মাল দ্বারা জিহাদের বিধান:
কুরআন ও হাদীসে জান দ্বারা জিহাদের সাথে মাল দ্বারাও জিহাদ করার আদেশ করা হয়েছে।
আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন,
“তোমরা হালকা ও ভারি অবস্থায় জিহাদে বের হয়ে যাও এবং তোমাদের মাল ও জান দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করো। এটি তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা জানতে।” –সূরা তাওবা: ৪১
হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,
“আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা তোমাদের মাল, জান ও যবান দ্বারা মুশরিকদের সাথে জিহাদ করো।” -সুনানে আবু দাউদ: ২৫০৪; মুসনাদে আহমদ: ১২২৪৬। হাদীস সহীহ।
বরং আল্লাহ তাআলা জিহাদে দান না করাকে নিজেদের ধ্বংস টেনে আনার কারণ হিসেবে উল্লেখ করে এরশাদ করেন,
“আর আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করো এবং নিজেদের জীবনকে ধ্বংসের মুখে ফেলে দিও না। আর মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করো। নিশ্চয় আল্লাহ অনুগ্রহকারীদেরকে ভালবাসেন।” –সূরা বাকারা: ১৯৫
এ ছাড়াও আরো একাধিক আয়াত ও হাদীসে জান দ্বারা জিহাদের সাথে মাল দ্বারা জিহাদের কথা উল্লেখ হয়েছে। বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রে জানের আগে মালের জিহাদের কথা উল্লেখ হয়েছে। এর অন্যতম কারণ হিসেবে বলা হয়ে থাকে, জান দ্বারা জিহাদের তুলনায় মাল দ্বারা জিহাদের গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা, জান দ্বারা জিহাদের সময় ও পরিধি সীমিত। পক্ষান্তরে মাল দ্বারা জিহাদের পরিধি অনেক বিস্তৃত। জিহাদের প্রস্তুতি গ্রহণ থেকে শুরু করে জিহাদ করার সকল প্রকার অস্ত্র-অশ্ব মালের উপর নির্ভরশীল। তাই মাল ছাড়া জিহাদ একেবারে অকার্যকর। এ জন্য মাল দ্বারা জিহাদের উপর অধিক গুরোত্বরূপ করতেই মালের কথা আগে উল্লেখ করা হয়েছে।[1]
সুতরাং জান দ্বারা জিহাদ করা যেমন ফরয, তদ্রুপ মাল দ্বারা জিহাদ করাও ফরয। উভয়টির বিধান এক ও অভিন্ন। জান দ্বারা জিহাদ করার মত মাল দ্বারা জিহাদ করাও স্বাভাবিক অবস্থায় ফরযে কেফায়া এবং বিশেষ পরিস্থিতিতে ফরযে আইন।
ইমাম জাসসাস রহ. (৩৭০ হি.) বলেন,
“আল্লাহ তাআলার বাণী- ‘আর তোমরা তোমাদের মাল ও জান দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করো’ এখানে তিনি মাল ও জান উভয়টি দিয়ে জিহাদ করা ফরয করেছেন। যার মাল আছে, কিন্তু সে অসুস্থ, পঙ্গু বা দুর্বল হওয়ার কারণে যুদ্ধ করার সামর্থ্য রাখে না, তার জন্য মাল দিয়ে জিহাদ করা ফরয। সে অন্য এমন কাউকে মাল দিবে, যে এ মাল দিয়ে জিহাদ করবে। যেমননিভাবে, যার শারীরিক শক্তি-সামর্থ্য থাকার কারণে যুদ্ধ করতে সক্ষম, সে সম্পদশালী এবং প্রাচুর্য্যের অধিকারী না হলেও, জিহাদে পৌঁছার মতো খরচের ব্যবস্থা হয়ে গেলে তার জন্য জান দিয়ে যুদ্ধ করা ফরয। আর যে যুদ্ধ করতে সক্ষম এবং সম্পদ ও প্রাচুর্যের অধিকারী, তার জন্য জান ও মাল উভয়টি দিয়ে জিহাদ করা ফরয। আর যে শারীরিকভাবে অক্ষম এবং তার মালও নেই, তার জন্য ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের কল্যাণকামিতা’র মাধ্যমে জিহাদে শরীক হওয়া আবশ্যক।” -আহকামুল কুরআন: ৩/১৫১ (ইলমিয়্যাহ)
