গত তিন পর্বে আমরা দেখলাম, জিহাদ ফরয এবং জিহাদের প্রয়োজনে ই’দাদও ফরয। এ পর্বে আমরা ইনশাআল্লাহ বিপরীতমুখী দু’টি সংশয় নিয়ে আলোচনা করবো। একটি সংশয় জিহাদবিমুখ ভাইদের আরকটি সংশয় জিহাদি ভাইদের।
এ সংশয়টি জিহাদবিমুখ ভাইদের।
আমরা দেখেছি দুনিয়াতে যতদিন কুফর থাকবে জিহাদ থাকবে। জিহাদের প্রয়োজনে ই’দাদ। প্রথমে ই’দাদ। সামর্থ্য অর্জন হলে জিহাদ। জিহাদবিমুখ ভাইয়েরা মনে করেন, জিহাদ ফরয বা ই’দাদ ফরয সবই ঠিক, কিন্তু যখন সামর্থ্য থাকবে। অন্যথায় নয়। আমাদের বর্তমানে শক্তি নেই। তাই জিহাদ বা ই’দাদ কোনোটাই ফরয নয়।
জিহাদ ফরযের জন্য সামর্থ্য শর্ত নয়
জিহাদবিমুখ ভাইয়েরা মনে করেছেন জিহাদ ফরয হওয়ার জন্য জিহাদ আদায়ের সামর্থ্য থাকা শর্ত। আসলে বিষয়টা এমন নয়। শরীয়তের কোনো কোনো ফরয এমন আছে যে, তা ফরয হওয়ার জন্য উক্ত ফরযটি আদায় করার সামর্থ্য থাকতে হয়। যেমন হজ। কুরআনে কারীমে হজ ফরয করা হয়েছে আদায়ের সামর্থ্য থাকার শর্তে –من استطاع إليه سبيلا । এ ধরনের ফরযের ক্ষেত্রে সামর্থ্য না থাকলে অর্জন করা ফরয নয়। যেমন যার অর্থ সম্পদ নেই, হজ আদায়ের জন্য তাকে অর্থ সম্পদ কামাই করতে হবে না। যেহেতু অর্থ সম্পদ না থাকলে হজ ফরযই নয়।
পক্ষান্তরে শরীয়তের কিছু ফরয আছে যেগুলো আদায়ের সামর্থ্য না থাকলেও ফরয। তাই সামর্থ্য না থাকলে ফরয আদায়ের জন্য সামর্থ্য অর্জন করা জরুরী। যেমন ঋণ, স্ত্রী সন্তানের ভরণ-পোষণ ইত্যাদি। জিহাদ ফরযটি এ দ্বিতীয় শ্রেণীভুক্ত।
কাফেরদের সাথে যুদ্ধ বিরতি চুক্তি প্রসঙ্গে ইমাম সারাখসী রহ. (৪৯০হি.) বলেন,
বুঝা গেল, জিহাদ ঋণের মতো। সামর্থ্য না থাকার সময়ও ঋণের মতো তা ফরয।
ইবনে তাইমিয়া রহ. (৭২৮হি.) বিষয়টি আরও স্পষ্ট করেছেন। তিনি বলেন,
বুঝা গেল, হজ ইত্যাদির মতো বিধান সামর্থ্য না থাকলে ফরযই হয় না। পক্ষান্তরে জিহাদের মতো বিধান সামর্থ্য না থাকলেও ফরয। উম্মাহর উপর তা ঋণ হয়ে থাকবে। সামর্থ্য অর্জন করে তা আদায় করতে হবে। সামর্থ্য নেই বাহানায় বসে থাকার সুযোগ নেই। ওয়াল্লাহু আ’লাম।
ফিকহুল জিহাদ: ০১- উম্মাহর প্রতিটি নারী পুরুষের উপর জিহাদ ফরয
ফিকহুল জিহাদ: ০২- কুফরের শক্তি চূর্ণ হওয়া পর্যন্ত জিহাদ ফরয
ফিকহুল জিহাদ: ০৩- ফরয আদায়ে ই’দাদ
সংশয় ০১: সামর্থ্য না থাকলে জিহাদ ফরয নয়, ই’দাদও ফরয নয়
