জিহাদের প্রকার:
জিহাদ প্রথমত দু’প্রকার; ইকদামী জিহাদ ও দিফায়ী জিহাদ।
ইকদামী তথা আক্রমণাত্মক জিহাদ হলো, কাফেরদের পক্ষ হতে মুসলিমদের উপর কোনো ধরনের আক্রমণ ছাড়াই ইসলাম প্রয়োগের পরিধি বাড়ানোর লক্ষ্যে কাফেরদের দেশে প্রবেশ করে জিহাদ করা।
দিফায়ী তথা আত্মরক্ষামূলক জিহাদ হলো, কাফের কর্তৃক জান, মাল, সম্ভ্রম বা মুসলিম ভূখণ্ড আক্রমণের শিকার হলে, তা প্রতিহতমূলক জিহাদ করা।
আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন,
উপর্যুক্ত আয়াত থেকে দিফায়ী জিহাদের সীমানা স্পষ্ট হয়ে আসে। শত্রু মুসলিম জামাআত বা মুসলিম ভূখণ্ডের উপর আক্রমণ করলে, তাদেরকে মুসলিম ভূখণ্ড থেকে প্রতিহত করা এবং মুসলিমদের উপর আক্রমণের প্রতিশোধ নেওয়া পর্যন্ত জিহাদ করা দিফায়ী বলে গণ্য হবে। কিন্তু শত্রুকে প্রতিহত করার পরে তাদের এলাকায় প্রবেশ করে জিহাদ করলে, তা ইকদামী বলে গণ্য হবে।
উদাহরণস্বরূপ, নববী যুগে রোমানরা মুসলিম দূত হত্যা করেছিল। এর প্রতিবাদে তাদের এলাকায় এ পরিমাণ অভিযান চালানোই যথেষ্ট, যদ্দরুণ দূত হত্যার প্রতিশোধ হয়ে যায়। কিন্তু দিফায়ী জিহাদ হিসেবে পুরো রোম সাম্রাজ্য বিজয় করা আবশ্যক নয়।
তবে মক্কার মুশরিকরা মুসলিমদেরকে আপন ভূমি থেকে বের করে দেয়। এর প্রতিবাদ-স্বরূপ মুশরিকদেরকে প্রতিহত করে মুসলিমদের ভূমি তাদেরকে কাছে ফিরিয়ে দেওয়া পর্যন্ত দিফায়ী হবে।[1]
উভয় প্রকার জিহাদ বৈধ:
কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমায়ের ভিত্তিতে উভয় প্রকার জিহাদ বৈধ ও শরিয়তসম্মত।
আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন,
মক্কা বিজয়ের পরে যখন আরবের অভ্যন্তরীণ শত্রু নির্মূল হয়ে গেল এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর মতো শক্তিশালী কোনো শত্রু বাকি থাকল না, তখন আরবের বাহিরের আহলে কিতাবিদের সাথে জিহাদ করার আদেশ দেওয়া হলো। উক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা ব্যাপকভাবে সকল আহলে কিতাবীদের বিরুদ্ধে জিহাদের হুকুম দিয়েছেন। এক্ষেত্রে তাদের পক্ষ হতে আগ্রাসী হামলা— এমন কোনো শর্ত করা হয়নি। তাই তারা আগ বেড়ে মুসলিমদের উপর আক্রমণ করুক বা না করুক—সর্বাবস্থায় তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা হবে।
অন্যত্র এরশাদ হয়েছে,
একটি হাদীসে এসেছে,
উপরিউক্ত আয়াত ও হাদীস কেবলমাত্র ইকদামী জিহাদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা সম্ভব। কেননা দিফায়ী জিহাদ সর্বস্মতিক্রমে ফরযে আইন। আর আয়াত ও হাদীস মুজাহিদ ও গায়রে মুজাহিদ সকলের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। যদি আয়াত ও হাদীসের জিহাদ দ্বারা দিফায়ী জিহাদ উদ্দেশ্য হত, তাহলে জিহাদ তরককারীর জন্য জান্নাতের সুসংবাদ নয়; বরং শাস্তির ভয় দেখানো হত।
আরো এরশাদ হয়েছে,
মুফাসসিরগণের মতে আয়াতের দুটি ব্যাখ্য রয়েছে;
এক. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মদীনায় একা রেখে সকল মুসলিম যেন একসাথে জিহাদে বের না হয়। বরং মুসলিমদের বড় দল থেকে ছোট একটি দল যেন জিহাদে বের হয়; আর বাকিরা মদীনায় রাসূলের সাথে থাকে। যাতে ছোট দলটি জিহাদে থাকাকালীন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর কোনো ওহী নাযিল হলে মদীনায় অবস্থানকারী দল তা সংরক্ষণ করতে পারে এবং ছোট দলটি ফিরে আসার পরে তাদেরকে এর তা’লীম দিতে পারে।
