আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা কুরআনুল মাজিদে বলেছেনঃ
اِنَّمَا ذٰلِکُمُ الشَّیۡطٰنُ یُخَوِّفُ اَوۡلِیَآءَہٗ ۪ فَلَا تَخَافُوۡہُمۡ وَ خَافُوۡنِ اِنۡ کُنۡتُمۡ مُّؤۡمِنِیۡنَ ﴿۱۷۵﴾
সে তো শয়তান। সে তোমাদেরকে তার বন্ধুদের ভয় দেখায়; কাজেই যদি তোমরা মুমিন হও তবে তাদেরকে ভয় করো না, আমাকেই ভয় কর। (সুরা আলে ইমরান -১৭৫)
ইবনে তাইমিয়্যাহ এই*আয়াতের ব্যাখ্যায় তার'মাজমু' আল-ফাতাওয়া কিতাবে আলোচনা করেছেন; তিনি বলেন, “সুতরাং, এই আয়াতটি প্রমাণ করে যে, শয়তান তার মিত্রদেরকে ভয়ের মাধ্যম ও উৎস বানিয়েছে এবং সে মুমিনদের তার এসকল মিত্রদের ভয় দেখায়। আয়াতটি আরো প্রমাণ করে যে, মুমিনের পক্ষে শয়তানের মিত্রদের ভয় করা জায়েয নয় এবং আল্লাহ ব্যতিত অন্য কাউকে ভয় করা উচিত নয়। কারণ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা কুরআনের অন্যত্র বলেছেন
.... فَلَا تَخۡشَوُا النَّاسَ وَ اخۡشَوۡنِ وَ لَا تَشۡتَرُوۡا بِاٰیٰتِیۡ ثَمَنًا قَلِیۡلًا ؕ وَ مَنۡ لَّمۡ یَحۡکُمۡ بِمَاۤ اَنۡزَلَ اللّٰہُ فَاُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡکٰفِرُوۡنَ ﴿۴۴﴾
... কাজেই তোমরা মানুষকে ভয় করো না এবং আমাকেই ভয় কর। আর আমরা আয়াতসমূহের বিনিময়ে তুচ্ছ মূল্য ক্রয় করো না। আর আল্লাহ যা নাযিল করেছেন সে অনুযায়ী যারা বিধান দেয় না, তারাই কাফের। (সুরা মায়েদা -৪৪)
সুতরাং আমাদের আল্লাহকে ভয় করার আদেশ করা হয়েছে এবং শয়তানের সহযোগীদের ভয় করা থেকে নিষেধ করা হয়েছে।*আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা বলেছেন:
فَلَا تَخۡشَوۡہُمۡ وَ اخۡشَوۡنِیۡ ٭ وَ لِاُتِمَّ نِعۡمَتِیۡ عَلَیۡکُمۡ وَ لَعَلَّکُمۡ تَہۡتَدُوۡنَ ﴿۱۵۰﴾ۙۛ
কাজেই তাদেরকে ভয় করো না এবং আমাকেই ভয় কর। আর যাতে আমি তোমাদের উপর আমার নেয়ামত পরিপূর্ণ করি এবং যাতে তোমরা হিদায়াত লাভ কর। (সুরা বাকারাহ - ১৫০)
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা জালিমদের ভয় করাকে নিষেধ করেছেন এবং শুধুমাত্র তাকেই ভয় করার আদেশ করেছেন।
আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জাত আরো বলেছেনঃ
الَّذِیۡنَ یُبَلِّغُوۡنَ رِسٰلٰتِ اللّٰہِ وَ یَخۡشَوۡنَہٗ وَ لَا یَخۡشَوۡنَ اَحَدًا اِلَّا اللّٰہَ ؕ وَ کَفٰی بِاللّٰہِ حَسِیۡبًا ﴿۳۹﴾
তারা আল্লাহ্*র বাণী প্রচার করত, আর তাঁকে ভয় করত এবং আল্লাহ্*কে ছাড়া অন্য কাউকেও ভয় করত না। আর হিসাব গ্রহণকারীরুপে আল্লাহ্ই যথেষ্ট। (সুরা আহযাব - ৩৯)
সুরা নাহল-এ আরো উল্লেখ আছে,
وَ قَالَ اللّٰہُ لَا تَتَّخِذُوۡۤا اِلٰـہَیۡنِ اثۡنَیۡنِ ۚ اِنَّمَا ہُوَ اِلٰہٌ وَّاحِدٌ ۚ فَاِیَّایَ فَارۡہَبُوۡنِ ﴿۵۱﴾
আর আল্লাহ্* বলেছেন, ‘তোমরা দুই ইলাহ্ গ্রহণ করো না ; তিনিই তো একমাত্র ইলাহ্। কাজেই তোমরা শুধু আমাকেই ভয় কর।’ (সুরা নাহল - ৫১)
এরপরও কিছু লোক আছে যারা বলে,'হে প্রভু!*আমি আপনাকে ভয় করি এবং যারা আপনাকে ভয় করে না তাদেরও আমি ভয় করি।'*এধরণের কথা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক এবং একথা গুলি বলার অনুমতি কোন মুসলিমের নেই।*বরং প্রত্যেক মুসলিমের উচিত আল্লাহকে ভয় করা এবং অন্য কাউকে ভয় করা অনুচিত। আর যে আল্লাহকে ভয় করে না সে কখনও ভয় পাওয়ার যোগ্য না, কারণ সে নিজেই অন্যায়কারী এবং শয়তানের মিত্রদের অন্তর্ভুক্ত।*তাই, আল্লাহ আমাদের এমন ব্যক্তিদের ভয় করা থেকে নিষেধ করেছেন।