আত্–তিবয়ান পাবলিকেশন্স
কর্তৃক প্রকাশিত
আল্লাহ্ আমাদের বিজয়ের জন্য প্রস্তুত করছেন
ইমাম আনওয়ার আল-আওলাকি (রহিমাহুল্লাহ)
এর থেকে
পর্ব : ৪র্থ
==================================================
===============================
কর্তৃক প্রকাশিত
আল্লাহ্ আমাদের বিজয়ের জন্য প্রস্তুত করছেন
ইমাম আনওয়ার আল-আওলাকি (রহিমাহুল্লাহ)
এর থেকে
পর্ব : ৪র্থ
==================================================
===============================
(৩) বিজয় অতি নিকটে
প্রথমে আমরা একটা জিনিস ধরে নেই, পরে এর সত্যতা যাচাই করে দেখি। ধরে নেই, বিজয় অতি নিকটে। এবার তা প্রমাণ করার চেষ্টা করি। আমরা বিষয়টি যে মূলনীতির আলোকে পর্যালোচনা করব তা হলঃ আল্লাহ্ কোন পরিণতি চাইলে তার উপযোগী মাধ্যম ও তৈরি করবেন। এখন দেখা যাক এ মূলনীতিটি কতটুকু শুদ্ধ। সেজন্য আমরা ইতিহাস প্রসিদ্ধ কতগুলো ঘটনা উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করি।
৩য় উদাহরণ: এ উদাহরণটি ক্রুসেডের ঘটনা থেকে নেয়া। সালাহ্উদ্দিন আইয়্যুবী পবিত্র ভূমির আশপাশের মুসলিমদের সংঘবদ্ধ করে ক্রুসেডদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে মনস্থ করলেন। অথচ তাঁর পূর্বে কোন মুসলিম নেতাই তা করতে সাহস করেনি। ক্রুসেডাররা জেরুজালেম, আশ-শাম এবং আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকা দখল করে রেখেছিল। সালাহ্ উদ্দিন (রহ.)-এ যুদ্ধের সূত্রপাত করেছিলেন। ক্রুসেডাররাও তাঁকে বেশ গুরুত্বের সাথেই নিয়েছিল, কারণ ওরা জানতে যে, তিনি কোন সাধারণ প্রতিপক্ষ নন। রোমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সিদ্ধান্ত নেয়ায় মুসলিম নেতৃবৃন্দ তাকে উম্মাহ বলতে থাকে। ওদের মতে, “রোমান সম্বরা এমন মহা সমুদ্র যার কোন কূল-কিনারা নেই।” অন্য কথায়, ওরা যা বলতে চেয়েছিল তা হচ্ছে, রোমান সাম্রাজ্য আমাদের উপর তাণ্ডব বইয়ে দেবে, কেননা ইউরোপ ছিল একতাবদ্ধ, ওদের জনসংখ্যাও ছিল প্রচুর। ওরা যুদ্ধ করছিল এক বিভক্ত উম্মতের বিরুদ্ধে। সালাহ্ উদ্দিন (রহ.) উম্মতের কিয়দংশ নিয়ে যুদ্ধ করছিলেন, কেননা উম্মাহ ছিল তখন শতধা বিভক্ত। তাঁর প্রতিপক্ষ ইউরোপ ছিল অধিক সৈন্যবাহিনী সম্বলিত, সুসংবদ্ধ। মুসলিম নেতৃবৃন্দ সালাহ্ উদ্দিন আইয়্যুবীর প্রয়াসকে স্রেফ পাগলামি বলতে লাগল, কিন্তু আল্লাহ্ তা‘আলার উপর তাওয়াককুল (পূর্ণ ভরসা) রেখে ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ওদের বহু এলাকা তিনি দখল করতে লাগলেন। এমতাবস্থায় পোপ এই নতুন চতুর্থ ক্রুসেডে গোটা ইউরোপকে শামিল করতে লাগলো। সালাহ্ উদ্দিন আইয়্যুবীর বিরুদ্ধে ইউরোপের এই ক্রুসেড ছিল স্মরণ কালের বৃহত্তম যুদ্ধ সমাবেশ। এ ঘটনা থেকে আঁচ করা যায়, সালাহ্ উদ্দিন আইয়্যুবীর যুদ্ধে নেতৃত্ব প্রদানের কথা জানতে পেরে, গোটা ইউরোপ চতুর্থ ক্রুসেডকে কতখানি গুরুত্বের সাথে