Announcement

Collapse
No announcement yet.

সংশয় নিরসন; ইমাম ছাড়া জিহাদ নেই; পর্ব ১

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • সংশয় নিরসন; ইমাম ছাড়া জিহাদ নেই; পর্ব ১

    ইমাম ছাড়া জিহাদ নেই: সবচেয়ে জোরে-সূরে যে সংশয়টি উত্থাপিত করা হয়, তা হচ্ছে, ‘জিহাদের জন্য ইমাম শর্ত’ অথবা ভিন্ন শব্দে ‘ইমাম ছাড়া জিহাদ নেই’।[1]
    [[1] আমরা জিহাদের জন্য উক্ত শর্তের কথা নিম্নোক্ত কিতাবসূহে পেয়েছি; এ’লাউস সুনান: ১২/৪, মাজমূআয়ে ফাতাওয়া লৌখনবী (খুলাসাতুল ফাতাওয়ার হাশিয়ায়): ৪/৪০০, ফাতাওয়ায়ে কাসিমিয়া: ১৭/১৬৭, সাওয়ানিহে কাসেমী: ২/১২৩-১২৫​]
    মূল আলোচনায় যাওয়ার আগে দুটি বিষয় বলে রাখি;
    এক. আমরা আগে বলে এসেছি যে, উত্থাপিত শর্ত জিহাদ ফরয হওয়ার শর্ত না জিহাদ জায়েয হওয়ার শর্ত, এ ব্যাপারে শর্তের প্রবক্তরা একমত নন। কারও কথা থেকে জিহাদ ফরয হওয়ার শর্ত বুঝে আসে; আবার কারও কথা থেকে জিহাদ জায়েয হওয়ার শর্ত বুঝে আসে। বরং কারও কথা থেকে বুঝে আসে যে, বিষয়টি উনার কাছে স্পষ্ট নয়।
    দুই. “ইমাম ছাড়া জিহাদ নেই” বাক্যে ‘ইমাম’ দ্বারা আসলে উদ্ধেশ্য কী? কেননা কারও কারও কথা থেকে বুঝে আসে যে, জিহাদের জন্য ইমাম তথা খলীফাতুল মুসলিমীন শর্ত। যেমন শাইখ যাফর আহমদ উসমানী রহ. জিহাদের জন্য আমীর শর্ত হওয়া দলীল দ্বারা প্রমাণ করে বলেন,
    ولا يخفى أن الأمير الذي يجب الجهاد معه كما صرح به حديث مكحول إنما هو من كان مسلما ثبتت له الإمارة بالتقليد إما باستخلاف الخليفة إياه كما نقل أبو بكر رضي الله عنه ، وإما ببيعة من العلماء أو جماعة من أهل الرأي والتدبير ، بشرط أن يكون من أهل الولاية المطلقة الكاملة



