আমাদের সামর্থ্য নেই তাই জিহাদ ফরয নয় –এ উজরটা সমাজে ব্যাপক। বরং বলতে গেলে উলামা তুলাবাদের মাঝে এ সংশয়টা বেশি। এ বিষয়ে আগেও কিছু কথাবার্তা হয়েছিল। কয়েক পর্বে ইনশাআল্লাহ আবারও কিছু বলার চেষ্টা করবো।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
অতএব, জান-মাল-যবান সবগুলো দিয়ে জিহাদ করা ফরয।
তবে আল্লাহ তাআলার নীতি হলো, لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا – সামর্থ্যের অধিক দায়িত্ব আল্লাহ তাআলা কাউকে দেন না। অতএব, যে যতটুকুতে অক্ষম ততটুকু মাফ।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
অন্ধ, খোঁড়া ও রুগ্ন ব্যক্তি যারা সরাসরি অস্ত্র হাতে ময়দানে গিয়ে যুদ্ধ করতে সক্ষম নয় আল্লাহ তাআলা তাদেরকে এ দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। তবে যতটুকু তারা করতে সক্ষম ততটুকু করতে হবে। ততটুকুতে মাফ নেই।
যেমন অন্য আয়াতে ইরশাদ করেন,
যাদের জান মাল কোনোটার সামর্থ্যই নেই তাদেরও মুক্তি নেই। তারা মুক্তি পাবে এ শর্তে- যদি তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের কল্যাণকামী হয়।
ইমাম জাসসাস রহ. (৩৭০ হি.) বলেন,
আরও বলেন,
আরও বলেন,
বুঝা গেল, উম্মাহর প্রতিটি নারী পুরুষ জিহাদের জন্য আদিষ্ট। জান, মাল, যবান সব দিয়ে। যে যতটুকুতে অক্ষম ততটুকু মাফ। সামর্থ্য যতটুকু আছে করতে হবে। এমনকি অন্ধ, খোঁড়া, প্যারালাইসিস কেউই মাফ পাবে না। মাল থাকলে মাল দেবে। অস্ত্র হাতে নেয়ার শক্তি থাকলে অস্ত্র হাতে নিতে হবে। কোনো কিছু না পারলে অন্তত অন্য সক্ষম মুসলিমদের উৎসাহ হলেও দিতে হবে। মুজাহিদদের পরিবার পরিজনের দেখাশুনা হলেও করতে হবে।
যেমনটা হাদিসে এসেছে,
একটি সংশয় ও জওয়াব
ফিকহের সব কিতাবেই যে কথাটি আছে; যেমন কুদুরিতে বলা হয়েছে,
এ কথার কি অর্থ?
উত্তর: এখানে জিহাদ দ্বারা ময়দানের লড়াই উদ্দেশ্য। আগে পড়ে দেখলেই বিষয়টি পরিষ্কার। নাবালেগ তো মুকাল্লাফই না। আর বাকিদের উপর ময়দানের লড়াই ফরয নয়। তবে অন্যান্য দায়িত্ব যার যতটুকু সামর্থ্য আছে আদায় করতে হবে। এ ব্যাপারে আনওয়ার আওলাকি রহ. এর ‘জিহাদে অংশগ্রহণের ৪৪টি উপায়’ দেখা যেতে পারে।
***
০১- উম্মাহর প্রতিটি নারী পুরুষের উপর জিহাদ ফরয
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
انْفِرُوا خِفَافًا وَثِقَالًا وَجَاهِدُوا بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنْفُسِكُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ (41)
হালকা ভারী সর্বাবস্থায় (জিহাদে) বেরিয়ে পড় এবং নিজেদের জান ও মাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ কর। এটিই তোমাদের জন্যে অতি উত্তম, যদি তোমরা জান। - তাওবা: ৪১রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
