আত–তিবইয়ান পাবলিকেসন্স পরিবেশিত
“জিহাদেঅংশগ্রহণ এবংসহায়তার৩৯টিউপায়”।।
মুহাম্মাদ বিন আহমাদ আস-সালিম (‘ইসা আল-‘আশীন) হাফিযাহুল্লাহ
এর থেকে || ৭ম পর্ব
==================================================
=====
“জিহাদেঅংশগ্রহণ এবংসহায়তার৩৯টিউপায়”।।
মুহাম্মাদ বিন আহমাদ আস-সালিম (‘ইসা আল-‘আশীন) হাফিযাহুল্লাহ
এর থেকে || ৭ম পর্ব
==================================================
=====
১৫. মুনাফিক এবং বিশ্বাসঘাতকদের প্রকৃত রূপ প্রকাশ করে দেয়াঃ
এটি অত্যাবশ্যকীয় এবং তা ইসলামের শত্রুদের হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধক, যারা মুজাহিদীন এবং তাদের পন্থাকে আঘাত করে। কিন্তু এখানে এটা বলা যায় যে পবিত্র কুরআন, বিশেষভাবে সেই সকল মুনাফিকের চেহারা প্রকাশ করে দিয়েছিল যারা জিহাদে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল এবং মুজাহিদীনদের পথে বাধা ও বিপত্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছিল। এরা হলো ইসলামের সবচেয়ে বড় শত্রু। এবং আমাদের বর্তমান সময়ে আব্দুল্লাহ্ বিন উবাই বিন আবি সলুলের অনেক বংশধর রয়েছে এবং তাদের বিবৃতি নিফাকের ইমাম ইবন সলুলের কথার অনুরূপ। সুতরাং, পবিত্র কুরআনের উদাহরণ অনুযায়ী তাদেরকে এবং তাদের চক্রান্তগুলো প্রকাশ করে দেয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই। এ সকল মুনাফিকরা এবং তাদের মতাদর্শীরা সবচেয়ে জঘন্যতম যে কাজটি করে তা হলো তারা (আল্লাহর পথের) মুজাহিদীনদেরকে খাওয়ারিজদের সাথে তুলনা করে এবং বলে রসূল ﷺ এর বর্ণনাকৃত হাদীস তাদের (মুজাহিদীন) ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কিন্তু এটা উপলব্ধি করে না যে তারাই খাওয়ারিজদের বেশী কাছাকাছি কারণ এ সকল মুনাফিকদের নেতা এবং তাদের অনুসারীরা বিশ্বাসঘাতকদের অন্তর্ভুক্ত “…. তারা কুরআন পড়ে, কিন্তু তা তাদের কন্ঠনালী পার হয়ে ভেতরে প্রবেশ করেনা” এবং তারা মুজাহিদীন ও মুসলিমদের পরিবর্তে মুরতাদ, ক্রস ও মূর্তি পূজারীদের আনুগত্য ও তাদের সাথে বন্ধুত্ব করেছে। সুতরাং হে আমার রব! আপনার জন্য সকল প্রশংসা; প্রকৃতপক্ষে এটা একটি বিশাল মিথ্যাচার!
