২০০১ সালের ১১-ই সেপ্টেম্বর, কোল্ড ওয়ারে জেতার পর আমেরিকা তখন ছিলো বিশ্বের একমাত্র পরাশক্তি। সারাবিশ্বে তখন একটাই সুপার পাওয়ার, আমেরিকা। কিন্তু কে জানত যে, তাদের এই ইউনিপোলার ক্ষমতার উপর কিছুক্ষণ পরেই একটা আঘাত হবে? যেই আঘাতে মিসমার হয়ে যাবে তাদের সব অহংকার, চূর্ণ হবে সব দম্ভ।
হ্যাঁ, সেই দিনটা ছিলো আমেরিকার ধ্বংসের শুরু। সেইদিন থেকে তার অর্থনীতি ও সমরনীতির পতনকালের সূচনা ঘটে।
কিন্তু, ৯/১১ এর সেই বরকময় দিনের পর বিশ্ব দুইভাগে ভাগ হয়ে যায়। এক ভাগের দাবি= "মুসলিমরা এটা করতেই পারে না, এই না খেয়ে মরতে থাকা জাতি আবার সুপার পাওয়ার এর উপর অ্যাটাক করবে! হুহ! ইম্পোসিবল"
আরেক ভাগ এই অ্যাটাকের পর দেখতে পায় এক নবসূর্যোদয়। তারা বুঝতে পারে যে একজন রব আছেন, যিনি আমেরিকার থেকেও বেশি ক্ষমতার অধিকারী, যিনি কোনো জাতির অবস্থা যখন পরিবর্তন করতে চান তখন তার প্রেক্ষাপট তৈরি করে দেন।
যাইহোক, সেই দিনের পর থেকেই টুইন টাওয়ারের সেই বরকতময় হামলা পরিণত হয় একটা কন্ট্রোভার্শাল ম্যাটারে। সেই হামলাটা আসলেই লাদেন (রাহিঃ) করেছিলেন নাকি ওটা ইনসাইড জব ছিলো, আজকে তা নিয়ে বিশ্লেষণে বসবো না। আজকে এটা বোঝার ট্রাই করি যে ইনসাইড জব হোক আর না-ই হোক, এই দিনটা তবুও কেনো আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
তো দেখেন, আমাদের খেলাফত ব্যবস্থার পতনের মাধ্যমে নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার প্রতিষ্ঠার রাস্তা কন্টকহীন হয়ে পরে। (নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার সম্পর্কে জানতে পড়ুন, "ইতিহাসের আয়নায় বর্তমান বিশ্বব্যবস্থা, ওল্ড ওয়ার্ল্ড অর্ডার থেকে নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার") খেলাফত পতনের পর সারাবিশ্বের মুসলিম উম্মাহ অভিভাবকহীন হয়ে পরে। তাদের অবস্থা ছিলো ক্ষুধার্ত হায়েনাদের সামনে পরে থাকা এক অসহায় শিশুর মতো। কিন্তু তখনও যে মুসলিমরা শুধু হাতের ওপর হাত রেখে বসে ছিলো, এমনটা নয়। বিভিন্ন জায়গায় মুসলিম সিংহশাবকেরা আগ্রাসী কুফফার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করছিলো। ইমাম শামিল, ওমর আল মুখতার, শহীদ তিতুমীর, হাজী শরীয়তুল্লাহ, সাইয়্যেদ আহমাদ শহীদ, দুদুমিয়া, বাদশামিয়া, আল খাত্তাবি আর বিন বাদিসের মতো সূর্য সন্তানেরা এই উম্মতের বিপদের সময়ের আশ্রয় হিসেবে উঠে দাড়ান এবং ফ্রান্স, স্পেন আর ব্রিটেইনের মতো ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে এক হাতে কুরআন আর আরেক হাতে বন্দুক নিয়ে রুখে দাড়ান। কিন্তু বিভিন্ন দূর্বলতার কারণে তাদের জিহাদ পরিপূর্ণ সফলতার মুখ দেখে নি।
