জিহাদ হজের চেয়ে উত্তম এবাদত:
পূর্বের পর্বে আলোচনা করা হলো, ব্যাপকভাবে অন্যান্য আমলের উপর জিহাদের শ্রেষ্টত্বের বর্ণনা। তবে কুরআন ও হাদীসে বিশেষ কিছু আমলের উপর জিহাদের শ্রেষ্টত্বের কথা উল্লেখ হয়েছে। আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রশ্ন করা হলো, সর্বত্তোম আমল কী? উত্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান আনা’। প্রশ্ন করা হলো, এর পরে কী? উত্তরে বলেন, ‘আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা’। প্রশ্ন করা হলো, এর পরে কী? উত্তরে বলেন, ‘মাবরুর হজ’।”[1]
‘মাবরুর হজ’ এর কয়েকটি ব্যাখ্যা রয়েছে; এক. কবুল হজ। দুই. গুণাহমুক্ত হজ। তিন. একমাত্র আল্লাহর জন্য কৃত হজ।[2]
মায়িয তামীমী রাদি. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন,
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রশ্ন করা হলো, সর্বত্তোম আমল কী? উত্তরে তিনি বলেন, ‘এক আল্লাহর উপর ঈমান আনা। অতঃপর জিহাদ করা। অতঃপর এক মাবরুর হজ সমস্থ আমলের উপর ফযীলত হচ্ছে, সূর্য উদয় ও অস্তয়স্থলের মধ্যবর্তী পার্থক্যের মত।”[3]
উক্ত হাদীসদ্বয় ছাড়া আরও অনেক হাদীস ও আসার থেকে বুঝে আসে যে, জিহাদ হচ্ছে হজের চেয়ে উত্তম আমল। তবে জিহাদ যদি ফরযে কেফায়া হয় এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ লোক তা আদায়রত থাকে, এমতাবস্থায় ফরয হজ জিহাদের চেয়ে উত্তম। আর ফরয হজ আদায়ের পর নফল হজের তুলনায় ফরযে কেফায়া জিহাদ উত্তম।[4]
আব্দুল্লাহ বিন আমর রাদি. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“যে হজ করেনি, তার জন্য হজ করা দশ জিহাদের চেয়ে উত্তম। আর যে হজ করেছে, তার জন্য এক জিহাদ দশ হজের চেয়ে উত্তম।”[5]
তবে জিহাদ ফরযে আইন হলে ফরয হজের চেয়েও জিহাদ উত্তম হবে।[6]
উল্লেখ্য: ফরয হজের চেয়ে জিহাদ উত্তম হওয়ার অর্থ এ নয় যে, তখন হজ আদায় করা জরুরী নয়। বরং এমতাবস্থায় যদি জিহাদ এবং হজ উভয়টি আদায় করা সম্ভব হয়, তাহলে উভয়টি আদায় করতে হবে। আর যদি এমন হয় যে, কাফেররা আতর্কিত হামলা করার দরুন জিহাদ এবং হজ একসাথে আদায় করা যাচ্ছে না; হজ করতে গেলে কাফেররা পুরো এলাকা দখল করে ফেলবে অথবা দখল আরও পাকাপোক্ত করে ফেলবে, এমতাবস্থায় হজকে একটু পিছিয়ে জিহাদকে প্রধান্য দেওয়া হবে।
[1] সহীহ বুখারী: ২৬, সহীহ মুসলিম: ৮৩
[2] শরহে মুসলিম লিন-নববী: ২/৭২, ফাতহুল বারী: ১/৭৮
[3] মুসনাদে আহমদ: ১৯০১০, মু’জামে কাবীর: ২০/৩৪৪। নূরুদ্দীন হাইসামী রহ. বলেন, “মুসনাদে আহমদের বর্ণনাকারীগণ সহীহ হাদীসের বর্ণনাকারী”। -মাজমাউয যাওয়ায়েদ: ৩/২০৭, আত-তারগীব ওয়াত তারহীব: ২/১০৬
