Announcement

Collapse
No announcement yet.

ফিকহুল জিহাদ; পর্ব ১১ ➤ জিহাদ কখনো মুবাহ, মুস্তাহাব, হারাম বা মাকরুহ হতে পারে?

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • ফিকহুল জিহাদ; পর্ব ১১ ➤ জিহাদ কখনো মুবাহ, মুস্তাহাব, হারাম বা মাকরুহ হতে পারে?

    জিহাদ কি কখনো মুবাহ, মুস্তাহাব, হারাম বা মাকরুহ হতে পারে?

    মৌলিকভাবে জিহাদ হয়ত ফরযে কেফায়া হবে কিংবা ফরযে আইন। এর বাইরে মুবাহ, মুস্তাহাব কিংবা হারাম, মাকরুহ হওয়ার সুযোগ নেই।
    -বাদায়েউস সানায়ে: ৬/১১, ৩৪২ (দারুল হাদীস); রদ্দুল মুহতার: ৪/১২২ (দারুল ফিকর)

    তবে বিশেষ অবস্থা ও পরিস্থিতির বিচারে জিহাদ শুরু করা মুবাহ, মুস্তাহাব; এমনকি হারাম কিংবা মাকরুহও হতে পারে। তবে উক্ত বিধান পারিপার্শিক কারণে; জিহাদের মৌলিক বিধান হিসেবে নয়।

    সুতরাং যেসব অবস্থায় জিহাদ শুরু করা মুবাহ বা মুস্তাহাব, সেসব অবস্থায়ও জিহাদ করার দ্বারা তা ফরয জিহাদ হিসেবেই আদায় হবে।

    তদ্রূপ যেসব অবস্থায় জিহাদ শুরু করা হারাম বা মাকরুহ, সেসব ক্ষেত্রেও তা আদায় করলে ফরয হিসেবে আদায় হবে। ফলাফল-স্বরূপ, জিহাদ ফরযে কেফায়ার সূরতে, হারাম বা মাকরুহ পদ্ধতিতে জিহাদ করার দ্বারাও বাকিদের পক্ষ থেকে ফরযিয়াতের দায়িত্ব আদায় হয়ে যাবে। অবশ্য হারাম ও মাকরুহ পদ্ধতিতে আদায় করার কারণে গুণাহ হবে, তবে জিহাদ ফরয হিসেবেই আদায় হবে।

    উদাহরণ-স্বরূপ, রমযানের রোযা রাখা ফরয। তবে মুসাফির যদি রোযা রাখার দরুণ দুর্বল হওয়া কিংবা সফরে ব্যাঘাত হওয়ার আশঙ্কা না থাকে, তাহলে তার জন্য রোযা রাখা মুস্তাহাব; অন্যথায় রোযার রাখা মাকরুহ। আবার গর্ভবর্তী মহিলা যদি রোযা রাখার দরুণ নিজে বা সন্তার মারা যাওয়া কিংবা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা হয়, তাহলে রোযা রাখা জায়েয নয়। কিন্তু এ সকল সূরতে রোযা রাখলে ফরয রোযা হিসেবে আদায় হবে। ফলাফল-স্বরূপ পরবর্তীতে আর কাযা করতে হবে না।[1]

    তদ্রূপ, জিহাদের ক্ষেত্রেও কখনো তা মুবাহ, মুস্তাহাব, হারাম বা মাকরুহ হতে পারে। তবে তা জিহাদের মৌলিক বিধান নয়; বরং পারিপার্শিক কারণে এমনটি হয়েছে।

    নিম্নে জিহাদ মুবাহ, ‍মুস্তাহাব কিংবা মাকরুহ ও হারাম হওয়ার কিছু সূরত উল্লেখ করছি। এখানে বিস্তারিত আলোচনা উদ্দেশ্য নয়। বরং উদাহরাণ-স্বরূপ দুএকটি উদাহরণ দিয়ে বুঝানো।

    এক. জিহাদ মুবাহ বা মুস্তাহাব হওয়ার কিছু সূরত:

    ক. জমহুর ফকীহদের মতে বছরে দুএকবার ইকদামি জিহাদ করা ফরয। এরচেয়ে অধিকবার জিহাদ করা ফরয নয়; বরং মুস্তাহাব। তথাপি একাধিক বার জিহাদ করা হলে তা ফরয হিসেবে আদায় হবে।

    খ. যথেষ্ট সংখ্যক লোক জিহাদ করলে বাকিদের উপর আর ফরয দায়িত্ব থাকে না। এমতাবস্থায় বাকিদের জন্য জিহাদে শরিক হওয়া মুস্তাহাব। তবে সে যখন শরিক হবে, তার জিহাদও ফরয জিহাদ হিসেবে আদায় হবে।

