যারা পিছন পড়ে থাকে তাদের জন্য একটি উপদেশ
তোমরা যারা জিহাদকে অবহেলা করেছ এবং সফলতার পথ হতে দূরে সরে থেকেছঃ তোমরা নিজেদেরকে আল্লাহর করুণা রহমত হতে বঞ্চিত হবার অবস্থানে নিয়ে এসেছ এবং নিজেদেরকে সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কার হতে বঞ্চিত করেছ।
কিসে তোমাদের পেছনে ফেলে রাখল? কেন তোমরা মুজাহিদীনদের সারিতে যোগদান করনি? কেন তোমরা তোমাদের জীবন/অযথা ও সম্পদ বিসর্জনে ইতস্তত করেছ?
নিম্নলিখিত কারণগুলোর একটি নিশ্চয় হবেঃ দীর্ঘ জীবন কামনা; পরিবার, সম্পত্তি, বন্ধুবান্ধবের (সাথে সম্বন্ধ) আসক্তি; জিহাদের আগে আরও কিছু সৎকর্ম করবার বাসনা; সুন্দরী স্ত্রীর প্রতি ভালবাসা; ক্ষমতা/পদমর্যাদা; অথবা আরামদায়ক জীবনোপকরণের প্রতি আসক্তি। এছাড়া আর কছুই তোমাদের ধরে রাখতে পারেনা; উপরে বর্ণিত কারণগুলোর কোন একটিই তোমাদেরকে আল্লাহর থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে। তোমরা কি শুনতে পাওনা তোমাদের প্রতি আল্লাহর ডাক, “হে মুমিনগণ! তোমাদের কি হল যে, যখন তোমাদেরকে বলা হয় – বের হও আল্লাহর পথে, তখন তোমরা মাটিতে লেগে থাক (অলস ভাবে বসে থাক) তাহলে কি তোমরা পরকালের বিনিময়ে পার্থিব জীবনের উপর পরিতুষ্ট হয়ে গেলে? বস্তুতঃ পার্থিব জীবনের ভোগ বিলাস তো আখিরাতের তুলনায় কিছুই নয় অতি সামান্য।” (সূরা আত তাওবাহ ৯:৩৮)
মনোযোগ দিয়ে শোন, যা কিছু তোমাদের জিহাদে যাওয়া হতে বিরত রাখছে তার প্রতি কি জবাব আমি দিই। তাহলে তোমরা উপলব্ধি করতে পারবে যে তোমরা (ভাল থেকে) বঞ্চিত এবং মনে রাখতে পারবে যে তোমরা নিজেরা আর শয়তান তোমাদের জিহাদে যাওয়া থেকে বিরত রয়েছে।
দীর্ঘ জীবন কামনা
আল্লাহর নামে বলছি, নির্ভীকতা আয়ু কমিয়ে দেয় না; আর কাপুরুষতা একে বৃদ্ধি করনা। আল্লাহ বলেন, “প্রত্যেক জাতির জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় আছে, সুতরাং যখন সেই নির্দিষ্ট সময় উপস্থিত হবে, আল্লাহ তখন কাউকেই অবকাশ দিবেন না তোমরা যা কর আল্লাহ তা সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত” (সূরা মুনাফিকুন ৬৩:১১)
এবং তিনি আরও বলেন, “জীব মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণকারী; অতঃপর তোমরা আমারই নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে।” (সূরা আনকাবুত ২৯:৫৭)
তোমরা যারা নিজেদের সাথে প্রতারণা করেছ, মনে রেখ মৃত্যুকালে তীব্র বেদনা ও যন্ত্রণা রয়েছে আর কিয়ামতের পর বিচার দিবসে রয়েছে প্রচন্ড ভয়। তোমাদের মনে পড়ে কি, যে শহীদ এই সমস্ত কিছু থেকে মুক্তি প্রাপ্ত হয়?
সে মৃত্যু – যন্ত্রণার কিছুই অনুভব করে না – সামান্য কাঁটা ফোটার মত ব্যথা ছাড়া। প্রিয় ভাই আমার, তবে কেন এমন সুযোগ হেলায় হারানো? আর মৃত্যুর পর কবরের আযাব থেকে তুমি মুক্তিলাভ করবে, কবরে ফেরেশতাদের কোন প্রশ্ন উত্তরের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে না, এবং বিচার – দিবসে যখন সবাই থাকবে ভীত সন্ত্রস্ত তখন তুমি থাকবে শান্ত স্থির। মৃত্যুর পর তোমার আত্মা একটি পাখির দেহে ঢুকিয়ে দেয়া হবে যা জান্নাতে উড়ে বেড়াবে। সাধারণ মৃত্যু এবং শহীদ হবার মধ্যকার পার্থক্যটা বুঝতে পারছ তো?
পরিবারের সাথে সম্পৃক্ততা
যা আপনাকে জিহাদে যাওয়া থেকে বিরত রাখছে, তা যদি হয় পরিবার পরিজন, সহায় সম্পত্তি, বন্ধু বান্ধব, তবে দেখুন আল্লাহ কী বলেন, “তোমাদের ধন সম্পদ ও সন্তান – সন্ততি এমন কিছু হয় যা তোমাদেরকে আমার নিকটবর্তী করে দিবে যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তারাই তাদের কর্মের জন্য পাবে বহুগুণ পুরস্কার আর তারা প্রসাদে নিরাপদ থাকবে।” (সূরা সাবা, ৩৪:৩৭)
আরও বলেন তোমরা জেনে রেখ যে, “পার্থিব জীবন তো ক্রীড়া কৌতুক, জাঁকজমক, পারস্পরিক অহংকার প্রকাশ, ধন – সম্পদ ও সন্তান – সন্ততিতে প্রাচুর্য লাভের প্রতিযোগীতা ব্যতীত আর কিছুই নয়; ওর উপমা বৃষ্টি, যাদ্দারা উৎপন্ন শস্য – সম্ভার কৃষকদের চমৎকৃত করে; অতঃপর ওটা শুকিয়ে যায়, ফলে তুমি ওটা পীতবর্ণ দেখতে পাও অবশেষে ওটা খড়কুটায় পরিণত হয়। পরকালে রয়েছে কঠিন শাসি— এবং আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টি পার্থিব ছলনাময় ভোগ ব্যতীত কিছুই নয়।” (সূরা হাদীদ ৫৭:২০)
রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন “জান্নাতে চাবুকের নিচে বা পায়ের নিচের জমিটুকুও এই পৃথিবী এবং এর ভেতর যা কিছু আছে তার সব থেকে উত্তম।” (বুখারী)
সুতরাং জান্নাতের বিশাল রাজ্য এই পার্থিব পরিবারের বিনিময়ে ছেড়ে দেয়া কি বুদ্ধিমানের কাজ হবে, যারা অচিরেই মৃতদের মাঝে শামিল হবে? হতে পারে এই পরিবারই আপনার প্রতি বিদ্বেষ, দূর্ব্যবহার আর ঈর্ষা পোষণ, করে। যদি আপনার টাকা – পয়সা থাকে তবে তারা আপনাকে ভালবাসে, আর যদি আপনি দেউলিয়া হন তবে তারা আপনাকে ত্যাগ করে। একদিন তারা আপনার সাথে, অন্যদিন আপনার বিরুদ্ধে। অবশেষে বিচার দিবসে, তারা আপনাকে আর ঘাঁটবে না এবং এক পয়সা পরিমাণ ছাড়ও তারা আপনাকে দেবে না/এমনকি পরস্পরের জন্যও তারা আপনাকেই দায়ী করবে। তারা প্রত্যেকেই সেদিন নিজেকে উদ্ধার করতে চাবে, এমনকি যদি এর বদলে আপনাকে জাহান্নামের আগুনে জলতে হয়।
সম্পদের প্রতি ভালবাসা
যদি এটাই আপনাকে জিহাদ হতে বিমুখ রেখে থাকে তাহলে বলতে হয়, এ কী করে সম্ভব যখন আপনি জানেন যে পরীক্ষামূলক এই সম্পদ আপনাকে একসময় হারাতে হবে? এবং এই সম্পদের জন্যই বিচার দিবস আপনাকে জিজ্ঞাসা করা হবে কীভাবে এই সম্পদ গড়ে তুলেছেন? আর কীভাবে তা খরচ করেছেন? এ ২টি প্রশ্ন আপনাকে এমন এক দিনে জিজ্ঞাসা করা হবে যেদিন একটি বাচ্চাও চুল পেঁকে বুড়ো হয়ে যাবে। বড়ই ভয়ংকর সে দিন।
আল্লাহর রাসূল (সা) বলেছেন, “দরিদ্র মুসলিমরা ধনী মুসলিমদের অর্ধদিন পূবেই জান্নাতে প্রবেশ করবেঃ (যা হবে) ৫০০ বছর (এর সমান)!”