তারপর অনেক নাটক-তামাশার পর ব্রিটেনরা আমেরিকার সাথে তাদের তথাকথিত খেল-তামাশা মার্কা যুদ্ধে জড়িয়ে আমেরিকাকে স্বাধীন করে দেয়। এবং পূর্বের ঔপনিবেশিক আমলের সমাপ্তি ঘটে সূচনা হয় নব্য-উপনিবেশবাদের। পূর্বে ক্রুসেডাররা সরাসরি তাদের সৈন্য-সামন্ত পাঠিয়ে দেশ দখল করলেও এখন থেকে তারা বুদ্ধিবৃত্তিক আগ্রাসন চালিয়ে দেশ দখল করতে থাকে। আর যেসকল শাসক বুদ্ধিবৃত্তিক এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় তাদের উপর সরাসরি মিলিটারি ক্যু চালিয়ে ক্ষমতাচ্যুত করা হয় এবং পশ্চিমের অনুগত দাসকে ক্ষমতায় বসানো হয়। ফলে বাহ্যিক দিক থেকে স্বাধীন মনে হলেও মূলত বিশ্ব এখনো উপনিবেশের শিকার।(শয়তানের এক মাথা কেটে আরেক মাথা লাগানো আর কি। কারণ, সেই হোয়াইট আমেরিকানরা মূলত গ্রেট ব্রিটেইনেরই বংশধর। জর্জ ওয়াশিংটন নিজেই ইংরেজ সেনাবাহিনীর সদস্য ছিলো। ব্রিটেইন জানত যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তারা সুপার পাওয়ার থাকলে সারাবিশ্বের মানুষের গালি তাদেরই খেতে হবে। তারা বিশ্বে যে সভ্যতার সবক দেয় সেটার তীর তাদের দিকে ঘুরিয়ে দিয়েই তাদের থেকে হিন্দুস্তান হতে লুণ্ঠিত সম্পদের হিসাব চাওয়া হবে। তাই তারা কৌশলে ক্ষমতায় তাদেরই জাত ভাই আমেরিকাকে বসিয়ে দেয়। ফলে তারা বিশ্বের গালি হতে বেচে যায়। গণতন্ত্রও মূলত এভাবেই কাজ করে, এক ইবলিশ আকাম করে চলে যাওয়ার পর পরবর্তী ইবলিশের কাছে যখন আগের ইবলিশের কৃতকর্মের হিসাব চাওয়া হয় তখন সেই ইবলিশ বলে, "আমি তো এই বিষয়ে কিছুই জানি না"। হোয়াইট হাউজে ট্রাম্প-গং কর্তৃক জেলেনেস্কিকে হেনস্থা এই কথার এক বাস্তব প্রমাণ।)
তো আমেরিকার স্বাধীনতার পর সে ইহুদিদের সাহায্যে অর্থনীতিতে বিপুল উন্নতি সাধন করে। রথসচাইল্ডের সম্পদ দিয়ে আমেরিকা ফুলে ফেপে ওঠে। সুলতান আব্দুল হামিদ সানী (রাহিঃ) এর ভাষায় বলতে গেলে, "ওরা(রথসচাইল্ড) ব্রিটেইনকে আমেরিকার কাছে বেচে দিয়েছে"। যেখানে ইউরোপের দেশগুলোর মরার মতো অবস্থা ছিলো, সেখানে আমেরিকাতে তখন স্বর্ণযুগ চলছিলো।
তো এই ছিলো আমেরিকার সুপার পাওয়ার হওয়ার ইতিহাস।শয়তানের রাজধানী এভাবেই লন্ডন থেকে ওয়াশিংটনে পৌছেছিলো। কিন্তু তাওহিদের দুশমনদের মুখোশ পাল্টালেও তারা আগের মতোই মুসলিমদের প্রতি কট্টর-শত্রুই ছিলো। (এর সত্যতা আমরা প্রথম গাল্ফ ওয়ারের ইতিহাস পড়লেই জানতে পারবো।)
কিন্তু, ১১-ই সেপ্টেম্বর ২০০১ এর পর পরিস্থিতি পালটে যায়। এই অ্যাটাকের পূর্বে অনেকেই আমেরিকাসহ পশ্চিমা বিশ্বকে মুসলিমদের বন্ধু মনে করতো, কারণ আমেরিকা আমাদেরকে আফগানে সাহায্য করেছে সোভিয়েতের পতন ঘটানোর জন্য আর ব্রিটেইন আমাদের বসনিয়ায় সাহায্য করেছে সার্বিয়ান খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধে। কিন্তু সেদিনের অ্যাটাকের পর আমেরিকার আসল রূপ (ইসলামবিদ্বেষী রূপ) প্রকাশ করে দিয়ে বুশ ঘোষণা দিলেন, "This is crusade, This is counter terrorism"
অর্থ= "এটা ক্রুসেড, এটা সন্ত্রাসদমণ অভিযান"
সে আরও বললো, "Either you are with us (america) or you are with the terrorists."
