কাজটি অনেক দিন বন্ধ ছিল। ইনশাআল্লাহ আবারও শুরু করতে যাচ্ছি।
যুদ্ধ-বিরতি চুক্তি ও আমান নিয়ে আলোচনা চলছিল। ভূমিকায় আলোচনা হয়েছিল যে, আমান স্থায়ী ও অস্থায়ী দুইভাগে বিভক্ত। স্থায়ী আমান হচ্ছে যিম্মার চুক্তি।
অস্থায়ী আমান দুই প্রকার: ১. আমান ২. যুদ্ধ-বিরতি চুক্তি।
মুসান্নিফ রহ. যুদ্ধ-বিরতি চুক্তির আলোচনা করছেন।
===============================
পূর্বোক্ত ভূমিকা বুঝার পর আমরা মুসান্নিফ রহ. এর বক্তব্যের ব্যাখ্যায় যাবো ইনশাআল্লাহ।
মতন: ونصالحهم ولو بمالٍ إن خيرًا. “যদি কল্যাণকর হয়, তাহলে মালের বিনিময়ে হলেও আমরা হারবিদের সাথে (যুদ্ধ-বিরতি) চুক্তি করতে পারবো।”
শরাহ:
إن خيرًا- যদি চুক্তি করা ইসলাম ও মুসলিমদের জন্য কল্যাণকর হয়
এটি যুদ্ধ-বিরতি চুক্তি জায়েয হওয়ার শর্ত। পক্ষান্তরে চুক্তি যদি ইসলাম ও মুসলিমদের কল্যাণের কারণ না হয়ে অকল্যাণের কারণ হয় তাহলে চুক্তি জায়েয নয়।
উল্লেখ্য, ‘কল্যাণ-الخير’ কথাটিকে কোনো কোনো কিতাবে ‘মাসলাহাত-المصلحة’, কোনো কোনো কিতাবে ‘জরুরত-الضرورة’, কোনো কোনো কিতাবে ‘দুর্বলতা-الضعف’ এবং কোনো কোনো কিতাবে ‘অক্ষমতা-العجز’ শব্দে বলা হয়েছে। অর্থাৎ সামরিক প্রস্তুতির দিক থেকে মুসলিম বাহিনি যদি দুর্বল থাকে, ফলে হামলা করতে বা যুদ্ধ চালিয়ে যেতে অক্ষম হয়, ফলশ্রুতিতে যুদ্ধ-বিরতি চুক্তি করার জরুরত দেখা দেয়: তখন যুদ্ধ বন্ধ রাখার চুক্তি করা মুসলিমদের জন্য কল্যাণকর এবং এতে তাদের মাসলাহাত। যাতে তারা পূর্ণ প্রস্তুত হয়ে অভিযান সাজাতে পারে। এই সময় যুদ্ধ-বিরতি চুক্তি করা জায়েয।
পক্ষান্তরে মুসলিমদের যদি পূর্ণ প্রস্তুতি থাকে, কাফেরদের বশীভূত করার সামর্থ্য থাকে: তখন যুদ্ধ না করে কাফেরদেরকে নিরাপদে ছেড়ে রাখার কোনো অর্থ নাই। এতে ইসলাম ও মুসলিমদের কোনো ফায়েদা নেই, কল্যাণ নেই। বরং সাপ যেকোনো সময় ছোবল মারতে পারে- মতোই ঝুঁকি। এ সময় যুদ্ধ না করে যুদ্ধ-বিরতি চুক্তি করা নাজায়েয। অতএব, কল্যাণের অর্থ হচ্ছে: মুসলিমদের অক্ষমতা, দুর্বলতা কিংবা সীমাবদ্ধতার কারণে অভিযান না চালিয়ে বরং চুক্তি করে যুদ্ধ বন্ধ রেখে এ সুযোগে ই’দাদ করে শক্তি বৃদ্ধি করা।
ফুকাহায়ে কেরাম এর কারণ বলেছেন: কাফেরদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা ফরয। অসংখ্য নুসুস দ্বারা তা প্রমাণিত। চুক্তি করার অর্থ হচ্ছে জিহাদ বন্ধ রাখা যা নুসুসের খেলাফ। তবে জিহাদের জন্য শক্তি দরকার। স্বাভাবিক অবস্থায় শক্তি-সামর্থ্য যখন আছে: জিহাদ বন্ধ রাখা নাজায়েয। যখন শক্তি-সামর্থ্যে দুর্বলতা থাকে, পরিস্থিতির বিবেচনায় যুদ্ধ না করে বরং প্রস্তুতি গ্রহণ উত্তম মনে হয়: তখন যুদ্ধবিরতি চুক্তি জায়েয। অতএব, যুদ্ধ-বিরতি চুক্তিটা হবে মূলত নিজেদের গুছিয়ে প্রস্তুত করার জন্য, বসে বসে আরাম করার জন্য নয়।