দুই. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোনো জিহাদে বের হবেন, তখন মুসলিমদের বড় দল থেকে ছোট একটি দল যেন রাসূলের সাথে জিহাদে বের হয়। যাতে জিহাদে থাকাকালীন রাসূলের উপর কোনো ওহী নাযিল হলে তারা তা সংরক্ষণ করতে পারে এবং পরবর্তীতে যখন মদীনায় ফিরে আসবে, তখন তাদেরকে এর তা’লীম দিতে পারে। -আহকামুল কুরআন লিল-জাসসাস: ৩/ ১৫০ (ইলমিয়্যাহ)
উভয় ব্যাখ্যা অনুযায়ী সামগ্রিকভাবে যে বিষয়টি প্রমাণীত হয় তা হচ্ছে, কিছু সংখ্যক লোক জিহাদে বের হবে আর কিছু সংখ্যক লোক আপন ভূমিতে অবস্থান করবে। আর তা হচ্ছে ইকদামী জিহাদের বৈশিষ্ট।
ফুকাহাদের দৃষ্টিতে ইকদামী জিহাদ:
সকল ইমাম, ফকীহ, মুহাদ্দিস ও মুফাসসিরদের মতে ইকদামী জিহাদ শরীয়তসম্মত। এ ব্যাপারে কোনো দ্বিমত নেই। নিম্নে তাদের কিছু বক্তব্য উপস্থাপন করছি।
ইমাম আবু বকর জাসসাস রহ. (৩৭০ হি.) বলেন,
ইমাম ইবনে হাযাম আন্দালূসী রহ. (৪৫৬ হি.) বলেন,
ইমাম ইবনে আতিয়্যাহ আন্দালূসী রহ. (৫৪২ হি.) বলেন,
ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী রহ. (৬০৬ হি.) বলেন,
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. (৭২৮ হি.) বলেন,
প্রখ্যাত আলেম আলী বিন নুফাই’ উলয়ানী হাফি. বলেন,
এই নিকৃষ্টতম বিদআতের কথা গ্রহণযোগ্য কোনো আলেম বলেননি। আমার জানা মতে সর্বপ্রথম এ মতটি প্রকাশ পেয়েছে আধুনিক বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের মাধ্যমে; যার প্রসিদ্ধ ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন, জামালুদ্দীন আফগানী, মুহাম্মাদ আবদুহু ও রশীদ রেযা।” –আহাম্মিয়াতুল জিহাদ: ৩১৮ (দারু তায়বাহ)
মুফতী তাকী উসমানী হাফি. বলেন,
কিন্তু চতুর্দশ শতকে এসে কিছু লোকের আবির্ভাব হয়েছে, যারা পশ্চিমা ধ্যানধারণা ও দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী ইসলামকে বাস্তবায়ন করতে চেয়েছে, তারা বহু মাসআলায় ফিকহে ইসলামীর ক্ষেত্রে এমন কিছু মত উদ্ভাবন করার চেষ্টা করেছে, যেগুলো পশ্চিমাদের কুপ্রবৃত্তির অনুকূলে যায়। এবং তারা ঔপনিবেশিক ও প্রাচ্যবিদদের খুশি করতে সে সকল মত শরয়ী নুসূসের মুখে জোরপূর্বক পুরে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। আর তারা আল্লাহর বাণী ভুলে গেছে—আর ইহুদী ও খৃস্টানরা কখনো তোমার প্রতি সন্তুষ্ট হবে না; যতোক্ষণ না তুমি তাদের মিল্লাতের অনুসরণ করো। বলে দেও, নিশ্চয় আল্লাহর হেদায়তই (একমাত্র) হেদায়ত।
তারা জিহাদের ব্যাপারে এমন এক বিদআত উদ্ভাবন করেছে যা পূর্বের কেউ বলেনি। আর তা হচ্ছে, ইসলামে জিহাদ শুধু প্রতিরক্ষার জন্য। সুতরাং কাফেরদেরকে ইসলামের কর্তৃত্বের সামনে নত করা এবং তাদের মতাদর্শের উপর আল্লাহর দীন বিজয় করার লক্ষ্যে কাফেরদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা জায়েয হবে না। তবে কাফেরদের পক্ষ থেকে মুসলিমদের উপর আগ্রসন হলে কেবল তখন জিহাদ করা যাবে।
আমাদের জানা মতে সর্বপ্রথম এ বিদআতি মতটি প্রকাশ পেয়েছে আধুনিক যুক্তিবাদী মতাদর্শের ছাত্রদের মাধ্যমে; যাদের প্রসিদ্ধ ব্যক্তিদের মধ্যে আরব বিশ্বের আছেন, মুফতী মুহাম্মাদ আবদুহু, রশীদ রেযা ও জামালুদ্দীন আফগানী এবং হিন্দুস্তানের আছেন, স্যার সাইয়েদ আহমাদ খান ও চেরাগ আলী প্রমুখ। উক্ত মাসআলায় ‘সীরাতুন্নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’-এর লেখক উস্তাদ শিবলী নুমানীও তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করেন। এবং ইসলামী বিশ্বের সমকালীন অনেক লেখক এই বিদআতী মত দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে।” –তাকমিলায়ে ফতহুল মুলহিম: ৩/১২-১৩ (দারু ইহয়ায়িত তুরাসিল আরবী)
