বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম।
বিদআতীদের অবৈধ কার্যক্রমই তাদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় দলীল। গুতের সমর্থনকারী, বিভিন্ন টাল-বাহানায় জিহাদ-ফি সাবিলিল্লাহকে অস্বীকারকারীদের মুখ থেকে বের হওয়া কথাগুলোই তাদের বিরুদ্ধে দলীল হিসেবে যথেষ্ট। নীচের কথাগুলো আগের কিছু লিখার পরিমার্জিত রূপ।
এনটিভিতে ইসলামী আলোচক, মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিকহে পিএইচডিধারী ডঃ মোহাম্মদ সাইফুল্লাহর জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর উপর একটি দীর্ঘ আলোচনা শুনলাম। এটা ইউটিউবে আপলোড করেছে wayofthesalaf.com নামক সাইট। মোট ১ ঘন্টা ২০ মিনিট ২৬ সেকেন্ডের আলোচনা। আলোচনার লিংকঃ www.youtube.com/watch?v=rHVeZne7Fg4
পুরো আলোচনা শুনার পর ডঃ সাইফুল্লাহর বক্তব্যের ব্যাপারে বেশ কিছু প্রশ্ন সামনে চলে আসে। ইনশাআল্লাহ সেগুলো ধীরে ধীরে লিখার চেষ্টা করবো। আশা করি, ডঃ সাইফুল্লাহর ছাত্র ও ভক্তরা উনার কাছে প্রশ্নগুলো উত্থাপন করবেন এবং এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জেনে নিয়ে নিজেরাও সঠিক ব্যাপারটি জানবেন এবং অন্যদেরকে এই ব্যাপারে বিভ্রান্ত করা থেকে বিরত থাকতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।
একটা ব্যাপার লক্ষ্য করলাম, এদেশীয় জিহাদ বিরোধী আলেমরা ফিকহের ফুরুয়ী মাসআলায় নিজেদের মতো করে কিছু কিছু দলীল-আদিল্লা দিয়ে কথা বলার চেষ্টা করেন। কিন্তু কেন যেন জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর ব্যাপারে তাদের দৃষ্টিভংগীর স্বপক্ষে তারা দলীল দিতে একেবারেই অনিচ্ছুক অথবা দলীল খুঁজে পান না। তারা এই ক্ষেত্রে শুধু যুক্তি দিয়ে কথা বলতে ভালবাসেন। তাদের কোন একজনও জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর ব্যাপারে বিস্তারিত পড়ালেখা করেছেন কিনা - আল্লাহু আ'লাম। অবস্থা দেখে মনে হয়, উনারা যার যার শাইখদের অন্ধ তাকলীদ করাকেই তারা একমাত্র দলীল হিসেবে নিয়েছেন। ফিকহের ক্ষেত্রে মুজতাহিদ নন এমন সকলের জন্যই তাকলীদ উলামায়ে কেরাম জরুরী বললেও তারা এই ক্ষেত্রে তাকলীদ করা যাবে বলে মনে করেন না কিন্তু দ্বীনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজকে বাস্তবে রহিত বা অস্বীকার করার ক্ষেত্রে আবার ঠিকই তাকলীদই তাদের একমাত্র ভরসা!
যেমনঃ মরহুম ডঃ আব্দুল্লাহ জাহাংগীর তার ‘ইসলাম ও জঙ্গীবাদ’ নামক বইতে বারংবার এই দাবী করেছেন যে, জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ রাষ্ট্র ছাড়া আমল করা যাবে না। এর জন্য অবশ্যই খলিফা অথবা ইসলামী শাসন লাগবে। কিন্তু এত বড় বইতেও তিনি এই দাবীর স্বপক্ষে তেমন কোন দলীল অথবা পূর্ববর্তী আলেমদের কোন ফতোয়ার উল্লেখ করেন নি বা করতে পারেন নি। অবশ্য পারার কথাও না কারণ বাস্তবে সালাফে সালাহীন থেকে এমন কিছু তারা দেখাতে পারবেনও না।
একই ব্যাপার হয়েছে ডঃ সাইফুল্লাহর এই আলোচনায়ও। প্রায় দেড় ঘন্টার বিশাল আলোচনা! কিন্তু আলোচনায় তেমন কোন দলীল উনার এই দাবীর পক্ষে শুনলাম না। তিনিও এই আলোচনায় বারংবার এই দাবী করেছেন যে, একজন ইমাম বা খলিফা ছাড়া জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ হবে না। জিহাদ করতে হলে ইমাম বা খলিফা কর্তৃক ঘোষিত হতে হবে। বলা যায়, ডঃ সাইফুল্লাহর এই পুরো আলোচনার ভিত্তিই ছিল – তার এই দাবী। অথচ তিনিই আবার প্রশ্ন-উত্তর পর্বে (আলোচনার ১ ঘন্টা ৫ মিনিট ৩০ সেকেন্ড এ) এক প্রশ্নকারীর প্রশ্নের জবাবে, তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘এই যে এত দলীল দিলাম। আমরা রাসুল সাঃ এর এতগুলো ঘটনার দলীল দিলাম, সমস্ত উলামায়ে কেরামের দলীল দিলাম’। আমরা উনার এতগুলো দলীল (!) একটু যাচাই করে দেখবো ইনশাআল্লাহ।
তিনি রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিভিন্ন ঘটনা থেকে এমন এক ফিকহ বের করেছেন যা পূর্ববর্তী উলামাগণ কেউ বের করেন নি। তাই ডঃ সাইফুল্লাহর দেয়া ওহুদ কিংবা আহযাব যুদ্ধের উদাহরণ অগ্রহনযোগ্য। কারণ যে কোন একটি ঘটনার সময় একটি বিষয়ের উপস্থিতি ঐ ঘটনার জন্য ঐ বিষয়কে শর্ত হিসেবে নির্দেশ করে না। এদিকে সমস্ত উলামায়ে কেরামের দলীল বলতে তিনি শুধু ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহির একটি আ’ম ক্বওল উল্লেখ করলেন। যা এই শর্তের জন্য অদৌ কোন দলীল নয়।
প্রশ্ন - ১। এই উম্মাহর কোন কোন মুহাদ্দিস, কোন কোন হাদিসের ব্যাখ্যাকারক, কোন কোন মুজতাহিদ ইমাম এই হাদিস থেকে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর জন্য একজন ইমাম থাকা অথবা ইমাম কর্তৃক জিহাদ ঘোষণাকে শর্ত বের করেছেন?
আলোচনার ৫১ মিনিট ২৩ সেকেন্ডের দিকে ডঃ সাইফুল্লাহ বলেন,
“এজন্য কেউ কেউ আব্দুর রহমান ইবনে হাসান রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে এই বর্ণনা উল্লেখ করেছেন। যে বর্ণনাটা গলদ। আব্দুর রহমান ইবনে হাসান আলে রহমাতুল্লাহি আলাইহি তার থেকে কেউ কেউ উল্লেখ করেছেন যে, তিনি বলেছেন জিহাদে দফ্* এর জন্য ইমামের অনুমতির দরকার নেই। আরে ইমামের অনুমতির দরকার নেই - জিহাদ এর ঘোষণা করলো কে? যদি কেউ ঘোষণা করতো তাহলে জিহাদ হতো। ঠিক কিনা? ঘোষণাই তো হয় নাই। যদি ইমাম জিহাদ ঘোষণা করলে তাহলে ঠিক আছে। وإذا استنفرتم فانفروا
বুখারী শরীফে এসেছে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন তোমাদের বেরিয়ে যাবার জন্য আহবান করা হয়, তখন বেরিয়ে যাও’।
যদি ইমাম জিহাদ ঘোষণা করলে তাহলে ঠিক আছে। তাহলে জিহাদ এ দফ এর জন্য সবাই বেরিয়ে যাবে। তখন আর অনুমতির দরকার নেই। ...... কিন্তু যদি জিহাদই ঘোষণা না হয়, সেখানে অনুমতির মাসআলা আসবে না। সেখানে মাসআলা আসবে, জিহাদ ঘোষনা করেছে কে? কেউ যদি জিহাদের ঘোষণা না করে, তাহলে সেই জিহাদে অংশগ্রহন করা মূলতঃ মুসলিমদের কাজ নয়”।
আসলে দলীল-বিহীন একটি নতুন শর্ত জুড়ে দিয়ে তিনি সৌদি প্রথম গ্রান্ড-মুফতী আব্দুর রহমান বিন হাসান রহমাতুল্লাহি আলাইহির ক্বওলকে বাতিল বলে ঘোষনা দিয়েছেন!! পরবর্তীতে আমরা আব্দুর রহমান ইবনে হাসান রহমাতুল্লাহি আলাইহির কথাটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ।
যাই হোক এখন আমরা শুধু দেখতে চাই, ডঃ সাইফুল্লাহ কর্তৃক উল্লেখিত হাদিস দ্বারা পূর্ববর্তী আলেমগণ কি বুঝেছেন? কেউ কি এই হাদিসের উপর ভিত্তি করে, জিহাদের জন্য ইমাম / খলিফা থাকাকে কিংবা ইমাম কর্তৃক জিহাদ এর ঘোষণা দেয়াকে জিহাদের জন্য শর্ত করেছেন?
১। ফাতহুল বারীতে ইবনে হাজার আসকালানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ইমাম নববী রহমাতুল্লাহি আলাইহির এই ব্যাখ্যাটা উল্লেখ করেছেনঃ
وإذا استنفرتم فانفروا قال النووي يريد أن الخير الذي انقطع بانقطاع الهجرة يمكن تحصيله بالجهاد والنية الصالحة وإذا أمركم الإمام بالخروج إلى الجهاد ونحوه من الأعمال الصالحة فاخرجوا إليه - فتح الباري - ابن حجر
অর্থাৎ, ইমাম নববী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, মক্কা থেকে হিজরত বন্ধ হবার কারণে যে কল্যাণ / সওয়াবটা বন্ধ হয়ে গেছে, সেটা অর্জন করা সম্ভব হবে জিহাদ, নেক নিয়্যত এর মাধ্যমে। এবং যখন ইমাম তোমাদেরকে জিহাদে বের হবার এবং এরকম নেক আমলের নির্দেশ দিবেন, তখন তোমরা তার দিকে বের হবে’।
এখানে দেখুন, ইমামের নির্দেশে শুধু জিহাদ নয়, অন্যান্য নেক কাজেও বের হবার কথা ইমাম নববী রহমাতুল্লাহি আলাইহি আলোচনা করেছেন। এছাড়া ইমামের নির্দেশকে জিহাদের জন্য আলাদাভাবে কোন শর্ত হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন নি।
এখন এটাকে কেউ জিহাদের জন্য শর্ত হিসেবে নিলে কি অন্যান্য নেক আমলের জন্যও কি ইমামের নির্দেশকে শর্ত হিসেবে নিবেন এবং ইমাম অনুপস্থিত দেখে ঐ সকল নেক আমলকেও বাতিল বলবেন?
২। উমদাতুল আহকাম এর শরাহতে এসেছেঃ
"و إذا استنفرتم فانفروا" أي إذا طلبتم للجهاد فأجيبوا - إحكام الأحكام شرح عمدة الأحكام
এখানেও ব্যাখ্যাকারক ইমামের নির্দেশকে জিহাদের জন্য আলাদাভাবে কোন শর্ত হিসেবে উল্লেখ করেন নি।
৩। ইমাম সুয়ুতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি সহীহ মুসলিমের শরাহতে লিখেছেনঃ
وإذا استنفرتم فانفروا معناه إذا دعاكم السلطان إلى الغزو فاذهبوا إن هذا البلد حرمه الله يوم خلق السماوات -شرح السيوطي على مسلم
এর অর্থ হচ্ছে, ‘যখন সুলতান তোমাদেরকে গাযওয়ার দিকে আহবান করবে, তখন তোমরা বের হয়ে যাও যদিও এই শহর সৃষ্টির শুরু দিন থেকে আল্লাহ সম্মানিত করেছেন’।
এখানেও অনুরুপ। ইমাম সুয়ুতী খলিফার ঘোষণা কিংবা নির্দেশকে জিহাদের জন্য আলাদাভাবে কোন শর্ত হিসেবে উল্লেখ করেন নি।
চার মাজহাবের ফিকহের কোন একটি কিতাবে কি এই হাদিসের আলোকে কিংবা অন্য কোন কারণে ইমামের ঘোষণা দেয়াকে জিহাদের শর্ত করা হয়েছে? তাহলে ডঃ সাইফুল্লাহ নিজে থেকে কিভাবে এই হাদিসের আলোকে জিহাদের জন্য একটি নতুন শর্ত খুঁজে পেলেন?
৪। ইমাম নববী রহমাতুল্লাহি আলাইহি শরহে সহীহ মুসলিমে লিখেছেনঃ
( واذا استنفرتم فانفروا ) معناه اذا طلبكم الامام للخروج إلى الجهاد فاخرجوا وهذا دليل على أن الجهاد ليس فرض عين بل فرض كفاية اذا فعله من تحصل بهم الكفاية سقط الحرج عن الباقين وان تركوه كلهم اثموا كلهم - شرح النووي على صحيح مسلم
অর্থাৎ, ‘ইমাম যদি তোমাদেরকে যুদ্ধে বের হবার জন্য আহবান করেন, তাহলে তোমরা বের হয়ে যাও। আর এটা হচ্ছে প্রমাণ যে, জিহাদ (আসলে) ফরজে আইন নয় বরং ফরজে কিফায়া। একদলের আমল দ্বারা বাকীদের উপর থেকে এর দায়িত্ব মুক্তি আসে। এর সবাই এটা পরিত্যাগ করলে, সকলেই গুনাহগার হবে’।
তাহলে দেখা যাচ্ছে, এই হাদিস থেকে ইমাম নববী রহমাতুল্লাহি আলাইহি একটা সিদ্ধান্ত প্রমাণ করেছেন যে, জিহাদ আসলে ফরজে কিফায়াহ। এই হাদিস থেকে উনিও খলিফার ঘোষণা কিংবা নির্দেশকে জিহাদের জন্য আলাদাভাবে কোন শর্ত হিসেবে উল্লেখ করেন নি।
৫। এই হাদিস থেকে ইবনে হাজার রহমাতুল্লাহি আলাইহি উল্লেখ করেছেনঃ
قال الحافظ ابن حجر : " وفيه وجوب تعيين الخروج في الغزو على من عينه الإمام " .
‘এর মধ্য (এই প্রমাণ রয়েছে যে) ইমাম কাউকে নির্দিষ্ট করে দিলে তার জন্য জিহাদে বের হওয়া ওয়াজিব হয়ে যায়’।
তাহলে দেখা যাচ্ছে, উপরে উল্লেখিত উম্মাতের বড় বড় ইমামগণ এই হাদিস থেকে বিভিন্ন শিক্ষা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু কেউই ডঃ সাইফুল্লাহর দেয়া জিহাদের জন্য নতুন এই শর্তকে উল্লেখ করেন নি।
তাই, আমরা বিনীতভাবে ডঃ সাইফুল্লাহর কাছে জানতে চাই, এই উম্মাতের কোন কোন ইমাম ও আলেম, কোন কোন মুহাদ্দিস, কোন কোন হাদিসের ব্যাখ্যাকারক, কোন কোন মুজতাহিদ ইমাম উল্লেখিত এই হাদিস থেকে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর এর জন্য একজন ইমাম থাকা অথবা ইমাম কর্তৃক জিহাদ ঘোষণাকে শর্ত বের করেছেন?
আশা করি, আপনার কাছ থেকে উত্তর পেলে আমরা ও এদেশে আপনার শ্রোতামন্ডলীরা এই হাদিসের ব্যাপারে সঠিক ও পরিপূর্ণ ধারনা পাবেন ইনশাআল্লাহ।
প্রশ্ন ২। রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহু ও উনার সাথীগণকে এটা বলেছিলেন – 'তোমরা কুরাইশদেরকে হত্যা করে ভুল করেছো কারণ তোমরা ইমামের অধীনে নেই'?
‘শাসক ছাড়া জিহাদের ডাক দেয়া যাবে না, এ ব্যাপারে ক্লিয়ার কাট এভিডেন্স রয়েছে কি?’ – এই প্রশ্নের জবাবে উক্ত আলোচনার ১ ঘন্টা ৫ মিনিট ৫৭ সেকেন্ডে ডঃ সাইফুল্লাহ বলেছেনঃ
“আর আবু বাছির এর এই ঘটনাটি সম্পূর্ণভাবে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও গ্রহণ করেন নি। যারা এই ধারনা করেছেন, এটা গলদ এবং বিভ্রান্তিকর। আবু বাছির এর এই ঘটনাটি সম্পূর্ণভাবে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই গ্রহণ করেন নি এর দলীল হচ্ছে দুইবার তাকে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফেরত দিয়েছেন। তার কথাকে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গ্রহন করেন নি”।
ডঃ সাইফুল্লাহর এই দাবী শুনে কিছুটা আশ্চর্য্য হয়ে গেলাম! এরপর আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহু সম্পর্কিত হাদিসটি আবার পড়তে শুরু করলাম। এ সংক্রান্ত রেওয়ায়াতগুলোতে এমন কোন হাদিস পেলাম না, যেখানে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহু জিহাদ করার অনুমতি চাচ্ছেন, আর রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে জিহাদের অনুমতি না দিয়ে ফেরত দিয়েছেন।
মুসনাদে আহমাদে এই ব্যাপারে বিস্তারিত এসেছে। ঐ হাদিসের উল্লেখযোগ্য অংশগুলো হচ্ছেঃ
فَجَاءَهُ أَبُو بَصِيرٍ رَجُلٌ مِنْ قُرَيْشٍ وَهُوَ مُسْلِمٌ وَقَالَ يَحْيَى عَنِ ابْنِ الْمُبَارَكِ فَقَدِمَ عَلَيْهِ أَبُو بَصِيرِ بْنُ أُسَيْدٍ الثَّقَفِيُّ مُسْلِمًا مُهَاجِرًا فَاسْتَأْجَرَ الْأَخْنَسَ بْنَ شَرِيقٍ رَجُلًا كَافِرًا مِنْ بَنِي عَامِرِ بْنِ لُؤَيٍّ وَمَوْلًى مَعَهُ وَكَتَبَ مَعَهُمَا إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَسْأَلُهُ الْوَفَاءَ فَأَرْسَلُوا فِي طَلَبِهِ رَجُلَيْنِ فَقَالُوا الْعَهْدَ الَّذِي جَعَلْتَ لَنَا فِيهِ
“অতঃপর কুরাইশের জনৈক ব্যক্তি, আবু বাছির মুসলমান হয়ে তাঁর কাছে আসেন। আর ইয়াহইয়া, ইবনুল মুবারক থেকে এভাবে বর্ণনা করেন- অতঃপর আবু বাছির ইবনে উসাইদ আস-সাকাফী মুসলমান হয়ে হিজরত করে তাঁর নিকট আসেন। তখন কুরাইশরা বনী আমের ইবনে লুওয়াই এর জনৈক কাফের ব্যক্তি, আখনাস ইবনে শারীক ও তার সাথে একজন গোলাম ভাড়া করে তাদের কাছে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি চুক্তি পূরণের আবেদন জানিয়ে লিখিত একটি পত্র হস্তান্তর করে। অতঃপর তারা দুই ব্যক্তিকে তার সন্ধানে প্রেরণ করে। তারা বলল- আমাদের সাথে কৃত চুক্তি পুরণ করুন!”
