মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম সাহেবের ভিডিওর পর ‘রিসালাতুল ইসলাম বিডি’ গাযওয়াতুল হিন্দ নিয়ে আবারও আধা ঘণ্টার একটি ভিডিও বয়ান পাবলিশ করেছে। কেন জানি উনারা গাযওয়াতুল হিন্দের বিষয়টাকে এতো গুরুতরভাবে নিচ্ছেন এবং নিরুৎসাহিত করছেন।
গাযওয়াতুল হিন্দ কি শুধুই একটি ভবিষ্যদ্বাণী, নাকি একটি ফজিলতও?
আমি আগেও বলেছি: গাযওয়াতুল হিন্দ একটা ভবিষ্যদ্বাণীই শুধু নয়, একটা ফজিলতও। অর্থাৎ হাদিসে শুধু এতটুকুই আসেনি যে, হিন্দুস্তানে জিহাদ হবে, বরং হিন্দুস্তানের জিহাদে যারা শরীক হবে তাদের ফজিলতও এসেছে। দুই ভিডিওর কোনোটাতেই এই ফজিলতের বিষয়টা তুলে ধরা হয়নি। শুধু ‘একটা ভবিষ্যদ্বাণী ছিল পুরা হয়ে গেছে’ এরকম কথা বলে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়েছে।
গাযওয়াতুল হিন্দের হাদিস যদি না থাকতো?
আগেও বলেছি: হিন্দুস্তানে জিহাদ ফরয বা জায়েয হওয়ার সাথে গাযওয়াতুল হিন্দের হাদিসের কোনো সম্পর্ক নেই। গাযওয়াতুল হিন্দের হাদিস না থাকলেও হিন্দুস্তানে জিহাদ ফরয, যেমন ফরয ফিলিস্তিনে মায়ানমারে ও উইঘুরে। বিষয়টা এমন নয় যে, গাযওয়াতুল হিন্দের হাদিস ভুল বা জয়িফ প্রমাণ হলেই আমরা জিহাদের দায়িত্ব থেকে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম বা জিহাদ হারাম হয়ে গেল।
গাযওয়াতুল হিন্দের হাদিস থাকায় কি ফায়েদা হলো?
ফায়েদা হলো: হিন্দুস্তানে জিহাদ করলে জিহাদ ও শাহাদাতের স্বাভাবিক ফজিলতের পাশাপাশি অতিরিক্ত ফজিলত পাওয়া যাবে।
যেমন:
ক. আহলে কিতাব তথা ইয়াহুদ নাসারার বিরুদ্ধে জিহাদের আলাদা একটা ফজিলত আছে। এ অতিরিক্ত ফজিলতটি লাভের জন্য সালাফের কেউ কেউ মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদের চেয়ে আহলে কিতাবের বিরুদ্ধে জিহাদ করায় বেশি আগ্রহ বোধ করতেন।1 তবে এর অর্থ এই নয় যে, মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ ফরয নয়। এর অর্থ এও নয় যে, আহলে কিতাবের বিরুদ্ধে জিহাদের ফজিলতের হাদিস না থাকলে বা জয়িফ প্রমাণ হলে আহলে কিতাবের বিরুদ্ধে জিহাদ ফরয থাকবে না। এটি স্রেফ ফজিলতের বিষয়, ফরয হওয়া না হওয়ার বিষয় নয়।
খ. সমুদ্রপথে জিহাদের আলাদা ফজিলত আছে। এই ফজিলতের হাদিসটি জয়িফ প্রমাণ হলে সমুদ্রপথে জিহাদ ফরয বা জায়েয থাকবে না তা নয়।
গ. খাওয়ারেজদের বিরুদ্ধে জিহাদের আলাদা ফজিলত আছে। এই ফজিলতের হাদিসটি জয়িফ প্রমাণ হলে এদের বিরুদ্ধে জিহাদ ফরয বা জায়েয থাকবে না তা নয়।
তবে খুসুসি ফজিলতের ফায়েদা হবে: জিহাদে আগ্রহ বাড়বে।
হিন্দের জিহাদের অতিরিক্ত কি ফজিলত?
শহীদ গাজি উভয়ের জন্য অতিরিক্ত ফজিলত। শহীদ হলে সর্বোত্তম শহীদদের কাতারে গণ্য হবে। গাজি হয়ে ফিরে আসলে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে।
ফজিলত বলে উৎসাহ দেয়া কি নিন্দনীয়?
অবশ্যই নয়। ফজিলত তো এসেছেই উৎসাহ দেয়ার জন্য।
কি আছে আধা ঘণ্টার বক্তব্যে?
বয়ানের সারকথা: হিন্দে জিহাদ হবে তা প্রমাণিত এবং ইতোমধ্যে হিন্দে অনেকবার জিহাদ হয়ে গেছে। শেষ যামানায় বা ঈসা আলাইহিস সালামের সময়ে বা ইমাম মাহদির হাতে হিন্দে জিহাদ হবে: এ ধরনের বর্ণনাগুলো প্রমাণিত নয়, তাই সেগুলো বিশ্বাস করা যাবে না। যেহেতু হিন্দে জিহাদ হবে বলে হাদিসে এসেছিল আর জিহাদ ইতোমধ্যে অনেকবার হয়ে গেছে তাই হাদিসের ভবিষ্যদ্বাণী ফলে গেছে। ভবিষ্যতেও হিন্দে জিহাদ হবে কি’না তা হাদিসে নাই। তাই হিন্দে শেষ যামানায় আবারও জিহাদ হবে বলে প্রচার প্রচারণা করার কোনো দালিলিক ভিত্তি নাই।
এও বলেছেন: জিহাদ হবে কিনা তা হাদিসে না থাকলেও জিহাদ হতে পারে সেটা স্বাভাবিক। যদি হয় তাহলে যখন হবে তখন উলামায়ে কেরামের নির্দেশনা মতো শরীয়তের উসূল জাওয়াবিতের আলোকে কাজ করতে হবে।
এ হচ্ছে বয়ানের সারকথা।
আপত্তির জায়গা কোথায়?