جَاهِدُوا الْمُشْرِكِينَ بِأَمْوَالِكُمْ، وَأَنْفُسِكُمْ، وَأَلْسِنَتِكُمْ. -مسند أحمد: 12246، سنن أبي داود: 2504؛ قال المحققون: إسناده صحيح. اهـ
তোমরা নিজেদের জান, মাল ও যবান দিয়ে মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ কর। -মুসনাদে আহমাদ: ১২২৪৬, সুনানে আবু দাউদ: ২৫০৬ অতএব, জান-মাল-যবান সবগুলো দিয়ে জিহাদ করা ফরয।
তবে আল্লাহ তাআলার নীতি হলো, لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا – সামর্থ্যের অধিক দায়িত্ব আল্লাহ তাআলা কাউকে দেন না। অতএব, যে যতটুকুতে অক্ষম ততটুকু মাফ।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
لَيْسَ عَلَى الْأَعْمَى حَرَجٌ وَلَا عَلَى الْأَعْرَجِ حَرَجٌ وَلَا عَلَى الْمَرِيضِ حَرَجٌ [الفتح: 17]
(যুদ্ধ না করাতে) অন্ধ ব্যক্তির কোনো গুনাহ নেই, খোঁড়া ব্যক্তিরও গুনাহ নেই এবং রুগ্ন ব্যক্তিরও কোনো গুনাহ নেই। -সূরা ফাতহ: ১৭অন্ধ, খোঁড়া ও রুগ্ন ব্যক্তি যারা সরাসরি অস্ত্র হাতে ময়দানে গিয়ে যুদ্ধ করতে সক্ষম নয় আল্লাহ তাআলা তাদেরকে এ দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। তবে যতটুকু তারা করতে সক্ষম ততটুকু করতে হবে। ততটুকুতে মাফ নেই।
যেমন অন্য আয়াতে ইরশাদ করেন,
لَيْسَ عَلَى الضُّعَفَاءِ وَلَا عَلَى الْمَرْضَى وَلَا عَلَى الَّذِينَ لَا يَجِدُونَ مَا يُنْفِقُونَ حَرَجٌ إِذَا نَصَحُوا لِلَّهِ وَرَسُولِهِ مَا عَلَى الْمُحْسِنِينَ مِنْ سَبِيلٍ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ (91) [التوبة: 91]
দুর্বল লোকদের (যুদ্ধে না যাওয়াতে) কোনো গুনাহ নেই এবং রুগ্ন ও সেই সকল লোকদেরও গুনাহ নেই, যাদের কাছে খরচ করার মতো কিছু নেই; যদি তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের কল্যাণকামী হয়। মুহসিন ও সৎলোকদের সম্পর্কে কোনো অভিযোগ নেই। আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। -সূরা তাওবা: ৯১যাদের জান মাল কোনোটার সামর্থ্যই নেই তাদেরও মুক্তি নেই। তারা মুক্তি পাবে এ শর্তে- যদি তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের কল্যাণকামী হয়।
ইমাম জাসসাস রহ. (৩৭০ হি.) বলেন,
ومن كان عاجزا بنفسه معدما فعليه الجهاد بالنصح لله ولرسوله -أحكام القرآن للجصاص: 3\151
যে শারীরিক দিক থেকেও অক্ষম এবং তার মালও নেই, তার জন্য ‘আন-নুসহু লিল্লাহি ওয়া রাসূলিহি’-‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের কল্যাণকামিতা’র মাধ্যমে জিহাদে শরীক হওয়া আবশ্যক। -আহকামুল কুরআন: ৩/১৫১আরও বলেন,
وكان عذر هؤلاء ومدحهم بشريطة النصح لله ورسوله... ومن النصح لله تعالى حث المسلمين على الجهاد وترغيبهم فيه والسعي في إصلاح ذات بينهم ونحوه مما يعود بالنفع على الدين، ويكون مع ذلك مخلصا لعمله من الغش; لأن ذلك هو النصح، ومنه التوبة النصوح. -أحكام القرآن للجصاص ط العلمية: 3/ 186