*যদি বলা হয় যে 'এই জাতীয় ব্যক্তি আমাদের ক্ষতি করতে পারে,' তবে এই বিষয়টি আমাদের অন্যভাবে চিন্তা করে দেখতে হবে; সে ব্যক্তি আপনাকে ক্ষতি করতে পারছে কারণ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা তাকে আপনার উপর (মুসাল্লাত) চাপিয়ে দিয়েছেন এবং আল্লাহ যদি আপনার উপর থেকে তার ক্ষতি ফিরিয়ে নিতে চান, তবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা সহজেই তা করতে পারবেন. ব্যাপারটির সমস্তই কিছু আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা ইখতিয়ারে রয়েছে। আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জাত এক ব্যক্তির উপর অন্য ব্যক্তিকে চাপিয়ে দেন একমাত্র তার পাপের কারণে, তাই যদি আপনি আল্লাহকে ভয় করেন এবং তাঁর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করেন এবং তাঁর উপর ভরসা করেন তবে তিনি আপনাকে এই মহাবিশ্বে যা কিছু আছে তার সব কিছুর অকল্যাণ থেকে রক্ষা করবেন এবং কাউকে আপনার উপর বিজয়ী করবেন না। যেমনটা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা বলেছেন,
... وَ مَنۡ یَّتَوَکَّلۡ عَلَی اللّٰہِ فَہُوَ حَسۡبُہٗ ؕ اِنَّ اللّٰہَ بَالِغُ اَمۡرِہٖ...
...আর যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে তার জন্য আল্লাহ্*ই যথেষ্ট। আল্লাহ তাঁর ইচ্ছে পূরণ করবেনই;... (সুরা তালাক্ক - ৩)
আপনার উপর কাউকে ক্ষমতা দেওয়া কারণ হ'ল আপনার পাপ এবং সেই ব্যক্তির প্রতি আপনার ভয়ের ফল।*সুতরাং, যদি আপনি আল্লাহকে ভয় করেন এবং নিজের পাপসমূহ থেকে অনুতপ্ত হন এবং তাঁর ক্ষমা প্রার্থনা করেন তবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা যেভাবে আমাদের বলেছেন কেউ আমাদের পরাভূত করতে পারবে না।
...وَ مَا کَانَ اللّٰہُ مُعَذِّبَہُمۡ وَ ہُمۡ یَسۡتَغۡفِرُوۡنَ ﴿۳۳﴾
এবং আল্লাহ এমনও নন যে, তারা ক্ষমা প্রার্থনা করবে অথচ তিনি তাদেরকে শাস্তি দেবেন। (সুরা আনফাল - ৩৩)
আর একটি বর্ণনায় বলা হয়েছে যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা বলেছেন:*“আমি আল্লাহ!*আমার ব্যতীত উপাসনার যোগ্য আর কেউ নেই!*আমি রাজাদের রাজা!*সমস্ত রাজার হৃদয় এবং কপাল আমার হাতের মধ্যে রয়েছে।*সুতরাং, যে কেউ আমার আনুগত্য করে, আমি সমস্ত রাজাদের অন্তরকে তার প্রতি করুণাময় করব এবং যে কেউ আমার অবাধ্য হয়, আমি তাদেরকে তার জন্য যন্ত্রণার উৎস হিসাবে পরিণত করব।*সুতরাং, রাজাদের সক্ষমতা নিয়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখবে না।*বরং আমার কাছে তওবা কর এবং আমার আনুগত্য কর এবং আমি তাদেরক মাধ্যমে তোমাদের সাহায্য করব।“
ইবনুল কাইয়্যিম তার হাগহাত আল লাহফান গ্রন্থে বলেছেন, “আল্লাহর শত্রু (অর্থাৎ শয়তান) এর চক্রান্ত হল সে মুমিনদেরকে তার সৈন্য ও মিত্রদের ভয় দেখায় সুতরাং, তারা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে না, তারা উত্তম কাজের আদেশ দেয় না এবং মন্দকে নিষেধ করে না; এটিই মুমিনদের বিপক্ষে শয়তানের সবচেয়ে ভয়ংকর চক্রান্ত, যেমন আল্লাহ তা'আলা এই বলে আমাদের অবহিত করেছেন যে,
اِنَّمَا ذٰلِکُمُ الشَّیۡطٰنُ یُخَوِّفُ اَوۡلِیَآءَہٗ ۪ فَلَا تَخَافُوۡہُمۡ وَ خَافُوۡنِ اِنۡ کُنۡتُمۡ مُّؤۡمِنِیۡنَ ﴿۱۷۵﴾
সে তো শয়তান। সে তোমাদেরকে তার বন্ধুদের ভয় দেখায়; কাজেই যদি তোমরা মুমিন হও তবে তাদেরকে ভয় করো না, আমাকেই ভয় কর। (সুরা আলে ইমরান -১৭৫)