‘সূরা তাওবাহ্’ তিলাওয়াতকারীদের জন্য এটা কতই না জরুরী যে কোন প্রকার আপোস বা ইতস্ততা ছাড়াই বর্তমান যুগের মুনাফিকদের চেহারা প্রকাশ করে দেয়া। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, এই দ্বীনের জন্য সত্যবাদী আলিমের কোন শেষ হবে না যারা সত্য কথা বলেন যদিও তা তাদের কষ্টের কারণ হয়ে যায়; তারা সম্মুখে এগিয়ে নেয় দ্বীনকে এবং রসূলুল্লাহ্ ﷺ-এর সুন্নাহ্কে রক্ষা করতে। তাঁদের মধ্যে বর্তমানে যারা সবচেয়ে বিখ্যাত, তারা হলেনঃ শাইখ ‘আলী আল-খুদাইর, শাইখ নাসীর আল-ফাহ্দ (আল্লাহ্ দ্রুত তাঁদের মুক্তি নিশ্চিত করুন), এবং শাইখ ইউসুফ আল-উয়াইরী (আল্লাহ্ তাঁর উপর রহমত বর্ষন করুন)। উনারা এবং অন্যরা যারা সত্যের উপর ছিলেন, তাঁরা ছিলেন শক্ত পাথরের ন্যায় যা বিশ্বাসঘাতকদের এবং প্রত্যাখ্যানকারীদের ভেঙে চুরে গুড়িয়ে দিত। এখনও এমন এক দল জ্ঞানী ও সৎ লোক রয়েছেন যারা মানুষদেরকে দ্বীনের ব্যাপারগুলো পরিষ্কার করে তুলে ধরেন এবং এ দ্বীনের শত্রুদের চক্রান্ত স্পষ্ট করে দেন। বিশ্বাস ঘাতকদের মধ্য থেকে যারা তাদের সহায়তা করে (হয় তা তারা ভাল নিয়্যতে করুক অথবা খারাপ নিয়্যতে), তাদের প্রকৃত রূপ প্রকাশ করে দেন।
আল্লাহর রসূল ﷺ বলেছেন, “এমন কিছু মানুষ সর্বদা বিদ্যমান থাকবে যারা পথ ভ্রষ্ট লোকদের থেকে এই জ্ঞানকে রক্ষা করবে; তারা এটাকে চরমপন্থীদের বাড়াবাড়ি থেকে, প্রত্যাখ্যানকারীদের (মিথ্যা) আরোপণ থেকে, এবং অজ্ঞদের ব্যাখ্যা থেকে রক্ষা করবে।” সুতরাং জিহাদ ও মুজাহিদীনদের সহায়তা করার অন্যতম পন্থা হল এই সকল মুনাফিকদের মুখোশ উন্মোচন করে দেয়া এবং ব্যক্তিগত ও সামাজিক সকল সমাবেশে তাদের নিফাকী ও গোপন পরিকল্পনাগুলো প্রকাশ করে দেয়া এবং এটা করার ক্ষেত্রে কোন রকম সংশয় বোধ না করা কারণ তারা সাম্রাজ্যবাদ ও পাশ্চাত্যপন্থীদের সাহায্যকারী; তারা উম্মাহকে সশস্ত্র যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে নিষেধ করে, এবং তারা এটাকে ভুল বলে আখ্যায়িত করে। যখন তা যুদ্ধের রূপ নেয় তখন তারা মানুষকে আহবান করে বশ্যতা এবং লাঞ্ছিত জীবন যাপন করার দিকে; তারা এই দুনিয়ার জীবন নিয়ে পরিতৃপ্ত এবং তারা এটাতেই বিশ্বাস করে এবং শয়তান তাদের চোখে তাদের কাজগুলো সুন্দর করে তুলেছে। (লা হাওলা ওলা কুউয়া তা ইল্লা বিল্লাহ) আল্লাহর ছাড়া কোন ক্ষমতা নেই, নেই কোন শক্তি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলোর মধ্যে একটি হল পূর্ব উল্লেখিত আলিমদের বইগুলো ছাপানো ও বিতরণের জন্য প্রচেষ্টা করা, কারণ সেগুলোর মধ্যে অসংখ্য বিশুদ্ধ ব্যাখ্যা রয়েছে ।
১৬. মানুষদেরকে জিহাদের দিকে ডাকা এবং উদ্বুদ্ধ করাঃ
যে ব্যক্তি নিজে স্বশরীরে জিহাদে অংশ নিতে পারছে না তার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে সব পন্থা উন্মুক্ত রয়েছে তার একটি হলো অন্যদেরকে জিহাদ করার জন্য উৎসাহিত করা কারণ মহিমান্বিত আল্লাহ্ বলেছেনঃ
فَقَٰتِلْ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ لَا تُكَلَّفُ إِلَّا نَفْسَكَۚ وَحَرِّضِ ٱلْمُؤْمِنِينَۖ …