আল্লাহ তাআলা মা’জুরদের উজর কবুল করেছেন এবং তাদের প্রশংসা করেছেন এ শর্তে যে, তাদেরকে আল্লাহ ও রাসূলের কল্যাণকামী হতে হবে। … যেমন অন্যান্য মুসলিমদেরকে জিহাদে উৎসাহ দেয়া ও উদ্বুদ্ধ করা। তাদের পরস্পরের বিবাদ মিমাংসা করে দেয়া। এছাড়াও এজাতীয় অন্যান্য কাজ যেগুলোর দ্বারা দ্বীনের উপকার হয়। পাশপাশি এসকল কাজে তাদেরকে মুখলিস হতে হবে। ধোঁকা, প্রতারণা ও মতলববাজি থেকে মুক্ত হতে হবে। কেননা, কল্যাণকামীতা এরই নাম …। -আহকামুল কুরআন: ৩/১৮৬আরও বলেন,
فلم يخل من أسقط عنه فرض الجهاد بنفسه وماله للعجز والعدم من إيجاب فرضه بالنصح لله ورسوله فليس أحد من المكلفين إلا وعليه فرض الجهاد على مراتبه التي وصفنا. -أحكام القرآن للجصاص: 3\148
শারীরিক অক্ষমতা ও সম্পদহীনতার কারণে আল্লাহ তায়ালা যাদেরকে জান ও মাল দিয়ে জিহাদ করার ফরজ দায়িত্ব হতে অব্যাহতি দিয়েছেন, তারাও আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি কল্যাণকামিতার মাধ্যমে জিহাদ করার ফরজ দায়িত্ব থেকে মুক্ত নয়। অতএব, প্রত্যেক আকেল বালেগ ব্যক্তির উপরই কোনো না কোনো স্তরে জিহাদের ফরজ দায়িত্ব রয়েছে, যেমনটি আমরা বর্ণনা করেছি। –আহকামুল কুরআন: ৩/১৪৮বুঝা গেল, উম্মাহর প্রতিটি নারী পুরুষ জিহাদের জন্য আদিষ্ট। জান, মাল, যবান সব দিয়ে। যে যতটুকুতে অক্ষম ততটুকু মাফ। সামর্থ্য যতটুকু আছে করতে হবে। এমনকি অন্ধ, খোঁড়া, প্যারালাইসিস কেউই মাফ পাবে না। মাল থাকলে মাল দেবে। অস্ত্র হাতে নেয়ার শক্তি থাকলে অস্ত্র হাতে নিতে হবে। কোনো কিছু না পারলে অন্তত অন্য সক্ষম মুসলিমদের উৎসাহ হলেও দিতে হবে। মুজাহিদদের পরিবার পরিজনের দেখাশুনা হলেও করতে হবে।
যেমনটা হাদিসে এসেছে,
من جهز غازيا في سبيل الله فقد غزا ومن خلف غازيا في سبيل الله بخير فقد غزا.
যে ব্যক্তি (জিহাদের সরঞ্জাম ও খরচাদি সরবরাহ করে) আল্লাহর রাস্তার কোন মুজাহিদকে (জিহাদের জন্য) প্রস্তুত করে দিল, সেও জিহাদ করল। যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তার কোন মুজাহিদের অনুপস্থিতিতে উত্তমভাবে তার পরিবারের দেখাশুনা করল, সেও জিহাদ করল। -বুখারি: ২৬৮৮***
একটি সংশয় ও জওয়াব
ফিকহের সব কিতাবেই যে কথাটি আছে; যেমন কুদুরিতে বলা হয়েছে,
ولا يجب الجهاد على صبي ولا عبد ولا امرأة ولا أعمى ولا مقعد ولا أقطع. -مختصر القدوري (ص: 231)
নাবালেগ, গোলাম, মহিলা, অন্ধ, পঙ্গু ও হাত নেই ব্যক্তির উপর জিহাদ ফরয নয়। -মুখতাসারুল কুদুরি: ২৩১এ কথার কি অর্থ?
উত্তর: এখানে জিহাদ দ্বারা ময়দানের লড়াই উদ্দেশ্য। আগে পড়ে দেখলেই বিষয়টি পরিষ্কার। নাবালেগ তো মুকাল্লাফই না। আর বাকিদের উপর ময়দানের লড়াই ফরয নয়। তবে অন্যান্য দায়িত্ব যার যতটুকু সামর্থ্য আছে আদায় করতে হবে। এ ব্যাপারে আনওয়ার আওলাকি রহ. এর ‘জিহাদে অংশগ্রহণের ৪৪টি উপায়’ দেখা যেতে পারে।
***
Comment