আমান ও যুদ্ধ-বিরতি চুক্তি সংক্রান্ত আলোচনা
ونصالحهم ولو بمالٍ إن خيرًا. ونبذ لو خيرًا. ونقاتل بلا نبذٍ لو خان ملكهم. والمرتدّين بلا مالٍ. فإن أخذ لم يردّ. “যদি কল্যাণকর হয়, তাহলে মালের বিনিময়ে হলেও আমরা হারবিদের সাথে (যুদ্ধ-বিরতি) চুক্তি করতে পারবো। আবার (চুক্তি করে ফেলার পর) কল্যাণকর মনে হলে (প্রতিপক্ষকে অবগত করানো সাপেক্ষে) ইমামুল মুসলিমিন চুক্তি ভেঙেও দিতে পারবেন। যদি প্রতিপক্ষের রাষ্ট্রপ্রধান গাদ্দারি করে, তাহলে অবগত করানো ব্যতিরেকেই আমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারবো। মুরতাদদের সাথেও চুক্তি করতে পারবো, তবে মাল গ্রহণ ব্যতিরেকে। অবশ্য যদি গ্রহণ করে ফেলেন তাহলে তা ফিরিয়েও দেবেন না।” |
এখান থেকে মুসান্নিফ রহ. আমান ও যুদ্ধ-বিরতি চুক্তি সংক্রান্ত আলোচনা শুরু করেছেন।
হারবিদের সাথে যুদ্ধ বন্ধ হওয়ার প্রক্রিয়া হচ্ছে দু’টি: ক. ঈমান খ. আমান। (বাদায়িউস সানায়ি)[1]
ঈমান: কাফের যদি ঈমান গ্রহণ করে মুসলমান হয়ে যায়, তাহলে তার সাথে যুদ্ধ করা হবে না। তার জান মাল সুরক্ষিত হয়ে যাবে। গ্রহণযোগ্য শরয়ী কারণ ছাড়া তার জান মালে কোনো আঘাত করা যাবে না।
আমান: মুসলিমরা যদি কাফেরদের আমান তথা নিরাপত্তা দেয়, তাহলে তাদের সাথে যুদ্ধ করা হবে না; যতক্ষণ আমান বহাল থাকবে।
আমান প্রথমত দুই প্রকার: ক. الأمان المؤبد-স্থায়ী আমান খ. الأمان الموقت-অস্থায়ী আমান।
স্থায়ী আমান হচ্ছে যিম্মার চুক্তি। কাফেররা যদি ইসলামী নিয়মকানুন মেনে জিযিয়া প্রদানের শর্তে মুসলিমদের অধীনে বসবাস করতে সম্মত হয়, তাহলে তারা যিম্মি। তাদের জান মালের নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব মুসলিমদের। তাদের সাথে কৃত এ চুক্তি তারা নিজেরা ভঙ্গ না করলে মুসলিমরা কখনও ভাঙতে পারবে না। এ কারণে এ চুক্তি হচ্ছে আমানে মুআব্বাদ তথা স্থায়ী আমান।
অস্থায়ী আমান মৌলিকভাবে দুই প্রকার:
প্রথম প্রকার
- মুসলিমরা কোনো এলাকায় যুদ্ধ করতে গেল, তখন শত্রু পক্ষের কিছু লোক নিজেদের জান মালের নিরাপত্তা চাইলো। বিশেষ মাসলাহাতের দিকে লক্ষ করে মুসলিমরা ঐ কাফের দলটিকে নিরাপত্তা দিল। যেমন এ শর্তে নিরাপত্তা দিল যে, তারা শত্রুদের অচেনা এলাকাগুলো চিনিয়ে দিবে।
- দারুল ইসলামে ব্যবসা করার উদ্দেশ্যে কোনো হারবি কাফের নিরাপত্তা নিয়ে সাময়িক সময়ের জন্য দারুল ইসলামে আসলো।
- কোনো মুসলমান ব্যবসা করার উদ্দেশ্যে নিরাপত্তা নিয়ে সাময়িক সময়ের জন্য দারুল হারবে গমন করলো।
- কোনো মুসলমান বিশেষ কোনো মাসলাহাতের দিকে লক্ষ করে কোনো কাফেরকে নিরাপত্তা দিল।
উপরিউক্ত বিভিন্ন সূরতে যেসব কাফের নিরাপত্তা নিয়েছে বা মুসলিমরা যাদের নিরাপত্তা দিয়েছে, চুক্তির ধরন অনুযায়ী তাদের জান মাল নিরাপদ হয়ে যাবে; যতক্ষণ আমান বহাল থাকবে।