ক. বয়ানটির উদ্দেশ্য কি জিহাদে উৎসাহিত করা, নাকি নিরুৎসাহিত করা? স্পষ্ট যে, নিরুৎসাহিত করা। শুধু তাই নয় বরং আবুল বাশার সাহেবের বয়ানটির সাথে মিলালে স্পষ্ট বুঝা যায় উনাদের উদ্দেশ্য: হিন্দে জিহাদ থেকে মুসলমানদের বারণ করা, ফিরিয়ে রাখা। জিহাদ তো আসলে উৎসাহ দেয়ার জিনিস। যদি জিহাদের পথে ভুলভ্রান্তি হয়ে থাকে তাহলে ভুলভ্রান্তি সংশোধন করা কাম্য, জিহাদ বন্ধ করে দেয়া নয়। জিহাদ বন্ধ করে দিলে উম্মত ধ্বংস হবে, যা আজ আমরা স্বচক্ষে দেখতে পাচ্ছি।
খ. জয়িফ হলেও অনেকগুলো হাদিসে এসেছে যে, আখেরে যামানায় হিন্দে জিহাদ হবে এবং মুসলমানদের বিজয় হবে। আমরা একে অকাট্য হিসেবে বিশ্বাস না করলাম, তবে এক রকম একটা আশা রাখাতে তো আশাকরি সমস্যা নাই যে, হিন্দুস্তানে ইসলামের বিজয় হবে। কিন্তু বয়ানের ধাচটা এমন যে, এরকম একটা আশা রাখারও অবকাশ নাই। আমার মনে হয় এটা উসূল জাওয়াবেতের খেলাফ। বিশেষত যখন হাদিসগুলো একেবারে মাওজু তথা জাল নয় এবং শরীয়তের কোনো বিধানের পরিপন্থীও নয়।
গ. বড় আপত্তির জায়গা হলো: দুটি হাদিস যেগুলোকে উনারা সনদের বিচারে গ্রহণযোগ্য বলেছেন, সেগুলোতে হিন্দে জিহাদের ফজিলত এসেছে: যারা এতে শরীক হবে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে, শহীদ হলে সর্বোত্তম শহীদদের কাতারে গণ্য হবে। এই ফজিলতটি মুতলাকভাবে এবং আমভাবে এসেছে। নির্দিষ্ট কোনো জিহাদ বা নির্দিষ্ট কোনো যামানার ব্যাপারে আসেনি। অতএব, হিন্দুস্তানে কাফেরদের বিরুদ্ধে নবী যামানা থেকে নিয়ে কেয়ামত পর্যন্ত যত জিহাদ হবে সবাই এই ফজিলতটি পাবে। উনাদের বয়ানে এই ফজিলতটির ব্যাপারে কোনো কথা বিলকুল আসেনি।
আসলে আমরা যারা গাযওয়াতুল হিন্দের কথা বলি, তারা মূলত এই ফজিলতটির কথাই বুঝাতে চাই যে, হিন্দের জিহাদে শরীক হলে আমরা ফজিলতটি পাবো। নিজেরাও উৎসাহ পাই, এটি বলে অন্য মুসলমানদেরও উৎসাহিত করি। কিন্তু বয়ানের ধাচটা এমন যে, হিন্দে অনেকবার জিহাদ হয়ে গেছে, এই ফজিলত তারা পেয়ে গেছে, এখন আর এই ফজিলত বাকি নাই। এখন আর এই ফজিলত বাকি নাই- এই কথাটি যদিও উনারা স্পষ্ট বলেননি, কিন্তু বয়ান শুনে একজন শ্রোতা এটাই ভাববে।
পুরো ভিডিও জুড়ে একটি কথাই বার বার বলা হয়েছে: গাযওয়াতুল হিন্দ হয়ে গেছে, হয়ে গেছে, হয়ে গেছে। তো শ্রোতারা এখান থেকে কি বুঝবে? তারা কি কখনও বুঝবে যে, হিন্দে জিহাদ করার বিশাল ফজিলত আছে, যেটির জন্য নিজেদের জানমাল উৎসর্গ করা কাম্য? কিছুতেই এমনটি বুঝবে না। বরং নিরুৎসাহিত হবে এবং মনে করবে হিন্দে জিহাদ একটি ফালতু বিষয়। একটি প্রমাণিত ফজিলতের ব্যাপারে এরকম নেতিবাচক পরিবেশ তৈয়ার করা তো কাম্য নয়।
আপনারা পুরো বয়ানে একটি বারও কেন বললেন না: হিন্দের জিহাদের মহা ফজিলত আছে, যে ফজিলতটি অন্য অনেক ভূখণ্ডে জিহাদ করার ব্যাপারে নাই? এই কথাটি উচ্চারণ করতে আপনাদের কিসে বাধা দিলো? আপনারা হাদিসের একাংশ বয়ান করে আরেক অংশ এড়িয়ে গেলেন কেন? একটি ধোঁয়াশা সৃষ্টি করলেন কেন?
