بسم الله الرحمن الرحيم
اللهم آتني بفضلك أفضل ما توتي عبادك الصالحين
اللهم آتني بفضلك أفضل ما توتي عبادك الصالحين
দ্বীন বিজয়ের হাতিয়ার
=============================
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন,=============================
يُرِيدُونَ أَنْ يُطْفِئُوا نُورَ اللَّهِ بِأَفْوَاهِهِمْ وَيَأْبَى اللَّهُ إِلَّا أَنْ يُتِمَّ نُورَهُ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُونَ (32) هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَى وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ}.التوبة: 32، 33 {وَقَاتِلُوهُمْ حَتَّى لَا تَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ الدِّينُ كُلُّهُ لِلَّهِ فَإِنِ انْتَهَوْا فَإِنَّ اللَّهَ بِمَا يَعْمَلُونَ بَصِيرٌ. [الأنفال: 39]
‘তারা তাদের মুখের ফুৎকারে আল্লাহর নূরকে নিভিয়ে দিতে চায়। কিন্তু আল্লাহ অবশ্যই তাঁর নূরের পূর্ণতা বিধান করবেন, যদিও কাফেররা তা অপ্রীতিকর মনে করে। তিনিই প্রেরণ করেছেন তাঁর রাসূলকে হেদায়েত ও সত্য দ্বীন সহকারে, যেন এ দ্বীনকে তিনি অপরাপর সকল দ্বীনের উপর বিজয়ী করেন, যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে।’–সুরা তাওবাহ: ৩২, ৩৩ ‘(হে মুসলিম উম্মাহ!) তোমরা কাফেরদের বিরুদ্ধে লড়াই করো, করতেই থাকো; যতক্ষণ না ফেতনার অবসান হয়ে যায় এবং দ্বীন সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর হয়ে যায়। অতঃপর তারা যদি নিবৃত্ত হয়, তবে আল্লাহ তো তাদের কার্যাবলী সম্যক দেখছেন।’–সুরা আনফাল: ৩৯আয়াত দুটিতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন দ্বীনকে বিজয়ী করা ও কুফরের ফেতনা নির্মূল করার স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং সমস্ত দ্বীনের উপর আল্লাহর দ্বীনকে বিজয় করা এবং কুফরের ফেতনাকে সম্পূর্ণরুপে নির্মূল করা আমাদের উপর ফরয। দ্বীনকে বিজয় করার এই ফরয দায়িত্ব পালনের নববী পন্থা হলো দাওয়াত ও জিহাদ। দাওয়াত ও জিহাদের মাধ্যমে দ্বীনকে বিজয়ী করার জন্য আল্লাহ রাব্বুল মুমিনদেরকে মৌলিকভাবে তিন ধরণের হাতিয়ার দান করেছেন। যবান, কলম ও তলোয়ার । সবগুলোই মানসুস আলাইহি, কুরআনে স্পষ্ট বিবরণ এসেছে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,
[الحديد: 25] {لَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلَنَا بِالْبَيِّنَاتِ وَأَنْزَلْنَا مَعَهُمُ الْكِتَابَ وَالْمِيزَانَ لِيَقُومَ النَّاسُ بِالْقِسْطِ وَأَنْزَلْنَا الْحَدِيدَ فِيهِ بَأْسٌ شَدِيدٌ وَمَنَافِعُ لِلنَّاسِ وَلِيَعْلَمَ اللَّهُ مَنْ يَنْصُرُهُ وَرُسُلَهُ بِالْغَيْبِ إِنَّ اللَّهَ قَوِيٌّ عَزِيزٌ}
