ইসতিশহাদী বা শহীদি হামলা সম্পর্কে দলিল চাই। বিজ্ঞ কোনো ভাই এ ব্যাপারে কমেন্টে বিস্তারিত জানাবেন। জনৈক একজন আলিম ইসতিশহাদী বা শহীদি হামলা সম্পর্কে বলেছেন এটা নাকি আত্নহত্যার শামিল। এতে নাকি সে জান্নাতি হবে না বরং জাহান্নামী হবে। এতে করে অনেকেই ইসতিশহাদী বা শহীদি হামলার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত হচ্ছে।
Announcement
Collapse
No announcement yet.
|| ইসতিশহাদী বা শহীদি হামলা সম্পর্কে দলিল চাই ||
Collapse
X
-
আত্মঘাতী হামলা নিয়ে দারুল উলূম হাটহাজারীর ফতোয়া
আত্মঘাতী হামলা: ইসলামী শরীয়াহ কী বলে?
ইসলাম শান্তির ধর্ম। শান্তি ও শৃঙ্খলা অটুট রাখার জন্যে কখনো কখনো জিহাদের প্রয়োজন হয়। এই জিহাদ হতে হবে শরী‘আত কর্তৃক নির্ধারিত নিয়মনীতির আলোকে। বলাবাহুল্য, জিহাদের পদ্ধতি পরিবর্তনশীল। যুগের পরিবর্তনের সাথে জিহাদের কৌশল পরিবর্তন হতে থাকে। জিহাদের বহুল প্রচলিত একটি কৌশল হলো ‘আত্মোৎসর্গ হামলা’। এ কৌশলের হুবহু নজীর পূর্ববর্তী কিতাবে বিস্তারিত না থাকায় শর‘য়ী ব্যাখ্যার দিক থেকে কিছুটা জটিলতার রূপ নিয়েছে। নিম্নে সংক্ষেপে শরী‘আতের আলোকে ব্যাখ্যা তুলে ধরা হলো।
ইসলাম একজন মানুষকে সম্মান করে। একজন মানুষের জীবনকে পূর্ণ মর্যাদা দেয়। বরং শরী‘আতের মৌলিক উদ্দেশ্যের মাঝে মানুষের জান সংরক্ষণের বিশেষ গুরুত্ব ও ভূমিকা রয়েছে। তাই কোন ব্যক্তি নিজের জান বাঁচানোর জন্যে অন্যের সাথে যুদ্ধ করতে পারে। এই যুদ্ধ করে করে নিহত হলে ইসলাম তাকে শাহাদাতের মর্যাদা দিয়েছে। সর্বোপরি ইসলাম চায় না একজনের জান বিনষ্ট হয়ে যাক। তাই ইসলাম কঠোর হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেছে, যেন কোন ব্যক্তি নিজের জান নিজেই ধ্বংস না করে। আত্মহত্যা ও আত্মহত্যাকারীর ব্যাপারে অনেক নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। রাসূল ইরশাদ করেছেন- ﻣﻦ ﻗﺘﻞ ﻧﻔﺴﻪ ﺑﺸﻲﺀ ﻋﺬﺏ ﺑﻪ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ . “যদি কেউ কোন জিনিস দ্বারা আত্মহত্যা করে, তাহলে কিয়ামতের দিন ঐ জিনিস দ্বারাই তাকে আযাব দেয়া হবে।” (সহীহ মুসলিম:১/৭২)
শরী‘আতে আত্মহত্যার কোন স্থান নেই। পক্ষান্তরে জিহাদে নিজের জান ব্যবহার করার উৎসাহ ও হুকুম দেয়া হয়েছে এবং এ কথাও বলা হয়েছে যে, আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতের পরিবর্তে মুমিনের জান মাল ক্রয় করেছেন। ইরশাদ হয়েছে- “আল্লাহ তা‘আলা ক্রয় করে নিয়েছেন মুমিনদের থেকে তাঁদের জান ও মাল এই মূল্যে যে, তাঁদের জন্য রয়েছে জান্নাত। তাঁরা যুদ্ধ করে আল্লাহর পথে; অতঃপর হত্যা করে ও নিহত হয়।” (সূরা তাওবা: ১১১) অর্থাৎ আল্লাহ নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন যে, মুমিনদের জান-মাল দ্বীনের স্বার্থে ব্যবহার হবে।
