আইয়ুবি-সাম্রাজ্যের সর্বশেষ সুলতান তরান খান নিহত হওয়ার পর মিশরের শাসনক্ষমতার চাবিকাঠি মামলুক শাসনের হস্তগত হয়। এ-শাসনকালের প্রথম পর্যায়ে পালাক্রমে একের পর এক ক্রুসেডারদের পতন হতে থাকে। প্রাচ্যে ক্রুসেডারদের অবসান ঘটেছিলাে ১২৯১ সালে।
যে-সব কারণ ইউরােপকে ইসলামি ভূখণ্ডে ক্রুসেড অভিযান প্রেরণের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছিলাে, এই ক্রুসেড সমূহের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য কি তা নির্ভরযােগ্য তথ্যসূত্রের ভিত্তিতে উল্লেখ করা হলাে:
ক্রুসেড সূচনার ঘটনা প্রবাহঃ
সেলজুকদের গতিরােধে বাইজেন্টাইন সেলজুকগণ এশিয়া মাইনর (আনাতােলিয়া, তুরস্ক) দখল করে নেওয়ার পর যখন বাইজেন্টাইন-সম্রাট দিওগেন উপলব্ধি করতে পারলো যে, তার সাম্রাজ্য হুমকির মুখে পড়েছে, তখন সে (বাইজেন্টাইন-সম্রাট) সপ্তম পােপ গ্রেগােরির কাছে সাহায্য চেয়ে পত্র লিখে পাঠান। পত্রে বাইজেন্টাইন-সম্রাট (দিওগেন) উল্লেখ করে যে, সেলজুকিরা খ্রিস্টান তীর্থযাত্রীদের সাথে খারাপ আচরণ করেছে এবং ইউরােপথেকে-আসা তীর্থযাত্রীদের জন্য জেরুসালেমের নিরাপদ রাস্তা অতিক্রম করাও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বাইজেন্টাইন-সম্রাটের এ-আবেদনে পােপ গ্রেগােরি রােমের সাথে ইস্টার্ন অর্থোডক্স চার্চকে পুনরায় যুক্ত করার সুবর্ণ সুযােগ দেখতে পেলেন।
পােপ গ্রেগােরি সেলজুকিদের গতিরােধ করতে এবং আনাতােলিয়া (এশিয়া মাইনর) থেকে তাদের শক্তি ও ক্ষমতার অপসারণ করতে বাইজেন্টাইনদের সাথে অংশগ্রহণের জন্য ইউরােপ থেকে একটি অভিযান প্রস্তুত করতে মনস্থ করেন। কিন্তু জাগতিক ও আধ্যাত্মিক ক্ষমতার ব্যাপারে পার্থিব ক্ষমতার অনুপ্রবেশ-সংক্রান্ত এ-সব বিষয়ে পােপ ও জার্মান-সম্রাট চতুর্থ হেনরির মধ্যকার দ্বন্দ্ব ও বিতর্ক পােপ। গ্রেগােরিয়াসের লক্ষ্য বাস্তবায়নে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
এই সময়ে সেলজুকিরা একটি বিশাল সামরিক বাহিনী গঠন করে এবং একটি সুদূরপ্রসারী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। তুর্কিস্তানের ‘তুর্ক’ গােত্রের ‘সালজুক' নামক এক ব্যক্তির দিকে ইঙ্গিত করে তাদেরকে ‘সেলজুকি’ বলা হয়। শুরুতে তারা বুখারায়। বসবাস করতাে; অতঃপর তারা নিজেদের কর্তৃত্ব বিস্তৃত করতে বুখারার পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহে যাত্রা করে।
আল্প আরসালান সেই সম্রাট, যিনি আলেপ্পো এবং হিজায দখল করেন এবং রােমে প্রবেশ করে বাইজেন্টাইন-সম্রাট রােমানুস দিওগেনকে ১০৭১ সালে আর্মেনিয়ার ম্যালাজদিগর যুদ্ধে চরমভাবে পরাজিত করেন। আল্প আরসালান এই সম্রাটের কাছ থেকে এশিয়া মাইনরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ছিনিয়ে নেন।
