙ্খিত পরিমাণ জিহাদ হলে তখন (এ বছরের) দায়িত্ব আদায় হবে।
وإلّا أثموا بتركه (অন্যথায় সকলে জিহাদ তরকের কারণে গুনাহগার হবে)
অর্থাৎ জিহাদ একেবার না হলে বা প্রয়োজন পরিমাণ না হলে, যারা যারা এর ব্যবস্থাপনায় শরীক হয়নি সকলে গুনাহগার হবে। অবশ্য সকলের গুনাহের মাত্রা সমান হবে না। দায়িত্বশীলরা বেশি গুনাহগার হবে। এমনিভাবে যাদের জানা ছিল যে ঠিকমতো জিহাদ হচ্ছে না কিন্তু এরপরও সামর্থ্যানুযায়ী তারা কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি, তারাও বেশি গুনাহগার হবে। সাধারণ মানুষ ও দুর্বল সামর্থ্যের লোকেরা কম গুনাহগার হবে। এভাবে যার যত বেশি অবহেলা তার তত বেশি গুনাহ হবে।
বি.দ্র. ০১
অনেকে বলে, তালেবানরা জিহাদ করছে, আমরা না করলেও সমস্যা নেই। তাদের এ কথা ভুল। কারণ, তালেবানরা ইকদামি তথা কাফেরদের ভূমি দখলের জিহাদ করছে না, বরং দিফায়ি তথা নিজেদের বাঁচানোর জিহাদ করছে। মুসলিমদের উপর ফরয হলো, নিজেদের ভূমি সংরক্ষণ রাখার পাশাপাশি কাফেরদের ভূমি দখল করা।
তাছাড়া কিছু মানুষ জিহাদ করলেই যে বাকিদের দায়িত্ব আদায় হয়ে যাবে তা নয়, যেমনটা পূর্বে বলা হয়েছে। বরং বিভিন্ন দিক থেকে বিভিন্ন কাফের ভূমিতে জিহাদ হওয়া আবশ্যক, যাতে কাফেররা আমাদের ভূমিতে আগ্রাসনের হিম্মত করতে না পারে এবং আস্তে আস্তে কাফেরদের ভূমিগুলো দখল হতে থাকে।
বি.দ্র. ০২
অনেকে মনে করেন, দাওয়াত ও তাবলিগের অনুমতি দিলে কাফেরদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা জায়েয নেই। তাদের এ ধারণা ভুল। কাফেররা মুসলমান না হলে বা তাদের রাষ্ট্র মুসলিমদের হাতে সমর্পণ করে যিম্মি হয়ে জিযিয়া দিয়ে বসবাস করতে রাজি না হলে কিতাল ফরয। কাফের রাষ্ট্রে দাওয়াত ও তাবলিগের অনুমতি দেয়াই যথেষ্ট নয়।
***
Comment