জান-মাল ব্যবহারের বিভিন্ন ক্ষেত্র রয়েছে, যার চূড়ান্ত পর্যায় হলো জিহাদে অংশগ্রহণ । জিহাদে অংশগ্রহণ করে জান-মাল ব্যবহারের দু’টি রূপ হতে পারে। ১. এমনভাবে জিহাদে অংশ নেয়া যার পর কাফেরের সাথে যুদ্ধ করতে করতে এক পর্যায়ে নিরাপদে ফিরে আসার সম্ভাবনা হলেও থাকে। যেমন নববী যুগ থেকে এখন পর্যন্ত সাধারণত যে পদ্ধতি চালু আছে তাতে এক পর্যায়ে ফিরে আসার সম্ভাবনা ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত কেউ ফিরে আসত কেউ আল্লাহর কাছে চলে যেত। এ পদ্ধতি জায়েয হওয়ার ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই। বরং অবস্থাভেদে কখনো ওয়াজিব বা ফরয হয়ে থাকে।
২. কাফেরের ক্ষতি ও ধ্বংস করার জন্য এমনভাবে নিজেকে পেশ করা যার পর পুনরায় প্রাণ নিয়ে ফিরে আসার কোন সম্ভাবনা নেই। যেমন বর্তমানে বহুল প্রচলিত একটি রূপ ‘আত্মোৎসর্গ’ হামলা।
★এ পদ্ধতিতে দু’টি দিক রয়েছে। এক. যেহেতু নিরাপদে ফিরে আসার কোন সম্ভাবনা নেই, যেমনটি প্রথম পদ্ধতির মাঝে ছিল সেহেতু এটা বাহ্যত এক পর্যায়ে আত্মহত্যার আওতায় পড়ে, যা সর্বাবস্থায় নিষেধ। দুই. ইসলাম জিহাদে নিজেকে পেশ করার ব্যাপক উৎসাহ দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে কুরআন ও হাদীসে সুস্পষ্ট কোন সীমারেখা বলে দেয়া হয়নি। বরং আয়াত ও হাদীসের ব্যাপকতা এবং কিছু সাহাবীর আমল থেকে অনুমতি বুঝে আসে। তাই এ পদ্ধতিও কুরআন হাদীসের ব্যাপকতার মাঝে পড়ে, যার সারসংক্ষেপ নিম্নে উল্লেখ করা হলো।
★কুরআনের আলোকে আত্মোৎসর্গ আল্লাহ তা’আলা কুরআনে কারীমে ইরশাদ করেছেন- “মানুষদের মধ্যে এমন লোকও আছে, যে আল্লাহর সন্তুিষ্ট লাভের উদ্দেশ্যে আত্ম-বিক্রয় করে থাকে। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত দয়াবান।” সূরা বাকারা: ২০৭
অর্থাৎ যারা জিহাদের ময়দানে জীবন বিলিয়ে নিজেকে বিক্রয় করে থাকে। (রুহুল মা’আনী: ২/৯৬, মাকতাবায়ে এমদাদিয়া, মুলতান, পাকিস্তান)
আল্লামা কুরতুবী রাহ. স্বীয় তাফসীর গ্রন্থে লিখেছেন, কোন কোন মুফাস্সির বলেন, আয়াতটি ব্যাপক অর্থবোধক। আল্লাহর রাস্তার প্রত্যেক মুজাহিদ, শহীদ হওয়ার জন্য নিজেকে উৎসর্গকারী এবং খারাপ কাজে বাধাদানকারী সকলেই এ আয়াতের অন্তর্ভুক্ত।(তা
ফসীরে কুরতুবী: ৩/১৬, দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যা, বৈরুত, লেবানন)