[4] মাশারিউল আশওয়াক: ১/২০৫
[5] মু’জামে আওসাত: ৩/২৮০, শুআবুল ঈমান: ৬/৯০, সুনানে বায়হাকী: ৯/২৩০, মুসতাদরাকে হাকিম: ২/১৫৫। ইমাম হাকিম রহ. বুখারীর শর্ত অনুযায়ী সহীহ বলেছেন এবং যাহাবী রহ. তা সমর্থন করেছেন। হাইসামী রহ. বলেন, “উক্ত হাদীসের সনদে ‘লাইস’ রহ. এর লেখক ‘আব্দুল্লাহ বিন সালিহ’ নামক এক বর্ণনাকারী আছেন। তার ব্যাপারে আব্দুল মালিক বিন শুআইব বিন লাইস রহ. বলেন, নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত। তবে অন্যরা তাকে দুর্বল বলেছেন।” তবে মুনযিরী রহ. হাকিম রহ. এর মন্তব্য সমর্থন করে বলেন, ‘আব্দুল্লাহ বিন সালিহ’ এর ব্যাপারে কারও কারও আপত্তি কোন বিষয় নয়। কেননা ইমাম বুখারী রহ. তার হাদীস দ্বারা দলীল দিয়েছেন।” তদ্রূপ বূসীরী রহ. হাদীসের সনদ সহীহ বলেছেন। -মাজমাউয যাওয়ায়েদ: ৫/২৮১, আত-তারগীব ওয়াত তারহীব: ২/১৯৯, ইতহাফুল খিয়ারাহ: ৫/৯৪
[6] মাশারিউল আশওয়াক: ১/২০৫
পূর্বের পর্বে আলোচনা করা হলো, ব্যাপকভাবে অন্যান্য আমলের উপর জিহাদের শ্রেষ্টত্বের বর্ণনা। তবে কুরআন ও হাদীসে বিশেষ কিছু আমলের উপর জিহাদের শ্রেষ্টত্বের কথা উল্লেখ হয়েছে। আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سُئِلَ: أَيُّ العَمَلِ أَفْضَلُ؟ فَقَالَ: «إِيمَانٌ بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ». قِيلَ: ثُمَّ مَاذَا؟ قَالَ: «الجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ» قِيلَ: ثُمَّ مَاذَا؟ قَالَ: «حَجٌّ مَبْرُورٌ»
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রশ্ন করা হলো, সর্বত্তোম আমল কী? উত্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান আনা’। প্রশ্ন করা হলো, এর পরে কী? উত্তরে বলেন, ‘আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা’। প্রশ্ন করা হলো, এর পরে কী? উত্তরে বলেন, ‘মাবরুর হজ’।”[1]
‘মাবরুর হজ’ এর কয়েকটি ব্যাখ্যা রয়েছে; এক. কবুল হজ। দুই. গুণাহমুক্ত হজ। তিন. একমাত্র আল্লাহর জন্য কৃত হজ।[2]
মায়িয তামীমী রাদি. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন,
أَنَّهُ سُئِلَ أَيُّ الْأَعْمَالِ أَفْضَلُ؟ قَالَ: "إِيمَانٌ بِاللهِ وَحْدَهُ، ثُمَّ الْجِهَادُ، ثُمَّ حَجَّةٌ بَرَّةٌ تَفْضُلُ سَائِرَ الْعَمَلِ كَمَا بَيْنَ مَطْلَعِ الشَّمْسِ إِلَى مَغْرِبِهَا"
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রশ্ন করা হলো, সর্বত্তোম আমল কী? উত্তরে তিনি বলেন, ‘এক আল্লাহর উপর ঈমান আনা। অতঃপর জিহাদ করা। অতঃপর এক মাবরুর হজ সমস্থ আমলের উপর ফযীলত হচ্ছে, সূর্য উদয় ও অস্তয়স্থলের মধ্যবর্তী পার্থক্যের মত।”[3]