আল্লাহ বলেন, “তোমাদের সম্পদ ও সন্তান সন্ততি তো তোমাদের জন্য পরীক্ষা; আল্লাহরই নিকটে রয়েছে মহা পুরষ্কার।”(সূরা তাগাবুন ৬৪:১৫)
এরপরও কীভাবে আপনার সম্পদ আপনাকে জিহাদ হতে বিরত রাখে?
সন্তান সন্ততির প্রতি ভালবাসা এবং তাদের জন্য উদ্বিগ্ন হওয়া
এর কারণ কি এই যে আপনি তাদের জন্য উদ্বিগ্ন? কিন্তু আপনার চেয়ে আল্লাহই তাদের জন্য অনেক বেশী চিন্তাশীল। আল্লাহ কি তাদের ব্যবস্থা করে দেননি যখন তারা অন্ধকারাচ্ছন্ন মাতৃগর্ভে ছিল!
এমন এক সন্তান কি করে আপনাকে জিহাদ হতে বিরত রাখে যখন ছোটকালেও তাকে নিয়ে আপনি চিন্তিত ছিলেন আর বড় হবার পরও। তারা সুস্থ হোক বা অসুস্থ আপনি তাদের নিয়েই চিন্তা ভাবনা করেন আপনি তাদের অবজ্ঞা করলে তারা বিদ্রোহ ও বিরোধিতা করে। তাদেরকে উপদেশ দিলে তারা আপনাকে ঘৃণা করে। আপনার এত ভালবাসার পরও, যখন আপনি বৃদ্ধ বয়সে উপনীত হন, তখন তারা আপনাকে পরিত্যাগ করে চলে যায়! এরপরও আপনি তাদের আশীর্বাদ হিসেবে দেখেন!
আপনার মন থেকে তাদের বিতাড়িত করুন বের করে দিন! তাদের যিনি সৃষ্টিকর্তা তার হাতে সপে দিন ওদের। আর আল্লাহর উপর ভরসা করুন তাদের সুব্যবস্থার জন্য যেমনটি নিজের জন্যও তাঁরই উপর ভরসা করেন। তাদের ব্যবস্থার ব্যাপারে যদি আপনি আল্লাহর উপর ভরসা করতে না পারেন তবে এটা কী করে স্বীকার করেন যে আল্লাহই এই আসমান জমিনের সব কিছুর নিয়ন্ত্রক?
আল্লাহর নামে বলছি, ওদের বা আপনার উপর যে মঙ্গল বা অমঙ্গল আপতিত হয় তার উপর আপনার কোনই হাত নেই। তাদের বা আপনার নিজের জীবনের উপর আপনার কোনই নিয়ন্ত্রণ নেই। আপনার আয়ুর সাথে ১টি দিন যোগ করার ক্ষমতাও আপনার নেই। একদিনের মধ্যেই আপনি মৃত্যুবরণ করবেন এবং সন্তানদের ইয়াতীম হিসেবে রেখে যেতে হবে। তখন আপনি আফসোস করবেন হায় আমার এতিমরা; আমি যদি শহীদদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারতাম! জবাব দেয়া হবেঃ এখন অনেক দেরী হয়ে গেছে। আল্লাহ বলেন।
“হে মানবজাতি! তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর এবং ভয় কর সেই দিনকে যখন পিতা সন্তানের কোন উপকারে আসবে না এবং সন্তানও কোন উপকারে আসবে না তার পিতার! আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য সুতরাং পার্থিব জীবন যেন তোমাদেরকে কিছুতেই প্রতারিত না করে এবং সেই প্রবঞ্চক (শয়তান) যেন তোমাদেরকে কিছুতেই আল্লাহ সম্পর্কে প্রবঞ্চিত না করে।” (সূরা লুকমান ৩১:৩৩)
এখন, আপনার সন্তান যদি সফলকামদের (জান্নাতি) অন্তর্ভুক্ত হয় তবে আপনাদের জান্নাতে পুনর্মিলিত করা হবে। আর যদি সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয় তবে তার জন্য অপেক্ষা কেন? এখন থেকেই আলাদা হয়ে যান! যদি সত্যই আপনি আপনার সন্তানের জন্য উদ্বিগ্ন হন তবে শহীদ হন। আপনি পরিবারের ৭০জন সদস্যের জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে আর কীসের জন্য অপেক্ষা?