এ সংশয়টি জিহাদবিমুখ ভাইদের।
আমরা দেখেছি দুনিয়াতে যতদিন কুফর থাকবে জিহাদ থাকবে। জিহাদের প্রয়োজনে ই’দাদ। প্রথমে ই’দাদ। সামর্থ্য অর্জন হলে জিহাদ। জিহাদবিমুখ ভাইয়েরা মনে করেন, জিহাদ ফরয বা ই’দাদ ফরয সবই ঠিক, কিন্তু যখন সামর্থ্য থাকবে। অন্যথায় নয়। আমাদের বর্তমানে শক্তি নেই। তাই জিহাদ বা ই’দাদ কোনোটাই ফরয নয়।
জিহাদ ফরযের জন্য সামর্থ্য শর্ত নয়
জিহাদবিমুখ ভাইয়েরা মনে করেছেন জিহাদ ফরয হওয়ার জন্য জিহাদ আদায়ের সামর্থ্য থাকা শর্ত। আসলে বিষয়টা এমন নয়। শরীয়তের কোনো কোনো ফরয এমন আছে যে, তা ফরয হওয়ার জন্য উক্ত ফরযটি আদায় করার সামর্থ্য থাকতে হয়। যেমন হজ। কুরআনে কারীমে হজ ফরয করা হয়েছে আদায়ের সামর্থ্য থাকার শর্তে –من استطاع إليه سبيلا । এ ধরনের ফরযের ক্ষেত্রে সামর্থ্য না থাকলে অর্জন করা ফরয নয়। যেমন যার অর্থ সম্পদ নেই, হজ আদায়ের জন্য তাকে অর্থ সম্পদ কামাই করতে হবে না। যেহেতু অর্থ সম্পদ না থাকলে হজ ফরযই নয়।
পক্ষান্তরে শরীয়তের কিছু ফরয আছে যেগুলো আদায়ের সামর্থ্য না থাকলেও ফরয। তাই সামর্থ্য না থাকলে ফরয আদায়ের জন্য সামর্থ্য অর্জন করা জরুরী। যেমন ঋণ, স্ত্রী সন্তানের ভরণ-পোষণ ইত্যাদি। জিহাদ ফরযটি এ দ্বিতীয় শ্রেণীভুক্ত।
কাফেরদের সাথে যুদ্ধ বিরতি চুক্তি প্রসঙ্গে ইমাম সারাখসী রহ. (৪৯০হি.) বলেন,
وإن قالوا للمسلمين: وادعونا على أن لا نقاتلكم ولا تقاتلونا- فليس ينبغي للمسلمين أن يعطوهم ذلك لقوله تعالى: {ولا تهنوا ولا تحزنوا وأنتم الأعلون} [آل عمران: 139] . ولأن الجهاد فرض، فإنما طلبوا الموادعة على أن تترك فريضة، ولا يجوز إجابتهم إلى مثل هذه الموادعة، كما لو طلبوا الموادعة على أن لا يصلوا ولا يصوموا، إلا أن يكون لهم شوكة شديدة لا يقوى عليهم المسلمون، فحينئذ لا بأس بأن يوادعهم إلى أن يظهر للمسلمين قوة ثم ينبذ إليهم ... وهو بمنزلة إنظار المعسر إلى الميسرة، كما قال الله تعالى: {وإن كان ذو عسرة فنظرة إلى ميسرة} [البقرة: 280] . -شرح السير الكبير ص: 190
কাফেররা যদি প্রস্তাব দেয় ‘চল আমরা চুক্তি করে নিই যে, আমরা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়বো না, তোমরাও আমাদের বিরুদ্ধে লড়বে না’ তাহলে এ প্রস্তাবে সাড়া দেয়া মুসলমানদের অনুচিত। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা হীনমন্য হয়ো না চিন্তিতও হয়ো না। তোমরাই বিজয়ী হবে’। -আলে ইমরান ১৩৯
