কিতাবুস সিয়ার: কানযুদ দাকায়িক: ০২ যাদের উপর জিহাদ ফরয নয়
ولا يجب على صبيٍّ وامرأةٍ وعبدٍ وأعمى ومقعدٍ وأقطع. “নাবালেগ, মহিলা, গোলাম, অন্ধ, লেংড়া ও যার উভয় হাত কাটা: তাদের উপর জিহাদ ফরয নয়।” |
এখানে জিহাদ বলতে ইসলামী সীমান্ত পাড়ি দিয়ে কাফের রাষ্ট্রে গিয়ে জিহাদ করা উদ্দেশ্য। অর্থাৎ স্বাভাবিক অবস্থায় জিহাদ যখন ফরযে কিফায়া; তখন নাবালেগ, মহিলা, গোলাম ও শারীরিকভাবে অক্ষমদের উপর কাফের রাষ্ট্রে গিয়ে জিহাদ করা ফরয নয়। বরং এ অবস্থায় কাফের রাষ্ট্রে গিয়ে জিহাদ করা; শারীরিকভাবে সক্ষম স্বাধীন বালেগ পুরুষদের দায়িত্ব।
পক্ষান্তরে শত্রু যদি মুসলিম ভূমিতে হামলা করে বসে, তখন আপন আপন সামর্থ্যানুযায়ী সকলকে শরীক হতে হবে। এর আলোচনা সামনে আসছে।
উপরোক্ত ইবারাতে মৌলিকভাবে চার প্রকার মুসলিমের কথা বলা হয়েছে, যাদের উপর জিহাদ ফরয নয়:
১ম প্রকার: নাবালেগ। কারণ, নাবালেগ মুকাল্লাফ তথা শরীয়তের বিধান পালনে আদিষ্ট নয়। তবে অভিভাবক অনুমতি দিলে নিরাপত্তা বজায় রেখে তারাও কিতালে শরীক হতে পারবে।
উল্লেখ্য, নাবালেগ বলতে শরীয়তের দৃষ্টিতে নাবালেগ উদ্দেশ্য; সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় আইনে নয়। যেমন কোনো ছেলের যদি তেরো বছরে স্বপ্নদোষ হয়ে যায়, তাহলে সে বালেগ; যদিও সামাজিকভাবে বা রাষ্ট্রীয় আইনে চৌদ্দ বা আটার বছর হওয়ার আগ পর্যন্ত শিশু, ছোট, অবুঝ, মত প্রকাশের অনুপযোগী বা আইন-কানুনের আওতামুক্ত মনে করা হয়।
বালেগ হওয়ার পর নামায রোযা এবং জিহাদ-কিতালসহ যাবতীয় বিধি বিধান বর্তিয়ে যাবে।
পাগল: পাগলরা নাবালেগের হুকুমে। তাদের উপর জিহাদ ফরয নয়।
২য় প্রকার: মহিলা। তারা বালেগ হলেও জিহাদ ফরয নয়।
কারণ, তাদের শারীরিক গঠন দুর্বল এবং কিতালের অনুপযোগী। এজন্য বিবাহিত অবিবাহিত, যুবতী বৃদ্ধ কোনো মহিলার উপর জিহাদ ফরয নয়। এমনকি স্বামী অনুমতি দিলে বা আদেশ করলেও না। বরং বিশেষ প্রয়োজন না পড়লে তাদেরকে জিহাদে নেয়াও ঠিক নয়। বিশেষত যদি সম্ভ্রম হানির আশঙ্কা থাকে। এর আলোচনা সামনে আসবে।
উল্লেখ্য, কোনো নারী শত্রু কর্তৃক আক্রান্ত হলে বা অসৎ উদ্দেশ্যে কেউ তার দিকে হাত বাড়ালে, তখন নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করা ফরয। (মুগনিল মুহতাজ, খতিব শারবিনি)
৩য় প্রকার: গোলাম। বালেগ ও সক্ষম হলেও তাদের উপর জিহাদ ফরয নয়।