… কাতাদাহ এ আয়াতের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছিলেন: “আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা মুমিনদের অন্তর প্রশান্ত ও শক্তিশালী করে দেন।*
সুতরাং, আপনার বিশ্বাস আল্লাহর প্রতি যত শক্তিশালী হবে, শয়তান ও তার মিত্রদের বিপক্ষে আপনার অন্তর তত শক্তিশালী হয়ে উঠবে এবং আর আল্লাহর প্রতি আপনার বিশ্বাস যতটা দুর্বল হবে ততই আপনার অন্তরে তাদের ভয় বাড়তে থাকবে।
শায়খ তার আল ফাওয়ায়িহ কিতাবে বলেছেন
“পৃথিবীতে এমন কিছু নেই যা সম্পূর্ণরূপে স্বাধীনভাবে এবং নিজস্বতার সাথে পরিচালিত হতে পারে বা অন্য কোনও কিছু তাকে প্রভাবিত করে না।*বরং, প্রতিটি বিয়য় একে অন্যের উপর নির্ভরশীল; হয় প্রভাবক না হয় নিয়ামক হিসাবে কাজ করে। এই বিষয়টা খালি চোখে দেখা যায় শুধুমাত্র এমন বিষয়ে প্রযোজ্য তা কিন্তু নয়।এটি প্রাণী ও উদ্ভিদগুলিকে প্রভাবিত করে যেমন সূর্যের রশ্মি বা বাতাসে প্রবাহ মতো অদৃশ্য এবং রূপকবিদ্যার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, কারণ গাছ-পালার খাদ্য সংগ্রহ এবং উদ্ভিদ বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে প্রভাবক হিসাবে কাজ করছে।তেমনিভাবে, সন্তানের জন্ম বিষয় সহবাসের পাশাপাশি আরও অনেক বিষয়ের উপর নির্ভর করে। সুতরাং এই প্রভাবক বা নিয়ামকের নিয়মটি পৃথিবীর সমস্ত ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।*তাই, যে স্বত্তাকে ভয় করা হবে বা যার নিকট আশা করা হবে তার বেশ কয়েকটি বৈশিষ্ট্যের মধ্যে একটি হলো যে, সেই স্বত্তার উপর কেউ প্রভাব ফেলতে পারবে এবং সেই স্বত্তা সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করবেন।*আল্লাহ ব্যতীত এমন কোন স্বত্তা নেই যাকে কিছু প্রভাবিত করতে পারে না।*সুতরাং তিনি ব্যতীত কারো কাছে আশা বা ভয় করা উচিত নয়।
এটি একটি অকাট্য প্রমাণ যে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা ব্যতীত অন্য কারো আনুগত্য, আশা, ভয় সম্পূর্ণ মুল্যহীন।*যদি আমরা ধরে নিই যে, কেউ তার নিজের সব কিছুকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে; তবে আমাদের একথাও মেনে নিতে হবে যে, সে এই ক্ষমতাটি নিজের থেকে উদ্ভূত করেনি, বরং এটি অন্য কারও দ্বারা তাকে দেওয়া হয়েছিল।*সুতরাং, তার নিজের কোন শক্তি নেই, কারণ আল্লাহ ব্যতীত কোন ক্ষমতা বা শক্তি নেই। তাঁর হাতেই সমস্ত ক্ষমতা ও শক্তি রয়েছে।*সুতরাং, যে ক্ষমতা ও শক্তির জন্য মানুষকে ভয় করা হচ্ছে তা বাস্তবে আল্লাহর হাতে রয়েছে।*তাই আমাদের চিন্তা করা উচিত, যাদের কোন ক্ষমতা ও শক্তি নেই তাদের আমরা কীভাবে ভয় করতে পারি এবং কিভাবে তাদের নিকট আশা করতে পারি? *প্রকৃতপক্ষে, কাউকে ভয় করা এবং তার মধ্যে আশা করা সেই ব্যক্তির দ্বারা পরাভূত হওয়ার এবং তার কাছে করুণার পাত্রে পরিণত হওয়ার নামমাত্র। কারণ, আপনি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা ব্যতীত অন্য কাউকে যত বেশি ভয় করবেন, তত বেশি সেই ব্যক্তি আপনাকে পরাভূত করবে এবং সেই ব্যক্তির প্রতি আপনার আশা যত বেশি হবে সে ব্যক্তি তত বেশি আপনাকে করুণার পাত্র বানাবে।"
এই আয়াত সম্পর্কে সাইয়্যেদ কুতুব*'ফি'যিলালিল কুরআন'*এ বলেছেন:
"আসলে শয়তান তো চেষ্টা চালায় মুমিনেরা যেন তার মিত্রদের ভয় করে। শয়তান তাদের ওপর ভয়-ভীতির একটা আবরণ চাপিয়ে দেয়৷ শয়তানের এ চক্রান্ত সম্পর্কে মুমিনদের সতর্ক থাকতে হবে। শয়তানের বন্ধুদেরকে ভয় করলে চলবে না; বরং ভয় করতে হবে একমাত্র আল্লাহকে ৷ কেবল এক আল্লাহ তায়ালাই হচ্ছেন পরম পরাক্রমশালী ।
'এরাই হচ্ছে শয়তান এরা নিজেদের বন্ধুদের ব্যাপারে ভীতি প্রদর্শন করে। সুতরাং তোমরা তাদেরকে ভয় করবে না, বরং ভয় করবে আমাকে- যদি তোমরা মোমেন হয়ে থাকো ।'
শয়তান তার বন্ধুদের শক্তিকে বড় করে দেখায়, তাদের শক্তি-ক্ষমতাতে কৃত্রিম পোশাক পরিধান করায়, মনে এমন ভাবের সৃষ্টি করে যে, তারা বুঝি সব দন্ডমুন্ডের অধিকারী, শক্তিধর । ক্ষতি আর উপকারের সকল ক্ষমতা তাদের হাতেই। শয়তান এভাবে তার বন্ধুদের দ্বারা নিজের উদ্দেশ্য হাসিল করে। তাদের অনিষ্ট সাধন করতে থাকে। তাই মানুষ তাদের সামনে প্রতিবাদের আওয়ায তুলতে পারে না। শয়তানকে প্রতিরোধ করার কথা কেউ চিন্তাও করতে পারে না, পারে না শয়তানের বন্ধুদের বিপর্যয় আর অনিষ্ট অনাচার থেকে সাধারণ মানুষকে দূরে রাখতে।
শয়তান মিথ্যা ছড়ায়, অন্যায়কে বড় করে দেখায়। নিজেকে সে প্রবল পরাক্রমশালী আর প্রচন্ড প্রতাপশালী বলে জাহির করে। তার সামনে কোনো প্রতিরোধ টিকতে পারে না, দাড়াতে পারে না কেউ । প্রতিরোধকারীদের কেউ তাকে পরাভূত করতে পারে না। বিষয়টাকে এভাবে বিশাল করে পেশ করার ক্ষেত্রে তার কোনো জুড়ি নেই৷ ভয়-ভীতির আবরণে আর ধর-পাকড় করে শয়তানের মিত্রদের পৃথিবীতে এমনসব কান্ড করে, যা দেখে শয়তানের নিজেরই চক্ষু শীতল হয়ে যায়। তারা ন্যায়কে করে অন্যায় আর অন্যায়কে করে ন্যায় । সত্যের আওয়াযকে স্তব্ধ করে দেয়। তারা পৃথিবীতে নিজেদেরকে খোদা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে, তারা অন্যায়ের সহায়তা করে, ন্যায়কে প্রতিহত করে। কেউ তাদেরকে নেতৃত্বের আসন থেকে হটাতে পারে না। তারা যে অন্যায় অনাচারের প্রচলন ঘটায়, তা ঠেকাবার সাহসও কেউ করতে পারে না। যে সত্যকে তারা নিশ্চিহ্ন করে, তাকে স্পষ্ট করে তুলে ধরার কেউ থাকে না।
শয়তান সব সময়ই প্রতারক, প্রবঞ্চক, ধোকাবাজ । বন্ধুদের পেছনে সে আড়ালে লুকিয়ে থাকে। তারা শয়তানের প্ররোচনাকে পাত্তা দেয় না, শয়তান তাদের অন্তরে যে ভীতি ছড়ায় এখানে আল্লাহ তায়ালা তার চক্রান্তকে উম্মোচিত করেছেন, শয়তানের চক্রান্তকে উন্মোচিত করে আমাদের সম্মুখে উপস্থাপন করেছেন। আল্লাহ্* তায়ালা মুমিনদেরকে আসল ব্যাপারটি অবহিত করেন, তার চক্রান্ত আর প্রতারণার রহস্য সম্পর্কে আমাদেত অবগত করেছেন । যাতে তারা সে সম্পর্কে সতর্ক থাকতে পারে। তাই মুমিনরা শয়তান এবং তার শয়তানদের ভয় পায় না। মুমিনদের কাছে শয়তান সব সময়ই দুর্বল থাকে। মুমিনদের জন্যে তাকে ভয় পাওয়ার কিছুই নেই। কেননা তারা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার মুখাপেক্ষী, তারা আশ্রয় নেয় তাঁর শক্তির কাছে।
ভয় করার মতো একমাত্র শক্তি হচ্ছে সে শক্তি, যা উপকার ও ক্ষতি করার অধিকার ও ক্ষমতা আছে, আর সে শক্তি হচ্ছে একমাত্র আল্লাহর শক্তি । ইমানদাররা সে শক্তিকেই ভয় পায়। যখন তারা কেবল এক আল্লাহকে ভয় করে। তাদের সামনে বিশ্বের কোনো শক্তিই তখন টিকত পার না, দাড়াতে পারে না-শয়তান ও তার বন্ধুদের শক্তিও ৷
اِنَّمَا ذٰلِکُمُ الشَّیۡطٰنُ یُخَوِّفُ اَوۡلِیَآءَہٗ ۪ فَلَا تَخَافُوۡہُمۡ وَ خَافُوۡنِ اِنۡ کُنۡتُمۡ مُّؤۡمِنِیۡنَ ﴿۱۷۵﴾
সে তো শয়তান। সে তোমাদেরকে তার বন্ধুদের ভয় দেখায়; কাজেই যদি তোমরা মুমিন হও তবে তাদেরকে ভয় করো না, আমাকেই ভয় কর। (সুরা আলে ইমরান -১৭৫)