    গ. মহিলা, গোলাম ও জিহাদ করতে অক্ষম ব্যক্তিদের উপর জিহাদ করা ফরয নয়। তথাপি তারা জিহাদ করলে ফরয হিসেবে আদায় হবে। সুতরাং কখনো যদি একদল গোলাম মিলে দারুল হারবে প্রবেশ করে জিহাদ করে, তখন তাদের জিহাদের দ্বারা বাকিদের উপর থেকে ফরয দায়িত্ব আদায় হয়ে যাবে।

    ঘ. আল্লাহর দীন বিজয় করা কিংবা কুফুরের দাপট খর্ব করার নিয়ত ছাড়া শুধু গনিমত অর্জনের উদ্দেশ্যে জিহাদ করা জায়েয; হারাম বা মাকরুহ নয়। তবে এর দ্বারা ফরয আদায় হয়ে যাবে।

    দুই. জিহাদ হারাম বা মাকরুহ হওয়ার কিছু সূরত:

    ক. কাফেরদের কাছে আগে থেকে ইসলামের দাওয়াত না পৌঁছে থাকলে, দাওয়াত না দিয়ে জিহাদ শুরু করা হারাম।

    খ. মুসলিমদের শক্তি ও সামর্থ এতটা কম যে, জিহাদ করতে গেলে সামগ্রিকভাবে ধ্বংস হওয়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে, এমতাবস্থায় জিহাদ শুরু করা নাজায়েয। তবে তা সত্বেও জিহাদ করলে ফরয হিসেবে আদায় হবে।

    উল্লেখ্য, উক্ত আলোচনা হানাফী উসূল অনুযায়ী করা হয়েছে। অন্যথায় অন্যান্য মাযহাব অনুযায়ী জিহাদ মৌলিকভাবেও মুস্তাহাব, মুবাহ; এমনকি মাকরুহ ও হারাম হতে পারে।
    -আল-জিহাদ ওয়াল কিতাল: ২/৯০৯, ৯১৯, ৯২৯, ৯৩৯ (দারুল বায়ারিক)

    ইমাম আবু বকর জাসসাস রহ. (৩৭০ হি.) বলেন,
    ومتى قام الذين في وجه العدو بفرض الجهاد، واستغنوا بأنفسهم عمن وراءهم فليس على من وراءهم فرض الجهاد إلا أن يشاء من شاء منهم الخروج للقتال فيكون فاعلا للفرض، وإن كان معذورا في القعود بديا لأن الجهاد فرض على الكفاية، ومتى قام به بعضهم سقط عن الباقين.اهـــ -أحكام القرآن للجصاص (3/ 145) ط العلمية














    “যখন শত্রুমুখে অবস্থানকারী মুজাহিদরা জিহাদের ফরযিয়ত যথাযথভাবে আদায় করার দ্বারা অন্য মুসলিমদের থেকে অমুখাপেক্ষি হয়ে যাবেন, তখন অন্যদের উপর আর জিহাদ করা ফরয
    থাকে না। তবে (ফরয না হওয়া সত্বেও) কেউ জিহাদের বের হতে চাইলে যেতে পারবে। এমতাবস্থায় সে ফরয জিহাদ আদায়কারী হবে। যদিও প্রথমে তার জন্য জিহাদে বের না হয়ে বসে থাকার সুযোগ ছিল। কেননা জিহাদ হচ্ছে কেফায়ার ভিত্তিতে ফরয। যখন কিছু সংখ্যক লোক তা যথাযথভাবে আদায় করবে, বাকিদের পক্ষ থেকে আদায় হবে।”
    –আহকামুল কুরআন: ৩/১৪৫ (ইলমিয়্যাহ)
    [1] বিশেষ জ্ঞাতব্য, কোনো ফরয আমল হারাম বা মাকরুহ পদ্ধতিতে আদায় করার দ্বারা তখনই তা ফরয হিসেবে আদায় আদায় হবে; যখন উক্ত আমল সহীহ হওয়ার জন্য উক্ত হারাম বা মকরুহ না থাকা শর্ত না হবে। অন্যথায় যদি কোনো আমল সহীহ হওয়ার জন্য উক্ত হারাম বা মাকরুহ না থাকা শর্ত হয়, তাহলে তা দ্বারা ফরয আদায় হবে না। যেমন, হায়েয ও নেফাস অবস্থায় রোযা রাখা নাজায়েয। সাথে সাথে রোযা সহীহ হওয়ার জন্য হায়েয ও নেফাস না হওয়া শর্ত। তাই কেউ উক্ত অবস্থায় রোযা রাখলে তা আদায় হবে না। তবে জিহাদের এমন কোনো শর্ত নেই, যা জিহাদ সহীহ হওয়ার জন্য শর্ত। সামনে এর আলোচনা আসছে ইনশাআল্লাহ।

    আগের পর্ব:
    ফিকহুল জিহাদ; দশম পর্ব ➤ফরযে কেফায়ার অর্থ এবং জিহাদ অস্বীকারকারীর বিধান:​
    https://dawahilallah.com/forum/%E0%A...A6%BE%E0%A6%A8
    Last edited by Munshi Abdur Rahman; 10 hours ago.
Working...
X