উৎসাহ প্রদান করা - খোশ খবর প্রদান করা এগুলো আমরা রাসুলুল্লাহ ﷺ এর পবিত্র সীরাত থেকে পাই।
আমি প্রথম যখন শাইখ আব্দুল্লাহ আযযাম রহঃ এর তাফসিরে সূরা তাওবার শুরুতে শাইখের একটা কথা পাই এমন যে, আমার বয়স মাত্র "এত" বছর [সংখ্যাটা স্মরণ নাই] তিনি শুধু জিহাদি জীবনের সময় কাল বুঝিয়েছেন, তখন আমি বেশ অবাক হয়েছিলাম। এজন্য যে, আমি অবশ্যই মনে করিনি তিনি এটি নিছক কথার জন্য বলেছেন। এটিই আমাকে বিস্মিত করেছিলো জিহাদের মধ্যে কি এমন ছিল! কি এমন শায়েখ পেয়েছিলেন!
আমার জন্য সে সময়ে এ প্রশ্নের উত্তর অজানা ছিল। তবে মনের কোনে গোপন আশায় ছিলো আল্লাহ একদিন বুঝার তাউফিক্ব দিবেন।
আমি যখন "জিহাদ" নিয়ে ভাবতে শুরু করি, আলহামদুলিল্লাহ আমার মুখে হাসি চলে আসে। এ এক অদ্ভুত আমল! রাসুলুল্লাহ ﷺ পর্যন্ত বলেছেন - "আমি তো এর মত কিছু পাচ্ছিনা"
আল্লাহর নিকট বড় প্রিয় আমলঃ
কেন জিহাদ এত প্রশান্তির? আল্লাহর কাছে অনেক প্রিয় এক আমল এই জিহাদ। এর দ্বারা আল্লাহর দ্বীনের হেফাযত হয়। আল্লাহর কথা, আল্লাহর বিধান, আল্লাহর হুকুম এসকল কিছুই হেফাযত হয় জিহাদের মাধ্যমে। লক্ষ্য করি, আল্লাহ কি আমাদের মুখাপেক্ষী? নাউজুবিল্লাহ! তিনি সুবহানাহু ওয়াতায়ালা এর থেকে কতই না পবিত্র! তবুও তিনি দয়া করে আমাদের জন্য এই আমলের অনুমতি দিয়েছেন, যা অনেক উম্মতের সৌভাগ্য হয়নি। তারা আল্লাহর দুশমনদের সাথে লড়ার এবং লড়ে তাদের কলিজা খুলে নেয়ার কিংবা নিজের বুকে খুনের পেয়ালা বানিয়ে নেয়ার সৌভাগ্য পায়নি! আল্লাহ আমাদের তা দিয়েছেন!
একবার ভাবুন না - আল্লাহ আমাকে, আপনাকে, আমাদেরকে তাঁর দ্বীনের হেফাজতের জিম্মা দিয়েছেন! ভাবা যায়! আসমান এবং জমিন সমূহের মালিক বলছেন, -
قَاتِلُوهُمْ يُعَذِّبْهُمُ اللّهُ بِأَيْدِيكُمْ وَيُخْزِهِمْ وَيَنصُرْكُمْ عَلَيْهِمْ وَيَشْفِ صُدُورَ قَوْمٍ مُّؤْمِنِينَ
যুদ্ধ কর ওদের সাথে, আল্লাহ তোমাদের হাত দিয়ে তাদের শাস্তি দেবেন। তাদের লাঞ্ছিত করবেন, তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের জয়ী করবেন এবং মুসলমানদের অন্তরসমূহ শান্ত করবেন।
এবং মুসলমানদের অন্তরসমূহ শান্ত করবেন। - আল্লাহুআকবর! আল্লাহ নিজেই তাদের শাস্তি দেয়ার জন্য যথেষ্ট ছিলেন! তবুও তিনি আমাদের অন্তরের প্রশান্তির জন্য তাদের কলিজা ছিঁড়ে ফেলার সুযোগ দিলেন। তাদের ছিন্ন ভিন্ন দেহ যেমন আমাদের প্রশান্তি দেয় একই ভাবে আমাদের মধ্যে থেকে যাদের বুকে খুনের পেয়ালা হয়ে যায় সে দৃশ্যও আমাদের অন্তরে সুকুন নিয়ে আসে!