আপনার বন্ধু বান্ধব
যদি আপনি আপনার বন্ধু বান্ধব পরিচিতদের ফেলে যেতে অপারগ হন তবে বিচার দিনের কথা চিন্তা করুন। সে দিন বন্ধু শক্রতে পরিণত হবে কেবল সৎকর্মশীলগণ ব্যতীত। অতএব আপনার বন্ধুরা যদি সৎকর্মশীল না হয় তবে তাদের সাথে আর থাকতে চেয়েন না কেননা কাল অবশ্যই তারা আপনার বিরুদ্ধে যাবে। তবে তারা যদি সৎকর্মশীল হয়ে থাকে তবে আল্লাহ আপনাদের এর চেয়ে ভাল জায়গায় পুনর্মিলিত করবেন। আল্লাহ বলেনঃ
“আমি তাদের অন্তর হতে ঈর্ষা দূর করব তারা ভাতৃভাবে পরস্পর মুখোমুখি হয়ে অবস্থান করবে।” (সূরা হিজর ১৫:৪৭)
ক্ষমতা ও মর্যাদা
আপনি হয়ত মুজাহিদীনদের সারিতে যোগ দেয়া হতে বিরত রয়েছেন কারণ আপনি যে উচ্চপদ, ক্ষমতা ও মর্যাদা হাসিল করেছেন এই দুনিয়ার তা হারাতে চান না। আপনি এখন যে পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন এর আগে আর কতজন এই পদে ছিল। এ পদ যদি তাদের ছেড়ে যেতে পারে তবে নিঃসন্দেহে একদিন আপনাকেও ছেড়ে যেতে হবে। আপনার ক্ষমতা সে তো অস্থায়ী আর আপনার প্রতিপত্তি মর্যাদা এসবও মানুষ শীঘ্রই ভুলে যাবে। আপনার পদমর্যাদা, ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি আপনাকে জান্নাতের পথ হতে দূরে রাখছে। জান্নাতের সর্বনিম্ন ব্যক্তিও এই পৃথিবীর দশগুণ এলাকা এবং এর অন্তর্ভুক্ত সবকিছুর অধিকারী হবে। এতো কেবল জান্নাতের সর্বনিম্ন ব্যক্তির মর্যাদা ও ক্ষমতা যা এ পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাবান রাজার চেয়েও বেশি।
এই পৃথিবীর কিছুই দূষণমুক্ত বা বিশুদ্ধ নয়। আপনি যে সামাজিক মর্যাদার অধিকারী হয়েছেন, এটার বেশ বড় একটি অংশ জুড়ে রয়েছে হতাশাব্যঞ্জক অনেক কিছু। ক্ষমতা ও পদমর্যাদার জন্য আপনাকে অনেক লড়াই করতে হবে। এতে অনেক শত্রুর জন্ম হবে আর হারাতে হবে বন্ধুদের। পথিমধ্যে অনেক বেদনা, অনেক ব্যর্থতা সহ্য করতে হবে। আর জান্নাত এ সমস্ত কিছু থেকে মুক্ত। আল্লাহ বলেন, “স্থায়ী জান্নাত, তাতে তারা প্রবেশ করবে এবং তাদের পিতা – মাতা পতি পত্মী ও সন্তান সন্ততিদের মধ্যে যারা সৎকর্ম করেছে তারাও এবং ফেরেশতা তাদের আছে হাযির হবে প্রত্যেক দরজা দিয়ে (২৩) বলবে, তোমরা ধৈর্যধারণ করেছ বলে তোমাদের প্রতি শান্তি। কতই না ভাল এই পরিণাম! (২৪)” (সূরা রাদঃ ১৩)
আরামদায়ক জীবনযাপনের প্রতি আসক্তি
হতে পারে আপনার বিশাল বাসভবনের শান্তি, বাগানের ছায়া, শয্যার আরাম, আপনার চতুর্দিকের সমস্ত আমোদ প্রমোদ, যা জীবনকে করেছে আরামদায়ক ও মনোরম। কিন্তু মনে রাখবেন, এগুলোর কোনটিই চিরস্থায়ী নয়। আপনার এই বিলাসবহুল বাড়ি ইট পাথর, ও চুনসুরকি দ্বারা তৈরি বাড়ি ছাড়া আর কিছুই নয়। এটা যদি পরিষ্কার করা না হয় তাহলে এটা নষ্ট হয়ে যাবে, আর যদি ঠিকমত রক্ষণাবেক্ষণ না করা হয় তবে এটার পতন ঘটবে। ঘটনাক্রমে একদিন এটাই ধুলাবালিতে পরিণত হবে যা থেকে এটা তৈরি করা হয়েছিল। আপনি কি এর চেয়ে সোনা ও রূপার ইটের তৈরি প্রাসাদে থাকতে বেশি পছন্দ করবেন না? এমন প্রাসাদ যা চিরস্থায়ী এবং যার কোন রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন নেই। এর আসবাবপত্র পছন্দনীয় এবং সুবিন্যস্ত করে সাজিয়েছে ফেরেশতারা। আর এতে আপনাকে সার্বোৎকৃষ্ট খাবার পরিবেশন করবে এমন দাস – দাসীরা, যাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, “তাদেরকে পরিবেশন করবে কিশোরগণ, তাদেরকে দেখে মনে হবে তারা যেন বিক্ষিপ্ত মুক্তা।”
জান্নাত সবকিছুই পরিচ্ছন্ন, সবকিছুই পবিত্র। সেখানে কোন প্রকৃতির ডাক বা ঘাম নেই। আমাদের দেহ ভিন্ন এক রূপ নিয়ে আসবে। জীবন সেখানে অসীম। সেখানে সময়ের কোন চাপ নেই। জান্নাতিরা যখন তখন যা ইচ্ছা যতক্ষণ খুশি ততক্ষণই করতে পারবে। তারা সিংহাসনে হেলান দিয়ে স্ত্রীর সাথে ৪০ বছর কথা বলতে পারবে। আপনার এবং এত আমোদপ্রমোদের মাঝে শহীদ হওয়া ছাড়া আর কিছুই কোন বাধা নেই। এই জীবনপদ্ধতির সাথে দুনিয়ার জীবনপদ্ধতির তুলনা করে দেখুন।
অধিক সৎকর্ম করার জন্য দীর্ঘায়ু কামনা
আপনি হয়ত জিহাদে অংশগ্রহণ করতে চাচ্ছেন না, কারণ আপনি এর জন্য প্রস্তুত নন এবং আপনি আরও নেককাজ করতে চান। অর্থাৎ আপনি উত্তম নিয়্যতে জিহাদ থেকে দুরে আছেন। কিন্তু শুনুন, আপনি প্রতারিত বা বঞ্চিত হচ্ছেন। আল্লাহ বলেন,
“হে মানুষ! আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য; সুতরাং পার্থিব জীবন যেন তোমাদেরকে কিছুতেই প্রতারিত না করে এবং সেই প্রবঞ্চনা যেন কিছুতেই আল্লাহর সম্পর্কে প্রবঞ্চিত না করে তোমাদেরকে। শয়তান তোমাদের শক্র; সুতরাং তাকে শক্র হিসেবে গ্রহণ কর; সে তো তার দলবলকে আহবান করে শুধু এজন্য যে, তারা যেন জাহান্নামের সাথী হয়।” (সূরা ফাতির ৫ – ৬)