অর্থাৎ, এটা পরিষ্কার যে, রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রথমবার আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহুকে ফিরিয়ে দেয়ার সময়ঃ
- কোন জিহাদের আলোচনা হয় নি।
- আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহু, রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে জিহাদের কোন অনুমতি প্রার্থনা করেন নি।
- বরং প্রথমবার ফিরিয়ে দেয়ার কারণ ছিল হুদায়বিয়ার সন্ধি, যে কারণে অন্য অনেককে ফেরত দেয়া হয়েছিল।
فَدَفَعَهُ إِلَى الرَّجُلَيْنِ فَخَرَجَا بِهِ حَتَّى بَلَغَا بِهِ ذَا الْحُلَيْفَةِ فَنَزَلُوا يَأْكُلُونَ مِنْ تَمْرٍ لَهُمْ فَقَالَ أَبُو بَصِيرٍ لِأَحَدِ الرَّجُلَيْنِ وَاللَّهِ إِنِّي لَأَرَى سَيْفَكَ يَا فُلَانُ هَذَا جَيِّدًا فَاسْتَلَّهُ الْآخَرُ فَقَالَ أَجَلْ وَاللَّهِ إِنَّهُ لَجَيِّدٌ لَقَدْ جَرَّبْتُ بِهِ ثُمَّ جَرَّبْتُ فَقَالَ أَبُو بَصِيرٍ أَرِنِي أَنْظُرْ إِلَيْهِ فَأَمْكَنَهُ مِنْهُ فَضَرَبَهُ حَتَّى بَرَدَ وَفَرَّ الْآخَرُ
“তাই তিনি উক্ত দুই ব্যক্তির নিকট তাকে সমর্পণ করেন। তারা তাকে নিয়ে রওয়ানা দেয়। তারা যুলহুলাইফায় পৌঁছে খেজুর খাওয়ার জন্য থামে। তখন আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহু দুই ব্যক্তির এক ব্যক্তিকে বললেন, হে অমুক! আল্লাহর শপথ, তোমার তরবারীটি উন্নতমানের মনে হচ্ছে! তখন অপরজন তা কোষমুক্ত করে বলল, হ্যাঁ, আল্লাহর শপথ! এটা খুব ভাল। আমি এটার ব্যাপারে বহু অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহু বললেন, আমাকে একটু এটা দেখতে দাও! সে তাকে এর সুযোগ দিল। ফলে তিনি তাকে আঘাত করে হত্যা করলেন। আর অপরজন পালিয়ে গেল।”
حَتَّى أَتَى الْمَدِينَةَ فَدَخَلَ الْمَسْجِدَ يَعْدُو فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَقَدْ رَأَى هَذَا ذُعْرًا فَلَمَّا انْتَهَى إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ قُتِلَ وَاللَّهِ صَاحِبِي وَإِنِّي لَمَقْتُولٌ
“সে মদীনায় এসে পৌঁছলো। অতঃপর দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে মসজিদে নববীতে প্রবেশ করল। তাকে দেখে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সে তো ভয়ার্ত। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকটে পৌঁছে সে বলল, আল্লাহর শপথ! আমার সাথীকে হত্যা করা হয়েছে, আমাকেও হত্যা করা হবে।”
এরপর আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহু এসে পৌঁছেন। ঐ সময় আবু বাছির (রাঃ), রাসুল (সাঃ)-কে কি বলেছেন? আর রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উত্তর কি ছিল? সেটা আমাদের এই আলোচনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
فَجَاءَ أَبُو بَصِيرٍ فَقَالَ يَا نَبِيَّ اللَّهِ قَدْ وَاللَّهِ أَوْفَى اللَّهُ ذِمَّتَكَ قَدْ رَدَدْتَنِي إِلَيْهِمْ ثُمَّ أَنْجَانِي اللَّهُ مِنْهُمْ
‘এরপর আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহু এসে বললেন, হে আল্লাহর নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ আপনার চুক্তিকে রক্ষা করেছেন। আপনি আমাকে তাদের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, অতঃপর আল্লাহ আমাকে তাদের হাত থেকে রক্ষা করেছেন’।
উল্লেখ্যঃ সহীহ বুখারী, সুনানে আবু দাউদ, সহীহ ইবনে হিব্বান, সুনান বায়হাকী, মুসান্নাফে আব্দুর রায্*যাক, মু’যাম আল কাবির ইত্যাদি সকল হাদিস গ্রন্থেই আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহু এর এই একই কথা এসেছে। কোন শব্দেরও হেরফের হয়নি।
এটা ছিল রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে এসে আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহু এর ২য় বার পালিয়ে এসে বলা কথা। তাহলে দেখা যাচ্ছে ২য় বার পালিয়ে এসে আবু বাছির (রাঃ)
- কোন জিহাদের আলোচনা করেন নি।
- রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে কোন জিহাদের অনুমতি প্রার্থনা করেন নি।
এরপর নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উত্তর ছিল এইঃ
فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَيْلُ أُمِّهِ مِسْعَرَ حَرْبٍ لَوْ كَانَ لَهُ أَحَدٌ
“তখন রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তার মায়ের জন্য আফসোস! (এটা আবেগ প্রকাশে আরবে প্রচলিত একটি কথা), এটা তো যুদ্ধের স্ফুলিংগ, তার জন্য যদি কেউ থাকতো”।
এই ছিল রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তর। উপরে উল্লেখিত সবগুলো হাদিসের কিতাবে একই কথা এসেছে, শুধু ইবনে হিব্বানে مِسْعَرَ حَرْبٍ কথাটা বাদ পরেছে।
فَلَمَّا سَمِعَ ذَلِكَ عَرَفَ أَنَّهُ سَيَرُدُّهُ إِلَيْهِمْ فَخَرَجَ حَتَّى أَتَى سِيفَ الْبَحْرِ
“এরপর আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহু এই কথা শুনে বুঝতে পারলেন যে উনাকে অচিরেই তাদের কাছে ফেরত দেয়া হবে, উনি বের হয়ে গেলেন এবং সিফাল বাহারে চলে গেলেন”।
তাহলে ডঃ সাইফুল্লাহ এর উপরুক্ত কথার ব্যাপারে বলা যায়ঃ
- হ্যাঁ, আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহু এর হিজরত করে মদীনায় যাবার ঘটনা রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে গ্রহন করেন নি। এর কারণ ছিল হুদাইবিয়ার চুক্তি।
- দুইবারই আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহুকে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফিরিয়ে দিয়েছেন। তবে সেটা ছিল উনার হিজরত করে মদীনার যাবার ব্যাপারে।
- পরবর্তীতে আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহুর জিহাদকে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গ্রহন করেন নি, এ রকম কোন ইশারা এই ঘটনায় পাওয়া যায় না।
- তাই ‘শাসক ছাড়া জিহাদের ডাক দেয়া যাবে না, এ ব্যাপারে ক্লিয়ার কাট এভিডেন্স রয়েছে কি?’ - এই প্রশ্নের উত্তরে আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহুকে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই বার ফিরিয়ে দেয়ার কথা উল্লেখ করার কোন যৌক্তিকতা নেই।
- আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহুকে দুইবার ফেরত দেয়ায় কিংবা রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর কথা গ্রহণ না করায় শাসক/খলিফা ছাড়া জিহাদ করা যাবে না বলে প্রমাণিত হয় না। বরং এই ঘটনা উল্লেখ করে এই দাবী করাই বাতিল ও বিভ্রান্তিকর বলে প্রমাণিত হবে। কারণ এটা ছিল মদীনায় আশ্রয় লাভের ব্যাপারে। আর এই ব্যাপারে হুদাইবিয়ার চুক্তির কারণে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অপারগ ছিলেন।
قَالَ وَيَتَفَلَّتُ أَبُو جَنْدَلِ بْنُ سُهَيْلٍ فَلَحِقَ بِأَبِي بَصِيرٍ فَجَعَلَ لَا يَخْرُجُ مِنْ قُرَيْشٍ رَجُلٌ قَدْ أَسْلَمَ إِلَّا لَحِقَ بِأَبِي بَصِيرٍ حَتَّى اجْتَمَعَتْ مِنْهُمْ عِصَابَةٌ قَالَ فَوَاللَّهِ مَا يَسْمَعُونَ بِعِيرٍ خَرَجَتْ لِقُرَيْشٍ إِلَى الشَّامِ إِلَّا اعْتَرَضُوا لَهَا فَقَتَلُوهُمْ وَأَخَذُوا أَمْوَالَهُمْ فَأَرْسَلَتْ قُرَيْشٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تُنَاشِدُهُ اللَّهَ وَالرَّحِمَ لَمَّا أَرْسَلَ إِلَيْهِمْ فَمَنْ أَتَاهُ فَهُوَ آمِنٌ فَأَرْسَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَيْهِمْ
“বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর আবু জান্দাল ইবনে সুহাইলও বের হয়ে আবু বাছিরের সাথে শরীক হন। এরপর কুরাইশের যে ব্যক্তিই ইসলাম গ্রহণ করে বেরিয়ে পড়ত, সেই আবু বাছিরের সাথে মিলিত হত। এমনকি তাদের একটি দল হয়ে যায়। বর্ণনাকারী বলেন, আল্লাহর শপথ! তারা যখনই কোন কুরাইশ কাফেলার শামের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার সংবাদ শুনতেন, তখনই তাদের পথ আটকাতেন। তাদেরকে হত্যা করতেন এবং তাদের সম্পদ নিয়ে নিতেন। ফলে কুরাইশরা অতিষ্ঠ হয়ে আল্লাহ ও আত্মীয়তার দোহাই দিয়ে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পত্র পাঠায়, যেন তিনি তাদেরকে মদীনায় ডেকে পাঠান। এরপর থেকে যে (মদীনায়) চলে আসবে, সে নিরাপদ। তাই রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে ডেকে পাঠালেন।”
সুবহানাল্লাহ, এখানে দেখা যাচ্ছে, এক দল সাহাবা রদিআল্লাহু আনহু একত্রিত হয়ে আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহু এর সাথে কুরাইশদের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ করেছেন।
তাহলে দেখা যাচ্ছে, একদল সাহাবা রদিআল্লাহু আনহুম একত্রে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবদ্দশায় যখন রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই ছিলেন মুসলিমদের শাসক, তাঁর অনুমতি কিংবা ঘোষণা ছাড়াই কুরাইশ কাফিরদের বিরুদ্ধে জিহাদ করেছেন।
এখন কেউ এই দাবীও করার সুযোগ নেই যে, রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই জিহাদের ঘোষণা দিয়েছেন কারণ তখন রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরাইশদের সাথে যুদ্ধ না করার চুক্তিতে আবদ্ধ ছিলেন।
আরেকটি ব্যাপার হলোঃ যদি আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহুর এই জিহাদ আল্লাহর রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অপছন্দনীয় হতো, তাহলে একদল সাহাবা রদিআল্লাহু আনহুম আজমাইন একত্রে আল্লাহর রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অপছন্দীয় কাজ দীর্ঘদিন ধরে করতে থাকলেন কীভাবে?
আর রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই পুরো সময়কালে নিরব থাকারই বা অর্থ কি? নিরব থাকার অর্থ কি এটা নয় যে, আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহু এর জিহাদী কার্যক্রমের ব্যাপারে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সমর্থন রয়েছে?
তাহলে আমরা দেখলামঃ
- আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহু এর গেরিলা জিহাদকে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গ্রহন করেন নি – এই কথার কোন ভিত্তি নেই।
- আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহুকে দুইবার মদীনা থেকে ফিরিয়ে দেয়ার কারণ ছিল হুদাইবিয়ার চুক্তি। এর সাথে আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহু এর গেরিলা জিহাদের কোন সম্পর্ক ছিল না।
- মক্কা থেকে পরবর্তীতে যারাই ইসলাম গ্রহন করতেন, তারাই আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহু এর ইসাবাতে শরীক হয়ে যেতেন। রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নও-মুসলিম সাহাবা রদিআল্লাহু আনহুমগণের এই কর্মকান্ডকে, আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহু এর গেরিলা জিহাদকে, তৎকালীন শাসক / খলিফার অনুমতি কিংবা ঘোষণা ছাড়া বরং স্বয়ং রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুমতি কিংবা ঘোষণা ছাড়া জিহাদকে নিষেধ করেন নি! বরং মৌনতা অবলম্বন করেছেন। আর রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের গোচরীভূত ব্যাপারে তাঁর মৌনতা অবলম্বন মানে সেটা অনুমোদিত।
উপরুক্ত এই কথাগুলো বুঝার পর, আমরা দেখবো যে, রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহু এর গেরিলা জিহাদকে, শাসকের / খলিফার ঘোষণা ছাড়া জিহাদকে বরং ইশারার মাধ্যমে (কুরাইশদের সাথে সন্ধির কারণে সরাসরি করেন নি) উৎসাহিত করেছেন। রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উৎসাহিত করেছেন তাঁর لَوْ كَانَ لَهُ أَحَدٌ কথার মাধ্যমে।
(১) ইবনে হাজার রহমাতুল্লাহি আলাইহি ফাতহুল বারীতে এই কথার ব্যাখ্যায় লিখেছেনঃ
قوله لو كان له أحد أي ينصره ويعاضده ويناصره وفي رواية الأوزاعي لو كان له رجال فلقنها أبو بصير فانطلق وفيه إشارة إليه بالفرار لئلا يرده إلى المشركين ورمز إلى من بلغه ذلك من المسلمين أن يلحقوا به - فتح الباري - ابن حجر
"যদি তাকে সাহায্য-সহযোগিতা ও শক্তি যোগনোর জন্য কেউ থাকতো। ইমাম আওযায়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর রেওয়ায়াতে এসেছে, “যদি তার পক্ষে কিছু লোক থাকতো! আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহু কথাটি বুঝে নিলেন। তাই তিনি চলে গেলেন”। এখানে আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহু এর জন্য ইশারা ছিল, যেন উনি পালিয়ে যান, যাতে উনাকে মুশরিকদের নিকট ফেরত দিতে না হয় এবং এই খবর যে সকল মুসলিমদের কাছে পৌঁছবে, তারা যেন তার সাথে গিয়ে মিলিত হন"।
সুবহানাল্লাহ!! দেখা যাচ্ছে, আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহু এর এই ঘটনায় ডঃ সাইফুল্লাহ আমাদেরকে এমন কথা বলছেন, যা ইবনে হাজার রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর ব্যাখ্যার পুরো উল্টো!! তাহলে আমরা এখন কোনটা গ্রহণ করবো??
(২) আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর উমদাতুল ক্বারীতে উল্লেখ করা হয়েছেঃ
قوله لو كان له أحد جواب لو محذوف أي لو فرض له أحد ينصره ويعاضده - عمدة القاري شرح صحيح البخاري
“‘তার জন্য যদি কেউ থাকত’ কথাটির বাকি অংশ উহ্য। পূর্ণ কথাটি হচ্ছে- তার জন্য যদি কেউ থাকত, যে তাকে সাহায্য করবে ও শক্তি যোগাবে।”
অর্থাৎ, আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ব্যাখ্যাও ডঃ সাইফুল্লাহর এই ভ্রান্ত দাবীর সম্পূর্ণ বিপরীত!!
(৩) ইবনে বাত্তাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি সহীহ বুখারীর ব্যাখায় একই রকম কথা বলেছেন। তিনি বলেনঃ
قوله: « لو كان له أحد » يعنى: من ينصره ويمنعه، ففهمها أبو بصير، وخرج إلى سيف البحر، وجعل يطلب غرة أهل مكة، وآذاهم حتى لحق به أبو جندل وجماعة، شرح البخاري لابن بطال
“অর্থাৎ, যে তাকে সাহায্য করবে ও রক্ষা করবে। আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহু কথাগুলো বুঝলেন এবং সিফাল বাহারে চলে গেলেন। আর মক্কাবাসীকে অতর্কিত আক্রমণ করে শাস্তি দিতে থাকেন। পরবর্তীতে আবু জান্দাল রদিআল্লাহু আনহুসহ এক দল (মুসলিম) তাঁর সাথে যুক্ত হন”।
তাহলে দেখা যাচ্ছে, ইবনে বাত্তাল রহমাতুল্লাহি আলাইহিও এই ঘটনাটিকে ডঃ সাইফুল্লাহ এর মতো বুঝেন নি। বরং আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহু এর প্রতি রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর একটি ইশারা হিসেবে দেখেছেন যার উপর আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহু আমল করেছেন। আর রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেখানে ইশারা করেছেন, সেখানে জিহাদকে গলদ ও বিভ্রান্তিকর বলে উল্লেখ করা কীভাবে যুক্তি-সংগত হতে পারে!?
পরিশেষে আমরা নজদদের অন্যতম ইমাম, শাইখ আব্দুর রহমান বিন হাসান রহমাতুল্লাহি আলাইহি (যিনি শাইখ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর নাতি) এর রিসালার একটি অংশ উল্লেখ করতে চাই। আব্দুর রহমান বিন হাসান রহমাতুল্লাহি আলাইহি ইবনে নাবহান এর বিভ্রান্তি (সে দাবী করেছিল, ইমাম / খলিফা ছাড়া জিহাদ নেই) রদ করতে গিয়ে আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহু এর ঘটনা আলোচনা করে বলেছেনঃ
لما جاء مهاجراً فطلبت قريش من رسول الله صلى الله عليه وسلم أن يرده إليهم، بالشرط الذي كان بينهم في صلح الحديبية، فانفلت منهم حين قتل المشركيْن، اللذين أتيا في طلبه. فرجع إلى الساحل لما سمع رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: ويل أمه مسعر حرب، لو كان معه غيره" فتعرض لعير قريش - إذا أقبلت من الشام - يأخذ ويقتل،
“তিনি হিজরত করে চলে আসলে কুরাশরা হুদায়বিয়ার সন্ধির শর্ত মোতাবেক রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট তাকে ফেরত দেওয়ার দাবি করে। তিনি তাকে খুঁজতে আসা দুই মুশরিককে হত্যা করে পালিয়ে যান। তিনি যখন শুনলেন, রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘এটা যুদ্ধের স্ফুলিং, তার সাথে যদি কেউ থাকত!’ তখন তিনি সমুদ্রোপকুলের দিকে চলে যান এবং কোন কোরাইশ কাফেলা শাম থেকে আসতে লাগলে তাদের পথ রোধ করতেন। তাদের মাল ছিনিয়ে নিতেন এবং তাদেরকে হত্যা করতেন।”
فاستقل بحربهم دون رسول الله صلى الله عليه وسلم، لأنهم كانوا معه في صلح - القصة بطولها. فهل قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: أخطأتم في قتال قريش، لأنكم لستم مع إمام؟ سبحان الله ما أعظم مضرة الجهل على أهله؟ عياذاً بالله من معارضة الحق بالجهل والباطل - الدرر السنية في الأجوبة النجدية ،
“তারা তাদের এই যুদ্ধে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে আলাদা / স্বাধীন ছিলেন, কারণ কুরাইশরা তখন রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ ছিল – এভাবে ঘটনার শেষ পর্যন্ত। তখন রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি এটা বলেছিলেন – তোমরা কুরাইশদেরকে হত্যা করে ভুল করেছো কারণ তোমরা ইমামের অধীনে নেই? সুবহানাল্লাহ, অজ্ঞতা মানুষের কি পরিমাণ ক্ষতি করে? আল্লাহর কাছে অজ্ঞতা ও বাতিলের মাধ্যমে সত্যের বিরোধিতা করা থেকে আশ্রয় চাই”। (আদ দুরার আস-সানিয়া)
তাই আমরা ডঃ সাইফুল্লাহ এর কাছে বিনীতভাবে জানতে চাই,
- আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহু এর ঘটনার ব্যাপারে আপনার বক্তব্যের সাথে উল্লেখিত ইমামদের ব্যাখ্যা ও উপলব্ধি মিলছে না – এখন আমরা কার কথাকে গলদ ও বিভ্রান্তিকর মনে করবো?
- রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহু ও উনার সাথীদেরকে এটা বলেছিলেন – তোমরা কুরাইশদেরকে হত্যা করে ভুল করেছো, কারণ তোমরা ইমাম / খলিফার অধীনে নেই?
আশা করি প্রশ্নগুলোর উত্তর দিবেন। এতে আমরা ও এদেশে আপনার দর্শক-শ্রোতা আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহু এর ঘটনার ব্যাপারে সঠিক ধারনা পাবেন ইনশাআল্লাহ।
প্রশ্ন ৩। ‘বর্তমানে মুসলিমরা খলিফা বা ইমাম নেই বলে কি ঈদ করা ছেড়ে দিবে? বাংলাদেশের মুসলিম জনগণ কোন খলিফা বা ইমামের অধীনে থেকে বংশ পরম্পরায় ঈদ পালন করছেন’?
উপরুক্ত আলোচনার ২০ মিনিট ২৫ সেকেন্ডের দিকে ডঃ সাইফুল্লাহ বলেছেনঃ
“জিহাদের যতগুলো পদ্ধতি তার মধ্যে একটি হচ্ছে, জিহাদ ঘোষণা হতে হবে এমন ব্যক্তির পক্ষ থেকে যিনি কেবলমাত্র মুসলমানদের ক্ষমতার অধিকারী। মুসলমানরা তার ক্ষমতার ব্যাপারে একমত হয়েছে। অর্থাৎ মুসলিম শাসক যার ইমামতির ব্যাপারে সমস্ত মুসলমানগণ, সেই প্রেক্ষাপটের মুসলমানগণ সবাই একমত হয়েছেন যে তিনি ইমাম, তিনি ঘোষনা করবেন জিহাদ। রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিহাদ ঘোষণা করেছেন। শুধু জিহাদ নয় বরং এ বিষয়ে শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি মাজমুয়া আল ফতোয়ার মধ্যে উল্লেখ করেছেন, তিনি বলেছেন যে,
‘মুসলমানদের ঈদ, জামাত, জুমুয়া, হজ্ব, সিয়াসা বা রাজনীতি এবং জিহাদ এইগুলো মূলত ইমাম এর দায়িত্ব’।
এছাড়া আলোচনার প্রশ্ন-উত্তর পর্বে ‘শাসক ছাড়া জিহাদের ডাক দেয়া যাবে না, এ ব্যাপারে ক্লিয়ার কাট এভিডেন্স রয়েছে কি?’ – এই প্রশ্নের জবাবেও (১ ঘন্টা ৫ মিনিট ৫০ সেকেন্ড) ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর একই উক্তি উল্লেখ করেছেন।
এখন আমরা মূলতঃ ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর কথাটি একটু বিস্তারিত দেখতে চাই। ডঃ সাইফুল্লাহর কোট করা কথার কয়েক লাইন আগে থেকে ঐ কথার কয়েক লাইন পর পর্যন্ত আমরা দেখতে চাই। যাতে ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর কথার অর্থ পুরোপুরি বুঝা যায় আর বাস্তবতা আমাদের সকলের সামনে পরিষ্কার হয়ে যায়। ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর কথাটি হচ্ছেঃ
وروى الإمام أحمد في المسند عن عبد الله بن عمرو أن النبي صلى الله عليه و سلم قال : [ لا يحل لثلاثة يكونوا بفلاة من الأرض إلا أمروا عليهم أحدهم ] فأوجب صلى الله عليه و سلم تأمير الواحد في الاجتماع القليل العارض في السفر تنبيها بذلك على سائر أنواع الاجتماع
ইমাম আহমদ তার মুসনাদে আব্দুল্লাহ বিন আমর রদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন, রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তিন জন ব্যক্তির জন্য বৈধ নয় নিজেদের মধ্যে একজনকে আমীর নিয়োজিত না করে দুনিয়ার কোন প্রান্তে সফর করা’। রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সফরে বের হওয়া ছোট্ট জামাতের জন্যও একজনকে আমীর নিয়োজিত করা ওয়াজিব করেছেন। এ থেকে অন্য সকল ধরনের ইজতিমার জন্যও এর গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায়।
ولأن الله تعالى أوجب الأمر بالمعروف والنهى عن المنكر ولا تتم ذلك إلا بقوة وإمارة
এছাড়া আল্লাহ তায়ালা সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ-কাজে নিষেধকে ওয়াজিব করেছেন এবং এটা শক্তি ও নেতৃত্ব ছাড়া সম্পন্ন করা যায় না।
وكذلك سائر ما أوجبه من الجهاد والعدل وإقامة الحج والجمع والأعياد ونصر المظلوم وإقامة الحدود لا تتم إلا بالقوة والإمارة
একইভাবে এ ধরনের যত ব্যাপার আছে যা আল্লাহ ওয়াজিব করেছেন যেমনঃ জিহাদ, ন্যায় প্রতিষ্টা, হজ্ব, জুম’আ, ঈদ, মজলুমদের সাহায্য, হুদুদ প্রতিষ্টা – এগুলো শক্তি ও নেতৃত্ব ছাড়া সম্পন্ন করা যায় না।
ولهذا روى :[أن السلطان ظل الله في الأرض] ويقال : [ستون سنة من إمام جائر أصلح من ليلة بلا سلطان] -السياسة الشرعية[1/217]
এ কারণেই বলা হয়ঃ ‘সুলতান হচ্ছেন পৃথিবীতে আল্লাহর ছায়া’। আরো বলা হয়ঃ ‘সুলতান ছাড়া এক রাত থেকে অত্যাচারী ইমামের অধীনে ষাট বছরও উত্তম”। - সিয়াসাতুশ শরীয়াহ (পৃষ্টা ১)
এই হচ্ছে ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহির সেই কথা – যা ডঃ সাইফুল্লাহ এই আলোচনায় জিহাদের জন্য ইমাম অনুমতি ও ঘোষণার শর্তের পক্ষে দলীল হিসেবে উল্লেখ করেছেন!!
গভীরভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায়ঃ
১। ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি এই কথাটি আসলে লিখেছেন তার সিয়াসাতুশ শরীয়াহ কিতাবের একদম শুরুর দিকে, ২১৭ পৃষ্টার বই এর একেবারে ১ম পৃষ্টার ১ম প্যারায়। ২১৭ পৃষ্টার কোন বই এর ১ম পাতার ১ম প্যারায়ই কেউ কোন একটি বিষয়ে ফতোয়া প্রদান করার কথা না। জিহাদের জন্য ইমাম বা খলিফা শর্ত কিনা তাও লেখার কথা না। বরং যেকোন কিতাবের প্রথমে সাধারণ কিছু ভূমিকা থাকে, যা বই এর মূল আলোচ্য বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট। আর এই কিতাবের বিষয় যেহেতু ইসলামী সিয়াসাত, তাই শুরুতেই নেতৃত্বের ব্যাপারে ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি হাদিস উল্লেখ করে এর গুরুত্ব বুঝানোর চেষ্টা করেছেন।
২। উল্লেখিত কথাটিও খুবই ব্যাপক একটা কথা। এখানে তিনি সফরে তিন ব্যক্তির আমীর নির্ধারণ করার হাদিস উল্লেখ করে ব্যাপকভাবে যে কোন জামায়াতের জন্য আমীর থাকার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। কেউ এই এক লাইন থেকে এই দাবী করা হাস্যকর হবে যে, জিহাদের জন্য একজন খলিফা বা ইমাম থাকা শর্ত।
৩। যদি ডঃ সাইফুল্লাহ ইবনে তাইমিয়ার এই কথা থেকে এই দাবী করেন, এই কথার মধ্যে জিহাদের জন্য একজন ইমাম থাকাকে ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি শর্ত করেছেন, তাহলে প্রশ্ন আসবেঃ
- তাহলে ঈদের ব্যাপারেও তো একই লাইনে বলা আছে। তাহলে বর্তমানে কি মুসলিমরা খলিফা বা ইমাম নাই বলে ঈদ করা ছেড়ে দিবে? আপনি কি বাংলাদশে ঈদ পালন করেন না? বাংলাদেশের মুসলিম জনগণ কোন খলিফা বা ইমামের অধীনে থাকায় বংশ পরম্পরায় ঈদ পালন করছেন?
- হজ্জ্ব এর ব্যাপারেও একই কথা আসবে। এখন মুসলিমদের খলিফা / ইমাম নাই দেখে কি মুসলিমরা হজ্ব করা ছেড়ে দিবে? হজ্বের জন্যও কি একজন খলিফা / ইমাম থাকা শর্ত? বর্তমানে কোন খলিফা / ইমামের অধীনে হজ্জ্ব অনুষ্ঠিত হয়? নাকি এই হজ্জ্বগুলো সবই বাতিল বলে গন্য হবে?
- জুম’আর ক্ষেত্রেও কি এই শর্ত আসবে না? এখন মুসলিমদের খলিফা / ইমাম নাই দেখে কি মুসলিমরা জুম’আ আদায় করা ছেড়ে দিবে? জুম’আর জন্যও কি একজন খলিফা / ইমাম থাকা শর্ত? বর্তমানে কোন খলিফা / ইমামের অধীনে জুম’আ অনুষ্ঠিত হয়? নাকি এই জুম’আগুলো সবই বাতিল বলে পরিগণিত হবে? আপনারা যে ঢাকার বিভিন্ন মসজিদে জুমার নামাজ পড়ান তা কিসের ভিত্তিতে?
৪। বরং ইবনে তাইমিয়ার রহমাতুল্লাহি আলাইহির এই কথার ব্যাখ্যা এর আগের লাইনেই আছে যেখানে তিনি বলেছেনঃ ‘রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাধারণ সফরে বের হওয়া ছোট্ট জামাতের জন্যও একজনকে আমীর নিয়োজিত করা ওয়াজিব করেছেন। এ থেকে অন্য সকল ধরনের ইজতিমার জন্যও এর গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায়’।
অর্থাৎ সাধারণভাবে সকল জামাতে একজন আমীর থাকা প্রয়োজন। আমীরের অধীনে মুসলিমরা থাকা প্রয়োজন। তাই কেউ এই লাইন থেকে শিক্ষা নিলে এটা বলতে পারে যে, সকল জমায়াতে যেন আমীর নিয়োগ দেয়া হয়। হজ্বেও যেন আমীর নিয়োগ দেয়া হয়। সেই আমীরের অধীনে হজ্ব হবে। ঈদও যেন একটা নেতৃত্বের অধীনে হয়। জিহাদেও মুজাহিদরা যেন একজন আমীর নিয়োগ দিয়ে কাজ করেন। কারণ তিনজন সফরে গেলে আমীর নিয়োগ দেয়ার কথা। তাহলে জিহাদের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতে অবশ্যই আমীর নিয়োগ দেয়া উচিত। এই কথা বললে, সেটা একটা যুক্তি-সংগত কথা হতো। আর সকলেই জানেন, আলহামুদলিল্লাহ দুনিয়ার যে কোন প্রান্তের জিহাদী তানজীমই তাদের মধ্যে আমীর নির্ধারন করে থাকেন।
এ কারণেই ইমাম আব্দুর রহমান বিন হাসান রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন,
كل من قام بالجهاد في سبيل الله فقد أطاع الله وأدى ما فرضه الله ولا يكون الإمام إماماً إلا بالجهاد إلا أنه لا يكون جهاد إلا بإمام-الدرر السنية 7/97
‘প্রত্যেক ব্যক্তি যে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর জন্য দাঁড়িয়ে গেল, সে আল্লাহর আনুগত্য করল এবং আল্লাহ যা ফরজ করেছেন তা আদায় করল। জিহাদ ছাড়া কোন ইমাম, ইমামই হতে পারে না, যদিও জিহাদও ইমাম ছাড়া করা যায় না।’
ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর কথাটি আব্দুর রহমান বিন হাসান রহমাতুল্লাহি আলাইহির কথার আলোকে বুঝলে আশা করি সবার কাছে তা পরিষ্কার হবে। আর এ ব্যাপারে সবাই অবগত যে মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব ও নজদের আলেমগণ ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহির কিতাবগুলো খুবই বিস্তারিতভাবে অধ্যয়ন করেছেন এবং উনাদের উপর ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর চিন্তাধারা খুবই প্রভাব বিস্তার করেছিল।
৫। এর থেকেও উল্লেখযোগ্য কথা হলোঃ ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি এখানে সুষ্পষ্টভাবে এই কথা উল্লেখ করেন নি যে,
‘জিহাদের জন্য একজন ইমাম কিংবা খলিফা থাকা শর্ত’ - যা সাইফুল্লাহ প্রমাণ করতে চেয়েছেন। এখানে ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর আলোচনার বিষয়বস্তুও জিহাদ ছিল না। এখানে তিনি জিহাদের শর্তাবলী আলোচনাও করছিলেন না। তাই এ রকম কোন সাধারণ আলোচনার একটি লাইন উল্লেখ করে সেটাকে জিহাদের জন্য একটি শর্ত হিসেবে দেখনো বুদ্ধিবৃত্তিক চৌর্যবৃত্তির নামান্তর হবে কিংবা সেটি হবে দ্বীনের একটি বিধানের ব্যাপারে নিজ অনুসারীদেরকে ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল পথে দেখানো। আল্লাহু আ'লাম।
৬। আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলোঃ ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি যেখানে জিহাদের আলোচনা করেছেন সেখানে বরং প্রতিরক্ষামূলক জিহাদে কোন ধরনের শর্ত নেই বলে সুষ্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন। ফাতওয়াতুল কুবরা এর কিতাবুল জিহাদে ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেনঃ
وَأَمَّا قِتَالُ الدَّفْعِ فَهُوَ أَشَدُّ أَنْوَاعِ دَفْعِ الصَّائِلِ عَنْ الْحُرْمَةِ وَالدِّينِ فَوَاجِبٌ إجْمَاعًا فَالْعَدُوُّ الصَّائِلُ الَّذِي يُفْسِدُ الدِّينَ وَالدُّنْيَا لَا شَيْءَ أَوْجَبَ بَعْدَ الْإِيمَانِ مِنْ دَفْعِهِ فَلَا يُشْتَرَطُ لَهُ شَرْطٌ بَلْ يُدْفَعُ بِحَسَبِ الْإِمْكَانِ-الفتاوى الكبرى
“আর প্রতিরোধমূলক যুদ্ধ হচ্ছে মুসলমানদের সম্মান ও দ্বীন রক্ষার জন্য আগ্রাসীকে প্রতিহত করার সবচেয়ে কঠিন প্রকার। এটা সর্বসম্মতিক্রমে ওয়াজিব। সুতরাং ঈমানের পর দ্বীন ও দুনিয়া ধ্বংসকারী আগ্রাসী শত্রুকে প্রতিহত করার চেয়ে বড় ফরজ কিছু নেই। এর জন্য কোন শর্ত নেই। বরং সামর্থ অনুযায়ী প্রতিরোধ করতে হবে”।
প্রশ্ন হচ্ছেঃ জিহাদের জন্য ইমাম থাকা শর্ত কিনা এই ব্যাপারে শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহির এরকম অনেক সুষ্পষ্ট বক্তব্য বাদ দিয়ে কেন একটি আ’ম বক্তব্যকে ডঃ সাইফুল্লাহ নিজ বিভ্রান্তিকর দাবীর পক্ষে প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরলেন?
৭। ইমাম ইবনুল কায়্যিম রহমাতুল্লাহি আলাইহি যাদুল মা’য়াদ কিতাবে হুদাইবিয়ার সন্ধি থেকে কিছু ফিকহী উপকারিতা অধ্যায়ে আলোচনায় বলেছেনঃ
ومنها : أن المعاهدين إذا عاهدوا الإمام فخرجت منهم طائفة فحاربتهم وغنمت أموالهم ولم يتحيزوا إلى الإمام لم يجب على الإمام دفعهم عنهم ومنعهم منهم وسواء دخلوا في عقد الإمام وعهده ودينه أو لم يدخلوا والعهد الذي كان بين النبي صلى الله عليه و سلم وبين المشركين لم يكن عهدا بين أبي بصير وأصحابه وبينهم وعلى هذا فإذا كان بين بعض ملوك المسلمين وبعض أهل الذمة من النصارى وغيرهم عهد جاز لملك آخر من ملوك المسلمين أن يغزوهم ويغنم أموالهم إذا لم يكن بينه وبينهم عهد كما أفتى به شيخ الإسلام في نصارى ملطية وسبيهم مستدلا بقصة أبي بصير مع المشركين -زاد المعاد - ابن القيم الجوزية 3/267
“এর মধ্যে এটাও রয়েছে যে, যখন চুক্তিবদ্ধ গোষ্ঠী খলিফা/ইমাম এর সাথে চুক্তি করে, এরপর কোন তয়িফা তাদের (চুক্তিবদ্ধগোষ্টী) থেকে বের হয়ে যায়, এরপর তাদের সাথে যুদ্ধ করে এবং তাদের মালামাল থেকে গনীমাত অর্জন করে এবং তারা ইমামের দিকে না আসে, তাহলে ইমামের জন্য জরুরী নয় যে, তাদেরকে চুক্তিবদ্ধ গোষ্টী থেকে নিরাপত্তা দেয়া অথবা চুক্তিবদ্ধ গোষ্টীকে ঐ তয়িফার ব্যাপারে (কার্যক্রম গ্রহণ করতে) বাঁধা দেয়া। এই ক্ষেত্রে তারা (ঐ তয়িফা) ইমামের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হোক বা না হোক, প্রতিশ্রুতি দিক বা না দিক ও দ্বীনে প্রবেশ করুক বা না করুক - তা সমান হবে। আর নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও মুশরিকদের মধ্যে যে চুক্তি ছিল, আবু বাসির রদিআল্লাহু আনহু ও তার সাথীদের সাথে মুশরিকদের ঐ চুক্তি ছিল না। এর উপর ভিত্তি করে বলা যায়, কোন রাজা যদি খ্রীষ্টান অথবা অন্য কোন আহলু জিম্মার সাথে চুক্তি করে, অন্য কোন মুসলিম রাজার জন্য তাদেরকে আক্রমণ করা ও তাদের মাল থেকে গনীমাত নেয়া জায়েজ রয়েছে যদি তাদের সাথে কোন চুক্তি না থাকে। মুশরিকদের সাথে আবু বাসির রদিআল্লাহু আনহু এর এই ঘটনা উপর ভিত্তি করে শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি মাল্টা এর খ্রীষ্টানদের ব্যাপারে ও তাদেরকে বন্দী করার ব্যাপারে ফতোয়া দিয়েছেন”।
তাহলে দেখা যাচ্ছে, বাস্তবে ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি আবু বাসির রদিআল্লাহু আনহু এর ঘটনার উপর ভিত্তি করে ফতোয়া দিয়েছেন। সেই ফতোয়ার ভিত্তি হচ্ছেঃ আবু বাসির রদিআল্লাহু আনহু, রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অধীনস্ত না থেকে জিহাদ করেছেন। অর্থাৎ, আবু বাসির রদিআল্লাহু আনহু এর এই জিহাদ যে সঠিক ছিল, সেটা ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি গ্রহন করেছেন। শুধু গ্রহন করেই ক্ষান্ত হন নি, এর উপর ভিত্তি করে ফতোয়াও দিয়েছেন।
একইভাবে এই ব্যাপারে শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর অবস্থান জানা ও একই রকম অবস্থান রাখার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশী রয়েছে উনার অন্যতম ছাত্র ইমাম ইবনুল কায়্যিম রহমাতুল্লাহি আলাইহির। সেই ইবনুল কাইয়্যিম রহমাতুল্লাহি আলাইহি হুদাইবিয়ার সন্ধি থেকে শিক্ষা বের করেছেনঃ
“এর মধ্যে এটাও রয়েছে যে, যখন চুক্তিবদ্ধ গোষ্টী খলিফা/ইমাম এর সাথে চুক্তি করে, এরপর কোন তয়িফা তাদের (চুক্তিবদ্ধগোষ্টী) থেকে বের হয়ে যায়, এরপর তাদের সাথে যুদ্ধ করে এবং তাদের মালামাল থেকে গনীমাত অর্জন করে এবং তারা ইমামের দিকে না আসে, তাহলে ইমামের জন্য জরুরী নয় যে, তাদেরকে চুক্তিবদ্ধ গোষ্টী থেকে নিরাপত্তা দেয়া অথবা চুক্তিবদ্ধ গোষ্টীকে ঐ তয়িফার ব্যাপারে (কার্যক্রম গ্রহণ করতে) বাঁধা দেয়া”।
বলার অপেক্ষা রাখে না, এই তয়িফা মুসলিম হলে তারা জিহাদ করবে, খলিফা এর অধীনস্থ না থেকেই। যা আবু বাসির রদিআল্লাহু আনহু এর ক্ষেত্রে হয়েছিল। তাহলে ইবনুল কায়্যিম রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর অবস্থানও এই ক্ষেত্রে ডঃ সাইফুল্লাহ এর অবস্থান এর সম্পূর্ণ বিপরীত!