এসকল কিছু তো জিহাদের মাধ্যমেই!
শাহাদতের রাস্তা জিহাদঃ
শহীদের সম্মান, মর্যাদা, ফাজায়েল আলহামদুলিল্লাহ আমরা কমবেশী জানি। একটা আয়াত যদি দেখা হয় -
وَمَن يُطِعِ اللّهَ وَالرَّسُولَ فَأُوْلَـئِكَ مَعَ الَّذِينَ أَنْعَمَ اللّهُ عَلَيْهِم مِّنَ النَّبِيِّينَ وَالصِّدِّيقِينَ وَالشُّهَدَاء وَالصَّالِحِينَ وَحَسُنَ أُولَـئِكَ رَفِيقًا
আর যে কেউ আল্লাহর হুকুম এবং তাঁর রসূলের হুকুম মান্য করবে, তাহলে যাঁদের প্রতি আল্লাহ নেয়ামত দান করেছেন, সে তাঁদের সঙ্গী হবে। তাঁরা হলেন নবী, ছিদ্দীক, শহীদ ও সৎকর্মশীল ব্যক্তিবর্গ। আর তাদের সান্নিধ্যই হল উত্তম।
আল্লাহ এখানে সম্মানিতদের স্তর বিন্যাসে বলছেন, সর্বপ্রথম নাবী গণ, এরপরে সিদ্দিক গণ, এরপরেই শুহাদা! এই প্রথম ৩ সারির সম্মানিতদের স্তরে দাঁড়ানোর সুযোগ এনে দেয় শাহাদাত! আল্লাহর সামনে সম্মানিতদের প্রথম ৩ টি কাতারের একটি হচ্ছে শহীদদের কাতার! আল্লাহু আকবর! ভাবা যায়!
আসুন না, একবার চোখ বন্ধ করে ভাবি - আল্লাহ সম্মানিতদের কাতারের ঘোষণা দিচ্ছেন। প্রথম কাতার নাবী এবং রাসুলগণ, এরপরে সিদ্দিক গণ এবং এরপরেই আশ শুহাদা! কেমন হয় যদি সেই কাতারের একটু ফাকে ফোকরে আমি আপনি ঢুকে যেতে পারি! আমরা সম্মানিতদের তৃতীয় কাতারে!
কতই না মানুষ হবে সেদিন, আর কতই না কাতার হবে, যার তৃতীয় কাতারে আপনি, আমি আমরা ইনশা আল্লাহ! কেমন হতে পারে!
এই তো সেই রাস্তা - সাবিলুনা সাবিলুনা ... আল জিহাদ আল জিহাদ!
প্রশংসার মালিক তিনি জিহাদের মালিক যিনি!
জিহাদের রাস্তা এক অনন্য রাস্তা! এর বিবরণ দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। কারণ একেক জনের জন্য এই রাস্তার বিবরন একেক রকম! এক ভাই বলছেন, ভাই আমি এত শান্তিতে আছি যে ভয় হচ্ছে এত শান্তি কেন!
আমরা যদি কথাটা শুধু কান দিয়ে না শুনে দিল দিয়ে শুনতাম তাহলে আমরা থমকে যেতে বাধ্য হতাম। কারণ যেখানে কারো মনে শান্তি নেই, সবাই যখন শান্তির খোঁজে উদ্ভ্রান্ত, সেখানে ভাই বলছেন, "ভাই আমি এত শান্তিতে আছি যে ভয় হচ্ছে এত শান্তি কেন!"