ইবনে কাসীর রাহ. এ মতটিকে অধিকাংশ মুফাসসীরের মত বলেছেন।(তাফসীরে ইবনে কাসীর: ১/৩৬৯, দারু ইবনুল জাওযী, কায়রো)
ইবনে কাসীর রাহ. এ আয়াতের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে নকল করেন, একবার হিশাম ইবনে আমের রাযি. শত্রু বাহিনীর দুই কাতারের মাঝে হামলা করলে কিছু লোক এর বিরোধিতা করে। তখন হযরত ওমর রাযি., হযরত আবু হুরায়রা রাযি. সহ অন্যান্যরা আপত্তিকারী ব্যক্তিদের মত প্রত্যাখ্যান করে এই আয়াত তেলাওয়াত করেন- “মানুষদের মধ্যে এমন লোকও আছে, যে আল্লাহর সন্তুিষ্ট লাভের উদ্দেশ্যে আত্ম-বিক্রয় করে থাকে। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত দয়াবান।”(তাফসীর
ে ইবনে কাসীর: ১/৩৬৯, দারু ইবনুল জাওযী, কায়রো)
আল্লাহ তা‘আলা অন্য আয়াতে ইরশাদ করেন- “সুতরাং আল্লাহর পথে যুদ্ধ কর; তোমাকে শুধু তোমার নিজের সম্পর্কে দায়ী করা হবে।” (সূরা নিসা: ৮৪)
তাবে‘য়ী আবু ইসহাক রাহ. বলেন, একবার আমি হযরত বারা ইবনে আযেব রাযি. কে জিজ্ঞাসা করলাম, যদি কোন ব্যক্তি একাই মুশরিকদের উপর আক্রমণ করে, তবে সে কি ঐ ব্যক্তির বিধানে অর্ন্তভুক্ত হবে, যে নিজ হাতে নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়? উত্তরে তিনি বলেন, না। কেননা আল্লাহ তা‘আলা তার রাসূল কে প্রেরণ করেছেন এবং বলেছেন- “সুতরাং আল্লাহর পথে যুদ্ধ কর; তোমাকে শুধু তোমার নিজের জন্য দায়ী করা হবে।” (তাফসীরে ইবনে কাসীর: ২/২৩৮, দারু ইবনুল জাওযী, কায়রো)
★হাদীসের আলোকে আত্মোৎসর্গ
উহুদের দিন অনেক সাহাবায়ে কেরাম একা শত্রুর মাঝে ঢুকে আক্রমণ করেন এবং শাহাদাত বরণ করেন, যেখানে নিশ্চিত মত্যুর আশঙ্কা ছিল। রাসূল তাঁদের প্রশংসাও করেছেন। আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত- ﺃﻓﺮﺩ ﻳﻮﻡ ﺃﺣﺪ ﻓﻰ ﺳـــﺒﻌﺔ ﻣﻦ ﺍﻷﻧﺼـــﺎﺭ ﻭﺭﺟﻠﻴﻦ ﻣﻦ ﻗﺮﻳﺶ ﻓﻠﻤﺎ ﺭﻫﻘﻮﻩ ﻗﺎﻝ : ﻣﻦ ﻳﺮﺩﻫ ﻢ ﻋﻨﺎ ﺃﻥ ﺭﺳـــﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﻟﻪ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﺃﻭ ﻫﻮ ﺭﻓﻴﻘﻲ ﻓﻲ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﻓﺘﻘﺪﻡ ﺭﺟﻞ ﻣﻦ ﺍﻷﻧﺼـﺎﺭ ﻓﻘﺎﺗﻞ ﺣﺘﻰ ﻗﺘﻞ ﺛﻢ ﺭﻫﻘﻮﻩ ﺃﻳﻀـﺎ ﻓﻠﻢ ﻳﺰﻝ ﻛﺬﻟﻚ ﺣﺘﻰ ﻗﺘﻞ ﺍﻟﺴﺒﻌﺔ . “উহুদের দিন রাসূলুল্লাহ এর সাথে সাতজন আনসারী ও দুইজন কুরাইশী সাহাবী ছিলেন। এক সময় মুশরিকরা রাসূলুল্লাহ এর কাছে চলে আসল, তখন তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে কে আছ যে তাদের প্রতিহত করবে? তার জন্য জান্নাত রয়েছে, অথবা সে জান্নাতে আমার সাথী হবে। তখন এক আনসারী সাহাবী সামনে এগিয়ে লড়াই করলেন এবং শহীদ হয়ে গেলেন অতঃপর আবার তারা রাসূল এর কাছে চলে আসলে একে একে সাতজনই শহীদ হয়ে গেলেন।”(সহীহ মুসলিম: ২/১০৭)
জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- ﻳﻮﻡ ﺃﺣﺪ : ﺃﺭﺃﻳﺖ ﺇﻥ ﻗﺘﻠﺖ ﻓﺄﻳﻦ ﺃﻧﺎ؟ ﻗﺎﻝ : ﻓﻲ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﻓﺄﻟﻘﻰ ﺗﻤﺮﺍﺕ ﻓﻲ ﻳﺪﻩ ﺛﻢ ﻗﺎﺗﻞ ﺣﺘﻰ ﻗﺎﻝ ﺭﺟﻞ ﻟﻠﻨﺒﻲ ﻗﺘﻞ . “উহুদের দিন এক সাহাবী রাসূল কে জিজ্ঞেস করলেন, আমি যদি নিহত হই, তবে আমি কোথায় যাব? রাসূল বললেন, জান্নাতে। তখন তিনি তাঁর হাতের খেজুরগুলো নিক্ষেপ করে প্রচন্ড বেগে হামলা করলেন এবং শহীদ হয়ে গেলেন।” (সহীহ বুখারী: ২/৫৭৯)
ﻭﺑﻠﻐﻨﺎ ﺃﻥ ﺍﻟﺒﺮﺍﺀ ﻳﻮﻡ ﺣﺮﺏ ﻣﺴﻴﻠﻤﺔ ﺍﻟﻜﺬﺍﺏ ﺃﻣﺮ ﺃﺻﺤﺎﺑﻪ ﺃﻥ ﻳﺤﺘﻤﻠﻮﻩ ﻋﻠﻰ ﺗﺮﺱ، ﻋﻠﻰ ﺃﺳﻨﺔ ﺭﻣﺎﺣﻬﻢ، ﻭﻳﻠﻘﻮﻩ ৭৭৫. ﻓﻲ ﺍﻟﺤﺪﻳﻘﺔ . ﻓﺎﻗﺘﺤﻢ ﺇﻟﻴﻬﻢ، ﻭﺷﺪ ﻋﻠﻴﻬﻢ، ﻭﻗﺎﺗﻞ ﺣﺘﻰ ﺍﻓﺘﺘﺢ ﺑﺎﺏ ﺍﻟﺤﺪﻳﻘﺔ হযরত বারা ইবনে মালেক রাযি. মুসায়লামা কাযযাবের সাথে যুদ্ধের দিন সাথীদেরকে বর্শার আগায় ঢাল রেখে তাঁকে তার উপর বসিয়ে বাগানের মধ্যে ছুঁড়ে দিতে বললেন। অতঃপর তিনি তাদের মাঝে ঢুকে প্রচন্ড বেগে আক্রমণ করলেন এবং তাদের হত্যা করে বাগানের দরজা খুলে দিলেন।
( ﻋﻦ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﺳﻴﺮﻳﻦ ﺍﻟﺴﻨﻦ ﺍﻟﻜﺒﺮﻯ ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﻴﻬﻘﻲ ﻓﻲ )
★আত্মোৎসর্গ ও ফুকাহায়ে কেরাম
আত্মোৎসর্গ হামলার একটি রূপ হলো বিপুল সংখ্যক কাফেরের মাঝে ঢুকে পড়া। এভাবে হামলা সম্পর্কে ইমাম মুহাম্মদ রাহ. বলেছেন, যদি কোনভাবে মুসলমানদের উপকার ও কাফেরের ক্ষতি হয় তাহলে এরকম হামলা করা যাবে। যেমন ইমাম আবু বকর জাসসাস রাহ. ইমাম মুহাম্মদ রাহ. এর মত এভাবে উল্লেখ করেন: - ﻓﺈﻥ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﺍﻟﺤﺴﻦ ﺍﻟﺸﻴﺒﺎﻧﻲ ﺫﻛﺮ ﻓﻲ ﺍﻟﺴﻴﺮ ﺍﻟﻜﺒﻴﺮ ﺃﻥ ﺭﺟﻼ ﻟﻮ ﺣﻤﻞ ﻋﻠﻰ ﺃﻟﻒ ﺭﺟﻞ ﻭ ﻫﻮ ﻭﺣﺪﻩ، ﻟﻢ ﻳﻜﻦ ﺑﺬﻟﻚ ﺑﺄﺱ ﺇﺫﺍ ﻛﺎﻥ ﻳﻄﻤﻊ ﻓﻲ ﻧﺠﺎﺓ ﺃﻭ ﻧﻜﺎﻳﺔ، ﻓﺈﻥ ﻛﺎﻥ ﻻ ﻳﻄﻤﻊ ﻓﻲ ﻧﺠﺎﺓ ﻭ ﻻ ﻧﻜﺎﻳﺔ ﻓﺈﻧﻲ ﺃ ﻛﺮﻩ ﻟﻪ ﺫﻟﻚ، ﻷﻧﻪ ﻋﺮﺽ ﻧﻔﺴﻪ ﻟﻠﺘﻠﻒ ﻣﻦ ﻏﻴﺮ ﻣﻨﻔﻌﺔ ﻟﻠﻤﺴﻠﻤﻴﻦ . ﻭ ﺇﻧﻤﺎ ﻳﻨﺒﻐﻲ ﻟﻠﺮﺟﻞ ﺃﻥ ﻳﻔﻌﻞ ﻫﺬﺍ ﺇﺫﺍ ﻛﺎﻥ ﻳﻄﻤﻊ ﻓﻲ ﻧﺠﺎﺓ ﺃﻭ ﻣﻨﻔﻌﺔ ﻟﻠﻤﺴﻠﻤﻴﻦ، ﻓﺈﻥ ﻛﺎﻥ ﻻ ﻳﻄ ﻤﻊ ﻓﻲ ﻧﺠﺎﺓ ﻭ ﻻ ﻧﻜﺎﻳﺔ ﻭ ﻟﻜﻨﻪ ﻯﺀ ِ ّ ﻳﺠﺮ ﺍﻟﻤﺴﻠﻤﻴﻦ ﺑﺬﻟﻚ ﺣﺘﻰ ﻳﻔﻌﻠﻮﺍ ﻣﺜﻞ ﻣﺎ ﻓﻌﻞ، ﻓﻴﻘﺘﻠﻮﻥ ﻭ ﻳﻨﻜﻮﻥ ﻓﻲ ﺍﻟﻌﺪﻭ ﻓﻼ ﺑﺄﺱ ﺑﺬﻟﻚ ﺇﻥ ﺷﺎﺀ ﺍﻟﻠﻪ، ﻷﻧﻪ ﻟﻮ ﻛﺎﻥ ﻋﻠﻰ ﻃﻤﻊ ﻣﻦ ﺍﻟﻨﻜﺎﻳﺔ ﻓﻲ ﺍﻟﻌﺪﻭ ﻭ ﻻ ﻳﻄﻤﻊ ﻓﻲ ﺍﻟﻨﺠﺎﺓ ﻟﻢ ﺃﺭ ﺑﺄﺳﺎ ﺃﻥ ﻳﺤﻤﻞ ﻋﻠﻴﻬﻢ ... ﻭ ﺃﺭﺟﻮ ﺃﻥ ﻳﻜﻮﻥ ﻓﻴﻪ ﻣﺄﺟﻮﺭﺍ . ﻭ ﺇﻧﻤﺎ ﻳﻜﺮﻩ ﻟﻪ ﺫﻟﻚ ﺇﺫﺍ ﻛﺎﻥ ﻻ ﻣﻨﻔﻌﺔ ﻓﻴﻪ ﻋﻠﻰ ﻭﺟﻪ ﻣﻦ ﺍﻟﻮﺟﻮﻩ ، ﻭ ﺇﻥ ﻛﺎﻥ ﻻ ﻳﻄﻤﻊ ﻓﻲ ﻧﺠﺎﺓ ﻭ ﻻ ﻧﻜﺎﻳﺔ ﻭ ﻟﻜﻨﻪ ﻣﻤﺎ ﻳﺮﻫﺐ ﺍﻟﻌﺪﻭ، ﻓﻼ ﺑﺄﺱ ﺑﺬﻟﻚ ﻷﻥ ﻫﺬﺍ ﺃﻓﻀﻞ ﺍﻟﻨﻜﺎﻳﺔ ﻭ ﻓﻴﻪ ﻣﻨﻔﻌﺔ ﻟﻠﻤﺴﻠﻤﻴﻦ .