এটা শয়তানের ফাঁদ ছাড়া আর কিছুই নয়। এটা আল্লাহর আউলিয়াদের (বন্ধু) পথ নয়। সাহাবা এবং তাবিঈনরা কি সৎকর্মের প্রতি আপনার চেয়ে বেশি উৎসাহী ছিলেন না। আপনি কি শুনেন না আল্লাহ আপনাকে বলছেন “বের হও হালকা অথবা ভারী (স্বল্প সরঞ্জামের সাথেই হোক, অথবা প্রচুর সরঞ্জামের সাথেই হোক) এবং আল্লাহর পথে নিজেদের ধন – সম্পদ ও প্রাণ দ্বারা যুদ্ধ কর এটাই তোমাদের জন্য অতি উত্তম, যদি তোমরা জানতে।” (সূরা তওবা ৯:৪১)
আপনি কি দেখছেন না যে, নিজেকে শুধরানোর বা আরও ভাল করবার সর্বোত্তম পন্থা হচ্ছে জিহাদের মাধ্যমে আল্লাহ বলেন, “আল্লাহ ধন – প্রাণ দ্বারা জিহাদে অংশগ্রহনকারীদেরকে গৃহে উপবিষ্টদের উপর পদমর্যাদায় গৌরবান্বিত করেছেন … উপবিষ্টদের উপর মুজাহিদদের মহান প্রতিদানে গৌরবান্বিত করেছেন।” (সূরা আন – নিসাঃ৯৫)
প্রকৃত অর্থে জিহাদের সমতুল্য কিছুই নেই। রাসূল (সা) বলেছেন “যুদ্ধের ময়দানে সৈন্যদের সারিতে দাড়িয়ে থাকা, পরিবারের মধ্যে ৭০ বছর আল্লাহর ইবাদত করার চেয়ে উত্তম”। (তিরমিজী আল-বায়হাকী আল-হাকীম)
স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা
যদি আপনি সুন্দরী স্ত্রীর কারণে জিহাদে যেতে অপারগ হন, আর আপনার তাকে যদি পৃথিবীর সর্বোৎকৃষ্ট নারী ও সবচেয়ে সুন্দরী বলে মনে হয় তবে শুনুন, সেও কি একসময় সামান্য একটা মাংস পিণ্ড ছিল? এবং একসময় সেও কি পঁচে নিঃশেষ হয়ে যাবে না? মাসিকের কারণে আপনাকে তার থেকে দূরে থাকতে হয়েছে জীবনের অনেকটা সময়। সে বাধ্য হবার থেকে অবাধ্যই বেশি ছিল। সে যদি নিজেকে পরিষ্কার না রাখত তবে তার থেকে দুর্গন্ধ আসত। যদি সে চুল না আঁচড়াত তবে তা অবিন্যস্ত বা এলোমেলো হয়ে থাকত। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে যে আরও কুৎসিত হতে থাকে। তাকে খুশী করা সহজ নয়, তার ভালবাসা রক্ষার্থে আপনাকে অনেক খরচ করতে হয়। আপনি সবসময় তাকে খুশী করতে চান বা প্রভাবান্বিত করতে চান কিন্তু কিছুই যেন যথেষ্ট হয় না তার জন্য। সে আপনাকে শুধু তখনই ভালবাসে যখন সে যা চায় আপনি তাই দেন আর যদি না দেন তবে সে আপনাকে ছেড়ে অন্য কাউকে খুঁজে নিবে যেন, ‘যদি আমাকে চাও তবে খরচ কর আমার জন্য’ ! সাধারণ ভাবে একসাথে অবিরাম/চিরস্থায়ী দুঃখ যন্ত্রণা ছাড়া তাকে উপভোগ করা সম্ভব নয়।
এটা খুবই আশ্চর্যজনক যে এই নারী আপনাকে জান্নাতের নারী থেকে দূরে রাখে। আল্লাহর নামে বলছি, শহীদের রক্ত জান্নাতে তার স্ত্রীর সাথে দেখা হবার আগে শুকায় না। সে হবে সুন্দর যার থাকবে বড় বড় দ্যুতিময় চোখ। একজন কুমারী যেন একটি পান্না। সে আর কাউকে ভালবাসেনি, বাসবেও না কেবল আপনাকে ছাড়া। সে তৈরি হয়েছে কেবল আপনারই জন্য। তার একটি মাত্র আঙুলও চাঁদের ঔজ্জ্বল্যকে হার মানবে। পৃথিবীতে যদি তার হাতের কব্জিটুকুও প্রকাশ পায় তার সমস্ত মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়বে। সে যদি আসমান ও জমিনের মধ্যে অবস্থান করে তবে মধ্যবর্তী সম্পূর্ণ এলাকা তার সুগন্ধে মৌ মৌ করবে। আর যদি সে সমুদ্রের পানিতে থুথু ফেলে, তবে এর নোনা পানিও বিশুদ্ধ (খাবার) পানিতে পরিণত হবে।
তার দিকে যতই তাকাবেন, সে ততই সুন্দর হতে থাকবে। তার সাথে যত সময় অতিবাহিত করবেন আপনি ততই তাকে ভালবাসবেন। এরকম একজন নারী সম্পর্কে জেনে শুনেও তার সাথে মিলিত হবার চেষ্টা না করা কি বিবেক বুদ্ধির পরিচয় দেয়? আর যদি আপনি জানেন যে, আপনি ১ জন নয় বরং ৭০ টি হুরের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবেন?
মনের মধ্যে রাখুন যে, স্ত্রীকে ছেড়ে যাওয়াটা অবশ্যম্ভাবী। আপনি মারা যাবেন এবং সে ও আপনাদের ইনশাআল্লাহ জান্নাতে পুনর্মিলিত হবে এবং দেখবেন যে সে, জান্নতের হুরদের চেয়ে বেশি সুন্দরী। আপনি তাকে পাবেন এ জীবনের সমস্ত অসন্তোষ মূলক জিনিস হতে মুক্ত।
অনেক বেশি দেরী হবার আগেই জেগে উঠুন। এই দুনিয়ার কারাগার হতে নিজেকে মুক্ত করুন এবং শহীদের মর্যাদা লাভের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন এত অসাধারণ পুরষ্কার আর আপনার মাঝে কোন কিছুকে বাঁধা হয়ে দাড়াতে দিবেন না।
--gazwah.net থেকে সংগৃহীত
তোমরা যারা জিহাদকে অবহেলা করেছ এবং সফলতার পথ হতে দূরে সরে থেকেছঃ তোমরা নিজেদেরকে আল্লাহর করুণা রহমত হতে বঞ্চিত হবার অবস্থানে নিয়ে এসেছ এবং নিজেদেরকে সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কার হতে বঞ্চিত করেছ।
কিসে তোমাদের পেছনে ফেলে রাখল? কেন তোমরা মুজাহিদীনদের সারিতে যোগদান করনি? কেন তোমরা তোমাদের জীবন/অযথা ও সম্পদ বিসর্জনে ইতস্তত করেছ?
