بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্য যিনি মানব জাতির জন্য পথ নির্দেশিকার ব্যবস্থা করেছেন। স্বলাত ও সালাম বর্ষিত হোক এই উম্মতের শিক্ষক, আল্লাহর বান্দা ও তার রসূল মুহাম্মাদ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি। ইসলামের প্রথম যুগ থেকে এখন পর্যন্ত যত ঈমানদার ভাই ও বোন মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তার রাস্তায় জিহাদ করেছেন, যারা এক আল্লাহর সন্তুষ্টিকেই তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ করে রেখেছেন, যারা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সবকিছু ব্যয় করতে রাজি এমন কি নিজের জীবন দিতেও দ্বিধা করেনা, যারা আল কুরআন ও সহীহ সুন্নার(সুন্নাহর) হিদায়াতকে আঁকড়ে ধরে ছিলেন ও আছেন, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাদেরকে ক্ষমা করে তদের মর্যাদাকে বৃদ্ধি করে দিন, আর আমাদেরকেও তাঁর সন্তুষ্টির পথে পরিচালিত করুন; আমীন।জিহাদ’কে বাদ দিয়ে ইসলামি রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার বুলি, এক কঠিন চক্রান্ত!
ইসলাম আগমনের প্রাথমিককালে নবুওয়াত প্রাপ্তির একেবারে প্রথম পর্যায়ে রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষজনকে দাওয়াতের মাধ্যমে ইসলাম গ্রহণের আহবান জানিয়েছিলেন তাও আবার গোপনে। পরে এক পর্যায়ে আল্লাহর আদেশক্রমে (সূরা মুদ্দাসসির) তিনি প্রকাশ্যে দাওয়াতের কার্যক্রম শুরু করলেন। রসুলুল্লহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কার সম্ভ্রান্ত গোত্রের, সবথেকে বিশ্বস্ত আল আমিন, সবথেকে উত্তম চরিত্রের, আরো অনেক গুন(গুণ) এমনকি সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ হওয়া সত্বেও (সত্ত্বেও) তার দ্বীন অধিকাংশ মানুষের দ্বারা বর্জিত হলো, আর যে হাতে গোনা কিছু লোক ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন তারাও সামাজিক, অর্থনৈতিক, পরিবেশগত কারনে (কারণে) নিজের দ্বীন গ্রহণের বিষয়টি পর্যন্ত প্রকাশ কারতে পারছিলেননা। আর যে কজন সাহাবী তাদের সত্য দ্বীন গ্রহণের বিষয়টি প্রচার করেছিলেন তাঁরা পদে পদে অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হলেন অথচ তারা চুরি, ধর্ষণ, অন্যায় দখলদারী, বিপর্যয় সৃষ্টি এরূপ কোন অপরাধে অপরাধী নন তারা শুধু একটি সত্য দ্বীন গ্রহণ করেছেন যা তাদের ন্যায় সঙ্গত অধিকার এরপরও তারাই নিজ গোত্র ও সমাজের লোকদের দ্বারা নির্যাতিত। নির্যাতনের মাত্রা এতই বেড়ে গেল যে, কয়েক বছরেও তা বন্ধ হল না একপর্যায়ে শিহাবে (শিয়াবে) আবু তালেবে তাদেরকে অর্থনৈতিক অবরোধে রেখে খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। সিরাতের গ্রন্থসমূহ থেকে জানা যায় এক পর্যায়ে অবরোধে আটকে পরা মুসলিমরা অনেকদিন খাদ্যের অভাবে গাছের পাতা খেয়ে জীবন ধারন করেছিলেন।
ফলাফল: সর্বশ্রেষ্ঠ আদম সন্তান রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর অনুসারীরা এমনি নির্যাতনের শিকার হলেন দ্বীনে হক্ক গ্রহণ ও প্রচারের কারনে(কারণে)।
শত সহস্র যুলুম অত্যাচার মেনে নিয়েও দাওয়াতি অভিযানের মাধ্যমে ইসলাম মাক্কায় বিজয় লাভ করতে পারেনি এমনকি টিকে থাকতেও পারেনি।