জিহাদের এক ভিন্ন চেহারা আমাদের সামনে হাজির! ভয়ংকর চেহারা, কষ্টের চেহারা, বিপদ আপদের চেহারা! আমি বলছিনা জিহাদে কষ্ট, ব্যাথা, বিপদ নেই। কিন্তু এগুলো ব্যাখ্যা যথার্থ নয়। এর আগে একটু বলে নেই, ফিজিশিয়ানদের মতে দুনিয়াতে সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাথার একটি হচ্ছে "প্রসব বেদনা" একজন মা এটি খুব ভালো করেই জানেন। অথচ এরপরেও অনাগত সন্তানের আগমনে তিনি এত খুশি হোন কিভাবে!
কখনো প্রাপ্তি এত বড় হয় যে, প্রাপ্তির লোভ ব্যাথার প্রতি লোভাতুর করে তোলে, আগ্রহী করে তুলে!
যে মরে যায় তাকে মৃতই বলা হয়, বলতে হয়। কেউ তাকে জীবিত বলেনা, বলা যায়না। অথচ আল্লাহ আসমানের উপর থেকে এক শ্রেণীর ব্যাপারে জানিয়ে দিচ্ছেন -
وَلاَ تَقُولُواْ لِمَنْ يُقْتَلُ فِي سَبيلِ اللّهِ أَمْوَاتٌ بَلْ أَحْيَاء وَلَكِن لاَّ تَشْعُرُونَ
আর যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়, তাদের মৃত বলো না। বরং তারা জীবিত, কিন্তু তোমরা তা বুঝ না।
তাদের মৃত বলোনা, তারা জীবিত, আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের কাছে রিজিক পৌঁছানো হয়!
কিংবা - হাশরের কঠিন দিনে যখন সবাই দুশ্চিন্তায় থাকবে এমন সময়ে একটা শ্রেণী আল্লাহর পবিত্র আরশের নিচে সবুজ পাখি হয়ে বিশ্রাম নিবে, জান্নাতের যেখানে ইচ্ছা সেখানে উড়ে বেড়াবে! একবার চোখ বন্ধ করে ভেবে দেখুন না, আল্লাহর পবিত্র আরশের নিচে আপনি!
হোক না কুরবান এই জীবন হাজার বার, ঝুলে থাকা হোক সে আরশের নিচে একবার!
একবার যে আরশের নিচে সবুজ পাখি হয়ে বসার অনুমতি পাবে সে তো সফল হয়েই গেল!
কিংবা ভেবে দেখুন তো সে দলটির কথা - যারা জান্নাতের বিছানায় গড়াগড়ি খাবে আর আল্লাহ তাদের দিকে তাকিয়ে হাসবেন আর বলবেন - "এরা আমার প্রেমে পাগল বান্দা!
ভাই - যদি এগুলো আমাদের সামনে থাকে তাহলে পথের সেই কষ্ট আসলে কিছুই না।
আপনি বিশ্বাস করুন, আপনি যে কষ্ট পাচ্ছেন সেই একই কষ্ট আরো অনেকেই পাচ্ছে, আপনার থেকে বেশীই পাচ্ছে। কিন্তু তারা আপনার মত এই পথের পথিক হবার সৌভাগ্য পায়নি।
তাই - যে কথাটি বলেছিলাম, এই পথে কষ্ট আছে, বিপদ আছে কিন্তু সেগুলোর ব্যাখ্যা যথার্থ নয় কারণ আল্লাহর হাসির সামনে আর কী এমন বিপদ, বিপদ হতে পারে!
আল্লাহ জিহাদের মাধ্যমে আপনার হাত দিয়ে দ্বীনকে মেহফুজ করবেন, সু সংহত করবেন - এ ব্যাপারে আপনি কী ভাবছেন! ওয়ার মেমোরিয়াল দেখা হয়েছে আশা করি। যুদ্ধে নিহতদের নাম লিখে রাখা হয়। আল্লাহ কিয়ামতের দিন আমাদের নাম উপস্থিত করবেন তাঁর দ্বীনের যোদ্ধা হিসেবে ভাবা যায়! সমস্ত মালাইকা জানবেন, সমস্ত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম গণ জানবেন, সমস্ত ইনসান জানবে, সমস্ত জিন্ন জানবে এরাই তারা ...