এখন আমরা জিহাদের জন্য শাসক বা খলিফার অনুমতি কিংবা ঘোষণা দেয়ার শর্তের ব্যাপারে ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি অবস্থান কোনটা ধরে নিবো? ডঃ সাইফুল্লাহ এর উল্লেখকৃত অবস্থান নাকি ইবনুল কায়্যিম রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর উল্লেখকৃত অবস্থান?
তাই আমরা ডঃ সাইফুল্লাহ এর কাছে বিনীতভাবে জানতে চাই,
o বর্তমানে কি মুসলিমগণ খলিফা / ইমাম নাই বলে ঈদ করা ছেড়ে দিবে? বাংলাদেশের মুসলিম জনগণ কোন খলিফা / ইমামের অধীনে থেকে বংশ পরম্পরায় ঈদ পালন করছেন?
o ‘জিহাদের জন্য একজন ইমাম কিংবা খলিফা থাকা শর্ত’ – এ রকম কোন কথা শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি কোথাও হুবহু উল্লেখ করেছেন কিনা?
o জিহাদের জন্য ইমাম থাকা শর্ত কিনা এই ব্যাপারে শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর একটি সুষ্পষ্ট বক্তব্য বাদ দিয়ে কেন আমরা একটি আ’ম বক্তব্যকে উনার অবস্থান হিসেবে ধরে নিবো?
o আমরা আলোচ্য বিষয়ে ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর অবস্থান কোনটা ধরে নিবো – আপনার উল্লেখকৃত অবস্থান নাকি ইবনুল কায়্যিম রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর উল্লেখকৃত অবস্থান?
আশা করি এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিবেন। এতে আমরা ও এদেশে আপনার দর্শক-শ্রোতা আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহু এর ঘটনার ব্যাপারে সঠিক ধারনা পাবেন ইনশাআল্লাহ।
প্রশ্ন ৪। রাশিয়ার বিরুদ্ধে আফগান জিহাদের ঘোষণা কোন খলিফা দিয়েছিলেন যে কারণে আপনারা আফগানে রাশিয়ার বিরুদ্ধে জিহাদকে সহীহ বলেন কিন্তু আফগানে আমেরিকার বিরুদ্ধে জিহাদ সহীহ হচ্ছে না?
১। উপরুক্ত আলোচনার ৫৯ মিনিটে ডঃ সাইফুল্লাহ বলেছেনঃ
“(আফগানিস্তানে) প্রথমে একক নেতৃত্বে পৌঁছে জিহাদ শুরু করেছেন। কিন্তু পরবর্তীতে ফিতনা সেখানে তৈরী হয়েছে। এই ফিতনার মাশুল তাদেরকে আজো দিতে হচ্ছে। কিন্তু প্রথমে কিন্তু তারা একক নেতৃত্বেই জিহাদ করেছে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে যখন জিহাদ করেছে তারা একক নেতৃত্ব করেছে। এবং সেটা ছিল রাশিয়ার একটা আক্রমণ। তাদের বিরুদ্ধে একটা বড় আক্রমণ। এবং সেই আক্রমণ প্রতিহত করা মুসলমানদের একটা বড় দায়িত্বের মধ্যে একটা ছিল। এবং মুসলমানরা ইচ্ছাকৃতভাবে সেই আক্রমণকে প্রতিহত করার জন্য চেষ্টা করেছেন। ফলে এটাকে জিহাদ ঘোষণা দিয়েছেন উলামায়ে কেরাম। এবং এটা জিহাদই হয়েছে আসলে। কোন সন্দেহ নেই, এটা জিহাদ হয়েছে। এবং আমরা দেখেছি যে, এই জিহাদের একটা রেজাল্টও এসেছে”।
অন্যদিকে আলোচনার ২০ মিনিট ২৫ সেকেন্ডের দিকে ডঃ সাইফুল্লাহ বলেছেনঃ
“জিহাদের যতগুলো পদ্ধতি তার মধ্যে একটি হচ্ছে, জিহাদ ঘোষণা হতে হবে এমন ব্যক্তির পক্ষ থেকে যিনি কেবলমাত্র মুসলমানদের ক্ষমতার অধিকারী। মুসলমানরা তার ক্ষমতার ব্যাপারে একমত হয়েছে। অর্থাৎ মুসলিম শাসক যার ইমামতির ব্যাপারে সমস্ত মুসলমানগণ, সেই প্রেক্ষাপটের মুসলমানগণ সবাই একমত হয়েছেন যে তিনি ইমাম, তিনি ঘোষনা করবেন জিহাদ”।
তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছিঃ
- একদিকে তিনি দাবী করছেন, জিহাদ ঘোষণা হতে হবে এমন মুসলিম শাসক এর পক্ষ থেকে যার ইমামতির ব্যাপারে সমস্ত মুসলমানগণ, সেই প্রেক্ষাপটের মুসলমানগণ সবাই একমত হয়েছেন যে তিনি ইমাম, তিনি ঘোষনা করবেন জিহাদ।
- আবার অন্যদিকে তিনি বলেছেনঃ রাশিয়ার বিরুদ্ধে আফগানিস্তানের জিহাদকে ‘জিহাদ হিসেবে’ ঘোষণা দিয়েছেন উলামায়ে কেরাম। ‘এবং এটা জিহাদই হয়েছে আসলে’। আর বাস্তবে বিন বাজের নেতৃত্ব ইসলামিক ফিকহ কাউন্সিল আফগান জিহাদকে শরয়ী জিহাদ বলে ঘোষণা দিয়েছে। এই ফতোয়াতে ঐক্যবদ্ধভাবে সাক্ষর করেছেনঃ
o বিন বাজ।
o বকর আব্দুল্লাহ আবু জায়েদ।
o সালেহ ইবনে ফাওযান।
o ইবনে আব্দুল্লাহ আল সুবাইলী।
o আবুল হাসান আলী নদভী।
এছাড়া আলাদাভাবে আরো অনেক আলেম আফগান জিহাদকে শরয়ী ভাবে বৈধ একটি জিহাদ ঘোষণা দিয়ে এতে সহযোগিতা করার জন্য মুসলিম উম্মাহকে আহবান জানিয়েছেন।
আর এটি সকলেই জানে যে, আফগানিস্তানে বিভিন্ন দলীয় কোন্দল অনেক আগে থেকেই ছিল। এমনকি রাশিয়ার বিরুদ্ধে জিহাদেও বিভিন্ন দল বিভিন্ন উদ্দেশ্য নিয়ে যুদ্ধ করেছে। আরব মুজাহিদগণসহ উসামা রহমাতুল্লাহি আলাইহি কখনোই আমেরিকার কোন সাহায্য নেন নি – যা সিআইএ এর বিন লাদেন ইউনিট এর প্রধানের সাক্ষাতকার থেকেও প্রমাণ হয়েছে। আহমাদ শাহ মাসউদের দলকে আমেরিকা সর্বাত্বক সাহায্য-সমর্থন দিয়েছিল। গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ারের গ্রুপ আলাদা ছিল, বুরহানুদ্দিন রব্বানী এর গ্রুপও আলাদা কাজ করেছে। জালালুদ্দিন হাক্কানী এর গ্রুপও আলাদাভাবে ছিল।
এখন প্রশ্ন হচ্ছেঃ
ক) রাশিয়ার বিরুদ্ধে আফগানিস্তানের এই বৈধ জিহাদকে কোন খলিফা/ইমাম- ‘জিহাদ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন?
খ) ঐ সময় কি মুসলিম উম্মাহ কোন খলিফার অধীনে ছিল?
গ) তখন কি আফগানিস্তান কোন খলিফার অধীনে ছিল, যিনি ‘শরয়ী ভাবে বৈধ এই জিহাদ’ ঘোষণা দিয়েছিলেন?
ঘ) আফগান জিহাদ কি এমন কোন মুসলিম শাসকের তরফ থেকে ‘জিহাদ হিসেবে ঘোষণা’ দেয়ার পর শুরু হয়েছিল, যার ইমামতির ব্যাপারে সমস্ত মুসলমানগণ, সেই প্রেক্ষাপটের মুসলমানগণ সবাই একমত হয়েছেন যে তিনি ইমাম?
ঙ) রাশিয়ার বিরুদ্ধে আফগানিস্তানের জিহাদে কে ছিল সেই একক নেতা প্রথম দিকে যার ‘একক নেতৃত্বে পৌঁছে জিহাদ শুরু’ হয়েছিল? কোন কোন গ্রুপ সেই একক নেতার অধীনে ছিল? পরবর্তীতে কবে, কিভাবে সেই নেতার ‘একক নেতৃত্ব’ বিনষ্ট হয়েছিল? একটু বিস্তারিত জানাবেন।
২। একইভাবে আলোচনার ৫১ মিনিট ২৩ সেকেন্ডের দিকে ডঃ সাইফুল্লাহ বলেছেন,
“এজন্য কেউ কেউ আব্দুর রহমান ইবনে হাসান রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে এই বর্ণনা উল্লেখ করেছেন। যে বর্ণনাটা গলদ। আব্দুর রহমান ইবনে হাসান আলে রহমাতুল্লাহি আলাইহি তার থেকে কেউ কেউ উল্লেখ করেছেন যে, তিনি বলেছেন জিহাদে দফ্* এর জন্য ইমামের অনুমতির দরকার নেই। আরে ইমামের অনুমতির দরকার নেই - জিহাদ এর ঘোষণা করলো কে? যদি কেউ ঘোষণা করতো তাহলে জিহাদ হতো। ঠিক কিনা? ঘোষণাই তো হয় নাই। যদি ইমাম জিহাদ ঘোষণা করলে তাহলে ঠিক আছে। وإذا استنفرتم فانفروا বুখারী শরীফে এসেছে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন তোমাদের বেরিয়ে যাবার জন্য আহবান করা হয়, তখন বেরিয়ে যাও’। যদি ইমাম জিহাদ ঘোষণা করলে তাহলে ঠিক আছে। তাহলে জিহাদ এ দফ এর জন্য সবাই বেরিয়ে যাবে। তখন আর অনুমতির দরকার নেই। ...... কিন্তু যদি জিহাদই ঘোষণা না হয়, সেখানে অনুমতির মাসআলা আসবে না। সেখানে মাসআলা আসবে, জিহাদ ঘোষনা করেছে কে? কেউ যদি জিহাদের ঘোষণা না করে, তাহলে সেই জিহাদে অংশগ্রহন করা মূলতঃ মুসলিমদের কাজ নয়”।
এছাড়া আলোচনার ৫০ মিনিট ১৮ সেকেন্ডে ডঃ সাইফুল্লাহ বলেছেনঃ
“জিহাদে তলব এর জন্য যেভাবে (খলিফার অনুমতি কিংবা ঘোষণা) শর্ত, জিহাদে দফ্ এর জন্য তেমনিভাবে শর্ত”।
আমরা বিনীতভাবে ডঃ সাইফুল্লাহর কাছে জানতে চাই,
ক) রাশিয়ার বিরুদ্ধে যে জিহাদকে আপনি শরয়ীেভাবে বৈধ জিহাদ বলে দাবী করেছেন, এবং বলেছেন, ‘এবং এটা জিহাদই হয়েছে আসলে। কোন সন্দেহ নেই, এটা জিহাদ হয়েছে’ – এই জিহাদ ঘোষণা করলো কে?
খ) রাশিয়ার বিরুদ্ধে যে জিহাদকে আপনি শরয়ীিভাবে বৈধ জিহাদ বলে দাবী করেছেন, এবং বলেছেন, ‘এবং এটা জিহাদই হয়েছে আসলে। কোন সন্দেহ নেই, এটা জিহাদ হয়েছে’ – এই জিহাদ ঘোষণা করলেন কোন সেই ইমাম? কোন সেই খলিফা?
গ) যদি আফগানিস্তানের জিহাদের ঘোষণা কোন খলিফা / ইমাম না দিয়ে থাকেন, তাহলে আপনার ভাষ্য অনুযায়ী সেই জিহাদে অংশগ্রহন করা মূলতঃ মুসলিমদের কাজ ছিল না। তাহলে উপর্যুক্ত সৌদি উলামাগণ এইভাবে আফগান জিহাদে শরীক হবার জন্য তখন আহবান জানিয়ে ছিলেন কেন?
৩। আলোচনার ৪৯ মিনিট ৫ সেকেন্ডে এক প্রশ্নের উত্তরে ডঃ সাইফুল্লাহ বলেছেন,
‘আফগানিস্তানের জিহাদকে আমিও জিহাদ বলেছি। ঠিক আছে, ফিলিস্তিনের জিহাদকে আমিও জিহাদ বলেছি। কিন্তু আমি বলেছি যে আফগানিস্তানের জিহাদ পরবর্তীতে ফিতনায় রুপান্তরিত হয়েছে। প্রথমে জিহাদ ছিল কিন্তু সেটা পরবর্তীতে ফিতনায় রুপান্তরিত হয়েছে। ফিলিস্তিনের জিহাদ প্রথমে জিহাদ ছিল, জিহাদের আকারে শুরু হয়েছিল, উলামায়ে কেরাম সাপোর্ট করেছেন, কিন্তু পরে সেটা ফিতনায় রুপান্তরিত হয়েছে। যেহেতু সেটা কোন ধরনের দিক নির্দেশনা বা মানহাজে পরিচালিত হয়নি’।
এখন প্রশ্ন হচ্ছেঃ
ক) শুরুর দিকে ফিলিস্তিনের ঐ বৈধ জিহাদকে কোন খলিফা/ইমাম- ‘জিহাদ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন?
খ) ঐ সময় কি মুসলিম উম্মাহ কোন খলিফার অধীনে ছিল?
গ) তখন কি ফিলিস্তিনের কোন খলিফার অধীনে ছিল, যিনি ‘শরয়ী ভাবে বৈধ এই জিহাদ’ ঘোষণা দিয়েছিলেন?
ঘ) ফিলিস্তিনের জিহাদ কি এমন কোন মুসলিম শাসকের তরফ থেকে ‘জিহাদ হিসেবে ঘোষণা’ দেয়ার পর শুরু হয়েছিল, যার ইমামতির ব্যাপারে সমস্ত মুসলমানগণ, সেই প্রেক্ষাপটের মুসলমানগণ সবাই একমত হয়েছেন যে তিনি ইমাম?
৪। আলোচনার ৩৩ মিনিট ৯ সেকেন্ডে ডঃ সাইফুল্লাহ বলেনঃ
“আর এই দুঃখ আমি বলে শেষ করতে পারবো না সেটা হচ্ছে, আফগানিস্তানের দেখুন জিহাদ হয়েছে কিন্তু জিহাদ রেজাল্ট নিয়ে আসতে পারে নাই। আজ পর্যন্ত কোন রেজাল্ট নিয়ে আসতে পারে নাই। ইরাকে দেখুন, আজ পর্যন্ত কোন রেজাল্ট আসেনি। আজ পর্যন্ত কোন রেজাল্টে পৌছতে পারে নাই। এই না পৌছার কারণ একটাই সেটা হচ্ছে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে মানহাজ দেখিয়েছেন সেই মানহাজকে ফলো করা হয় নি। সে কর্মনীতিকে অনুসরণ করা হয় নি। সেই কর্মনীতিকে যদি অনুসরণ করা হতো, তাহলে সেখানে সত্যিকার অর্থে একটা রেজাল্টে চলে আসতো”।
ডঃ সাইফুল্লাহর কাছে আমরা জানতে চাইঃ
- আপনার দৃষ্টিতে ফিলিস্তিন কিংবা আফগান জিহাদ প্রথমে শরয়ীভাবে বৈধ হলেও পরবর্তীতে মুজাহিদগণ কি কি কাজ করার কারণে সেটা আর শরয়ীেভাবে বৈধ থাকে নি? ফিতনায় রুপান্তরিত হয়েছে? দয়া করে বিস্তারিত দলীল-প্রমাণসহ জানাবেন।
- কোন সেই দিক-নির্দেশনা বা মানহাজ যে ফিলিস্তিন কিংবা আফগান জিহাদের মুজাহিদগণ প্রথমে মেনে চলেছেন, তাই প্রথমে সেই জিহাদগুলো শরইয়ীভাবে সহীহ ছিল? পরবর্তীতে সেটা না মানার কারণে তা শরয়ীভাবে বৈধ জিহাদ থেকে ফিতনাতে রুপান্তরিত হয়েছে?