তাছাড়া কথা হলো, জিহাদ ফরয। তারা একটি ফরয ছেড়ে দেয়ার প্রস্তাব করছে। এ ধরনের প্রস্তাবে সায় দেয়া জায়েয হবে না। যেমন জায়েয হতো না যদি তারা এ শর্তে চুক্তির প্রস্তাব দিতো যে, মুসলিমরা নামায-রোযা করতে পারবে না। হাঁ, কাফেররা যদি এত শক্তির অধিকারী হয় যে, মুসলমানরা তাদের সাথে কুলিয়ে উঠতে পারবে না, তাহলে চুক্তি করতে সমস্যা নেই। পরে যখন মুসলিমদের শক্তি অর্জিত হবে চুক্তি রহিত করে দেবে (এবং কিতাল করবে)। ... এ অপশনটি মূলত ঋণ আদায়ে অপারগ ব্যক্তিকে সামর্থ্য অর্জন হওয়া পর্যন্ত অবকাশ দেয়ার অনুরূপ। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘দেনাদার অস্বচ্ছল হলে স্বচ্ছলতা লাভ পর্যন্ত তাকে অবকাশ দিতে হবে’। -বাকারা: ২৮০ (শরহুস সিয়ারিল কাবির: ১৯০)
কাফেররা যদি প্রস্তাব দেয় ‘চল আমরা চুক্তি করে নিই যে, আমরা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়বো না, তোমরাও আমাদের বিরুদ্ধে লড়বে না’ তাহলে এ প্রস্তাবে সাড়া দেয়া মুসলমানদের অনুচিত। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা হীনমন্য হয়ো না চিন্তিতও হয়ো না। তোমরাই বিজয়ী হবে’। -আলে ইমরান ১৩৯
তাছাড়া কথা হলো, জিহাদ ফরয। তারা একটি ফরয ছেড়ে দেয়ার প্রস্তাব করছে। এ ধরনের প্রস্তাবে সায় দেয়া জায়েয হবে না। যেমন জায়েয হতো না যদি তারা এ শর্তে চুক্তির প্রস্তাব দিতো যে, মুসলিমরা নামায-রোযা করতে পারবে না। হাঁ, কাফেররা যদি এত শক্তির অধিকারী হয় যে, মুসলমানরা তাদের সাথে কুলিয়ে উঠতে পারবে না, তাহলে চুক্তি করতে সমস্যা নেই। পরে যখন মুসলিমদের শক্তি অর্জিত হবে চুক্তি রহিত করে দেবে (এবং কিতাল করবে)। ... এ অপশনটি মূলত ঋণ আদায়ে অপারগ ব্যক্তিকে সামর্থ্য অর্জন হওয়া পর্যন্ত অবকাশ দেয়ার অনুরূপ। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘দেনাদার অস্বচ্ছল হলে স্বচ্ছলতা লাভ পর্যন্ত তাকে অবকাশ দিতে হবে’। -বাকারা: ২৮০ (শরহুস সিয়ারিল কাবির: ১৯০)
বুঝা গেল, জিহাদ ঋণের মতো। সামর্থ্য না থাকার সময়ও ঋণের মতো তা ফরয।
ইবনে তাইমিয়া রহ. (৭২৮হি.) বিষয়টি আরও স্পষ্ট করেছেন। তিনি বলেন,