এরাই হল শ্রেষ্ঠ রাসূলের, শ্রেষ্ঠ উম্মাতের শহীদগণ!
এমন আরো কতই না সম্মান এবং ইজ্জতের কথা বলা যায়!
তাই আজকের লেখার একটা উদ্দেশ্য এই যে উৎসাহ প্রদান করা। আজ হক্ক বাতিলের এই চূড়ান্ত সন্ধিক্ষনে চলুন আমরা জিহাদের পয়গাম নিয়ে যাই উৎসাহের সাথে!
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا هَلْ أَدُلُّكُمْ عَلَى تِجَارَةٍ تُنجِيكُم مِّنْ عَذَابٍ أَلِيمٍ
মুমিনগণ, আমি কি তোমাদেরকে এমন এক বানিজ্যের সন্ধান দিব, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে মুক্তি দেবে?
تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَتُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنفُسِكُمْ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ
তা এই যে, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং আল্লাহর পথে নিজেদের ধন-সম্পদ ও জীবনপণ করে জিহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্যে উত্তম; যদি তোমরা বোঝ।
يَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَيُدْخِلْكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ وَمَسَاكِنَ طَيِّبَةً فِي جَنَّاتِ عَدْنٍ ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
তিনি তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করবেন এবং এমন জান্নাতে দাখিল করবেন, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত এবং বসবাসের জান্নাতে উত্তম বাসগৃহে। এটা মহাসাফল্য।
وَأُخْرَى تُحِبُّونَهَا نَصْرٌ مِّنَ اللَّهِ وَفَتْحٌ قَرِيبٌ وَبَشِّرِ الْمُؤْمِنِينَ
এবং আরও একটি অনুগ্রহ দিবেন, যা তোমরা পছন্দ কর। আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য এবং আসন্ন বিজয়। মুমিনদেরকে এর সুসংবাদ দান করুন।
আমি প্রথম যখন শাইখ আব্দুল্লাহ আযযাম রহঃ এর তাফসিরে সূরা তাওবার শুরুতে শাইখের একটা কথা পাই এমন যে, আমার বয়স মাত্র "এত" বছর [সংখ্যাটা স্মরণ নাই] তিনি শুধু জিহাদি জীবনের সময় কাল বুঝিয়েছেন, তখন আমি বেশ অবাক হয়েছিলাম। এজন্য যে, আমি অবশ্যই মনে করিনি তিনি এটি নিছক কথার জন্য বলেছেন। এটিই আমাকে বিস্মিত করেছিলো জিহাদের মধ্যে কি এমন ছিল! কি এমন শায়েখ পেয়েছিলেন!
আমার জন্য সে সময়ে এ প্রশ্নের উত্তর অজানা ছিল। তবে মনের কোনে গোপন আশায় ছিলো আল্লাহ একদিন বুঝার তাউফিক্ব দিবেন।
আমি যখন "জিহাদ" নিয়ে ভাবতে শুরু করি, আলহামদুলিল্লাহ আমার মুখে হাসি চলে আসে। এ এক অদ্ভুত আমল! রাসুলুল্লাহ ﷺ পর্যন্ত বলেছেন - "আমি তো এর মত কিছু পাচ্ছিনা"
আল্লাহর নিকট বড় প্রিয় আমলঃ
কেন জিহাদ এত প্রশান্তির? আল্লাহর কাছে অনেক প্রিয় এক আমল এই জিহাদ। এর দ্বারা আল্লাহর দ্বীনের হেফাযত হয়। আল্লাহর কথা, আল্লাহর বিধান, আল্লাহর হুকুম এসকল কিছুই হেফাযত হয় জিহাদের মাধ্যমে। লক্ষ্য করি, আল্লাহ কি আমাদের মুখাপেক্ষী? নাউজুবিল্লাহ! তিনি সুবহানাহু ওয়াতায়ালা এর থেকে কতই না পবিত্র! তবুও তিনি দয়া করে আমাদের জন্য এই আমলের অনুমতি দিয়েছেন, যা অনেক উম্মতের সৌভাগ্য হয়নি। তারা আল্লাহর দুশমনদের সাথে লড়ার এবং লড়ে তাদের কলিজা খুলে নেয়ার কিংবা নিজের বুকে খুনের পেয়ালা বানিয়ে নেয়ার সৌভাগ্য পায়নি! আল্লাহ আমাদের তা দিয়েছেন!