অর্থ= "হয় আপনি আমাদের (আমেরিকা) সাথে আর নাহয় আপনি জঙ্গিদের সাথে"
সেইদিনের অ্যাটাক এবং বুশের এই ঘোষণার পর বিশ্ব একমেরু থেকে দ্বিমেরুতে পরিণত হলো। এক দিকে কুফফার ক্রুসেডার জোট, আর আরেক দিকে হকপন্থি তাওহীদবাদী মুজাহিদদের কাফেলা।
এই অ্যাটাকের পূর্বে যে মুজাহিদরা কোথাও ক্রুসেডের বিরুদ্ধে লড়ছিলেন না এমনটা নয়। কিন্তু বুশের এই ঘোষণার পর মুজাহিদিন এবং ক্রুসেডারদের কাতার আলাদা হয়ে যায় এবং আগে ক্রুসেডার ও মুজাহিদদের বিভিন্ন নামে ডাকা হলেও এই ঘোষণার পর তাদের একটামাত্র পরিচয়ই অবশিষ্ট থেকে যায়, হয় আপনি আমেরিকা, আর নয় আপনি জঙ্গি। উদাহরণস্বরূপ, রাশিয়ার বিরুদ্ধে চেচেন মুজাহিদদের প্রতিরোধ। নাইন এলেভেন অ্যাটাকের পূর্বে এই যুদ্ধে মুজাহিদদের নির্দিষ্ট কোনো ট্যাগ না দিয়ে বরং প্রতিরোধ যোদ্ধা হিসেবেই চিহ্নিত করা হতো। কিন্তু নাইন এলেভেন অ্যাটাকের পর তাদেরও টেরোরিস্ট বলা শুরু করলো রাশিয়া। মূলত এই একটা অ্যাটাক সারাবিশ্বকে পোলারাইজড করে দেয় তাওহীদ এবং কুফরের মধ্যে। শুরু হয় একবিংশ শতাব্দীর জিহাদ এবং ক্রুসেডার শয়তানদের পতনকাল। এই অ্যাটাকের পর হাজারো ব্যর্থ মানহাজের পর উম্মাহ সন্ধান পায় একটা হক মানহাজের। যেই মানহাজের উপর হেটেই আজ কাবুলে শরীয়াহ কায়েম হয়েছে। এই মানহাজ হলো নববী মানহাজ, সাহবাদের মানহাজ।
এই অ্যাটাক মূলত কাফিরদের কুফর এবং মুনাফিকদের নিফাককে উন্মোচিত করে দেয় এবং মুমিনদের অন্তরকে শীতল করে। এই অ্যাটাক ওসামা (রাহিঃ) করেছিলেন কিনা তা নিয়ে আর কথা বলবো না, এই বিষয়ে আল্লাহই ভালো জানেন। কিন্তু সত্য হলো এই অ্যাটাকটা হলো একবিংশ শতাব্দীর মুসলিম এবং কুফফারদের মধ্যকার এক distinguishing line (পার্থক্যকারী রেখা)। এই দিন এবং অ্যাটাকটা হলো একটা সিম্বল। সেই দিন ছিলো আমাদের নবজাগরণ, সেই দিন ছিলো হক-বাতিলের পার্থক্যকারী দিন, সেই দিনটায় আমরা নিজের প্রকৃত বন্ধু এবং আসল শত্রুদের চিনতে পেরেছি। এজন্য সেইদিনের হামলায় আপনি বিশ্বাস করেন বা না করেন, আপনাকে এই কথাটা মানতেই হবে যে সেই দিনটা আমদের একবিংশ শতাব্দীর মুসলিমদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্ববহ এবং তাৎপর্যপূর্ণ দিন।