১। আমি আমার রাসূলগণকে সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলীসহ পাঠিয়েছি এবং তাদের সঙ্গে নাযিল করেছি কিতাব ও তুলাদণ্ড, যাতে মানুষ ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে এবং আমি অবতীর্ণ করেছি লোহা, যার ভেতর রয়েছে প্রচণ্ড রণশক্তি এবং মানুষের বহুবিধ উপকার। এটা এই জন্য যে, আল্লাহ জানতে চান, কে তাকে না দেখে তাঁর (দীনের) ও তাঁর রাসূলগণের সাহায্য করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাশক্তিমান ও সর্বময় ক্ষমতার মালিক।– সূরা হাদিদ : ২৫ [الرحمن: 3، 4] {خَلَقَ الْإِنْسَانَ (3) عَلَّمَهُ الْبَيَانَ}
তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন, তিনি মানুষকে বয়ান ও ভাবপ্রকাশ শিখিয়েছেন।– সূরা আর-রাহমান:৪ [العلق: 2 - 5] { خَلَقَ الْإِنْسَانَ مِنْ عَلَقٍ (2) اقْرَأْ وَرَبُّكَ الْأَكْرَمُ (3) الَّذِي عَلَّمَ بِالْقَلَمِ (4) عَلَّمَ الْإِنْسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْ}
অতীতে এমন কোন যুগ সম্ভবত অতিবাহিত হয়নি, যেখানে এই তিন ধরণের হাতিয়ারই যুগপৎ কার্যকর ও প্রভাবশীল ছিল। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে এমন সময় প্রেরণ করেছেন যখন দ্বীনকে বিজয়ী ও সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য এই তিন ধরণের হাতিয়ারই সমানভাবে অনিবার্য। দাওয়াতের ময়দানে তো বটেই, সরাসরি জিহাদের জন্যও অপরিহার্য। ইসলাম ও কুফরের মাঝে চলমান যুদ্ধের গতি ও প্রকৃতি যুগে যুগে পরিবর্তনশীল। আজ মুসলিম উম্মাহ পশ্চিমা সভ্যতার বিরুদ্ধে, আমেরিকা ও সমগ্র কুফফার বিশ্বের মুকাবেলায় যে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছি তার রূপ ও গতিপ্রকৃতি অতীতের যুদ্ধগুলোর মতো নয়। অতীতের তীর তলোয়ারের যুদ্ধগুলোর একটা সীমা-পরিসীমা ছিল, নির্ধারিত ময়দান ও নির্দিষ্ট সময়ে বাঁধা ছিল। লাগাতার কয়েকদিন হয়তো যুদ্ধ স্থায়ী হতো, তারপর ময়দানেই নির্ধারিত হয়ে যেত; কে বিজয়ী আর কে পরাজিত। কিন্তু এখন যুদ্ধের রূপ ও গতিপ্রকৃতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। যুদ্ধ এখন শুধু ময়দানেই সীমাবদ্ধ নয়, শুধু তীর-তলোয়ারেই সীমিত নয়। পুরো পৃথিবী এখন মুজাহিদদের জন্য রণাঙ্গনে পরিণত হয়েছে, অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র থেকে নানা প্রযুক্তির ডিভাইস পর্যন্ত হয়ে উঠেছে আধুনিক যুদ্ধের অতিগুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র।