গোলাম অন্য দশজন পুরুষের মতো শারীরিকভাবে সক্ষম হলেও সে মূলত মুনিবের ব্যক্তিগত সম্পদ। কিতালে চলে গেলে মুনিবের খিদমত ও কাজ-কামে বিঘ্ন ঘটবে। নিহত হলে মুনিবের একটা সম্পদ নষ্ট হবে। তাই শারীরিকভাবে সক্ষম হওয়ার পরও তাদের উপর জিহাদ ফরয নয়। বরং জিহাদের দায়িত্ব মুনিবের। তবে মুনিব অনুমতি দিলে গোলামও জিহাদে যেতে পারবে।
৪র্থ প্রকার: শারীরিকভাবে অক্ষম স্বাধীন ও বালেগ পুরুষ।
অক্ষমদের এখানে তিনটি উদাহরণ দেয়া হয়েছে: ১. অন্ধ; ২. লেংড়া; ৩. যার উভয় হাত কাটা।
এখানে মূলনীতি হলো: অসুস্থতা, পঙ্গুত্ব ইত্যাদি কারণে যারা অস্ত্র চালনা ও লড়াইয়ে অক্ষম, তাদের উপর কিতাল ফরয নয়। মুসান্নিফ রহ. তিনটি উদাহরণ এনেছেন। এছাড়াও শারীরিকভাবে অসমর্থ্য ও অক্ষম যত মুসলিম আছে, সকলের ব্যাপারেই একই কথা যে, তাদের উপর কিতাল ফরয নয়।
সংক্ষেপে:
১. নাবালেগের উপর জিহাদ ফরয নয়।
বালেগদের মধ্যে:
২. সৃষ্টিগতভাবে দুর্বল ও অনুপযোগী হওয়ায় মহিলাদের উপর ফরয নয়।
৩. মুনিবের হক নষ্ট হবে বিধায় (মুনিব অনুমতি না দিলে) গোলামের উপর ফরয নয়।
৪. স্বাধীন পুরুষদের যারা বিশেষ কোনো অসুস্থতা বা দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে অক্ষম হয়ে পড়েছে তাদের উপরও ফরয নয়।
এছাড়া বাকি সকল (শিক্ষিত-অশিক্ষিত, সামরিক-বেসামরিক, আলেম-গাইরে আলেম) সকল স্বাধীন পুরুষের উপর জিহাদ ফরয। মৌলিকভাবে এ দায়িত্ব তাদেরকেই আদায় করতে হবে।
***
বি.দ্র. ০১ সর্দি, কাশি, সামান্য জ্বর-মাথাব্যথা: এ ধরনের টুকটাক অসুখ জিহাদ ফরয হওয়ার পথে প্রতিবন্ধক নয়। (মুগনি, ইবনে কুদামা)
বি.দ্র. ০২ শারীরিকভাবে অক্ষমদের সম্পদ থাকলে জিহাদের পথে প্রয়োজনীয় সম্পদ ব্যয় করা ফরয।
বি.দ্র. ০৩ শত্রু হামলা করে বসলে এবং স্বাধীন সক্ষম পুরুষরা প্রতিহত করার জন্য যথেষ্ট না হলে; মহিলা, গোলাম ও শারীরিকভাবে অক্ষম মুসলিমদের উপর ফরয হবে: সামর্থ্যানুযায়ী যে যেভাবে পারে শরীক হওয়া।
বি.দ্র. ০৪ মনে করা হয়, জিহাদ শুধু রাষ্ট্র বা সামরিক বাহিনির উপর ফরয, সাধারণ মুসলিমদের উপর ফরয নয়। এ ধারণা ভুল। কুরআন সুন্নাহ এবং ফিকহের কিতাবাদিতে বেসমারিক ও সাধারণদের বাদ দেয়া হয়নি।
বি.দ্র. ০৫ মনে করা হয়, তালিবুল ইলম ও আলেম উলামাদের উপর (বিশেষত যারা বড় আলেম) তাদের উপর জিহাদ ফরয নয়। এ ধারণা ভুল। কুরআন সুন্নাহ এবং ফিকহের কিতাবাদিতে উলামা তুলাবাদের বাদ দেয়া হয়নি।
***
কিতাবুস সিয়ার: কানযুদ দাকায়িক: ০১ ভূমিকা ও জিহাদের হুকুম
https://dawahilallah.com/forum/%E0%A...A7%81%E0%A6%AE
Comment