2। কর্তব্যজ্ঞান deontology এর সমর্থকদের মতে, কর্ম তার প্রকৃতিগতভাবেই ভাল-মন্দ হয়।
1। যদি কটূক্তি করা ভাল কাজ হয়ে থাকে। তাহলে তা সকলের উপর প্রযোজ্য হবে। এমতাবস্থায় সন্তানের জন্য পিতামাতাকে অপমান করাও ভাল বলে বিবেচিত হবে; যা অগ্রহণযোগ্য।
2। শাতিম মানব সত্বাকে অবমূল্যায়ন করে। যা কর্তব্যজ্ঞানে অনুমোদিত না।
আরও অনেক প্রেক্ষিতে আলোচনা করা যায়। তবে সারমর্ম এই যে, যুক্তির অন্তদ্বন্দ্ব ব্যতীত শাতিমকে এই তত্ত্ব দ্বারা মাসুম সাব্যস্ত করা সবচেয়ে কঠিন।
3। পুণ্য নীতিশাস্ত্র virtue ethics
এরিস্টটলের মতে, সদগুণের শিক্ষা ও সুন্দর জীবন যাপনের দ্বারা ভাল-মন্দ নির্ণয় করা যায়।
এই মতামত আসলে কর্মের ভাল-মন্দ নিয়ে সুস্পষ্ট সমাধান দেয় না। অনেক ভাল লোক অনেক সময় পদস্খলনের শিকার হয়। কাউকে নিশ্চিতরূপে মানদণ্ড হিসাবে কিভাবে নেয়া যায়?
কিন্তু এই অকার্যকর কাঠামো অনুযায়ীও নিশ্চিতরূপে বলা যায়, শাতিম একজন দুষ্কৃতিকারী। কারও ব্যাপারে কটূক্তি করা, অপমানকর কথা বলা কোন ভদ্রলোকের কাজ হতে পারে না।
4। সামাজিক চুক্তি তত্ত্ব
জন লক, থমাস হবসের কাল্পনিক তত্ত্ব অনুযায়ী, মানুষ একে অপরের সাথে সামাজিক নিয়ম মেনে চলতে বাধ্য এবং চুক্তিবদ্ধ।
5। উপস্কার নীতি care ethics
নারীবাদী মুশরিকদের এই তত্ত্বে প্রায়ই আগ্রহী দেখা যায়, যা পারস্পরিক বন্ধুত্ব ও সম্পর্কের উপর গুরুত্ব দিয়ে নৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
6। আপেক্ষিকতাবাদ
এখানে সবই আপেক্ষিক। কারও কাছে যা ভাল, অন্যের কাছে তা খারাপ। এই নীতির অস্তিত্ব-ই আসলে নীতিশাস্ত্রের প্রয়োজনীয়তা অসার করে দেয়। কারও কাছে কটূক্তি করা ভাল কাজ মনে হলে, আমার কাছে তা হত্যার যোগ্য অপরাধ গণ্য হতেই পারে।
7। ঐশী হুকুম
এই তত্ত্ব অনুযায়ী আল্লাহ যা ভাল বলেন তাই ভাল। যা আমাদের অনুকূলে আছে।
8। প্রাকৃতিক আইন তত্ত্ব
এর দাবি অনুযায়ী, মানুষ তার প্রকৃতি বা সত্বাগত কারণে ভাল খারাপ চিনতে পারে। যদিও তা পুরোপুরি সত্য না। ফিতরাতের কারণে কিছু ক্ষেত্রে ঠিক-ভুল আলাদা করা গেলেও সব আলাদা করা যায় না। আল্লাহ বলেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا إِنْ تَتَّقُوا اللهَ يَجْعَلْ لَكُمْ فُرْقَانًا وَيُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ وَاللهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيْمِ
‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় করে চল, তবে আল্লাহ তোমাদের ভাল-মন্দের মধ্যে পার্থক্য করার মানদন্ড (জ্ঞান-বুদ্ধি) দান করবেন।’ (সুরা আনফাল : আয়াত ২৯)
