Announcement

Collapse
No announcement yet.

পতন থেকে শিক্ষা!!!

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • পতন থেকে শিক্ষা!!!

    আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জাত -এর শাশ্বত বিধান হচ্ছে তিনি জাতি-বর্ণ ও গােষ্ঠীভেদে তাদের কৃতকর্মের কারণে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটের পরিবর্তন করে থাকেন। একসময় যে জাতি থাকে প্রচণ্ড ক্ষমতাধর, ধীরে ধীরে সে জাতি হয়ে পড়ে দুর্বল; আবার পরবর্তীতে একসময় সে জাতি হয়ে ওঠে সবল ও শক্তিশালী। আর এ বিধান মুসলিম-অমুসলিম সকলের ক্ষেত্রেই সমানভাবে প্রযােজ্য। ইতিহাসে বড় অদ্ভুতভাবে ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে; যদিও তার নাম ও ধরন ভিন্ন হয়। তাই তাে দেখা যায়, আমরা যখন হাজার বছরের পুরনাে কোন ইতিহাস পাঠ করি, তখন এমন অনুভূত হয় যে, এই একই ঘটনা যেন এ যুগেই ঘটতে যাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে অতীতের ইতিহাস শুধু অতীত নয়, ভবিষ্যতেরও ইতিহাস!

    মুরাবিতী সাম্রাজ্যের মাত্র ৮৩ বছরের ইতিহাস আন্দালুসের ইতিহাসের এক ক্ষণস্থায়ী গৌরবজ্জ্বল ইতিহাস। ইতিহাসের এই বীরত্বগাথা অধ্যায়ে মহান আল্লাহ তা'য়ালার এ বিধানটি এতটা সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে, যা অন্য কোন ইতিহাসের ক্ষেত্রে হয়নি। মুরাবিতী সাম্রাজ্যের ইতিহাসের প্রথম দিকটা ছিল গৌরবময় উত্থান ও জ্ঞানচর্চার উচ্চ শিখরে আরােহণের, আর শেষ দিকটা ছিল বেদনাবিধুর পতনের। অবশ্য একে পতন বলা যায় না, বলতে হবে পুনরুত্থানের প্রস্তুতি, প্রেরণা ও শিক্ষাগ্রহণ পর্ব।

    ঘটনাপ্রবাহের বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণের জন্য আমরা কিছুক্ষণের জন্য অতীতের সেই সময়কালে ফিরে যাব, যখন মুরাবিতী রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ও প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। ৪৪০ হিজরীতে (১০৪৮ খৃস্টাব্দে) মুরাবিতী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাকাল থেকে ৫০৯ হিজরী (১১১৫ খৃস্টাব্দ) পর্যন্ত একটানা প্রায় সত্তর বছর মুরাবিতী সাম্রাজ্য যেভাবে একটানা বিজয়, সমৃদ্ধি ও উন্নতি, সম্পদ ও গনীমতের মুখ দেখেছিল; পৃথিবীর অবারিত ভূমি ও সম্পদ তাদের হাতে বিজিত হচ্ছিল; গৌরব ও মর্যাদা, ক্ষমতা ও প্রতিপত্তির যে অত্যুচ্চ স্তরে তারা উন্নীত হয়েছিল, এরপর স্বাভাবিক প্রত্যাশিত ঘটনা কী ঘটার ছিল? অতীত পৃথিবীর ইতিহাসের আলােকে এর পরবর্তী স্তরে কুদরতি ফয়সালাই-বা কী হওয়ার কথা?!

    কেউ হয়তাে প্রশ্ন করতে পারেন, আবু বকর বিন ওমর লামতুনী, ইউসুফ বিন তাশফীন ও তার গভর্নরদের মতাে নির্মোহ ক্ষণজন্মা ব্যক্তিদের অর্জিত অব্যাহত বিজয় এবং যাল্লাকার বিজয়ের মতাে নুসরতে ইলাহীর দর্শনের পরও মুসলমানদের এই পতন ও অধঃপতন কি যৌক্তিক ও সংগত?।