কথা যখন হচ্ছেই তখন একটু "টেররিস্ট" ট্যাগটা নিয়েও কথা বলি। তো, সর্বপ্রথম এই ট্যাগটা ব্যবহার করা হয়েছিলো ইউরোপে। যারা রাজতন্ত্রের বিরোধীতা করতো এবং সেক্যুলারিজম ও গণতন্ত্রে বিশ্বাসী ছিলো, তাদেরকে এই ট্যাগ দেয়া হতো। তারপর এই ট্যাগ পেয়ে যায় সমাজতান্ত্রিকরা। আর আজকে আমরা দেখতে পারছি যে এই ট্যাগ দেয়া হচ্ছে, মাগরিবি ফালসাফার (পশ্চিমা নাপাক মতবাদসমূহ) বিরুদ্ধে লড়াইরত মুজাহিদদেরকে। তার মানে বোঝা গেলো যে, এই "টেররিস্ট", " সন্ত্রাসী", "জঙ্গি" ইত্যাদি ওয়ার্ডগুলো কোনো গালি নয়, বরং এগুলো একটি ঐতিহাসিক এবং ফিলোসফিকাল ট্যাগ। যারা মূলত প্রতিষ্ঠিত সিস্টেমের বিরুদ্ধে লড়ে, তারাই এই ট্যাগ পায়। তাই যখন কোন নিরীহ দাড়ি-টুপিওয়ালাকে জঙ্গি বলে আয়নাঘরে নেয়া হয় তখন অবাক হবেন না, কারণ বিশ্ব এখন Dipolar। আপনার ছোটখাটো যেকোনো বৈশিষ্ট্য ইসলাম এবং মুসলিমদের সাথে মিললেই আপনি জঙ্গি।
মনে রাখবেন, "Either you are with the America(crusaders) or you are with the terrorists(mujahideens)."
হ্যাঁ, সেই দিনটা ছিলো আমেরিকার ধ্বংসের শুরু। সেইদিন থেকে তার অর্থনীতি ও সমরনীতির পতনকালের সূচনা ঘটে।
কিন্তু, ৯/১১ এর সেই বরকময় দিনের পর বিশ্ব দুইভাগে ভাগ হয়ে যায়। এক ভাগের দাবি= "মুসলিমরা এটা করতেই পারে না, এই না খেয়ে মরতে থাকা জাতি আবার সুপার পাওয়ার এর উপর অ্যাটাক করবে! হুহ! ইম্পোসিবল"
আরেক ভাগ এই অ্যাটাকের পর দেখতে পায় এক নবসূর্যোদয়। তারা বুঝতে পারে যে একজন রব আছেন, যিনি আমেরিকার থেকেও বেশি ক্ষমতার অধিকারী, যিনি কোনো জাতির অবস্থা যখন পরিবর্তন করতে চান তখন তার প্রেক্ষাপট তৈরি করে দেন।
যাইহোক, সেই দিনের পর থেকেই টুইন টাওয়ারের সেই বরকতময় হামলা পরিণত হয় একটা কন্ট্রোভার্শাল ম্যাটারে। সেই হামলাটা আসলেই লাদেন (রাহিঃ) করেছিলেন নাকি ওটা ইনসাইড জব ছিলো, আজকে তা নিয়ে বিশ্লেষণে বসবো না। আজকে এটা বোঝার ট্রাই করি যে ইনসাইড জব হোক আর না-ই হোক, এই দিনটা তবুও কেনো আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
তো দেখেন, আমাদের খেলাফত ব্যবস্থার পতনের মাধ্যমে নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার প্রতিষ্ঠার রাস্তা কন্টকহীন হয়ে পরে। (নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার সম্পর্কে জানতে পড়ুন, "ইতিহাসের আয়নায় বর্তমান বিশ্বব্যবস্থা, ওল্ড ওয়ার্ল্ড অর্ডার থেকে নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার") খেলাফত পতনের পর সারাবিশ্বের মুসলিম উম্মাহ অভিভাবকহীন হয়ে পরে। তাদের