ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আমরা কোন মানুষের পতনের পিছে একাধিক কারণ দেখতে পাবো। কিন্তু মূল যে সকল কারণ আমরা দেখতে পায়; তার মাঝে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে "স্বেচ্ছাচারিতা"।
মানুষের মাঝে স্বেচ্ছাচারীতা শুধু মাত্র তখনি দেখা দেয় যখন সে তার নিজের ব্যাপারে গাফেল হতে শুরু করে। নিজের মুহাসাবা থেকে নিজেকে বিরত রাখে। যা কখনই আমাদের জন্য কাম্য না। কারণ আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জাত বলেছেন,
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰہَ وَ لۡتَنۡظُرۡ نَفۡسٌ مَّا قَدَّمَتۡ لِغَدٍ
অর্থঃ হে ঈমানদারগণ ! তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর ; এবং প্ৰত্যেকের উচিত চিন্তা করে দেখা আগামী কালের জন্য সে কী অগ্রিম পাঠিয়েছে... [সূরা হাশর - ১৮]
وَلۡتَنظُرۡ نَفۡسٞ مَّا قَدَّمَتۡ لِغَدٖۖ -এর মধ্যে ব্যক্তিকে প্রতিক্ষিত আগামী দিন তথা পরকালোর জন্য কী আমল করা হয়েছে, সে বিষয়ে আত্মসমালোচনা করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন:
حَاسِبُوا أَنْفُسَكُمْ قَبْلَ أَنْ تُحَاسَبُوا
“তোমরা হিসাবের মুখোমুখি হওয়ার পূর্বেই তোমাদের নিজেদের হিসাব নিজেরা নিয়ে নাও।”
আর যখন রাতের আগমন ঘটত, তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু দোর্রা বা লাঠি দিয়ে তাঁর দু’পায়ে পিটাতেন এবং নিজেকে প্রশ্ন করে বলতেন: তুমি আজকে কী কাজ করেছ?
আর আবূ তালহা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে যখন তাঁর বাগান তাঁর সালাত আদায় করার বিষয়টিকে ভুলিয়ে রাখল, তখন তিনি বাগানের অংশবিশেষ আল্লাহ তা‘আলার উদ্দেশ্যে সাদকা করে দিলেন; সুতরাং তিনি এ কাজটি করেছিলেন শুধু তাঁর আত্মসমালোচনার কারণেই এবং নিজকে তিরস্কার স্বরূপ ও আত্ম-সংশোধনের জন্য।
আহনাফ ইবন কায়েস (রাহিঃ) সম্পর্কে বর্ণিত আছে: তিনি চেরাগের নিকট আসতেন, তারপর তিনি তাঁর আঙুল চেরাগের মধ্যে ধরে রাখতেন ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ না তিনি আগুনের উত্তাপ অনুভব করতেন; অতঃপর তিনি নিজেকে উদ্দেশ্য করে বলতেন: হে হুনায়েফ! অমুক দিন তুমি যে কাজ করেছ, তা করতে তোমাকে কিসে উদ্বুদ্ধ করেছে? অমুক দিন তুমি যে কাজ করেছ, তা করতে তোমাকে কিসে উত্তেজিত করেছে?
সুবহানআল্লাহ!!! এই আমাদের আকাবীর, আমাদের রাহবার।
নাফস বা মন সহজাতভাবেই অত্যাচারী ও অজ্ঞ-মূর্খ (যালিম ও জাহিল)। ফলে মানুষের মন সদাই অন্যের ও নিজের উপর অত্যাচার করতে চায় এবং নিজের ভাল-মন্দ বিবেচনায় না নিয়ে মূর্খের মত কাজ করে।
আর এই অবস্থা থেকে বাচার এক মাত্র উপায় হচ্ছে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার দয়া ও অনুগ্রহ। আল্লাহ তায়া’লা বলেছেনঃ
...اِنَّ النَّفۡسَ لَاَمَّارَۃٌۢ بِالسُّوۡٓءِ اِلَّا مَا رَحِمَ رَبِّیۡ...