اِنَّمَا ذٰلِکُمُ الشَّیۡطٰنُ یُخَوِّفُ اَوۡلِیَآءَہٗ ۪ فَلَا تَخَافُوۡہُمۡ وَ خَافُوۡنِ اِنۡ کُنۡتُمۡ مُّؤۡمِنِیۡنَ ﴿۱۷۵﴾
সে তো শয়তান। সে তোমাদেরকে তার বন্ধুদের ভয় দেখায়; কাজেই যদি তোমরা মুমিন হও তবে তাদেরকে ভয় করো না, আমাকেই ভয় কর। (সুরা আলে ইমরান -১৭৫)
ইবনে তাইমিয়্যাহ এই*আয়াতের ব্যাখ্যায় তার'মাজমু' আল-ফাতাওয়া কিতাবে আলোচনা করেছেন; তিনি বলেন, “সুতরাং, এই আয়াতটি প্রমাণ করে যে, শয়তান তার মিত্রদেরকে ভয়ের মাধ্যম ও উৎস বানিয়েছে এবং সে মুমিনদের তার এসকল মিত্রদের ভয় দেখায়। আয়াতটি আরো প্রমাণ করে যে, মুমিনের পক্ষে শয়তানের মিত্রদের ভয় করা জায়েয নয় এবং আল্লাহ ব্যতিত অন্য কাউকে ভয় করা উচিত নয়। কারণ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা কুরআনের অন্যত্র বলেছেন
.... فَلَا تَخۡشَوُا النَّاسَ وَ اخۡشَوۡنِ وَ لَا تَشۡتَرُوۡا بِاٰیٰتِیۡ ثَمَنًا قَلِیۡلًا ؕ وَ مَنۡ لَّمۡ یَحۡکُمۡ بِمَاۤ اَنۡزَلَ اللّٰہُ فَاُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡکٰفِرُوۡنَ ﴿۴۴﴾
... কাজেই তোমরা মানুষকে ভয় করো না এবং আমাকেই ভয় কর। আর আমরা আয়াতসমূহের বিনিময়ে তুচ্ছ মূল্য ক্রয় করো না। আর আল্লাহ যা নাযিল করেছেন সে অনুযায়ী যারা বিধান দেয় না, তারাই কাফের। (সুরা মায়েদা -৪৪)
সুতরাং আমাদের আল্লাহকে ভয় করার আদেশ করা হয়েছে এবং শয়তানের সহযোগীদের ভয় করা থেকে নিষেধ করা হয়েছে।*আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা বলেছেন:
فَلَا تَخۡشَوۡہُمۡ وَ اخۡشَوۡنِیۡ ٭ وَ لِاُتِمَّ نِعۡمَتِیۡ عَلَیۡکُمۡ وَ لَعَلَّکُمۡ تَہۡتَدُوۡنَ ﴿۱۵۰﴾ۙۛ
কাজেই তাদেরকে ভয় করো না এবং আমাকেই ভয় কর। আর যাতে আমি তোমাদের উপর আমার নেয়ামত পরিপূর্ণ করি এবং যাতে তোমরা হিদায়াত লাভ কর। (সুরা বাকারাহ - ১৫০)
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা জালিমদের ভয় করাকে নিষেধ করেছেন এবং শুধুমাত্র তাকেই ভয় করার আদেশ করেছেন।
আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জাত আরো বলেছেনঃ
الَّذِیۡنَ یُبَلِّغُوۡنَ رِسٰلٰتِ اللّٰہِ وَ یَخۡشَوۡنَہٗ وَ لَا یَخۡشَوۡنَ اَحَدًا اِلَّا اللّٰہَ ؕ وَ کَفٰی بِاللّٰہِ حَسِیۡبًا ﴿۳۹﴾
তারা আল্লাহ্*র বাণী প্রচার করত, আর তাঁকে ভয় করত এবং আল্লাহ্*কে ছাড়া অন্য কাউকেও ভয় করত না। আর হিসাব গ্রহণকারীরুপে আল্লাহ্ই যথেষ্ট। (সুরা আহযাব - ৩৯)
সুরা নাহল-এ আরো উল্লেখ আছে,
وَ قَالَ اللّٰہُ لَا تَتَّخِذُوۡۤا اِلٰـہَیۡنِ اثۡنَیۡنِ ۚ اِنَّمَا ہُوَ اِلٰہٌ وَّاحِدٌ ۚ فَاِیَّایَ فَارۡہَبُوۡنِ ﴿۵۱﴾
আর আল্লাহ্* বলেছেন, ‘তোমরা দুই ইলাহ্ গ্রহণ করো না ; তিনিই তো একমাত্র ইলাহ্। কাজেই তোমরা শুধু আমাকেই ভয় কর।’ (সুরা নাহল - ৫১)
এরপরও কিছু লোক আছে যারা বলে,'হে প্রভু!*আমি আপনাকে ভয় করি এবং যারা আপনাকে ভয় করে না তাদেরও আমি ভয় করি।'*এধরণের কথা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক এবং একথা গুলি বলার অনুমতি কোন মুসলিমের নেই।*বরং প্রত্যেক মুসলিমের উচিত আল্লাহকে ভয় করা এবং অন্য কাউকে ভয় করা অনুচিত। আর যে আল্লাহকে ভয় করে না সে কখনও ভয় পাওয়ার যোগ্য না, কারণ সে নিজেই অন্যায়কারী এবং শয়তানের মিত্রদের অন্তর্ভুক্ত।*তাই, আল্লাহ আমাদের এমন ব্যক্তিদের ভয় করা থেকে নিষেধ করেছেন।