Announcement

Collapse
No announcement yet.

ক্রুসেড!!! (সংক্ষিপ্ত ইতিহাস - পর্ব ২)

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • ক্রুসেড!!! (সংক্ষিপ্ত ইতিহাস - পর্ব ২)

    প্রথম ধাপে ৪৯০ হিজরিতে (১০৯৭ ইং) কন্সটান্টিনােপল শহরে ফিরিঙ্গিদের সমাগম হয়; এই সমাবেশে উপস্থিতির অধিকাংশই ছিলাে ফরাসি (ফিরিঙ্গি ) এবং নর্মর্দি (নর্মান)। পরে এই ‘ফিরিঙ্গি’ নামটি সমস্ত ইউরােপীয়দের ক্ষেত্রে। প্রয়ােগ হতে থাকে। এদের সবাই নিজেদের বুকের ওপর ক্রুশচিহ্ন ধারণ করতাে; ফলে তারা ক্রুসেডার' হিসেবে পরিচিতি পেয়ে যায়।

    প্রথম ক্রুসেড আক্রমণঃ

    পােপের যুদ্ধ ঘােষণার পর একে একে চারটি বিশাল সেনাবাহিনী বায়তুল মাকদিস জয়ের সংকল্প নিয়ে রওনা হয়। পাদরি পিটারের অধীনে লাখের মতাে খ্রিস্টানের এক বিশাল বাহিনী কন্সটান্টিনােপলের উদ্দেশে রওনা হয়। আরও যে-সব বাহিনী ছিলাে, তন্মধ্যে প্রথম বাহিনী ছিলাে ফরাসিদের। এই বাহিনীর নেতা ছিলেন গডফ্রে ডিউক চিলবিন। তার সঙ্গে ফ্রান্স এবং অষ্ট্রিয়ার বিভিন্ন সামরিক কর্মকর্তা ছিলেন। দ্বিতীয় বাহিনী ফ্রান্স বাজফিলিপের ভাই হিউ অপ দরমার নেতৃত্বে ছিলাে। তৃতীয় বাহিনী স্বয়ং রােমে প্রস্তুত হয়েছিলাে এবং তাদের নেতা ছিলেন বুহিম। তিনি ইতালির ‘তারানাত’ নামক স্থানের সরদার ছিলেন। এই তিন বাহিনীর সমগ্র সেন্যসংখ্যা ছিলাে প্রায় সাত লাখ। এই বিশাল বাহিনী কুসতুনতুনিয়া প্রণালী অতিক্রম করে এশিয়া মাইনরে প্রবেশ করে। সুলতান তাদের মােকাবেলা করতে ব্যর্থ হন। কারণ, এই সময়ে মুসলিম-জগত অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জর্জরিত ছিলাে।।
    বাগদাদের সিংহাসন নিয়ে সেলজুকি সুলতান মালিক শাহের পুত্রদের এবং সক ও আলেপ্পোর আধিপত্য নিয়ে মালিক শাহের ভ্রাতুস্পুত্র রিজওয়ান ও দুদাকের মাধ্যে বিবাদ চলছিলাে। স্পেনের আরবরা পরস্পর গৃহযুদ্ধ ও প্রতিবেশী খ্রিস্টানদের সঙ্গে যুদ্ধে' লিপ্ত ছিলেন। মিশরের খলিফা ছিলেন হীনবল এবং বিলাস-স্রোতে ভাসমান। ফলে এশিয়া মাইনর ও সিরিয়ার মুসলিম জনসাধারণ এই যুদ্ধে কোনাে সাহায্য পায়নি।

    ঐতিহাসিকদের বর্ণনানুযায়ী ৪৮৯ হিজরি (১০৯৬ ইং) সালের আগস্ট মাসে ক্রুসেড-যােদ্ধারা বিপুল সংখ্যায় যাত্রা করে এবং তাদের অগ্রভাগে ছিলাে বটুস ধর্মযাজক। তাদের এই দলের মধ্যে কোনাে নিয়ম-শৃঙ্খলা না-থাকায় পথে তারা লুটপাট আরম্ভ করে। ফলে তাদের বুলগেরীয় ও হাঙ্গেরীয় লােকদের সাথে বিভিন্ন যুদ্ধে লিপ্ত হতে হয়। যুদ্ধে তাদের অধিকাংশ সৈন্য নিহত হয় এবং অবিশষ্ট সৈন্য এশিয়া মাইনরে প্রবেশ করলে সুলতান আরসালানের সৈন্যরা তাদেরকে খতম করে দেয়। কিন্তু ক্রুসেডারদের সংখ্যাধিক্যের কারণে তারা আর সফল হতে পারেনি।
    বিজয়ী খ্রিস্টানরা অগ্রসর হতে হতে আন্তাকিয়া পৌঁছে যায়। নয় মাস পরে ইন্তাকিয়াও চলে যায় তাদের দখলে। সেখানকার সমস্ত মুসলমানকে তারা হত্যা করে। মুসলমানদের ওপর ক্রুসেডারদের নির্যাতন ছিলাে বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে লজ্জাজনক অধ্যায়গুলাের একটি। শিশু, যুবক, বৃদ্ধ—কেউ তাদের হাত থেকে বাঁচতে পারলাে না। প্রায় এক লাখ মুসলমান নিহত হয়। আন্তাকিয়ার পর বিজয়ী বাহিনী সিরিয়ার কয়েকটি শহর দখল করতে করতে হিমস পৌঁছে।