“মুহাম্মদ ইবনুল হাসান আশ শায়বানী রাহ. সিয়ারে কাবীরে উল্লেখ করেন, একজন লোক যদি এক হাজার লোকের উপর হামলা করে এতে কোন অসুবিধা নেই যদি সে নিজের মুক্তির আশা রাখে কিংবা শত্রুদের আহত করার আশাবাদী হয়। আর যদি সে নিজের মুক্তি বা শত্রুদের ক্ষতি করার আশাবাদী না হয়, তাহলে আমি তার জন্য এ কাজটিকে অপছন্দ করি। কেননা এতে মুসলমানদের কোন ফায়দা ছাড়া নিজেকে ধ্বংসের জন্য পেশ করা হয়। একজন ব্যক্তির জন্য এ ধরনের হামলা তখনই সমীচীন হবে যখন সে তার হামলা দ্বারা নিজে নিরাপদে ফিরে আসা ও মুসলমানদের উপকার হওয়ার আশা রাখবে। যদি এমন আশা না থাকে, কিন্তু শত্রুদের ক্ষতি সাধনের জন্য তার মত হামলা করার প্রতি অন্যদেরকে উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে হয় তাহলে শর‘য়ী কোন সমস্যা নেই। কেননা যদি শত্রুদের ক্ষতি করার আশা থাকে, কিন্তু নিজেকে মুক্ত করার আশা না থাকে, তাহলেও আমি তাদের উপর হামলা করতে কোন অসুবিধা মনে করি না এবং আমি আশা করি এই হামলার কারণে সে প্রতিদান পাবে। আর যখন হামলার দ্বারা কোন ফায়দা না হয়, তখন আক্রমণ করা মাকরূহ। যদি নিজের মুক্তির বা তাদের ক্ষতির কোন আশা না থাকে কিন্তু এর দ্বারা শত্রুদের ভীতি প্রদর্শন করা যায় তাহলে এ হামলাতেও কোন অসুবিধা নেই। কেননা এটাই তো সবচেয়ে বেশি ক্ষতি এবং এতে মুসলমানদের উপকারও নিহিত।” (আহকামুল কুরআন লিল জাস্সাস: ১/৩২৭, দারু ইহয়ায়িত্ তুরাছিল আরাবী, বৈরুত, লেবানন)
ইমাম জাসসাস রাহ. ইমাম মুহাম্মদ রাহ. এর মত সমর্থন করে বলেন- “ইমাম মুহাম্মদ রাহ. যে সকল সূরত বর্ণনা করেছেন এগুলো সহীহ। এগুলো ব্যতীত ভিন্ন সূরত জায়েয নেই। আর উল্লিখিত বিবরণ দ্বারা ব্যাখ্যা করা হবে ঐ ব্যক্তির কথাকে, যিনি আবু আইয়ূব রাযি. এর বরাতে বর্ণিত হাদীসে ﻭَ ﺍَﻧْﻔِﻘُﻮْﺍ ﻓِﯽْ ﺳَﺒِﯿْﻞِ ﺍﻟﻠّٰﻪِ ﻭَ ﻟَﺎ ﺗُﻠْﻘُﻮْﺍ ﺑِﺎَﯾْﺪِﯾْﻜُﻢْ ﺍِﻟَﯽ ﺍﻟﺘَّﻬْﻠُﻜَﺔِ ۛۖۚ আয়াতের ব্যাখ্যা এভাবে করেছেন যে, শত্রুদের উপর হামলা করে নিজেকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে । যেহেতু কোন উপকারশূন্য হলে তাদের মতে এতে কোন ফায়দা নেই। যখন বিষয়টি এমনই তখন দ্বীন ও মুসলমানদের কোন ফায়দা ছাড়া নিজের জীবনকে ধ্বংস করা উচিৎ নয়। আর যখন নিজেকে ধ্বংস করার মধ্যে দ্বীনের ফায়দা থাকে, তখন এটা হবে এমন এক মর্যাদাপূর্ণ কাজ, যার প্রশংসা স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা করেছেন। (আল্লাহ তা‘আলা বলেন) তারা (যারা দ্বীনের ফায়দার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করে দিয়েছে) তাদের প্রতিপালকের নিকট রিযিকপ্রাপ্ত হবে।(সূরা আল ইমরান: ১৬৯)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, ‘কিছু মানুষ এমন আছে যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজেকে বিক্রি করে দিয়েছে।’(সূরা বাকারা: ২০৭)
