১৪ আমান ও যুদ্ধ-বিরতি চুক্তি (০৩)
মতন: وننبذ لو خيرًا. ونقاتل بلا نبذٍ لو خان ملكهم. - (চুক্তি করে ফেলার পর চুক্তি রহিত করে দেয়া) কল্যাণকর মনে হলে প্রতিপক্ষকে অবগত করিয়ে চুক্তি রহিত করে দিতে পারবো। তবে প্রতিপক্ষের বাদশাহ যদি গাদ্দারি করে, তাহলে অবগত করানো ব্যতিরেকেই আমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারবো।
শরাহ: চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার পর চুক্তি কিভাবে রহিত হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে কিতাল করা বৈধ হবে- এ প্রসঙ্গটি আলোচনা করেছেন। মুসান্নিফ রহ. দু’টি সূরত বলেছেন:
চুক্তি রহিত হওয়ার ১ম সূরত: আমরা নিজেরা চুক্তি রহিত করে দিবো। এতে শর্ত হলো, প্রতিপক্ষকে স্পষ্ট অবগত করতে হবে যে, আমরা চুক্তি রহিত করে দিচ্ছি। অবগত না করে হামলা করা যাবে না; তা গাদ্দারি গণ্য হবে, যা হারাম।
চুক্তি করেছিলাম ইসলাম ও মুসলিমদের স্বার্থে। এ স্বার্থ যতদিন বহাল থাকবে চুক্তিও ততদিন রক্ষা করা হবে। যখন মনে হবে চুক্তি বহাল রাখার মাঝে কোনো ফায়েদা নেই, বরং কিতাল করার মাঝেই কল্যাণ- তখন আমরা চাইলে চুক্তি রহিত করে দিয়ে কিতাল করতে পারবো। তবে প্রতিপক্ষ যেহেতু চুক্তি ভাঙেনি, চুক্তিবিরোধী কোনো কাজ করেনি, বরং আমরা নিজেরা আগে বেড়ে চুক্তি রহিত করতে চাচ্ছি: তাই প্রতিপক্ষকে স্পষ্ট অবগত করতে হবে যে, আমাদের ও তোমাদের মাঝে যে চুক্তি ছিলো তা আমরা রহিত করে দিচ্ছি।[1]
চুক্তি রহিত হওয়ার ২য় সূরত: প্রতিপক্ষের বাদশাহ তথা প্রধান গাদ্দারি করলে। সে যদি চুক্তি রক্ষা না করে এবং চুক্তিবিরোধী পদক্ষেপ নেয় (যেমন সুযোগ বুঝে আমাদের উপর হামলা করে দিলো) তাহলে চুক্তি ভেঙে যাবে। তখন আমরা তাদের উপর হামলা করতে পারবো। এক্ষেত্রে তাদের অবগত করানোর প্রয়োজন পড়বে না। তারা নিজেরাই গাদ্দারি করে চুক্তি ভঙ্গ করেছে।
যেমন হুদায়বিয়াতে সংঘটিত দশ বছরের চুক্তি মক্কার মুশরিকরা দুই বছরের মাথায় ভঙ্গ করে। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গোপনে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালান। আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করেন, মক্কার মুশরিকরা যেন অভিযানের ব্যাপারে কিছু জানতে না পারে।
হাতিব বিন আবু বালতাআ রাদি. একটি তাবিলের আশ্রয় নিয়ে মক্কার মুশরিকদের উদ্দেশ্যে অভিযানের ব্যাপারে একটি চিঠি পাঠিয়ে অবগত করতে চলেছিলেন। সে চিঠি মুশরিকদের হাতে যাওয়ার আগেই উদ্ধার হয়। তবে তিনি যেহেতু সত্যিকারের মুসলমান ছিলেন, বদরি সাহাবি ছিলেন এবং কাজটি ভুল বুঝে করেছিলেন: তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে মাফ করে দেন।
চুক্তি রহিত হওয়ার ৩য় সূরত: এ উভয়টি সূরত হচ্ছে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে চুক্তি রহিত হওয়া প্রসঙ্গে। পক্ষান্তরে চুক্তির মেয়াদ যদি শেষ হয়ে যায় (যেমন দুই বছরের চুক্তি ছিল দুই বছর পার হয়ে গেছে) তাহলে আপনাআপনি চুক্তি রহিত হয়ে যাবে। তখন তাদের জান মাল আমাদের জন্য হালাল হয়ে যাবে। আমরা তাদের উপর আগে বেড়ে হামলা করতে পারবে, অবগত করানোর প্রয়োজন পড়বে না।
সারকথা:
ক. চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে চুক্তি রহিত হয়ে যাবে।
খ. মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে প্রতিপক্ষ গাদ্দারি করলে চুক্তি ভেঙে যাবে।
গ. প্রতিপক্ষ চুক্তির উপর বহাল থাকলে ইসলাম ও মুসলিমদের কল্যাণের বিবেচনায় আমরা যদি মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই চুক্তি রহিত করতে চাই, তাহলে প্রতিপক্ষকে স্পষ্ট অবগত করতে হবে। অন্যথায় তা গাদ্দারি গণ্য হবে।
মুসান্নিফ রহ. শেষ দু’টি সূরত বলেছেন, প্রথমটি বলেননি।
বি.দ্র.
প্রতিপক্ষ প্রধানের গাদ্দারির মধ্যে এটিও অন্তর্ভুক্ত যে, প্রতিপক্ষের কিছু লোক আমাদের উপর হামলা করেছে, প্রতিপক্ষ প্রধান বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছে কিন্তু সে তাদের বাধা দেয়নি। তার বাধা না দেয়াটি গাদ্দারি গণ্য হবে এবং চুক্তি ভেঙে যাবে। তাদের জান মাল আমাদের জন্য হালাল হয়ে যাবে।[2] (শারহুস সিয়ারিল কাবির)
***
[1] যেমনটা আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, {وَإِمَّا تَخَافَنَّ مِنْ قَوْمٍ خِيَانَةً فَانْبِذْ إِلَيْهِمْ عَلَى سَوَاءٍ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْخَائِنِينَ (58)} [الأنفال: 58]
[2] شرح السير الكبير (ص: 511): وَكَذَلِكَ لَوْ فَعَلَ ذَلِكَ بِهِمْ رَجُلٌ بِأَمْرِ مَلِكِهِ أَوْ بِعِلْمِهِ وَلَمْ يَمْنَعْهُ مِنْ ذَلِكَ. فَإِنَّ السَّفِيهَ إذَا لَمْ يُنْهَ مَأْمُورٌ. اهـ
Comment