একবার ভাবুন না - আল্লাহ আমাকে, আপনাকে, আমাদেরকে তাঁর দ্বীনের হেফাজতের জিম্মা দিয়েছেন! ভাবা যায়! আসমান এবং জমিন সমূহের মালিক বলছেন, -
قَاتِلُوهُمْ يُعَذِّبْهُمُ اللّهُ بِأَيْدِيكُمْ وَيُخْزِهِمْ وَيَنصُرْكُمْ عَلَيْهِمْ وَيَشْفِ صُدُورَ قَوْمٍ مُّؤْمِنِينَ
যুদ্ধ কর ওদের সাথে, আল্লাহ তোমাদের হাত দিয়ে তাদের শাস্তি দেবেন। তাদের লাঞ্ছিত করবেন, তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের জয়ী করবেন এবং মুসলমানদের অন্তরসমূহ শান্ত করবেন।
এবং মুসলমানদের অন্তরসমূহ শান্ত করবেন। - আল্লাহুআকবর! আল্লাহ নিজেই তাদের শাস্তি দেয়ার জন্য যথেষ্ট ছিলেন! তবুও তিনি আমাদের অন্তরের প্রশান্তির জন্য তাদের কলিজা ছিঁড়ে ফেলার সুযোগ দিলেন। তাদের ছিন্ন ভিন্ন দেহ যেমন আমাদের প্রশান্তি দেয় একই ভাবে আমাদের মধ্যে থেকে যাদের বুকে খুনের পেয়ালা হয়ে যায় সে দৃশ্যও আমাদের অন্তরে সুকুন নিয়ে আসে!
এসকল কিছু তো জিহাদের মাধ্যমেই!
শাহাদতের রাস্তা জিহাদঃ
শহীদের সম্মান, মর্যাদা, ফাজায়েল আলহামদুলিল্লাহ আমরা কমবেশী জানি। একটা আয়াত যদি দেখা হয় -
وَمَن يُطِعِ اللّهَ وَالرَّسُولَ فَأُوْلَـئِكَ مَعَ الَّذِينَ أَنْعَمَ اللّهُ عَلَيْهِم مِّنَ النَّبِيِّينَ وَالصِّدِّيقِينَ وَالشُّهَدَاء وَالصَّالِحِينَ وَحَسُنَ أُولَـئِكَ رَفِيقًا
আর যে কেউ আল্লাহর হুকুম এবং তাঁর রসূলের হুকুম মান্য করবে, তাহলে যাঁদের প্রতি আল্লাহ নেয়ামত দান করেছেন, সে তাঁদের সঙ্গী হবে। তাঁরা হলেন নবী, ছিদ্দীক, শহীদ ও সৎকর্মশীল ব্যক্তিবর্গ। আর তাদের সান্নিধ্যই হল উত্তম।
আল্লাহ এখানে সম্মানিতদের স্তর বিন্যাসে বলছেন, সর্বপ্রথম নাবী গণ, এরপরে সিদ্দিক গণ, এরপরেই শুহাদা! এই প্রথম ৩ সারির সম্মানিতদের স্তরে দাঁড়ানোর সুযোগ এনে দেয় শাহাদাত! আল্লাহর সামনে সম্মানিতদের প্রথম ৩ টি কাতারের একটি হচ্ছে শহীদদের কাতার! আল্লাহু আকবর! ভাবা যায়!