এ ধরনের আরো অনেক আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা তাদের প্রশংসা করেছেন, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজেদের জীবন বিসর্জন দিয়েছে।”(আহকামুল কুরআন লিল জাসসাস: ১/৩২৭-৩২৮, দারু ইহয়ায়িত্ তুরাছিল আরাবী, বৈরুত, লেবানন )
আল্লামা যফর আহমদ উসমানী রাহ. ই‘লাউস সুনানে এ সম্পর্কে স্বতন্ত্র একটি অধ্যায় করে বলেন- ﻭﺃﻣﺎ ﻣﺴـــﺄﻟﺔ ﺣﻤﻞ ﺍﻟﻮﺍﺣﺪ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻌﺪﺩ ﺍﻟﻜﺜﻴﺮ ﻣﻦ ﺍﻟﻌﺪﻭ ﻓﺼـــﺮﺡ ﺍﻟﺠﻤﻬﻮﺭ ﺑﺄﻧﻪ ﺇﻥ ﻛﺎﻥ ﻟﻔﺮﻁ ﺷـــﺠﺎﻋﺘﻪ ﻭﻇﻨﻪ ﺃﻧﻪ ﻳﺮﻫﺐ ﺍﻟﻌﺪﻭ ﺑﺬﻟﻚ ﺃﻭ ﻳﺠﺮﺉ ﺍﻟﻤﺴــﻠﻤﻴﻦ ﻋﻠﻴﻬﻢ ﻭﻧﺤﻮ ﺫﻟﻚ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﻘﺎﺻــﺪ ﺍﻟﺼــﺤﻴﺤﺔ ﻓﻬﻮ ﺣﺴــﻦ ﻭﻣﺘﻰ ﻛﺎﻥ ﻣﺠﺮﺩ ﺗﻬﻮﺭ ﻓﻤﻤﻨﻮﻉ ﻭﻻ ﺳﻴﻤﺎ ﺇﻥ ﺗﺮﺗﺐ ﻋﻠﻰ ﺫﻟﻚ ﻭﻫﻦ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺴﻠﻤﻴﻦ ﻭﺍﻟﻠﻪ ﺃﻋﻠﻢ .
“বিশাল বাহিনীর উপর একা আক্রমণ করার মাসআলা সম্পর্কে জমহুর ফুকাহায়ে কেরাম রাহ. এর মত হলো, যদি তার বীরত্বের কারণে তার মাঝে প্রবল ধারণা হয় যে, সে দুশমনের মাঝে ভীতি সৃষ্টি করতে পারবে, এ ধরনের সৎ উদ্দেশ্যে হলে, তা জায়েয আছে। আর যদি শুধু ধ্বংসমূলক হামলা হয় তাহলে জায়েয হবে না। বিশেষ করে যদি তার কারণে মুসলমানদের মাঝে দুর্বলতা চলে আসে।”(ই‘লাউস সুনান: ১২/২৮-২৯, দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যা, বৈরুত, লেবানন)
আল্লামা শামী রাহ. শরহুস সিয়ারের উদ্ধৃতিতে বলেন- ﺫﻛﺮ ﻓﻲ ﺷﺮﺡ ﺍﻟﺴﻴﺮ ﺃﻧﻪ ﻻ ﺑﺄﺱ ﺃﻥ ﻳﺤﻤﻞ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﻭﺣﺪﻩ ﻭﺇﻥ
ﻇﻦ ﺃﻧﻪ ﻳﻘﺘﻞ ﺇﺫﺍ ﻛﺎﻥ ﻳﺼﻨﻊ ﺷﻴﺌﺎ ﺑ ﻘﺘﻞ ﺃﻭ ﻳﻮﻡ ﺃﺣﺪ ﻭﻣﺪﺣﻬﻢ ﻋﻠﻰ ﺫﻟﻚ، ﺑﺠﺮﺡ ﺃﻭ ﺑﻬﺰﻡ، ﻓﻘﺪ ﻓﻌﻞ ﺫﻟﻚ ﺟﻤﺎﻋﺔ ﻣﻦ ﺍﻟﺼﺤﺎﺑﺔ ﺑﻴﻦ ﻳﺪﻱ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﺄﻣﺎ ﺇﺫﺍ ﻋﻠﻢ ﺃﻧﻪ ﻻ ﻳﻨﻜﻲ ﻓﻴﻬﻢ ﻓﺈﻧﻪ ﻻ ﻳﺤﻞ ﻟﻪ ﺃﻥ ﻳﺤﻤﻞ ﻋﻠﻴﻬﻢ، ﻻﻧﻪ ﻻ ﻳﺤﺼﻞ ﺑﺤﻤﻠﺘﻪ ﺷ ﻲﺀ ﻣﻦ ﺇﻋﺰﺍﺯ ﺍﻟﺪﻳﻦ . “নিহত হওয়ার প্রবল ধারণা থাকা সত্ত্বেও একা এক ব্যক্তি শত্রুর উপর হামলা করতে পারবে, যদি সে দুশমনকে হত্যা, আহত অথবা পরাস্ত করার মাধ্যমে কোন ক্ষতি করতে পারে। কেননা অনেক সাহাবী রাযি. উহুদের দিন রাসূল এর সামনে এ ধরনের হামলা করেছেন এবং হুজুর তাদের প্রশংসা করেছেন। আর যদি এ ধারণা হয় যে, সে তাদের কোন ক্ষতি সাধন করতে পারবে না, তবে তার জন্য তাদের উপর হামলা করা জায়েয হবে না। কেননা তার এই হামলার দ্বারা দ্বীনের কোন ফায়দা হবে না।”(ফাতাওয়ায়ে শামী: ৬/২০৬,)মাকতাবায়ে যাকারিয়া, দেওবন্দ)
