সংশয় দুই
জিহাদ ফরযে আইন হলে আসকারি ই’দাদ সর্বাবস্থায় সকলের জন্য আবশ্যক, কোনো অবস্থায় কারো জন্য বন্ধ রাখার কোনো সুযোগ নেই
এ সংশয়টিও জিহাদি ভাইদের। ইতোমধ্যে আলহামদুলিল্লাহ আমরা বুঝতে পারলাম, জিহাদ ফরয। জিহাদের প্রয়োজনে ই’দাদও ফরয। সামর্থ্য নেই বাহানায় বসে থাকার সুযোগ নেই। সামর্থ্য না থাকায় আপাতত জিহাদ বন্ধ রাখার সুযোগ আছে। তা এমনিতেই হোক বা প্রয়োজন পড়লে কাফের-মুরতাদদের সাথে চুক্তি করেই হোক। তবে ই’দাদ লাগবে। ই’দাদের ফরয থেকে মুক্তির কোনো পথ নেই।
যেকোনো যুদ্ধের জন্য বহুমুখী ই’দাদের প্রয়োজন। বিশেষ করে বর্তমান গোটা কুফরি ও তাগুতি বিশ্ব মুসলিমদের বিরুদ্ধে। সে তুলনায় মুজাহিদদের সংখ্যা এবং সামর্থ্য নিতান্তই কম। কাজেই প্রতিটি কদম হিসেব করে ফেলতে হবে। নয়তো অঙ্কুরেই ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা যথেষ্ট। হিসেব নিকেশ না বুঝার কারণে আই এসের কি দশা আমরা নিজেরা স্বচক্ষেই দেখেছি।
যেহেতু আমাদের সংখ্যা ও সামর্থ্য নিতান্তই কম তাই সরাসরি সংঘর্ষে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি এ মূহুর্তে আমাদের নেই। আমাদের এখন মাঠ প্রস্তুত করার মারহালা। এ এক দীর্ঘ মারহালা। জাতির অধঃপতন যেমন হয়েছে দীর্ঘ দিনে, ঘুরে দাঁড়াতেও সময় লাগবে। দাওয়াত ও তাহরিদ থেকে শুরু করে কিতাল পর্যন্ত অনেক মারহালা পার হয়ে আমাদের চূড়ান্ত লড়াইয়ে নামতে হবে। এটি দু’চার দিনের ব্যাপার নয়, দু’চার বছরেরও নয়।
এখন তাহলে প্রশ্ন দাঁড়ালো, আমাদের কি কি মারহালা পার হতে হবে? এ মারহালাগুলোতে আমাদের কাজের ধরন কি হবে? এর জন্য সময় কত লাগবে?
সময়ের ব্যাপারে কথা সেটাই যেটা তালেবানরা তাদের আলোচনার ব্যাপারে বলেছেন। অনেকে জিজ্ঞেস করছেন যে, তালেবানদের আলোচনা কখন শেষ হবে? তাঁরা উত্তর দিয়েছেন-
যুদ্ধ দীর্ঘ চল্লিশ বছর যাবৎ চলছে। আমাদের মূল বিষয় হলো, সমাধান ও ইসলামি শাসন কায়েম। এটাই মূল বিষয়। সময় কম বেশি কথা না। চল্লিশ বৎসরের আগুন এক দু দিনে নিভবে না। কাজেই সময় কত দিন লাগবে সেটা বিষয় না, সমাধান হচ্ছে কি’না সেটা বিষয়। এর জন্য দীর্ঘ সময় লাগতে পারে।
ই’দাদের ব্যাপারেও একই কথা: সময় কতদিন লাগছে সেটা বিষয় না, যে মারহালায় যতটুকু প্রস্তুতি পূর্ণ হওয়ার দরকার, হচ্ছে কি’না সেটাই মূল বিষয়।