আসুন না, একবার চোখ বন্ধ করে ভাবি - আল্লাহ সম্মানিতদের কাতারের ঘোষণা দিচ্ছেন। প্রথম কাতার নাবী এবং রাসুলগণ, এরপরে সিদ্দিক গণ এবং এরপরেই আশ শুহাদা! কেমন হয় যদি সেই কাতারের একটু ফাকে ফোকরে আমি আপনি ঢুকে যেতে পারি! আমরা সম্মানিতদের তৃতীয় কাতারে!
কতই না মানুষ হবে সেদিন, আর কতই না কাতার হবে, যার তৃতীয় কাতারে আপনি, আমি আমরা ইনশা আল্লাহ! কেমন হতে পারে!
এই তো সেই রাস্তা - সাবিলুনা সাবিলুনা ... আল জিহাদ আল জিহাদ!
প্রশংসার মালিক তিনি জিহাদের মালিক যিনি!
জিহাদের রাস্তা এক অনন্য রাস্তা! এর বিবরণ দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। কারণ একেক জনের জন্য এই রাস্তার বিবরন একেক রকম! এক ভাই বলছেন, ভাই আমি এত শান্তিতে আছি যে ভয় হচ্ছে এত শান্তি কেন!
আমরা যদি কথাটা শুধু কান দিয়ে না শুনে দিল দিয়ে শুনতাম তাহলে আমরা থমকে যেতে বাধ্য হতাম। কারণ যেখানে কারো মনে শান্তি নেই, সবাই যখন শান্তির খোঁজে উদ্ভ্রান্ত, সেখানে ভাই বলছেন, "ভাই আমি এত শান্তিতে আছি যে ভয় হচ্ছে এত শান্তি কেন!"
জিহাদের এক ভিন্ন চেহারা আমাদের সামনে হাজির! ভয়ংকর চেহারা, কষ্টের চেহারা, বিপদ আপদের চেহারা! আমি বলছিনা জিহাদে কষ্ট, ব্যাথা, বিপদ নেই। কিন্তু এগুলো ব্যাখ্যা যথার্থ নয়। এর আগে একটু বলে নেই, ফিজিশিয়ানদের মতে দুনিয়াতে সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাথার একটি হচ্ছে "প্রসব বেদনা" একজন মা এটি খুব ভালো করেই জানেন। অথচ এরপরেও অনাগত সন্তানের আগমনে তিনি এত খুশি হোন কিভাবে!
কখনো প্রাপ্তি এত বড় হয় যে, প্রাপ্তির লোভ ব্যাথার প্রতি লোভাতুর করে তোলে, আগ্রহী করে তুলে!
যে মরে যায় তাকে মৃতই বলা হয়, বলতে হয়। কেউ তাকে জীবিত বলেনা, বলা যায়না। অথচ আল্লাহ আসমানের উপর থেকে এক শ্রেণীর ব্যাপারে জানিয়ে দিচ্ছেন -
وَلاَ تَقُولُواْ لِمَنْ يُقْتَلُ فِي سَبيلِ اللّهِ أَمْوَاتٌ بَلْ أَحْيَاء وَلَكِن لاَّ تَشْعُرُونَ
আর যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়, তাদের মৃত বলো না। বরং তারা জীবিত, কিন্তু তোমরা তা বুঝ না।
তাদের মৃত বলোনা, তারা জীবিত, আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের কাছে রিজিক পৌঁছানো হয়!
কিংবা - হাশরের কঠিন দিনে যখন সবাই দুশ্চিন্তায় থাকবে এমন সময়ে একটা শ্রেণী আল্লাহর পবিত্র আরশের নিচে সবুজ পাখি হয়ে বিশ্রাম নিবে, জান্নাতের যেখানে ইচ্ছা সেখানে উড়ে বেড়াবে! একবার চোখ বন্ধ করে ভেবে দেখুন না, আল্লাহর পবিত্র আরশের নিচে আপনি!