★আত্মোৎসর্গের শর্তসমূহ
কুরআন, হাদীস ও ফুকাহায়ে কেরামের উপরোল্লিখিত বর্ণনা থেকে বুঝা যায় যে, আত্মোৎসর্গ হামলা জায়েয, তবে কিছু শর্তের সাথে। ১. নিয়ত সহীহ হওয়া। তথা ই‘লায়ে কালিমাতুল্লাহ, দ্বীনের সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধির লক্ষ্য হতে হবে। যদি দুনিয়াবী কোন ফায়দা হাসিলের জন্য হয়, তাহলে জায়েয হবে না। ২. আক্রমণকারীর প্রবল ধারণা থাকা যে, তার এই হামলার দ্বারা শত্রুর ক্ষতি সাধিত হবে। ৩. যে কোনভাবে তার হামলা দ্বারা মুসলামানদের উপকার হতে হবে।
★একটি সংশয় ও তার নিরসন
কেউ কেউ একটি আয়াতের বাহ্যিক অর্থ থেকে আত্মোৎসর্গ হামলাকে আত্মঘাতী বলে থাকেন। অথচ উভয়টির মাঝে পার্থক্য রয়েছে। এ বিষয়ে সংশয় ও তার নিরসন নিম্নে তুলে ধরা হলো।
আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে কারীমে ইরশাদ করেছেন- “তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় কর এবং নিজেদের হাতে নিজেদেরকে ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ করো না।” ৭৮৩ উপরোক্ত আয়াত দ্বারা অনেকে আত্মোৎসর্গ হামলা নাজায়েয হওয়ার দলীল পেশ করে বলেন, আত্মোৎসর্গ হামলা আত্মহত্যার অন্তর্ভুক্ত। অনেক সাহাবী এ ধরনের ব্যাখ্যার আপত্তি করে অন্য ব্যাখ্যা দিয়েছেন। আবু ইমরান আসলাম রাযি. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন- ﻏﺰﻭﻧﺎ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﺪﻳﻨﺔ ﻧﺮﻳﺪ ﺍﻟﻘﺴﻄﻨﻄﻴﻨﻴﺔ ﻭﻋﻠﻰ ﺍﻟﺠﻤﺎﻋﺔ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺑﻦ ﺧﺎﻟﺪ ﺑﻦ ﺍﻟﻮﻟﻴﺪ ﻭﺍﻟﺮﻭﻡ ﻣﻠﺼﻘﻮ ﻇﻬﻮﺭﻫﻢ ﺑﺤﺎﺋﻂ ﺍﻟﻤﺪﻳﻨﺔ ﻓﺤﻤﻞ ﺭﺟﻞ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻌﺪﻭ ﻓﻘﺎﻝ ﺍﻟﻨﺎﺱ : ﻣﻪ ﻣﻪ ﻻ ﺇﻟﻪ ﺇﻻ ﺍﻟﻠﻪ ﻳﻠﻘﻲ ﺑﻴﺪﻳﻪ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﺘﻬﻠﻜﺔ . ﻓﻘﺎﻝ ﺃﺑﻮ ﺃﻳﻮﺏ : ﺇﻧﻤﺎ ﻧﺰﻟﺖ ﻫﺬﻩ ﺍﻵﻳﺔ ﻓﻴﻨﺎ ﻣﻌﺸﺮ ﺍﻷﻧﺼﺎﺭ ﻟﻤﺎ ﻧﺼﺮ ﺍﻟﻠﻪ ﻧﺒﻴﻪ ﻭﺃﻇﻬﺮ ﺍﻹﺳﻼﻡ ﻗﻠﻨﺎ : ﻫﻠﻢ ﻧﻘﻴﻢ ﻓﻰ ﻓﺎﻹﻟﻘﺎﺀ ﺑﺎﻷﻳﺪﻯ ﺇﻟﻰ ﺃﻣﻮﺍﻟﻨﺎ ﻭﻧﺼﻠﺤﻬﺎ ﻓﺄﻧﺰﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻭَ ﺍَﻧْﻔِﻘُﻮْﺍ ﻓِﯽْ ﺳَﺒِﯿْﻞِ ﺍﻟﻠّٰﻪِ ﻭَ ﻟَﺎ ﺗُﻠْﻘُﻮْﺍ ﺑِﺎَﯾْﺪِﯾْﻜُﻢْ ﺍِﻟَﯽ ﺍﻟﺘَّﻬْﻠُﻜَﺔِ ﺍﻟﺘﻬﻠﻜﺔ ﺃﻥ ﻧﻘﻴﻢ ﻓﻰ ﺃﻣﻮﺍﻟﻨﺎ ﻭﻧﺼﻠﺤﻬﺎ ﻭﻧﺪﻉ ﺍﻟﺠﻬﺎﺩ .
