إِنَّ الْحَمْدَ لِلَّهِ نَحْمَدُهُ وَنَسْتَعِينُهُ ونستغفره ونعوذ بالله من شرور أنفسنا ومن سيئات أعمالنا مَنْ يَهْدِهِ اللَّهُ فَلَا مُضِلَّ لَهُ وَمَنْ يُضْلِلْ فَلَا هَادِيَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ
মাশোয়ারা এর ব্যাপারে একটি ছোট্ট নাসিহা
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা বলেন -
فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمْ وَشَاوِرْهُمْ فِي الأَمْرِ فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللّهِ إِنَّ اللّهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِينَ
তাদের জন্য মাগফেরাত কামনা করুন এবং কাজে কর্মে তাদের পরামর্শ করুন। অতঃপর যখন কোন কাজের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ফেলেন, তখন আল্লাহ তা'আলার উপর ভরসা করুন আল্লাহ তাওয়াক্কুল কারীদের ভালবাসেন। (আল ইমরান - ১৫৯)
পরামর্শ করে কাজ করা সুন্নাত। এবং এই কাজে মাশোয়ারা প্রদান করা এটি মুমিনের কাজ। আমিরকে, বা উপরস্থদের নাসিহা করা, মাশোয়ারা দেয়া, পরামর্শ দেয়া আমাদের কাজ। কারণ মনে রাখতে হবে, দ্বীন হচ্ছে কল্যানকামিতার নাম।
এই মাশোয়ারা দেয়ার ক্ষেত্রে কখনো ২ টি প্রান্তিকতা লক্ষ্য করা যায়।
১। মাশোয়ারা দেয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখা, এই ভেবে যে আমি তো এই কাজের যোগ্য নই। এ ক্ষেত্রে মনে রাখা দরকার যদি আপনাকে সাওয়াল করা হয় তবে আপনি আপনার জানা মতে, সাধ্য মতে সবচেয়ে উত্তম যে মত সেটিই প্রকাশ করবেন ইনশাআল্লাহ। আপনার সাহায্য আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসবে। এখানে নিজেকে উক্ত কাজ/সিদ্ধান্তের ব্যাপারে কঠিন ভাবে জড়িয়ে ফেলার কিছু নেই। হতেই পারে আপনার জবান থেকেই আল্লাহ কল্যানকর কিছু বের করে নিয়ে আসবেন। মনে রাখতে হবে, অনেক সময়ে এমনও হয় কোন একটি কথা আপাতত কোন অর্থ বহন করেনা, কোন রাস্তা দেখায়না, কিন্তু আল্লাহ ঐ কথার উপরে পরিচালিত করতে থাকেন ততক্ষন পর্যন্ত, যতক্ষণ না তিনি উক্ত কথা থেকে কোন পথের দিশা বের করে আনেন। তাই মনে রাখা দরকার আমরা নিজেরা কোন রাস্তা দেখাতে পারিনা, কোন দিশা বের করে আনতে পারিনা, এটি শুধুমাত্র মহিমান্বিত আল্লাহর কাজ। আমাদের কাজ হচ্ছে কল্যানকামিতার ব্যাপারে ইখলাসের পরিচয় দেয়া।
২। আরেকটি প্রান্তিকতা হচ্ছে মাশোয়ারা'র ব্যাপারে অপর প্রান্তে অবস্থান করা। এর অর্থ হচ্ছে নিজের মাশোয়ারা এর ব্যাপারে অতি উচ্চাশা পোষণ করা, সেটিকে অধিক উত্তম এবং বাস্তবায়ন যোগ্য মনে করা। এ ব্যাপারে অসতর্ক অবস্থায় মাশোয়ারা এর সীমানা পার হয়ে যাওয়া। মাশোয়ারা এর সীমানা পার হওয়া অর্থ হচ্ছে - সিদ্ধান্তের দিকে চলে যাওয়া। মনে রাখতে হবে, মাশোয়ারা সবাই দিবেন, কিন্তু সিদ্ধান্ত নিবেন একজন বা কয়েকজন। মাশোয়ারা