যেহেতু আগের মারহালাগুলো পূর্ণ সম্পন্ন হওয়া ছাড়া আমরা কিতালের মারহালায় যেতে পারছি না, তাই সেগুলো সম্পন্ন করা আবশ্যক। আর প্রত্যেক মারহালার ই’দাদ তার ধরন অনুযায়ী। আবার সে মারহালায় সকল মুজাহিদ যে একই কাজ করবে তাও না। একেক জনের একেক কাজ। যখন যেটা প্রয়োজন। যার জন্য যেটা মুনাসিব। যে ভাই যে কাজের উপযুক্ত। এভাবে মারহালাগুলো পার করতে হবে। এ হিসেবে কেউ হয়তো লেখালেখির কাজ করবেন। কেউ দাওয়াহর কাজ। কেউ মিডিয়ার কাজ। কেউ আসকারি ই’দাদ। এভাবে কাজ ভাগ হয়ে যাবে। হ্যাঁ, আসকারি ই’দাদ ছাড়া জিহাদ সম্ভব না এটাই বাস্তব। তবে সে মারহালায় পৌঁছতে যে ই’দাদগুলো লাগে সেগুলো আগে পূর্ণ করতে হবে। আজই যদি সবাই চাপাতি হাতে ময়দানে নেমে পড়ে তাহলে যে ফাতাহ হয়ে যাবে তা না। বর্তমান গ্লোবাল বিশ্বে এটা সম্ভব না। তাই হিসেব করে এগুতে হবে। কোনো কাজ আগে কোনো কাজ পরে। কোনো ভাইয়ের জন্য হয়তো এখন আসকারি ই’দাদ মুনাসিব। কোনো ভাইয়ের জন্য হয়তো ইলমি ই’দাদ মুনাসিব। যার জন্য যেটা মুনাসিব তানজিম সে হিসেবে ভাগ করে দায়িত্ব দিয়ে থাকে। আমাদের উচিৎ তানজিমের ফায়সালা মেনে আনুগত্যের সাথে কাজ করে যাওয়া।
হ্যাঁ, একটা সময় আসবে যখন মোটামুটি সকলকেই অস্ত্র ধরার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। সে মারহালায় কেউ আসকারি ই’দাদ থেকে নিষ্কৃতি পাবে না। তবে সে মারহালা আসার আগ পর্যন্ত যে ভাইকে যে কাজ দেয়া হয় সেটা করার মাঝেই খায়র। এমন মনে করা ঠিক হবে না যে, জিহাদ ফরয তাহলে আমাকে কেন অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিতে দেয়া হচ্ছে না? আপনি যেটা করছেন সেটাও জিহাদের অংশ। ই’দাদের অংশ। এখন এ মারহালা আপনি পার হোন। সামনে যখন আপনাকে আসকারি ই’দাদের আদেশ দেয়া হবে তখন মনে প্রাণে করবেন।
অধিকন্তু স্বাভাবিক বডি ফিট রাখতে যে ধরনের শারীরিক প্রশিক্ষণ দরকার, যেগুলো মোটামুটি নজর এড়িয়ে করা যায়, সেগুলোতে তানজিম সব সময়ই উৎসাহ দিয়ে থাকে। বরং অনেক ক্ষেত্রে নিয়মও করে দেয়। সেগুলো করতে থাকুন। মনে রাখবেন জিহাদের কোনো মারহালাই কম গুরুত্বের নয়। আসকারি কাজ করতে দেয়া হচ্ছে না বাহানায় অন্য কাজে শিথিলতা করা ইখলাস পরিপন্থী; বরং নিফাকের আলামত। আল্লাহ আমাদের সহীহ বুঝ দান করুন।
ইশকাল
আপনি হয়তো বলবেন, সবার উপর একই সাথে সব ধরনের ই’দাদ (যার মাঝে অস্ত্র চালনাও শামিল) আরোপ করলে সমস্যা কি?