অনেক মনীষীর বরাতে তিনি বলেছেন: গাযওয়াতুল হিন্দ হয়ে গেছে। মনীষীরা আসলে ‘হয়েছে’ বলেছেন, ‘হয়ে গেছে’ সামনে হবে না - এমনটা বলেননি। কিন্তু তিনি বক্তব্যে এই ‘হয়েছে’টাকে ‘হয়ে গেছে’ উচ্চারণ করেছেন। এভাবেই একটা ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে।
মনীষীদের উদ্দেশ্য ছিল: এ পর্যন্ত হিন্দে যে জিহাদগুলো হয়েছে সবগুলোই গাযওয়াতুল হিন্দের ভবিষ্যদ্বাণীর মধ্যে পড়ে। ভবিষ্যতে আর হিন্দে জিহাদ হবে না, বা হলেও সেগুলো গাযওয়াতুল হিন্দের আওতায় পড়বে না এটা উনারা বলেনওনি, উনাদের উদ্দেশ্যও এমন না। এ কারণেই ৪৪ হিজরিতে মুআবিয়া রাদি.র শাসনামলের জিহাদ, ৯২ হিজরিতে উমাইয়াদের আমলে মুহাম্মাদ বিন কাসিম রহ. এর জিহাদ, ৪০০ হিজরির দিকে মাহমুদ গজনবি রহ. এর জিহাদ সবগুলোকেই উনারা গাযওয়াতুল হিন্দ বলেছেন। যদি এমন হতো যে, প্রথম জিহাদটার মাধ্যমেই হাদিসের ফজিলত শেষ, পরের জিহাদগুলো আর এই ফজিলত পাবে না- তাহলে এই সবগুলো জিহাদের উপর গাযওয়াতুল হিন্দ ফিট করার কোনো অর্থ থাকতো না। ৪০০ হিজরি পর্যন্ত বরং আরও পরের শিহাবুদ্দীন ঘুরি রহ. ও অন্যান্যদের জিহাদ গাযওয়াতুল হিন্দের মধ্যে পড়বে কিন্তু বর্তমান জিহাদ বা ভবিষ্যতের জিহাদ গাযওয়াতুল হিন্দের মধ্যে পড়বে না, তারা এ ফজিলত পাবে না: এমন ধারণা কোনো উসূল-কায়েদার ভিতরেই পড়ে না। কিন্তু বয়ানের মধ্যে এমন একটা ধোঁয়াশাই সৃষ্টি করা হয়েছে।
আখেরে যামানায় হিন্দ বিজয় হবে!!
গাযওয়াতুল হিন্দের হাদিসে যদিও পরিষ্কার সহীহ সনদে নাই যে, আখেরে যামানায় হিন্দে জিহাদ হবে, তবে অন্য কিছু ব্যাপক হাদিস বুঝায় আখেরে যামানায় হিন্দ বিজয় হবে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
لَا يَبْقَى عَلَى ظَهْرِ الْأَرْضِ بَيْتُ مَدَرٍ، وَلَا وَبَرٍ إِلَّا أَدْخَلَهُ اللهُ كَلِمَةَ الْإِسْلَامِ، بِعِزِّ عَزِيزٍ أَوْ ذُلِّ ذَلِيلٍ، إِمَّا يُعِزُّهُمُ اللهُ فَيَجْعَلُهُمْ مِنْ أَهْلِهَا، أَوْ يُذِلُّهُمْ فَيَدِينُونَ لَهَا. -مسند أحمد: 23814، قال المحققون: إسناده صحيح.
“দুনিয়ার বুকে প্রতিটি জনপদের প্রতিটি ঘরে ঘরে আল্লাহ তাআলা ইসলামের কালিমা প্রবেশ করাবেন। যাকে চান ইজ্জতের সাথে, যাকে চান লাঞ্ছিত করে। হয়তো ইসলামের অনুসারি বানিয়ে তাদের সম্মানীত করবেন; নয়তো (হত্যা, বন্দী ও জিযিয়ার মাধ্যমে) অপদস্থ করবেন, ফলে তারা ইসলামের (শাসনের) অধীনস্থতা গ্রহণে বাধ্য হবে।” -মুসনাদে আহমাদ: ২৩৮১৪
আরও ইরশাদ করেন,
لَيَبْلُغَنَّ هَذَا الْأَمْرُ مَا بَلَغَ اللَّيْلُ وَالنَّهَارُ، وَلَا يَتْرُكُ اللهُ بَيْتَ مَدَرٍ وَلَا وَبَرٍ إِلَّا أَدْخَلَهُ اللهُ هَذَا الدِّينَ، بِعِزِّ عَزِيزٍ أَوْ بِذُلِّ ذَلِيلٍ، عِزًّا يُعِزُّ اللهُ بِهِ الْإِسْلَامَ، وَذُلًّا يُذِلُّ اللهُ بِهِ الْكُفْرَ. -مسند أحمد: 16957، قال المحققون: إسناده صحيح على شرط مسلم.
“যতখানে রাত্র দিন আসে, এ দ্বীন অবশ্যই অবশ্যই সেখানে পৌঁছবে। প্রতিটি জনপদের প্রতিটি ঘরে ঘরে আল্লাহ তাআলা এ দ্বীন প্রবেশ করাবেন। যাকে চান ইজ্জতের সাথে, যাকে চান লাঞ্চিত করে। ইজ্জতের মাধ্যমে তিনি ইসলামকে সম্মানীত করবে। লাঞ্ছনার মাধ্যমে তিনি কুফরকে অপদস্থ করবেন। -মুসনাদে আহমাদ: ১৬৯৫৭
অন্য হাদিসে এসেছে,
عن أبي هريرة، أن النبيَّ -صلَّى الله عليه وسلم- قال: ليس بيني وبينه نبيٌّ -يعني عيسى ابن مريم- وإنه نازلٌ ... فيُقاتِلُ الناسَ على الإِسلامِ، فيدُقُ الصَّلِيبَ، ويقتُلُ الخِنزيرَ، ويضَعُ الجزيةَ، ويُهلِكُ اللهُ في زمانه المِلل كلَّها إلا الإِسلامَ. -مسند أحمد: 9270، سنن أبي داود: 4324، قال المحققون: حديث صحيح. اهـ
“হযরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আমার এবং তাঁর – অর্থাৎ ঈসা ইবনে মারয়াম আলাইহিস সালামের- মাঝখানে কোনো নবী নেই। অচিরেই তিনি যমিনে অবতরণ করবেন। ... অবতরণ করে ইসলাম গ্রহণের জন্য সকলের বিরুদ্ধে কিতাল করবেন। ক্রুশ ভেঙে ফেলবেন। শুকর হত্যা করে ফেলবেন। জিযিয়ার বিধান উঠিয়ে দেবেন (ফলে মুসলমান না হলে হত্যা ব্যতীত দ্বিতীয় কোনো রাস্তা থাকবে না)। তার যামানায় আল্লাহ তাআলা একমাত্র ইসলাম ব্যতীত সকল ধর্ম নিঃশেষ করে দেবেন।” -মুসনাদে আহমাদ: ৯২৭০, সুনানে আবু দাউদ: ৪৩২৪
এসব হাদিস পরিষ্কার: আখেরে যামানায় দ্বীনে ইসলাম বিজয় হবে এবং দ্বীনে ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো ধর্ম, অন্য কোনো মতবাদ থাকবে না। বর্তমান হিন্দের পরিস্থিতি বিবেচনায় আপনি কি মনে করেন: জিহাদ ছাড়া এমনি এমনি হিন্দে দ্বীন বিজয় হয়ে যাবে?