নিম্নলিখিত কারণগুলোর একটি নিশ্চয় হবেঃ দীর্ঘ জীবন কামনা; পরিবার, সম্পত্তি, বন্ধুবান্ধবের (সাথে সম্বন্ধ) আসক্তি; জিহাদের আগে আরও কিছু সৎকর্ম করবার বাসনা; সুন্দরী স্ত্রীর প্রতি ভালবাসা; ক্ষমতা/পদমর্যাদা; অথবা আরামদায়ক জীবনোপকরণের প্রতি আসক্তি। এছাড়া আর কছুই তোমাদের ধরে রাখতে পারেনা; উপরে বর্ণিত কারণগুলোর কোন একটিই তোমাদেরকে আল্লাহর থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে। তোমরা কি শুনতে পাওনা তোমাদের প্রতি আল্লাহর ডাক, “হে মুমিনগণ! তোমাদের কি হল যে, যখন তোমাদেরকে বলা হয় – বের হও আল্লাহর পথে, তখন তোমরা মাটিতে লেগে থাক (অলস ভাবে বসে থাক) তাহলে কি তোমরা পরকালের বিনিময়ে পার্থিব জীবনের উপর পরিতুষ্ট হয়ে গেলে? বস্তুতঃ পার্থিব জীবনের ভোগ বিলাস তো আখিরাতের তুলনায় কিছুই নয় অতি সামান্য।” (সূরা আত তাওবাহ ৯:৩৮)
মনোযোগ দিয়ে শোন, যা কিছু তোমাদের জিহাদে যাওয়া হতে বিরত রাখছে তার প্রতি কি জবাব আমি দিই। তাহলে তোমরা উপলব্ধি করতে পারবে যে তোমরা (ভাল থেকে) বঞ্চিত এবং মনে রাখতে পারবে যে তোমরা নিজেরা আর শয়তান তোমাদের জিহাদে যাওয়া থেকে বিরত রয়েছে।
দীর্ঘ জীবন কামনা
আল্লাহর নামে বলছি, নির্ভীকতা আয়ু কমিয়ে দেয় না; আর কাপুরুষতা একে বৃদ্ধি করনা। আল্লাহ বলেন, “প্রত্যেক জাতির জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় আছে, সুতরাং যখন সেই নির্দিষ্ট সময় উপস্থিত হবে, আল্লাহ তখন কাউকেই অবকাশ দিবেন না তোমরা যা কর আল্লাহ তা সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত” (সূরা মুনাফিকুন ৬৩:১১)
এবং তিনি আরও বলেন, “জীব মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণকারী; অতঃপর তোমরা আমারই নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে।” (সূরা আনকাবুত ২৯:৫৭)
তোমরা যারা নিজেদের সাথে প্রতারণা করেছ, মনে রেখ মৃত্যুকালে তীব্র বেদনা ও যন্ত্রণা রয়েছে আর কিয়ামতের পর বিচার দিবসে রয়েছে প্রচন্ড ভয়। তোমাদের মনে পড়ে কি, যে শহীদ এই সমস্ত কিছু থেকে মুক্তি প্রাপ্ত হয়?
সে মৃত্যু – যন্ত্রণার কিছুই অনুভব করে না – সামান্য কাঁটা ফোটার মত ব্যথা ছাড়া। প্রিয় ভাই আমার, তবে কেন এমন সুযোগ হেলায় হারানো? আর মৃত্যুর পর কবরের আযাব থেকে তুমি মুক্তিলাভ করবে, কবরে ফেরেশতাদের কোন প্রশ্ন উত্তরের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে না, এবং বিচার – দিবসে যখন সবাই থাকবে ভীত সন্ত্রস্ত তখন তুমি থাকবে শান্ত স্থির। মৃত্যুর পর তোমার আত্মা একটি পাখির দেহে ঢুকিয়ে দেয়া হবে যা জান্নাতে উড়ে বেড়াবে। সাধারণ মৃত্যু এবং শহীদ হবার মধ্যকার পার্থক্যটা বুঝতে পারছ তো?
পরিবারের সাথে সম্পৃক্ততা
যা আপনাকে জিহাদে যাওয়া থেকে বিরত রাখছে, তা যদি হয় পরিবার পরিজন, সহায় সম্পত্তি, বন্ধু বান্ধব, তবে দেখুন আল্লাহ কী বলেন, “তোমাদের ধন সম্পদ ও সন্তান – সন্ততি এমন কিছু হয় যা তোমাদেরকে আমার নিকটবর্তী করে দিবে যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তারাই তাদের কর্মের জন্য পাবে বহুগুণ পুরস্কার আর তারা প্রসাদে নিরাপদ থাকবে।” (সূরা সাবা, ৩৪:৩৭)
আরও বলেন তোমরা জেনে রেখ যে, “পার্থিব জীবন তো ক্রীড়া কৌতুক, জাঁকজমক, পারস্পরিক অহংকার প্রকাশ, ধন – সম্পদ ও সন্তান – সন্ততিতে প্রাচুর্য লাভের প্রতিযোগীতা ব্যতীত আর কিছুই নয়; ওর উপমা বৃষ্টি, যাদ্দারা উৎপন্ন শস্য – সম্ভার কৃষকদের চমৎকৃত করে; অতঃপর ওটা শুকিয়ে যায়, ফলে তুমি ওটা পীতবর্ণ দেখতে পাও অবশেষে ওটা খড়কুটায় পরিণত হয়। পরকালে রয়েছে কঠিন শাসি— এবং আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টি পার্থিব ছলনাময় ভোগ ব্যতীত কিছুই নয়।” (সূরা হাদীদ ৫৭:২০)
রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন “জান্নাতে চাবুকের নিচে বা পায়ের নিচের জমিটুকুও এই পৃথিবী এবং এর ভেতর যা কিছু আছে তার সব থেকে উত্তম।” (বুখারী)
সুতরাং জান্নাতের বিশাল রাজ্য এই পার্থিব পরিবারের বিনিময়ে ছেড়ে দেয়া কি বুদ্ধিমানের কাজ হবে, যারা অচিরেই মৃতদের মাঝে শামিল হবে? হতে পারে এই পরিবারই আপনার প্রতি বিদ্বেষ, দূর্ব্যবহার আর ঈর্ষা পোষণ, করে। যদি আপনার টাকা – পয়সা থাকে তবে তারা আপনাকে ভালবাসে, আর যদি আপনি দেউলিয়া হন তবে তারা আপনাকে ত্যাগ করে। একদিন তারা আপনার সাথে, অন্যদিন আপনার বিরুদ্ধে। অবশেষে বিচার দিবসে, তারা আপনাকে আর ঘাঁটবে না এবং এক পয়সা পরিমাণ ছাড়ও তারা আপনাকে দেবে না/এমনকি পরস্পরের জন্যও তারা আপনাকেই দায়ী করবে। তারা প্রত্যেকেই সেদিন নিজেকে উদ্ধার করতে চাবে, এমনকি যদি এর বদলে আপনাকে জাহান্নামের আগুনে জলতে হয়।
সম্পদের প্রতি ভালবাসা
যদি এটাই আপনাকে জিহাদ হতে বিমুখ রেখে থাকে তাহলে বলতে হয়, এ কী করে সম্ভব যখন আপনি জানেন যে পরীক্ষামূলক এই সম্পদ আপনাকে একসময় হারাতে হবে? এবং এই সম্পদের জন্যই বিচার দিবস আপনাকে জিজ্ঞাসা করা হবে কীভাবে এই সম্পদ গড়ে তুলেছেন? আর কীভাবে তা খরচ করেছেন? এ ২টি প্রশ্ন আপনাকে এমন এক দিনে জিজ্ঞাসা করা হবে যেদিন একটি বাচ্চাও চুল পেঁকে বুড়ো হয়ে যাবে। বড়ই ভয়ংকর সে দিন।
আল্লাহর রাসূল (সা) বলেছেন, “দরিদ্র মুসলিমরা ধনী মুসলিমদের অর্ধদিন পূবেই জান্নাতে প্রবেশ করবেঃ (যা হবে) ৫০০ বছর (এর সমান)!”