উত্তর
সমস্যার কারণেই তো ভাগ করা হয়।
যেমন ধরুন কোনো একজন ভাই ভার্সিটিতে পড়েন। আবাসিক থাকেন। সব ধরনের ছাত্রই সেখানে থাকে। বিএনপি, জামাত, আওয়ামিলীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, তাবলীগ, নাস্তিক, মুরতাদ, ধর্মনিরপেক্ষ, মুসলিম, হিন্দু সব। কে দাড়ি রাখলো, কে নামায পড়লো, কে জিহাদি বই পড়লো সব কিছুর হিসাব হয়। এমন একটা পরিবেশে ভাইয়ের জন্য অস্ত্র চালনার ট্রেনিং নেয়া সহজ নয়। তাওহিদ ও জিহাদের মৌলিক বুঝটুকু হাসিল করা বা দাওয়াহ দেয়াও তো এখানে কঠিন। তাকে আমরা বলতে পারি না, বাঁচেন আর মরেন আপনাকে অস্ত্র চালনা শিখতেই হবে।
কিংবা ধরুন কোনো ভাই এমন একটা মাদ্রাসায় পড়েন যেটা জিহাদ বিরোধী। ছাত্ররা কি করে না করে নিয়মিত তদারকি হয়। এখানে আমরা বলতে পারি না, বাঁচেন আর মরেন অস্ত্র চালনা আপনাকে শিখতেই হবে। আমরা তাকে নিশ্চিত রিস্কে ফেলে কাজ করতে বলবো না অবশ্যই।
এজন্য একেক কাজের জন্য একেকটা গ্রুপ বাছাই করে নেয়া হয়। যার জন্য যে কাজ মুনাসিব ও সহজ। নজরে এড়িয়ে যে কাজ যার জন্য করা সহজ সেটাই করতে দেয়া হয়। এভাবে আস্তে আস্তে এগুতো এগুতো একদিন পূর্ণতায় পৌঁছা যাবে। আজই সব করতে গেলে সোনার হাসের পেট কেটে সোনার ডিম বের করার পরিণতি দাঁড়াবে। মূলনীতি আছে,
مَنْ اسْتَعْجَلَ الشَّيْءَ قَبْلَ أَوَانِهِ عُوقِبَ بِحِرْمَانِهِ
এজন্য ভাইদের জন্য এবং জিহাদের জন্যও কল্যাণকর এটাই হবে যে, তানজিমের আনুগত্য করা। যাকে যে কাজের মুনাসিব মনে করে যে মারহালায় যে কাজ যতটুকু দেয়া হয় সন্তুষ্টচিত্তে তা করে যাওয়া। অবশ্য আপনার পরামর্শ আপনি পেশ করতে পারেন। আপনার মতামত জানাতে পারেন। আপনিও তো তানজিমের একজন। আপনাদেরকে নিয়েই তো তানজিম। তবে আপনার মতামত গ্রহণ না হলে মন খারাপ করবেন না। মত দেয়া থেকে বিরতও হয়ে যাবেন না। আবার মন মতো কাজও করাও শুরু করে দেবেন না। আনুগত্য ছাড়া কখনও জিহাদের কাজ সফল হবে না। আর আপনার জিহাদও আনুগত্য ছাড়া কবুল হবে না। জিহাদ কবুল হওয়ার পাঁচ শর্তের একটা হলো আনুগত্য। আনুগত্যের বাহিরে চলে যাওয়ার কারণে উহুদের যুদ্ধে কি যে বিপদ নেমে এসেছিল তা থেকে আমাদের শিক্ষা নেয়া উচিৎ। এজন্যই আল্লাহ তাআলা এ ঘটনাকে দীর্ঘ করে বয়ান করেছেন কুরআনে কারিমে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সহীহ বুঝ দান করুন। আমাদের সকলের সকল মেহনত-প্রচেষ্টা কবুল করুন। আমীন।
والحمد لله رب العالمين. وصلى الله تعالى على خير خلقه محمد وآله وصحبه أجمعين.
Comment