একারনে নানা সীমাবদ্ধতা দেখা যায়। যেমন - মানব প্রকৃতি অস্পষ্ট, বিভিন্ন সমাজে বিভিন্ন জিনিসকে ফিতরাত দাবি করতে পারে, তাই ব্যবহারিক দিকনির্দেশনা পাওয়া যায় না। মানুষের সৃষ্ট আইন ও প্রকৃতি পরস্পর বিরোধী হলে, তখন কি করণীয়? এখানে আবেগ অনুভূতির স্থান নেই। কাজের ফলাফলের ব্যাপারে কোন মাথাব্যথা নেই।
তত্ত্বানুযায়ী, মানুষ জন্মগত মর্যাদা ধারণ করে। তাকে অপমান করা উচিত না।
দয়া মানব প্রকৃতির অংশ। কেউ ভুল করলেও তাকে অপমান করা যায় না।
সামাজিক সৌহার্দ্য বিনষ্টকারী কাজ করা অনুচিত। কটূক্তি এমনই কাজ।
-
মূলত এগুলোই প্রধান প্রধান শাখা। উপরের শাখাগুলোর মধ্যে মিশ্রণ ঘটিয়ে আরও কিছু শাখার বিস্তার ঘটানো হয়েছে। তবে যেহেতু প্রধান শাখায় কটূক্তি খারাপ প্রমাণিত হয়ে গেছে, তা থেকে উৎসারিত নীতিও একই পরামর্শ প্রদান করবে। এই শাখাগুলোর কোন কোনটি phronesis (ব্যবহারিক জ্ঞান) কে গুরুত্ব দেয়। ফ্রোনেসিস ইতিবাচক ফলাফল প্রত্যাশা করে। অপমান বা কটূক্তি আমাদের কোন ইতিবাচক ফলাফল প্রদান করে না। বরং একটা কলহ বা ঝগড়ার উস্কানি দেয়। তাই এই কাজকে ভাল মনে করার কোন যৌক্তিকতাই থাকতে পারে না।
এই বিশাল আলোচনার আসলে কোন প্রয়োজন ছিল না। কারণ স্বাভাবিক বিচার -বুদ্ধি থাকলে শাতিমের কাজকে ভাল মনে করার অবকাশ নেই। তবে সামনের আলোচনার ভিত্তি মজবুত করবে ইনশাআল্লাহ্।
এখন প্রশ্ন হল, অপমান এবং কটূক্তি করা খারাপ, কিন্তু তা কি শাস্তিযোগ্য?
- এর অন্যতম সমস্যার উদাহরণ হল, সত্য বলা সকল অবস্থায় ভাল হলে, পলাতক মজলুমের ব্যাপারে যালিমকে সত্য তথ্য দিতে আপনাকে বাধ্য থাকতে হবে। এভাবে ব্যক্তিকে দোটানায় ফেলে দেয় এই তত্ত্ব।
- বিভিন্ন কাজ বিভিন্ন সমাজে ভাল বা মন্দ হিসাবে অভিহিত হয়। ফলে কোন কাজকে সন্দেহাতীতভাবে ভাল-মন্দ বলে চিহ্নিত করা যায় না।
- অনেক ক্ষেত্রে সদিচ্ছার ফলাফল খারাপ হয়। কিন্তু কর্তব্যজ্ঞান তত্ত্ব সেসব কাজে নিষেধাজ্ঞা দেয় না।
- একাধিক কর্তব্যের মধ্যে একটিকে প্রাধান্য দেয়ার ব্যাপারে আলোচনা নেই।
1। যদি কটূক্তি করা ভাল কাজ হয়ে থাকে। তাহলে তা সকলের উপর প্রযোজ্য হবে। এমতাবস্থায় সন্তানের জন্য পিতামাতাকে অপমান করাও ভাল বলে বিবেচিত হবে; যা অগ্রহণযোগ্য।
2। শাতিম মানব সত্বাকে অবমূল্যায়ন করে। যা কর্তব্যজ্ঞানে অনুমোদিত না।
আরও অনেক প্রেক্ষিতে আলোচনা করা যায়। তবে সারমর্ম এই যে, যুক্তির অন্তদ্বন্দ্ব ব্যতীত শাতিমকে এই তত্ত্ব দ্বারা মাসুম সাব্যস্ত করা সবচেয়ে কঠিন।
3। পুণ্য নীতিশাস্ত্র virtue ethics
এরিস্টটলের মতে, সদগুণের শিক্ষা ও সুন্দর জীবন যাপনের দ্বারা ভাল-মন্দ নির্ণয় করা যায়।
এই মতামত আসলে কর্মের ভাল-মন্দ নিয়ে সুস্পষ্ট সমাধান দেয় না। অনেক ভাল লোক অনেক সময় পদস্খলনের শিকার হয়। কাউকে নিশ্চিতরূপে মানদণ্ড হিসাবে কিভাবে নেয়া যায়?