আরো দেখুন: ফাতহুল কাদির: ৫/৪৪৩ (ইলমিয়্যাহ); আল-বাহরুর রায়েক: ৫/124 (ইলমিয়্যাহ); ফাতাওয়ায়ে তাতারখানিয়া: ৭/৪৭ (যাকারিয়া); মাজমূউল ফাতাওয়া: ২৮/৮৭ (মাজমাউল মালিক ফাহাদ)
মাল দ্বারা জিহাদের মধ্যে জিহাদের জন্য অস্ত্র ক্রয়, যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ, জিহাদের প্রস্তুতি এবং মুজাহিদদের খরচপাতি—সবই এর অন্তর্ভুক্ত। -দাওয়াতে জিহাদ: ২৫০
উল্লেখ্য, জিহাদ বিল মাল এবং যাকাত প্রত্যেকটি স্বতন্ত্র ফরয। একটি দ্বারা অন্যটির ফরযিয়াত আদায় হবে না। যেহেতু যাকাতের খাতসমূহের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আল্লাহর রাস্তার মুজাহিদ, তাই মুজাহিদকে যাকাতের অর্থ দিলে যাকাত আদায় হয়ে যাবে। তবে এর দ্বারা সম্পদের জিহাদের দায়মুক্তি হবে না। এর জন্য আলাদাভাবে দান করতে হবে। হ্যাঁ, অন্যান্য খাতের তুলনায় জিহাদে অর্থের প্রয়োজন বেশি হওয়ার কারণে, এখানে যাকাত দিলে সওয়াব বেশি হওয়ার আশা করা যায়।
[1] এ ছাড়াও আরো কিছু কারণ হতে পারে। যেমন,
এক. জিহাদের প্রস্তুতি শুরু হয় মাল দ্বারা। জিহাদ করার ক্ষেত্রে যেহেতু জানের আগে মালের প্রয়োজন পড়ে। তাই আল্লাহ তাআলাও জিহাদের প্রতি উদ্বোধ্য করার লক্ষ্যে জানের আগে মালের কথা উল্লেখ করেছেন। -তাফসীরে ইবনে আতিয়্যাহ: ৩/৩৭ (ইলমিয়্যাহ)
দুই. জান দ্বারা জিহাদের উপর সবাই সক্ষম নয়; যেমন, নারী, বৃদ্ধ ও জিহাদ করতে অক্ষম এমন ব্যক্তি। কিন্তু মাল দ্বারা জিহাদ করতে সবাই সক্ষম। এজন্য মাল দ্বারা জিহাদকে আগে উল্লেখ করা হয়েছে। -দাওয়াতে জিহাদ: ৪৪, ২৫০,২৫৫
আগের পর্ব:
ফিকহুল জিহাদ; পর্ব ১১ ➤ জিহাদ কখনো মুবাহ, মুস্তাহাব, হারাম বা মাকরুহ হতে পারে?
- https://dawahilallah.com/forum/%E0%A...A6%B0%E0%A7%87
কুরআন ও হাদীসে জান দ্বারা জিহাদের সাথে মাল দ্বারাও জিহাদ করার আদেশ করা হয়েছে।
আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন,
انْفِرُوا خِفَافًا وَثِقَالًا وَجَاهِدُوا بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنْفُسِكُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ -سورة التوبة: 41
“তোমরা হালকা ও ভারি অবস্থায় জিহাদে বের হয়ে যাও এবং তোমাদের মাল ও জান দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করো। এটি তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা জানতে।” –সূরা তাওবা: ৪১
হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,
عَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: "جَاهِدُوا الْمُشْرِكِينَ بِأَمْوَالِكُمْ، وَأَنْفُسِكُمْ، وَأَلْسِنَتِكُمْ". –رواه أبو داود (2504) وأحمد (12246). وقال النووي رحمه الله في رياض الصالحين ط الرسالة (ص: 382): إسناده صحيح.اهـــ وكذا صححه ابن دقيق العيد رحمه الله في الاقتراح ط العلمية (ص: 114) على شرط مسلم.
“আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা তোমাদের মাল, জান ও যবান দ্বারা মুশরিকদের সাথে জিহাদ করো।” -সুনানে আবু দাউদ: ২৫০৪; মুসনাদে আহমদ: ১২২৪৬। হাদীস সহীহ।
বরং আল্লাহ তাআলা জিহাদে দান না করাকে নিজেদের ধ্বংস টেনে আনার কারণ হিসেবে উল্লেখ করে এরশাদ করেন,
وَأَنْفِقُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ وَأَحْسِنُوا إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ -سورة البقرة: 195
“আর আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করো এবং নিজেদের জীবনকে ধ্বংসের মুখে ফেলে দিও না। আর মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করো। নিশ্চয় আল্লাহ অনুগ্রহকারীদেরকে ভালবাসেন।” –সূরা বাকারা: ১৯৫
এ ছাড়াও আরো একাধিক আয়াত ও হাদীসে জান দ্বারা জিহাদের সাথে মাল দ্বারা জিহাদের কথা উল্লেখ হয়েছে। বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রে জানের আগে মালের জিহাদের কথা উল্লেখ হয়েছে। এর অন্যতম কারণ হিসেবে বলা হয়ে থাকে, জান দ্বারা জিহাদের তুলনায় মাল দ্বারা জিহাদের গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা, জান দ্বারা জিহাদের সময় ও পরিধি সীমিত। পক্ষান্তরে মাল দ্বারা জিহাদের পরিধি অনেক বিস্তৃত। জিহাদের প্রস্তুতি গ্রহণ থেকে শুরু করে জিহাদ করার সকল প্রকার অস্ত্র-অশ্ব মালের উপর নির্ভরশীল। তাই মাল ছাড়া জিহাদ একেবারে অকার্যকর। এ জন্য মাল দ্বারা জিহাদের উপর অধিক গুরোত্বরূপ করতেই মালের কথা আগে উল্লেখ করা হয়েছে।[1]
সুতরাং জান দ্বারা জিহাদ করা যেমন ফরয, তদ্রুপ মাল দ্বারা জিহাদ করাও ফরয। উভয়টির বিধান এক ও অভিন্ন। জান দ্বারা জিহাদ করার মত মাল দ্বারা জিহাদ করাও স্বাভাবিক অবস্থায় ফরযে কেফায়া এবং বিশেষ পরিস্থিতিতে ফরযে আইন।
ইমাম জাসসাস রহ. (৩৭০ হি.) বলেন,
وقوله: وجاهدوا بأموالكم وأنفسكم في سبيل الله فأوجب فرض الجهاد بالمال والنفس جميعا، فمن كان له مال وهو مريض أو مقعد أو ضعيف لا يصلح للقتال فعليه الجهاد بماله بأن يعطيه غيره فيغزو به، كما أن من له قوة وجلد، وأمكنه الجهاد بنفسه كان عليه الجهاد بنفسه وإن لم يكن ذا مال ويسار بعد أن يجد ما يبلغه، ومن قوي على القتال وله مال فعليه الجهاد بالنفس والمال، ومن كان عاجزا بنفسه معدما فعليه الجهاد بالنصح لله ولرسوله.اهـــ -أحكام القرآن للجصاص (3/ 151) ط. العلمية