গাযওয়াতুল হিন্দের হাদিসে আখেরে যামানায় হিন্দে জিহাদ হবে অংশটা সহীহ না হলেও অন্যান্য হাদিস নির্দেশ করে আখেরে যামানায় হিন্দে জিহাদ হবে এবং বিজয় হবে। তো এসমস্ত সহীহ হাদিস উল্লেখ করে উম্মতকে জিহাদে উৎসাহিত না করে বরং সংশয়মূলক কথাবার্তা বলে সংশয় সৃষ্টি করার কি অর্থ?
ভবিষ্যদ্বাণী পুরা হয়ে গেছে- এর কি অর্থ?
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বলেছেন হিন্দে জিহাদ হবে, তখন হিন্দে জিহাদ হবেই নিশ্চিত। নবীর কথা কখনও মিথ্যা হয় না। তবে এ মু’জিযা তথা ভবিষ্যদ্বাণীটি বাস্তবায়িত হয়েছে বলার জন্য হিন্দে কোনো একটা জিহাদ হওয়াই যথেষ্ট, আজীবন বা কেয়ামত পর্যন্ত জিহাদ চলতে থাকা আবশ্যক নয়। যারা বলেছেন রাসূলের ভবিষ্যদ্বাণী পুরা হয়েছে তারা এ অর্থেই বলেছেন যে, রাসূল বলেছিলেন জিহাদ হবে আর বাস্তবেই জিহাদ হয়েছে। কিন্তু রাসূল যে ফজিলতটি বলেছেন সে ফজিলতটিও শেষ হয়ে গেছে- এটি না হাদিসে আছে আর না মনীষীরা বলেছেন। ফজিলত নির্দিষ্ট কোনো যুদ্ধ বা নির্দিষ্ট কোনো যামানার ব্যাপারে আসেনি, মুতলাক হিন্দের জিহাদের ব্যাপারে এসেছে। অতএব, হিন্দে যখনই জিহাদ হবে, তখনই এ ফজিলত লাভ হবে। এদিকটি তুলে ধরে উম্মাহকে উৎসাহিত করা দরকার ছিল। কিন্তু উনারা করেছেন ঠিক উল্টোটা। ফজিলতের বিষয়টা সম্পূর্ণ এড়িয়ে গেছেন।
শেষে এ ব্যাপারে মুফতি শফি রহ. এর বক্তব্য উল্লেখ করছি। তিনি জাওয়াহিরুল ফিকহের ছয় নম্বর খণ্ডের ৬৪-৬৫ পৃষ্ঠায় বলেন:
“হিন্দে জিহাদ (তথা গাযওয়াতুল হিন্দ) দ্বারা কোন জিহাদ উদ্দেশ্য?
এই উভয় হাদিসে গাযওয়াতুল হিন্দের যে ফজিলত বর্ণিত হয়েছে, এর বেলায় প্রশ্ন হয় যে: হিন্দুস্তানে তো হিজরি প্রথম শতাব্দি থেকে আজ অবধি বিভিন্ন সময়ে জিহাদ হয়ে আসছে। সর্বপ্রথম সিন্ধে মুহাম্মাদ বিন কাসিম জিহাদ করেন, যে জিহাদে কোনো কোনো সাহাবা এবং অধিকাংশ জন তাবিয়ি অংশ নিয়েছেন বলে বর্ণিত আছে। তো এর দ্বারা কি শুধু প্রথম জিহাদটি উদ্দেশ্য? নাকি যত জিহাদ এ পর্যন্ত হয়েছে এবং সামনেও হবে সবই এর আওতায় পড়বে?
হাদিসের শব্দে খেয়াল করলে এটাই বুঝা যায় যে, হাদিসের শব্দ আম (ব্যাপক), খাসভাবে নির্দিষ্ট কোনো জিহাদে সীমাবদ্ধ করার কোনো যৌক্তিকতা নাই। এ কারণে হিন্দুস্তানে বিভিন্ন সময়ে যত জিহাদ হয়ে আসছে, বর্তমান ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ এবং ভবিষ্যতেও হিন্দুস্তানে যত জিহাদ কাফেরদের বিরুদ্ধে হবে, সবগুলোই এই মহা সুসংবাদের আওতায় পড়বে।” –জাওয়াহিরুল ফিকহ: ৬/৫৪-৬৫
আমার তিনটি প্রশ্ন
প্রশ্ন ১. গাযওয়াতুল হিন্দের ফজিলত কি শেষ হয়ে গেছে? হিন্দে যদি জিহাদ হয় তাহলে সেই জিহাদে যারা শরীক হবে তারা কি গাযওয়াতুল হিন্দের যে ফজিলত হাদিসে এসেছে সেটি পাবেন, নাকি পাবেন না? এবং এর কারণ কি?
প্রশ্ন ২. মুসলিম ভূমি হিন্দুস্তানকে পুনরুদ্ধার করা এবং হিন্দুদের নির্যাতনের কবল থেকে মুসলিমদের মুক্ত করার জন্য হিন্দুস্তানের বিরুদ্ধে জিহাদ করা মুসলিমদের দায়িত্ব কি দায়িত্ব নয়? এবং কেন?