অর্থঃ... নিশ্চয় মানুষের নাফস খারাপ কাজের নির্দেশ দিয়েই থাকে, কিন্তু সে নয়, যার প্রতি আমার রব দয়া করেন...।
এমন ভাবার কোনই অবকাশ নেই যে, কেউ প্রশান্ত মনের অধিকারী হ’লে চিরকালই সে প্রশান্ত মনের অধিকারী থাকবে। আবার কেউ মন্দপ্রবণ মনের অধিকারী হ’লে চিরকালই তার মন মন্দপ্রবণ থাকবে। বরং একসময় তা প্রশান্ত হ’লে অন্য সময় মন্দপ্রবণ হবে, আবার কখনও ভৎর্সনাকারী হবে। বরং একই দিনে, একই ঘণ্টায় তা পরিবর্তিত বা উলটপালট হ’তে পারে। তখন গুণ বিচারে তার মধ্যে কোন মন বিরাজ করছে তা হিসাব করতে হবে।
তাই আমার সম্মানিত ভাইয়েরা, আমাদের উচিত হলো সর্বদা নিজেকে মুহাসাবার মাঝে রাখার। বিশেষ করে সে সকল ভাইদের মুহাসাবা বা আত্নসমালোচনা করা উচিত যাদের হাতে কোন বিষয়ের দ্বায়িত্ব অর্পিত আছে বা যার কতক ভাইয়ের উপর দ্বায়িত্বশীল আছেন। মনে রাখবেন আপনার স্বেচ্ছাচারিতা শুরু মাত্র আপনার পতনের কারণ হবে এমন কিন্তু নয় বরং আপনার অধীনস্থ ভাইদের জন্য গুণাহের কারণ হয়ে দাড়াতে পারে।
সুতরাং আমার প্রিয় ভাইয়েরা, কাজ করার আগে চিন্তা করুন যে এ কাজে আপনার আমলনামায় নেকী-বদী কোনটা লেখা হবে? লক্ষ্য করুন, আপনার শ্রম-সাধনায় আপনার মন কি আপনার পক্ষে, না বিপক্ষে? সে নিশ্চয়ই সৌভাগ্য অর্জন করবে, যে নিজের হিসাব নিবে, আত্নসমালোচনা করবে। যখনই মন কোন অন্যায় করে বসবে তখনই তাকে গালমন্দ করবে, যখনই কোন ক্ষেত্রে সে একাত্মতা প্রকাশ করবে তখনই তাকে কাছে টেনে নিবে এবং যখনই মন খেয়াল-খুশির লোভে মত্ত হবে তখনই তাকে পরাভূত করবে। আল্লাহর কসম! জীবনে সে সফল হবে।
শায়খ মায়মূন ইবন মিহরান (রাহিঃ) একটি বক্তব্য দিয়ে আলোচনা শেষ করছি, তিনি বলেন,
لاَ يَكُونُ العَبْدُ تَقِيًّا حَتَّى يُحَاسِبَ نَفْسَهُ كَمَا يُحَاسِبُ شَرِيكَهُ مِنْ أَيْنَ مَطْعَمُهُ وَمَلْبَسُهُ.