كَمَا يَجِبُ عَلَى الْمُعْسِرِ السَّعْيُ فِي وَفَاءِ دَيْنِهِ وَإِنْ كَانَ فِي الْحَالِ لَا يُطْلَبُ مِنْهُ إلَّا مَا يَقْدِرُ عَلَيْهِ وَكَمَا يَجِبُ الِاسْتِعْدَادُ لِلْجِهَادِ بِإِعْدَادِ الْقُوَّةِ وَرِبَاطِ الْخَيْلِ فِي وَقْتِ سُقُوطِهِ لِلْعَجْزِ فَإِنَّ مَا لَا يَتِمُّ الْوَاجِبُ إلَّا بِهِ فَهُوَ وَاجِبٌ بِخِلَافِ الِاسْتِطَاعَةِ فِي الْحَجِّ وَنَحْوِهَا فَإِنَّهُ لَا يَجِبُ تَحْصِيلُهَا لِأَنَّ الْوُجُوبَ هُنَا لَا يَتِمُّ إلَّا بِهَا. – مجموع الفتاوى: 28/ 259
যেমনিভাবে অভাবী ঋণগ্রস্তের জন্য ঋণ পরিশোধের চেষ্টা করা ফরয, যদিও নগদে তার সামর্থ্যের অতিরিক্ত পরিশোধের নির্দেশ দেয়া হবে না। এবং যেমন সামর্থ্য না থাকার সময়ে যখন (এ মূহুর্তে) জিহাদ করা ফরয থাকে না, তখন শক্তি অর্জন ও পালিত ঘোড়া প্রস্তুত করার মাধ্যমে জিহাদের প্রস্তুতি গ্রহণ করা ফরয। কারণ যে জিনিস ব্যতীত ফরয আদায় করা যায় না, তাও ফরয। পক্ষান্তরে হজ ইত্যাদির সামর্থ্যের বিষয়টা এর ব্যতিক্রম। এখানে সামর্থ্য অর্জনের চেষ্টা করা ফরয নয়। কারণ, এখানে সামর্থ্য ব্যতীত বিধানটি ফরযই হয় না। –মাজমুউল ফাতাওয়া: ২৮/২৫৯
যেমনিভাবে অভাবী ঋণগ্রস্তের জন্য ঋণ পরিশোধের চেষ্টা করা ফরয, যদিও নগদে তার সামর্থ্যের অতিরিক্ত পরিশোধের নির্দেশ দেয়া হবে না। এবং যেমন সামর্থ্য না থাকার সময়ে যখন (এ মূহুর্তে) জিহাদ করা ফরয থাকে না, তখন শক্তি অর্জন ও পালিত ঘোড়া প্রস্তুত করার মাধ্যমে জিহাদের প্রস্তুতি গ্রহণ করা ফরয। কারণ যে জিনিস ব্যতীত ফরয আদায় করা যায় না, তাও ফরয। পক্ষান্তরে হজ ইত্যাদির সামর্থ্যের বিষয়টা এর ব্যতিক্রম। এখানে সামর্থ্য অর্জনের চেষ্টা করা ফরয নয়। কারণ, এখানে সামর্থ্য ব্যতীত বিধানটি ফরযই হয় না। –মাজমুউল ফাতাওয়া: ২৮/২৫৯
বুঝা গেল, হজ ইত্যাদির মতো বিধান সামর্থ্য না থাকলে ফরযই হয় না। পক্ষান্তরে জিহাদের মতো বিধান সামর্থ্য না থাকলেও ফরয। উম্মাহর উপর তা ঋণ হয়ে থাকবে। সামর্থ্য অর্জন করে তা আদায় করতে হবে। সামর্থ্য নেই বাহানায় বসে থাকার সুযোগ নেই। ওয়াল্লাহু আ’লাম।
***
ফিকহুল জিহাদ: ০১- উম্মাহর প্রতিটি নারী পুরুষের উপর জিহাদ ফরয
ফিকহুল জিহাদ: ০২- কুফরের শক্তি চূর্ণ হওয়া পর্যন্ত জিহাদ ফরয
ফিকহুল জিহাদ: ০৩- ফরয আদায়ে ই’দাদ
Comment