এক পর্যায়ে আল্লাহর আদেশে সাহাবাগণ ও রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হিজরতের মাধ্যমে ইসলাম মক্কা থেকে মদিনায় স্থানান্তরিত হয়। এই হল মক্কার দাওয়াতি অভিযানের ফলাফল। এটা বাস্তবতা কল্পনা নয় বা কোন নাটক, সিনেমা নয়, এটা ইসলামি আন্দোলনের প্রথম পর্যায়। আজকে কোন ইসলামি আন্দোলন তৈরী হলে তাদের ও এই দাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হবে এবং তাদের ক্ষেত্রেও ঐসব অবস্থার পুনরাবৃত্তি ঘটবে।
মদীনাঃ রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় হিজরত করার পর কয়েকদিনের মধ্যে ইসলামি ইমারতকে একটা শক্তিশালী অবস্থানে দাঁড় করানোর জন্য আশপাশের ইয়াহুদি, খৃষ্টান ও অন্যান্য কওমের সাথে নিরাপত্তা চুক্তিতে আবদ্ধ হন, ইসলামি ইমারতের উপর কোন শত্রু আক্রমন(আক্রমণ) করলে তারা সে শত্রুর সাথে যোগ দিব(দিবে) না বা মুসলিমদের বিরুদ্ধে শত্রুকে সহযোগিতা করবে না, এরকম আরে কিছু শর্ত ছিল যা সিরাতের কিতাবসমূহে বর্নিত(বর্ণিত)আছে। মুসলিমরা মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করার পর আল্লাহ তায়ালা নির্যাতিত মুসলিমদের জন্য জিহাদের অনুমতি দেন। এক পর্যায়ে সকল মুসলিমদের জন্য তা বৈধ ও পর্যায়ক্রমে জিহাদকে সকল মুসলিমদের জন্য ফরজ করে দেন (যাদুল মায়াদ-ইবনুল কাইয়্যূম)। ইসলাম মক্কা থেকে মদিনায় পৌঁছেও নিরাপদ ছিল না মক্কার মুশরিকরা বার বার আক্রমন(আক্রমণ) চালায় যার ফলাফল হিসেবে বদর, ওহুদ ও খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। খন্দকের যুদ্ধে মুসলিমদেরকে দূর্বল(দুর্বল)দেখে মদিনার চুক্তিবদ্ধ মুশিরিকরা চুক্তি ভঙ্গের উপক্রম হয়। এক পর্যায়ে বানু কুরাইযা তাদের চুক্তি ভঙ্গ করে। এর আগেও ইয়াহুদিরা কয়েকবার রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়সাল্লামকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল কিন্তু আল্লাহর রহমতে প্রতিবার তাদের চক্রান্ত ব্যার্থ(ব্যর্থ)হয়। খন্দকের যুদ্ধে বিজয় লাভের পর রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নেতৃত্বে বানু কুরাইযাকে ঘেরাও করা হয় এবং হযরত সা’দ (রাঃ) এর ফায়সালা অনুযায়ী তাদের যোদ্ধাদেরকে জবাই করা হয়।
মদীনায় আবস্থানরত আওশ ও খাযরায গোত্র ছাড়া ইয়াহুদি, খ্রিষ্টান ও মুশরিকরা রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাওয়াতি আভিযানের সংস্পর্শে থেকেও হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া অধিকাংশই দ্বীন গ্রহণ করতে ব্যার্থ(ব্যর্থ) হয়েছে। কিন্তু বদর ও খন্দকের যুদ্ধে বিজয় লাভের পর মুসলমানদের সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকে।
জিহাদ ও বিজয়- খন্দকের যুদ্ধে মক্কার মুশরিকরা পরাজিত হওয়ার পর তারা আর কখনো মদিনায় আক্রমন(আক্রমণ) করেনি। এর পর শুরু হয় ইসলামের বিজয় অভিযান আর তা হয় জিহাদের মাধ্যমে। কাফির মুশরিকদের সাথে মুসলিমদের সম্পর্ক দাঁড়ায় তিনটি শর্তের মধ্য দিয়ে-
১. ইসলাম গ্রহণ কর নিাপদে(নিরাপদে) থাকবে,
২.অন্যথায় জিযিয়া কর দিয়ে থাকতে হবে,
এর কোনটি গ্রহণ না করলে তোমাদের সাথে
৩. যুদ্ধ সংঘটিত হবে।
রোম, পারস্যে কোন দাওয়াতি অভিযানের মাধ্যমে ইসলাম বিজয় লাভ করেনি বরং আক্রমনাত্বক(আক্রমণাত্মক) জিহাদের বিজয় হিসেবে ইসলাম সে সব দেশে প্রবেশ করে। এমনকি
ইসলামের জন্মভূমি মক্কাতেও ইসলাম দাওয়াতি অভিযানের মাধ্যমে টিকে থাকতে পারেনি। জিহাদের মাধ্যমেই ইসলাম মক্কায় বিজয় লাভ করে এবং এর ই ফলাফল হিসেবে মুসলিমরা আজ পর্যন্ত হজ্জ ও ওমরাহ করার সুফল ভোগ করছে।
চলবে ইংশাআল্লাহ……….
Comment