ক্রুসেড যুদ্ধের প্রতি আহ্বানঃ
বাইজেন্টাইন-সম্রাট রােমানুস দিওগেনের পর সম্রাট অ্যালেক্সিয়াস কোমনেনাস পােপ দ্বিতীয় উরবানের কাছে একটি আহ্বান প্রেরণ করেন। এতে তিনি সেলজুকিদের (যারা ইতােমধ্যে সৈন্যদল নিয়ে মারমারা সাগরের তীরে পৌঁছে গেছেন) মােকাবেলা করার জন্য পােপের সাহায্য চান। ইউরােপে এই বলে গুজব ছড়ানাে হয় যে, খ্রিস্টান তীর্থযাত্রীগণ সেলজুকিদের দ্বারা নির্যাতনের সম্মুখীন হচ্ছে। এই গুজব পােপের কাছে সম্রাটের সাহায্যের আবেদন ও আহ্বানকে আরও শক্তিশালী করে তােলে। এই গুজব শুনে পােপ উত্তেজিত হয়ে উঠেন এবং ১০৯০ সালের ২৬ নভেম্বর ফ্রান্সের ক্লেরমন্ট-ফেরান্ড শহরে একটি ভাষণ দেন। ভাষণে পােপ দ্বিতীয় উরবান। ইউরােপের রাজা ও জনগণকে মুসলমানদের নিয়ন্ত্রণ থেকে ফিলিস্তিনের পবিত্র ভূমি ছিনিয়ে আনার আহ্বান করেন।
এভাবে পােপ দ্বিতীয় উরবান বাইজেন্টাইন-সম্রাটের ডাকে সাড়া দিয়ে ইউরােপের রাজাদেরকে উৎসাহিত করতে থাকেন এবং তাদেরকে এই আশায় প্রাচ্যে ক্রুসেড অভিযান প্রেরণের আহ্বান জানান যে, কন্সটান্টিনােপলের গির্জায় পােপের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব ফিরে আসবে। পােপ আশা করেন যে, তার এই আহ্বানের মাধ্যমে কন্সটান্টিনােপলের গির্জাকে রােমের অন্তর্ভুক্ত করা যাবে এবং গির্জার ক্ষমতা, কর্তৃত্ব ও প্রভাব বেড়ে যাবে।
লক্ষ্য এবং উচ্চাভিলাষঃ
পােপের আহ্বান বাস্তবায়নের মধ্যে ইউরােপের রাজা, অভিজাত শ্রেণির লােক ও জমিদারগণ এক সুবর্ণ সুযােগ দেখতে পান। তারা মনে করেন, মুসলমানদের বিরুদ্ধে পােপের এই আহ্বান বাস্তবায়িত হলে তারা প্রাচ্য থেকে মুনাফা এবং প্রচুর সম্পদ হস্তগত করতে পারবেন। তাদের বিশ্বাস, এই ডাকের মাধ্যমে তাদের আলাদা সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করা যাবে এবং একই সময়ে অভ্যন্তরীণ যুদ্ধের কারণে তাদের দেশ যেঅর্থনৈতিক সংকটে পড়েছিলাে, সে-সংকট থেকে মুক্তি পাবে।
এ-সব কারণ ও চালিকাশক্তিই মূলত ক্রুসেডারদেরকে নিয়ন্ত্রণ করেছিলাে। এই ক্রুসেডাররা যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাে ভেনিস, জেনােভা এবং পিসা অঞ্চলের ব্যবসায়ী হিসেবে প্রাচ্যের বাণিজ্যিক আন্দোলনে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করার জন্য। উল্লেখ্য যে, এই অঞ্চলগুলাে ক্রুসেড-সৈন্যদের বহন করার জন্য জাহাজ পাঠায়; এই জাহাজগুলাে বিভিন্ন বন্দরে জড়াে হতাে। অন্য দিকে ধর্মীয় উপাদান, যার স্লোগান ইউরােপে জনগণের আবেগ ও উৎসাহ উস্কে দিয়েছিলাে, সেই উপাদানকে সুবিধাভােগী ও স্বার্থপরেরা নিজেদের বিভিন্ন পার্থিব উচ্চাভিলাষ বাস্তবায়নের ঢাল হিসেবে গ্রহণ করেছিলাে; অর্থাৎ স্বার্থপরেরা জনগণের ধর্মীয়। অনুভূতিকে পুঁজি করে নিজেদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণ করছিলাে।