অবস্থা ছিলো ক্ষুধার্ত হায়েনাদের সামনে পরে থাকা এক অসহায় শিশুর মতো। কিন্তু তখনও যে মুসলিমরা শুধু হাতের ওপর হাত রেখে বসে ছিলো, এমনটা নয়। বিভিন্ন জায়গায় মুসলিম সিংহশাবকেরা আগ্রাসী কুফফার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করছিলো। ইমাম শামিল, ওমর আল মুখতার, শহীদ তিতুমীর, হাজী শরীয়তুল্লাহ, সাইয়্যেদ আহমাদ শহীদ, দুদুমিয়া, বাদশামিয়া, আল খাত্তাবি আর বিন বাদিসের মতো সূর্য সন্তানেরা এই উম্মতের বিপদের সময়ের আশ্রয় হিসেবে উঠে দাড়ান এবং ফ্রান্স, স্পেন আর ব্রিটেইনের মতো ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে এক হাতে কুরআন আর আরেক হাতে বন্দুক নিয়ে রুখে দাড়ান। কিন্তু বিভিন্ন দূর্বলতার কারণে তাদের জিহাদ পরিপূর্ণ সফলতার মুখ দেখে নি।
তারপর অনেক নাটক-তামাশার পর ব্রিটেনরা আমেরিকার সাথে তাদের তথাকথিত খেল-তামাশা মার্কা যুদ্ধে জড়িয়ে আমেরিকাকে স্বাধীন করে দেয়। এবং পূর্বের ঔপনিবেশিক আমলের সমাপ্তি ঘটে সূচনা হয় নব্য-উপনিবেশবাদের। পূর্বে ক্রুসেডাররা সরাসরি তাদের সৈন্য-সামন্ত পাঠিয়ে দেশ দখল করলেও এখন থেকে তারা বুদ্ধিবৃত্তিক আগ্রাসন চালিয়ে দেশ দখল করতে থাকে। আর যেসকল শাসক বুদ্ধিবৃত্তিক এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় তাদের উপর সরাসরি মিলিটারি ক্যু চালিয়ে ক্ষমতাচ্যুত করা হয় এবং পশ্চিমের অনুগত দাসকে ক্ষমতায় বসানো হয়। ফলে বাহ্যিক দিক থেকে স্বাধীন মনে হলেও মূলত বিশ্ব এখনো উপনিবেশের শিকার।(শয়তানের এক মাথা কেটে আরেক মাথা লাগানো আর কি। কারণ, সেই হোয়াইট আমেরিকানরা মূলত গ্রেট ব্রিটেইনেরই বংশধর। জর্জ ওয়াশিংটন নিজেই ইংরেজ সেনাবাহিনীর সদস্য ছিলো। ব্রিটেইন জানত যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তারা সুপার পাওয়ার থাকলে সারাবিশ্বের মানুষের গালি তাদেরই খেতে হবে। তারা বিশ্বে যে সভ্যতার সবক দেয় সেটার তীর তাদের দিকে ঘুরিয়ে দিয়েই তাদের থেকে হিন্দুস্তান হতে লুণ্ঠিত সম্পদের হিসাব চাওয়া হবে। তাই তারা কৌশলে ক্ষমতায় তাদেরই জাত ভাই আমেরিকাকে বসিয়ে দেয়। ফলে তারা বিশ্বের গালি হতে বেচে যায়। গণতন্ত্রও মূলত এভাবেই কাজ করে, এক ইবলিশ আকাম করে চলে যাওয়ার পর পরবর্তী ইবলিশের কাছে যখন আগের ইবলিশের কৃতকর্মের হিসাব চাওয়া হয় তখন সেই ইবলিশ বলে, "আমি তো এই বিষয়ে কিছুই জানি না"। হোয়াইট হাউজে ট্রাম্প-গং কর্তৃক জেলেনেস্কিকে হেনস্থা এই কথার এক বাস্তব প্রমাণ।)