ইমাম কাসানী রহ. (৫৮৭ হি.) বলেন,
ولو بمالٍ[1] - মালের বিনিময়ে হলেও
অর্থাৎ চুক্তিতে যদি মাল প্রদানের শর্ত করা হয় তাহলেও জায়েয। যেমন বছরে এতো কোটি টাকা দিতে হবে বা এতো পরিমাণ স্বর্ণ দিতে হবে কিংবা এতো টন খাদ্যশস্য দিতে হবে ইত্যাদি।
মাল প্রদানের শর্ত হতে পারে যে, কাফেররা আমাদেরকে মাল দিবে, কিংবা আমরা কাফেরদেরকে দিবো। মুসান্নিফ রহ. কোনো একটিতে সীমাবদ্ধ করেননি, বরং মুতলাকভাবে বলেছেন। যা বুঝায়: উভয়টিই জায়েয। তবে এখানে একটু তাফসিল আছে।
কাফেররা আমাদেরকে মাল দিবে- এ শর্তে চুক্তিতে কোনো সমস্যা নেই। তাদের মাল আমাদের জন্য এমনিতেই হালাল ছিল। জবরদখল করে নিলেও জায়েয হতো। চুক্তি করে নেয়াতে সমস্যার কিছু নেই। তবে লক্ষ রাখতে হবে, পূর্বোক্ত বর্ণিত দুর্বলতা ও জরুরত না থাকলে শুধু মালের লোভে চুক্তি করে যুদ্ধ বন্ধ রাখা জায়েয হবে নয়।
দ্বিতীয়ত: এ শর্তে চুক্তি করা যে, আমরা কাফেরদেরকে মাল প্রদান করবো। স্বাভাবিক অবস্থায় এ ধরনের চুক্তি নাজায়েয। কেননা, তা দ্বীনের অপমান। মুসলিমদের জন্য লজ্জাস্কর। তবে -আল্লাহ না করুন- অবস্থা যদি এমনই বেগতিক হয়ে পড়ে এবং আমরা যদি এতই দুর্বল হয়ে পড়ি যে, মাল প্রদানে সম্মত না হলে কাফেররা আমাদের ধ্বংস করে ফেলবে এবং আমাদের জান-মাল-ইজ্জত-আব্রু সব ধূলিসাৎ হবে: তখন নিরুপায় অবস্থায় এ ধরনের শর্তে সম্মত হওয়া জায়েয বরং জরুরী। চুক্তি না করলে আমাদের সব হারাতে হবে। তারচে’ বরং সম্পদের একাংশ প্রদান করে বাকি সব কিছু রক্ষা করাই ভালো।
খন্দকের যুদ্ধের সময় মক্কার মুশরিক, মদীনার ইয়াহুদ এবং আরবের অন্যান্য গোত্রগুলো যখন বহুজাতিক জোট গঠন করে মদীনা অবরোধ করে, তখন বাৎসরিক মদীনার এক তৃতীয়াংশ খেজুর প্রদানের বিনিময়ে আরবের গোত্রগুলোর সাথে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবরোধ উঠিয়ে নেয়ার চুক্তি করতে সম্মত হয়েছিলেন। অবশ্য পরবর্তীতে সাহাবায়ে কেরাম এ ধরনের চুক্তি অপমানজনক মনে করে তার পরিবর্তে বরং যুদ্ধ করাই মর্যাদার মনে করেন। তখন রাসূল খুশি হন এবং চুক্তি প্রত্যাখ্যান করেন। তবে রাসূল যেহেতু প্রথমে সম্মত হয়েছিলেন, বুঝা গেল এ ধরনের নিরুপায় পরিস্থিতিতে মাল প্রদানের শর্তে চুক্তি করাও জায়েয; যদিও তা মুসলিমদের জন্য অপমানের বিষয়।