প্রশ্ন ৩. যেসব হাদিসে শেষ যামানায় দ্বীন কায়েম হবে বলে এসেছে, সেগুলোর আলোকে হিন্দুস্তানও বিজয় হবে বলে মনে করেন কিনা আপনারা?
গাযওয়াতুল হিন্দ কি শুধুই একটি ভবিষ্যদ্বাণী, নাকি একটি ফজিলতও?
আমি আগেও বলেছি: গাযওয়াতুল হিন্দ একটা ভবিষ্যদ্বাণীই শুধু নয়, একটা ফজিলতও। অর্থাৎ হাদিসে শুধু এতটুকুই আসেনি যে, হিন্দুস্তানে জিহাদ হবে, বরং হিন্দুস্তানের জিহাদে যারা শরীক হবে তাদের ফজিলতও এসেছে। দুই ভিডিওর কোনোটাতেই এই ফজিলতের বিষয়টা তুলে ধরা হয়নি। শুধু ‘একটা ভবিষ্যদ্বাণী ছিল পুরা হয়ে গেছে’ এরকম কথা বলে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়েছে।
গাযওয়াতুল হিন্দের হাদিস যদি না থাকতো?
আগেও বলেছি: হিন্দুস্তানে জিহাদ ফরয বা জায়েয হওয়ার সাথে গাযওয়াতুল হিন্দের হাদিসের কোনো সম্পর্ক নেই। গাযওয়াতুল হিন্দের হাদিস না থাকলেও হিন্দুস্তানে জিহাদ ফরয, যেমন ফরয ফিলিস্তিনে মায়ানমারে ও উইঘুরে। বিষয়টা এমন নয় যে, গাযওয়াতুল হিন্দের হাদিস ভুল বা জয়িফ প্রমাণ হলেই আমরা জিহাদের দায়িত্ব থেকে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম বা জিহাদ হারাম হয়ে গেল।
গাযওয়াতুল হিন্দের হাদিস থাকায় কি ফায়েদা হলো?
ফায়েদা হলো: হিন্দুস্তানে জিহাদ করলে জিহাদ ও শাহাদাতের স্বাভাবিক ফজিলতের পাশাপাশি অতিরিক্ত ফজিলত পাওয়া যাবে।
যেমন:
ক. আহলে কিতাব তথা ইয়াহুদ নাসারার বিরুদ্ধে জিহাদের আলাদা একটা ফজিলত আছে। এ অতিরিক্ত ফজিলতটি লাভের জন্য সালাফের কেউ কেউ মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদের চেয়ে আহলে কিতাবের বিরুদ্ধে জিহাদ করায় বেশি আগ্রহ বোধ করতেন।1 তবে এর অর্থ এই নয় যে, মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ ফরয নয়। এর অর্থ এও নয় যে, আহলে কিতাবের বিরুদ্ধে জিহাদের ফজিলতের হাদিস না থাকলে বা জয়িফ প্রমাণ হলে আহলে কিতাবের বিরুদ্ধে জিহাদ ফরয থাকবে না। এটি স্রেফ ফজিলতের বিষয়, ফরয হওয়া না হওয়ার বিষয় নয়।
খ. সমুদ্রপথে জিহাদের আলাদা ফজিলত আছে। এই ফজিলতের হাদিসটি জয়িফ প্রমাণ হলে সমুদ্রপথে জিহাদ ফরয বা জায়েয থাকবে না তা নয়।
গ. খাওয়ারেজদের বিরুদ্ধে জিহাদের আলাদা ফজিলত আছে। এই ফজিলতের হাদিসটি জয়িফ প্রমাণ হলে এদের বিরুদ্ধে জিহাদ ফরয বা জায়েয থাকবে না তা নয়।
তবে খুসুসি ফজিলতের ফায়েদা হবে: জিহাদে আগ্রহ বাড়বে।
হিন্দের জিহাদের অতিরিক্ত কি ফজিলত?
শহীদ গাজি উভয়ের জন্য অতিরিক্ত ফজিলত। শহীদ হলে সর্বোত্তম শহীদদের কাতারে গণ্য হবে। গাজি হয়ে ফিরে আসলে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে।
ফজিলত বলে উৎসাহ দেয়া কি নিন্দনীয়?
অবশ্যই নয়। ফজিলত তো এসেছেই উৎসাহ দেয়ার জন্য।
কি আছে আধা ঘণ্টার বক্তব্যে?
বয়ানের সারকথা: হিন্দে জিহাদ হবে তা প্রমাণিত এবং ইতোমধ্যে হিন্দে অনেকবার জিহাদ হয়ে গেছে। শেষ যামানায় বা ঈসা আলাইহিস সালামের সময়ে বা ইমাম মাহদির হাতে হিন্দে জিহাদ হবে: এ ধরনের বর্ণনাগুলো প্রমাণিত নয়, তাই সেগুলো বিশ্বাস করা যাবে না। যেহেতু হিন্দে জিহাদ হবে বলে হাদিসে এসেছিল আর জিহাদ ইতোমধ্যে অনেকবার হয়ে গেছে তাই হাদিসের ভবিষ্যদ্বাণী ফলে গেছে। ভবিষ্যতেও হিন্দে জিহাদ হবে কি’না তা হাদিসে নাই। তাই হিন্দে শেষ যামানায় আবারও জিহাদ হবে বলে প্রচার প্রচারণা করার কোনো দালিলিক ভিত্তি নাই।
এও বলেছেন: জিহাদ হবে কিনা তা হাদিসে না থাকলেও জিহাদ হতে পারে সেটা স্বাভাবিক। যদি হয় তাহলে যখন হবে তখন উলামায়ে কেরামের নির্দেশনা মতো শরীয়তের উসূল জাওয়াবিতের আলোকে কাজ করতে হবে।
এ হচ্ছে বয়ানের সারকথা।
আপত্তির জায়গা কোথায়?