এ ছাড়াও ইমাম তামীমী ও ইবনে রুশদ রহ.সহ অনেকে এ ব্যাপারে ইজমা দাবি করেছেন। -নাওয়াদিরুল ফুকাহা: পৃ: ১৬১ (দারুল কলম); বেদায়াতুল মুজতাহিদ: ২/১৪৩ (দারুল হাদীস); মাওসূআতুল ইজমা ফিল ফিকহিল ইসলামী: ৬/৩৮ (দারুল ফাযীলাহ)
উল্লেখ্য, ইকদামী জিহাদ শরীয়তসম্মত ও বৈধ হওয়ার ব্যাপারে সকল ইমাম ঐকমত্য হওয়ার পরে, তা ফরয না নফল; ফরয হলে ফরযে কেফায়া না ফরযে আইন—এ ব্যাপারে সালাফের মাঝে মতানৈক্য রয়েছে। তবে পরবর্তীতে সকল ফকীহ ইকদামী জিহাদ ফরযে কেফায়া হওয়ার ব্যাপারে ঐকমত্য হয়ে যান। সে হিসেবে অনেকে ইকদামী জিহাদ ফরযে কেফায়া হওয়ার ব্যাপারেও ইজমা দাবি করেছেন। -তাফসীরে ইবনে আতিয়্যাহ: ১/২৮৯ (ইলমিয়্যাহ); তাফসীরে রাযী: ৬/৩৮৪ (দারু ইহয়ায়িত তুরাসিল আরবী)
[1] কাফেররা মুসলিমদের সম্পদ দখল করলে কাফেররা যে এর মালিক হয়ে যায়— উক্ত মাসআলার সাথে এর সম্পর্ক নেই। কেননা, কাফেররা উক্ত সম্পদের মালিক হয়ে গেলেও এতে যে তারা মুসলিমদের উপর জুলুম করেছে— এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। আর জুলুম প্রতিহতমূলক জিহাদই হচ্ছে দিফায়ী জিহাদ।
জিহাদ প্রথমত দু’প্রকার; ইকদামী জিহাদ ও দিফায়ী জিহাদ।
ইকদামী তথা আক্রমণাত্মক জিহাদ হলো, কাফেরদের পক্ষ হতে মুসলিমদের উপর কোনো ধরনের আক্রমণ ছাড়াই ইসলাম প্রয়োগের পরিধি বাড়ানোর লক্ষ্যে কাফেরদের দেশে প্রবেশ করে জিহাদ করা।
দিফায়ী তথা আত্মরক্ষামূলক জিহাদ হলো, কাফের কর্তৃক জান, মাল, সম্ভ্রম বা মুসলিম ভূখণ্ড আক্রমণের শিকার হলে, তা প্রতিহতমূলক জিহাদ করা।
আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন,
فَمَنِ اعْتَدَى عَلَيْكُمْ فَاعْتَدُوا عَلَيْهِ بِمِثْلِ مَا اعْتَدَى عَلَيْكُمْ وَاتَّقُوا اللَّهَ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ مَعَ الْمُتَّقِينَ -سورة البقرة: 194
“সুতরাং কেউ যদি তোমাদের উপর জুলুম করে, তোমরাও তার জুলুমের ততটুকু বদলা নিতে পার, যতটুকু সে তোমাদের উপর জুলুম করেছে। আর আল্লাহকে ভয় করে চলো এবং জেনে রাখ, আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে আছেন।” –সূরা বাকারা: ১৯৪উপর্যুক্ত আয়াত থেকে দিফায়ী জিহাদের সীমানা স্পষ্ট হয়ে আসে। শত্রু মুসলিম জামাআত বা মুসলিম ভূখণ্ডের উপর আক্রমণ করলে, তাদেরকে মুসলিম ভূখণ্ড থেকে প্রতিহত করা এবং মুসলিমদের উপর আক্রমণের প্রতিশোধ নেওয়া পর্যন্ত জিহাদ করা দিফায়ী বলে গণ্য হবে। কিন্তু শত্রুকে প্রতিহত করার পরে তাদের এলাকায় প্রবেশ করে জিহাদ করলে, তা ইকদামী বলে গণ্য হবে।
উদাহরণস্বরূপ, নববী যুগে রোমানরা মুসলিম দূত হত্যা করেছিল। এর প্রতিবাদে তাদের এলাকায় এ পরিমাণ অভিযান চালানোই যথেষ্ট, যদ্দরুণ দূত হত্যার প্রতিশোধ হয়ে যায়। কিন্তু দিফায়ী জিহাদ হিসেবে পুরো রোম সাম্রাজ্য বিজয় করা আবশ্যক নয়।
তবে মক্কার মুশরিকরা মুসলিমদেরকে আপন ভূমি থেকে বের করে দেয়। এর প্রতিবাদ-স্বরূপ মুশরিকদেরকে প্রতিহত করে মুসলিমদের ভূমি তাদেরকে কাছে ফিরিয়ে দেওয়া পর্যন্ত দিফায়ী হবে।[1]
উভয় প্রকার জিহাদ বৈধ:
কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমায়ের ভিত্তিতে উভয় প্রকার জিহাদ বৈধ ও শরিয়তসম্মত।
আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন,
قَاتِلُوا الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَلَا بِالْيَوْمِ الْآخِرِ وَلَا يُحَرِّمُونَ مَا حَرَّمَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَلَا يَدِينُونَ دِينَ الْحَقِّ مِنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ حَتَّى يُعْطُوا الْجِزْيَةَ عَنْ يَدٍ وَهُمْ صَاغِرُونَ -سورة التوبة: 29