সারকথা: স্বাভাবিক অবস্থায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি করা নাজায়েয। তবে মুসলিমদের দুর্বলতা ও সীমাবদ্ধতার বিবেচনায় চুক্তি করা ভাল মনে হলে ই’দাদের লক্ষ্যে চুক্তি করতে পারবে। এক্ষেত্রে যদি কাফেরদের থেকে মাল গ্রহণের শর্তে চুক্তি করা যায় তাহলে তাতেও সমস্যা নেই। তবে দুর্বলতা-সীমাবদ্ধতা না থাকলে শুধু মালের লোভে চুক্তি করা জায়েয নয়। আর কাফেরদেরকে মাল প্রদানের শর্তে চুক্তি করা নাজায়েয। তবে একান্ত নিরুপায় অবস্থায় পড়ে গেলে তখন জান-মাল-ইজ্জত আব্রু রক্ষার জন্য মাল প্রদানের শর্তেও চুক্তি করা জায়েয।
বি.দ্র. চুক্তির অর্থ: আমরা তাদের জান-মালে আঘাত হানবো না, তারাও আমাদের জান-মালে কোনো আঘাত হানবে না। কাফেররা যদি এর ব্যতিক্রম করে তাহলে তারা আগের মতোই চুক্তিহীন হারবিতে পরিণত হবে এবং তাদের জান-মাল আমাদের জন্য আগের মতো হালাল হয়ে যাবে।
[1]البحر الرائق شرح كنز الدقائق ومنحة الخالق وتكملة الطوري (5/ 85): وأطلق في قوله ولو بمال فشمل المال المدفوع منهم إلينا وعكسه. والأول ظاهر إذا كان بالمسلمين حاجة إليه؛ لأنه جهاد معنى ولأنه إذا جاز بغير المال فبالمال أولى، وإن لم يكن إليهم حاجة به لا يجوز؛ لأنه ترك للجهاد صورة ومعنى. ... والثاني لا يفعله الإمام لما فيه من إعطاء الدنية ولحوق المذلة إلا إذا خاف على المسلمين؛ لأن دفع الهلاك بأي طريق أمكن واجب. ... وفي المحيط ولو وقع الصلح ثم سرق مسلم منهم شيئا لا يملكه وكذا إن أغار المسلمون عليهم وسبوا قوما منهم لم يسع المسلمين الشراء من ذلك السبي ويرد المبيع اهـ.
وأطلق في المصالح ولم يقيده بالإمام؛ لأن موادعة المسلم أهل الحرب جائزة كإعطائه الأمان. ... فإن كان فيها خير أمضاها ... وإلا أبطلها ... ونبذ إليهم. اهـ
بدائع الصنائع في ترتيب الشرائع (7/ 109): ولا بأس بأن يأخذ المسلمون على ذلك جعلا؛ لأن ذلك في معنى الجزية، ويوضع موضع الخراج في بيت المال. ولا بأس أن يطلب المسلمون الصلح من الكفرة ويعطوا على ذلك مالا إذا اضطروا إليه؛ لقوله - سبحانه وتعالى - {وإن جنحوا للسلم فاجنح لها} [الأنفال: 61] أباح - سبحانه وتعالى - لنا الصلح مطلقا، فيجوز ببدل أو غير بدل، ولأن الصلح على مال لدفع شر الكفرة للحال، والاستعداد للقتال في الثاني من باب المجاهدة بالمال والنفس، فيكون جائزا. اهـ
شرح السير الكبير (ص: 1692): وإذا خاف المسلمون المشركين فطلبوا موادعتهم فأبى المشركون أن يوادعوهم حتى يعطيهم المسلمون على ذلك مالا فلا بأس بذلك عند تحقق الضرورة. لأنهم لو لم يفعلوا وليس بهم قوة دفع المشركين ظهروا على النفوس والأموال جميعا، فهم بهذه الموادعة يجعلون أموالهم دون أنفسهم. وقد قال رسول الله - صلى الله عليه وآله وسلم - لبعض أصحابه: «اجعل مالك دون نفسك ونفسك دون دينك» . وحذيفة بن اليمان - رضي الله عنه - كان يداري رجلا فقيل له: إنك منافق. فقال: لا، ولكني أشتري ديني بعضه ببعض مخافة أن يذهب كله. ففي هذا بيان أنه ليس بالمهانة.