    
    তাদের প্রশ্নের উত্তরে আমরা বলব, ইউসুফ বিন তাশফীনের মৃত্যু-পরবর্তী এই পতন ও অধঃপতনে আমরা অবাক হচ্ছি; অথচ নবী কারীম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওয়াফাত-পরবর্তী সময়ে মুসলিম সমাজে ইরতিদাদ ও ধর্মত্যাগের নামে সর্বগ্রাসী যে অধঃপতন সৃষ্টি হয়েছিল, তাকে আমরা অসম্ভব বা বিস্ময়কর ভাবছি না- এটাও কি কম বিস্ময়ের?! নিঃসন্দেহে ওয়াফাতে নবীর পরবর্তী সময়ে সংঘটিত ফিতনার ঘটনা ইউসুফ বিন তাশফীন ও তার মতাে অন্যদের বিদায়-পরবর্তী পতন ঘটনার চেয়ে অনেক বেশি শিক্ষাদায়ক ও প্রভাবক; বিশেষত এ বিষয়টি যদি আমাদের জানা থাকে যে, আমাদের আলােচ্য ঘটনাপ্রবাহ তথা মুরাবিতী সাম্রাজ্যের এই ভাঙন ও পতনের অন্তত সুস্পষ্ট কিছু কার্যকারণ রয়েছে।

    মুরাবিতী শাসনকালের শেষাংশে ভাঙন ও পতনের কয়েকটি কার্যকারণ প্রকাশিত হয়েছিল। সম্পদ ও ভূ-সম্পদের প্রাচুর্য, ইসলামী শিক্ষার বিশুদ্ধ মর্মের অনুপস্থিতি, পাপাচার ও অন্যায় কর্মের আধিক্য, আলিম সমাজের স্থবিরতা ও সমাজবিচ্ছিন্নতা - এই সবকিছুর পর নেমে এসেছিল কারও ভয়াবহ এক সমস্যা- কঠিন অর্থনৈতিক সংকট। ৫৩২ হিজরীতে টানজা নগরীতে (Tangier) প্রবল জলােচ্ছ্বাস ও বন্যা সংঘটিত হয় এবং বাড়ি-ঘর, নিরাপত্তাপ্রাচীর সবকিছু বন্যার তােড়ে ভেসে যায়। প্রাণহানি ঘটে অসংখ্য মানুষের, মারা যায় প্রচুর গবাদি পশু।”
    ৫২৬ হিজরী হতে একটানা ৫৩১ হিজরী পর্যন্ত আন্দালুসের ফসলের ক্ষেতে চলে পঙ্গপালের ধ্বংসযজ্ঞ। এ কারণে ৫২৬ হিজরীতে কর্ডোভায় মারাত্মক দুর্ভিক্ষ ও মহামারী ছড়িয়ে পড়ে এবং প্রচুর মানুষ মৃত্যুবরণ করে। দুর্মূল্যের বাজারে গমের মূল্য মুদপ্রতি১৫ দীনারে পৌঁছায়।

    এরও পূর্বে ৫২৫ হিজরীতে কর্ডোভার শনের বাজার ও পার্শ্ববর্তী বস্ত্রের বাজারে ব্যাপক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ৫৩৫ হিজরীতে ফেয নগরীর বাজারে আরেকটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে এবং একমাত্র তরি-তরকারির বাজার ছাড়া বস্ত্র, জুতা-মােজার বাজারসহ সব বাজার পুড়ে ভস্মীভূত হয়ে যায়। রাতের প্রথম প্রহরে সংঘটিত এ দুর্ঘটনায় প্রচুর সম্পদ ধ্বংস হয়, দারিদ্র্যের শিকার হয় অসংখ্য মানুষ।

    কোন কোন উৎসগ্রন্থে সারাদেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়া এক দুর্ভিক্ষের আলােচনাও এসেছে, যার ফলে চাষযােগ্য ক্ষেত-খামার শুকিয়ে গিয়েছিল, ফল ও ফসল শুকিয়ে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল এবং প্রচুর গবাদি পশু মারা গিয়েছিল।

