আত্–তিবয়ান পাবলিকেশন্স
কর্তৃক প্রকাশিত
আল্লাহ্ আমাদের বিজয়ের জন্য প্রস্তুত করছেন
ইমাম আনওয়ার আল-আওলাকি (রহিমাহুল্লাহ)
এর থেকে
পর্ব : ৫ম
==================================================
===============================
কর্তৃক প্রকাশিত
আল্লাহ্ আমাদের বিজয়ের জন্য প্রস্তুত করছেন
ইমাম আনওয়ার আল-আওলাকি (রহিমাহুল্লাহ)
এর থেকে
পর্ব : ৫ম
==================================================
===============================
(৪) ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে
আমাদের পূর্ব আলোচিত বিষয় ‘বিজয় অতি নিকটে’ ইতিহাসের আলোকে সমর্থিত হওয়ায় বর্তমানের প্রেক্ষাপটে আমরা বিষয়টি যাচাই করে দেখি।
প্রথম বিষয়: আমরা এমন এক সময়ে বাস করছি যা সালাহ্ উদ্দিন আইয়্যুবীর সময়ের সাথে তুলনীয়। তার মানে কি এই দাঁড়ায় যে, পরবর্তীতে সে রকমই ঘটবে যা সে সময় ঘটেছিল? সালাহ্ উদ্দিন আইয়্যুবীর বিজয় অর্জনের পূর্বের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা যাক – সে সময় উম্মাহ ছিল বিভক্ত। ইবনে আসীর (রহ.) বলেন, “সে সময় খিলাফাহ্ ব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত দুর্বল ও নাজুক, প্রতিটি মুসলিম রাষ্ট্র তখন স্বাধীনতা অর্জন করছিল। খিলাফাহ্ শুধু বাগদাদেই শাসনকার্য পরিচালনা করছিল, ফলে উম্মাহ ছিল পরস্পর বিচ্ছিন্ন, বিভক্ত। খলিফা কেবল বাগদাদে শাসন করছিলেন। বসরায় শাসন প্রধান ছিলেন ইবনে রা’ইক, খুজিস্তানে আবি আব্দুল্লাহ, পারস্যে ইমাদ আদ-দৌলা, কারমানে আবি আলী বিন মুহাম্মদ, আল-মসূল, আল-জাজিরা, আল-দিয়াবাক্কারে রাবিয়া ইবনে হাব্বান, মিশর ও আশ-শামে মুহাম্মদ বিন বাযক, আফ্রিকা ও আল-মাগরিবে আল-কা’ইম ইবনে মাহদী, খোরাসানে আস-সামানী। তাহলে দেখা যাচ্ছে, উম্মাহ সেসময় কি রকম বিক্ষিপ্ত ছিল; আমরা যে সময়ে বাস করছি বর্তমানে উম্মতের অবস্থা একই রকম।
প্রথম কথা হল, ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে। উম্মাহ এমন সময় পার করে এসেছে যখন পরিবেশ পরিস্থিতি ছিল বর্তমানের অনুরূপ। এমন নাজুক পরিস্থিতির সত্ত্বেও উম্মতের বিজয়ের সৌভাগ্য হয়েছিল। সুতরাং আশাহত হয়ে এরূপ ধারণা করার কোন কারণ নেই যে, আমাদের পরিস্থিতি বেশ নাজুক, সঙ্কট উত্তরণের কোন পথ খোলা নেই। তা আদৌ সত্য নয়। তলায় নামতে নামতে চূড়ান্ত গভীরতায় পৌঁছালে উত্থান ছাড়া আর যাবার পথ থাকে না, আমাদের বেলায়ও ঘটেছে তাই। আমরা তলানিতে এসে ঠেকেছি।