ولا بأس بدفع بعض المال على سبيل الدفع عن البعض إذا خاف ذهاب الكل، فأما إذا كان بالمسلمين قوة عليهم فإنه لا يجوز الموادعة بهذه الصفة. اهـ
যুদ্ধ-বিরতি চুক্তি ও আমান নিয়ে আলোচনা চলছিল। ভূমিকায় আলোচনা হয়েছিল যে, আমান স্থায়ী ও অস্থায়ী দুইভাগে বিভক্ত। স্থায়ী আমান হচ্ছে যিম্মার চুক্তি।
অস্থায়ী আমান দুই প্রকার: ১. আমান ২. যুদ্ধ-বিরতি চুক্তি।
মুসান্নিফ রহ. যুদ্ধ-বিরতি চুক্তির আলোচনা করছেন।
===============================
১৩ আমান ও যুদ্ধ-বিরতি চুক্তি (০২)
পূর্বোক্ত ভূমিকা বুঝার পর আমরা মুসান্নিফ রহ. এর বক্তব্যের ব্যাখ্যায় যাবো ইনশাআল্লাহ।
মতন: ونصالحهم ولو بمالٍ إن خيرًا. “যদি কল্যাণকর হয়, তাহলে মালের বিনিময়ে হলেও আমরা হারবিদের সাথে (যুদ্ধ-বিরতি) চুক্তি করতে পারবো।”
শরাহ:
إن خيرًا- যদি চুক্তি করা ইসলাম ও মুসলিমদের জন্য কল্যাণকর হয়
এটি যুদ্ধ-বিরতি চুক্তি জায়েয হওয়ার শর্ত। পক্ষান্তরে চুক্তি যদি ইসলাম ও মুসলিমদের কল্যাণের কারণ না হয়ে অকল্যাণের কারণ হয় তাহলে চুক্তি জায়েয নয়।
উল্লেখ্য, ‘কল্যাণ-الخير’ কথাটিকে কোনো কোনো কিতাবে ‘মাসলাহাত-المصلحة’, কোনো কোনো কিতাবে ‘জরুরত-الضرورة’, কোনো কোনো কিতাবে ‘দুর্বলতা-الضعف’ এবং কোনো কোনো কিতাবে ‘অক্ষমতা-العجز’ শব্দে বলা হয়েছে। অর্থাৎ সামরিক প্রস্তুতির দিক থেকে মুসলিম বাহিনি যদি দুর্বল থাকে, ফলে হামলা করতে বা যুদ্ধ চালিয়ে যেতে অক্ষম হয়, ফলশ্রুতিতে যুদ্ধ-বিরতি চুক্তি করার জরুরত দেখা দেয়: তখন যুদ্ধ বন্ধ রাখার চুক্তি করা মুসলিমদের জন্য কল্যাণকর এবং এতে তাদের মাসলাহাত। যাতে তারা পূর্ণ প্রস্তুত হয়ে অভিযান সাজাতে পারে। এই সময় যুদ্ধ-বিরতি চুক্তি করা জায়েয।
পক্ষান্তরে মুসলিমদের যদি পূর্ণ প্রস্তুতি থাকে, কাফেরদের বশীভূত করার সামর্থ্য থাকে: তখন যুদ্ধ না করে কাফেরদেরকে নিরাপদে ছেড়ে রাখার কোনো অর্থ নাই। এতে ইসলাম ও মুসলিমদের কোনো ফায়েদা নেই, কল্যাণ নেই। বরং সাপ যেকোনো সময় ছোবল মারতে পারে- মতোই ঝুঁকি। এ সময় যুদ্ধ না করে যুদ্ধ-বিরতি চুক্তি করা নাজায়েয। অতএব, কল্যাণের অর্থ হচ্ছে: মুসলিমদের অক্ষমতা, দুর্বলতা কিংবা সীমাবদ্ধতার কারণে অভিযান না চালিয়ে বরং চুক্তি করে যুদ্ধ বন্ধ রেখে এ সুযোগে ই’দাদ করে শক্তি বৃদ্ধি করা।
