পৌরুষ
মুসলিমদের আজ এই করুণ দশা কেন, এমন প্রশ্ন যদি জিজ্ঞেস করা হয় তাহলে কেউ কেউ বলবে, আমাদের ইলমের অভাব! কিন্তু না, আজকের যুগে ইলম অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে সবচেয়ে সহজলভ্য। লক্ষ লক্ষ কিতাব, মাদ্রাসা, হাফিয, তালিবুল ইলম, আলিম ওলামা —কোনো কিছুর অভাব নেই। মানুষের হাতে হাতে মোবাইলে, ল্যাপটপে ইলম ঘুরছে।
আমাদের আজকের এই অবস্থার কারণ, আমাদের মাঝে আজ রিজাল—সত্যিকারের পুরুষরা নেই। উম্মাহর পুরুষরা তাদের ‘পৌরুষ’ হারিয়ে ফেলেছে। আর উম্মাহ যখন পুরুষশূন্য হয়ে পড়ে, এতে সবচেয়ে বেশি ভুগতে হয় এর নারী আর শিশুদের। আজকে আমাদের অবস্থাও ঠিক তাই। সারাবিশ্বে তাকিয়ে দেখুন, উম্মাহর নারী আর শিশুরা আজ অসহায়, নির্যাতিত। কারণ পুরুষরা তাদের দায়িত্ব নিতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা সমাজের মানদণ্ডে ‘পুরুষ’ হওয়ার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত।
ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে,
“while the cat's away, the mice will play”
আজকে এটাই উম্মাহর অবস্থা। পুরুষরা হারিয়ে গেছে, আর কাফিররা এই উম্মাহকে নিয়ে খেলতে শুরু করেছে। ভাগ-ভাটোয়ারা করে নিচ্ছে নিজেদের মধ্যে। যার যেখানে খুশি সেখানে জুলুমের বুট ধাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন,
— ‘শীঘ্রই মানুষ তোমাদেরকে আক্রমন করার জন্য আহবান করতে থাকবে, যেভাবে মানুষ তাদের সাথে খাবার খাওয়ার জন্য একে-অন্যকে আহবান করে’।
সাহাবিরা এটা শুনে ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলেন না। কারণ সেসময় মুসলিমরা সংখ্যায় অল্প, তারপরও তাঁরা চারদিক জয় করছে, অমুসলিমরা তাদেরকে সমীহ করছে। তাই সাহাবিরা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
— “ইয়া রাসূলাল্লাহ! ‘তখন কি আমরা সংখ্যায় কম হবো?’”
আমরা কি সংখ্যায় তখন এতটাই নগণ্য হবো যে নিজেদের রক্ষাই করতে পারব না? রাসূল (সা.) বললেন,
—‘না, বরং তোমরা সংখ্যায় হবে অগণিত কিন্তু তোমরা সমুদ্রের ফেনার মতো হবে, যাকে সহজেই সামুদ্রিক স্রোত বয়ে নিয়ে যায় এবং আল্লাহ তোমাদের শত্রুর অন্তর থেকে তোমাদের ভয় দূর করে দিবেন”
বিস্মিত সাহাবিরা যেন বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না। সমুদ্রের ফেনার মতো মুসলিমদের সংখ্যা, এত অগণিত, অথচ এত করুণ অবস্থা হবে তাদের? তাঁরা জিজ্ঞেস করল, কেন ইয়া রাসূলাল্লাহ! কেন আমাদের এই করুণ অবস্থা হবে? রাসূল (সা.) জবাব দিলেন,
—আল্লাহ তোমাদের অন্তরে আল-ওয়াহহান ঢুকিয়ে দেবেন’।
‘ওয়াহহান’ শব্দটা আরবদের কাছে পরিচিত ছিল না। তাই তাঁরা আবার জিজ্ঞেস করল,
— ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল ওয়াহহান কী?’
রাসূল (সা.) বললেন,
—‘দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা এবং কিতালকে (আল্লাহর পথে যুদ্ধ) অপছন্দ করা’।
আবু দাউদে সাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত অন্য একটি সহিহ হাদিসে ‘ওয়াহহান’ শব্দের অর্থ বলা হয়েছে— “দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা এবং মৃত্যুকে অপছন্দ করা”
এই হাদিস আমাদের বর্তমান প্রেক্ষাপটে এতটাই বাস্তব, এতটাই প্রাসঙ্গিক, মনে হয় যেন ১৪০০ বছর আগে নয়, মাত্রই গত সপ্তাহে হাদিসটা নাযিল হয়েছে। সাহাবিরা এই হাদিস শুনে বিস্মিত হয়ে গিয়েছিলেন, কারণ তাঁরা তাদের চারপাশের বাস্তবতার সাথে এর প্রাসঙ্গিকতা খুঁজে পাচ্ছিলেন না। কিন্তু আজ আমরা এটা শুনে, নিজেদের সাথে মিলিয়ে দেখে, সহজেই বুঝে ফেলতে পারি, ১৪০০ বছর আগে এই হাদিস দিয়ে রাসূল (সা.) কী বুঝিয়েছিলেন।
রাসূল (সা.) দুনিয়ার উপমা দিয়েছিলেন কান কাটা মরা ছাগলের সাথে —যেটা পচে গিয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। উম্মাহর পুরুষরা আজ সেই কান কাটা মরা ছাগলের পেছনে হাঁপানো কুকুরের মতো ছুটছে।
ওয়াল্লাহি! ওয়াহহান—দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা—আমাদের ‘পৌরুষ’ কেড়ে নিয়েছে। এই উম্মাহকে বিকলাঙ্গ করে ছেড়েছে।
||সংগৃহিত||
Comment