ইবনে আসীর (রহ.) বলেন, “আল-আন্দালুস চারটি রাষ্ট্রে বিভক্ত ছিল, প্রতি রাষ্ট্রের প্রধান নিজেদের আমীরুল মু’মিনীন বলে দাবী করেন। তিনি বলেন, এ ঘটনাটি কৌতুকে পরিণত হয়। সে সময় উম্মতের বিভক্তি ও বিচ্যুতি বর্তমান সময়ের তুলনায় হয়ত বেশি মাত্রায়ই ছিল। তখন ক্ষমতার মসনদের দাপট ছিল অত্যন্ত বেশি, বর্তমানে সরকার ব্যবস্থার সাথে যার তুলনা করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, আর-রিদওয়ান তার দু’ভাইকে কতল করে ক্ষমতা লাভের হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে আল-বাতিনিয়্যাদের সহযোগিতা চায়। অপর একটি দৃষ্টান্ত হল, আর-রাহা নামে এক শহরকে নিয়ে দুই আমীরের মাঝে বিবাদের সূত্রপাত হয়। ওদের একজন রোমান রাজার নিকট সহায়তা কামনা করে। কুরতাবায় ফিতনার যুগে উমাইয়া বিন আব্দুর রহমান বিন হিশাম নামে এক ব্যক্তি নিজেকে আমীর ঘোষণা করে। তাকে যখন বলা হল, বনু উমাইয়ার যুগ শেষ, উত্তরে সে বলল, “আমাকে আজকে বায়াত দাও, চাইলে কালকে আমাকে মেরে ফেল। একদিনের জন্য হলেও আমাকে আমীর হতে দাও। একদিনই আমার জন্য যথেষ্ট।” সে সময় ধনী গরীবের মাঝে ব্যাপক বৈষম্য ছিল। বর্তমানে আমাদের সময়ও উম্মাহ এ সমস্যায় জর্জরিত।
আরেকটি দৃষ্টান্ত হল, সুলতান মিনিকশাহ্-র কন্যার বিয়ে, যাতে মোহরানা ধার্য করা হয়েছিল ১৩০টি উট বোঝাই স্বর্ণ ও রৌপ্য। সে সময় মানুষের এত অঢেল ধন-সম্পদ ছিল, আবার একই সময় কিছু মানুষ এত দরিদ্র ছিল যে কুকুর খেয়ে জীবন ধারণ করত। ৪৪৮ হিজরী সনে এক ব্যক্তি বিশ পাউন্ড ময়দা খরিদ করতে তার বাড়ি বিক্রি করে দেয়; সে যেকোনো প্রকারে বিশ পাউন্ড ময়দা খরিদ করতে চেয়েছিল। মানুষের কর্মস্পৃহার অভাব ও শ্রমবিমুখতা তখন ছিল অত্যধিক। উম্মতের জন্য তা নতুন কিছু নয়, কখনও এমন পর্যায় আসে, যখন মানুষ হয়ে পড়ে কর্ম বিমুখ। ইবনে আসীর (রহ.) ‘আল-কালিম’-এ উল্লেখ করেন, ৩৬১ হিজরি সনে রোমান বাহিনী আর-রাহা নামক স্থান আক্রমণ করলে একটি প্রতিনিধি দল বাগদাদে মুসলিম বাদশাহ বখতিয়ার উবওয়াইজির নিকট গমন করে। তারা সেখানে বাদশাহকে শিকার কর্মে ব্যস্ত দেখতে পান। মুসলিম উম্মতের সাথে বাদশাহর যখন জিহাদ ফী সাবীলিল্লিাহ্ পরিচালনা করার কথা, সেখানে তিনি শিকার কর্মে ব্যস্ত। যাহোক মোটেও এ ঘটনা নতুন কিছু নয়; মনে পড়ে কোন এক আরব দেশের বাদশাহ ওয়াশিংটন ডি.সি. ভ্রমণে আসেন। স্থানীয় মুসলিমদের সাথে মঙ্গলবার তিনি দেখা করবেন বলে ধার্য করা হয়। নির্ধারিত দিনের ঠিক একদিন পূর্বে এ্যাম্বাসি থেকে ঘোষণা করা হয়, কোন একটি মিটিংয়ে ব্যস্ততার কারণে মঙ্গলবার তিনি আসতে পারবেন না। সাধারণ মানুষজন ধারণা করেছিল, হয়ত মার্কিন কোন শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তির সাথে তার জরুরী বৈঠক ছিল। কোন কংগ্রেসম্যান কিংবা হবে কোন অর্থ সহায়তার আবেদন সংক্রান্ত ব্যাপার, পরে খবর পাওয়া গেল যে, সেদিন বাদশাহ সস্ত্রীক সিনেমা হলে চার-চারটি মুভি দেখেন। এক সিনেমা শেষ করে অপর সিনেমায় যেতে বাদশাহ সারাদিন ভীষণ ব্যস্ত ছিলেন। এখন সহজেই অনুমেয়, কোন ধরনের লোক আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। এ ধরনের কাণ্ডজ্ঞানহীন লোকের উপর কোন স্টোর কিংবা ব্যবসা বাণিজ্য দেখা-শোনার দায়িত্ব নির্বিঘ্নে অর্পণ করা যায় না আর রাষ্ট্র পরিচালনার তো প্রশ্নই আসে না। এমনও লোক আছে যারা বলে, আমাদের উচিত তাদের আনুগত্য করা, কখনও তাদের বিরোধিতা না করা, তাদের বিরুদ্ধে কখনও কিছু না বলা। যাই হোক, তারা গিয়ে বাদশাহকে শিকারে ব্যস্ত পেল, তারা বলল যে, তিনি ভুল করছেন, তার উচিত রোমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা। বাদশাহ বলল, ‘আল্লাহু আকবার! চল জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহয় ঝাঁপিয়ে পড়ি। আমার জন্য তোমরা অর্থ সংগ্রহ কর।’ তারা অর্থ সংগ্রহ করে বাদশাহ-র হাতে তুলে দিলেন কিন্তু বাদশাহ জিহাদের কথা বেমালুম ভুলে বসলেন। নিজের শান-শওকত বিলাস ও ব্যসনে সেসব অর্থ উড়াতে লাগলেন। ইবনে আসীর (রহ.) আরও বলেন, “ক্রুসেডরা যখন আশ-শামে পৌঁছাল, আল-কাযী আবু ইবনে আম্মার সাধারণ মানুষদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য ত্রিপলি হতে বাগদাদে গমন করেন। সেসময় বাগদাদকে প্রতীকী অর্থে খিলাফতের প্রাণকেন্দ্র রূপে গণ্য করা হত, তাই সাহায্য সহযোগিতার প্রয়োজনে তারা সেখানে গমন করতেন। কাজী সাহেব বাগদাদের কেন্দ্রীয় মসজিদে খুৎবায় উপস্থিত জনতার প্রতি জিহাদ ফি সাবীলিল্লাহর উদাত্ত আহ্বান জানান। মানুষজন ভীষণ উদ্দীপ্ত হয়ে জিহাদের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে লাগল। সুলতানও বাহিনী প্রেরণ করার প্রতিশ্রুতি দিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আশায় গুড়ে বালি, তারা কেউই গিয়ে আসল না। কাজী সাহেব ব্যর্থ, ভগ্নহৃদয়ে ত্রিপলি পৌঁছে দেখলেন ‘ আল-উবাই দিয়ীন’ নামে শিয়া গোষ্ঠী ত্রিপলী দখল করেছে। শেষ পর্যন্ত তাকে নিজের শহর হারাতে হল।
সুতরাং একই রকম ঘটনা বর্তমানে আবারও ঘটলে আশাহত হওয়া উচিত নয় যেহেতু এমনটি আগেও ঘটেছে। আর আল্লাহ্ তা‘আলা চাইলে তা পরিবর্তনও করতে পারেন।
দ্বিতীয় বিষয়: আল্লাহ্ তা‘আলা আসন্ন পরবর্তী পর্যায়ের জন্য এই উম্মতকে প্রস্তুত করছেন।
ইবনে কাসীর (রহ.) তাঁর “আল-বিদায়া ওয়া আন-নিহায়া” বিশ্বকোষ গ্রন্থে সৃষ্টির শুরু থেকে ধ্বংস পর্যন্ত ইতিহাসের বর্ণনা দিয়েছেন। ঐ গ্রন্থে শেষ সময়ের ঘটনা সংক্রান্ত হাদিস যে অধ্যায়ে সন্নিবেশিত আছে তা ‘আল-ফিতান’ শিরোনামে আলাদা বই রূপে প্রকাশিত হয়েছে।
যদিও এ জাগরণে সমগ্র উম্মাহ শামিল হবে, তথাপি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) কতক স্থানের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। রাসূল (সাঃ) বলেন যে ইরাকীগণ ইমাম আল-মাহদীর নিকটবর্তী হবে। রাসূল (সাঃ) আরও বলেন যে খোরাসান ও আশ-শাম হতে কালো পতাকাবাহীগণের আবির্ভাব ঘটবে। হাদিসের বেশির ভাগ অংশ জুড়ে আশ-শামের আলোচনা করা হয়েছে। ফিলিস্তীন, সিরিয়া, লেবানন, ইয়েমেন, জর্ডান এই রাষ্ট্রসমূহ আশ-শামের অন্তর্ভুক্ত।
