আত–তিবইয়ান পাবলিকেসন্স পরিবেশিত
“জিহাদে অংশ গ্রহণ এবং সহায়তার ৩৯টি উপায়”।।
মুহাম্মাদ বিন আহমাদ আস-সালিম (‘ইসা আল-‘আশীন) হাফিযাহুল্লাহ
এর থেকে || ১২তম পর্ব
==================================================
=====
“জিহাদে অংশ গ্রহণ এবং সহায়তার ৩৯টি উপায়”।।
মুহাম্মাদ বিন আহমাদ আস-সালিম (‘ইসা আল-‘আশীন) হাফিযাহুল্লাহ
এর থেকে || ১২তম পর্ব
==================================================
=====
৩৫. কাফিরদের বিরুদ্ধাচরণ করাঃ
যারা ন্যায়সঙ্গত কারণে কাফিরদের সাথে বসবাস করছেন, তাদের দায়িত্ব হলো সাধ্যমত সেই সব কাফিরদের বিরোধিতা করা, যারা মুসলিমদের ক্ষতি করছে। যেমনটি নু‘আম বিন মাসুদ কনফিডারেটসের যুদ্ধে এবং ইয়াহুদীদের বনী কুরাইদ্বার সাথে খন্দকের যুদ্ধে করা হয়েছিল এবং যেরূপ করেছিলেন ফির‘আউনের বংশের ঐ বিশ্বাসী লোকটি যার কথা আল্লাহ বলেছেনঃ
وَقَالَ رَجُلٌ مُّؤْمِنٌ مِّنْ آلِ فِرْعَوْنَ يَكْتُمُ إِيمَانَهُ أَتَقْتُلُونَ رَجُلًا أَن يَقُولَ رَبِّيَ اللَّهُ…
“ফেরাউন গোত্রের এক মুমিন ব্যক্তি, যে তার ঈমান গোপন রাখত, সে বলল, তোমরা কি একজনকে এজন্যে হত্যা করবে যে, সে বলে, আমার পালনকর্তা আল্লাহ..।”
কাফিরদের বিরোধিতা করার জন্য জরুরী হলো কোনভাবেই, কোন উপায়ে মুসলিমদের বিরুদ্ধে কাফিরদের সাহায্য না করা। কারণ, যে এরূপ করে, তার এই কাজকে আল্লাহর বাণী অনুসারে কুফর হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছেঃ
وَمَن يَتَوَلَّهُم مِّنكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ…
“তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।…”
৩৬. সন্তানদের জিহাদ ও এর সাথে সংশ্লিষ্টদের ভালোবাসার মানসিকতা দিয়ে গড়ে তোলাঃ
কারো পরিবার ও সন্তান হলো ভবিষ্যতের প্রস্তুতি স্বরূপ এবং তারা নিজেরা হলো ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। পরিবারবর্গ ও সন্তানদের মধ্যে জিহাদ ও মুজাহিদীনদের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি করা, আল্লাহর দ্বীনের জন্যে শহীদ হওয়া ও ত্যাগ স্বীকার করার ধারণা দেয়া প্রত্যেকের কর্তব্য যাতে করে যখন তারা আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করবে, আপনি (আল্লাহর) আনুগত্য করতে তাদেরকে সাহায্য করার ক্ষেত্রে একজন হতে পারবেন। এটার আরেকটি উপকারীতা হলো এটার ফলে পরিবারগুলো প্রস্তুত হবে এবং আগ্রহ করবে মুজাহিদীনদের সাহায্য এবং তাদের মধ্যে যারা ফেরারি তাদের আশ্রয় দেয়ার জন্যে। এটার আরেকটি উপকার হলো কারো মৃত্যুর পরও তার সন্তানেরা জিহাদ চালিয়ে যাবে। আব্দুল্লাহ বিন যুবায়েরের