নিয়েছিল। সাধারণ কোন জেনারেল যুদ্ধের নেতৃত্ব দিলে ধরে নেয়া হত, যুদ্ধ শত্রু শিবিরে কম নাড়া দিয়েছে, কিন্তু যুদ্ধে নেতৃত্ব প্রদানের দায়িত্ব গ্রহণ করে স্বয়ং ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও জার্মানির রাজাবৃন্দ। তারা স্বয়ং ফিলিস্তিনে গিয়ে যুদ্ধের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। যেহেতু তিন দেশের সেনাবাহিনী সমবেত করা হবে বলে ঠিক করা হয়, তাদের সম্মিলিত সদস্য সংখ্যা দাঁড়ায় সে সময়ের সাধারণ যুদ্ধের সংখ্যার তুলনায় বহুগুণ বেশি।
কোন তথ্যসূত্র এমনও দাবি করে যে, খোদ জার্মানির রাজা ফ্রেডরিক বারবারোসার সৈন্য সংখ্যা ছিল তিন লক্ষ। সেসময় এই সংখ্যা শুনলে সহসা কেউ ভয়ে মূর্ছা যেত। সেনা সংখ্যা এত বিপুল ছিল যে, নৌ যুদ্ধজাহাজ ও বাণিজ্যিক জাহাজে সকলের স্থান সংকুলান হয়নি। ফলে, ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের বাহিনী জাহাজে আর জার্মান বাহিনীকে পায়ে হেঁটে রওয়ানা হতে হয়। এখন দেখা যাক, আলিমগণ এই অভিযানের ব্যাপারে কি মতামত ব্যক্ত করেন।
ইবনে আসীর (রহ.) বলেন, “ওরা স্থলপথ ও সমুদ্রপথে আমাদের দিকে আসছিল। সংবাদ ছড়িয়ে পড়ল যে, জার্মান রাজা তিন লক্ষ সামর্থ্যবান সৈন্য সমেত উত্তর দিক হতে রওনা হচ্ছে। মুসলিম সুলতান ও আপামর জনসাধারণ ভীত সন্ত্রস্ত হল। আলেমগণের মধ্যে অনেকেই জিহাদের প্রতি ভালবাসার দরুন আশ-শামে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন, কিন্তু ফরাসী বাহিনীর সদস্য সংখ্যা শুনে পিছু হটে যান।”
তারা কেন পিছু হটেছিলেন? সংখ্যা বেশি হলে কি ফিক্বহের পরিবর্তন হয়? তারা জিহাদের নিয়তে বের হয়েছিলেন, পরে সংখ্যাধিক্যের কারণে ফিরে যান, অথচ তারা ছিলেন আলেম। এখানে একটি শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে আর তা হল আলেমগণ নিষ্পাপ, মাসুম বা ভুলের ঊর্ধ্বে নন। তাঁরা আম্বিয়া নন। মানুষ অন্ধভাবে আলেমদের পিছনে ছুটলে এমন কোন নিশ্চয়তা নেই যে, অনুসারীদের তারা সৎপথে পরিচালিত করবে। তবে সকল আলেমের ক্ষেত্রে তা সাধারণভাবে প্রযোজ্য নয়। যেহেতু ইবন আসীর (রহ.) বলেন যে তাদের মাঝে কতক ফিরে গিয়েছিলেন। এই উম্মতের মাঝে সব সময়ই একটি গোষ্ঠী বা দল হবে যাদের বলা হয়েছে ‘আত তা’ঈফাহ্’। অধিকাংশ লোক দায়িত্ব হতে অব্যাহতি পেতে আলেমগণের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে বলে যে, ‘অমুক আলেম এরূপ কোন ফাতওয়া দেননি, অমুক আলেম জিহাদে যেতে বলেননি।’ অর্থাৎ তারা আলেমগণের দোষারোপ করে, যদিও এমন আলেমগণ রয়েছেন যারা ঐ মতের বিপরীত ও সঠিক মত প্রচার করেন; যারা সঠিক মানহায বা নীতি অবলম্বন করেন, তাঁরা হয়ত বা কারারুদ্ধ, নির্যাতিত, শহীদ, অন্তরীণ কিংবা কোন টিভি স্টেশনে তাঁদের খুৎবা প্রচার না করায় তেমন জনপ্রিয়তা লাভ করেননি। কিন্তু তাঁরাও আলেম, আমরা এমন এক সময়ে বাস করছি যখন আলেমগণের মূল্যায়ন করা হয় খ্যাতি ও যশের ভিত্তিতে, ইলমের সঠিক মানদণ্ডে নয়। পূর্বে আলেমগণের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে কাউকে আলেম রূপে গণ্য করা হত। শিক্ষক বা উস্তাদ প্রশিক্ষণ দান শেষে ছাত্রকে আলেম হিসেবে ঘোষণা দিতেন। অধিকাংশ আলেমগণের মতে যে সর্বাধিক ইলম সম্পন্ন সেই ফতোয়া প্রদানের উপযুক্ত বলে বিবেচিত হত আর এখন সরকারীভাবে আলেমদের নিয়োগ দেয়া হয়। এখন কেউ আলেমগণের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে নয় বরং সরকারী নির্দেশে সহসাই পোষ্য আলেমে পরিণত হয়। স্যাটেলাইট চ্যানেল ও রেডিও স্টেশনে বিভিন্ন প্রোগ্রামে আবির্ভূত হয়ে বিখ্যাত আলেম হিসেবে ব্যাপক পরিচিত লাভ করে। তবে কখনোই এরূপে ইলমের মূল্যায়ন হওয়া উচিত নয়। আমাদের উচিত আল-হক্ব (সত্যের) অনুসরণ করা, তা যে রূপেই হোক না কেন।
ইবনে আসীর (রহ.) বলেন যে সংখ্যাধিক্যের কথা শুনে কিছু সংখ্যক আলেম পিছু হটে গিয়েছিলেন। আর আলেম হওয়ার কারণে তারা ওজর খুঁজতে দলীলের শরণাপন্ন হলেন – ভাল করেই তারা জানতেন কিভাবে আয়াত বা হাদিস বিকৃত করে তা শরীয়া অনুমোদিত বলে প্রমাণ করা যায়। তারা তাদের অপারগতার কথা এ বলে স্বীকার করবে না যে, “দুঃখিত! আমরা কাপুরুষ, তাই আমরা আর সামনে আগাতে চাই না।” বরং তারা বলবে, “জিহাদে যাওয়া হিকমাহ (প্রজ্ঞার) নয় এবং এর মাঝে কোন বিচক্ষণতা নেই, কিংবা সালাহ্ উদ্দিন একজন অবুঝ, আমরা তাকে বারণ করা সত্ত্বেও সে জিহাদে গিয়েছে কিংবা সালাহ্ উদ্দিনের ইলম নেই কিংবা সে ঠিকমত আরবি জানে না, সুতরাং ফতোয়া জারী করে শক্তিধর প্রতিপক্ষের মোকাবেলায় নেমে উম্মতকে সমস্যায় ফেলার কি অধিকার আছে তার? তার উচিত আলেমদের নিকট থেকে ফতোয়া নেয়া, কিন্তু সে তা করেনি। অতএব, সে তার মত যাক আর মরুক।” এভাবে আলেমরা চলে গেলো, তাতে কি হল?
নিঃসন্দেহে তা ছিল আল্লাহ্র পক্ষ থেকে একটি পরীক্ষা-আলেমদের জন্য, সালাহ্ উদ্দিনের (রহ.) জন্য এবং গোটা উম্মতের জন্য।
বিশাল বাহিনী ধেয়ে আসছিল, মুসলিমদের কেউ ছিল দৃঢ়, আর কেউ পিছু হটেছিল। এর সাথে সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায় মূসা (আঃ) এবং বনী ইসরাঈলের ঘটনার মাঝে, যখন তারা সমুদ্রের নিকট উপনীত হলেন, তাদের জন্য সেটা ছিল ভীষণ এক পরীক্ষা। আল্লাহ মহা মহিমান্বিত চাননি মু’মিনরা ধ্বংস হোক, তিনি কেবল তাদের পরীক্ষা করতে চেয়েছিলেন। মূসা (আঃ) ও তাঁর উম্মাহ এমন এক অবস্থায় উপনীত হলেন, যখন তাদের সামনে সমুদ্র আর পিছনে ফেরাউনের বিশাল বাহিনী। এ অবস্থায় বনী ইসরাঈলরা মূসা (আঃ) কে বললেন, “তুমি আমাদের মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছিলে, তুমি বলেছিলে যে, আল্লাহ্ আমাদের রক্ষা করবেন, হিফাজতে রাখবেন। আর আমরা এখন মৃত্যুর সম্মুখীন। আমাদের সামনে সমুদ্র আর পিছনে ফেরাউনের বাহিনী। বের হবার কোন পথ নেই। উত্তরে মূসা (আঃ) যা বললেন – আল্লাহ্ তা‘আলা সেই সুন্দর ও ঐতিহাসিক উক্তি পবিত্র কুর’আনে তুলে ধরেন,