তো আমেরিকার স্বাধীনতার পর সে ইহুদিদের সাহায্যে অর্থনীতিতে বিপুল উন্নতি সাধন করে। রথসচাইল্ডের সম্পদ দিয়ে আমেরিকা ফুলে ফেপে ওঠে। সুলতান আব্দুল হামিদ সানী (রাহিঃ) এর ভাষায় বলতে গেলে, "ওরা(রথসচাইল্ড) ব্রিটেইনকে আমেরিকার কাছে বেচে দিয়েছে"। যেখানে ইউরোপের দেশগুলোর মরার মতো অবস্থা ছিলো, সেখানে আমেরিকাতে তখন স্বর্ণযুগ চলছিলো।
তো এই ছিলো আমেরিকার সুপার পাওয়ার হওয়ার ইতিহাস।শয়তানের রাজধানী এভাবেই লন্ডন থেকে ওয়াশিংটনে পৌছেছিলো। কিন্তু তাওহিদের দুশমনদের মুখোশ পাল্টালেও তারা আগের মতোই মুসলিমদের প্রতি কট্টর-শত্রুই ছিলো। (এর সত্যতা আমরা প্রথম গাল্ফ ওয়ারের ইতিহাস পড়লেই জানতে পারবো।)
কিন্তু, ১১-ই সেপ্টেম্বর ২০০১ এর পর পরিস্থিতি পালটে যায়। এই অ্যাটাকের পূর্বে অনেকেই আমেরিকাসহ পশ্চিমা বিশ্বকে মুসলিমদের বন্ধু মনে করতো, কারণ আমেরিকা আমাদেরকে আফগানে সাহায্য করেছে সোভিয়েতের পতন ঘটানোর জন্য আর ব্রিটেইন আমাদের বসনিয়ায় সাহায্য করেছে সার্বিয়ান খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধে। কিন্তু সেদিনের অ্যাটাকের পর আমেরিকার আসল রূপ (ইসলামবিদ্বেষী রূপ) প্রকাশ করে দিয়ে বুশ ঘোষণা দিলেন, "This is crusade, This is counter terrorism"
অর্থ= "এটা ক্রুসেড, এটা সন্ত্রাসদমণ অভিযান"
সে আরও বললো, "Either you are with us (america) or you are with the terrorists."
অর্থ= "হয় আপনি আমাদের (আমেরিকা) সাথে আর নাহয় আপনি জঙ্গিদের সাথে"
সেইদিনের অ্যাটাক এবং বুশের এই ঘোষণার পর বিশ্ব একমেরু থেকে দ্বিমেরুতে পরিণত হলো। এক দিকে কুফফার ক্রুসেডার জোট, আর আরেক দিকে হকপন্থি তাওহীদবাদী মুজাহিদদের কাফেলা।
এই অ্যাটাকের পূর্বে যে মুজাহিদরা কোথাও ক্রুসেডের বিরুদ্ধে লড়ছিলেন না এমনটা নয়। কিন্তু বুশের এই ঘোষণার পর মুজাহিদিন এবং ক্রুসেডারদের কাতার আলাদা হয়ে যায় এবং আগে ক্রুসেডার ও মুজাহিদদের বিভিন্ন নামে ডাকা হলেও এই ঘোষণার পর তাদের একটামাত্র পরিচয়ই অবশিষ্ট থেকে যায়, হয় আপনি আমেরিকা, আর নয় আপনি জঙ্গি। উদাহরণস্বরূপ, রাশিয়ার বিরুদ্ধে চেচেন মুজাহিদদের প্রতিরোধ। নাইন এলেভেন অ্যাটাকের পূর্বে এই যুদ্ধে মুজাহিদদের নির্দিষ্ট কোনো ট্যাগ না দিয়ে বরং প্রতিরোধ যোদ্ধা হিসেবেই চিহ্নিত করা হতো। কিন্তু