আশা করি ডঃ সাইফুল্লাহ এবং উনার সমমনা একই মতামতধারীগণ এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিবেন। এতে এদেশে আপনাদের দর্শক-শ্রোতা এই ব্যাপারে সঠিক ধারনা পাবেন ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সকলকে হক্বকে হক্ব হিসেবে দেখার তৌফিক দিন আর বাতিলকে বাতিল হিসেবে দেখার তৌফিক দান করুন। আমীন।
নোট - যে কোন ভাই / বোন চাইলে এই পোস্টের পূর্ণ বা আংশিক যে কোন অংশ দ্বীনি এর কল্যাণে ব্যবহার করতে পারেন। চাইলে পরিমার্জন, পরিবর্ধনও করা যাবে।
বিদআতীদের অবৈধ কার্যক্রমই তাদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় দলীল। গুতের সমর্থনকারী, বিভিন্ন টাল-বাহানায় জিহাদ-ফি সাবিলিল্লাহকে অস্বীকারকারীদের মুখ থেকে বের হওয়া কথাগুলোই তাদের বিরুদ্ধে দলীল হিসেবে যথেষ্ট। নীচের কথাগুলো আগের কিছু লিখার পরিমার্জিত রূপ।
এনটিভিতে ইসলামী আলোচক, মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিকহে পিএইচডিধারী ডঃ মোহাম্মদ সাইফুল্লাহর জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর উপর একটি দীর্ঘ আলোচনা শুনলাম। এটা ইউটিউবে আপলোড করেছে wayofthesalaf.com নামক সাইট। মোট ১ ঘন্টা ২০ মিনিট ২৬ সেকেন্ডের আলোচনা। আলোচনার লিংকঃ www.youtube.com/watch?v=rHVeZne7Fg4
পুরো আলোচনা শুনার পর ডঃ সাইফুল্লাহর বক্তব্যের ব্যাপারে বেশ কিছু প্রশ্ন সামনে চলে আসে। ইনশাআল্লাহ সেগুলো ধীরে ধীরে লিখার চেষ্টা করবো। আশা করি, ডঃ সাইফুল্লাহর ছাত্র ও ভক্তরা উনার কাছে প্রশ্নগুলো উত্থাপন করবেন এবং এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জেনে নিয়ে নিজেরাও সঠিক ব্যাপারটি জানবেন এবং অন্যদেরকে এই ব্যাপারে বিভ্রান্ত করা থেকে বিরত থাকতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।
একটা ব্যাপার লক্ষ্য করলাম, এদেশীয় জিহাদ বিরোধী আলেমরা ফিকহের ফুরুয়ী মাসআলায় নিজেদের মতো করে কিছু কিছু দলীল-আদিল্লা দিয়ে কথা বলার চেষ্টা করেন। কিন্তু কেন যেন জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর ব্যাপারে তাদের দৃষ্টিভংগীর স্বপক্ষে তারা দলীল দিতে একেবারেই অনিচ্ছুক অথবা দলীল খুঁজে পান না। তারা এই ক্ষেত্রে শুধু যুক্তি দিয়ে কথা বলতে ভালবাসেন। তাদের কোন একজনও জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর ব্যাপারে বিস্তারিত পড়ালেখা করেছেন কিনা - আল্লাহু আ'লাম। অবস্থা দেখে মনে হয়, উনারা যার যার শাইখদের অন্ধ তাকলীদ করাকেই তারা একমাত্র দলীল হিসেবে নিয়েছেন। ফিকহের ক্ষেত্রে মুজতাহিদ নন এমন সকলের জন্যই তাকলীদ উলামায়ে কেরাম জরুরী বললেও তারা এই ক্ষেত্রে তাকলীদ করা যাবে বলে মনে করেন না কিন্তু দ্বীনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজকে বাস্তবে রহিত বা অস্বীকার করার ক্ষেত্রে আবার ঠিকই তাকলীদই তাদের একমাত্র ভরসা!
যেমনঃ মরহুম ডঃ আব্দুল্লাহ জাহাংগীর তার ‘ইসলাম ও জঙ্গীবাদ’ নামক বইতে বারংবার এই দাবী করেছেন যে, জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ রাষ্ট্র ছাড়া আমল করা যাবে না। এর জন্য অবশ্যই খলিফা অথবা ইসলামী শাসন লাগবে। কিন্তু এত বড় বইতেও তিনি এই দাবীর স্বপক্ষে তেমন কোন দলীল অথবা পূর্ববর্তী আলেমদের কোন ফতোয়ার উল্লেখ করেন নি বা করতে পারেন নি। অবশ্য পারার কথাও না কারণ বাস্তবে সালাফে সালাহীন থেকে এমন কিছু তারা দেখাতে পারবেনও না।
একই ব্যাপার হয়েছে ডঃ সাইফুল্লাহর এই আলোচনায়ও। প্রায় দেড় ঘন্টার বিশাল আলোচনা! কিন্তু আলোচনায় তেমন কোন দলীল উনার এই দাবীর পক্ষে শুনলাম না। তিনিও এই আলোচনায় বারংবার এই দাবী করেছেন যে, একজন ইমাম বা খলিফা ছাড়া জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ হবে না। জিহাদ করতে হলে ইমাম বা খলিফা কর্তৃক ঘোষিত হতে হবে। বলা যায়, ডঃ সাইফুল্লাহর এই পুরো আলোচনার ভিত্তিই ছিল – তার এই দাবী। অথচ তিনিই আবার প্রশ্ন-উত্তর পর্বে (আলোচনার ১ ঘন্টা ৫ মিনিট ৩০ সেকেন্ড এ) এক প্রশ্নকারীর প্রশ্নের জবাবে, তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘এই যে এত দলীল দিলাম। আমরা রাসুল সাঃ এর এতগুলো ঘটনার দলীল দিলাম, সমস্ত উলামায়ে কেরামের দলীল দিলাম’। আমরা উনার এতগুলো দলীল (!) একটু যাচাই করে দেখবো ইনশাআল্লাহ।
তিনি রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিভিন্ন ঘটনা থেকে এমন এক ফিকহ বের করেছেন যা পূর্ববর্তী উলামাগণ কেউ বের করেন নি। তাই ডঃ সাইফুল্লাহর দেয়া ওহুদ কিংবা আহযাব যুদ্ধের উদাহরণ অগ্রহনযোগ্য। কারণ যে কোন একটি ঘটনার সময় একটি বিষয়ের উপস্থিতি ঐ ঘটনার জন্য ঐ বিষয়কে শর্ত হিসেবে নির্দেশ করে না। এদিকে সমস্ত উলামায়ে কেরামের দলীল বলতে তিনি শুধু ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহির একটি আ’ম ক্বওল উল্লেখ করলেন। যা এই শর্তের জন্য অদৌ কোন দলীল নয়।
প্রশ্ন - ১। এই উম্মাহর কোন কোন মুহাদ্দিস, কোন কোন হাদিসের ব্যাখ্যাকারক, কোন কোন মুজতাহিদ ইমাম এই হাদিস থেকে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর জন্য একজন ইমাম থাকা অথবা ইমাম কর্তৃক জিহাদ ঘোষণাকে শর্ত বের করেছেন?
আলোচনার ৫১ মিনিট ২৩ সেকেন্ডের দিকে ডঃ সাইফুল্লাহ বলেন,
“এজন্য কেউ কেউ আব্দুর রহমান ইবনে হাসান রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে এই বর্ণনা উল্লেখ করেছেন। যে বর্ণনাটা গলদ। আব্দুর রহমান ইবনে হাসান আলে রহমাতুল্লাহি আলাইহি তার থেকে কেউ কেউ উল্লেখ করেছেন যে, তিনি বলেছেন জিহাদে দফ্* এর জন্য ইমামের অনুমতির দরকার নেই। আরে ইমামের অনুমতির দরকার নেই - জিহাদ এর ঘোষণা করলো কে? যদি কেউ ঘোষণা করতো তাহলে জিহাদ হতো। ঠিক কিনা? ঘোষণাই তো হয় নাই। যদি ইমাম জিহাদ ঘোষণা করলে তাহলে ঠিক আছে। وإذا استنفرتم فانفروا
বুখারী শরীফে এসেছে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন তোমাদের বেরিয়ে যাবার জন্য আহবান করা হয়, তখন বেরিয়ে যাও’।
যদি ইমাম জিহাদ ঘোষণা করলে তাহলে ঠিক আছে। তাহলে জিহাদ এ দফ এর জন্য সবাই বেরিয়ে যাবে। তখন আর অনুমতির দরকার নেই। ...... কিন্তু যদি জিহাদই ঘোষণা না হয়, সেখানে অনুমতির মাসআলা আসবে না। সেখানে মাসআলা আসবে, জিহাদ ঘোষনা করেছে কে? কেউ যদি জিহাদের ঘোষণা না করে, তাহলে সেই জিহাদে অংশগ্রহন করা মূলতঃ মুসলিমদের কাজ নয়”।
আসলে দলীল-বিহীন একটি নতুন শর্ত জুড়ে দিয়ে তিনি সৌদি প্রথম গ্রান্ড-মুফতী আব্দুর রহমান বিন হাসান রহমাতুল্লাহি আলাইহির ক্বওলকে বাতিল বলে ঘোষনা দিয়েছেন!! পরবর্তীতে আমরা আব্দুর রহমান ইবনে হাসান রহমাতুল্লাহি আলাইহির কথাটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ।
যাই হোক এখন আমরা শুধু দেখতে চাই, ডঃ সাইফুল্লাহ কর্তৃক উল্লেখিত হাদিস দ্বারা পূর্ববর্তী আলেমগণ কি বুঝেছেন? কেউ কি এই হাদিসের উপর ভিত্তি করে, জিহাদের জন্য ইমাম / খলিফা থাকাকে কিংবা ইমাম কর্তৃক জিহাদ এর ঘোষণা দেয়াকে জিহাদের জন্য শর্ত করেছেন?
১। ফাতহুল বারীতে ইবনে হাজার আসকালানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ইমাম নববী রহমাতুল্লাহি আলাইহির এই ব্যাখ্যাটা উল্লেখ করেছেনঃ
وإذا استنفرتم فانفروا قال النووي يريد أن الخير الذي انقطع بانقطاع الهجرة يمكن تحصيله بالجهاد والنية الصالحة وإذا أمركم الإمام بالخروج إلى الجهاد ونحوه من الأعمال الصالحة فاخرجوا إليه - فتح الباري - ابن حجر
অর্থাৎ, ইমাম নববী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, মক্কা থেকে হিজরত বন্ধ হবার কারণে যে কল্যাণ / সওয়াবটা বন্ধ হয়ে গেছে, সেটা অর্জন করা সম্ভব হবে জিহাদ, নেক নিয়্যত এর মাধ্যমে। এবং যখন ইমাম তোমাদেরকে জিহাদে বের হবার এবং এরকম নেক আমলের নির্দেশ দিবেন, তখন তোমরা তার দিকে বের হবে’।
এখানে দেখুন, ইমামের নির্দেশে শুধু জিহাদ নয়, অন্যান্য নেক কাজেও বের হবার কথা ইমাম নববী রহমাতুল্লাহি আলাইহি আলোচনা করেছেন। এছাড়া ইমামের নির্দেশকে জিহাদের জন্য আলাদাভাবে কোন শর্ত হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন নি।
এখন এটাকে কেউ জিহাদের জন্য শর্ত হিসেবে নিলে কি অন্যান্য নেক আমলের জন্যও কি ইমামের নির্দেশকে শর্ত হিসেবে নিবেন এবং ইমাম অনুপস্থিত দেখে ঐ সকল নেক আমলকেও বাতিল বলবেন?
২। উমদাতুল আহকাম এর শরাহতে এসেছেঃ
"و إذا استنفرتم فانفروا" أي إذا طلبتم للجهاد فأجيبوا - إحكام الأحكام شرح عمدة الأحكام
এখানেও ব্যাখ্যাকারক ইমামের নির্দেশকে জিহাদের জন্য আলাদাভাবে কোন শর্ত হিসেবে উল্লেখ করেন নি।
৩। ইমাম সুয়ুতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি সহীহ মুসলিমের শরাহতে লিখেছেনঃ
وإذا استنفرتم فانفروا معناه إذا دعاكم السلطان إلى الغزو فاذهبوا إن هذا البلد حرمه الله يوم خلق السماوات -شرح السيوطي على مسلم
এর অর্থ হচ্ছে, ‘যখন সুলতান তোমাদেরকে গাযওয়ার দিকে আহবান করবে, তখন তোমরা বের হয়ে যাও যদিও এই শহর সৃষ্টির শুরু দিন থেকে আল্লাহ সম্মানিত করেছেন’।
এখানেও অনুরুপ। ইমাম সুয়ুতী খলিফার ঘোষণা কিংবা নির্দেশকে জিহাদের জন্য আলাদাভাবে কোন শর্ত হিসেবে উল্লেখ করেন নি।
চার মাজহাবের ফিকহের কোন একটি কিতাবে কি এই হাদিসের আলোকে কিংবা অন্য কোন কারণে ইমামের ঘোষণা দেয়াকে জিহাদের শর্ত করা হয়েছে? তাহলে ডঃ সাইফুল্লাহ নিজে থেকে কিভাবে এই হাদিসের আলোকে জিহাদের জন্য একটি নতুন শর্ত খুঁজে পেলেন?
৪। ইমাম নববী রহমাতুল্লাহি আলাইহি শরহে সহীহ মুসলিমে লিখেছেনঃ
( واذا استنفرتم فانفروا ) معناه اذا طلبكم الامام للخروج إلى الجهاد فاخرجوا وهذا دليل على أن الجهاد ليس فرض عين بل فرض كفاية اذا فعله من تحصل بهم الكفاية سقط الحرج عن الباقين وان تركوه كلهم اثموا كلهم - شرح النووي على صحيح مسلم
অর্থাৎ, ‘ইমাম যদি তোমাদেরকে যুদ্ধে বের হবার জন্য আহবান করেন, তাহলে তোমরা বের হয়ে যাও। আর এটা হচ্ছে প্রমাণ যে, জিহাদ (আসলে) ফরজে আইন নয় বরং ফরজে কিফায়া। একদলের আমল দ্বারা বাকীদের উপর থেকে এর দায়িত্ব মুক্তি আসে। এর সবাই এটা পরিত্যাগ করলে, সকলেই গুনাহগার হবে’।
তাহলে দেখা যাচ্ছে, এই হাদিস থেকে ইমাম নববী রহমাতুল্লাহি আলাইহি একটা সিদ্ধান্ত প্রমাণ করেছেন যে, জিহাদ আসলে ফরজে কিফায়াহ। এই হাদিস থেকে উনিও খলিফার ঘোষণা কিংবা নির্দেশকে জিহাদের জন্য আলাদাভাবে কোন শর্ত হিসেবে উল্লেখ করেন নি।
৫। এই হাদিস থেকে ইবনে হাজার রহমাতুল্লাহি আলাইহি উল্লেখ করেছেনঃ
قال الحافظ ابن حجر : " وفيه وجوب تعيين الخروج في الغزو على من عينه الإمام " .
‘এর মধ্য (এই প্রমাণ রয়েছে যে) ইমাম কাউকে নির্দিষ্ট করে দিলে তার জন্য জিহাদে বের হওয়া ওয়াজিব হয়ে যায়’।
তাহলে দেখা যাচ্ছে, উপরে উল্লেখিত উম্মাতের বড় বড় ইমামগণ এই হাদিস থেকে বিভিন্ন শিক্ষা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু কেউই ডঃ সাইফুল্লাহর দেয়া জিহাদের জন্য নতুন এই শর্তকে উল্লেখ করেন নি।
তাই, আমরা বিনীতভাবে ডঃ সাইফুল্লাহর কাছে জানতে চাই, এই উম্মাতের কোন কোন ইমাম ও আলেম, কোন কোন মুহাদ্দিস, কোন কোন হাদিসের ব্যাখ্যাকারক, কোন কোন মুজতাহিদ ইমাম উল্লেখিত এই হাদিস থেকে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর এর জন্য একজন ইমাম থাকা অথবা ইমাম কর্তৃক জিহাদ ঘোষণাকে শর্ত বের করেছেন?
আশা করি, আপনার কাছ থেকে উত্তর পেলে আমরা ও এদেশে আপনার শ্রোতামন্ডলীরা এই হাদিসের ব্যাপারে সঠিক ও পরিপূর্ণ ধারনা পাবেন ইনশাআল্লাহ।
প্রশ্ন ২। রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহু ও উনার সাথীগণকে এটা বলেছিলেন – 'তোমরা কুরাইশদেরকে হত্যা করে ভুল করেছো কারণ তোমরা ইমামের অধীনে নেই'?
‘শাসক ছাড়া জিহাদের ডাক দেয়া যাবে না, এ ব্যাপারে ক্লিয়ার কাট এভিডেন্স রয়েছে কি?’ – এই প্রশ্নের জবাবে উক্ত আলোচনার ১ ঘন্টা ৫ মিনিট ৫৭ সেকেন্ডে ডঃ সাইফুল্লাহ বলেছেনঃ
“আর আবু বাছির এর এই ঘটনাটি সম্পূর্ণভাবে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও গ্রহণ করেন নি। যারা এই ধারনা করেছেন, এটা গলদ এবং বিভ্রান্তিকর। আবু বাছির এর এই ঘটনাটি সম্পূর্ণভাবে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই গ্রহণ করেন নি এর দলীল হচ্ছে দুইবার তাকে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফেরত দিয়েছেন। তার কথাকে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গ্রহন করেন নি”।
ডঃ সাইফুল্লাহর এই দাবী শুনে কিছুটা আশ্চর্য্য হয়ে গেলাম! এরপর আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহু সম্পর্কিত হাদিসটি আবার পড়তে শুরু করলাম। এ সংক্রান্ত রেওয়ায়াতগুলোতে এমন কোন হাদিস পেলাম না, যেখানে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহু জিহাদ করার অনুমতি চাচ্ছেন, আর রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে জিহাদের অনুমতি না দিয়ে ফেরত দিয়েছেন।
মুসনাদে আহমাদে এই ব্যাপারে বিস্তারিত এসেছে। ঐ হাদিসের উল্লেখযোগ্য অংশগুলো হচ্ছেঃ
فَجَاءَهُ أَبُو بَصِيرٍ رَجُلٌ مِنْ قُرَيْشٍ وَهُوَ مُسْلِمٌ وَقَالَ يَحْيَى عَنِ ابْنِ الْمُبَارَكِ فَقَدِمَ عَلَيْهِ أَبُو بَصِيرِ بْنُ أُسَيْدٍ الثَّقَفِيُّ مُسْلِمًا مُهَاجِرًا فَاسْتَأْجَرَ الْأَخْنَسَ بْنَ شَرِيقٍ رَجُلًا كَافِرًا مِنْ بَنِي عَامِرِ بْنِ لُؤَيٍّ وَمَوْلًى مَعَهُ وَكَتَبَ مَعَهُمَا إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَسْأَلُهُ الْوَفَاءَ فَأَرْسَلُوا فِي طَلَبِهِ رَجُلَيْنِ فَقَالُوا الْعَهْدَ الَّذِي جَعَلْتَ لَنَا فِيهِ
“অতঃপর কুরাইশের জনৈক ব্যক্তি, আবু বাছির মুসলমান হয়ে তাঁর কাছে আসেন। আর ইয়াহইয়া, ইবনুল মুবারক থেকে এভাবে বর্ণনা করেন- অতঃপর আবু বাছির ইবনে উসাইদ আস-সাকাফী মুসলমান হয়ে হিজরত করে তাঁর নিকট আসেন। তখন কুরাইশরা বনী আমের ইবনে লুওয়াই এর জনৈক কাফের ব্যক্তি, আখনাস ইবনে শারীক ও তার সাথে একজন গোলাম ভাড়া করে তাদের কাছে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি চুক্তি পূরণের আবেদন জানিয়ে লিখিত একটি পত্র হস্তান্তর করে। অতঃপর তারা দুই ব্যক্তিকে তার সন্ধানে প্রেরণ করে। তারা বলল- আমাদের সাথে কৃত চুক্তি পুরণ করুন!”