    “এ ব্যাপারে কোন ধরনের অস্পষ্টতা নেই যে, মাকহুল রহ. থেকে বর্ণিত হাদীসের ভাষ্যমতে যে আমীরের সাথে জিহাদ করা ওয়াজিব, তিনি হচ্ছেন, এমন মুসলিম আমীর, যার এমারত পূর্ববর্তী খলীফাকর্তৃক নির্ধারিত হয়েছেন, যেমনটি আবু বকর রাদি. (তার পূর্ববর্তী আমীর) নির্ধারন করেছেন। অথবা উলামা এবং বিজ্ঞ ও অভিজ্ঞ লোকদের বাইতাদের মাধ্যমে আমীর নিযুক্ত হয়েছেন; শর্ত হচ্ছে তিনি পরিপূর্ণ ও ব্যাপক ক্ষমতার অধিকারী হবেন।”[2]
    [[2] এ’লাউস সুনান: ১২/৫। শাইখ মুহাম্মদ থানবী রহ. এর কথা থেকেও এমনটি বুঝে আসে। -সাওয়ানিহে কাসেমী: ২/১২৩​]
    এরপর শাইখ শরহুল আকাইদিন নাসাফিয়্যা ও আদ-দুররুল মুখতারের উদ্ধৃতিতে খলীফার জন্য প্রযোজ্য সকল শর্ত উল্লেখ করেন।
    বিপরিতে অনেকের কথা থেকে স্পষ্ট বুঝে আসে যে, জিহাদের জন্য ইমাম তথা শাসক, বা রাষ্ট্রপ্রধান(!) অথবা খলীফা শর্ত।
    ফলাফল-স্বরূপ, প্রথম ব্যাখ্যা অনুযায়ী বর্তমানে মুসলিম দেশসমূহের শাসকরা (যদি তাদেরকে মুসলিম শাসক ধরে নেওয়া হয়) জিহাদ করতে পারবে না; বিপরিতে দ্বিতীয় ব্যাখ্যা অনুযায়ী তারা জিহাদ করতে পারবে।
    আসলে বিষয়টি কি তাদের কাছে স্পষ্ট হয়নি, না তাদের কাছে মতভেদপূর্ণ, তা আমার কাছে স্পষ্ট নয়।
    মতভেদের মূল জায়গা কোথায়?
    প্রথমে আলোচনার মূল ক্ষেত্র নির্ধারণ করা প্রয়োজন। অন্যথায় হাওয়াই আলোচনা করে তেমন কোন ফায়দা হবে না। কয়েক পৃষ্টা দলীল-দালায়েল দ্বারা আলোচনা করার পরে যদি উত্তর আসে, “এ ব্যাপারে তো আমাদের কোন আপত্তি নেই; আপত্তি হচ্ছে ঐ ব্যাপারে”, তখন পুরো আলোচনাই ভেস্তে যাবে।
    একটি হচ্ছে, ‘জিহাদের জন্য ইমাম শর্ত’; আরেকটি হচ্ছে, ‘ইমামের অনুমতি ছাড়া জিহাদ করা জায়েয নয়’। বাহ্যত উভয় বাক্য একই মনে হলেও উভয়ের মাঝে সুক্ষ্ণ পার্থক্য রয়েছে। ‘জিহাদের জন্য ইমাম শর্ত’ বাক্যের মর্ম হচ্ছে, জিহাদ ফরয বা জায়েয হওয়ার জন্য অন্যান্য শর্তের মত একটি শর্ত হচ্ছে, ইমামের অনুমতি থাকা। বিপরিতে “ইমামের অনুমতি ছাড়া জিহাদ জায়েয নেই” বাক্যের মর্ম হচ্ছে, মুসলিমদের ইমাম থাকাবস্থায় তার অনুমতি ছাড়া জিহাদ করা জায়েয নয়। জিহাদ ফরয বা জায়েয হওয়ার সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। উক্ত পার্থক্যের ফলাফল হচ্ছে, যে ব্যক্তি ইমামের অধীনে নেই অথবা যখন মুসলিমদের কোন ইমাম নেই, এমতাবস্থায় জিহাদ করা প্রথম বাক্যের মর্ম অনুযায়ী জায়েয হবে না; দ্বিতীয় বাক্যের মর্ম অনুযায়ী জায়েয হবে।
    তাই কোন কোন ইমাম যে ‘ইমামের অনুমতি ছাড়া জিহাদ জায়েয নেই’ বলেছেন, তার সাথে ‘জিহাদের জন্য ইমাম শর্ত’ এর নূন্যতম সম্পর্ক নেই। এর স্পষ্ট প্রমাণ হচ্ছে, ইমামদের উক্ত মতের পক্ষে দলীল হিসেবে বলা হয়েছে, ইমামের অনুমতি ছাড়া জিহাদ করলে ইমামের উপর এক ধরনের কর্তত্ব খাটানো অথবা ইমামের আনুগত্যে ত্রুটির প্রকাশ হয়ে যায়।’

    কিন্তু বর্তমানে ‘জিহাদের জন্য ইমাম শর্ত’ বা ‘ইমামের অনুমতি ছাড়া জিহাদ জায়েয নয়’ বলে মূলত ইমামকে জিহাদের শর্ত হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।
    এর স্পষ্ট প্রমাণ হচ্ছে, পূর্ববর্তী ইমামদের যারা ‘ইমামের অনুমতি ছাড়া জিহাদ নাজায়েয’ বলেছেন, তারাই স্পষ্ট করে বলেছেন যে, যখন মুসলিমদের ইমাম থাকবে না, তখন সাধারণ মুসলিম জিহাদের ফরযিয়াত আদায় করবে। অথচ বর্তমানে যারা ‘জিহাদের জন্য ইমাম শর্ত’ বলেন, তারা মূলত উক্ত অবস্থায় জিহাদ করা নাজায়েয বলার জন্য উক্ত শর্তকে উপস্থাপন করে থাকেন।[3]