নাইন এলেভেন অ্যাটাকের পর তাদেরও টেরোরিস্ট বলা শুরু করলো রাশিয়া। মূলত এই একটা অ্যাটাক সারাবিশ্বকে পোলারাইজড করে দেয় তাওহীদ এবং কুফরের মধ্যে। শুরু হয় একবিংশ শতাব্দীর জিহাদ এবং ক্রুসেডার শয়তানদের পতনকাল। এই অ্যাটাকের পর হাজারো ব্যর্থ মানহাজের পর উম্মাহ সন্ধান পায় একটা হক মানহাজের। যেই মানহাজের উপর হেটেই আজ কাবুলে শরীয়াহ কায়েম হয়েছে। এই মানহাজ হলো নববী মানহাজ, সাহবাদের মানহাজ।
এই অ্যাটাক মূলত কাফিরদের কুফর এবং মুনাফিকদের নিফাককে উন্মোচিত করে দেয় এবং মুমিনদের অন্তরকে শীতল করে। এই অ্যাটাক ওসামা (রাহিঃ) করেছিলেন কিনা তা নিয়ে আর কথা বলবো না, এই বিষয়ে আল্লাহই ভালো জানেন। কিন্তু সত্য হলো এই অ্যাটাকটা হলো একবিংশ শতাব্দীর মুসলিম এবং কুফফারদের মধ্যকার এক distinguishing line (পার্থক্যকারী রেখা)। এই দিন এবং অ্যাটাকটা হলো একটা সিম্বল। সেই দিন ছিলো আমাদের নবজাগরণ, সেই দিন ছিলো হক-বাতিলের পার্থক্যকারী দিন, সেই দিনটায় আমরা নিজের প্রকৃত বন্ধু এবং আসল শত্রুদের চিনতে পেরেছি। এজন্য সেইদিনের হামলায় আপনি বিশ্বাস করেন বা না করেন, আপনাকে এই কথাটা মানতেই হবে যে সেই দিনটা আমদের একবিংশ শতাব্দীর মুসলিমদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্ববহ এবং তাৎপর্যপূর্ণ দিন।
কথা যখন হচ্ছেই তখন একটু "টেররিস্ট" ট্যাগটা নিয়েও কথা বলি। তো, সর্বপ্রথম এই ট্যাগটা ব্যবহার করা হয়েছিলো ইউরোপে। যারা রাজতন্ত্রের বিরোধীতা করতো এবং সেক্যুলারিজম ও গণতন্ত্রে বিশ্বাসী ছিলো, তাদেরকে এই ট্যাগ দেয়া হতো। তারপর এই ট্যাগ পেয়ে যায় সমাজতান্ত্রিকরা। আর আজকে আমরা দেখতে পারছি যে এই ট্যাগ দেয়া হচ্ছে, মাগরিবি ফালসাফার (পশ্চিমা নাপাক মতবাদসমূহ) বিরুদ্ধে লড়াইরত মুজাহিদদেরকে। তার মানে বোঝা গেলো যে, এই "টেররিস্ট", " সন্ত্রাসী", "জঙ্গি" ইত্যাদি ওয়ার্ডগুলো কোনো গালি নয়, বরং এগুলো একটি ঐতিহাসিক এবং ফিলোসফিকাল ট্যাগ। যারা মূলত প্রতিষ্ঠিত সিস্টেমের বিরুদ্ধে লড়ে, তারাই এই ট্যাগ পায়। তাই যখন কোন নিরীহ দাড়ি-টুপিওয়ালাকে জঙ্গি বলে আয়নাঘরে নেয়া হয় তখন অবাক হবেন না, কারণ বিশ্ব এখন Dipolar। আপনার ছোটখাটো যেকোনো বৈশিষ্ট্য ইসলাম এবং মুসলিমদের সাথে মিললেই আপনি জঙ্গি।
মনে রাখবেন, "Either you are with the America(crusaders) or you are with the terrorists(mujahideens)."
Comment