আজ থেকে বিশ বছর পূর্বে এ অঞ্চল সমূহে কি রূপ সামাজিক অবস্থা বিরাজ করছিল? ইরাকে শাসন করছিল ধর্ম বিদ্বেষী ও নাস্তিক্যবাদী বাথপার্টি। আরব ভূখণ্ডে ইরাকী জনগোষ্ঠী ছিল সবচেয়ে ধর্ম বিমুখ। ওরা ধর্মনিরপেক্ষতা ও বাথ পার্টিকে সাদরে গ্রহণ করেছিল। ওরা ছিল পুরাদস্তুর জাতীয়তাবাদী। আমি এক সময় বলতাম, “সুবহানাল্লাহ্! আল্লাহ্-ই ভাল জানেন, ইরাকে কখন পরিবর্তন আসবে, হয়ত আজ থেকে বহু দীর্ঘ সময় লাগবে।”
জিহাদ শুরু হওয়ার পূবে খোরাসান ছিল কমিউনিজম দ্বারা প্রভাবিত; কমিউনিজম তাদের কি কল্যাণ সাধন করেছে? আশির দশকের গোঁড়া থেকে খোরাসানে জিহাদের কথা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল।
আশ-শামের কেন্দ্র ছিল ফিলিস্তীন। সে সময় ফিলিস্তীনীরা আল্লাহ তা‘আলা ও ইসলামকে কটাক্ষ করত, অভিশাপ দিত। ওদের দুর্নীতি ও মদ্যপানের কথা সবাই জানত। এক সময় তা ছিল ফাসাদের রাষ্ট্র। সিরিয়াও শাসন ক্ষমতায় ছিল বাথপার্টি।
লেবাননের অপর নাম ছিল “মধ্যপ্রাচ্যের প্যারিস”, সেখানে নিয়মিত অশ্লীল উৎসব-অনুষ্ঠান চলত। আরবরা পার্টি উদযাপন করতে বৈরুতে যেত। হাদিসে ইয়েমেনের যে অংশের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তা হল দক্ষিণের “আদেন-আবিয়ান” আর আরব ভূমিতে এক সময় সেটিই ছিল একমাত্র কমিউনিস্ট রাষ্ট্র। আমার মনে হত যে, বিজয় বুঝি অনেক অনেক দূরে…, আমি বেঁচে থাকতে বুঝি এর কথা ভুলেই যেতে হবে।
সুবহানাল্লাহ্! বিশ বছরের মধ্যে আজ আমরা কোথায় এসে দাঁড়িয়েছি।
ফিলিস্তীনেই প্রথম জিহাদ শুরু হয়; আসলে আজকের আধুনিক বিশ্বে ফিলিস্তীনই শাহাদাতবরণ করাকে (শহীদ হওয়া) এর প্রাপ্য গুরুত্ব ও মর্যাদা দিয়েছে। শাহাদাত অর্জনের ধারণা আধুনিক বিশ্বে ফিলিস্তীনেই শুরু হয়। আজকের ফিলিস্তীনে, শাহাদাহ্ একটি সংস্কৃতির রূপ পরিগ্রহ করেছে। একে বিয়ে শাদীর মত উদযাপন করা হয়; যখন কোন শহীদ আল্লাহ্ তা‘আলার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করে, তখন তার পরিবার একটি তাবু গেঁড়ে বসে আর লোকজন তাদেরকে সম্ভাষণ ও মোবারকবাদ জানাতে আসে যেন এই মাত্র তাদের সন্তানের বিয়ে হল। অতএব, যারা দ্বীন থেকে সবচেয়ে দূরে ছিল, আল্লাহ্ তা‘আলা ও তাঁর দ্বীনকে যারা অভিশাপ দিত, তারাই আজ “শাহাদাহ্”র অনুপম দৃষ্টান্ত তুলে ধরল। তারাই তো “আল-আমালিয়াহ ইসতাশাদিয়াহ” -এ বিষয়টি পুনর্জাগরণ দিল, তারা এটা নতুন করে উদ্ভাবন করেনি বরং তারা এই বিষয়টি জনপ্রিয় করে তুলেছে।
