মূল্যবোধ সংক্রান্ত আলোচনা অত্যন্ত জটিল একটি বিষয় এবং প্রায় দর্শনকেন্দ্রিকতা আলোচনায় চলে যায়।
তাই জটিল দার্শনিক পদ্ধতির পরিবর্তে আমরা অভিজ্ঞতা ও ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে আমেরিকার নৈতিক মুল্যবোধের পতন নিয়ে আলোচনা করবো।
শুরুতেই আমাদের জানা দরকার, আমেরিকা মুলত দুইটি নীতির উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল।
এক, কট্টর ধর্মান্ধতা; দুই, নিছক স্বার্থকেন্দ্রিক সুবিধাবাদ।
ধর্মীয় মূল্যবোধ আমেরিকার নির্দিষ্ট কয়েকটি রাজ্যে ও গোষ্ঠীতে কেন্দ্রীভূত ছিল। ঠিক একইভাবে সুবিধাবাদী মূল্যবোধও নির্দিষ্ট কয়েকটি রাজ্য ও গোষ্ঠীর মাঝে সীমাবদ্ধ ছিল।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত আমেরিকার নীতিদ্বয়ের মাঝে কার্যকরভাবে ভারসাম্য বজায় ছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকা তার ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থা থেকে সরে এসে ধীরে ধীরে "ধর্মনিরপেক্ষ" রাষ্ট্র হিসেবে আত্নপ্রকাশের চেষ্টা করে। তখন থেকেই আমেরিকান পলিসিগুলো তার ঐতিহ্যবাহী নৈতিক মূল্যবোধ থেকে পৃথক হতে শুরু করে। আর আজকে আমেরিকান নীতি ও নৈতিকতার মাঝে বিশাল ব্যবধান তৈরি হয়েছে।
তারপর, আমেরিকার জনগণ বর্তমান তথ্যবিপ্লব অবধি অত্যন্ত সচেনতার সাথে তাদের মূল্যবোধকে আকড়ে রেখেছিল। সাধারণত বুদ্ধিজীবীরা সমাজের মূল্যবোধের পতনের আলামত অনেক আগে থেকেই উপলব্ধি করতে পারেন এবং সচেতন হয়ে উঠেন।
তাই আমরা লক্ষ্য করতে পারি অর্ধ শতাব্দী আগে থেকেই বিভিন্ন কাল্পনিক রচনায়, রম্যগল্পে এবং পরিবর্তিতে দার্শনিক ও রাজনৈতিক ভাষ্যগ্রন্থে নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় নিয়ে হতাশাজনক পতনের প্রাম্ভিকতা নিয়ে বিভিন্ন লেখা প্রচারিত ও আলোচিত হতে থাকে।
আমেরিকার নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে অস্ত্র ব্যবসায়ীদের কী পরিমাণ প্রভাব ছিল তা আমেরিকার প্রেসিডেন্ট কেনেডির হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে সহজেই প্রমাণিত হয়। এই হত্যাকাণ্ডের পর থেকে আমেরিকান সরকারের ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। এবং আমেরিকান জনগণ আমেরিকাকে গণতান্ত্রিক নয় বরং "সামরিক সাম্রাজ্য" হিসাবে আখ্যায়িত করে।
নোয়াম চমস্কি তার "হোয়াট আংকেল স্যাম রিয়েলি ওয়ান্টস" বইয়ে এই বিষয়টি পরিষ্কার করেছেন যে, আমেরিকার বর্তমান পলিসিসমূহ ও তার মূল্যবোধ বোধগম্যভাবেই একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন। এই বইয়ে তিনি আরো বলেছেন, বিশ্বের কোন দেশ আমেরিকান স্বার্থ রক্ষা বা পরিবেশন করা থেকে বিরত থাকার প্রচেষ্টা করলে বা শুধুমাত্র চিন্তা করলেও তাদের আমেরিকার প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয় এবং প্রায়ই এই প্রতিরোধগুলো সামরিক আগ্রাসনের রূপ নেয়।
তিনি উল্লেখিত বইয়ের আরো দেখিয়েছেন যে, বিশ্বের প্রায় অর্ধেক রাষ্ট্র আমেরিকার একটি নীতি বাস্তবায়নের জন্য একত্রিত হয়েছিল। তার তা হলো "কমিউনিজমের পতন"। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করি কমিউনিজমের পতনের সাথে সাথে আমেরিকার দাবী বা নীতি পরিবর্তন হয়ে ইসলাম পতনের সংগ্রামে রূপ নেয়।