আল্লাহ বলেন, “তোমাদের সম্পদ ও সন্তান সন্ততি তো তোমাদের জন্য পরীক্ষা; আল্লাহরই নিকটে রয়েছে মহা পুরষ্কার।”(সূরা তাগাবুন ৬৪:১৫)
এরপরও কীভাবে আপনার সম্পদ আপনাকে জিহাদ হতে বিরত রাখে?
সন্তান সন্ততির প্রতি ভালবাসা এবং তাদের জন্য উদ্বিগ্ন হওয়া
এর কারণ কি এই যে আপনি তাদের জন্য উদ্বিগ্ন? কিন্তু আপনার চেয়ে আল্লাহই তাদের জন্য অনেক বেশী চিন্তাশীল। আল্লাহ কি তাদের ব্যবস্থা করে দেননি যখন তারা অন্ধকারাচ্ছন্ন মাতৃগর্ভে ছিল!
এমন এক সন্তান কি করে আপনাকে জিহাদ হতে বিরত রাখে যখন ছোটকালেও তাকে নিয়ে আপনি চিন্তিত ছিলেন আর বড় হবার পরও। তারা সুস্থ হোক বা অসুস্থ আপনি তাদের নিয়েই চিন্তা ভাবনা করেন আপনি তাদের অবজ্ঞা করলে তারা বিদ্রোহ ও বিরোধিতা করে। তাদেরকে উপদেশ দিলে তারা আপনাকে ঘৃণা করে। আপনার এত ভালবাসার পরও, যখন আপনি বৃদ্ধ বয়সে উপনীত হন, তখন তারা আপনাকে পরিত্যাগ করে চলে যায়! এরপরও আপনি তাদের আশীর্বাদ হিসেবে দেখেন!
আপনার মন থেকে তাদের বিতাড়িত করুন বের করে দিন! তাদের যিনি সৃষ্টিকর্তা তার হাতে সপে দিন ওদের। আর আল্লাহর উপর ভরসা করুন তাদের সুব্যবস্থার জন্য যেমনটি নিজের জন্যও তাঁরই উপর ভরসা করেন। তাদের ব্যবস্থার ব্যাপারে যদি আপনি আল্লাহর উপর ভরসা করতে না পারেন তবে এটা কী করে স্বীকার করেন যে আল্লাহই এই আসমান জমিনের সব কিছুর নিয়ন্ত্রক?
আল্লাহর নামে বলছি, ওদের বা আপনার উপর যে মঙ্গল বা অমঙ্গল আপতিত হয় তার উপর আপনার কোনই হাত নেই। তাদের বা আপনার নিজের জীবনের উপর আপনার কোনই নিয়ন্ত্রণ নেই। আপনার আয়ুর সাথে ১টি দিন যোগ করার ক্ষমতাও আপনার নেই। একদিনের মধ্যেই আপনি মৃত্যুবরণ করবেন এবং সন্তানদের ইয়াতীম হিসেবে রেখে যেতে হবে। তখন আপনি আফসোস করবেন হায় আমার এতিমরা; আমি যদি শহীদদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারতাম! জবাব দেয়া হবেঃ এখন অনেক দেরী হয়ে গেছে। আল্লাহ বলেন।
“হে মানবজাতি! তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর এবং ভয় কর সেই দিনকে যখন পিতা সন্তানের কোন উপকারে আসবে না এবং সন্তানও কোন উপকারে আসবে না তার পিতার! আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য সুতরাং পার্থিব জীবন যেন তোমাদেরকে কিছুতেই প্রতারিত না করে এবং সেই প্রবঞ্চক (শয়তান) যেন তোমাদেরকে কিছুতেই আল্লাহ সম্পর্কে প্রবঞ্চিত না করে।” (সূরা লুকমান ৩১:৩৩)
এখন, আপনার সন্তান যদি সফলকামদের (জান্নাতি) অন্তর্ভুক্ত হয় তবে আপনাদের জান্নাতে পুনর্মিলিত করা হবে। আর যদি সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয় তবে তার জন্য অপেক্ষা কেন? এখন থেকেই আলাদা হয়ে যান! যদি সত্যই আপনি আপনার সন্তানের জন্য উদ্বিগ্ন হন তবে শহীদ হন। আপনি পরিবারের ৭০জন সদস্যের জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে আর কীসের জন্য অপেক্ষা?