“তোমরা ঐ সকল আহলে কিতাবিদের (তথা ইহুদি ও নাসারা) সাথে যুদ্ধ করো, যারা আল্লাহ ও পরকালের উপর ঈমান রাখে না; আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যা হারাম করেছেন, তারা তা হারাম হিসেবে গ্রহণ করে না এবং সত্য দীন গ্রহণ করে না, যতক্ষণ না তারা লাঞ্চিত হয়ে জিযিয়া প্রদানে সম্মত হয়।” –সূরা তাওবা: ২৯মক্কা বিজয়ের পরে যখন আরবের অভ্যন্তরীণ শত্রু নির্মূল হয়ে গেল এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর মতো শক্তিশালী কোনো শত্রু বাকি থাকল না, তখন আরবের বাহিরের আহলে কিতাবিদের সাথে জিহাদ করার আদেশ দেওয়া হলো। উক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা ব্যাপকভাবে সকল আহলে কিতাবীদের বিরুদ্ধে জিহাদের হুকুম দিয়েছেন। এক্ষেত্রে তাদের পক্ষ হতে আগ্রাসী হামলা— এমন কোনো শর্ত করা হয়নি। তাই তারা আগ বেড়ে মুসলিমদের উপর আক্রমণ করুক বা না করুক—সর্বাবস্থায় তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা হবে।
অন্যত্র এরশাদ হয়েছে,
لَا يَسْتَوِي الْقَاعِدُونَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ غَيْرُ أُولِي الضَّرَرِ وَالْمُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ فَضَّلَ اللَّهُ الْمُجَاهِدِينَ بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ عَلَى الْقَاعِدِينَ دَرَجَةً وَكُلًّا وَعَدَ اللَّهُ الْحُسْنَى وَفَضَّلَ اللَّهُ الْمُجَاهِدِينَ عَلَى الْقَاعِدِينَ أَجْرًا عَظِيمًا (95) دَرَجَاتٍ مِنْهُ وَمَغْفِرَةً وَرَحْمَةً وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَحِيمًا -سورة النساء: 95، 96
“কোনো উজর ছাড়া ঘরে উপবিষ্টকারী মুসলিম এবং মাল ও জান দ্বারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারী সমান নন। আল্লাহ মাল ও জান দ্বারা জিহাদকারীদেরকে উপবিষ্টদের উপর মর্যাদা দিয়েছেন। এবং আল্লাহ প্রত্যেকের জন্য জান্নাতের ওয়াদা করেছেন। আল্লাহ মুজাহিদদেরকে উপবিষ্টকারীদের তুলনায় মহান প্রতিদান দিয়ে মর্যাদাবান করেছেন। তথা আল্লাহর পক্ষ হতে (জান্নাতের) অনেক স্তর, মাগফিরাত ও রহমত। আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, মহান দয়ালূ।” –সূরা নিসা: ৯৫, ৯৬একটি হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَبِرَسُولِهِ، وَأَقَامَ الصَّلاَةَ، وَصَامَ رَمَضَانَ كَانَ حَقًّا عَلَى اللَّهِ أَنْ يُدْخِلَهُ الجَنَّةَ، جَاهَدَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَوْ جَلَسَ فِي أَرْضِهِ الَّتِي وُلِدَ فِيهَا»، فَقَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَفَلاَ نُبَشِّرُ النَّاسَ؟ قَالَ: «إِنَّ فِي الجَنَّةِ مِائَةَ دَرَجَةٍ، أَعَدَّهَا اللَّهُ لِلْمُجَاهِدِينَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ، مَا بَيْنَ الدَّرَجَتَيْنِ كَمَا بَيْنَ السَّمَاءِ وَالأَرْضِ، فَإِذَا سَأَلْتُمُ اللَّهَ، فَاسْأَلُوهُ الفِرْدَوْسَ، فَإِنَّهُ أَوْسَطُ الجَنَّةِ وَأَعْلَى الجَنَّةِ -أُرَاهُ- فَوْقَهُ عَرْشُ الرَّحْمَنِ، وَمِنْهُ تَفَجَّرُ أَنْهَارُ الجَنَّةِ» -رواه البخاري (2790)
“আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান আনল, নামায কায়েম করল এবং রমযানের রোযা রাখল, সে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করুক কিংবা তার জন্মস্থানে বসে থাকুক, আল্লাহ তাকে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। সাহাবীরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি মানুষদেরকে এর সুসংবাদ দিব না? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, জান্নাতে একশটি স্তর রয়েছে, যা আল্লাহ মুজাহিদদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন। দুই স্তরের মধ্যবর্তী জায়গা হচ্ছে আসমান ও যমীনের ফারাক। যখন তোমরা আল্লাহর কাছে চাও, জান্নাতুল ফিরদাউস চাও। কেননা তা জান্নাতের মধ্যবর্তী ও উচু জান্নাত। (বর্ণনাকারী বলেন) আমার ধারণা (রাসূল আরো বলেছেন,) এর উপরে আল্লাহর আরশ। উক্ত জান্নাত থেকেই জান্নাতের নদীসমূহ প্রবাহমান হয়।” -সহীহ বুখারী: ২৭৯০উপরিউক্ত আয়াত ও হাদীস কেবলমাত্র ইকদামী জিহাদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা সম্ভব। কেননা দিফায়ী জিহাদ সর্বস্মতিক্রমে ফরযে আইন। আর আয়াত ও হাদীস মুজাহিদ ও গায়রে মুজাহিদ সকলের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। যদি আয়াত ও হাদীসের জিহাদ দ্বারা দিফায়ী জিহাদ উদ্দেশ্য হত, তাহলে জিহাদ তরককারীর জন্য জান্নাতের সুসংবাদ নয়; বরং শাস্তির ভয় দেখানো হত।
আরো এরশাদ হয়েছে,
وَمَا كَانَ الْمُؤْمِنُونَ لِيَنْفِرُوا كَافَّةً فَلَوْلَا نَفَرَ مِنْ كُلِّ فِرْقَةٍ مِنْهُمْ طَائِفَةٌ لِيَتَفَقَّهُوا فِي الدِّينِ وَلِيُنْذِرُوا قَوْمَهُمْ إِذَا رَجَعُوا إِلَيْهِمْ لَعَلَّهُمْ يَحْذَرُونَ -سورة التوبة: 122
“মুমিনদের জন্য সঙ্গত নয় যে, সবাই একসাথে অভিযানে বের হয়ে যাবে। সুতরাং এমন কেন করা হয় না যে, প্রত্যেক বড় দল থেকে একটি ছোট দল বের হবে; যাতে (যারা জিহাদে যায়নি) তারা দীনের ইলম অর্জন করতে পারে। এবং (যারা জিহাদে বের হয়েছিল) তারা যখন স্বজাতির কাছে ফিরে আসবে, তাদেরকে সতর্ক করবে; যাতে তারা (আল্লাহর অবাধ্যতা করা থেকে) বাঁচতে পারে।” –সূরা তাওবা: ১২২মুফাসসিরগণের মতে আয়াতের দুটি ব্যাখ্য রয়েছে;
এক. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মদীনায় একা রেখে সকল মুসলিম যেন একসাথে জিহাদে বের না হয়। বরং মুসলিমদের বড় দল থেকে ছোট একটি দল যেন জিহাদে বের হয়; আর বাকিরা মদীনায় রাসূলের সাথে থাকে। যাতে ছোট দলটি জিহাদে থাকাকালীন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর কোনো ওহী নাযিল হলে মদীনায় অবস্থানকারী দল তা সংরক্ষণ করতে পারে এবং ছোট দলটি ফিরে আসার পরে তাদেরকে এর তা’লীম দিতে পারে।
দুই. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোনো জিহাদে বের হবেন, তখন মুসলিমদের বড় দল থেকে ছোট একটি দল যেন রাসূলের সাথে জিহাদে বের হয়। যাতে জিহাদে থাকাকালীন রাসূলের উপর কোনো ওহী নাযিল হলে তারা তা সংরক্ষণ করতে পারে এবং পরবর্তীতে যখন মদীনায় ফিরে আসবে, তখন তাদেরকে এর তা’লীম দিতে পারে। -আহকামুল কুরআন লিল-জাসসাস: ৩/ ১৫০ (ইলমিয়্যাহ)
উভয় ব্যাখ্যা অনুযায়ী সামগ্রিকভাবে যে বিষয়টি প্রমাণীত হয় তা হচ্ছে, কিছু সংখ্যক লোক জিহাদে বের হবে আর কিছু সংখ্যক লোক আপন ভূমিতে অবস্থান করবে। আর তা হচ্ছে ইকদামী জিহাদের বৈশিষ্ট।
ফুকাহাদের দৃষ্টিতে ইকদামী জিহাদ:
সকল ইমাম, ফকীহ, মুহাদ্দিস ও মুফাসসিরদের মতে ইকদামী জিহাদ শরীয়তসম্মত। এ ব্যাপারে কোনো দ্বিমত নেই। নিম্নে তাদের কিছু বক্তব্য উপস্থাপন করছি।
ইমাম আবু বকর জাসসাস রহ. (৩৭০ হি.) বলেন,
ولا نعلم أحدا من الفقهاء يحظر قتال من اعتزل قتالنا من المشركين وإنما الخلاف في جواز ترك قتالهم لا في حظره فقد حصل الاتفاق من الجميع على نسخ حظر القتال لمن كان وصفه ما ذكرنا.اهــــ -أحكام القرآن للجصاص ط. العلمية (2/ 278)