“আমরা মদীনা থেকে কুসতুনতুনিয়ার উদ্দেশ্যে যুদ্ধযাত্রা করলাম। রোমানরা তখন শহরের প্রাচীর ঘেঁষে অবস্থান নিয়েছে। আব্দুর রহমান ইবনে খালেদ ইবনে ওয়ালীদ রাযি. ছিলেন দলের সেনাপতি। এক ব্যক্তি শত্রুদের উপর হামলা করলো, তখন লোকেরা বলতে লাগলো, থাম! থাম! লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ! এ ব্যক্তি তো নিজেকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে। তখন হযরত আবু আইয়ূব আনসারী রাযি. বললেন, এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়েছে আমরা আনসারী সাহাবীদের ক্ষেত্রে, যখন আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় নবীকে সাহায্য করলেন এবং ইসলামকে প্রকাশ করলেন তখন আমরা বললাম, এখন আমরা আমাদের সম্পদের মাঝে থাকবো এবং সেগুলো দেখাশোনা করবো। তখন আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াত অবতীর্ণ করেন ‘তোমরা আল্লাহর পথে খরচ কর এবং নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়ো না।’ সুতরাং ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া হলো নিজেদের সম্পদ নিয়ে ব্যস্ত থাকা, তা দেখাশোনা করা এবং জিহাদ ছেড়ে দেয়া।”(সুনানে আবু দাউদ: ১/৩৪০, হাদীস নং ২৫১৪, হাদীসটি সহীহ)
এ হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম জাসসাস রাহ. বলেন- ﻓﺄﺧﺒﺮ ﺃﺑﻮ ﺃﻳﻮﺏ ﺃﻥ ﺍﻹﻟﻘﺎﺀ ﺑﺎﻷﻳﺪﻱ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﺘﻬﻠﻜﺔ ﻫﻮ ﺗﺮﻙ ﺍﻟﺠﻬﺎﺩ ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺃﻥ ﺍﻵﻳﺔ ﻓﻲ ﺫﻟﻚ ﻧﺰﻟﺖ ﻭﺭﻭﻱ ﻣﺜﻠﻪ ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﻭﺣﺬﻳﻔﺔ ﻭﺍﻟﺤﺴﻦ ﻭﻗﺘﺎﺩﺓ ﻭﻣﺠﺎﻫﺪ ﻭﺍﻟﻀﺤﺎﻙ ﻭﺭﻭﻱ ﻋﻦ ﺍﻟﺒﺮﺍﺀ ﺑﻦ ﻋﺎﺯﺏ ﻭﻋﺒﻴﺪﺓ ﺍﻟﺴﻠﻤﺎﻧﻲ ﺍﻹﻟﻘﺎﺀ ﺑﺎﻷﻳﺪﻱ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﺘﻬﻠﻜﺔ ﻫﻮ ﺍﻟﻴﺄﺱ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﻐﻔﺮﺓ ﺑﺎﺭﺗﻜﺎﺏ ﺍﻟﻤﻌﺎﺻﻲ .
“হযরত আবু আইয়ূব রাযি. সংবাদ দিলেন যে, নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়ার অর্থ হলো আল্লাহর পথে জিহাদ পরিত্যাগ করা। আয়াতটি এ ব্যাপারেই অবতীর্ণ হয়েছে। অনুরূপ ব্যাখ্যা হযরত ইবনে আব্বাস, হুযাইফা রাযি. হাসান, কাতাদা, মুজাহিদ ও যাহ্হাক রাহ. থেকেও বর্ণিত আছে। হযরত বারা ইবনে আযিব ও আবীদা সালমানী রা. বলেছেন যে, নিজেকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়া হলো গুনাহে লিপ্ত হওয়ার কারণে আল্লাহর ক্ষমা থেকে নিরাশ হওয়া।”(আহকামুল কুরআন লিল জাসসাস: ১/৩২৭, দারু ইহয়ায়িত্ তুরাছিল আরাবী, বৈরুত, লেবানন )
সুতরাং এ আয়াত দিয়ে আত্মোৎসর্গ হামলা অবৈধ হওয়ার দলীল পেশ করার সুযোগ নেই। স্বয়ং সাহাবীরাও এ আয়াতের বাহ্যিক অর্থকে আত্মোৎসর্গের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য মনে করেননি। তাই কোন ব্যক্তি যদি আল্লাহর সন্তুিষ্ট এবং দ্বীনের মর্যাদা সমুন্নত করার লক্ষ্যে ইসলামের শত্রুদের উপর এমনভাবে আক্রমণ করে যে, তার মধ্যে শতভাগ মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে, তবুও সে আত্মহত্যাকারী বলে গণ্য হবে না। বরং সে শাহাদাতের মর্যাদা লাভ করবে, যেমন পূর্বে প্রমাণাদিসহ আলোচিত হয়েছে।
প্রবন্ধকার: ...........
সত্যায়নে
মুফতী নূর আহমদ
প্রধান মুফতী ও মুহাদ্দিস, দারূল উলূম হাটহাজারী
মুফতী জসীমুদ্দীন
মুফতী ও মুহাদ্দিস, দারূল উলূম হাটহাজারী
মুফতী ফরিদুল হক
মুফতী ও উস্তায, দারূল উলূম হাটহাজারী"জিহাদ ঈমানের একটি অংশ ৷"-ইমাম বোখারী রহিমাহুল্লাহ
Comment
Comment