*যদি বলা হয় যে 'এই জাতীয় ব্যক্তি আমাদের ক্ষতি করতে পারে,' তবে এই বিষয়টি আমাদের অন্যভাবে চিন্তা করে দেখতে হবে; সে ব্যক্তি আপনাকে ক্ষতি করতে পারছে কারণ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা তাকে আপনার উপর (মুসাল্লাত) চাপিয়ে দিয়েছেন এবং আল্লাহ যদি আপনার উপর থেকে তার ক্ষতি ফিরিয়ে নিতে চান, তবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা সহজেই তা করতে পারবেন. ব্যাপারটির সমস্তই কিছু আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা ইখতিয়ারে রয়েছে। আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জাত এক ব্যক্তির উপর অন্য ব্যক্তিকে চাপিয়ে দেন একমাত্র তার পাপের কারণে, তাই যদি আপনি আল্লাহকে ভয় করেন এবং তাঁর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করেন এবং তাঁর উপর ভরসা করেন তবে তিনি আপনাকে এই মহাবিশ্বে যা কিছু আছে তার সব কিছুর অকল্যাণ থেকে রক্ষা করবেন এবং কাউকে আপনার উপর বিজয়ী করবেন না। যেমনটা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা বলেছেন,
... وَ مَنۡ یَّتَوَکَّلۡ عَلَی اللّٰہِ فَہُوَ حَسۡبُہٗ ؕ اِنَّ اللّٰہَ بَالِغُ اَمۡرِہٖ...
...আর যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে তার জন্য আল্লাহ্*ই যথেষ্ট। আল্লাহ তাঁর ইচ্ছে পূরণ করবেনই;... (সুরা তালাক্ক - ৩)
আপনার উপর কাউকে ক্ষমতা দেওয়া কারণ হ'ল আপনার পাপ এবং সেই ব্যক্তির প্রতি আপনার ভয়ের ফল।*সুতরাং, যদি আপনি আল্লাহকে ভয় করেন এবং নিজের পাপসমূহ থেকে অনুতপ্ত হন এবং তাঁর ক্ষমা প্রার্থনা করেন তবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা যেভাবে আমাদের বলেছেন কেউ আমাদের পরাভূত করতে পারবে না।
...وَ مَا کَانَ اللّٰہُ مُعَذِّبَہُمۡ وَ ہُمۡ یَسۡتَغۡفِرُوۡنَ ﴿۳۳﴾
এবং আল্লাহ এমনও নন যে, তারা ক্ষমা প্রার্থনা করবে অথচ তিনি তাদেরকে শাস্তি দেবেন। (সুরা আনফাল - ৩৩)
আর একটি বর্ণনায় বলা হয়েছে যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা বলেছেন:*“আমি আল্লাহ!*আমার ব্যতীত উপাসনার যোগ্য আর কেউ নেই!*আমি রাজাদের রাজা!*সমস্ত রাজার হৃদয় এবং কপাল আমার হাতের মধ্যে রয়েছে।*সুতরাং, যে কেউ আমার আনুগত্য করে, আমি সমস্ত রাজাদের অন্তরকে তার প্রতি করুণাময় করব এবং যে কেউ আমার অবাধ্য হয়, আমি তাদেরকে তার জন্য যন্ত্রণার উৎস হিসাবে পরিণত করব।*সুতরাং, রাজাদের সক্ষমতা নিয়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখবে না।*বরং আমার কাছে তওবা কর এবং আমার আনুগত্য কর এবং আমি তাদেরক মাধ্যমে তোমাদের সাহায্য করব।“
ইবনুল কাইয়্যিম তার হাগহাত আল লাহফান গ্রন্থে বলেছেন, “আল্লাহর শত্রু (অর্থাৎ শয়তান) এর চক্রান্ত হল সে মুমিনদেরকে তার সৈন্য ও মিত্রদের ভয় দেখায় সুতরাং, তারা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে না, তারা উত্তম কাজের আদেশ দেয় না এবং মন্দকে নিষেধ করে না; এটিই মুমিনদের বিপক্ষে শয়তানের সবচেয়ে ভয়ংকর চক্রান্ত, যেমন আল্লাহ তা'আলা এই বলে আমাদের অবহিত করেছেন যে,
اِنَّمَا ذٰلِکُمُ الشَّیۡطٰنُ یُخَوِّفُ اَوۡلِیَآءَہٗ ۪ فَلَا تَخَافُوۡہُمۡ وَ خَافُوۡنِ اِنۡ کُنۡتُمۡ مُّؤۡمِنِیۡنَ ﴿۱۷۵﴾
সে তো শয়তান। সে তোমাদেরকে তার বন্ধুদের ভয় দেখায়; কাজেই যদি তোমরা মুমিন হও তবে তাদেরকে ভয় করো না, আমাকেই ভয় কর। (সুরা আলে ইমরান -১৭৫)