অধিকন্তু যুদ্ধের এখন নির্দিষ্ট কোন রূপ নেই, সর্বরূপেই তা দেদীপ্যমান। সমগ্র কুফফার বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে ঐক্যজোট। সামরিক আগ্রাসনের সঙ্গে সঙ্গে এখন চলে মনোস্তাত্ত্বিক ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন। ওরিয়ান্টালিস্টদের নিখুঁত প্রোপাগাণ্ডায় খোদ মুসলিম উম্মাহর কাছেই দ্বীনের অবধারিত ফরয বিধান জিহাদ হয়ে উঠেছে ত্রাস ও সন্ত্রাসবাদ, আল্লাহর পথের মুজাহিদরা হয়ে গেছে জঙ্গি ও সন্ত্রাস। তাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য চলে প্রতিনিয়ত চলে নিদারুন তথ্যবিকৃতি এবং হলুদ মিডিয়ার নির্লজ্জ প্রোপাগাণ্ডা। ফলে এ সবকিছুর সফল মোকাবেলা না করে দ্বীনের মহিমান্বিত বিজয়ের পথে অগ্রসর হওয়া দুরূহ, অসম্ভব। তাই এ যুগের লড়াই শুধু তরবারির নয়, এ লড়াই যেমন তরবারির, বুলেট-বোমার, এ লড়াই তেমনি প্রজ্ঞা ও কুশলতার এবং দৃঢ় সংকল্প ও অবিচল মানসিকতার, এ লড়াই সাংস্কৃতিক আগ্রাসণ ও বুদ্ধিবৃত্তিক ক্রুসেডের বিরুদ্ধে এক সর্বময় লড়াই।
সুতরাং এ যুগের লড়াইয়ের হাতিয়ার শুধু তলোয়ার নয়; তীর-তলোয়ার যেমন, তেমনি ক্ষুরধার কলম ও শাণিত যবান এ লড়াইয়ের হাতিয়ার। জিহাদ ফরযে আইন মানে সবাইকে এখন তীর-তলোয়ার ও বুলেট-বিমান নিয়ে ময়দান ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে তা নয়। জিহাদ ফরযে আইন হওয়ার অর্থ হলো যার যতটুকু সক্ষমতা আছে তা নিয়ে দ্বীনের বিজয়ের জিহাদে এগিয়ে আসা। যতক্ষণ না আমি আমার সামর্থ ও সক্ষমতার সবটুকু দিচ্ছি ততক্ষণ আমি ফরযিয়্যাতের যিম্মা থেকে মুক্ত হবো না। ময়দানে যাওয়ার সক্ষমতা না থাকলে অর্থ দিয়ে মুজাহিদদের নুসরত করতে হবে। অর্থের সক্ষমতা না থাকলে যবান ও কলম নিয়ে জিহাদ ও মুজাহিদীনের সাহায্য ও সমর্থনে, আরোপিত সংশয়-শুবহাত ও আপত্তি নিরসনে এগিয়ে আসতে হবে। যার যবান শাণিত, বয়ান-বক্তৃতায় পারদর্শী; তিনি এ ময়দানে এগিয়ে আসবেন। যার কলম ক্ষুরধার, লেখনি ও কলম চালনায় যার সক্ষমতা বেশি তিনি এ ময়দানের শাহসওয়ার হবেন।
যে স্তরের সক্ষমতা যার যতটুকু রয়েছে সে স্তরের কাজগুলো সক্ষমতা অনুপাতে করাই হলো তার ফরযিয়াত। সক্ষমতা থাকার পরও যদি এগিয়ে না আসি, উদ্যোগী না হই আল্লাহ না করুন- আমি আল্লাহর পাকড়াও থেকে পরিত্রান পাবো না। কোন সক্ষমতা না থাকলে সক্ষমতা অর্জন করা ফরয। বোলেট-বোমার সক্ষমতা অর্জনের সুযোগ না থাকলে যবান ও কলম দিয়ে দ্বীনের পক্ষে প্রতিরোধ গড়ার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। কলমে ক্ষুরধার এবং যবানকে শাণিত করতে হবে। এটাই তখন তার দায়িত্ব। কিন্তু স্থবিরতা, নির্লিপ্ততা এবং গাফলত ও উদাসিনতার কোন সুযোগ নেই। তবে যারা কোন ইমারতের অধিনে রয়েছেন তাদের জন্য অবশ্যই ইমারাতের আদেশের অনুগত থাকাই কল্যাণকর। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে প্রতিনিয়ত সামর্থ ও সক্ষমতার স্তর বৃদ্ধি করে সামর্থ ও সক্ষমতার সর্বাচ্চটুকু দিয়ে দ্বীন বিজয়ের দাওয়াত ও জিহাদের পথে এগিয়ে আসার তাওফিক দান করুন এবং গাফলত ও ওজরখাহির ওবাল থেকে হেফাযত করুন। আমীন।
Comment