“আমাদের জানা মতে, কোনো ফকীহই যুদ্ধবিমুখ মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা নাজায়েয বলেননি। ইমামদের মাঝে মতানৈক্য কেবল এটুকুতে—তাদের সাথে জিহাদ পরিহার করা জায়েয কি না; জিহাদ করা নিষিদ্ধ—এ বিষয়ে নয়। কেননা যুদ্ধবিমুখ কাফেরদের সাথে জিহাদ নাজায়েয হওয়ার বিধান ইমামদের সর্বসম্মত মতানুযায়ী রহিত হয়ে গেছে।” –আহকামুল কুরআন: ২/২৭৮ (ইলমিয়্যাহ)ইমাম ইবনে হাযাম আন্দালূসী রহ. (৪৫৬ হি.) বলেন,
واتفقوا أن قتال أهل الكفر بعد دعائهم إلى الإسلام أو الجزية إذا امتنعوا من كليهما جائز.اهــــ -مراتب الإجماع ط. العلمية (ص: 122)
“ইমামগণ এ ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেন যে, কাফেরদেরকে ইসলাম অথবা জিযয়া গ্রহণের প্রতি আহ্বান করার পরে উভয়টি গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকলে তাদের সাথে জিহাদ করা জায়েয।” –মারাতিবুল ইজমা: ১২২ (ইলমিয়্যাহ)। আরো দেখুন: আল-ইকনা ফী মাসাইলিল ইজমা: ১/৩৩৪ (আল-ফারূকুল হাদীসিয়্যাহ)ইমাম ইবনে আতিয়্যাহ আন্দালূসী রহ. (৫৪২ হি.) বলেন,
واستمر الإجماع على أن الجهاد على أمة محمد فرض كفاية، فإذا قام به من قام من المسلمين سقط عن الباقين، إلا أن ينزل العدو بساحة للإسلام، فهو حينئذ فرض عين.اهــــ -تفسير ابن عطية ط. العلمية (1/ 289)
“এ বিষয়ে (ইমামদের) ইজমা চলে আসছে যে, জিহাদ করা উম্মতে মুহাম্মাদীর উপর ফরযে কেফায়া। মুসলিমদের একটি দল (পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে) আদায় করলে বাকিরা দায়মুক্তি হয়ে যাবে। তবে শত্রু মুসলিম ভূখণ্ডে (আক্রমণের উদ্দেশ্যে) অবতরণ করলে (সকল মুসলিমের উপর) জিহাদ ফরযে আইন হয়ে যায়।” –তাফসীরে ইবনে আতিয়্যাহ: ১/২৮৯ (ইলমিয়্যাহ)ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী রহ. (৬০৬ হি.) বলেন,
والإجماع اليوم منعقد على أنه من فروض الكفايات، إلا أن يدخل المشركون ديار المسلمين فإنه يتعين الجهاد حينئذ على الكل.اهــــ -تفسير الرازي ط. دار إحياء التراث العربي (6/ 384)
“বর্তমানে এ ব্যাপারে ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, জিহাদ ফরযে কেফায়ার অন্তর্ভুক্ত। তবে কাফেররা মুসলিম ভূখণ্ডে (আক্রমণের উদ্দেশ্যে) প্রবেশ করলে সকলের উপর ফরযে আইন হয়ে যায়।” –তাফসীরে রাযী: ৬/৩৮৪ (দারু ইহয়ায়িত তুরাসিল আরবী)শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. (৭২৮ হি.) বলেন,
وإذا كان أصل القتال المشروع هو الجهاد ومقصوده هو أن يكون الدين كله لله وأن تكون كلمة الله هي العليا فمن امتنع من هذا قوتل باتفاق المسلمين.اهــــ -مجموع الفتاوى (28/ 354)
“যেহেতু শরীয়তসম্মত যুদ্ধ বলতে উদ্দেশ্য হচ্ছে জিহাদ এবং জিহাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে— সমগ্র দীন যেন আল্লাহর হয় এবং একমাত্র আল্লাহর দীন বিজয়ী হয়, সুতরাং যে কেউ তা থেকে বিরত থাকবে মুসলিমদের সর্বসম্মত মতানুযায়ী তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হবে।” –মাজমূউল ফাতাওয়া: ২৮/৩৫৪ (মাজমাউল মালিক ফাহাদ)প্রখ্যাত আলেম আলী বিন নুফাই’ উলয়ানী হাফি. বলেন,
ابتدع تلاميذ المستشرقين ومن سار على نهجهم بدعة منكرة تخالف الكتاب العزيز والسنة الصحيحة وإجماع سلف الأمة، وهذه البدعة هي أن الجهاد في الإسلام للدفاع فقط، وأن المسلمين لا يجوز لهم أن يغزوا الكفار لأجل إخضاعهم لسلطان الإسلام، وإعلاء كلمة الله على كلمتهم، إلا إذا سبق الكفار بالاعتداء على المسلمين.