… কাতাদাহ এ আয়াতের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছিলেন: “আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা মুমিনদের অন্তর প্রশান্ত ও শক্তিশালী করে দেন।*
সুতরাং, আপনার বিশ্বাস আল্লাহর প্রতি যত শক্তিশালী হবে, শয়তান ও তার মিত্রদের বিপক্ষে আপনার অন্তর তত শক্তিশালী হয়ে উঠবে এবং আর আল্লাহর প্রতি আপনার বিশ্বাস যতটা দুর্বল হবে ততই আপনার অন্তরে তাদের ভয় বাড়তে থাকবে।
শায়খ তার আল ফাওয়ায়িহ কিতাবে বলেছেন
“পৃথিবীতে এমন কিছু নেই যা সম্পূর্ণরূপে স্বাধীনভাবে এবং নিজস্বতার সাথে পরিচালিত হতে পারে বা অন্য কোনও কিছু তাকে প্রভাবিত করে না।*বরং, প্রতিটি বিয়য় একে অন্যের উপর নির্ভরশীল; হয় প্রভাবক না হয় নিয়ামক হিসাবে কাজ করে। এই বিষয়টা খালি চোখে দেখা যায় শুধুমাত্র এমন বিষয়ে প্রযোজ্য তা কিন্তু নয়।এটি প্রাণী ও উদ্ভিদগুলিকে প্রভাবিত করে যেমন সূর্যের রশ্মি বা বাতাসে প্রবাহ মতো অদৃশ্য এবং রূপকবিদ্যার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, কারণ গাছ-পালার খাদ্য সংগ্রহ এবং উদ্ভিদ বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে প্রভাবক হিসাবে কাজ করছে।তেমনিভাবে, সন্তানের জন্ম বিষয় সহবাসের পাশাপাশি আরও অনেক বিষয়ের উপর নির্ভর করে। সুতরাং এই প্রভাবক বা নিয়ামকের নিয়মটি পৃথিবীর সমস্ত ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।*তাই, যে স্বত্তাকে ভয় করা হবে বা যার নিকট আশা করা হবে তার বেশ কয়েকটি বৈশিষ্ট্যের মধ্যে একটি হলো যে, সেই স্বত্তার উপর কেউ প্রভাব ফেলতে পারবে এবং সেই স্বত্তা সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করবেন।*আল্লাহ ব্যতীত এমন কোন স্বত্তা নেই যাকে কিছু প্রভাবিত করতে পারে না।*সুতরাং তিনি ব্যতীত কারো কাছে আশা বা ভয় করা উচিত নয়।
এটি একটি অকাট্য প্রমাণ যে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা ব্যতীত অন্য কারো আনুগত্য, আশা, ভয় সম্পূর্ণ মুল্যহীন।*যদি আমরা ধরে নিই যে, কেউ তার নিজের সব কিছুকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে; তবে আমাদের একথাও মেনে নিতে হবে যে, সে এই ক্ষমতাটি নিজের থেকে উদ্ভূত করেনি, বরং এটি অন্য কারও দ্বারা তাকে দেওয়া হয়েছিল।*সুতরাং, তার নিজের কোন শক্তি নেই, কারণ আল্লাহ ব্যতীত কোন ক্ষমতা বা শক্তি নেই। তাঁর হাতেই সমস্ত ক্ষমতা ও শক্তি রয়েছে।*সুতরাং, যে ক্ষমতা ও শক্তির জন্য মানুষকে ভয় করা হচ্ছে তা বাস্তবে আল্লাহর হাতে রয়েছে।*তাই আমাদের চিন্তা করা উচিত, যাদের কোন ক্ষমতা ও শক্তি নেই তাদের আমরা কীভাবে ভয় করতে পারি এবং কিভাবে তাদের নিকট আশা করতে পারি? *প্রকৃতপক্ষে, কাউকে ভয় করা এবং তার মধ্যে আশা করা সেই ব্যক্তির দ্বারা পরাভূত হওয়ার এবং তার কাছে করুণার পাত্রে পরিণত হওয়ার নামমাত্র। কারণ, আপনি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা ব্যতীত অন্য কাউকে যত বেশি ভয় করবেন, তত বেশি সেই ব্যক্তি আপনাকে পরাভূত করবে এবং সেই ব্যক্তির প্রতি আপনার আশা যত বেশি হবে সে ব্যক্তি তত বেশি আপনাকে করুণার পাত্র বানাবে।"
এই আয়াত সম্পর্কে সাইয়্যেদ কুতুব*'ফি'যিলালিল কুরআন'*এ বলেছেন:
"আসলে শয়তান তো চেষ্টা চালায় মুমিনেরা যেন তার মিত্রদের ভয় করে। শয়তান তাদের ওপর ভয়-ভীতির একটা আবরণ চাপিয়ে দেয়৷ শয়তানের এ চক্রান্ত সম্পর্কে মুমিনদের সতর্ক থাকতে হবে। শয়তানের বন্ধুদেরকে ভয় করলে চলবে না; বরং ভয় করতে হবে একমাত্র আল্লাহকে ৷ কেবল এক আল্লাহ তায়ালাই হচ্ছেন পরম পরাক্রমশালী ।