কিন্তু এই অকার্যকর কাঠামো অনুযায়ীও নিশ্চিতরূপে বলা যায়, শাতিম একজন দুষ্কৃতিকারী। কারও ব্যাপারে কটূক্তি করা, অপমানকর কথা বলা কোন ভদ্রলোকের কাজ হতে পারে না।
4। সামাজিক চুক্তি তত্ত্ব
জন লক, থমাস হবসের কাল্পনিক তত্ত্ব অনুযায়ী, মানুষ একে অপরের সাথে সামাজিক নিয়ম মেনে চলতে বাধ্য এবং চুক্তিবদ্ধ।
- কিন্তু এধরনের চুক্তির কোন ঐতিহাসিক প্রমাণ নেই। মানুষ সর্বদা আবেগের উপর যুক্তিকে প্রাধান্য দিবে এমন অনুমানের উপর প্রতিষ্ঠিত।
- কোন সমাজে জন্মের আগে কাউকে প্রচলিত আইনের প্রতি তার সম্মতি আছে কিনা জিজ্ঞাসা করা হয় না। জন্মের পরে জোরপূর্বক আইন চাপিয়ে দেয়া হয়।
- ব্যক্তি স্বাধীনতার কথা বললেও এসবের বালাই নেই। আপনাকে বিভিন্ন আইন চাপিয়ে দিয়ে ভ্যাকসিন নিতে বাধ্য করা হবে।
- জনগণ রাষ্ট্রের সাথে চুক্তিবদ্ধ, এই অজুহাতে রাষ্ট্র বিভিন্ন যুলুমের আইনি বৈধতা পায়।
- কারও ভালোবাসার হক আদায় কেন ভাল কাজ তার ব্যাখ্যা নেই। ইত্যাদি।
5। উপস্কার নীতি care ethics
নারীবাদী মুশরিকদের এই তত্ত্বে প্রায়ই আগ্রহী দেখা যায়, যা পারস্পরিক বন্ধুত্ব ও সম্পর্কের উপর গুরুত্ব দিয়ে নৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
- এই তত্ত্ব খোলাখুলিভাবে স্বজনপ্রীতিকে উস্কে দেয়। বৃহৎ পরিসরে দেখার সক্ষমতা ও সুযোগ এখানে নেই।
- নীতি ও যুক্তির চেয়ে আবেগের উপর গুরুত্ব বেশি দেয়। এতে তত্ত্বটি নারী বান্ধব হয়ে যায়। অপেক্ষাকৃত কম আবেগ প্রভাবিত পুরুষরা কোনঠাসা হতে পারে। আবার সুস্পষ্ট নীতি অনুসরণ না করায় ভাল-মন্দের বিভেদ ক্ষীণ হয়ে যায়।
6। আপেক্ষিকতাবাদ
এখানে সবই আপেক্ষিক। কারও কাছে যা ভাল, অন্যের কাছে তা খারাপ। এই নীতির অস্তিত্ব-ই আসলে নীতিশাস্ত্রের প্রয়োজনীয়তা অসার করে দেয়। কারও কাছে কটূক্তি করা ভাল কাজ মনে হলে, আমার কাছে তা হত্যার যোগ্য অপরাধ গণ্য হতেই পারে।
7। ঐশী হুকুম
এই তত্ত্ব অনুযায়ী আল্লাহ যা ভাল বলেন তাই ভাল। যা আমাদের অনুকূলে আছে।
8। প্রাকৃতিক আইন তত্ত্ব