قَالَ كَلا إِنَّ مَعِيَ رَبِّي سَيَهْدِينِ
“(মূসা) বলল, কখনই নয়, নিশ্চয়ই আমার রব আমার সাথে আছেন, তিনি আমাকে অচিরেই পথ দেখাবেন।”
এটা এমন যেন মূসা (আঃ) বলছেন, “আমি আমার চোখকে অবিশ্বাস করি, যখন সামনে সমুদ্র ও পেছনে ফেরআউনের বাহিনীকে দেখি। আমি আমার কানকে অবিশ্বাস করি যখন বনী ইসরাঈল আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপন করে। আমি কেবল আমার আল্লাহ্র উপর ঈমানে আস্থা রাখি; আল্লাহ্ আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তিনি তা পূরণ করবেন।” এমতাবস্থায় পরীক্ষার অবসান হল। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা মূসা (আঃ)-কে লাঠি দিয়ে সমুদ্রে আঘাত করতে বললেন। এই পরীক্ষা দ্বারা প্রমাণিত হল, কে ছিল দৃঢ় ও স্থির আর কে নয়।
সালাহ্ উদ্দিন আইয়্যুবীর সময়ও ছিল একইরকম এক মহাপরীক্ষা। তিন লক্ষ সৈন্যসহ ফেডনরিক বারবারোসা অগ্রসর হচ্ছিল। ওরা একটি নদীতে পৌঁছালেন, এর পরের ঘটনাবলী প্রসঙ্গে বিভিন্ন বর্ণনা রয়েছে, তম্মধ্যে একটি বর্ণনা হলঃ নদীর পানি ছিল অত্যধিক ঠাণ্ডা, হয়ত পর্বত ছড়ায় বরফ গলার কারণে খুব ঠাণ্ডা ছিল। জলবায়ু ছিল ভীষণ উত্তপ্ত আর পানি অত্যধিক ঠাণ্ডা। ফ্রেডরিক বারবারোসা, যে তার বাহিনীকে নেতৃত্ব দিয়ে অগ্রসর হচ্ছিল, ছিল সত্তর দশকের বয়োবৃদ্ধ। মাথা হতে পা পর্যন্ত তিনি যুদ্ধের পোশাকে সজ্জিত ছিলেন, ওরা মুসলিমদের ন্যায় হালকা বর্মে সজ্জিত হয়ে যুদ্ধ করত না। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন,
لا يُقَاتِلُونَكُمْ جَمِيعًا إِلا فِي قُرًى مُحَصَّنَةٍ أَوْ مِنْ وَرَاءِ جُدُرٍ بَأْسُهُمْ بَيْنَهُمْ شَدِيدٌ تَحْسَبُهُمْ جَمِيعًا وَقُلُوبُهُمْ شَتَّى ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ قَوْمٌ لا يَعْقِلُونَ
“ওরা সংঘবদ্ধভাবেও তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারবে না। ওরা যুদ্ধ করবে কেবল সুরক্ষিত জনপদে অথবা দুর্গ প্রাচীরের আড়াল থেকে; …”
ওদের রক্ষাব্যুহ হতে পারে কোন দুর্গ বা বর্ম কিন্তু যেই মাত্র ওদেরকে যুদ্ধ পোশাক, রক্ষাব্যুহ, খন্দক থেকে বের করে আনা হবে – খালাস, সে খতম; এ কারণে ইবনে আল-কাইয়্যিম (রহ.) বলেন, “সাহাবীগণের শরীর তাদের শত্রুদের থেকে বৃহদকায় ছিল না, তাদের প্রশিক্ষণও পর্যাপ্ত ছিল না, ছিল না তাদের ভাল বর্ম, তাদের যুদ্ধাস্ত্রও সংখ্যায় ছিল অপ্রতুল। কিন্তু সাহস ও ঈমানের চেতনায় শত্রুপক্ষ হেরে যেত, যখন এ সবের প্রয়োজন ছিল সবচেয়ে বেশি।”
অতএব, সাহাবীগণের মনোবল ছিল, কিন্তু শত্রুদের ছিল না। যদিও তাদের কাছে সর্বাধুনিক সমরাস্ত্র, বর্ম, প্রশিক্ষিত সামরিক বাহিনী অর্থাৎ বিজয়ের সব উপকরণই মজুদ ছিল, তথাপি মনোবলের অভাবেই ওরা হেরে যেত।