আপনার বন্ধু বান্ধব
যদি আপনি আপনার বন্ধু বান্ধব পরিচিতদের ফেলে যেতে অপারগ হন তবে বিচার দিনের কথা চিন্তা করুন। সে দিন বন্ধু শক্রতে পরিণত হবে কেবল সৎকর্মশীলগণ ব্যতীত। অতএব আপনার বন্ধুরা যদি সৎকর্মশীল না হয় তবে তাদের সাথে আর থাকতে চেয়েন না কেননা কাল অবশ্যই তারা আপনার বিরুদ্ধে যাবে। তবে তারা যদি সৎকর্মশীল হয়ে থাকে তবে আল্লাহ আপনাদের এর চেয়ে ভাল জায়গায় পুনর্মিলিত করবেন। আল্লাহ বলেনঃ
“আমি তাদের অন্তর হতে ঈর্ষা দূর করব তারা ভাতৃভাবে পরস্পর মুখোমুখি হয়ে অবস্থান করবে।” (সূরা হিজর ১৫:৪৭)
ক্ষমতা ও মর্যাদা
আপনি হয়ত মুজাহিদীনদের সারিতে যোগ দেয়া হতে বিরত রয়েছেন কারণ আপনি যে উচ্চপদ, ক্ষমতা ও মর্যাদা হাসিল করেছেন এই দুনিয়ার তা হারাতে চান না। আপনি এখন যে পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন এর আগে আর কতজন এই পদে ছিল। এ পদ যদি তাদের ছেড়ে যেতে পারে তবে নিঃসন্দেহে একদিন আপনাকেও ছেড়ে যেতে হবে। আপনার ক্ষমতা সে তো অস্থায়ী আর আপনার প্রতিপত্তি মর্যাদা এসবও মানুষ শীঘ্রই ভুলে যাবে। আপনার পদমর্যাদা, ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি আপনাকে জান্নাতের পথ হতে দূরে রাখছে। জান্নাতের সর্বনিম্ন ব্যক্তিও এই পৃথিবীর দশগুণ এলাকা এবং এর অন্তর্ভুক্ত সবকিছুর অধিকারী হবে। এতো কেবল জান্নাতের সর্বনিম্ন ব্যক্তির মর্যাদা ও ক্ষমতা যা এ পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাবান রাজার চেয়েও বেশি।
এই পৃথিবীর কিছুই দূষণমুক্ত বা বিশুদ্ধ নয়। আপনি যে সামাজিক মর্যাদার অধিকারী হয়েছেন, এটার বেশ বড় একটি অংশ জুড়ে রয়েছে হতাশাব্যঞ্জক অনেক কিছু। ক্ষমতা ও পদমর্যাদার জন্য আপনাকে অনেক লড়াই করতে হবে। এতে অনেক শত্রুর জন্ম হবে আর হারাতে হবে বন্ধুদের। পথিমধ্যে অনেক বেদনা, অনেক ব্যর্থতা সহ্য করতে হবে। আর জান্নাত এ সমস্ত কিছু থেকে মুক্ত। আল্লাহ বলেন, “স্থায়ী জান্নাত, তাতে তারা প্রবেশ করবে এবং তাদের পিতা – মাতা পতি পত্মী ও সন্তান সন্ততিদের মধ্যে যারা সৎকর্ম করেছে তারাও এবং ফেরেশতা তাদের আছে হাযির হবে প্রত্যেক দরজা দিয়ে (২৩) বলবে, তোমরা ধৈর্যধারণ করেছ বলে তোমাদের প্রতি শান্তি। কতই না ভাল এই পরিণাম! (২৪)” (সূরা রাদঃ ১৩)
আরামদায়ক জীবনযাপনের প্রতি আসক্তি
হতে পারে আপনার বিশাল বাসভবনের শান্তি, বাগানের ছায়া, শয্যার আরাম, আপনার চতুর্দিকের সমস্ত আমোদ প্রমোদ, যা জীবনকে করেছে আরামদায়ক ও মনোরম। কিন্তু মনে রাখবেন, এগুলোর কোনটিই চিরস্থায়ী নয়। আপনার এই বিলাসবহুল বাড়ি ইট পাথর, ও চুনসুরকি দ্বারা তৈরি বাড়ি ছাড়া আর কিছুই নয়। এটা যদি পরিষ্কার করা না হয় তাহলে এটা নষ্ট হয়ে যাবে, আর যদি ঠিকমত রক্ষণাবেক্ষণ না করা হয় তবে এটার পতন ঘটবে। ঘটনাক্রমে একদিন এটাই ধুলাবালিতে পরিণত হবে যা থেকে এটা তৈরি করা হয়েছিল। আপনি কি এর চেয়ে সোনা ও রূপার ইটের তৈরি প্রাসাদে থাকতে বেশি পছন্দ করবেন না? এমন প্রাসাদ যা চিরস্থায়ী এবং যার কোন রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন নেই। এর আসবাবপত্র পছন্দনীয় এবং সুবিন্যস্ত করে সাজিয়েছে ফেরেশতারা। আর এতে আপনাকে সার্বোৎকৃষ্ট খাবার পরিবেশন করবে এমন দাস – দাসীরা, যাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, “তাদেরকে পরিবেশন করবে কিশোরগণ, তাদেরকে দেখে মনে হবে তারা যেন বিক্ষিপ্ত মুক্তা।”
জান্নাত সবকিছুই পরিচ্ছন্ন, সবকিছুই পবিত্র। সেখানে কোন প্রকৃতির ডাক বা ঘাম নেই। আমাদের দেহ ভিন্ন এক রূপ নিয়ে আসবে। জীবন সেখানে অসীম। সেখানে সময়ের কোন চাপ নেই। জান্নাতিরা যখন তখন যা ইচ্ছা যতক্ষণ খুশি ততক্ষণই করতে পারবে। তারা সিংহাসনে হেলান দিয়ে স্ত্রীর সাথে ৪০ বছর কথা বলতে পারবে। আপনার এবং এত আমোদপ্রমোদের মাঝে শহীদ হওয়া ছাড়া আর কিছুই কোন বাধা নেই। এই জীবনপদ্ধতির সাথে দুনিয়ার জীবনপদ্ধতির তুলনা করে দেখুন।
অধিক সৎকর্ম করার জন্য দীর্ঘায়ু কামনা
আপনি হয়ত জিহাদে অংশগ্রহণ করতে চাচ্ছেন না, কারণ আপনি এর জন্য প্রস্তুত নন এবং আপনি আরও নেককাজ করতে চান। অর্থাৎ আপনি উত্তম নিয়্যতে জিহাদ থেকে দুরে আছেন। কিন্তু শুনুন, আপনি প্রতারিত বা বঞ্চিত হচ্ছেন। আল্লাহ বলেন,
“হে মানুষ! আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য; সুতরাং পার্থিব জীবন যেন তোমাদেরকে কিছুতেই প্রতারিত না করে এবং সেই প্রবঞ্চনা যেন কিছুতেই আল্লাহর সম্পর্কে প্রবঞ্চিত না করে তোমাদেরকে। শয়তান তোমাদের শক্র; সুতরাং তাকে শক্র হিসেবে গ্রহণ কর; সে তো তার দলবলকে আহবান করে শুধু এজন্য যে, তারা যেন জাহান্নামের সাথী হয়।” (সূরা ফাতির ৫ – ৬)