“সুতরাং আল্লাহর পথে যুদ্ধ করুন; আপনাকে শুধু আপনার নিজের কাজের জন্য দায়ী করা হবে; আর মু’মিনদের উৎসাহিত করুন…।”
يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِىُّ حَرِّضِ ٱلْمُؤْمِنِينَ عَلَى ٱلْقِتَالِۚ
“ হে নাবী! মু’মিনদেরকে যুদ্ধ করার জন্য উৎসাহিত করুন।”
সুতরাং এটা সেই ব্যক্তির উপর আবশ্যক যে ব্যক্তি জিহাদ করতে সক্ষম এবং তার উপরও যে জিহাদ করতে সক্ষম নয়। এবং সকল মুসলিমের উপর এটা আবশ্যক যে সে তার ভাইদেরকে কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য উৎসাহিত করবে। আমরা এখন এমন এক সময়ে বাস করছি যেখানে আমাদের এই আয়াতগুলোর উপর সরাসরি আমল করা খুবই প্রয়োজন এবং এর মধ্যে রয়েছে মহা পুরস্কার, কারণ রসুলুল্লাহ্ ﷺ বলেছেন, “যে ব্যক্তি একটি ভাল কাজে সাহায্য করে, সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে ব্যক্তি কাজটি সম্পাদন করে।”
১৭. মুসলিম এবং মুজাহিদীনদেরকে পরামর্শ দেয়াঃ
এই উপায় অসংখ্যভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, যেমন কাফিরদের চক্রান্ত ও কৌশল সম্পর্কে মুসলিমদেরকে অবহিত ও সতর্ক করা, যে রূপ আল্লাহর কথায় উল্লেখিত হয়েছেঃ
وَجَآءَ رَجُلٌ مِّنْ أَقْصَا ٱلْمَدِينَةِ يَسْعَىٰ قَالَ يَٰمُوسَىٰٓ إِنَّ ٱلْمَلَأَ يَأْتَمِرُونَ بِكَ لِيَقْتُلُوكَ فَٱخْرُجْ إِنِّى لَكَ مِنَ ٱلنَّٰصِحِينَ
“এবং শহরের দূর প্রান্ত থেকে এক ব্যক্তি ছুটে আসল। সে বললঃ হে মুসা! নিশ্চয়ই পরিষদবর্গ (ফিরাউনের) আপনার সন্বন্ধে পরামর্শ করছে যে, তারা আপনাকে হত্যা করে ফেলবে, সুতরাং আপনি এখান থেকে চলে যান। সত্যিই, আমি আপনার জন্য তাদের মধ্য থেকে একজন যারা (অকৃত্রিম) সুপরামর্শ দেয়।”
সুতরাং এই আয়াতে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে কাফিরদের চক্রান্তের ব্যাপারে ঈমানদারকে সর্তক করার জন্য এবং শত্রুর হাত থেকে বেঁচে থাকার জন্য মুজাহিদকে পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করা এবং আপনার উচিৎ যথাসম্ভব এ বিষয়ে সাহায্য করা যদি এ বিষয়ে আপনার সাহায্যের প্রয়োজন হয়। এ প্রক্রিয়ায় আরও রয়েছে যে মুসলিমরা যে শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারে তার জন্য প্রয়োজনীয় সকল প্রকার তথ্য ও উপাত্ত সরবরাহ করা এবং পাশাপাশি মুসলিমদের গোপনীয়তা রক্ষা করা।
মুরতাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার সম্পর্কে শাইখ উল-ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যা বলেছেন যে, “…. প্রতিটি মুসলিমের উপর সাধ্যানুযায়ী এটা সম্পাদন করা অত্যাবশ্যক। সুতরাং কোন ব্যক্তির জন্য এটা অনুমোদিত নয় যে সে (শত্রুর) তথ্য ও গোপনীয় বিষয়গুলো গোপন করেবে। বরং তার উচিত সে যা জানে তা প্রকাশ করা ও প্রচার করা যেন মুসলিমরা বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারে। কারও জন্য এটাও কাোনভাবেই অনুমোদিত নয় যে ঐ যুদ্ধের জন্য নিয়োজিত সৈন্যবাহিনীকে সাহায্য করা। এবং এটাও কারও জন্য অনুমোদিত নয় যে আল্লাহ ও তাঁর রসূল ﷺ যা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আদেশ দিয়েছেন সে ব্যাপারে নীরব থাকা অথবা বাধা দেয়া; কারণ এটা ভালো কাজে সাহায্য করা (আমর বিল মা‘রুফ) এবং মন্দকে বাধা দেয়া (ওয়া নাহি আন-মুনকার) ও আল্লাহর পথে যুদ্ধ করার সবচেয়ে শক্তিশালী দরজাগুলোর একটি এবং মহামান্বিত আল্লাহ্ তাঁর রসূল ﷺ কে বলেছেন,“হে নাবী, আপনি জিহাদ করুন কাফির ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে এবং তাদের প্রতি কঠোর হোন।”