ক. বয়ানটির উদ্দেশ্য কি জিহাদে উৎসাহিত করা, নাকি নিরুৎসাহিত করা? স্পষ্ট যে, নিরুৎসাহিত করা। শুধু তাই নয় বরং আবুল বাশার সাহেবের বয়ানটির সাথে মিলালে স্পষ্ট বুঝা যায় উনাদের উদ্দেশ্য: হিন্দে জিহাদ থেকে মুসলমানদের বারণ করা, ফিরিয়ে রাখা। জিহাদ তো আসলে উৎসাহ দেয়ার জিনিস। যদি জিহাদের পথে ভুলভ্রান্তি হয়ে থাকে তাহলে ভুলভ্রান্তি সংশোধন করা কাম্য, জিহাদ বন্ধ করে দেয়া নয়। জিহাদ বন্ধ করে দিলে উম্মত ধ্বংস হবে, যা আজ আমরা স্বচক্ষে দেখতে পাচ্ছি।
খ. জয়িফ হলেও অনেকগুলো হাদিসে এসেছে যে, আখেরে যামানায় হিন্দে জিহাদ হবে এবং মুসলমানদের বিজয় হবে। আমরা একে অকাট্য হিসেবে বিশ্বাস না করলাম, তবে এক রকম একটা আশা রাখাতে তো আশাকরি সমস্যা নাই যে, হিন্দুস্তানে ইসলামের বিজয় হবে। কিন্তু বয়ানের ধাচটা এমন যে, এরকম একটা আশা রাখারও অবকাশ নাই। আমার মনে হয় এটা উসূল জাওয়াবেতের খেলাফ। বিশেষত যখন হাদিসগুলো একেবারে মাওজু তথা জাল নয় এবং শরীয়তের কোনো বিধানের পরিপন্থীও নয়।
গ. বড় আপত্তির জায়গা হলো: দুটি হাদিস যেগুলোকে উনারা সনদের বিচারে গ্রহণযোগ্য বলেছেন, সেগুলোতে হিন্দে জিহাদের ফজিলত এসেছে: যারা এতে শরীক হবে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে, শহীদ হলে সর্বোত্তম শহীদদের কাতারে গণ্য হবে। এই ফজিলতটি মুতলাকভাবে এবং আমভাবে এসেছে। নির্দিষ্ট কোনো জিহাদ বা নির্দিষ্ট কোনো যামানার ব্যাপারে আসেনি। অতএব, হিন্দুস্তানে কাফেরদের বিরুদ্ধে নবী যামানা থেকে নিয়ে কেয়ামত পর্যন্ত যত জিহাদ হবে সবাই এই ফজিলতটি পাবে। উনাদের বয়ানে এই ফজিলতটির ব্যাপারে কোনো কথা বিলকুল আসেনি।
আসলে আমরা যারা গাযওয়াতুল হিন্দের কথা বলি, তারা মূলত এই ফজিলতটির কথাই বুঝাতে চাই যে, হিন্দের জিহাদে শরীক হলে আমরা ফজিলতটি পাবো। নিজেরাও উৎসাহ পাই, এটি বলে অন্য মুসলমানদেরও উৎসাহিত করি। কিন্তু বয়ানের ধাচটা এমন যে, হিন্দে অনেকবার জিহাদ হয়ে গেছে, এই ফজিলত তারা পেয়ে গেছে, এখন আর এই ফজিলত বাকি নাই। এখন আর এই ফজিলত বাকি নাই- এই কথাটি যদিও উনারা স্পষ্ট বলেননি, কিন্তু বয়ান শুনে একজন শ্রোতা এটাই ভাববে।
পুরো ভিডিও জুড়ে একটি কথাই বার বার বলা হয়েছে: গাযওয়াতুল হিন্দ হয়ে গেছে, হয়ে গেছে, হয়ে গেছে। তো শ্রোতারা এখান থেকে কি বুঝবে? তারা কি কখনও বুঝবে যে, হিন্দে জিহাদ করার বিশাল ফজিলত আছে, যেটির জন্য নিজেদের জানমাল উৎসর্গ করা কাম্য? কিছুতেই এমনটি বুঝবে না। বরং নিরুৎসাহিত হবে এবং মনে করবে হিন্দে জিহাদ একটি ফালতু বিষয়। একটি প্রমাণিত ফজিলতের ব্যাপারে এরকম নেতিবাচক পরিবেশ তৈয়ার করা তো কাম্য নয়।
আপনারা পুরো বয়ানে একটি বারও কেন বললেন না: হিন্দের জিহাদের মহা ফজিলত আছে, যে ফজিলতটি অন্য অনেক ভূখণ্ডে জিহাদ করার ব্যাপারে নাই? এই কথাটি উচ্চারণ করতে আপনাদের কিসে বাধা দিলো? আপনারা হাদিসের একাংশ বয়ান করে আরেক অংশ এড়িয়ে গেলেন কেন? একটি ধোঁয়াশা সৃষ্টি করলেন কেন?