অর্থাৎ, এটা পরিষ্কার যে, রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রথমবার আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহুকে ফিরিয়ে দেয়ার সময়ঃ
- কোন জিহাদের আলোচনা হয় নি।
- আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহু, রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে জিহাদের কোন অনুমতি প্রার্থনা করেন নি।
- বরং প্রথমবার ফিরিয়ে দেয়ার কারণ ছিল হুদায়বিয়ার সন্ধি, যে কারণে অন্য অনেককে ফেরত দেয়া হয়েছিল।
فَدَفَعَهُ إِلَى الرَّجُلَيْنِ فَخَرَجَا بِهِ حَتَّى بَلَغَا بِهِ ذَا الْحُلَيْفَةِ فَنَزَلُوا يَأْكُلُونَ مِنْ تَمْرٍ لَهُمْ فَقَالَ أَبُو بَصِيرٍ لِأَحَدِ الرَّجُلَيْنِ وَاللَّهِ إِنِّي لَأَرَى سَيْفَكَ يَا فُلَانُ هَذَا جَيِّدًا فَاسْتَلَّهُ الْآخَرُ فَقَالَ أَجَلْ وَاللَّهِ إِنَّهُ لَجَيِّدٌ لَقَدْ جَرَّبْتُ بِهِ ثُمَّ جَرَّبْتُ فَقَالَ أَبُو بَصِيرٍ أَرِنِي أَنْظُرْ إِلَيْهِ فَأَمْكَنَهُ مِنْهُ فَضَرَبَهُ حَتَّى بَرَدَ وَفَرَّ الْآخَرُ
“তাই তিনি উক্ত দুই ব্যক্তির নিকট তাকে সমর্পণ করেন। তারা তাকে নিয়ে রওয়ানা দেয়। তারা যুলহুলাইফায় পৌঁছে খেজুর খাওয়ার জন্য থামে। তখন আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহু দুই ব্যক্তির এক ব্যক্তিকে বললেন, হে অমুক! আল্লাহর শপথ, তোমার তরবারীটি উন্নতমানের মনে হচ্ছে! তখন অপরজন তা কোষমুক্ত করে বলল, হ্যাঁ, আল্লাহর শপথ! এটা খুব ভাল। আমি এটার ব্যাপারে বহু অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহু বললেন, আমাকে একটু এটা দেখতে দাও! সে তাকে এর সুযোগ দিল। ফলে তিনি তাকে আঘাত করে হত্যা করলেন। আর অপরজন পালিয়ে গেল।”
حَتَّى أَتَى الْمَدِينَةَ فَدَخَلَ الْمَسْجِدَ يَعْدُو فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَقَدْ رَأَى هَذَا ذُعْرًا فَلَمَّا انْتَهَى إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ قُتِلَ وَاللَّهِ صَاحِبِي وَإِنِّي لَمَقْتُولٌ
“সে মদীনায় এসে পৌঁছলো। অতঃপর দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে মসজিদে নববীতে প্রবেশ করল। তাকে দেখে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সে তো ভয়ার্ত। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকটে পৌঁছে সে বলল, আল্লাহর শপথ! আমার সাথীকে হত্যা করা হয়েছে, আমাকেও হত্যা করা হবে।”
এরপর আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহু এসে পৌঁছেন। ঐ সময় আবু বাছির (রাঃ), রাসুল (সাঃ)-কে কি বলেছেন? আর রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উত্তর কি ছিল? সেটা আমাদের এই আলোচনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
فَجَاءَ أَبُو بَصِيرٍ فَقَالَ يَا نَبِيَّ اللَّهِ قَدْ وَاللَّهِ أَوْفَى اللَّهُ ذِمَّتَكَ قَدْ رَدَدْتَنِي إِلَيْهِمْ ثُمَّ أَنْجَانِي اللَّهُ مِنْهُمْ
‘এরপর আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহু এসে বললেন, হে আল্লাহর নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ আপনার চুক্তিকে রক্ষা করেছেন। আপনি আমাকে তাদের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, অতঃপর আল্লাহ আমাকে তাদের হাত থেকে রক্ষা করেছেন’।
উল্লেখ্যঃ সহীহ বুখারী, সুনানে আবু দাউদ, সহীহ ইবনে হিব্বান, সুনান বায়হাকী, মুসান্নাফে আব্দুর রায্*যাক, মু’যাম আল কাবির ইত্যাদি সকল হাদিস গ্রন্থেই আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহু এর এই একই কথা এসেছে। কোন শব্দেরও হেরফের হয়নি।
এটা ছিল রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে এসে আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহু এর ২য় বার পালিয়ে এসে বলা কথা। তাহলে দেখা যাচ্ছে ২য় বার পালিয়ে এসে আবু বাছির (রাঃ)
- কোন জিহাদের আলোচনা করেন নি।
- রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে কোন জিহাদের অনুমতি প্রার্থনা করেন নি।
এরপর নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উত্তর ছিল এইঃ
فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَيْلُ أُمِّهِ مِسْعَرَ حَرْبٍ لَوْ كَانَ لَهُ أَحَدٌ
“তখন রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তার মায়ের জন্য আফসোস! (এটা আবেগ প্রকাশে আরবে প্রচলিত একটি কথা), এটা তো যুদ্ধের স্ফুলিংগ, তার জন্য যদি কেউ থাকতো”।
এই ছিল রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তর। উপরে উল্লেখিত সবগুলো হাদিসের কিতাবে একই কথা এসেছে, শুধু ইবনে হিব্বানে مِسْعَرَ حَرْبٍ কথাটা বাদ পরেছে।
فَلَمَّا سَمِعَ ذَلِكَ عَرَفَ أَنَّهُ سَيَرُدُّهُ إِلَيْهِمْ فَخَرَجَ حَتَّى أَتَى سِيفَ الْبَحْرِ
“এরপর আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহু এই কথা শুনে বুঝতে পারলেন যে উনাকে অচিরেই তাদের কাছে ফেরত দেয়া হবে, উনি বের হয়ে গেলেন এবং সিফাল বাহারে চলে গেলেন”।
তাহলে ডঃ সাইফুল্লাহ এর উপরুক্ত কথার ব্যাপারে বলা যায়ঃ
- হ্যাঁ, আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহু এর হিজরত করে মদীনায় যাবার ঘটনা রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে গ্রহন করেন নি। এর কারণ ছিল হুদাইবিয়ার চুক্তি।
- দুইবারই আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহুকে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফিরিয়ে দিয়েছেন। তবে সেটা ছিল উনার হিজরত করে মদীনার যাবার ব্যাপারে।
- পরবর্তীতে আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহুর জিহাদকে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গ্রহন করেন নি, এ রকম কোন ইশারা এই ঘটনায় পাওয়া যায় না।
- তাই ‘শাসক ছাড়া জিহাদের ডাক দেয়া যাবে না, এ ব্যাপারে ক্লিয়ার কাট এভিডেন্স রয়েছে কি?’ - এই প্রশ্নের উত্তরে আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহুকে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই বার ফিরিয়ে দেয়ার কথা উল্লেখ করার কোন যৌক্তিকতা নেই।
- আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহুকে দুইবার ফেরত দেয়ায় কিংবা রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর কথা গ্রহণ না করায় শাসক/খলিফা ছাড়া জিহাদ করা যাবে না বলে প্রমাণিত হয় না। বরং এই ঘটনা উল্লেখ করে এই দাবী করাই বাতিল ও বিভ্রান্তিকর বলে প্রমাণিত হবে। কারণ এটা ছিল মদীনায় আশ্রয় লাভের ব্যাপারে। আর এই ব্যাপারে হুদাইবিয়ার চুক্তির কারণে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অপারগ ছিলেন।
قَالَ وَيَتَفَلَّتُ أَبُو جَنْدَلِ بْنُ سُهَيْلٍ فَلَحِقَ بِأَبِي بَصِيرٍ فَجَعَلَ لَا يَخْرُجُ مِنْ قُرَيْشٍ رَجُلٌ قَدْ أَسْلَمَ إِلَّا لَحِقَ بِأَبِي بَصِيرٍ حَتَّى اجْتَمَعَتْ مِنْهُمْ عِصَابَةٌ قَالَ فَوَاللَّهِ مَا يَسْمَعُونَ بِعِيرٍ خَرَجَتْ لِقُرَيْشٍ إِلَى الشَّامِ إِلَّا اعْتَرَضُوا لَهَا فَقَتَلُوهُمْ وَأَخَذُوا أَمْوَالَهُمْ فَأَرْسَلَتْ قُرَيْشٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تُنَاشِدُهُ اللَّهَ وَالرَّحِمَ لَمَّا أَرْسَلَ إِلَيْهِمْ فَمَنْ أَتَاهُ فَهُوَ آمِنٌ فَأَرْسَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَيْهِمْ
“বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর আবু জান্দাল ইবনে সুহাইলও বের হয়ে আবু বাছিরের সাথে শরীক হন। এরপর কুরাইশের যে ব্যক্তিই ইসলাম গ্রহণ করে বেরিয়ে পড়ত, সেই আবু বাছিরের সাথে মিলিত হত। এমনকি তাদের একটি দল হয়ে যায়। বর্ণনাকারী বলেন, আল্লাহর শপথ! তারা যখনই কোন কুরাইশ কাফেলার শামের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার সংবাদ শুনতেন, তখনই তাদের পথ আটকাতেন। তাদেরকে হত্যা করতেন এবং তাদের সম্পদ নিয়ে নিতেন। ফলে কুরাইশরা অতিষ্ঠ হয়ে আল্লাহ ও আত্মীয়তার দোহাই দিয়ে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পত্র পাঠায়, যেন তিনি তাদেরকে মদীনায় ডেকে পাঠান। এরপর থেকে যে (মদীনায়) চলে আসবে, সে নিরাপদ। তাই রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে ডেকে পাঠালেন।”
সুবহানাল্লাহ, এখানে দেখা যাচ্ছে, এক দল সাহাবা রদিআল্লাহু আনহু একত্রিত হয়ে আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহু এর সাথে কুরাইশদের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ করেছেন।
তাহলে দেখা যাচ্ছে, একদল সাহাবা রদিআল্লাহু আনহুম একত্রে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবদ্দশায় যখন রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই ছিলেন মুসলিমদের শাসক, তাঁর অনুমতি কিংবা ঘোষণা ছাড়াই কুরাইশ কাফিরদের বিরুদ্ধে জিহাদ করেছেন।
এখন কেউ এই দাবীও করার সুযোগ নেই যে, রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই জিহাদের ঘোষণা দিয়েছেন কারণ তখন রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরাইশদের সাথে যুদ্ধ না করার চুক্তিতে আবদ্ধ ছিলেন।
আরেকটি ব্যাপার হলোঃ যদি আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহুর এই জিহাদ আল্লাহর রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অপছন্দনীয় হতো, তাহলে একদল সাহাবা রদিআল্লাহু আনহুম আজমাইন একত্রে আল্লাহর রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অপছন্দীয় কাজ দীর্ঘদিন ধরে করতে থাকলেন কীভাবে?
আর রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই পুরো সময়কালে নিরব থাকারই বা অর্থ কি? নিরব থাকার অর্থ কি এটা নয় যে, আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহু এর জিহাদী কার্যক্রমের ব্যাপারে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সমর্থন রয়েছে?
তাহলে আমরা দেখলামঃ
- আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহু এর গেরিলা জিহাদকে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গ্রহন করেন নি – এই কথার কোন ভিত্তি নেই।
- আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহুকে দুইবার মদীনা থেকে ফিরিয়ে দেয়ার কারণ ছিল হুদাইবিয়ার চুক্তি। এর সাথে আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহু এর গেরিলা জিহাদের কোন সম্পর্ক ছিল না।
- মক্কা থেকে পরবর্তীতে যারাই ইসলাম গ্রহন করতেন, তারাই আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহু এর ইসাবাতে শরীক হয়ে যেতেন। রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নও-মুসলিম সাহাবা রদিআল্লাহু আনহুমগণের এই কর্মকান্ডকে, আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহু এর গেরিলা জিহাদকে, তৎকালীন শাসক / খলিফার অনুমতি কিংবা ঘোষণা ছাড়া বরং স্বয়ং রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুমতি কিংবা ঘোষণা ছাড়া জিহাদকে নিষেধ করেন নি! বরং মৌনতা অবলম্বন করেছেন। আর রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের গোচরীভূত ব্যাপারে তাঁর মৌনতা অবলম্বন মানে সেটা অনুমোদিত।
উপরুক্ত এই কথাগুলো বুঝার পর, আমরা দেখবো যে, রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহু এর গেরিলা জিহাদকে, শাসকের / খলিফার ঘোষণা ছাড়া জিহাদকে বরং ইশারার মাধ্যমে (কুরাইশদের সাথে সন্ধির কারণে সরাসরি করেন নি) উৎসাহিত করেছেন। রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উৎসাহিত করেছেন তাঁর لَوْ كَانَ لَهُ أَحَدٌ কথার মাধ্যমে।
(১) ইবনে হাজার রহমাতুল্লাহি আলাইহি ফাতহুল বারীতে এই কথার ব্যাখ্যায় লিখেছেনঃ
قوله لو كان له أحد أي ينصره ويعاضده ويناصره وفي رواية الأوزاعي لو كان له رجال فلقنها أبو بصير فانطلق وفيه إشارة إليه بالفرار لئلا يرده إلى المشركين ورمز إلى من بلغه ذلك من المسلمين أن يلحقوا به - فتح الباري - ابن حجر
"যদি তাকে সাহায্য-সহযোগিতা ও শক্তি যোগনোর জন্য কেউ থাকতো। ইমাম আওযায়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর রেওয়ায়াতে এসেছে, “যদি তার পক্ষে কিছু লোক থাকতো! আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহু কথাটি বুঝে নিলেন। তাই তিনি চলে গেলেন”। এখানে আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহু এর জন্য ইশারা ছিল, যেন উনি পালিয়ে যান, যাতে উনাকে মুশরিকদের নিকট ফেরত দিতে না হয় এবং এই খবর যে সকল মুসলিমদের কাছে পৌঁছবে, তারা যেন তার সাথে গিয়ে মিলিত হন"।
সুবহানাল্লাহ!! দেখা যাচ্ছে, আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহু এর এই ঘটনায় ডঃ সাইফুল্লাহ আমাদেরকে এমন কথা বলছেন, যা ইবনে হাজার রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর ব্যাখ্যার পুরো উল্টো!! তাহলে আমরা এখন কোনটা গ্রহণ করবো??
(২) আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর উমদাতুল ক্বারীতে উল্লেখ করা হয়েছেঃ
قوله لو كان له أحد جواب لو محذوف أي لو فرض له أحد ينصره ويعاضده - عمدة القاري شرح صحيح البخاري
“‘তার জন্য যদি কেউ থাকত’ কথাটির বাকি অংশ উহ্য। পূর্ণ কথাটি হচ্ছে- তার জন্য যদি কেউ থাকত, যে তাকে সাহায্য করবে ও শক্তি যোগাবে।”
অর্থাৎ, আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ব্যাখ্যাও ডঃ সাইফুল্লাহর এই ভ্রান্ত দাবীর সম্পূর্ণ বিপরীত!!
(৩) ইবনে বাত্তাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি সহীহ বুখারীর ব্যাখায় একই রকম কথা বলেছেন। তিনি বলেনঃ
قوله: « لو كان له أحد » يعنى: من ينصره ويمنعه، ففهمها أبو بصير، وخرج إلى سيف البحر، وجعل يطلب غرة أهل مكة، وآذاهم حتى لحق به أبو جندل وجماعة، شرح البخاري لابن بطال
“অর্থাৎ, যে তাকে সাহায্য করবে ও রক্ষা করবে। আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহু কথাগুলো বুঝলেন এবং সিফাল বাহারে চলে গেলেন। আর মক্কাবাসীকে অতর্কিত আক্রমণ করে শাস্তি দিতে থাকেন। পরবর্তীতে আবু জান্দাল রদিআল্লাহু আনহুসহ এক দল (মুসলিম) তাঁর সাথে যুক্ত হন”।
তাহলে দেখা যাচ্ছে, ইবনে বাত্তাল রহমাতুল্লাহি আলাইহিও এই ঘটনাটিকে ডঃ সাইফুল্লাহ এর মতো বুঝেন নি। বরং আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহু এর প্রতি রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর একটি ইশারা হিসেবে দেখেছেন যার উপর আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহু আমল করেছেন। আর রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেখানে ইশারা করেছেন, সেখানে জিহাদকে গলদ ও বিভ্রান্তিকর বলে উল্লেখ করা কীভাবে যুক্তি-সংগত হতে পারে!?
পরিশেষে আমরা নজদদের অন্যতম ইমাম, শাইখ আব্দুর রহমান বিন হাসান রহমাতুল্লাহি আলাইহি (যিনি শাইখ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর নাতি) এর রিসালার একটি অংশ উল্লেখ করতে চাই। আব্দুর রহমান বিন হাসান রহমাতুল্লাহি আলাইহি ইবনে নাবহান এর বিভ্রান্তি (সে দাবী করেছিল, ইমাম / খলিফা ছাড়া জিহাদ নেই) রদ করতে গিয়ে আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহু এর ঘটনা আলোচনা করে বলেছেনঃ
لما جاء مهاجراً فطلبت قريش من رسول الله صلى الله عليه وسلم أن يرده إليهم، بالشرط الذي كان بينهم في صلح الحديبية، فانفلت منهم حين قتل المشركيْن، اللذين أتيا في طلبه. فرجع إلى الساحل لما سمع رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: ويل أمه مسعر حرب، لو كان معه غيره" فتعرض لعير قريش - إذا أقبلت من الشام - يأخذ ويقتل،
“তিনি হিজরত করে চলে আসলে কুরাশরা হুদায়বিয়ার সন্ধির শর্ত মোতাবেক রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট তাকে ফেরত দেওয়ার দাবি করে। তিনি তাকে খুঁজতে আসা দুই মুশরিককে হত্যা করে পালিয়ে যান। তিনি যখন শুনলেন, রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘এটা যুদ্ধের স্ফুলিং, তার সাথে যদি কেউ থাকত!’ তখন তিনি সমুদ্রোপকুলের দিকে চলে যান এবং কোন কোরাইশ কাফেলা শাম থেকে আসতে লাগলে তাদের পথ রোধ করতেন। তাদের মাল ছিনিয়ে নিতেন এবং তাদেরকে হত্যা করতেন।”
فاستقل بحربهم دون رسول الله صلى الله عليه وسلم، لأنهم كانوا معه في صلح - القصة بطولها. فهل قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: أخطأتم في قتال قريش، لأنكم لستم مع إمام؟ سبحان الله ما أعظم مضرة الجهل على أهله؟ عياذاً بالله من معارضة الحق بالجهل والباطل - الدرر السنية في الأجوبة النجدية ،
“তারা তাদের এই যুদ্ধে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে আলাদা / স্বাধীন ছিলেন, কারণ কুরাইশরা তখন রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ ছিল – এভাবে ঘটনার শেষ পর্যন্ত। তখন রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি এটা বলেছিলেন – তোমরা কুরাইশদেরকে হত্যা করে ভুল করেছো কারণ তোমরা ইমামের অধীনে নেই? সুবহানাল্লাহ, অজ্ঞতা মানুষের কি পরিমাণ ক্ষতি করে? আল্লাহর কাছে অজ্ঞতা ও বাতিলের মাধ্যমে সত্যের বিরোধিতা করা থেকে আশ্রয় চাই”। (আদ দুরার আস-সানিয়া)
তাই আমরা ডঃ সাইফুল্লাহ এর কাছে বিনীতভাবে জানতে চাই,
- আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহু এর ঘটনার ব্যাপারে আপনার বক্তব্যের সাথে উল্লেখিত ইমামদের ব্যাখ্যা ও উপলব্ধি মিলছে না – এখন আমরা কার কথাকে গলদ ও বিভ্রান্তিকর মনে করবো?
- রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহু ও উনার সাথীদেরকে এটা বলেছিলেন – তোমরা কুরাইশদেরকে হত্যা করে ভুল করেছো, কারণ তোমরা ইমাম / খলিফার অধীনে নেই?
আশা করি প্রশ্নগুলোর উত্তর দিবেন। এতে আমরা ও এদেশে আপনার দর্শক-শ্রোতা আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহু এর ঘটনার ব্যাপারে সঠিক ধারনা পাবেন ইনশাআল্লাহ।
প্রশ্ন ৩। ‘বর্তমানে মুসলিমরা খলিফা বা ইমাম নেই বলে কি ঈদ করা ছেড়ে দিবে? বাংলাদেশের মুসলিম জনগণ কোন খলিফা বা ইমামের অধীনে থেকে বংশ পরম্পরায় ঈদ পালন করছেন’?
উপরুক্ত আলোচনার ২০ মিনিট ২৫ সেকেন্ডের দিকে ডঃ সাইফুল্লাহ বলেছেনঃ
“জিহাদের যতগুলো পদ্ধতি তার মধ্যে একটি হচ্ছে, জিহাদ ঘোষণা হতে হবে এমন ব্যক্তির পক্ষ থেকে যিনি কেবলমাত্র মুসলমানদের ক্ষমতার অধিকারী। মুসলমানরা তার ক্ষমতার ব্যাপারে একমত হয়েছে। অর্থাৎ মুসলিম শাসক যার ইমামতির ব্যাপারে সমস্ত মুসলমানগণ, সেই প্রেক্ষাপটের মুসলমানগণ সবাই একমত হয়েছেন যে তিনি ইমাম, তিনি ঘোষনা করবেন জিহাদ। রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিহাদ ঘোষণা করেছেন। শুধু জিহাদ নয় বরং এ বিষয়ে শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি মাজমুয়া আল ফতোয়ার মধ্যে উল্লেখ করেছেন, তিনি বলেছেন যে,
‘মুসলমানদের ঈদ, জামাত, জুমুয়া, হজ্ব, সিয়াসা বা রাজনীতি এবং জিহাদ এইগুলো মূলত ইমাম এর দায়িত্ব’।
এছাড়া আলোচনার প্রশ্ন-উত্তর পর্বে ‘শাসক ছাড়া জিহাদের ডাক দেয়া যাবে না, এ ব্যাপারে ক্লিয়ার কাট এভিডেন্স রয়েছে কি?’ – এই প্রশ্নের জবাবেও (১ ঘন্টা ৫ মিনিট ৫০ সেকেন্ড) ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর একই উক্তি উল্লেখ করেছেন।
এখন আমরা মূলতঃ ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর কথাটি একটু বিস্তারিত দেখতে চাই। ডঃ সাইফুল্লাহর কোট করা কথার কয়েক লাইন আগে থেকে ঐ কথার কয়েক লাইন পর পর্যন্ত আমরা দেখতে চাই। যাতে ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর কথার অর্থ পুরোপুরি বুঝা যায় আর বাস্তবতা আমাদের সকলের সামনে পরিষ্কার হয়ে যায়। ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর কথাটি হচ্ছেঃ
وروى الإمام أحمد في المسند عن عبد الله بن عمرو أن النبي صلى الله عليه و سلم قال : [ لا يحل لثلاثة يكونوا بفلاة من الأرض إلا أمروا عليهم أحدهم ] فأوجب صلى الله عليه و سلم تأمير الواحد في الاجتماع القليل العارض في السفر تنبيها بذلك على سائر أنواع الاجتماع
ইমাম আহমদ তার মুসনাদে আব্দুল্লাহ বিন আমর রদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন, রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তিন জন ব্যক্তির জন্য বৈধ নয় নিজেদের মধ্যে একজনকে আমীর নিয়োজিত না করে দুনিয়ার কোন প্রান্তে সফর করা’। রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সফরে বের হওয়া ছোট্ট জামাতের জন্যও একজনকে আমীর নিয়োজিত করা ওয়াজিব করেছেন। এ থেকে অন্য সকল ধরনের ইজতিমার জন্যও এর গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায়।
ولأن الله تعالى أوجب الأمر بالمعروف والنهى عن المنكر ولا تتم ذلك إلا بقوة وإمارة
এছাড়া আল্লাহ তায়ালা সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ-কাজে নিষেধকে ওয়াজিব করেছেন এবং এটা শক্তি ও নেতৃত্ব ছাড়া সম্পন্ন করা যায় না।
وكذلك سائر ما أوجبه من الجهاد والعدل وإقامة الحج والجمع والأعياد ونصر المظلوم وإقامة الحدود لا تتم إلا بالقوة والإمارة
একইভাবে এ ধরনের যত ব্যাপার আছে যা আল্লাহ ওয়াজিব করেছেন যেমনঃ জিহাদ, ন্যায় প্রতিষ্টা, হজ্ব, জুম’আ, ঈদ, মজলুমদের সাহায্য, হুদুদ প্রতিষ্টা – এগুলো শক্তি ও নেতৃত্ব ছাড়া সম্পন্ন করা যায় না।
ولهذا روى :[أن السلطان ظل الله في الأرض] ويقال : [ستون سنة من إمام جائر أصلح من ليلة بلا سلطان] -السياسة الشرعية[1/217]
এ কারণেই বলা হয়ঃ ‘সুলতান হচ্ছেন পৃথিবীতে আল্লাহর ছায়া’। আরো বলা হয়ঃ ‘সুলতান ছাড়া এক রাত থেকে অত্যাচারী ইমামের অধীনে ষাট বছরও উত্তম”। - সিয়াসাতুশ শরীয়াহ (পৃষ্টা ১)
এই হচ্ছে ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহির সেই কথা – যা ডঃ সাইফুল্লাহ এই আলোচনায় জিহাদের জন্য ইমাম অনুমতি ও ঘোষণার শর্তের পক্ষে দলীল হিসেবে উল্লেখ করেছেন!!
গভীরভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায়ঃ
১। ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি এই কথাটি আসলে লিখেছেন তার সিয়াসাতুশ শরীয়াহ কিতাবের একদম শুরুর দিকে, ২১৭ পৃষ্টার বই এর একেবারে ১ম পৃষ্টার ১ম প্যারায়। ২১৭ পৃষ্টার কোন বই এর ১ম পাতার ১ম প্যারায়ই কেউ কোন একটি বিষয়ে ফতোয়া প্রদান করার কথা না। জিহাদের জন্য ইমাম বা খলিফা শর্ত কিনা তাও লেখার কথা না। বরং যেকোন কিতাবের প্রথমে সাধারণ কিছু ভূমিকা থাকে, যা বই এর মূল আলোচ্য বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট। আর এই কিতাবের বিষয় যেহেতু ইসলামী সিয়াসাত, তাই শুরুতেই নেতৃত্বের ব্যাপারে ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি হাদিস উল্লেখ করে এর গুরুত্ব বুঝানোর চেষ্টা করেছেন।
২। উল্লেখিত কথাটিও খুবই ব্যাপক একটা কথা। এখানে তিনি সফরে তিন ব্যক্তির আমীর নির্ধারণ করার হাদিস উল্লেখ করে ব্যাপকভাবে যে কোন জামায়াতের জন্য আমীর থাকার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। কেউ এই এক লাইন থেকে এই দাবী করা হাস্যকর হবে যে, জিহাদের জন্য একজন খলিফা বা ইমাম থাকা শর্ত।
৩। যদি ডঃ সাইফুল্লাহ ইবনে তাইমিয়ার এই কথা থেকে এই দাবী করেন, এই কথার মধ্যে জিহাদের জন্য একজন ইমাম থাকাকে ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি শর্ত করেছেন, তাহলে প্রশ্ন আসবেঃ
- তাহলে ঈদের ব্যাপারেও তো একই লাইনে বলা আছে। তাহলে বর্তমানে কি মুসলিমরা খলিফা বা ইমাম নাই বলে ঈদ করা ছেড়ে দিবে? আপনি কি বাংলাদশে ঈদ পালন করেন না? বাংলাদেশের মুসলিম জনগণ কোন খলিফা বা ইমামের অধীনে থাকায় বংশ পরম্পরায় ঈদ পালন করছেন?
- হজ্জ্ব এর ব্যাপারেও একই কথা আসবে। এখন মুসলিমদের খলিফা / ইমাম নাই দেখে কি মুসলিমরা হজ্ব করা ছেড়ে দিবে? হজ্বের জন্যও কি একজন খলিফা / ইমাম থাকা শর্ত? বর্তমানে কোন খলিফা / ইমামের অধীনে হজ্জ্ব অনুষ্ঠিত হয়? নাকি এই হজ্জ্বগুলো সবই বাতিল বলে গন্য হবে?
- জুম’আর ক্ষেত্রেও কি এই শর্ত আসবে না? এখন মুসলিমদের খলিফা / ইমাম নাই দেখে কি মুসলিমরা জুম’আ আদায় করা ছেড়ে দিবে? জুম’আর জন্যও কি একজন খলিফা / ইমাম থাকা শর্ত? বর্তমানে কোন খলিফা / ইমামের অধীনে জুম’আ অনুষ্ঠিত হয়? নাকি এই জুম’আগুলো সবই বাতিল বলে পরিগণিত হবে? আপনারা যে ঢাকার বিভিন্ন মসজিদে জুমার নামাজ পড়ান তা কিসের ভিত্তিতে?
৪। বরং ইবনে তাইমিয়ার রহমাতুল্লাহি আলাইহির এই কথার ব্যাখ্যা এর আগের লাইনেই আছে যেখানে তিনি বলেছেনঃ ‘রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাধারণ সফরে বের হওয়া ছোট্ট জামাতের জন্যও একজনকে আমীর নিয়োজিত করা ওয়াজিব করেছেন। এ থেকে অন্য সকল ধরনের ইজতিমার জন্যও এর গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায়’।
অর্থাৎ সাধারণভাবে সকল জামাতে একজন আমীর থাকা প্রয়োজন। আমীরের অধীনে মুসলিমরা থাকা প্রয়োজন। তাই কেউ এই লাইন থেকে শিক্ষা নিলে এটা বলতে পারে যে, সকল জমায়াতে যেন আমীর নিয়োগ দেয়া হয়। হজ্বেও যেন আমীর নিয়োগ দেয়া হয়। সেই আমীরের অধীনে হজ্ব হবে। ঈদও যেন একটা নেতৃত্বের অধীনে হয়। জিহাদেও মুজাহিদরা যেন একজন আমীর নিয়োগ দিয়ে কাজ করেন। কারণ তিনজন সফরে গেলে আমীর নিয়োগ দেয়ার কথা। তাহলে জিহাদের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতে অবশ্যই আমীর নিয়োগ দেয়া উচিত। এই কথা বললে, সেটা একটা যুক্তি-সংগত কথা হতো। আর সকলেই জানেন, আলহামুদলিল্লাহ দুনিয়ার যে কোন প্রান্তের জিহাদী তানজীমই তাদের মধ্যে আমীর নির্ধারন করে থাকেন।
এ কারণেই ইমাম আব্দুর রহমান বিন হাসান রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন,
كل من قام بالجهاد في سبيل الله فقد أطاع الله وأدى ما فرضه الله ولا يكون الإمام إماماً إلا بالجهاد إلا أنه لا يكون جهاد إلا بإمام-الدرر السنية 7/97
‘প্রত্যেক ব্যক্তি যে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর জন্য দাঁড়িয়ে গেল, সে আল্লাহর আনুগত্য করল এবং আল্লাহ যা ফরজ করেছেন তা আদায় করল। জিহাদ ছাড়া কোন ইমাম, ইমামই হতে পারে না, যদিও জিহাদও ইমাম ছাড়া করা যায় না।’
ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর কথাটি আব্দুর রহমান বিন হাসান রহমাতুল্লাহি আলাইহির কথার আলোকে বুঝলে আশা করি সবার কাছে তা পরিষ্কার হবে। আর এ ব্যাপারে সবাই অবগত যে মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব ও নজদের আলেমগণ ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহির কিতাবগুলো খুবই বিস্তারিতভাবে অধ্যয়ন করেছেন এবং উনাদের উপর ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর চিন্তাধারা খুবই প্রভাব বিস্তার করেছিল।
৫। এর থেকেও উল্লেখযোগ্য কথা হলোঃ ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি এখানে সুষ্পষ্টভাবে এই কথা উল্লেখ করেন নি যে,
‘জিহাদের জন্য একজন ইমাম কিংবা খলিফা থাকা শর্ত’ - যা সাইফুল্লাহ প্রমাণ করতে চেয়েছেন। এখানে ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর আলোচনার বিষয়বস্তুও জিহাদ ছিল না। এখানে তিনি জিহাদের শর্তাবলী আলোচনাও করছিলেন না। তাই এ রকম কোন সাধারণ আলোচনার একটি লাইন উল্লেখ করে সেটাকে জিহাদের জন্য একটি শর্ত হিসেবে দেখনো বুদ্ধিবৃত্তিক চৌর্যবৃত্তির নামান্তর হবে কিংবা সেটি হবে দ্বীনের একটি বিধানের ব্যাপারে নিজ অনুসারীদেরকে ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল পথে দেখানো। আল্লাহু আ'লাম।
৬। আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলোঃ ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি যেখানে জিহাদের আলোচনা করেছেন সেখানে বরং প্রতিরক্ষামূলক জিহাদে কোন ধরনের শর্ত নেই বলে সুষ্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন। ফাতওয়াতুল কুবরা এর কিতাবুল জিহাদে ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেনঃ
وَأَمَّا قِتَالُ الدَّفْعِ فَهُوَ أَشَدُّ أَنْوَاعِ دَفْعِ الصَّائِلِ عَنْ الْحُرْمَةِ وَالدِّينِ فَوَاجِبٌ إجْمَاعًا فَالْعَدُوُّ الصَّائِلُ الَّذِي يُفْسِدُ الدِّينَ وَالدُّنْيَا لَا شَيْءَ أَوْجَبَ بَعْدَ الْإِيمَانِ مِنْ دَفْعِهِ فَلَا يُشْتَرَطُ لَهُ شَرْطٌ بَلْ يُدْفَعُ بِحَسَبِ الْإِمْكَانِ-الفتاوى الكبرى
“আর প্রতিরোধমূলক যুদ্ধ হচ্ছে মুসলমানদের সম্মান ও দ্বীন রক্ষার জন্য আগ্রাসীকে প্রতিহত করার সবচেয়ে কঠিন প্রকার। এটা সর্বসম্মতিক্রমে ওয়াজিব। সুতরাং ঈমানের পর দ্বীন ও দুনিয়া ধ্বংসকারী আগ্রাসী শত্রুকে প্রতিহত করার চেয়ে বড় ফরজ কিছু নেই। এর জন্য কোন শর্ত নেই। বরং সামর্থ অনুযায়ী প্রতিরোধ করতে হবে”।
প্রশ্ন হচ্ছেঃ জিহাদের জন্য ইমাম থাকা শর্ত কিনা এই ব্যাপারে শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহির এরকম অনেক সুষ্পষ্ট বক্তব্য বাদ দিয়ে কেন একটি আ’ম বক্তব্যকে ডঃ সাইফুল্লাহ নিজ বিভ্রান্তিকর দাবীর পক্ষে প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরলেন?
৭। ইমাম ইবনুল কায়্যিম রহমাতুল্লাহি আলাইহি যাদুল মা’য়াদ কিতাবে হুদাইবিয়ার সন্ধি থেকে কিছু ফিকহী উপকারিতা অধ্যায়ে আলোচনায় বলেছেনঃ
ومنها : أن المعاهدين إذا عاهدوا الإمام فخرجت منهم طائفة فحاربتهم وغنمت أموالهم ولم يتحيزوا إلى الإمام لم يجب على الإمام دفعهم عنهم ومنعهم منهم وسواء دخلوا في عقد الإمام وعهده ودينه أو لم يدخلوا والعهد الذي كان بين النبي صلى الله عليه و سلم وبين المشركين لم يكن عهدا بين أبي بصير وأصحابه وبينهم وعلى هذا فإذا كان بين بعض ملوك المسلمين وبعض أهل الذمة من النصارى وغيرهم عهد جاز لملك آخر من ملوك المسلمين أن يغزوهم ويغنم أموالهم إذا لم يكن بينه وبينهم عهد كما أفتى به شيخ الإسلام في نصارى ملطية وسبيهم مستدلا بقصة أبي بصير مع المشركين -زاد المعاد - ابن القيم الجوزية 3/267
“এর মধ্যে এটাও রয়েছে যে, যখন চুক্তিবদ্ধ গোষ্ঠী খলিফা/ইমাম এর সাথে চুক্তি করে, এরপর কোন তয়িফা তাদের (চুক্তিবদ্ধগোষ্টী) থেকে বের হয়ে যায়, এরপর তাদের সাথে যুদ্ধ করে এবং তাদের মালামাল থেকে গনীমাত অর্জন করে এবং তারা ইমামের দিকে না আসে, তাহলে ইমামের জন্য জরুরী নয় যে, তাদেরকে চুক্তিবদ্ধ গোষ্টী থেকে নিরাপত্তা দেয়া অথবা চুক্তিবদ্ধ গোষ্টীকে ঐ তয়িফার ব্যাপারে (কার্যক্রম গ্রহণ করতে) বাঁধা দেয়া। এই ক্ষেত্রে তারা (ঐ তয়িফা) ইমামের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হোক বা না হোক, প্রতিশ্রুতি দিক বা না দিক ও দ্বীনে প্রবেশ করুক বা না করুক - তা সমান হবে। আর নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও মুশরিকদের মধ্যে যে চুক্তি ছিল, আবু বাসির রদিআল্লাহু আনহু ও তার সাথীদের সাথে মুশরিকদের ঐ চুক্তি ছিল না। এর উপর ভিত্তি করে বলা যায়, কোন রাজা যদি খ্রীষ্টান অথবা অন্য কোন আহলু জিম্মার সাথে চুক্তি করে, অন্য কোন মুসলিম রাজার জন্য তাদেরকে আক্রমণ করা ও তাদের মাল থেকে গনীমাত নেয়া জায়েজ রয়েছে যদি তাদের সাথে কোন চুক্তি না থাকে। মুশরিকদের সাথে আবু বাসির রদিআল্লাহু আনহু এর এই ঘটনা উপর ভিত্তি করে শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি মাল্টা এর খ্রীষ্টানদের ব্যাপারে ও তাদেরকে বন্দী করার ব্যাপারে ফতোয়া দিয়েছেন”।
তাহলে দেখা যাচ্ছে, বাস্তবে ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি আবু বাসির রদিআল্লাহু আনহু এর ঘটনার উপর ভিত্তি করে ফতোয়া দিয়েছেন। সেই ফতোয়ার ভিত্তি হচ্ছেঃ আবু বাসির রদিআল্লাহু আনহু, রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অধীনস্ত না থেকে জিহাদ করেছেন। অর্থাৎ, আবু বাসির রদিআল্লাহু আনহু এর এই জিহাদ যে সঠিক ছিল, সেটা ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি গ্রহন করেছেন। শুধু গ্রহন করেই ক্ষান্ত হন নি, এর উপর ভিত্তি করে ফতোয়াও দিয়েছেন।
একইভাবে এই ব্যাপারে শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর অবস্থান জানা ও একই রকম অবস্থান রাখার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশী রয়েছে উনার অন্যতম ছাত্র ইমাম ইবনুল কায়্যিম রহমাতুল্লাহি আলাইহির। সেই ইবনুল কাইয়্যিম রহমাতুল্লাহি আলাইহি হুদাইবিয়ার সন্ধি থেকে শিক্ষা বের করেছেনঃ
“এর মধ্যে এটাও রয়েছে যে, যখন চুক্তিবদ্ধ গোষ্টী খলিফা/ইমাম এর সাথে চুক্তি করে, এরপর কোন তয়িফা তাদের (চুক্তিবদ্ধগোষ্টী) থেকে বের হয়ে যায়, এরপর তাদের সাথে যুদ্ধ করে এবং তাদের মালামাল থেকে গনীমাত অর্জন করে এবং তারা ইমামের দিকে না আসে, তাহলে ইমামের জন্য জরুরী নয় যে, তাদেরকে চুক্তিবদ্ধ গোষ্টী থেকে নিরাপত্তা দেয়া অথবা চুক্তিবদ্ধ গোষ্টীকে ঐ তয়িফার ব্যাপারে (কার্যক্রম গ্রহণ করতে) বাঁধা দেয়া”।
বলার অপেক্ষা রাখে না, এই তয়িফা মুসলিম হলে তারা জিহাদ করবে, খলিফা এর অধীনস্থ না থেকেই। যা আবু বাসির রদিআল্লাহু আনহু এর ক্ষেত্রে হয়েছিল। তাহলে ইবনুল কায়্যিম রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর অবস্থানও এই ক্ষেত্রে ডঃ সাইফুল্লাহ এর অবস্থান এর সম্পূর্ণ বিপরীত!