যে-সব কারণ ইউরােপকে ইসলামি ভূখণ্ডে ক্রুসেড অভিযান প্রেরণের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছিলাে, এই ক্রুসেড সমূহের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য কি তা নির্ভরযােগ্য তথ্যসূত্রের ভিত্তিতে উল্লেখ করা হলাে:
ক্রুসেড সূচনার ঘটনা প্রবাহঃ
সেলজুকদের গতিরােধে বাইজেন্টাইন সেলজুকগণ এশিয়া মাইনর (আনাতােলিয়া, তুরস্ক) দখল করে নেওয়ার পর যখন বাইজেন্টাইন-সম্রাট দিওগেন উপলব্ধি করতে পারলো যে, তার সাম্রাজ্য হুমকির মুখে পড়েছে, তখন সে (বাইজেন্টাইন-সম্রাট) সপ্তম পােপ গ্রেগােরির কাছে সাহায্য চেয়ে পত্র লিখে পাঠান। পত্রে বাইজেন্টাইন-সম্রাট (দিওগেন) উল্লেখ করে যে, সেলজুকিরা খ্রিস্টান তীর্থযাত্রীদের সাথে খারাপ আচরণ করেছে এবং ইউরােপথেকে-আসা তীর্থযাত্রীদের জন্য জেরুসালেমের নিরাপদ রাস্তা অতিক্রম করাও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বাইজেন্টাইন-সম্রাটের এ-আবেদনে পােপ গ্রেগােরি রােমের সাথে ইস্টার্ন অর্থোডক্স চার্চকে পুনরায় যুক্ত করার সুবর্ণ সুযােগ দেখতে পেলেন।
পােপ গ্রেগােরি সেলজুকিদের গতিরােধ করতে এবং আনাতােলিয়া (এশিয়া মাইনর) থেকে তাদের শক্তি ও ক্ষমতার অপসারণ করতে বাইজেন্টাইনদের সাথে অংশগ্রহণের জন্য ইউরােপ থেকে একটি অভিযান প্রস্তুত করতে মনস্থ করেন। কিন্তু জাগতিক ও আধ্যাত্মিক ক্ষমতার ব্যাপারে পার্থিব ক্ষমতার অনুপ্রবেশ-সংক্রান্ত এ-সব বিষয়ে পােপ ও জার্মান-সম্রাট চতুর্থ হেনরির মধ্যকার দ্বন্দ্ব ও বিতর্ক পােপ। গ্রেগােরিয়াসের লক্ষ্য বাস্তবায়নে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
এই সময়ে সেলজুকিরা একটি বিশাল সামরিক বাহিনী গঠন করে এবং একটি সুদূরপ্রসারী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। তুর্কিস্তানের ‘তুর্ক’ গােত্রের ‘সালজুক' নামক এক ব্যক্তির দিকে ইঙ্গিত করে তাদেরকে ‘সেলজুকি’ বলা হয়। শুরুতে তারা বুখারায়। বসবাস করতাে; অতঃপর তারা নিজেদের কর্তৃত্ব বিস্তৃত করতে বুখারার পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহে যাত্রা করে।
আল্প আরসালান সেই সম্রাট, যিনি আলেপ্পো এবং হিজায দখল করেন এবং রােমে প্রবেশ করে বাইজেন্টাইন-সম্রাট রােমানুস দিওগেনকে ১০৭১ সালে আর্মেনিয়ার ম্যালাজদিগর যুদ্ধে চরমভাবে পরাজিত করেন। আল্প আরসালান এই সম্রাটের কাছ থেকে এশিয়া মাইনরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ছিনিয়ে নেন।
ক্রুসেড যুদ্ধের প্রতি আহ্বানঃ