এর দাবি অনুযায়ী, মানুষ তার প্রকৃতি বা সত্বাগত কারণে ভাল খারাপ চিনতে পারে। যদিও তা পুরোপুরি সত্য না। ফিতরাতের কারণে কিছু ক্ষেত্রে ঠিক-ভুল আলাদা করা গেলেও সব আলাদা করা যায় না। আল্লাহ বলেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا إِنْ تَتَّقُوا اللهَ يَجْعَلْ لَكُمْ فُرْقَانًا وَيُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ وَاللهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيْمِ
‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় করে চল, তবে আল্লাহ তোমাদের ভাল-মন্দের মধ্যে পার্থক্য করার মানদন্ড (জ্ঞান-বুদ্ধি) দান করবেন।’ (সুরা আনফাল : আয়াত ২৯)
একারনে নানা সীমাবদ্ধতা দেখা যায়। যেমন - মানব প্রকৃতি অস্পষ্ট, বিভিন্ন সমাজে বিভিন্ন জিনিসকে ফিতরাত দাবি করতে পারে, তাই ব্যবহারিক দিকনির্দেশনা পাওয়া যায় না। মানুষের সৃষ্ট আইন ও প্রকৃতি পরস্পর বিরোধী হলে, তখন কি করণীয়? এখানে আবেগ অনুভূতির স্থান নেই। কাজের ফলাফলের ব্যাপারে কোন মাথাব্যথা নেই।
তত্ত্বানুযায়ী, মানুষ জন্মগত মর্যাদা ধারণ করে। তাকে অপমান করা উচিত না।
দয়া মানব প্রকৃতির অংশ। কেউ ভুল করলেও তাকে অপমান করা যায় না।
সামাজিক সৌহার্দ্য বিনষ্টকারী কাজ করা অনুচিত। কটূক্তি এমনই কাজ।
-
মূলত এগুলোই প্রধান প্রধান শাখা। উপরের শাখাগুলোর মধ্যে মিশ্রণ ঘটিয়ে আরও কিছু শাখার বিস্তার ঘটানো হয়েছে। তবে যেহেতু প্রধান শাখায় কটূক্তি খারাপ প্রমাণিত হয়ে গেছে, তা থেকে উৎসারিত নীতিও একই পরামর্শ প্রদান করবে। এই শাখাগুলোর কোন কোনটি phronesis (ব্যবহারিক জ্ঞান) কে গুরুত্ব দেয়। ফ্রোনেসিস ইতিবাচক ফলাফল প্রত্যাশা করে। অপমান বা কটূক্তি আমাদের কোন ইতিবাচক ফলাফল প্রদান করে না। বরং একটা কলহ বা ঝগড়ার উস্কানি দেয়। তাই এই কাজকে ভাল মনে করার কোন যৌক্তিকতাই থাকতে পারে না।
এই বিশাল আলোচনার আসলে কোন প্রয়োজন ছিল না। কারণ স্বাভাবিক বিচার -বুদ্ধি থাকলে শাতিমের কাজকে ভাল মনে করার অবকাশ নেই। তবে সামনের আলোচনার ভিত্তি মজবুত করবে ইনশাআল্লাহ্।
এখন প্রশ্ন হল, অপমান এবং কটূক্তি করা খারাপ, কিন্তু তা কি শাস্তিযোগ্য?