وهذه البدعة المنكرة لم يقلها أحد من علماء المسلمين المعتبرين. وأول ما ظهرت–فيما أعلم- على أيدي تلاميذ المدرسة العقلية الحديثة، التي من أشهر من رجالها: جمال الدين الأفغاني ومحمد عبده ورشيد رضا.اهــــ -أهمية الجهاد (ص: 318) ط. دار طيبة
“প্রাচ্যবিদদের শিষ্য ও তাদের পদাঙ্ক অনুসরণকারীরা কুরআন, সহীহ হাদীস ও উম্মাতের সালাফের ইজমার বিপরিতে এক নিকৃষ্টতম বিদআতের প্রচলন ঘটিয়েছে। উক্ত বিদআতটি হচ্ছে, ইসলামে জিহাদ শুধু প্রতিরক্ষার জন্য। এবং মুসলিমদের জন্য বৈধ নয় যে, তারা কাফেরদেরকে ইসলামের শাসনের অধিনে আনা এবং তাদের মতাদর্শের উপর আল্লাহর দীন বিজয় করার লক্ষ্যে জিহাদ করবে। তবে কাফেরদের পক্ষ থেকে মুসলিমদের উপর আগ্রসন হলে কেবল তখন জিহাদ করা যাবে। এই নিকৃষ্টতম বিদআতের কথা গ্রহণযোগ্য কোনো আলেম বলেননি। আমার জানা মতে সর্বপ্রথম এ মতটি প্রকাশ পেয়েছে আধুনিক বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের মাধ্যমে; যার প্রসিদ্ধ ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন, জামালুদ্দীন আফগানী, মুহাম্মাদ আবদুহু ও রশীদ রেযা।” –আহাম্মিয়াতুল জিহাদ: ৩১৮ (দারু তায়বাহ)
মুফতী তাকী উসমানী হাফি. বলেন,
كل ما ذكرنا من حقيقة الجهاد وأحكامه وأهدافه مستنبط من القرآن والسنة وأقوال السلف الصالحين، وهو الذي ظل المسلمون يعتقدونه في أمر الجهاد، ويعملون بمقتضاه طوال ثلاثة عشر قرنا من تاريخهم، وصارت مشروعية الجهاد بأقسامه كلمة إجماع فيما بينهم، لم يختلف فيه اثنان، ولا ظهر فيه رأيان.
ولكن ظهر في القرن الرابع عشر رجال أرادوا تطبيق الإسلام على النظريات والأفكار الغربية، فحاولوا في كثير من المسائل أن يبتدعوا في الفقه الإسلامي آراء موافقة لأهواء أهل الغرب، ويلقموها في فم النصوص الشرعية كرها؛ إرضاء للمستعمرين والمستشرقين. وتناسوا قول الله سبحانه: "وَلَنْ تَرْضَى عَنْكَ الْيَهُودُ وَلَا النَّصَارَى حَتَّى تَتَّبِعَ مِلَّتَهُمْ قُلْ إِنَّ هُدَى اللَّهِ هُوَ الْهُدَى" [البقرة: 120]
فابتدع هؤلاء في أمر الجهاد بدعة لا سلف لهم فيها، وهي أن الجهاد في الإسلام للدفاع فقط، وأن المسلمين لا يجوز لهم أن يغزوا الكفار لأجل إخضاعهم لسلطان الإسلام، وإعلاء كلمة الله على كلمتهم، إلا إذا سبق الكفار بالاعتداء على المسلمين.