পিতা যুবায়ের বিন আল-আওআম নিজ চোখে যুদ্ধ দেখার জন্যে খুব ছোট কাল থেকে তাকে সাথে করে যুদ্ধ ক্ষেত্রে নিয়ে যেতেন এবং তিনি আহত মুজাহিদীনদের সেবা করতেন। ফলে যখন তার বয়স হলো, তিনি এক দুঃসাহসী মুজাহিদে পরিণত হলেন। যখন কাউকে কোন কিছুর জন্যে গড়ে তোলা হয়, তখন সে তা হওয়ার জন্যে গড়ে উঠে। কারো পরিবারবর্গ ও সন্তানদের জিহাদের উপর গড়ে তোলার পদ্ধতি হলো নিম্নরূপঃ
- রসূল ﷺ -এর জীবনী ও তিনি যেসব যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন সেই ঘটনাগুলো তাদের শিক্ষা দেয়া;
- সিরাত গ্রন্থে সাহাবী ও তাবেঈদের যেসব বীরত্বপূর্ণ সহীহ্ ঘটনা আছে সেগুলো তাদের শিক্ষা দেয়া;
- জিহাদ ও মুজাহিদীনদের প্রতি ভালোবাসা ও সংশ্লিষ্টতা বাড়ানোর জন্যে তাদেরকে জিহাদ ও মুজাহিদীনদের অডিও শোনানো এবং ভিডিও দেখানো;
- বর্তমান ও অতীতের মুজাহিদীনদের সংবাদ ও জীবনী থেকে তাদেরকে বিভিন্ন ঘটনা শোনানো;
- জিহাদ ও শাহাদাতের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয় ও শাহাদাতের মহত্ব বর্ণনামূলক বক্তৃতা ও উপদেশ তাদের শোনানো;
- বীর মুজাহিদীনদের নামে সন্তানদের নাম রাখা।
৩৭. বিলাসিতা ত্যাগ করাঃ
জিহাদ ও এর সাথে সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতার একটি মাধ্যম হলো বিলাসিতা, আরাম-আয়েশ এবং দুনিয়ার পিছু ছোটা ত্যাগ করা, যেরূপ আব্দুল্লাহ আয্যাম (আল্লাহ্ তাঁর প্রতি রহম করুন) বলেছিলেন, ‘বিলাসিতা হলো জিহাদের শত্রু।’
বিলাসিতার যেসব প্রভাব পড়ে তা হলো ক্বলবের (হৃদয়) কঠোরতা, ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ, দুনিয়ার প্রতি ছোটা ও সেগুলো ভালোবাসা এবং মৃত্যুকে ঘৃণা করা। এগুলোই মানুষকে জিহাদ থেকে দূরে রাখে; বরং সত্যকে ত্যাগ করার দিকে নিয়ে যায় এবং অন্যকেও তা ত্যাগ করতে পথ দেখায়!
আল-কুরআনে এই দুনিয়ার বিলাসিতা ও আরামকে নেতিবাচক ভাব ছাড়া অন্য কোনভাবে বর্ণনা করা হয়নিঃ
وَمَا أَرْسَلْنَا فِي قَرْيَةٍ مِّن نَّذِيرٍ إِلَّا قَالَ مُتْرَفُوهَا إِنَّا بِمَا أُرْسِلْتُم بِهِ كَافِرُونَ
“কোন জনপদে সতর্ককারী প্রেরণ করা হলেই তার বিত্তশালী অধিবাসীরা বলতে শুরু করেছে, তোমরা যে বিষয়সহ প্রেরিত হয়েছ, আমরা তা মানি না।”
وَكَذٰلِكَ مَآ أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ فِى قَرْيَةٍ مِّن نَّذِيرٍ إِلَّا قَالَ مُتْرَفُوهَآ إِنَّا وَجَدْنَآ ءَابَآءَنَا عَلٰىٓ أُمَّةٍ وَإِنَّا عَلٰىٓ ءَاثٰرِهِم مُّقْتَدُونَ