এখন আমরা জিহাদের জন্য শাসক বা খলিফার অনুমতি কিংবা ঘোষণা দেয়ার শর্তের ব্যাপারে ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি অবস্থান কোনটা ধরে নিবো? ডঃ সাইফুল্লাহ এর উল্লেখকৃত অবস্থান নাকি ইবনুল কায়্যিম রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর উল্লেখকৃত অবস্থান?
তাই আমরা ডঃ সাইফুল্লাহ এর কাছে বিনীতভাবে জানতে চাই,
o বর্তমানে কি মুসলিমগণ খলিফা / ইমাম নাই বলে ঈদ করা ছেড়ে দিবে? বাংলাদেশের মুসলিম জনগণ কোন খলিফা / ইমামের অধীনে থেকে বংশ পরম্পরায় ঈদ পালন করছেন?
o ‘জিহাদের জন্য একজন ইমাম কিংবা খলিফা থাকা শর্ত’ – এ রকম কোন কথা শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি কোথাও হুবহু উল্লেখ করেছেন কিনা?
o জিহাদের জন্য ইমাম থাকা শর্ত কিনা এই ব্যাপারে শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর একটি সুষ্পষ্ট বক্তব্য বাদ দিয়ে কেন আমরা একটি আ’ম বক্তব্যকে উনার অবস্থান হিসেবে ধরে নিবো?
o আমরা আলোচ্য বিষয়ে ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর অবস্থান কোনটা ধরে নিবো – আপনার উল্লেখকৃত অবস্থান নাকি ইবনুল কায়্যিম রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর উল্লেখকৃত অবস্থান?
আশা করি এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিবেন। এতে আমরা ও এদেশে আপনার দর্শক-শ্রোতা আবু বাছির রদিআল্লাহু আনহু এর ঘটনার ব্যাপারে সঠিক ধারনা পাবেন ইনশাআল্লাহ।
প্রশ্ন ৪। রাশিয়ার বিরুদ্ধে আফগান জিহাদের ঘোষণা কোন খলিফা দিয়েছিলেন যে কারণে আপনারা আফগানে রাশিয়ার বিরুদ্ধে জিহাদকে সহীহ বলেন কিন্তু আফগানে আমেরিকার বিরুদ্ধে জিহাদ সহীহ হচ্ছে না?
১। উপরুক্ত আলোচনার ৫৯ মিনিটে ডঃ সাইফুল্লাহ বলেছেনঃ
“(আফগানিস্তানে) প্রথমে একক নেতৃত্বে পৌঁছে জিহাদ শুরু করেছেন। কিন্তু পরবর্তীতে ফিতনা সেখানে তৈরী হয়েছে। এই ফিতনার মাশুল তাদেরকে আজো দিতে হচ্ছে। কিন্তু প্রথমে কিন্তু তারা একক নেতৃত্বেই জিহাদ করেছে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে যখন জিহাদ করেছে তারা একক নেতৃত্ব করেছে। এবং সেটা ছিল রাশিয়ার একটা আক্রমণ। তাদের বিরুদ্ধে একটা বড় আক্রমণ। এবং সেই আক্রমণ প্রতিহত করা মুসলমানদের একটা বড় দায়িত্বের মধ্যে একটা ছিল। এবং মুসলমানরা ইচ্ছাকৃতভাবে সেই আক্রমণকে প্রতিহত করার জন্য চেষ্টা করেছেন। ফলে এটাকে জিহাদ ঘোষণা দিয়েছেন উলামায়ে কেরাম। এবং এটা জিহাদই হয়েছে আসলে। কোন সন্দেহ নেই, এটা জিহাদ হয়েছে। এবং আমরা দেখেছি যে, এই জিহাদের একটা রেজাল্টও এসেছে”।
অন্যদিকে আলোচনার ২০ মিনিট ২৫ সেকেন্ডের দিকে ডঃ সাইফুল্লাহ বলেছেনঃ
“জিহাদের যতগুলো পদ্ধতি তার মধ্যে একটি হচ্ছে, জিহাদ ঘোষণা হতে হবে এমন ব্যক্তির পক্ষ থেকে যিনি কেবলমাত্র মুসলমানদের ক্ষমতার অধিকারী। মুসলমানরা তার ক্ষমতার ব্যাপারে একমত হয়েছে। অর্থাৎ মুসলিম শাসক যার ইমামতির ব্যাপারে সমস্ত মুসলমানগণ, সেই প্রেক্ষাপটের মুসলমানগণ সবাই একমত হয়েছেন যে তিনি ইমাম, তিনি ঘোষনা করবেন জিহাদ”।
তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছিঃ
- একদিকে তিনি দাবী করছেন, জিহাদ ঘোষণা হতে হবে এমন মুসলিম শাসক এর পক্ষ থেকে যার ইমামতির ব্যাপারে সমস্ত মুসলমানগণ, সেই প্রেক্ষাপটের মুসলমানগণ সবাই একমত হয়েছেন যে তিনি ইমাম, তিনি ঘোষনা করবেন জিহাদ।
- আবার অন্যদিকে তিনি বলেছেনঃ রাশিয়ার বিরুদ্ধে আফগানিস্তানের জিহাদকে ‘জিহাদ হিসেবে’ ঘোষণা দিয়েছেন উলামায়ে কেরাম। ‘এবং এটা জিহাদই হয়েছে আসলে’। আর বাস্তবে বিন বাজের নেতৃত্ব ইসলামিক ফিকহ কাউন্সিল আফগান জিহাদকে শরয়ী জিহাদ বলে ঘোষণা দিয়েছে। এই ফতোয়াতে ঐক্যবদ্ধভাবে সাক্ষর করেছেনঃ
o বিন বাজ।
o বকর আব্দুল্লাহ আবু জায়েদ।
o সালেহ ইবনে ফাওযান।
o ইবনে আব্দুল্লাহ আল সুবাইলী।
o আবুল হাসান আলী নদভী।
এছাড়া আলাদাভাবে আরো অনেক আলেম আফগান জিহাদকে শরয়ী ভাবে বৈধ একটি জিহাদ ঘোষণা দিয়ে এতে সহযোগিতা করার জন্য মুসলিম উম্মাহকে আহবান জানিয়েছেন।
আর এটি সকলেই জানে যে, আফগানিস্তানে বিভিন্ন দলীয় কোন্দল অনেক আগে থেকেই ছিল। এমনকি রাশিয়ার বিরুদ্ধে জিহাদেও বিভিন্ন দল বিভিন্ন উদ্দেশ্য নিয়ে যুদ্ধ করেছে। আরব মুজাহিদগণসহ উসামা রহমাতুল্লাহি আলাইহি কখনোই আমেরিকার কোন সাহায্য নেন নি – যা সিআইএ এর বিন লাদেন ইউনিট এর প্রধানের সাক্ষাতকার থেকেও প্রমাণ হয়েছে। আহমাদ শাহ মাসউদের দলকে আমেরিকা সর্বাত্বক সাহায্য-সমর্থন দিয়েছিল। গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ারের গ্রুপ আলাদা ছিল, বুরহানুদ্দিন রব্বানী এর গ্রুপও আলাদা কাজ করেছে। জালালুদ্দিন হাক্কানী এর গ্রুপও আলাদাভাবে ছিল।
এখন প্রশ্ন হচ্ছেঃ
ক) রাশিয়ার বিরুদ্ধে আফগানিস্তানের এই বৈধ জিহাদকে কোন খলিফা/ইমাম- ‘জিহাদ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন?
খ) ঐ সময় কি মুসলিম উম্মাহ কোন খলিফার অধীনে ছিল?
গ) তখন কি আফগানিস্তান কোন খলিফার অধীনে ছিল, যিনি ‘শরয়ী ভাবে বৈধ এই জিহাদ’ ঘোষণা দিয়েছিলেন?
ঘ) আফগান জিহাদ কি এমন কোন মুসলিম শাসকের তরফ থেকে ‘জিহাদ হিসেবে ঘোষণা’ দেয়ার পর শুরু হয়েছিল, যার ইমামতির ব্যাপারে সমস্ত মুসলমানগণ, সেই প্রেক্ষাপটের মুসলমানগণ সবাই একমত হয়েছেন যে তিনি ইমাম?
ঙ) রাশিয়ার বিরুদ্ধে আফগানিস্তানের জিহাদে কে ছিল সেই একক নেতা প্রথম দিকে যার ‘একক নেতৃত্বে পৌঁছে জিহাদ শুরু’ হয়েছিল? কোন কোন গ্রুপ সেই একক নেতার অধীনে ছিল? পরবর্তীতে কবে, কিভাবে সেই নেতার ‘একক নেতৃত্ব’ বিনষ্ট হয়েছিল? একটু বিস্তারিত জানাবেন।
২। একইভাবে আলোচনার ৫১ মিনিট ২৩ সেকেন্ডের দিকে ডঃ সাইফুল্লাহ বলেছেন,
“এজন্য কেউ কেউ আব্দুর রহমান ইবনে হাসান রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে এই বর্ণনা উল্লেখ করেছেন। যে বর্ণনাটা গলদ। আব্দুর রহমান ইবনে হাসান আলে রহমাতুল্লাহি আলাইহি তার থেকে কেউ কেউ উল্লেখ করেছেন যে, তিনি বলেছেন জিহাদে দফ্* এর জন্য ইমামের অনুমতির দরকার নেই। আরে ইমামের অনুমতির দরকার নেই - জিহাদ এর ঘোষণা করলো কে? যদি কেউ ঘোষণা করতো তাহলে জিহাদ হতো। ঠিক কিনা? ঘোষণাই তো হয় নাই। যদি ইমাম জিহাদ ঘোষণা করলে তাহলে ঠিক আছে। وإذا استنفرتم فانفروا বুখারী শরীফে এসেছে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন তোমাদের বেরিয়ে যাবার জন্য আহবান করা হয়, তখন বেরিয়ে যাও’। যদি ইমাম জিহাদ ঘোষণা করলে তাহলে ঠিক আছে। তাহলে জিহাদ এ দফ এর জন্য সবাই বেরিয়ে যাবে। তখন আর অনুমতির দরকার নেই। ...... কিন্তু যদি জিহাদই ঘোষণা না হয়, সেখানে অনুমতির মাসআলা আসবে না। সেখানে মাসআলা আসবে, জিহাদ ঘোষনা করেছে কে? কেউ যদি জিহাদের ঘোষণা না করে, তাহলে সেই জিহাদে অংশগ্রহন করা মূলতঃ মুসলিমদের কাজ নয়”।
এছাড়া আলোচনার ৫০ মিনিট ১৮ সেকেন্ডে ডঃ সাইফুল্লাহ বলেছেনঃ
“জিহাদে তলব এর জন্য যেভাবে (খলিফার অনুমতি কিংবা ঘোষণা) শর্ত, জিহাদে দফ্ এর জন্য তেমনিভাবে শর্ত”।
আমরা বিনীতভাবে ডঃ সাইফুল্লাহর কাছে জানতে চাই,
ক) রাশিয়ার বিরুদ্ধে যে জিহাদকে আপনি শরয়ীেভাবে বৈধ জিহাদ বলে দাবী করেছেন, এবং বলেছেন, ‘এবং এটা জিহাদই হয়েছে আসলে। কোন সন্দেহ নেই, এটা জিহাদ হয়েছে’ – এই জিহাদ ঘোষণা করলো কে?
খ) রাশিয়ার বিরুদ্ধে যে জিহাদকে আপনি শরয়ীিভাবে বৈধ জিহাদ বলে দাবী করেছেন, এবং বলেছেন, ‘এবং এটা জিহাদই হয়েছে আসলে। কোন সন্দেহ নেই, এটা জিহাদ হয়েছে’ – এই জিহাদ ঘোষণা করলেন কোন সেই ইমাম? কোন সেই খলিফা?
গ) যদি আফগানিস্তানের জিহাদের ঘোষণা কোন খলিফা / ইমাম না দিয়ে থাকেন, তাহলে আপনার ভাষ্য অনুযায়ী সেই জিহাদে অংশগ্রহন করা মূলতঃ মুসলিমদের কাজ ছিল না। তাহলে উপর্যুক্ত সৌদি উলামাগণ এইভাবে আফগান জিহাদে শরীক হবার জন্য তখন আহবান জানিয়ে ছিলেন কেন?
৩। আলোচনার ৪৯ মিনিট ৫ সেকেন্ডে এক প্রশ্নের উত্তরে ডঃ সাইফুল্লাহ বলেছেন,
‘আফগানিস্তানের জিহাদকে আমিও জিহাদ বলেছি। ঠিক আছে, ফিলিস্তিনের জিহাদকে আমিও জিহাদ বলেছি। কিন্তু আমি বলেছি যে আফগানিস্তানের জিহাদ পরবর্তীতে ফিতনায় রুপান্তরিত হয়েছে। প্রথমে জিহাদ ছিল কিন্তু সেটা পরবর্তীতে ফিতনায় রুপান্তরিত হয়েছে। ফিলিস্তিনের জিহাদ প্রথমে জিহাদ ছিল, জিহাদের আকারে শুরু হয়েছিল, উলামায়ে কেরাম সাপোর্ট করেছেন, কিন্তু পরে সেটা ফিতনায় রুপান্তরিত হয়েছে। যেহেতু সেটা কোন ধরনের দিক নির্দেশনা বা মানহাজে পরিচালিত হয়নি’।
এখন প্রশ্ন হচ্ছেঃ
ক) শুরুর দিকে ফিলিস্তিনের ঐ বৈধ জিহাদকে কোন খলিফা/ইমাম- ‘জিহাদ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন?
খ) ঐ সময় কি মুসলিম উম্মাহ কোন খলিফার অধীনে ছিল?
গ) তখন কি ফিলিস্তিনের কোন খলিফার অধীনে ছিল, যিনি ‘শরয়ী ভাবে বৈধ এই জিহাদ’ ঘোষণা দিয়েছিলেন?
ঘ) ফিলিস্তিনের জিহাদ কি এমন কোন মুসলিম শাসকের তরফ থেকে ‘জিহাদ হিসেবে ঘোষণা’ দেয়ার পর শুরু হয়েছিল, যার ইমামতির ব্যাপারে সমস্ত মুসলমানগণ, সেই প্রেক্ষাপটের মুসলমানগণ সবাই একমত হয়েছেন যে তিনি ইমাম?
৪। আলোচনার ৩৩ মিনিট ৯ সেকেন্ডে ডঃ সাইফুল্লাহ বলেনঃ
“আর এই দুঃখ আমি বলে শেষ করতে পারবো না সেটা হচ্ছে, আফগানিস্তানের দেখুন জিহাদ হয়েছে কিন্তু জিহাদ রেজাল্ট নিয়ে আসতে পারে নাই। আজ পর্যন্ত কোন রেজাল্ট নিয়ে আসতে পারে নাই। ইরাকে দেখুন, আজ পর্যন্ত কোন রেজাল্ট আসেনি। আজ পর্যন্ত কোন রেজাল্টে পৌছতে পারে নাই। এই না পৌছার কারণ একটাই সেটা হচ্ছে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে মানহাজ দেখিয়েছেন সেই মানহাজকে ফলো করা হয় নি। সে কর্মনীতিকে অনুসরণ করা হয় নি। সেই কর্মনীতিকে যদি অনুসরণ করা হতো, তাহলে সেখানে সত্যিকার অর্থে একটা রেজাল্টে চলে আসতো”।
ডঃ সাইফুল্লাহর কাছে আমরা জানতে চাইঃ
- আপনার দৃষ্টিতে ফিলিস্তিন কিংবা আফগান জিহাদ প্রথমে শরয়ীভাবে বৈধ হলেও পরবর্তীতে মুজাহিদগণ কি কি কাজ করার কারণে সেটা আর শরয়ীেভাবে বৈধ থাকে নি? ফিতনায় রুপান্তরিত হয়েছে? দয়া করে বিস্তারিত দলীল-প্রমাণসহ জানাবেন।
- কোন সেই দিক-নির্দেশনা বা মানহাজ যে ফিলিস্তিন কিংবা আফগান জিহাদের মুজাহিদগণ প্রথমে মেনে চলেছেন, তাই প্রথমে সেই জিহাদগুলো শরইয়ীভাবে সহীহ ছিল? পরবর্তীতে সেটা না মানার কারণে তা শরয়ীভাবে বৈধ জিহাদ থেকে ফিতনাতে রুপান্তরিত হয়েছে?
আশা করি ডঃ সাইফুল্লাহ এবং উনার সমমনা একই মতামতধারীগণ এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিবেন। এতে এদেশে আপনাদের দর্শক-শ্রোতা এই ব্যাপারে সঠিক ধারনা পাবেন ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সকলকে হক্বকে হক্ব হিসেবে দেখার তৌফিক দিন আর বাতিলকে বাতিল হিসেবে দেখার তৌফিক দান করুন। আমীন।
নোট - যে কোন ভাই / বোন চাইলে এই পোস্টের পূর্ণ বা আংশিক যে কোন অংশ দ্বীনি এর কল্যাণে ব্যবহার করতে পারেন। চাইলে পরিমার্জন, পরিবর্ধনও করা যাবে।
Comment