وأول ما ظهر هذا الرأي المبتدع –فيما نعلم- على أيدي تلاميذ المدرسة العقلية الحديثة، التي من أشهر من رجالها: المفتي محمد عبده، ورشيد رضا، وجمال الدين الأفغاني؛ في البلاد العربية، وسر سيد احمد خان، وجراغ علي وأمثالهما في الهند. وقد حذا حذوهم في هذه المسألة الأستاذ شبلي النعماني صاحب "سيرة النبي صلى الله عليه وسلم" أيضا. وقد تأثر بهذا الرأي المبتدع كثير من الكتاب المعاصرين في البلاد الإسلامية.اهــــ -تكملة فتح الملهم (3/ 12-13) ط. دار إحياء التراث العربي
“জিহাদের হাকীকত, আহকাম ও লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সংক্রান্ত যে আলোচনা করেছি, তা সবই কুরআন, সুন্নাহ ও সালাফে সালেহীনের ব্যাখ্যা থেকে আহরিত। মুসলিমরা দীর্ঘ তেরো শতক অবধি জিহাদের ব্যাপারে এমনটিই বিশ্বাস লালন করে আসছে এবং সে অনুযায়ী আমল করে চলছে। উভয় প্রকার জিহাদের বৈধতা মুসলিমদের কাছে এক্যমত একটি বিষয়। এ ব্যাপারে কেউ মতানৈক্য করেনি এবং ভিন্ন কোনো মত প্রকাশ পায়নি।কিন্তু চতুর্দশ শতকে এসে কিছু লোকের আবির্ভাব হয়েছে, যারা পশ্চিমা ধ্যানধারণা ও দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী ইসলামকে বাস্তবায়ন করতে চেয়েছে, তারা বহু মাসআলায় ফিকহে ইসলামীর ক্ষেত্রে এমন কিছু মত উদ্ভাবন করার চেষ্টা করেছে, যেগুলো পশ্চিমাদের কুপ্রবৃত্তির অনুকূলে যায়। এবং তারা ঔপনিবেশিক ও প্রাচ্যবিদদের খুশি করতে সে সকল মত শরয়ী নুসূসের মুখে জোরপূর্বক পুরে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। আর তারা আল্লাহর বাণী ভুলে গেছে—আর ইহুদী ও খৃস্টানরা কখনো তোমার প্রতি সন্তুষ্ট হবে না; যতোক্ষণ না তুমি তাদের মিল্লাতের অনুসরণ করো। বলে দেও, নিশ্চয় আল্লাহর হেদায়তই (একমাত্র) হেদায়ত।
তারা জিহাদের ব্যাপারে এমন এক বিদআত উদ্ভাবন করেছে যা পূর্বের কেউ বলেনি। আর তা হচ্ছে, ইসলামে জিহাদ শুধু প্রতিরক্ষার জন্য। সুতরাং কাফেরদেরকে ইসলামের কর্তৃত্বের সামনে নত করা এবং তাদের মতাদর্শের উপর আল্লাহর দীন বিজয় করার লক্ষ্যে কাফেরদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা জায়েয হবে না। তবে কাফেরদের পক্ষ থেকে মুসলিমদের উপর আগ্রসন হলে কেবল তখন জিহাদ করা যাবে।
আমাদের জানা মতে সর্বপ্রথম এ বিদআতি মতটি প্রকাশ পেয়েছে আধুনিক যুক্তিবাদী মতাদর্শের ছাত্রদের মাধ্যমে; যাদের প্রসিদ্ধ ব্যক্তিদের মধ্যে আরব বিশ্বের আছেন, মুফতী মুহাম্মাদ আবদুহু, রশীদ রেযা ও জামালুদ্দীন আফগানী এবং হিন্দুস্তানের আছেন, স্যার সাইয়েদ আহমাদ খান ও চেরাগ আলী প্রমুখ। উক্ত মাসআলায় ‘সীরাতুন্নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’-এর লেখক উস্তাদ শিবলী নুমানীও তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করেন। এবং ইসলামী বিশ্বের সমকালীন অনেক লেখক এই বিদআতী মত দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে।” –তাকমিলায়ে ফতহুল মুলহিম: ৩/১২-১৩ (দারু ইহয়ায়িত তুরাসিল আরবী)
এ ছাড়াও ইমাম তামীমী ও ইবনে রুশদ রহ.সহ অনেকে এ ব্যাপারে ইজমা দাবি করেছেন। -নাওয়াদিরুল ফুকাহা: পৃ: ১৬১ (দারুল কলম); বেদায়াতুল মুজতাহিদ: ২/১৪৩ (দারুল হাদীস); মাওসূআতুল ইজমা ফিল ফিকহিল ইসলামী: ৬/৩৮ (দারুল ফাযীলাহ)
উল্লেখ্য, ইকদামী জিহাদ শরীয়তসম্মত ও বৈধ হওয়ার ব্যাপারে সকল ইমাম ঐকমত্য হওয়ার পরে, তা ফরয না নফল; ফরয হলে ফরযে কেফায়া না ফরযে আইন—এ ব্যাপারে সালাফের মাঝে মতানৈক্য রয়েছে। তবে পরবর্তীতে সকল ফকীহ ইকদামী জিহাদ ফরযে কেফায়া হওয়ার ব্যাপারে ঐকমত্য হয়ে যান। সে হিসেবে অনেকে ইকদামী জিহাদ ফরযে কেফায়া হওয়ার ব্যাপারেও ইজমা দাবি করেছেন। -তাফসীরে ইবনে আতিয়্যাহ: ১/২৮৯ (ইলমিয়্যাহ); তাফসীরে রাযী: ৬/৩৮৪ (দারু ইহয়ায়িত তুরাসিল আরবী)
[1] কাফেররা মুসলিমদের সম্পদ দখল করলে কাফেররা যে এর মালিক হয়ে যায়— উক্ত মাসআলার সাথে এর সম্পর্ক নেই। কেননা, কাফেররা উক্ত সম্পদের মালিক হয়ে গেলেও এতে যে তারা মুসলিমদের উপর জুলুম করেছে— এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। আর জুলুম প্রতিহতমূলক জিহাদই হচ্ছে দিফায়ী জিহাদ।
Comment