ফুকাহায়ে কেরাম এর কারণ বলেছেন: কাফেরদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা ফরয। অসংখ্য নুসুস দ্বারা তা প্রমাণিত। চুক্তি করার অর্থ হচ্ছে জিহাদ বন্ধ রাখা যা নুসুসের খেলাফ। তবে জিহাদের জন্য শক্তি দরকার। স্বাভাবিক অবস্থায় শক্তি-সামর্থ্য যখন আছে: জিহাদ বন্ধ রাখা নাজায়েয। যখন শক্তি-সামর্থ্যে দুর্বলতা থাকে, পরিস্থিতির বিবেচনায় যুদ্ধ না করে বরং প্রস্তুতি গ্রহণ উত্তম মনে হয়: তখন যুদ্ধবিরতি চুক্তি জায়েয। অতএব, যুদ্ধ-বিরতি চুক্তিটা হবে মূলত নিজেদের গুছিয়ে প্রস্তুত করার জন্য, বসে বসে আরাম করার জন্য নয়।
ইমাম কাসানী রহ. (৫৮৭ হি.) বলেন,
وَالثَّانِي الْمُوَادَعَةُ وَهِيَ: الْمُعَاهَدَةُ وَالصُّلْحُ عَلَى تَرْكِ الْقِتَالِ. ... وَشَرْطُهَا الضَّرُورَةُ، وَهِيَ ضَرُورَةُ اسْتِعْدَادِ الْقِتَالِ، بِأَنْ كَانَ بِالْمُسْلِمِينَ ضَعْفٌ ... فَلَا تَجُوزُ عِنْدَ عَدَمِ الضَّرُورَةِ؛ لِأَنَّ الْمُوَادَعَةَ تَرْكُ الْقِتَالِ الْمَفْرُوضِ، فَلَا يَجُوزُ إلَّا فِي حَالٍ يَقَعُ وَسِيلَةً إلَى الْقِتَالِ؛ لِأَنَّهَا حِينَئِذٍ تَكُونُ قِتَالًا مَعْنًى قَالَ اللَّهُ – تَبَارَكَ وَتَعَالَى – {فَلا تَهِنُوا وَتَدْعُوا إِلَى السَّلْمِ وَأَنْتُمُ الأَعْلَوْنَ وَاللَّهُ مَعَكُمْ} [محمد: 35]. –بدائع الصنائع في ترتيب الشرائع (7/ 108)
“আমানের দ্বিতীয় প্রকার হচ্ছে: যুদ্ধ-বিরতি চুক্তি। এর শর্ত হচ্ছে জরুরত বিদ্যমান থাকা। জরুরত বলতে কিতালের উদ্দেশ্যে ই’দাদ করে প্রস্তুতি গ্রহণের জরুরত। তা হবে যখন মুসলিমরা দুর্বল থাকবে। কাজেই জরুরত না থাকার সময়ে জায়েয হবে না। কারণ, চুক্তি করার অর্থ ফরয কিতাল বন্ধ রাখা। তা তো জায়েয হতে পারে না। শুধু তখনই জায়েয হবে, যখন চুক্তিটি কিতাল পর্যন্ত উন্নীত হওয়ার মাধ্যম হবে। তখন চুক্তিও যেন এক রকমের কিতাল।” –বাদায়িউস সানায়ি: ৭/১০৮ ولو بمالٍ[1] - মালের বিনিময়ে হলেও
অর্থাৎ চুক্তিতে যদি মাল প্রদানের শর্ত করা হয় তাহলেও জায়েয। যেমন বছরে এতো কোটি টাকা দিতে হবে বা এতো পরিমাণ স্বর্ণ দিতে হবে কিংবা এতো টন খাদ্যশস্য দিতে হবে ইত্যাদি।
মাল প্রদানের শর্ত হতে পারে যে, কাফেররা আমাদেরকে মাল দিবে, কিংবা আমরা কাফেরদেরকে দিবো। মুসান্নিফ রহ. কোনো একটিতে সীমাবদ্ধ করেননি, বরং মুতলাকভাবে বলেছেন। যা বুঝায়: উভয়টিই জায়েয। তবে এখানে একটু তাফসিল আছে।