প্রদানকারী যদি সিদ্ধান্ত গ্রহন এর জিম্মাদার না হোন তবে তার কখনই উচিত নয় নিজের মাশোয়ারাকে সিদ্ধান্তের দিকে ঠেলতে থাকা। আমাদের স্মরন রাখতে হবে - সিদ্ধান্ত আল্লাহর জিম্মায়। তাই গৃহীত হবে যা আল্লাহর পছন্দ। আর যা আল্লাহর পছন্দ না, তা আমাদের পছন্দ হলে খুবই বিপদের কথা। তাই, নিজের মাশোয়ারাকে মাশোয়ারা অপেক্ষা আর বেশী কিছু না ভাবা। এবং সকল অবস্থায় নিজের মাশোয়ারা এর ব্যাপারে এমন ভাবা যে, এর মধ্যে ভুল থাকাই স্বাভাবিক, আল্লাহ যেন তা কল্যানে পরিণত করেন। এমন চিন্তা থাকলে নিজের মাশোয়ারা নিয়ে উৎফুল্ল হবার সুযোগ আসেনা ইনশাআল্লাহ, এতে করে নিজের সীমা অতিক্রম করার ভয় ও কম থাকে ইনশাআল্লাহ।
এই বিষয়টি জরুরী কেন? কারণ এর দ্বারা বেশ বড় বড় কিছু স্খলন ঘটে। আল্লাহ আমাদের হেফাযত রাখুন।
১। নিজের ব্যাপারে উত্তম ধারনা পোষণ করা
২। আমিরের ব্যাপারে সংকীর্ণ মনোভাব এর প্রকাশ
৩। নিজেদের মধ্যে সন্দেহ শুবুহাত এর সৃষ্টি
৪। আনুগত্যের ব্যাপারে ওয়াস ওয়াসা এবং ইখলাস নষ্ট হয়ে যাওয়া
৫। দ্বীনের কাজের ব্যাপারে, জিহাদের কাজের ব্যাপারে ইখলাস নষ্ট হয়ে যাওয়া
৬। কাজের আদাব এবং পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাওয়া
৭। মনের শান্তি/সুকুন নষ্ট হয়ে যাওয়া
৮। ভাইদের মধ্যে পারস্পরিক, ভালোবাসা এবং সম্মানবোধ নষ্ট হয়ে যাওয়া
এগুলো আমাদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর এবং দুঃখজনক। মনে রাখতে হবে, এই ক্ষতি গুলো চোখে দেখা যায়না। এগুলো অন্তরের ক্ষতি তাই এগুলোর ব্যাপারে সতর্কতার প্রহরাও খুব শক্ত হওয়া চাই। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমরা আমাদের সীমা অতিক্রম এর অবস্থান চিহ্নিত করতে পারিনা। তাই আগে থেকেই নিজের নফস এর উপরে লাগাম রাখা উচিত।
মাশোয়ারা এর সাথে কখনই অতিরিক্ত কোন শর্ত, ব্যাক্তিগত অনুরোধ আরোপ করে দেয়া উচিত নয়। হ্যা কেউ যদি প্রচন্ড ইতমিনান হোন, তবে সর্বোচ্চ এমন করা যায় যে, এটুকু উল্লেখ করে দেয়া - "মনে হচ্ছে আল্লাহ চান তো এর মধ্যে কল্যান কিছু আসবে" এটি দ্বারা যেমন আপনার অতিরিক্ত গুরুত্ব বুঝানো হয় একই সাথে নিজে সীমা অতিক্রম না করে আল্লাহর উপরে বিষয়টি ছেড়ে দেয়া হয়।
প্রিয় ভাই - আমাদের স্মরন রাখা দরকার শয়তান আমাদের জন্য প্রতিটি বাঁকে বসে থাকে, সে চায় আমাদের মুখের কথাকেও ছিনিয়ে নিতে এবং তা শয়তানের কথা দিয়ে পরিবর্তন করে ফেলতে। তাই মাশোয়ারাকে অসতর্ক ভাবে দেখার কোন সুযোগ নেই, যা বলা তা আল্লাহর সাহায্য চেয়ে, ভেবেচিন্তে পরিমিত ভাবে বলা।
নিশ্চয়ই সাহায্য এবং তাউফিক শুধু আল্লাহর পক্ষ থেকেই
سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ ، أَشْهَدُ أَنْ لا إِلَهَ إِلا أَنْتَ ، أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيْكَ
Comment