“আল্লাহ তাআলার বাণী- ‘আর তোমরা তোমাদের মাল ও জান দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করো’ এখানে তিনি মাল ও জান উভয়টি দিয়ে জিহাদ করা ফরয করেছেন। যার মাল আছে, কিন্তু সে অসুস্থ, পঙ্গু বা দুর্বল হওয়ার কারণে যুদ্ধ করার সামর্থ্য রাখে না, তার জন্য মাল দিয়ে জিহাদ করা ফরয। সে অন্য এমন কাউকে মাল দিবে, যে এ মাল দিয়ে জিহাদ করবে। যেমননিভাবে, যার শারীরিক শক্তি-সামর্থ্য থাকার কারণে যুদ্ধ করতে সক্ষম, সে সম্পদশালী এবং প্রাচুর্য্যের অধিকারী না হলেও, জিহাদে পৌঁছার মতো খরচের ব্যবস্থা হয়ে গেলে তার জন্য জান দিয়ে যুদ্ধ করা ফরয। আর যে যুদ্ধ করতে সক্ষম এবং সম্পদ ও প্রাচুর্যের অধিকারী, তার জন্য জান ও মাল উভয়টি দিয়ে জিহাদ করা ফরয। আর যে শারীরিকভাবে অক্ষম এবং তার মালও নেই, তার জন্য ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের কল্যাণকামিতা’র মাধ্যমে জিহাদে শরীক হওয়া আবশ্যক।” -আহকামুল কুরআন: ৩/১৫১ (ইলমিয়্যাহ)
আরো দেখুন: ফাতহুল কাদির: ৫/৪৪৩ (ইলমিয়্যাহ); আল-বাহরুর রায়েক: ৫/124 (ইলমিয়্যাহ); ফাতাওয়ায়ে তাতারখানিয়া: ৭/৪৭ (যাকারিয়া); মাজমূউল ফাতাওয়া: ২৮/৮৭ (মাজমাউল মালিক ফাহাদ)
মাল দ্বারা জিহাদের মধ্যে জিহাদের জন্য অস্ত্র ক্রয়, যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ, জিহাদের প্রস্তুতি এবং মুজাহিদদের খরচপাতি—সবই এর অন্তর্ভুক্ত। -দাওয়াতে জিহাদ: ২৫০
উল্লেখ্য, জিহাদ বিল মাল এবং যাকাত প্রত্যেকটি স্বতন্ত্র ফরয। একটি দ্বারা অন্যটির ফরযিয়াত আদায় হবে না। যেহেতু যাকাতের খাতসমূহের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আল্লাহর রাস্তার মুজাহিদ, তাই মুজাহিদকে যাকাতের অর্থ দিলে যাকাত আদায় হয়ে যাবে। তবে এর দ্বারা সম্পদের জিহাদের দায়মুক্তি হবে না। এর জন্য আলাদাভাবে দান করতে হবে। হ্যাঁ, অন্যান্য খাতের তুলনায় জিহাদে অর্থের প্রয়োজন বেশি হওয়ার কারণে, এখানে যাকাত দিলে সওয়াব বেশি হওয়ার আশা করা যায়।
[1] এ ছাড়াও আরো কিছু কারণ হতে পারে। যেমন,
এক. জিহাদের প্রস্তুতি শুরু হয় মাল দ্বারা। জিহাদ করার ক্ষেত্রে যেহেতু জানের আগে মালের প্রয়োজন পড়ে। তাই আল্লাহ তাআলাও জিহাদের প্রতি উদ্বোধ্য করার লক্ষ্যে জানের আগে মালের কথা উল্লেখ করেছেন। -তাফসীরে ইবনে আতিয়্যাহ: ৩/৩৭ (ইলমিয়্যাহ)
দুই. জান দ্বারা জিহাদের উপর সবাই সক্ষম নয়; যেমন, নারী, বৃদ্ধ ও জিহাদ করতে অক্ষম এমন ব্যক্তি। কিন্তু মাল দ্বারা জিহাদ করতে সবাই সক্ষম। এজন্য মাল দ্বারা জিহাদকে আগে উল্লেখ করা হয়েছে। -দাওয়াতে জিহাদ: ৪৪, ২৫০,২৫৫
আগের পর্ব:
ফিকহুল জিহাদ; পর্ব ১১ ➤ জিহাদ কখনো মুবাহ, মুস্তাহাব, হারাম বা মাকরুহ হতে পারে?
- https://dawahilallah.com/forum/%E0%A...A6%B0%E0%A7%87