অনেক মনীষীর বরাতে তিনি বলেছেন: গাযওয়াতুল হিন্দ হয়ে গেছে। মনীষীরা আসলে ‘হয়েছে’ বলেছেন, ‘হয়ে গেছে’ সামনে হবে না - এমনটা বলেননি। কিন্তু তিনি বক্তব্যে এই ‘হয়েছে’টাকে ‘হয়ে গেছে’ উচ্চারণ করেছেন। এভাবেই একটা ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে।
মনীষীদের উদ্দেশ্য ছিল: এ পর্যন্ত হিন্দে যে জিহাদগুলো হয়েছে সবগুলোই গাযওয়াতুল হিন্দের ভবিষ্যদ্বাণীর মধ্যে পড়ে। ভবিষ্যতে আর হিন্দে জিহাদ হবে না, বা হলেও সেগুলো গাযওয়াতুল হিন্দের আওতায় পড়বে না এটা উনারা বলেনওনি, উনাদের উদ্দেশ্যও এমন না। এ কারণেই ৪৪ হিজরিতে মুআবিয়া রাদি.র শাসনামলের জিহাদ, ৯২ হিজরিতে উমাইয়াদের আমলে মুহাম্মাদ বিন কাসিম রহ. এর জিহাদ, ৪০০ হিজরির দিকে মাহমুদ গজনবি রহ. এর জিহাদ সবগুলোকেই উনারা গাযওয়াতুল হিন্দ বলেছেন। যদি এমন হতো যে, প্রথম জিহাদটার মাধ্যমেই হাদিসের ফজিলত শেষ, পরের জিহাদগুলো আর এই ফজিলত পাবে না- তাহলে এই সবগুলো জিহাদের উপর গাযওয়াতুল হিন্দ ফিট করার কোনো অর্থ থাকতো না। ৪০০ হিজরি পর্যন্ত বরং আরও পরের শিহাবুদ্দীন ঘুরি রহ. ও অন্যান্যদের জিহাদ গাযওয়াতুল হিন্দের মধ্যে পড়বে কিন্তু বর্তমান জিহাদ বা ভবিষ্যতের জিহাদ গাযওয়াতুল হিন্দের মধ্যে পড়বে না, তারা এ ফজিলত পাবে না: এমন ধারণা কোনো উসূল-কায়েদার ভিতরেই পড়ে না। কিন্তু বয়ানের মধ্যে এমন একটা ধোঁয়াশাই সৃষ্টি করা হয়েছে।
আখেরে যামানায় হিন্দ বিজয় হবে!!
গাযওয়াতুল হিন্দের হাদিসে যদিও পরিষ্কার সহীহ সনদে নাই যে, আখেরে যামানায় হিন্দে জিহাদ হবে, তবে অন্য কিছু ব্যাপক হাদিস বুঝায় আখেরে যামানায় হিন্দ বিজয় হবে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
لَا يَبْقَى عَلَى ظَهْرِ الْأَرْضِ بَيْتُ مَدَرٍ، وَلَا وَبَرٍ إِلَّا أَدْخَلَهُ اللهُ كَلِمَةَ الْإِسْلَامِ، بِعِزِّ عَزِيزٍ أَوْ ذُلِّ ذَلِيلٍ، إِمَّا يُعِزُّهُمُ اللهُ فَيَجْعَلُهُمْ مِنْ أَهْلِهَا، أَوْ يُذِلُّهُمْ فَيَدِينُونَ لَهَا. -مسند أحمد: 23814، قال المحققون: إسناده صحيح.
“দুনিয়ার বুকে প্রতিটি জনপদের প্রতিটি ঘরে ঘরে আল্লাহ তাআলা ইসলামের কালিমা প্রবেশ করাবেন। যাকে চান ইজ্জতের সাথে, যাকে চান লাঞ্ছিত করে। হয়তো ইসলামের অনুসারি বানিয়ে তাদের সম্মানীত করবেন; নয়তো (হত্যা, বন্দী ও জিযিয়ার মাধ্যমে) অপদস্থ করবেন, ফলে তারা ইসলামের (শাসনের) অধীনস্থতা গ্রহণে বাধ্য হবে।” -মুসনাদে আহমাদ: ২৩৮১৪
আরও ইরশাদ করেন,
لَيَبْلُغَنَّ هَذَا الْأَمْرُ مَا بَلَغَ اللَّيْلُ وَالنَّهَارُ، وَلَا يَتْرُكُ اللهُ بَيْتَ مَدَرٍ وَلَا وَبَرٍ إِلَّا أَدْخَلَهُ اللهُ هَذَا الدِّينَ، بِعِزِّ عَزِيزٍ أَوْ بِذُلِّ ذَلِيلٍ، عِزًّا يُعِزُّ اللهُ بِهِ الْإِسْلَامَ، وَذُلًّا يُذِلُّ اللهُ بِهِ الْكُفْرَ. -مسند أحمد: 16957، قال المحققون: إسناده صحيح على شرط مسلم.
“যতখানে রাত্র দিন আসে, এ দ্বীন অবশ্যই অবশ্যই সেখানে পৌঁছবে। প্রতিটি জনপদের প্রতিটি ঘরে ঘরে আল্লাহ তাআলা এ দ্বীন প্রবেশ করাবেন। যাকে চান ইজ্জতের সাথে, যাকে চান লাঞ্চিত করে। ইজ্জতের মাধ্যমে তিনি ইসলামকে সম্মানীত করবে। লাঞ্ছনার মাধ্যমে তিনি কুফরকে অপদস্থ করবেন। -মুসনাদে আহমাদ: ১৬৯৫৭
অন্য হাদিসে এসেছে,
عن أبي هريرة، أن النبيَّ -صلَّى الله عليه وسلم- قال: ليس بيني وبينه نبيٌّ -يعني عيسى ابن مريم- وإنه نازلٌ ... فيُقاتِلُ الناسَ على الإِسلامِ، فيدُقُ الصَّلِيبَ، ويقتُلُ الخِنزيرَ، ويضَعُ الجزيةَ، ويُهلِكُ اللهُ في زمانه المِلل كلَّها إلا الإِسلامَ. -مسند أحمد: 9270، سنن أبي داود: 4324، قال المحققون: حديث صحيح. اهـ
“হযরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আমার এবং তাঁর – অর্থাৎ ঈসা ইবনে মারয়াম আলাইহিস সালামের- মাঝখানে কোনো নবী নেই। অচিরেই তিনি যমিনে অবতরণ করবেন। ... অবতরণ করে ইসলাম গ্রহণের জন্য সকলের বিরুদ্ধে কিতাল করবেন। ক্রুশ ভেঙে ফেলবেন। শুকর হত্যা করে ফেলবেন। জিযিয়ার বিধান উঠিয়ে দেবেন (ফলে মুসলমান না হলে হত্যা ব্যতীত দ্বিতীয় কোনো রাস্তা থাকবে না)। তার যামানায় আল্লাহ তাআলা একমাত্র ইসলাম ব্যতীত সকল ধর্ম নিঃশেষ করে দেবেন।” -মুসনাদে আহমাদ: ৯২৭০, সুনানে আবু দাউদ: ৪৩২৪
এসব হাদিস পরিষ্কার: আখেরে যামানায় দ্বীনে ইসলাম বিজয় হবে এবং দ্বীনে ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো ধর্ম, অন্য কোনো মতবাদ থাকবে না। বর্তমান হিন্দের পরিস্থিতি বিবেচনায় আপনি কি মনে করেন: জিহাদ ছাড়া এমনি এমনি হিন্দে দ্বীন বিজয় হয়ে যাবে?
