Announcement

Collapse
No announcement yet.

জিহাদের ফযীলত সিরিজ; পর্ব ১২

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • জিহাদের ফযীলত সিরিজ; পর্ব ১২

    আল্লাহর রাস্তায় এক সকাল এক বিকালের ফযীলত:
    আনাস বিন মালিক রাদি. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন,
    «لَغَدْوَةٌ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَوْ رَوْحَةٌ، خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا»
    “আল্লাহর রাস্তায় এক সকাল অথবা এক বিকাল দুনিয়া ও দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু আছে তা থেকে উত্তম[1]
    আরবী শব্দ غدوة এর এক অর্থ হচ্ছে সকাল, আর روحة এর এক অর্থ হচ্ছে বিকাল এখান থেকে غدا في موضع كذا অর্থ হয় উক্ত জায়গায় সকাল করা তথা সকালে উক্ত জায়গায় উপস্থিত হওয়া আর غدا إلى موضع كذا অর্থ হয়, উক্ত জায়গার উদ্ধেশ্যে সকালে বের হওয়া বা রওয়ানা দেওয়া অনুরূপ روحة এর অর্থ হবে, বিকালে উপস্থিত হওয়া এবং বিকালে বের হওয়া
    শব্দদ্বয়ের উক্ত অর্থ অনুযায়ী হাদীসে অর্থ দাঁড়াবে আল্লাহর রাস্তায় এক সকাল ব্যয় করা অথবা এক বিকাল ব্যয় করা দুনিয়া ও দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু আছে তা থেকে উত্তম
    তবে মানুষ বা পশু-প্রাণী যেহেতু সাধারণত সকালে ঘর থেকে বের হয় এবং বিকালে ঘরে ফিরে আসে, তাই রূপক অর্থে غدوة শব্দের অর্থ একবার যাওয়া আর روحة এর অর্থ একবার আসা দ্বারাও করা হয়ে থাকে উক্ত রূপক অর্থ অনুযায়ী হাদীসের অর্থ দাঁড়াবে, আল্লাহর রাস্তায় একবার যাওয়া অথবা একবার আসা দুনিয়া ও দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু আছে তা থেকে উত্তম[2]
    উক্ত ব্যাখ্য অনুযায়ী জিহাদের যাওয়ার যেমন সওয়াব, তেমনি জিহাদ থেকে বাড়িতে ফেরারও সওয়াব প্রমাণীত হয় জিহাদ থেকে ফেরার ফযীলত অন্য হাদীস দ্বারাও প্রমাণীত আব্দুল্লাহ বিন আমর রাদি. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন,
    قَفْلَةٌ كَغَزْوَةٍ.
    “জিহাদ থেকে ফেরা (সওয়াবের ক্ষেত্রে) জিহাদে যাওয়ার মত[3]
    “দুনিয়া ও দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু আছে তা থেকে উত্তম” উক্ত কথার দুটি ব্যাখ্যা হতে পারে;
    এক. কেউ যদি পুরো দুনিয়া ও দুনিয়ার মধ্যবর্তী সব কিছুর মালিক হয়ে যায় এবং তা পূর্ণটাই আল্লাহর রাস্তায় দান করে, তাহলে উক্ত দানের সাওয়াবের চেয়ে আল্লাহর রাস্তায় এক সকাল বা এক বিকালের সওয়াব আরও বেশি হবে
    দু্ই. কেউ যদি পুরো দুনিয়া ও দুনিয়ার মধ্যবর্তী সব কিছুর মালিক হয়ে যায় এবং পুরো দুনিয়া উপভোগ করার কল্পনা করা যায়, তাহলে উক্ত উপভোগ থেকে আল্লাহর রাস্তায় এক সকাল বা এক বিকালের ফযীলত ও সওয়াব অনেক শ্রেয় কেননা দুনিয়ার সব ভোগ একদিন শেষ হয়ে যাবে কিন্তু উক্ত সকাল ও বিকালের সওয়াব যে জান্নাতে দেওয়া হবে, তা কখনও শেষ হবার নয়[4]
    প্রথম ব্যাখ্যার পক্ষে অন্য একটি হাদীস প্রমাণ বহন করে ইবনে আব্বাস রাদি. থেকে বর্ণিত,
    عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: بَعَثَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ رَوَاحَةَ فِي سَرِيَّةٍ، فَوَافَقَ ذَلِكَ يَوْمَ الجُمُعَةِ، فَغَدَا أَصْحَابُهُ، فَقَالَ: أَتَخَلَّفُ فَأُصَلِّي مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ أَلْحَقُهُمْ، فَلَمَّا صَلَّى مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَآهُ، فَقَالَ لَهُ: «مَا مَنَعَكَ أَنْ تَغْدُوَ مَعَ أَصْحَابِكَ؟»، فَقَالَ: أَرَدْتُ أَنْ أُصَلِّيَ مَعَكَ ثُمَّ أَلْحَقَهُمْ، فَقَالَ: «لَوْ أَنْفَقْتَ مَا فِي الأَرْضِ مَا أَدْرَكْتَ فَضْلَ غَدْوَتِهِمْ»
    “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহা রাদি.কে এক সেনাদলে প্রেরণ করেন উক্ত দিন জামাবার ছিল আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহার সাথিরা সকালে জিহাদের উদ্ধেশ্যে বের হয়ে যায় কিন্তু তিনি (মনে মনে) বললেন, আমি একটু দেরী করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে নামায পড়ে তাদের সাথে মিলিত হয়ে যাবো রাসূলের সাথে নামায পড়ার পরে রাসূল তাকে দেখে ফেলেন জিজ্ঞাসা করলেন, সাথিদের সাথে সকালে বের হতে তোমাকে কোন বিষয় বাধা দিল? তিনি বললেন, আমি চাচ্ছিলাম, আপনার সাথে নামায পড়ে তাদের সাথে মিলিত হয়ে যাবো রাসূল বলেন, তুমি যদি সমগ্র পৃথিবী আল্লাহর রাস্তায় দান করে দেও, তার পরে তাদের সকালে বের হওয়ার ফযীলত পাবে না[5]
    রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পিছনে মসজিদে নববীতে জুমআর নামায পড়ার সওয়াব জিহাদের এক সকালের সওয়াবের তুলনায় একেবারে তুচ্ছ। যার কারণে রাসূল তাকে কত ধমকির সাথে বলেছেন, “(মাত্র এক জুমআ কি) তুমি যদি সমগ্র পৃথিবী আল্লাহর রাস্তায় দান করে দেও, তার পরে তাদের সকালে বের হওয়ার ফযীলত পাবে না।” আল্লাহু আকবার।
    উল্লেখ্য: হাদীসে বর্ণিত উক্ত ফযীলত শুধু যে সকাল বা বিকাল আল্লাহর রাস্তায় নিজ ঘর থেকে বের হবে, সে সকাল বা বিকালের সাথে নির্দিষ্ট নয় বরং আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়ার পর যত সকাল ও বিকাল অতিবাহিত হবে, সকল সকাল ও বিকালের ক্ষেত্রে হাদীসে বর্ণিত সওয়াব প্রযোজ্য হবে।[6]
    আরও উল্লেখ্য: ‘ফী সাবীলিল্লাহ’ শব্দের প্রয়োগক্ষেত্রের ব্যাপারে ফকীহ ও মুহাদ্দিসদের মাঝে মতভেদ আছে তবে ‘ফী সাবীলিল্লাহ’ এর প্রথম ও সর্বোচ্চ প্রয়োগক্ষেত্র হচ্ছে, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করাএ ব্যাপারে কারও কোন মতভেদ নেই। তাই জিহাদের দ্বারা উক্ত সওয়াব পাওয়া যাবে, এতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই


    [1] সহীহ বুখারী: ২৭৯২, সহীহ মুসলিম: ১৮৮০
    [2] মাশারিউল আশওয়াক: ১/২২৩
    [3] সুনানে আবু দাউদ: ২৪৮৭, মুসনাদে আহমদ: ৬৬২৫, মুসতাদরাকে হাকিম: ২/৮৩, সুনানে বায়হাকী: ১৮/৯৭ ইমাম হাকিম রহ. হাদীসটি মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী সহীহ বলেছেন এবং যাহাবী রহ. তা সমর্থন করেছেন তদ্রূপ মুনযিরি রহ. উক্ত হাদীস উল্লেখ করে কোন মন্তব্য করেননি -মুখতাসারে আবু দাউদ: ২/১৪১
    [4] শরহে মুসলিম: ১৩/২৬, ফাতহুল বারী: ৬/১৪, মাশারিউল আশওয়াক: ১/১২৪
    [5] জামে তিরমিযী: ৫২৭, আল-জিহাদ লিইবনিল মুবারক: পৃ: ৩৪ হাদীসটি ইমাম তিরমিযী রহ. মুত্তাসিল সনদে বর্ণনা করেন, তবে উক্ত সনদ দুটি কারণে দুর্বল হাজ্জাজ বিন আরতাত দুর্বল এবং ‘হাকাম’ ‘মিকসাম’ থেকে মাত্র পাঁচটি হাদীস শুনেছেন; উক্ত হাদীস এর অন্তর্ভুক্ত নয়
    আব্দুল্লাহ বিন মুবারাক রহ. হাসান বসরী রহ. থেকে মুরসাল সনদে বর্ণনা করেছেন উক্ত দুই সনদ মিলিত করলে হাদীসটি শক্তিশালী হয়ে যায়
    [6] শরহে মুসলিম লিননববী: ১৩/২৬, মাশারিউল আশওয়াক: ১/২২৩-১২৪
    رحم الله عبدا صوبني فيما أخطأت وحرضني فيما أصبت

  • #2
    জাযাকুমুল্লাহু খাইরান আখি, আল্লাহ তাআলা আমাদের প্রত্যেক সকাল ও বিকালকে আল্লাহর রাস্তায় কবুল করুন। আমীন।

    Comment

    Working...
    X