‘সে অবধি কোনো ব্যক্তি মুত্তাকী বা আল্লাহভীরু হতে পারবে না যাবৎ সে নিজেই নিজের হিসেব নেয় বা মুহাসাবা করে। যেভাবে সে তার সঙ্গীর সঙ্গে হিসেব করে কোথায় তার আহার আর কোথায় তার পোশাক।’
আল্লাহ আমাদের সকলকে স্বেচ্চাচারী হওয়া থেকে রক্ষা করুন এবং মুহাসাবার গুরুত্ব অনুধাবন করে আত্নসমালোচনার মাধ্যমে গুনাহ থেকে নিজের বিরত থাকার তৌফিক দান করুন।
আমীন ইয়া রাব্বাল আলামীন।।
মানুষের মাঝে স্বেচ্ছাচারীতা শুধু মাত্র তখনি দেখা দেয় যখন সে তার নিজের ব্যাপারে গাফেল হতে শুরু করে। নিজের মুহাসাবা থেকে নিজেকে বিরত রাখে। যা কখনই আমাদের জন্য কাম্য না। কারণ আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জাত বলেছেন,
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰہَ وَ لۡتَنۡظُرۡ نَفۡسٌ مَّا قَدَّمَتۡ لِغَدٍ
অর্থঃ হে ঈমানদারগণ ! তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর ; এবং প্ৰত্যেকের উচিত চিন্তা করে দেখা আগামী কালের জন্য সে কী অগ্রিম পাঠিয়েছে... [সূরা হাশর - ১৮]
وَلۡتَنظُرۡ نَفۡسٞ مَّا قَدَّمَتۡ لِغَدٖۖ -এর মধ্যে ব্যক্তিকে প্রতিক্ষিত আগামী দিন তথা পরকালোর জন্য কী আমল করা হয়েছে, সে বিষয়ে আত্মসমালোচনা করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন:
حَاسِبُوا أَنْفُسَكُمْ قَبْلَ أَنْ تُحَاسَبُوا
“তোমরা হিসাবের মুখোমুখি হওয়ার পূর্বেই তোমাদের নিজেদের হিসাব নিজেরা নিয়ে নাও।”
আর যখন রাতের আগমন ঘটত, তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু দোর্রা বা লাঠি দিয়ে তাঁর দু’পায়ে পিটাতেন এবং নিজেকে প্রশ্ন করে বলতেন: তুমি আজকে কী কাজ করেছ?
আর আবূ তালহা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে যখন তাঁর বাগান তাঁর সালাত আদায় করার বিষয়টিকে ভুলিয়ে রাখল, তখন তিনি বাগানের অংশবিশেষ আল্লাহ তা‘আলার উদ্দেশ্যে সাদকা করে দিলেন; সুতরাং তিনি এ কাজটি করেছিলেন শুধু তাঁর আত্মসমালোচনার কারণেই এবং নিজকে তিরস্কার স্বরূপ ও আত্ম-সংশোধনের জন্য।
আহনাফ ইবন কায়েস (রাহিঃ) সম্পর্কে বর্ণিত আছে: তিনি চেরাগের নিকট আসতেন, তারপর তিনি তাঁর আঙুল চেরাগের মধ্যে ধরে রাখতেন ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ না তিনি আগুনের উত্তাপ অনুভব করতেন; অতঃপর তিনি নিজেকে উদ্দেশ্য করে বলতেন: হে হুনায়েফ! অমুক দিন তুমি যে কাজ করেছ, তা করতে তোমাকে কিসে উদ্বুদ্ধ করেছে? অমুক দিন তুমি যে কাজ করেছ, তা করতে তোমাকে কিসে উত্তেজিত করেছে?
সুবহানআল্লাহ!!! এই আমাদের আকাবীর, আমাদের রাহবার।
নাফস বা মন সহজাতভাবেই অত্যাচারী ও অজ্ঞ-মূর্খ (যালিম ও জাহিল)। ফলে মানুষের মন সদাই অন্যের ও নিজের উপর অত্যাচার করতে চায় এবং নিজের ভাল-মন্দ বিবেচনায় না নিয়ে মূর্খের মত কাজ করে।
আর এই অবস্থা থেকে বাচার এক মাত্র উপায় হচ্ছে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার দয়া ও অনুগ্রহ। আল্লাহ তায়া’লা বলেছেনঃ
...اِنَّ النَّفۡسَ لَاَمَّارَۃٌۢ بِالسُّوۡٓءِ اِلَّا مَا رَحِمَ رَبِّیۡ...