দ্বিতীয় প্রকার
যুদ্ধ-বিরতি চুক্তি। যেমন কোনো রাষ্ট্রের সাথে চুক্তি হলো যে, আমরা দশ বছর তাদের বিরুদ্ধে কোনো যুদ্ধ করবো না এবং তারাও উক্ত সময়ের মধ্যে আমাদের উপর হামলা করবে না এবং আমাদের শত্রুদেরকে আমাদের বিরুদ্ধে কোনো সহায়তা দিবে না।
উপরিউক্ত উভয় প্রকার চুক্তি অস্থায়ী ও সাময়িক। অনেক সময় এ চুক্তিগুলো নির্দিষ্ট মেয়াদি হয়ে থাকে। মেয়াদ শেষ হলে অটোমেটিক চুক্তি শেষ হয়ে যায় এবং তাদের জান মাল আগের মতোই হালাল হয়ে যায়। যেমন হুদায়বিয়াতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কার মুশরিকদের সাথে দশ বছর মেয়াদি চুক্তি করেছিলেন; যদিও মুশরিকরা দুই বছরের মাথায়ই চুক্তি ভঙ্গ করে ফেলে।
আর নির্দিষ্ট কোনো মেয়াদ উল্লেখ না থাকলে মাসলাহাতের বিবেচনায় যখন চুক্তি রহিত করে দেয়া ভাল মনে হবে, তখন আমরা চুক্তি রহিত করে দিতে পারবো। অবশ্য এক্ষেত্রে প্রতিপক্ষকে পরিষ্কার জানিয়ে দিতে হবে যে, আমরা চুক্তি আর রাখতে চাচ্ছি না। পাশাপাশি এতটুকু সময়ও তাদের দিতে হবে যাতে তারা তাদের সকল নাগরিককে সতর্ক করতে পারে। এক্ষেত্রে আরও কিছু তাফসিল আছে। বিস্তারিত বাদায়িউস সানায়িসহ অন্যান্য মুফাসসাল কিতাবে দ্রষ্টব্য।
মুসান্নিফ রহ. প্রথমে অস্থায়ী আমানের দ্বিতীয় প্রকার তথা যুদ্ধ-বিরতি চুক্তি নিয়ে আলোচনা করছেন। এ আলোচনা শেষে অস্থায়ী আমানের প্রথম প্রকার নিয়ে আলোচনা করবেন। আর জিযিয়া খারাজের অধ্যায়ে স্থায়ী আমান তথা যিম্মা চুক্তি নিয়ে আলোচনা করবেন।
বি.দ্র. হানাফি মাযহাব মতে অনির্দিষ্ট মেয়াদের তথা নির্দিষ্ট কোনো মেয়াদ উল্লেখ ব্যতিরেকে চুক্তি করা জায়েয। (বাদায়িউস সানিয়)[2] যেমন তালেবান আমেরিকার সাথে চুক্তি করেছিল। কিন্তু তা কত বছরের জন্য তা উল্লেখ ছিল না। এ ক্ষেত্রে বাহ্যত মনে হতে পারে যে, একটি কাফের কাওমের সাথে স্থায়ীভাবে জিহাদ স্থগিত করে দেয়া হয়েছে, তবে বাস্তবে বিষয়টি তা নয়। পরবর্তীতে যখন আমাদের শক্তি অর্জন হবে এবং তাদের ভূমিতে হামলা করার সামর্থ্য লাভ করবো, তখন আমরা চুক্তি রহিত করে দিতে পারবো। বরং এ সময় চুক্তি রহিত করা আবশ্যক। বিষয়টি না বুঝার কারণে অনেকে অহেতুক তালেবানের সমালোচনা করেছেন।
[1] بدائع الصنائع في ترتيب الشرائع (7/ 102): الأسباب المعترضة المحرمة للقتال أنواع ثلاثة، الإيمان، والأمان، والالتجاء إلى الحرم. اهـ
[2] بدائع الصنائع في ترتيب الشرائع (7/ 109): (وأما) بيان ما ينقض به عقد الموادعة، فالجملة فيه أن عقد الموادعة (إما) أن كان مطلقا عن الوقت، (وإما) أن كان موقتا بوقت معلوم. فإن كان مطلقا عن الوقت فالذي ينتقض به نوعان: نص، ودلالة. فالنص، هو النبذ من الجانبين صريحا. (وأما) الدلالة، فهي أن يوجد منهم ما يدل على النبذ. اهـ
Comment