“এমনিভাবে আপনার পূর্বে আমি যখন কোন জনপদে কোন সতর্ককারী প্রেরণ করেছি, তখনই তাদের বিত্তশালীরা বলেছে, আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে পেয়েছি এক পথের পথিক এবং আমরা তাদেরই পদাংক অনুসরণ করে চলছি।”
وَاتَّبَعَ الَّذِينَ ظَلَمُوا مَآ أُتْرِفُوا فِيهِ وَكَانُوا مُجْرِمِينَ
“আর পাপিষ্ঠরা তো ভোগ বিলাসে মত্ত ছিল যার সামগ্রী তাদেরকে যথেষ্ট দেয়া হয়েছিল। আসলে তারা ছিল মহা অপরাধী।”
إِنَّهُمْ كَانُوا قَبْلَ ذٰلِكَ مُتْرَفِينَ
“তারা ইতিপূর্বে স্বাচ্ছন্দ্যশীল ছিল।”
আরো দেখুনঃ (বনী-ইসরাঈল (১৭): ১৬), (আল-আম্বিয়া (২১): ১৩), এবং (আল-মু’মিনূন (২৩): ৩৩, ৬৪)। এই আটটি আয়াতে বিলাসিতার উল্লেখ করা হয়েছে এবং কোনটিতেই বিলাসিতাকে নেতিবাচক ভাব ছাড়া অন্যকোনভাবে বর্ণনা করা হয়নি।
কেহ এই লেখা পড়ে যেন এরূপ মনে না করেন যে আমরা সম্পদের গুরুত্বকে ছোট করছি যেহেতু সম্পদ আমাদের জীবনকে রক্ষা করে (আল্লাহর পরে) এবং যুদ্ধের চালিকা শক্তি। এই বিষয়টি, কিভাবে সম্পদ ব্যয় করতে হবে দ্বিতীয় অধ্যায়ে সংক্ষিপ্ত ভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
অধিকন্তু, আমরা সর্তক করছি অত্যাধিক অর্থ খরচ করা এবং বিলাসিতার ব্যাপারে, বিশেষ করে তাদেরকে সর্তক করছি যারা জিহাদের ক্ষেত্রে সক্রিয় আছেন। কারণ তাদের ক্ষেত্রে এর নেতিবাচক প্রভাব আমরা নিজের চোখে দেখেছি। যেমন, এর কারণে অনেকে জিহাদের বিষয়কে সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ করছেন এবং দুনিয়ার পিছনে ছুটেছেন। আল্লাহ্ ﷻ বলেছেনঃ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُلْهِكُمْ أَمْوَالُكُمْ وَلَا أَوْلَادُكُمْ عَن ذِكْرِ اللَّهِ وَمَن يَفْعَلْ ذَٰلِكَ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْخَاسِرُونَ
“হে মু’মিনগন! তোমাদের ঐশ্বর্য ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদিগকে আল্লাহর স্মরণে উদাসীন না করে, যাহারা উদাসীন হইবে তাহারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত।”
وَاعْلَمُوا أَنَّمَا أَمْوَالُكُمْ وَأَوْلَادُكُمْ فِتْنَةٌ وَأَنَّ اللَّهَ عِندَهُ أَجْرٌ عَظِيمٌ
“এবং জানিয়া রাখ যে, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তো এক পরীক্ষা এবং আল্লাহই নিকট মহাপুরষ্কার রহিয়াছে।”
ইবনে খালদুন তার ‘মুকাদ্দিমাহ্’-য় অনেকগুলো উপকারী অনুচ্ছেদের সন্নিবেশ ঘটিয়েছেন যেখানে তিনি বিলাসিতা এবং সম্পদের অনেকগুলো নেতিবাচক দিক তুলে ধরেছেন এবং বর্ণনা করছেন কিভাবে তা একটি জাতির ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়ায় এবং কিভাবে এর খারাপ দিকগুলো একটি জাতিকে শত্রুদের হাতে পরাজয়ের দিকে ঠেলে দেয়।
Comment