ফেড্ররিক ঘোড়ায় চড়ে খাল পার হচ্ছিল আর হঠাৎ কেন যেন ঘোড়াটি ভয় পেয়ে লাফ দিল। ফ্রেডরিক বারবারোসা শীতল পানিতে পড়ে হার্ট এ্যাটাকে মারা গেল। এ প্রসঙ্গে ইবনে আসীর (রহ.) ঠাট্টা করে বলেন, “জার্মানির রাজা এমন পানিতে মারা গেলেন যার উচ্চতা হাঁটু সমানও নয়।”
ফ্রেডরিক বারবারোসার নামেই সবার অন্তরে ভীতির সঞ্চার হত। ইউরোপীয় রাজাদের মধ্যে সেই ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী ও ক্ষমতাধর, অথচ সেই কিনা এতটুকু পানিতে মারা গেল। এরপর ইবন আসীর (রহ.) বলেন, “রাজার মৃত্যুর পর ওদের মধ্যে রোগ সংক্রমণ ঘটল, ওরাও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ল। যত দিনে ওরা আশ-শামে পৌঁছাল, দেখে মনে হচ্ছিল, ওরা যেন কবর থেকে উঠে এসেছে। আর যতদিনে ওরা আল-আক্কায় পৌঁছাল, তিন লক্ষ সৈন্যবাহিনী তখন মাত্র এক হাজারে নেমে এসেছে।”
ওদেরকে দেখলে মনে হবে যেন এই মাত্র ওরা কবর থেকে উঠে এল। তিন লক্ষের মধ্যে কেবল এক হাজার সৈন্য সালাহ্ উদ্দিনের সাথে যুদ্ধ করতে এসেছে। তো তাহলে কে অধিক জ্ঞানী ছিল? পালিয়ে যাওয়া আলেমের দল, নাকি সালাহ্ উদ্দিন আইয়্যুবী?
সালাহ্ উদ্দিন আইয়্যুবীকে বারবারোসা একটি চিঠি পাঠিয়েছিল, যাতে তার দম্ভ-অহংকার ভীষণভাবে প্রকাশ পেয়েছিল। তাতে সালাহ্ উদ্দিন আইয়্যুবীকে হুমকি দেয়া হয়েছিল যে, যদি সে তার বাহিনী এক বছরের মধ্যে সরিয়ে না নেয়, তবে সে এই করবে সেই করবে…। কিন্তু আল্লাহ্ তা‘আলা উল্টো বারবারোসাকে-ই লাঞ্ছিত করতে চাইলেন। বারবারোসা প্রতিজ্ঞা করেছিল যে, সে পবিত্র ভূমিতে পা রাখবেই। এর আগেই যখন সে মারা গেল, পিতার প্রতিজ্ঞা রক্ষার্থে তার পুত্র মৃতদেহটি পানিতে সিদ্ধ করে ভিনেগার মিশিয়ে একটি ব্যারেলে সংরক্ষণ করল। তারপর মৃত দেহ পচে ব্যারেল থেকে বেরিয়ে গেল, ফলে তা পথি মধ্যে ফেলে দিতে হল। আল্লাহ্ তা‘আলা পবিত্র ভূমিতে পৌঁছবার প্রতিজ্ঞাটিও পূর্ণ হতে দেননি। আল্লাহর মনোনীত দ্বীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নিয়োজিত হতে চাইলে এমনই পরিণতি বরণ করতে হবে।
ইবনে আসীর (রহ.) বলেন, “জার্মান রাজাকে মৃত্যু দান করে আল্লাহ্ যদি এই উম্মতের উপর রহম না করতেন, তবে আজ হয়ত আমরা বলতাম যে মিশর ও সিরিয়া একসময় মুসলিম অধ্যুষিত ছিল।” তিনি বলতে চাচ্ছেন যে, আমরা হয়ত আশ-শামের সাথে সাথে মিশরকেও হারাতাম আর বলতাম যে, এক সময় সেসব এলাকায় মুসলিমরা বসবাস করত। এটা এমনই গুরুত্বপূর্ণ এক ব্যাপার ছিল। কিন্তু আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের বিজয় দিতে চেয়েছিলেন। অতএব, ওরা তিন লাখ বা তিরিশ লাখ যত সৈন্য-ই পাঠাত না কেন, তাতে কোন লাভই হত না, কারণ আল্লাহ্ তা‘আলা এই উম্মতকেই বিজয় দিতে চেয়েছিলেন।
অতঃপর বলা যায়, যদি আল্লাহ্ তা‘আলা যদি এই উম্মতকে পরিণামে বিজয় দিতে চান, তবে এই বিজয় সংঘটিত হওয়ার যাবতীয় ক্ষেত্রও তিন তৈরি করবেন।
আরও পড়ুন
Comment