এটা শয়তানের ফাঁদ ছাড়া আর কিছুই নয়। এটা আল্লাহর আউলিয়াদের (বন্ধু) পথ নয়। সাহাবা এবং তাবিঈনরা কি সৎকর্মের প্রতি আপনার চেয়ে বেশি উৎসাহী ছিলেন না। আপনি কি শুনেন না আল্লাহ আপনাকে বলছেন “বের হও হালকা অথবা ভারী (স্বল্প সরঞ্জামের সাথেই হোক, অথবা প্রচুর সরঞ্জামের সাথেই হোক) এবং আল্লাহর পথে নিজেদের ধন – সম্পদ ও প্রাণ দ্বারা যুদ্ধ কর এটাই তোমাদের জন্য অতি উত্তম, যদি তোমরা জানতে।” (সূরা তওবা ৯:৪১)
আপনি কি দেখছেন না যে, নিজেকে শুধরানোর বা আরও ভাল করবার সর্বোত্তম পন্থা হচ্ছে জিহাদের মাধ্যমে আল্লাহ বলেন, “আল্লাহ ধন – প্রাণ দ্বারা জিহাদে অংশগ্রহনকারীদেরকে গৃহে উপবিষ্টদের উপর পদমর্যাদায় গৌরবান্বিত করেছেন … উপবিষ্টদের উপর মুজাহিদদের মহান প্রতিদানে গৌরবান্বিত করেছেন।” (সূরা আন – নিসাঃ৯৫)
প্রকৃত অর্থে জিহাদের সমতুল্য কিছুই নেই। রাসূল (সা) বলেছেন “যুদ্ধের ময়দানে সৈন্যদের সারিতে দাড়িয়ে থাকা, পরিবারের মধ্যে ৭০ বছর আল্লাহর ইবাদত করার চেয়ে উত্তম”। (তিরমিজী আল-বায়হাকী আল-হাকীম)
স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা
যদি আপনি সুন্দরী স্ত্রীর কারণে জিহাদে যেতে অপারগ হন, আর আপনার তাকে যদি পৃথিবীর সর্বোৎকৃষ্ট নারী ও সবচেয়ে সুন্দরী বলে মনে হয় তবে শুনুন, সেও কি একসময় সামান্য একটা মাংস পিণ্ড ছিল? এবং একসময় সেও কি পঁচে নিঃশেষ হয়ে যাবে না? মাসিকের কারণে আপনাকে তার থেকে দূরে থাকতে হয়েছে জীবনের অনেকটা সময়। সে বাধ্য হবার থেকে অবাধ্যই বেশি ছিল। সে যদি নিজেকে পরিষ্কার না রাখত তবে তার থেকে দুর্গন্ধ আসত। যদি সে চুল না আঁচড়াত তবে তা অবিন্যস্ত বা এলোমেলো হয়ে থাকত। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে যে আরও কুৎসিত হতে থাকে। তাকে খুশী করা সহজ নয়, তার ভালবাসা রক্ষার্থে আপনাকে অনেক খরচ করতে হয়। আপনি সবসময় তাকে খুশী করতে চান বা প্রভাবান্বিত করতে চান কিন্তু কিছুই যেন যথেষ্ট হয় না তার জন্য। সে আপনাকে শুধু তখনই ভালবাসে যখন সে যা চায় আপনি তাই দেন আর যদি না দেন তবে সে আপনাকে ছেড়ে অন্য কাউকে খুঁজে নিবে যেন, ‘যদি আমাকে চাও তবে খরচ কর আমার জন্য’ ! সাধারণ ভাবে একসাথে অবিরাম/চিরস্থায়ী দুঃখ যন্ত্রণা ছাড়া তাকে উপভোগ করা সম্ভব নয়।
এটা খুবই আশ্চর্যজনক যে এই নারী আপনাকে জান্নাতের নারী থেকে দূরে রাখে। আল্লাহর নামে বলছি, শহীদের রক্ত জান্নাতে তার স্ত্রীর সাথে দেখা হবার আগে শুকায় না। সে হবে সুন্দর যার থাকবে বড় বড় দ্যুতিময় চোখ। একজন কুমারী যেন একটি পান্না। সে আর কাউকে ভালবাসেনি, বাসবেও না কেবল আপনাকে ছাড়া। সে তৈরি হয়েছে কেবল আপনারই জন্য। তার একটি মাত্র আঙুলও চাঁদের ঔজ্জ্বল্যকে হার মানবে। পৃথিবীতে যদি তার হাতের কব্জিটুকুও প্রকাশ পায় তার সমস্ত মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়বে। সে যদি আসমান ও জমিনের মধ্যে অবস্থান করে তবে মধ্যবর্তী সম্পূর্ণ এলাকা তার সুগন্ধে মৌ মৌ করবে। আর যদি সে সমুদ্রের পানিতে থুথু ফেলে, তবে এর নোনা পানিও বিশুদ্ধ (খাবার) পানিতে পরিণত হবে।
তার দিকে যতই তাকাবেন, সে ততই সুন্দর হতে থাকবে। তার সাথে যত সময় অতিবাহিত করবেন আপনি ততই তাকে ভালবাসবেন। এরকম একজন নারী সম্পর্কে জেনে শুনেও তার সাথে মিলিত হবার চেষ্টা না করা কি বিবেক বুদ্ধির পরিচয় দেয়? আর যদি আপনি জানেন যে, আপনি ১ জন নয় বরং ৭০ টি হুরের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবেন?
মনের মধ্যে রাখুন যে, স্ত্রীকে ছেড়ে যাওয়াটা অবশ্যম্ভাবী। আপনি মারা যাবেন এবং সে ও আপনাদের ইনশাআল্লাহ জান্নাতে পুনর্মিলিত হবে এবং দেখবেন যে সে, জান্নতের হুরদের চেয়ে বেশি সুন্দরী। আপনি তাকে পাবেন এ জীবনের সমস্ত অসন্তোষ মূলক জিনিস হতে মুক্ত।
অনেক বেশি দেরী হবার আগেই জেগে উঠুন। এই দুনিয়ার কারাগার হতে নিজেকে মুক্ত করুন এবং শহীদের মর্যাদা লাভের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন এত অসাধারণ পুরষ্কার আর আপনার মাঝে কোন কিছুকে বাঁধা হয়ে দাড়াতে দিবেন না।
- আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন রাসূলুলাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “শহীদের মৃত্যুযন্ত্রণা কেবল একটি পোকার হুল বিদ্ধের ব্যথার মত।” (আত তিরমিযী আন – নাসাঈ ইবন মাজাহ, আহমাদে আল-আলবানী হাসান)
- রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “আল্লাহর পথে দিনের প্রথম ভাগে বা শেষভাগে যাত্রা করা এই দুনিয়া ও এর মধ্যকার সবকিছু হতে উত্তম এবং যদি জান্নাতের কোন রমণী এই দুনিয়ার মানুষদের সামনে নিজেকে প্রকাশ করে, তবে এদের মধ্যকার এলাকা আলো আর সুগন্ধিতে ভরে যাবে আর তার মাথার রুমাল পর্যন্ত এই দুনিয়া ও এর মধ্যকার সবকিছু হতে উত্তম।” (বুখারী)
--gazwah.net থেকে সংগৃহীত
Comment