অর্থাৎ আমেরিকান শুধুমাত্র তার স্বার্থ উদ্ধারের জন্য পর পর দুইবার গোটা বিশ্বকে সারা সর্বব্যাপী যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়। কমিউনিসম পতনের পর আমেরিকার স্লোগান হয় "সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ"। এখানে সন্ত্রাসী শব্দের অর্থ হলো মুসলিম, আর ইসলাম হলো সন্ত্রাসবাদ।
ইসলামবিরোধী ক্রুসেডে জায়নিস্টদের সাথে তাদের জোটবদ্ধতা সকলের সামনে দিনের আলোর ন্যায় সুস্পষ্ট হয়েছিল।
এই জোটবদ্ধতার মাধ্যমে পশ্চিমা সমাজে নৈতিক মূল্যবোধের অধঃপতন ব্যাপকাকারে শুরু হয়। ইসলামের বিরুদ্ধে সামগ্রিক যুদ্ধের ফলাফল হিসেবে আমেরিকানদের নৈতিক বিপর্যয় নেমে আসে পারিবারিক জীবনে।
বাড়তে থাকে পারিবারিক অস্থিরতা, তালাক, আত্নহত্যা আর জারজ সন্তানের জন্মের হার। ব্যাপক পতন ঘটে সামাজিক জীবন ও সাধারণ জনগণের আচরণের ক্ষেত্রেও।
নৈতিকতার অবক্ষয় দেখা দেয় রাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় ব্যাক্তি (যেমনঃ প্রেসিডেন্ট, গভর্ণর, মেয়র) থেকে শুরু করে গীর্জার পাদ্রীদের পর্যন্ত। বর্তমান প্রজন্মের অবস্থা আরো করুণ। তারা ব্যস্ত আছে তথ্যবিপ্লবের নামে এমন এক বিপ্লবে, যার না কোন বিজয় আছে আর না কোন শেষ।
পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, মূল্যবোধের কথা বিবেচনা করলে বর্তমানে তা আমেরিকার আগ্রাসন নীতি নিম্নমুখী অবস্থানে রয়েছে।
আর আমেরিকান সমাজ এক ভয়াবহ নৈতিক ধসের দিকে অগ্রসর হয়েছে। আমেরিকাবিদ্বেষী কোনো কঠোর সমালোচনাকারী শত্রুও বিলিয়ন বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করে বিশ্ব দরবারে আমেরিকার ভাবমূর্তি ও খ্যাতি ততটা নষ্ট করতে পারতো না, যতটা না আমেরিকা ইতিমধ্যে নিজেই নষ্ট করেছে।
তাই জটিল দার্শনিক পদ্ধতির পরিবর্তে আমরা অভিজ্ঞতা ও ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে আমেরিকার নৈতিক মুল্যবোধের পতন নিয়ে আলোচনা করবো।
শুরুতেই আমাদের জানা দরকার, আমেরিকা মুলত দুইটি নীতির উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল।
এক, কট্টর ধর্মান্ধতা; দুই, নিছক স্বার্থকেন্দ্রিক সুবিধাবাদ।
ধর্মীয় মূল্যবোধ আমেরিকার নির্দিষ্ট কয়েকটি রাজ্যে ও গোষ্ঠীতে কেন্দ্রীভূত ছিল। ঠিক একইভাবে সুবিধাবাদী মূল্যবোধও নির্দিষ্ট কয়েকটি রাজ্য ও গোষ্ঠীর মাঝে সীমাবদ্ধ ছিল।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত আমেরিকার নীতিদ্বয়ের মাঝে কার্যকরভাবে ভারসাম্য বজায় ছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকা তার ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থা থেকে সরে এসে ধীরে ধীরে "ধর্মনিরপেক্ষ" রাষ্ট্র হিসেবে আত্নপ্রকাশের চেষ্টা করে। তখন থেকেই আমেরিকান পলিসিগুলো তার ঐতিহ্যবাহী নৈতিক মূল্যবোধ থেকে পৃথক হতে শুরু করে। আর আজকে আমেরিকান নীতি ও নৈতিকতার মাঝে বিশাল ব্যবধান তৈরি হয়েছে।
তারপর, আমেরিকার জনগণ বর্তমান তথ্যবিপ্লব অবধি অত্যন্ত সচেনতার সাথে তাদের মূল্যবোধকে আকড়ে রেখেছিল। সাধারণত বুদ্ধিজীবীরা সমাজের মূল্যবোধের পতনের আলামত অনেক আগে থেকেই উপলব্ধি করতে পারেন এবং সচেতন হয়ে উঠেন।
তাই আমরা লক্ষ্য করতে পারি অর্ধ শতাব্দী আগে থেকেই বিভিন্ন কাল্পনিক রচনায়, রম্যগল্পে এবং পরিবর্তিতে দার্শনিক ও রাজনৈতিক ভাষ্যগ্রন্থে নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় নিয়ে হতাশাজনক পতনের প্রাম্ভিকতা নিয়ে বিভিন্ন লেখা প্রচারিত ও আলোচিত হতে থাকে।