আফগানিস্তান, এক সময়ের সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র, আজ জিহাদের বিরাট ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে বিশ্বের নানা প্রান্তে ঘটমান জিহাদের সাথে আফগানিস্তানের সম্ভাব্য যোগসূত্র রয়েছে। বর্তমানে যেকোন জিহাদের মূলে কোন না কোনভাবে আফগানিস্তানের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এক সময়ের কমিউনিস্ট রাষ্ট্র সম্ভবত মুসলিম বিশ্বের যেখানে নিরক্ষরতার হার সবচেয়ে বেশি, ইসলাম সম্পর্কে যে দেশের অধিবাসীগণের জ্ঞান অপ্রতুল; যারা বড় মাপের আলেম উলামা নন তারাই সেখানে একবিংশ শতাব্দীতে জিহাদের সূত্রপাত করল। জিহাদের পুনর্জাগরণ ও বিস্তার ঘটল সেখান থেকে; শাইখ আব্দুল্লাহ্ ইউসুফ আযযাম ﷲ ﺭﲪﻪ এর নির্দেশনায় আফগানিস্তান হতে গোটা বিশ্বে জিহাদ ছড়িয়ে পড়ল। কে জানত যে, ইরাকও একদিন জিহাদের ময়দানে পরিণত হবে? অল্প কয়েক বছর আগে সে কথা কে কল্পনা করত? কার ধারণায় ছিল, সাদ্দামের দেশ জিহাদের কাতারে শামিল হবে? এমনকি আমেরিকানরাও হিসাব কষতে ভুল করল; ওরা মনে করেছিল বাগদাদে ওদের ফুলের শুভেচ্ছায় বরণ করে নেয়া হবে; কিন্তু, সুবহানাল্লাহ্! ইরাক বর্তমানে মুসলিম উম্মতের প্রথম সারির জিহাদের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত। আল্লাহ্ তা‘আলা ইরাককে জিহাদের জন্য প্রস্তুত করলেন। বারো বৎসরের অর্থনৈতিক অবরোধ ও প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধ সংগঠিত না হলে, ইরাকী জনগণের মাঝে আজকের মুজাহিদ ফ্রন্ট তৈরি হত না। এসব কিছু ছিল তাদের জন্য ‘বুয়াস’। আল্লাহ্ তা‘আলা ইরাকীগণের জন্য একাধিক ‘বুয়াস’-এর ঘটনার অবতারণা করেন। সাদ্দাম তাদের মাঝে জীবিত থাকলে এরূপ পরিবর্তন আসত না, তাই আল্লাহ্ তা‘আলা তাদের পূর্বের নেতৃত্ব অপসারণ করলেন। আমেরিকানরা নেতৃত্বের পদে উড়ে এসে জুড়ে বসল। তাদের জানা ছিল না যে ভীমরুলের চাক সেখানে বর্তমান ছিল, তারা জানত না কিসে তারা হস্তক্ষেপ করতে যাচ্ছে। সাদ্দামকে হটালেও আবু মুসয়াব আজ-জারকাওয়ী মুজাহিদদের নেতৃত্ব দিতে লাগলেন। আমেরিকানরা এক মহাবিপদে নিজেদের জড়িয়ে ফেলেছে, আল্লাহ্-ই ভাল জানে, ইরাক যেন এক অতল জলাধার যাতে নিমজ্জিত হয়ে আমেরিকার সলিল সমাধি ঘটবে।
দক্ষিণ ইয়েমেন যা এক সময় কমিউনিস্ট আরব রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত ছিল, বর্তমানে (সেখানে ইসলামের পুর্নজাগরণ ঘটেছে। আর এই পুর্নজাগরণ ঘটেছে আদেন-আবিয়ানকে কেন্দ্র করে। হাদিসে যে স্থানের কথা রাসূল (সাঃ) বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। তাহলে বিশ বছরের স্বল্প সময়ের ব্যবধানে এসব ঘটনা ঘটে চলছে। এসব কিছু কি, বিজয় অতি নিকটে এমন ইঙ্গিত বহন করে না? হাদিসের রাসূল (সাঃ) যেসব স্থানের উপর গুরুত্বারোপ করেছেন, আল্লাহ্ তা‘আলা কি সেসব স্থান পরবর্তী কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ের জন্য প্রস্তুত করছেন না?