অর্থঃ... নিশ্চয় মানুষের নাফস খারাপ কাজের নির্দেশ দিয়েই থাকে, কিন্তু সে নয়, যার প্রতি আমার রব দয়া করেন...।
এমন ভাবার কোনই অবকাশ নেই যে, কেউ প্রশান্ত মনের অধিকারী হ’লে চিরকালই সে প্রশান্ত মনের অধিকারী থাকবে। আবার কেউ মন্দপ্রবণ মনের অধিকারী হ’লে চিরকালই তার মন মন্দপ্রবণ থাকবে। বরং একসময় তা প্রশান্ত হ’লে অন্য সময় মন্দপ্রবণ হবে, আবার কখনও ভৎর্সনাকারী হবে। বরং একই দিনে, একই ঘণ্টায় তা পরিবর্তিত বা উলটপালট হ’তে পারে। তখন গুণ বিচারে তার মধ্যে কোন মন বিরাজ করছে তা হিসাব করতে হবে।
তাই আমার সম্মানিত ভাইয়েরা, আমাদের উচিত হলো সর্বদা নিজেকে মুহাসাবার মাঝে রাখার। বিশেষ করে সে সকল ভাইদের মুহাসাবা বা আত্নসমালোচনা করা উচিত যাদের হাতে কোন বিষয়ের দ্বায়িত্ব অর্পিত আছে বা যার কতক ভাইয়ের উপর দ্বায়িত্বশীল আছেন। মনে রাখবেন আপনার স্বেচ্ছাচারিতা শুরু মাত্র আপনার পতনের কারণ হবে এমন কিন্তু নয় বরং আপনার অধীনস্থ ভাইদের জন্য গুণাহের কারণ হয়ে দাড়াতে পারে।
সুতরাং আমার প্রিয় ভাইয়েরা, কাজ করার আগে চিন্তা করুন যে এ কাজে আপনার আমলনামায় নেকী-বদী কোনটা লেখা হবে? লক্ষ্য করুন, আপনার শ্রম-সাধনায় আপনার মন কি আপনার পক্ষে, না বিপক্ষে? সে নিশ্চয়ই সৌভাগ্য অর্জন করবে, যে নিজের হিসাব নিবে, আত্নসমালোচনা করবে। যখনই মন কোন অন্যায় করে বসবে তখনই তাকে গালমন্দ করবে, যখনই কোন ক্ষেত্রে সে একাত্মতা প্রকাশ করবে তখনই তাকে কাছে টেনে নিবে এবং যখনই মন খেয়াল-খুশির লোভে মত্ত হবে তখনই তাকে পরাভূত করবে। আল্লাহর কসম! জীবনে সে সফল হবে।
শায়খ মায়মূন ইবন মিহরান (রাহিঃ) একটি বক্তব্য দিয়ে আলোচনা শেষ করছি, তিনি বলেন,
لاَ يَكُونُ العَبْدُ تَقِيًّا حَتَّى يُحَاسِبَ نَفْسَهُ كَمَا يُحَاسِبُ شَرِيكَهُ مِنْ أَيْنَ مَطْعَمُهُ وَمَلْبَسُهُ.
‘সে অবধি কোনো ব্যক্তি মুত্তাকী বা আল্লাহভীরু হতে পারবে না যাবৎ সে নিজেই নিজের হিসেব নেয় বা মুহাসাবা করে। যেভাবে সে তার সঙ্গীর সঙ্গে হিসেব করে কোথায় তার আহার আর কোথায় তার পোশাক।’
আল্লাহ আমাদের সকলকে স্বেচ্চাচারী হওয়া থেকে রক্ষা করুন এবং মুহাসাবার গুরুত্ব অনুধাবন করে আত্নসমালোচনার মাধ্যমে গুনাহ থেকে নিজের বিরত থাকার তৌফিক দান করুন।
আমীন ইয়া রাব্বাল আলামীন।।
Comment