কাফেররা আমাদেরকে মাল দিবে- এ শর্তে চুক্তিতে কোনো সমস্যা নেই। তাদের মাল আমাদের জন্য এমনিতেই হালাল ছিল। জবরদখল করে নিলেও জায়েয হতো। চুক্তি করে নেয়াতে সমস্যার কিছু নেই। তবে লক্ষ রাখতে হবে, পূর্বোক্ত বর্ণিত দুর্বলতা ও জরুরত না থাকলে শুধু মালের লোভে চুক্তি করে যুদ্ধ বন্ধ রাখা জায়েয হবে নয়।
দ্বিতীয়ত: এ শর্তে চুক্তি করা যে, আমরা কাফেরদেরকে মাল প্রদান করবো। স্বাভাবিক অবস্থায় এ ধরনের চুক্তি নাজায়েয। কেননা, তা দ্বীনের অপমান। মুসলিমদের জন্য লজ্জাস্কর। তবে -আল্লাহ না করুন- অবস্থা যদি এমনই বেগতিক হয়ে পড়ে এবং আমরা যদি এতই দুর্বল হয়ে পড়ি যে, মাল প্রদানে সম্মত না হলে কাফেররা আমাদের ধ্বংস করে ফেলবে এবং আমাদের জান-মাল-ইজ্জত-আব্রু সব ধূলিসাৎ হবে: তখন নিরুপায় অবস্থায় এ ধরনের শর্তে সম্মত হওয়া জায়েয বরং জরুরী। চুক্তি না করলে আমাদের সব হারাতে হবে। তারচে’ বরং সম্পদের একাংশ প্রদান করে বাকি সব কিছু রক্ষা করাই ভালো।
খন্দকের যুদ্ধের সময় মক্কার মুশরিক, মদীনার ইয়াহুদ এবং আরবের অন্যান্য গোত্রগুলো যখন বহুজাতিক জোট গঠন করে মদীনা অবরোধ করে, তখন বাৎসরিক মদীনার এক তৃতীয়াংশ খেজুর প্রদানের বিনিময়ে আরবের গোত্রগুলোর সাথে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবরোধ উঠিয়ে নেয়ার চুক্তি করতে সম্মত হয়েছিলেন। অবশ্য পরবর্তীতে সাহাবায়ে কেরাম এ ধরনের চুক্তি অপমানজনক মনে করে তার পরিবর্তে বরং যুদ্ধ করাই মর্যাদার মনে করেন। তখন রাসূল খুশি হন এবং চুক্তি প্রত্যাখ্যান করেন। তবে রাসূল যেহেতু প্রথমে সম্মত হয়েছিলেন, বুঝা গেল এ ধরনের নিরুপায় পরিস্থিতিতে মাল প্রদানের শর্তে চুক্তি করাও জায়েয; যদিও তা মুসলিমদের জন্য অপমানের বিষয়।
সারকথা: স্বাভাবিক অবস্থায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি করা নাজায়েয। তবে মুসলিমদের দুর্বলতা ও সীমাবদ্ধতার বিবেচনায় চুক্তি করা ভাল মনে হলে ই’দাদের লক্ষ্যে চুক্তি করতে পারবে। এক্ষেত্রে যদি কাফেরদের থেকে মাল গ্রহণের শর্তে চুক্তি করা যায় তাহলে তাতেও সমস্যা নেই। তবে দুর্বলতা-সীমাবদ্ধতা না থাকলে শুধু মালের লোভে চুক্তি করা জায়েয নয়। আর কাফেরদেরকে মাল প্রদানের শর্তে চুক্তি করা নাজায়েয। তবে একান্ত নিরুপায় অবস্থায় পড়ে গেলে তখন জান-মাল-ইজ্জত আব্রু রক্ষার জন্য মাল প্রদানের শর্তেও চুক্তি করা জায়েয।
বি.দ্র. চুক্তির অর্থ: আমরা তাদের জান-মালে আঘাত হানবো না, তারাও আমাদের জান-মালে কোনো আঘাত হানবে না। কাফেররা যদি এর ব্যতিক্রম করে তাহলে তারা আগের মতোই চুক্তিহীন হারবিতে পরিণত হবে এবং তাদের জান-মাল আমাদের জন্য আগের মতো হালাল হয়ে যাবে।