গাযওয়াতুল হিন্দের হাদিসে আখেরে যামানায় হিন্দে জিহাদ হবে অংশটা সহীহ না হলেও অন্যান্য হাদিস নির্দেশ করে আখেরে যামানায় হিন্দে জিহাদ হবে এবং বিজয় হবে। তো এসমস্ত সহীহ হাদিস উল্লেখ করে উম্মতকে জিহাদে উৎসাহিত না করে বরং সংশয়মূলক কথাবার্তা বলে সংশয় সৃষ্টি করার কি অর্থ?
ভবিষ্যদ্বাণী পুরা হয়ে গেছে- এর কি অর্থ?
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বলেছেন হিন্দে জিহাদ হবে, তখন হিন্দে জিহাদ হবেই নিশ্চিত। নবীর কথা কখনও মিথ্যা হয় না। তবে এ মু’জিযা তথা ভবিষ্যদ্বাণীটি বাস্তবায়িত হয়েছে বলার জন্য হিন্দে কোনো একটা জিহাদ হওয়াই যথেষ্ট, আজীবন বা কেয়ামত পর্যন্ত জিহাদ চলতে থাকা আবশ্যক নয়। যারা বলেছেন রাসূলের ভবিষ্যদ্বাণী পুরা হয়েছে তারা এ অর্থেই বলেছেন যে, রাসূল বলেছিলেন জিহাদ হবে আর বাস্তবেই জিহাদ হয়েছে। কিন্তু রাসূল যে ফজিলতটি বলেছেন সে ফজিলতটিও শেষ হয়ে গেছে- এটি না হাদিসে আছে আর না মনীষীরা বলেছেন। ফজিলত নির্দিষ্ট কোনো যুদ্ধ বা নির্দিষ্ট কোনো যামানার ব্যাপারে আসেনি, মুতলাক হিন্দের জিহাদের ব্যাপারে এসেছে। অতএব, হিন্দে যখনই জিহাদ হবে, তখনই এ ফজিলত লাভ হবে। এদিকটি তুলে ধরে উম্মাহকে উৎসাহিত করা দরকার ছিল। কিন্তু উনারা করেছেন ঠিক উল্টোটা। ফজিলতের বিষয়টা সম্পূর্ণ এড়িয়ে গেছেন।
শেষে এ ব্যাপারে মুফতি শফি রহ. এর বক্তব্য উল্লেখ করছি। তিনি জাওয়াহিরুল ফিকহের ছয় নম্বর খণ্ডের ৬৪-৬৫ পৃষ্ঠায় বলেন:
“হিন্দে জিহাদ (তথা গাযওয়াতুল হিন্দ) দ্বারা কোন জিহাদ উদ্দেশ্য?
এই উভয় হাদিসে গাযওয়াতুল হিন্দের যে ফজিলত বর্ণিত হয়েছে, এর বেলায় প্রশ্ন হয় যে: হিন্দুস্তানে তো হিজরি প্রথম শতাব্দি থেকে আজ অবধি বিভিন্ন সময়ে জিহাদ হয়ে আসছে। সর্বপ্রথম সিন্ধে মুহাম্মাদ বিন কাসিম জিহাদ করেন, যে জিহাদে কোনো কোনো সাহাবা এবং অধিকাংশ জন তাবিয়ি অংশ নিয়েছেন বলে বর্ণিত আছে। তো এর দ্বারা কি শুধু প্রথম জিহাদটি উদ্দেশ্য? নাকি যত জিহাদ এ পর্যন্ত হয়েছে এবং সামনেও হবে সবই এর আওতায় পড়বে?
হাদিসের শব্দে খেয়াল করলে এটাই বুঝা যায় যে, হাদিসের শব্দ আম (ব্যাপক), খাসভাবে নির্দিষ্ট কোনো জিহাদে সীমাবদ্ধ করার কোনো যৌক্তিকতা নাই। এ কারণে হিন্দুস্তানে বিভিন্ন সময়ে যত জিহাদ হয়ে আসছে, বর্তমান ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ এবং ভবিষ্যতেও হিন্দুস্তানে যত জিহাদ কাফেরদের বিরুদ্ধে হবে, সবগুলোই এই মহা সুসংবাদের আওতায় পড়বে।” –জাওয়াহিরুল ফিকহ: ৬/৫৪-৬৫
***
আমার তিনটি প্রশ্ন
প্রশ্ন ১. গাযওয়াতুল হিন্দের ফজিলত কি শেষ হয়ে গেছে? হিন্দে যদি জিহাদ হয় তাহলে সেই জিহাদে যারা শরীক হবে তারা কি গাযওয়াতুল হিন্দের যে ফজিলত হাদিসে এসেছে সেটি পাবেন, নাকি পাবেন না? এবং এর কারণ কি?
প্রশ্ন ২. মুসলিম ভূমি হিন্দুস্তানকে পুনরুদ্ধার করা এবং হিন্দুদের নির্যাতনের কবল থেকে মুসলিমদের মুক্ত করার জন্য হিন্দুস্তানের বিরুদ্ধে জিহাদ করা মুসলিমদের দায়িত্ব কি দায়িত্ব নয়? এবং কেন?
প্রশ্ন ৩. যেসব হাদিসে শেষ যামানায় দ্বীন কায়েম হবে বলে এসেছে, সেগুলোর আলোকে হিন্দুস্তানও বিজয় হবে বলে মনে করেন কিনা আপনারা?
***
Comment