আমেরিকার নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে অস্ত্র ব্যবসায়ীদের কী পরিমাণ প্রভাব ছিল তা আমেরিকার প্রেসিডেন্ট কেনেডির হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে সহজেই প্রমাণিত হয়। এই হত্যাকাণ্ডের পর থেকে আমেরিকান সরকারের ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। এবং আমেরিকান জনগণ আমেরিকাকে গণতান্ত্রিক নয় বরং "সামরিক সাম্রাজ্য" হিসাবে আখ্যায়িত করে।
নোয়াম চমস্কি তার "হোয়াট আংকেল স্যাম রিয়েলি ওয়ান্টস" বইয়ে এই বিষয়টি পরিষ্কার করেছেন যে, আমেরিকার বর্তমান পলিসিসমূহ ও তার মূল্যবোধ বোধগম্যভাবেই একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন। এই বইয়ে তিনি আরো বলেছেন, বিশ্বের কোন দেশ আমেরিকান স্বার্থ রক্ষা বা পরিবেশন করা থেকে বিরত থাকার প্রচেষ্টা করলে বা শুধুমাত্র চিন্তা করলেও তাদের আমেরিকার প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয় এবং প্রায়ই এই প্রতিরোধগুলো সামরিক আগ্রাসনের রূপ নেয়।
তিনি উল্লেখিত বইয়ের আরো দেখিয়েছেন যে, বিশ্বের প্রায় অর্ধেক রাষ্ট্র আমেরিকার একটি নীতি বাস্তবায়নের জন্য একত্রিত হয়েছিল। তার তা হলো "কমিউনিজমের পতন"। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করি কমিউনিজমের পতনের সাথে সাথে আমেরিকার দাবী বা নীতি পরিবর্তন হয়ে ইসলাম পতনের সংগ্রামে রূপ নেয়।
অর্থাৎ আমেরিকান শুধুমাত্র তার স্বার্থ উদ্ধারের জন্য পর পর দুইবার গোটা বিশ্বকে সারা সর্বব্যাপী যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়। কমিউনিসম পতনের পর আমেরিকার স্লোগান হয় "সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ"। এখানে সন্ত্রাসী শব্দের অর্থ হলো মুসলিম, আর ইসলাম হলো সন্ত্রাসবাদ।
ইসলামবিরোধী ক্রুসেডে জায়নিস্টদের সাথে তাদের জোটবদ্ধতা সকলের সামনে দিনের আলোর ন্যায় সুস্পষ্ট হয়েছিল।
এই জোটবদ্ধতার মাধ্যমে পশ্চিমা সমাজে নৈতিক মূল্যবোধের অধঃপতন ব্যাপকাকারে শুরু হয়। ইসলামের বিরুদ্ধে সামগ্রিক যুদ্ধের ফলাফল হিসেবে আমেরিকানদের নৈতিক বিপর্যয় নেমে আসে পারিবারিক জীবনে।
বাড়তে থাকে পারিবারিক অস্থিরতা, তালাক, আত্নহত্যা আর জারজ সন্তানের জন্মের হার। ব্যাপক পতন ঘটে সামাজিক জীবন ও সাধারণ জনগণের আচরণের ক্ষেত্রেও।
নৈতিকতার অবক্ষয় দেখা দেয় রাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় ব্যাক্তি (যেমনঃ প্রেসিডেন্ট, গভর্ণর, মেয়র) থেকে শুরু করে গীর্জার পাদ্রীদের পর্যন্ত। বর্তমান প্রজন্মের অবস্থা আরো করুণ। তারা ব্যস্ত আছে তথ্যবিপ্লবের নামে এমন এক বিপ্লবে, যার না কোন বিজয় আছে আর না কোন শেষ।
পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, মূল্যবোধের কথা বিবেচনা করলে বর্তমানে তা আমেরিকার আগ্রাসন নীতি নিম্নমুখী অবস্থানে রয়েছে।
আর আমেরিকান সমাজ এক ভয়াবহ নৈতিক ধসের দিকে অগ্রসর হয়েছে। আমেরিকাবিদ্বেষী কোনো কঠোর সমালোচনাকারী শত্রুও বিলিয়ন বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করে বিশ্ব দরবারে আমেরিকার ভাবমূর্তি ও খ্যাতি ততটা নষ্ট করতে পারতো না, যতটা না আমেরিকা ইতিমধ্যে নিজেই নষ্ট করেছে।
Comment