    [[3] আল-মুগনী: ৯/২০২, সাওয়ানিহে কাসেমী: ২/১২৫। সামনে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা আসছে ইনশাআল্লাহ।​]
    তাই আমরা সে হিসেবে তাদের দাবী ও দলীলের খণ্ডন করবো ইনশাআল্লাহ।
    ‘জিহাদের জন্য ইমাম শর্ত’ শীয়াদের মাযহাব:
    ‘জিহাদের জন্য ইমাম শর্ত’ এটা একমাত্র শীয়াদের মাযহাব। ব্যাপকভাব জিহাদের জন্য ইমাম শর্ত হওয়ার মত আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের ইমামগণের নয়।
    অবশ্য শীয়াদের সকল ফিরকা ‘জিহাদের জন্য ইমাম শর্ত’ এ ব্যাপারে একমত হওয়ার পরে কারও মতে অতিরিক্ত শর্ত হচ্ছে, উক্ত ইমাম নিস্পাপ হতে হবে। আবার রাফেযী শীয়াদের মতে ইমাম মাহদীর আগে কারও জন্য জিহাদ করা বা জিহাদের আহ্বান করা জায়েয নয়।
    শীয়াদের নির্ভরযোগ্য ফিকহী কিতাব ‘হাদাইকুল আযহার’ নামক গ্রন্থে এসেছে,
    وإليه وحده إقامة الحدود والجمع ... وغزو الكفار والبغاة إلى ديارهم.



    “এবং একমাত্র ইমামের দায়িত্ব হচ্ছে হদ প্রয়োগ, জুমআ কায়েম এবং কাফের ও বাগীদের এলাকায় গিলে তাদের সাথে জিহাদ করা।”[4]
    [[4] হাদাইকুল আযহার (আস-সাইলুল জাররারসহ): ৪/৫১৭, আরও -আল-জিহাদ ওয়াল কিতাল: ২/৮৭১​]
    শীয়াদের প্রসিদ্ধ কিতাব ‘ওসাইলুশ শীয়া’ গ্রন্থে এসেছে,
    والجهاد واجب مع إمام عادل



    “ন্যায়পরায়ণ ইমামের সাথে জিহাদ করা ওয়াজিব।”[5]
    [[5] ওসাইলুশ শীয়া: ১১/৩৫​]
    আব্দুল কাদের জিলানী রহ. (৫৬১ হি.) বলেন,
    فقد شبهت مذاهب الروافض باليهودية؛ قال الشعبي: محبة الروافض محبة اليهود، قالت اليهود: لا تصلح الإمامة إلا لرجل من آل داود، وقالت الرافضة: لا تصلح الإمامة إلا لرجل من ولد علي بن أبي طالب؛ وقالت اليهود: لا جهاد في سبيل الله حتى يخرج المسيح الدجال، وينزل بسبب من السماء، وقالت الروافض: لا جهاد في سبيل الله حتى يخرج المهدي وينادي مناد من السماء.



    “রাফেযীদের মাযহাব ইহুদী ধর্মের সদৃশ।। শা’বী রহ. বলেন, রাফেযীদেরকে ভালোবাসা ইহুদীদেরকে ভালোবাসার নামান্তর। কারণ ইহুদীরা বলে, ইমামত একমাত্র দাউদ আলাইহিস সালামের বংশধর কোনো ব্যক্তির জন্যই প্রযোজ্য। আর রাফেজিযীরা বলে, ইমামত একমাত্র আলী রাযি.র বংশধর কোনো ব্যক্তির জন্যই প্রযোজ্য। এমনিভাবে ইহুদীরা বলে, আল্লাহর রাস্তায় কোনো জিহাদ নেই, যতক্ষণ না মাসীহে দাজ্জাল আকাশ থেকে একটি মাধ্যম ব্যবহার করে অবতরণ করবে। আর রাফেযীরা বলে, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ নেই, যতক্ষণ না ইমাম মাহদী বের হবেন এবং আকাশ থেকে একজন আহ্বায়ক আহ্বান করবেন।”[6]
    [[6] আল-গুনয়াহ লিতালিবি তারীকিল হক: ১/১৮৪, আরও দেখুন মিনহাজুস সুন্নাতিন নাবাওয়ীয়্যাহ: ১/২৫​]
    বরং শীয়াদের ভাষায় ইমামের পক্ষ হতে জিহাদের ডাক আসার আগে জিহাদে বহিরাগত ব্যক্তি হচ্ছে, পাখির বাচ্চার ন্যায়; যার ডানা ফুটার আগে খাঁচা থেকে বের হয়ে গেছে; ফলে বাচ্চারা তাকে ধরে ফেলেছে।[7]
    [[7] ওসাইলুশ শীয়া: ১১/৩৬​]
    "ইয়াকীন ও সবরের মাধ্যমে দীনের ইমামত অর্জিত হয়"

  • #2
    মাশাআল্লাহ। আল্লাহ ভাইয়ের ইলমে আমলে বারাকাহ দান করুন। আমীন।

    Comment

    Working...
    X