হোক না কুরবান এই জীবন হাজার বার, ঝুলে থাকা হোক সে আরশের নিচে একবার!
একবার যে আরশের নিচে সবুজ পাখি হয়ে বসার অনুমতি পাবে সে তো সফল হয়েই গেল!
কিংবা ভেবে দেখুন তো সে দলটির কথা - যারা জান্নাতের বিছানায় গড়াগড়ি খাবে আর আল্লাহ তাদের দিকে তাকিয়ে হাসবেন আর বলবেন - "এরা আমার প্রেমে পাগল বান্দা!
ভাই - যদি এগুলো আমাদের সামনে থাকে তাহলে পথের সেই কষ্ট আসলে কিছুই না।
আপনি বিশ্বাস করুন, আপনি যে কষ্ট পাচ্ছেন সেই একই কষ্ট আরো অনেকেই পাচ্ছে, আপনার থেকে বেশীই পাচ্ছে। কিন্তু তারা আপনার মত এই পথের পথিক হবার সৌভাগ্য পায়নি।
তাই - যে কথাটি বলেছিলাম, এই পথে কষ্ট আছে, বিপদ আছে কিন্তু সেগুলোর ব্যাখ্যা যথার্থ নয় কারণ আল্লাহর হাসির সামনে আর কী এমন বিপদ, বিপদ হতে পারে!
আল্লাহ জিহাদের মাধ্যমে আপনার হাত দিয়ে দ্বীনকে মেহফুজ করবেন, সু সংহত করবেন - এ ব্যাপারে আপনি কী ভাবছেন! ওয়ার মেমোরিয়াল দেখা হয়েছে আশা করি। যুদ্ধে নিহতদের নাম লিখে রাখা হয়। আল্লাহ কিয়ামতের দিন আমাদের নাম উপস্থিত করবেন তাঁর দ্বীনের যোদ্ধা হিসেবে ভাবা যায়! সমস্ত মালাইকা জানবেন, সমস্ত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম গণ জানবেন, সমস্ত ইনসান জানবে, সমস্ত জিন্ন জানবে এরাই তারা ...
এরাই হল শ্রেষ্ঠ রাসূলের, শ্রেষ্ঠ উম্মাতের শহীদগণ!
এমন আরো কতই না সম্মান এবং ইজ্জতের কথা বলা যায়!
তাই আজকের লেখার একটা উদ্দেশ্য এই যে উৎসাহ প্রদান করা। আজ হক্ক বাতিলের এই চূড়ান্ত সন্ধিক্ষনে চলুন আমরা জিহাদের পয়গাম নিয়ে যাই উৎসাহের সাথে!
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا هَلْ أَدُلُّكُمْ عَلَى تِجَارَةٍ تُنجِيكُم مِّنْ عَذَابٍ أَلِيمٍ
মুমিনগণ, আমি কি তোমাদেরকে এমন এক বানিজ্যের সন্ধান দিব, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে মুক্তি দেবে?
تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَتُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنفُسِكُمْ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ
তা এই যে, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং আল্লাহর পথে নিজেদের ধন-সম্পদ ও জীবনপণ করে জিহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্যে উত্তম; যদি তোমরা বোঝ।
يَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَيُدْخِلْكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ وَمَسَاكِنَ طَيِّبَةً فِي جَنَّاتِ عَدْنٍ ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
তিনি তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করবেন এবং এমন জান্নাতে দাখিল করবেন, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত এবং বসবাসের জান্নাতে উত্তম বাসগৃহে। এটা মহাসাফল্য।
وَأُخْرَى تُحِبُّونَهَا نَصْرٌ مِّنَ اللَّهِ وَفَتْحٌ قَرِيبٌ وَبَشِّرِ الْمُؤْمِنِينَ
এবং আরও একটি অনুগ্রহ দিবেন, যা তোমরা পছন্দ কর। আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য এবং আসন্ন বিজয়। মুমিনদেরকে এর সুসংবাদ দান করুন।
Comment