এবং এরা (মুরতাদরা) কাফির ও মুনাফিকদের থেকে আলাদা কিছু নয়।”
১৮. মুজাহিদীনদের গোপন বিষয়গুলো গোপন রাখা যাতে করে তা থেকে শত্রুরা উপকৃত হতে না পারেঃ
এটা অত্যাবশ্যকীয় যে মুজাহিদীনদের ব্যাপারে গোপনীয়তা রক্ষা করা যেন তা থেকে কাফির ও মুনাফিকরা সুবিধা নিতে না পারে। আমরা যদি চাই ‘ভ্রাতৃত্ববোধের’ যথার্থতা তা প্রমাণ করতে এবং জিহাদ ও মুজাহিদীনদেরকে ভালোবাসার যে দাবি আমরা করি তার স্বপক্ষে যেন কিছু প্রমাণ থাকুক; তা হলো মুজাহিদীনদের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়, তাদের সুরক্ষা, তাদের নিরাপত্তা এবং তাদেরকে কোন রকম বিপদে না ফেলার বিষয়ে সব সময় আমাদেরকে অবশ্যই সচেষ্ট থাকা। আলিমগণ বলেছেন মুজাহিদীনদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা, তাদের বিরুদ্ধাচরণ করা, তাঁদের ভাবমূর্তি নষ্ট করা, তাদের বিরুদ্ধে অন্যকে সাহায্য করা, তাদের আশ্রয়স্থান প্রকাশ করে দেয়া, তাঁদের ছবি প্রচার করা (কর্তৃপক্ষের হয়ে), তাদের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ (হারাম)। এবং যে এইগুলো করে, সে প্রকৃতপক্ষে আমেরিকানদের সহায়তা করছে যারা তাদের সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করছে মুজাহিদীনদেরকে গ্রেফতার করার জন্য এবং তাদের লক্ষ্যে পোঁছানোর জন্য অন্যথায় তা তারা কখনো অর্জন করতে পারতো না। সুতরাং সতর্ক হও মুসলিম ভাইয়েরা মুজাহিদীনদের বিরুদ্ধে ক্রুসেডারদের (ধর্ম যোদ্ধাদের) সাহায্যকারী হওয়া থেকে এবং যে কেউ তা করবে সে ব্যক্তি সীমালংঘন করল এবং জুলুম করল, এবং পাপ ও সীমালংঘনে সহায়তা করল, এবং মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেছেনঃ
وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوٰنِ ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۖ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ
“…এবং পাপ ও সীমালংঘনে একে অন্যের সাহায্য করিবে না।”
এবং রসূল ﷺ বলেছেন, “তোমার ভাইকে সাহায্য কর হোক সে অত্যাচারিত অথবা অত্যাচারি।”
এটা সহীহ্ হিসেবে স্বীকৃত যে, হাম্মান বিন আল হারীছ রা. বলেছেন, “এক ব্যক্তি ছিল যে মানুষের কথা শাসকদের কাছে পৌঁছে দিত। একদিন আমরা যখন মসজিদে বসে ছিলাম তখন লোকেরা বলল এই ব্যক্তি হল তাদের মধ্যে এক জন যারা মানুষের কথা শাসকদের কাছে পৌঁছে দেয়।” যখন লোকটি আসল এবং আমাদের সাথে বসল, তখন হুযাইফা (রাদিআল্লাহু আনহু) বললেনঃ ‘আমি রসূলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি অন্যের কথা ছড়ায় সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’”
আরও পড়ুন
Comment