বাইজেন্টাইন-সম্রাট রােমানুস দিওগেনের পর সম্রাট অ্যালেক্সিয়াস কোমনেনাস পােপ দ্বিতীয় উরবানের কাছে একটি আহ্বান প্রেরণ করেন। এতে তিনি সেলজুকিদের (যারা ইতােমধ্যে সৈন্যদল নিয়ে মারমারা সাগরের তীরে পৌঁছে গেছেন) মােকাবেলা করার জন্য পােপের সাহায্য চান। ইউরােপে এই বলে গুজব ছড়ানাে হয় যে, খ্রিস্টান তীর্থযাত্রীগণ সেলজুকিদের দ্বারা নির্যাতনের সম্মুখীন হচ্ছে। এই গুজব পােপের কাছে সম্রাটের সাহায্যের আবেদন ও আহ্বানকে আরও শক্তিশালী করে তােলে। এই গুজব শুনে পােপ উত্তেজিত হয়ে উঠেন এবং ১০৯০ সালের ২৬ নভেম্বর ফ্রান্সের ক্লেরমন্ট-ফেরান্ড শহরে একটি ভাষণ দেন। ভাষণে পােপ দ্বিতীয় উরবান। ইউরােপের রাজা ও জনগণকে মুসলমানদের নিয়ন্ত্রণ থেকে ফিলিস্তিনের পবিত্র ভূমি ছিনিয়ে আনার আহ্বান করেন।
এভাবে পােপ দ্বিতীয় উরবান বাইজেন্টাইন-সম্রাটের ডাকে সাড়া দিয়ে ইউরােপের রাজাদেরকে উৎসাহিত করতে থাকেন এবং তাদেরকে এই আশায় প্রাচ্যে ক্রুসেড অভিযান প্রেরণের আহ্বান জানান যে, কন্সটান্টিনােপলের গির্জায় পােপের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব ফিরে আসবে। পােপ আশা করেন যে, তার এই আহ্বানের মাধ্যমে কন্সটান্টিনােপলের গির্জাকে রােমের অন্তর্ভুক্ত করা যাবে এবং গির্জার ক্ষমতা, কর্তৃত্ব ও প্রভাব বেড়ে যাবে।
লক্ষ্য এবং উচ্চাভিলাষঃ
পােপের আহ্বান বাস্তবায়নের মধ্যে ইউরােপের রাজা, অভিজাত শ্রেণির লােক ও জমিদারগণ এক সুবর্ণ সুযােগ দেখতে পান। তারা মনে করেন, মুসলমানদের বিরুদ্ধে পােপের এই আহ্বান বাস্তবায়িত হলে তারা প্রাচ্য থেকে মুনাফা এবং প্রচুর সম্পদ হস্তগত করতে পারবেন। তাদের বিশ্বাস, এই ডাকের মাধ্যমে তাদের আলাদা সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করা যাবে এবং একই সময়ে অভ্যন্তরীণ যুদ্ধের কারণে তাদের দেশ যেঅর্থনৈতিক সংকটে পড়েছিলাে, সে-সংকট থেকে মুক্তি পাবে।
এ-সব কারণ ও চালিকাশক্তিই মূলত ক্রুসেডারদেরকে নিয়ন্ত্রণ করেছিলাে। এই ক্রুসেডাররা যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাে ভেনিস, জেনােভা এবং পিসা অঞ্চলের ব্যবসায়ী হিসেবে প্রাচ্যের বাণিজ্যিক আন্দোলনে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করার জন্য। উল্লেখ্য যে, এই অঞ্চলগুলাে ক্রুসেড-সৈন্যদের বহন করার জন্য জাহাজ পাঠায়; এই জাহাজগুলাে বিভিন্ন বন্দরে জড়াে হতাে। অন্য দিকে ধর্মীয় উপাদান, যার স্লোগান ইউরােপে জনগণের আবেগ ও উৎসাহ উস্কে দিয়েছিলাে, সেই উপাদানকে সুবিধাভােগী ও স্বার্থপরেরা নিজেদের বিভিন্ন পার্থিব উচ্চাভিলাষ বাস্তবায়নের ঢাল হিসেবে গ্রহণ করেছিলাে; অর্থাৎ স্বার্থপরেরা জনগণের ধর্মীয়। অনুভূতিকে পুঁজি করে নিজেদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণ করছিলাে।