ইরাক, খোরাসান, ইয়েমেন এবং আশ-শামে পরবর্তী অধ্যায়ের জন্য ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে, যার চূড়ান্ত পরিণতি হচ্ছে ‘আল-মালহামা’। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) ইমাম মাহদী ও আল-মালহামা সম্পর্কে উপরোক্ত স্থানসমূহের উল্লেখ করেছেন। আল-মালহামা হচ্ছে সেই মহান যুদ্ধ যা মুসলিম এবং আর-রোমের মধ্যে সংঘটিত হবে, যার ফলশ্রুতিতে খিলাফাহ্ সমগ্র বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত হবে। আমরা যে বিশ্বে বসবাস করি সেখানে আঞ্চলিকভাবে খিলাফাহ্ প্রতিষ্ঠা সম্ভব না; হয় সর্বত্র জয় করতে হবে নতুবা সবকিছু হারাতে হবে। যদি কেউ মনে করে সীমিত কোন এলাকা সে দখল করবে আর তাকে একাকী ছেড়ে দেয়া হবে, তবে তা ভুল কেননা, আমেরিকা তাকে উৎখাত করার জন্য উঠে পড়ে লাগবে।
বর্তমানে বৃহৎ শক্তিধর রাষ্ট্রসমূহের ব্যাপক বিধ্বংসী শক্তি অর্জনের পূর্বে মানব সভ্যতার অবস্থা এরূপ ছিল না। পূর্বে কেউ চাইলে পর্বতে বিশাল প্রাসাদ নির্মাণ করে বছরের পর বছর নিরাপদে জীবন যাপন করতে পারত; কিন্তু এখন ওরা বি-৫২ (বোমারু বিমান) পাঠিয়ে প্রাসাদ নিমিষের মধ্যে গুড়িয়ে দিতে পারে।
তাহলে ভবিষ্যতের যুদ্ধে হয় সম্পূর্ণরূপে বিজয় অর্জিত হবে, না হয় সবই হারাতে হবে। এটি “আল-মালহামা”র একটি বৈশিষ্ট্য – আল-মালহামা হবে কুফর ও ঈমানের মধ্যে চূড়ান্ত লড়াই, যাতে মুসলিম উম্মাহ বিজয় লাভ করবে। এখানেই সবকিছুর শেষ নয়, কেননা দজ্জাল, ইয়াজুজ মাজুজের আবির্ভাব ঘটবে; কিন্তু আল-মালহামা যুদ্ধের ফলে ইসলামী খিলাফাহ্ বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠা লাভ করবে।
এখান থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে, আমরা সেই সুবর্ণ সময়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। এমতাবস্থায় নীরব দর্শক হয়ে হেলায় সময় নষ্ট করা এবং বিরাট আজর বা পুরস্কার হতে বঞ্চিত হওয়া আমাদের জন্য আদৌ শোভনীয় নয়। হাদিস থেকে সেই সময়ের পুরস্কারের কথা জেনে সাহাবা ও সালফে সালেহীনরাও সেসময়ে উপস্থিত থাকার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করতেন। আর আমরা জীবদ্দশায় সেই সময়ের কাছাকাছি উপনীত হয়েও অবহেলা করছি। শাইখ আব্দুল্লাহ্ ইউসুফ আযযাম (রহ.) এ প্রসঙ্গে বলেন, “জিহাদের উপমা হল বাজারের মত, যখন খোলা থাকে কিছু লোক মুনাফা অর্জন করে, তারপর তা বন্ধ হয়ে যায়।” সবসময় মুনাফা অর্জনের সুযোগ পাওয়া যাবে না;
যদি কেউ পিছনে পড়ে থাকে, ইতস্তত: করে, অনীহা ভাব প্রদর্শন করে, তাহলে সে সুযোগ হারাবে, কেননা এ সুযোগ কেবল একবারই আসে।
জিহাদের সুবর্ণ সময় ও সুযোগ থাকলেও, এর পুরস্কার বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে না, এজন্য তাকে কঠোর পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হবে। জিহাদের মর্যাদা সর্বাধিক বলে তাকে ত্যাগের চরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করতে হবে। যারা সর্বোৎকৃষ্ট মু’মিন, আল্লাহ্ তা‘আলা যাদের বিশেষভাবে বাছাই করেছেন কেবল তারাই সর্বশেষ পর্যন্ত তাদের কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করতে পারবে, কেননা সে সময় ফিতনা হবে খুবই ভয়াবহ।
আরও পড়ুন