    একশ্রেণির মানুষ মনে করেন, একই সময়ে পরপর সংঘটিত এ জাতীয় দুর্ঘটনা একান্তই আকস্মিক । কিন্তু আল্লাহর কসম! এগুলাে মােটেই আকস্মিক দুর্ঘটনা নয়; বরং এটাই পবিত্র কোরআনে উল্লিখিত আল্লাহ তাআ'লার ঘােষণার বাস্তব রূপ এবং সুন্নাতুল্লাহ তথা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার চিরন্তন নীতি । আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন,
    وَ لَوۡ اَنَّ اَہۡلَ الۡقُرٰۤی اٰمَنُوۡا وَ اتَّقَوۡا لَفَتَحۡنَا عَلَیۡہِمۡ بَرَکٰتٍ مِّنَ السَّمَآءِ وَ الۡاَرۡضِ وَ لٰکِنۡ کَذَّبُوۡا فَاَخَذۡنٰہُمۡ بِمَا کَانُوۡا یَکۡسِبُوۡنَ ﴿۹۶﴾
    অর্থঃ আর যদি সে সব জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত তবে অবশ্যই আমরা তাদের জন্য আসমান ও যমীনের বরকতসমূহ উন্মুক্ত করে দিতাম, কিন্তু তারা মিথারোপ করেছিল; কাজেই আমারা তাদের কৃতকর্মের জন্য তাদেরকে পাকড়াও করেছি। [সূরা আ'রাফঃ ৯৬]

    অন্য এক আয়াতে নবী নূহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার কাওমকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেছেনঃ
    فَقُلۡتُ اسۡتَغۡفِرُوۡا رَبَّکُمۡ ؕ اِنَّہٗ کَانَ غَفَّارًا ﴿ۙ۱۰﴾ یُّرۡسِلِ السَّمَآءَ عَلَیۡکُمۡ مِّدۡرَارًا ﴿ۙ۱۱﴾ وَّ یُمۡدِدۡکُمۡ بِاَمۡوَالٍ وَّ بَنِیۡنَ وَ یَجۡعَلۡ لَّکُمۡ جَنّٰتٍ وَّ یَجۡعَلۡ لَّکُمۡ اَنۡہٰرًا ﴿ؕ۱۲﴾ مَا لَکُمۡ لَا تَرۡجُوۡنَ لِلّٰہِ وَقَارًا ﴿ۚ۱۳﴾
    অর্থঃ অতঃপর বলেছি, ‘তোমাদের রবের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর, নিশ্চয় তিনি মহাক্ষমাশীল, তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত করবেন, এবং তিনি তোমাদেরকে সমৃদ্ধ করবেন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে এবং তোমাদের জন্য স্থাপন করবেন উদ্যান ও প্রবাহিত করবেন নদী-নালা। তোমাদের কী হল যে, তোমরা আল্লাহ্র শ্রেষ্ঠত্বের পরওয়া করছ না! [সূরা নূহঃ ১০-১৩]

    বােঝা গেল, মুমিনগণ যখনই আল্লাহর পথ থেকে দূরে সরে যায়। কোরআনের বাতলে দেওয়া সুগঠিত পন্থাকে পরিত্যাগ করে, তখনই আলাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা তাদেরকে দুর্ভিক্ষ, অর্থনৈতিক সংকট ইত্যাদি বিপদে আক্রান্ত করেছেন। সুতরাং কখনাে কোন দেশ বা সমাজে অর্থনৈতিক অঙ্গনে যদি নিম্নগামিতা ও পতন পরিলক্ষিত হয়, জনসাধারণের অর্থ-সম্পদ হ্রাস পেতে থাকে, প্রতিমুহূর্ত সম্পদের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রমের পরও তারা জীবনধারণের ন্যূনতম অন্ন বা জীবিকা নির্বাহের সম্মানজনক অর্থের ব্যবস্থা করতে না পারে, তাহলে নিশ্চিতভাবেই জেনে রাখুন, সেই দেশ ও সমাজে নিশ্চয়ই স্রষ্টার সঙ্গে সৃষ্টির সম্পর্কে কোন ভাটার সৃষ্টি হয়েছে, নিশ্চয়ই সেখানে সঠিক মানহাজ ও সরল পথ হতে বিচ্যুতি ঘটেছে। কেননা, তারা যদি তাদের স্রষ্টা ও প্রতিপালকের আনুগত্য করত, তাহলে তিনি অবশ্যই তাদের অন্ন ও রিযক-এ বরকত দান করতেন।

    ... فَلَنۡ تَجِدَ لِسُنَّتِ اللّٰہِ تَبۡدِیۡلًا ۬ۚ وَ لَنۡ تَجِدَ لِسُنَّتِ اللّٰہِ تَحۡوِیۡلًا
    অর্থঃ ... কিন্তু আপনি আল্লাহর পদ্ধতিতে কখনো কোন পরিবর্তন পাবেন না এবং আল্লাহর পদ্ধতির কোন ব্যতিক্রমও লক্ষ্য করবেন না। [সূরা ফাত্বিরঃ ৪৩]
Working...
X