'এরাই হচ্ছে শয়তান এরা নিজেদের বন্ধুদের ব্যাপারে ভীতি প্রদর্শন করে। সুতরাং তোমরা তাদেরকে ভয় করবে না, বরং ভয় করবে আমাকে- যদি তোমরা মোমেন হয়ে থাকো ।'
শয়তান তার বন্ধুদের শক্তিকে বড় করে দেখায়, তাদের শক্তি-ক্ষমতাতে কৃত্রিম পোশাক পরিধান করায়, মনে এমন ভাবের সৃষ্টি করে যে, তারা বুঝি সব দন্ডমুন্ডের অধিকারী, শক্তিধর । ক্ষতি আর উপকারের সকল ক্ষমতা তাদের হাতেই। শয়তান এভাবে তার বন্ধুদের দ্বারা নিজের উদ্দেশ্য হাসিল করে। তাদের অনিষ্ট সাধন করতে থাকে। তাই মানুষ তাদের সামনে প্রতিবাদের আওয়ায তুলতে পারে না। শয়তানকে প্রতিরোধ করার কথা কেউ চিন্তাও করতে পারে না, পারে না শয়তানের বন্ধুদের বিপর্যয় আর অনিষ্ট অনাচার থেকে সাধারণ মানুষকে দূরে রাখতে।
শয়তান মিথ্যা ছড়ায়, অন্যায়কে বড় করে দেখায়। নিজেকে সে প্রবল পরাক্রমশালী আর প্রচন্ড প্রতাপশালী বলে জাহির করে। তার সামনে কোনো প্রতিরোধ টিকতে পারে না, দাড়াতে পারে না কেউ । প্রতিরোধকারীদের কেউ তাকে পরাভূত করতে পারে না। বিষয়টাকে এভাবে বিশাল করে পেশ করার ক্ষেত্রে তার কোনো জুড়ি নেই৷ ভয়-ভীতির আবরণে আর ধর-পাকড় করে শয়তানের মিত্রদের পৃথিবীতে এমনসব কান্ড করে, যা দেখে শয়তানের নিজেরই চক্ষু শীতল হয়ে যায়। তারা ন্যায়কে করে অন্যায় আর অন্যায়কে করে ন্যায় । সত্যের আওয়াযকে স্তব্ধ করে দেয়। তারা পৃথিবীতে নিজেদেরকে খোদা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে, তারা অন্যায়ের সহায়তা করে, ন্যায়কে প্রতিহত করে। কেউ তাদেরকে নেতৃত্বের আসন থেকে হটাতে পারে না। তারা যে অন্যায় অনাচারের প্রচলন ঘটায়, তা ঠেকাবার সাহসও কেউ করতে পারে না। যে সত্যকে তারা নিশ্চিহ্ন করে, তাকে স্পষ্ট করে তুলে ধরার কেউ থাকে না।
শয়তান সব সময়ই প্রতারক, প্রবঞ্চক, ধোকাবাজ । বন্ধুদের পেছনে সে আড়ালে লুকিয়ে থাকে। তারা শয়তানের প্ররোচনাকে পাত্তা দেয় না, শয়তান তাদের অন্তরে যে ভীতি ছড়ায় এখানে আল্লাহ তায়ালা তার চক্রান্তকে উম্মোচিত করেছেন, শয়তানের চক্রান্তকে উন্মোচিত করে আমাদের সম্মুখে উপস্থাপন করেছেন। আল্লাহ্* তায়ালা মুমিনদেরকে আসল ব্যাপারটি অবহিত করেন, তার চক্রান্ত আর প্রতারণার রহস্য সম্পর্কে আমাদেত অবগত করেছেন । যাতে তারা সে সম্পর্কে সতর্ক থাকতে পারে। তাই মুমিনরা শয়তান এবং তার শয়তানদের ভয় পায় না। মুমিনদের কাছে শয়তান সব সময়ই দুর্বল থাকে। মুমিনদের জন্যে তাকে ভয় পাওয়ার কিছুই নেই। কেননা তারা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার মুখাপেক্ষী, তারা আশ্রয় নেয় তাঁর শক্তির কাছে।
ভয় করার মতো একমাত্র শক্তি হচ্ছে সে শক্তি, যা উপকার ও ক্ষতি করার অধিকার ও ক্ষমতা আছে, আর সে শক্তি হচ্ছে একমাত্র আল্লাহর শক্তি । ইমানদাররা সে শক্তিকেই ভয় পায়। যখন তারা কেবল এক আল্লাহকে ভয় করে। তাদের সামনে বিশ্বের কোনো শক্তিই তখন টিকত পার না, দাড়াতে পারে না-শয়তান ও তার বন্ধুদের শক্তিও ৷
اِنَّمَا ذٰلِکُمُ الشَّیۡطٰنُ یُخَوِّفُ اَوۡلِیَآءَہٗ ۪ فَلَا تَخَافُوۡہُمۡ وَ خَافُوۡنِ اِنۡ کُنۡتُمۡ مُّؤۡمِنِیۡنَ ﴿۱۷۵﴾
সে তো শয়তান। সে তোমাদেরকে তার বন্ধুদের ভয় দেখায়; কাজেই যদি তোমরা মুমিন হও তবে তাদেরকে ভয় করো না, আমাকেই ভয় কর। (সুরা আলে ইমরান -১৭৫)
Comment