***
[1]البحر الرائق شرح كنز الدقائق ومنحة الخالق وتكملة الطوري (5/ 85): وأطلق في قوله ولو بمال فشمل المال المدفوع منهم إلينا وعكسه. والأول ظاهر إذا كان بالمسلمين حاجة إليه؛ لأنه جهاد معنى ولأنه إذا جاز بغير المال فبالمال أولى، وإن لم يكن إليهم حاجة به لا يجوز؛ لأنه ترك للجهاد صورة ومعنى. ... والثاني لا يفعله الإمام لما فيه من إعطاء الدنية ولحوق المذلة إلا إذا خاف على المسلمين؛ لأن دفع الهلاك بأي طريق أمكن واجب. ... وفي المحيط ولو وقع الصلح ثم سرق مسلم منهم شيئا لا يملكه وكذا إن أغار المسلمون عليهم وسبوا قوما منهم لم يسع المسلمين الشراء من ذلك السبي ويرد المبيع اهـ.
وأطلق في المصالح ولم يقيده بالإمام؛ لأن موادعة المسلم أهل الحرب جائزة كإعطائه الأمان. ... فإن كان فيها خير أمضاها ... وإلا أبطلها ... ونبذ إليهم. اهـ
بدائع الصنائع في ترتيب الشرائع (7/ 109): ولا بأس بأن يأخذ المسلمون على ذلك جعلا؛ لأن ذلك في معنى الجزية، ويوضع موضع الخراج في بيت المال. ولا بأس أن يطلب المسلمون الصلح من الكفرة ويعطوا على ذلك مالا إذا اضطروا إليه؛ لقوله - سبحانه وتعالى - {وإن جنحوا للسلم فاجنح لها} [الأنفال: 61] أباح - سبحانه وتعالى - لنا الصلح مطلقا، فيجوز ببدل أو غير بدل، ولأن الصلح على مال لدفع شر الكفرة للحال، والاستعداد للقتال في الثاني من باب المجاهدة بالمال والنفس، فيكون جائزا. اهـ
شرح السير الكبير (ص: 1692): وإذا خاف المسلمون المشركين فطلبوا موادعتهم فأبى المشركون أن يوادعوهم حتى يعطيهم المسلمون على ذلك مالا فلا بأس بذلك عند تحقق الضرورة. لأنهم لو لم يفعلوا وليس بهم قوة دفع المشركين ظهروا على النفوس والأموال جميعا، فهم بهذه الموادعة يجعلون أموالهم دون أنفسهم. وقد قال رسول الله - صلى الله عليه وآله وسلم - لبعض أصحابه: «اجعل مالك دون نفسك ونفسك دون دينك» . وحذيفة بن اليمان - رضي الله عنه - كان يداري رجلا فقيل له: إنك منافق. فقال: لا، ولكني أشتري ديني بعضه ببعض مخافة أن يذهب كله. ففي هذا بيان أنه ليس بالمهانة.
ولا بأس بدفع بعض المال على سبيل الدفع عن البعض إذا خاف ذهاب الكل، فأما إذا كان بالمسلمين قوة عليهم فإنه لا يجوز الموادعة بهذه الصفة. اهـ
Comment