উক্ত হাদীসদ্বয় ছাড়া আরও অনেক হাদীস ও আসার থেকে বুঝে আসে যে, জিহাদ হচ্ছে হজের চেয়ে উত্তম আমল। তবে জিহাদ যদি ফরযে কেফায়া হয় এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ লোক তা আদায়রত থাকে, এমতাবস্থায় ফরয হজ জিহাদের চেয়ে উত্তম। আর ফরয হজ আদায়ের পর নফল হজের তুলনায় ফরযে কেফায়া জিহাদ উত্তম।[4]
আব্দুল্লাহ বিন আমর রাদি. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
«حَجَّةٌ لِمَنْ لَمْ يَحُجَّ خَيْرٌ مِنْ عَشْرِ غَزَوَاتٍ، وَغَزْوَةٌ لِمَنْ حَجَّ خَيْرٌ مِنْ عَشْرِ حِجَجٍ»
“যে হজ করেনি, তার জন্য হজ করা দশ জিহাদের চেয়ে উত্তম। আর যে হজ করেছে, তার জন্য এক জিহাদ দশ হজের চেয়ে উত্তম।”[5]
তবে জিহাদ ফরযে আইন হলে ফরয হজের চেয়েও জিহাদ উত্তম হবে।[6]
উল্লেখ্য: ফরয হজের চেয়ে জিহাদ উত্তম হওয়ার অর্থ এ নয় যে, তখন হজ আদায় করা জরুরী নয়। বরং এমতাবস্থায় যদি জিহাদ এবং হজ উভয়টি আদায় করা সম্ভব হয়, তাহলে উভয়টি আদায় করতে হবে। আর যদি এমন হয় যে, কাফেররা আতর্কিত হামলা করার দরুন জিহাদ এবং হজ একসাথে আদায় করা যাচ্ছে না; হজ করতে গেলে কাফেররা পুরো এলাকা দখল করে ফেলবে অথবা দখল আরও পাকাপোক্ত করে ফেলবে, এমতাবস্থায় হজকে একটু পিছিয়ে জিহাদকে প্রধান্য দেওয়া হবে।
[1] সহীহ বুখারী: ২৬, সহীহ মুসলিম: ৮৩
[2] শরহে মুসলিম লিন-নববী: ২/৭২, ফাতহুল বারী: ১/৭৮
[3] মুসনাদে আহমদ: ১৯০১০, মু’জামে কাবীর: ২০/৩৪৪। নূরুদ্দীন হাইসামী রহ. বলেন, “মুসনাদে আহমদের বর্ণনাকারীগণ সহীহ হাদীসের বর্ণনাকারী”। -মাজমাউয যাওয়ায়েদ: ৩/২০৭, আত-তারগীব ওয়াত তারহীব: ২/১০৬
[4] মাশারিউল আশওয়াক: ১/২০৫
[5] মু’জামে আওসাত: ৩/২৮০, শুআবুল ঈমান: ৬/৯০, সুনানে বায়হাকী: ৯/২৩০, মুসতাদরাকে হাকিম: ২/১৫৫। ইমাম হাকিম রহ. বুখারীর শর্ত অনুযায়ী সহীহ বলেছেন এবং যাহাবী রহ. তা সমর্থন করেছেন। হাইসামী রহ. বলেন, “উক্ত হাদীসের সনদে ‘লাইস’ রহ. এর লেখক ‘আব্দুল্লাহ বিন সালিহ’ নামক এক বর্ণনাকারী আছেন। তার ব্যাপারে আব্দুল মালিক বিন শুআইব বিন লাইস রহ. বলেন, নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত। তবে অন্যরা তাকে দুর্বল বলেছেন।” তবে মুনযিরী রহ. হাকিম রহ. এর মন্তব্য সমর্থন করে বলেন, ‘আব্দুল্লাহ বিন সালিহ’ এর ব্যাপারে কারও কারও আপত্তি কোন বিষয় নয়। কেননা ইমাম বুখারী রহ. তার হাদীস দ্বারা দলীল দিয়েছেন।” তদ্রূপ বূসীরী রহ. হাদীসের সনদ সহীহ বলেছেন। -মাজমাউয যাওয়ায়েদ: ৫/২৮১, আত-তারগীব ওয়াত তারহীব: ২/১৯৯, ইতহাফুল খিয়ারাহ: ৫/৯৪
[6] মাশারিউল আশওয়াক: ১/২০৫