    ১০৯৭ সালে গডফ্রের নেতৃত্বে পরিচালিত সাত লক্ষ খ্রিস্টান ধর্মযােদ্ধা কন্সটান্টিনপােলের পথে এশিয়া মাইনর আক্রমণ করে। ইকনিয়ামের সেলজুকি সুলতান কিলিজ আরসালান দাউদ খ্রিস্টান-বাহিনীর গতিরােধ করতে গিয়ে পরাজিত হন। খ্রিস্টানরা পথের মাঝে যে-সমস্ত নগর ও গ্রাম পেয়েছে, সেগুলাের সব পুড়িয়ে। ফেলে ও অধিবাসীদের হত্যা করে। যেহেতু যুদ্ধ, তাই হত্যাগুলাে হয়েছে নির্দয়ভাবেই। এরপর খ্রিস্টানরা আন্তাকিয়া নগর অবরােধ করে।

    খ্রিস্টান-ধর্মযাজকরা প্রচার করেছিলাে যে, যারা মুসলমানের মাংস ভক্ষণ করবে, তারা নিস্পাপ অবস্থায় স্বর্গে আরােহণ করতে পারবে। খ্রিস্টান-দলপতি বােহিমন্ড এন্টিয়কের রাজা ঘােষিত হন।

    ১০৯৯ সালে ফরাসি কাউন্ট রেমন্ডের নেতৃত্বে খ্রিস্টান যােদ্ধারা সিরিয়ার মেরাতুন্নোমান নগর ভস্মীভূত করে এবং এর এক লাখ অধিবাসীকে হত্যা করে। খ্রিস্টান ধর্মযােদ্ধারা শামের সুমদ্র-উপকূলবর্তী হাইফা জাফফা, কাইসারিইয়া, আক্কা, তারসুস প্রভৃতি নগর দখলপূর্বক নগরসমূহের মুসলমান ও ইহুদি অধিবাসীদেরকে হত্যা করে। অন্যদিকে জেরুসালেমের রাজা গডফ্রের মৃত্যু হয়। ১১০০ সালে তার ভাই বল্ডউইন রাজপদে অধিষ্ঠিত হয়।
    এন্টিয়ক-রাজা বােহিমন্ড সেলজুক-সেনাপতি গােমিস্তিগিন কতৃক পরাজিত ও বন্দি হয়। ক্রুসেডার দলপতি রেমন্ড সিরিয়ার ত্রিপােলি বন্দর অবরােধ করে। অন্যদিকে বিভিন্ন দলপতির নেতৃত্বে পরিচালিত চার লক্ষাধিক খ্রিস্টান যােদ্ধা এশিয়া মাইনরের আনাতােলিয়া প্রদেশে খাদ্যাভাব, মহামারী ও তুর্কি সৈন্যদের হাতে প্রাণ হারায়। এরপর তারা জেরুসালেমের অধিকর্তা হয়ে ওঠে। অন্যান্য লাতিন রাজ্যগুলাের মতাে এখানেও তাদের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।

    দ্বিতীয় ক্রুসেড আক্রমণঃ

    মসুলের স্বাধীন আমির আতাবুক ইমাদুদ্দিন জেঙ্গি ক্রুসেডার ডিউক জসেলিনকে পরাজিত করে সিরিয়ার এডেসা দখল করেন। জার্মান-সম্রাট তৃতীয় কনরােড ও ফ্রান্স-রাজ সপ্তম লুইয়ের নেতৃত্বে নয় লক্ষ খ্রিস্টান ক্রুসেডার সিরিয়া আক্রমণ করে। ফরাসি রানি ইলিয়ানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে হাজার হজার নারীও এই যুদ্ধে যােগ দেন। ১৯৪৭ সালে এই বিরাট বাহিনী সিরিয়ায় উপস্থিত হলে দ্বিতীয় ক্রুসেড আরম্ভ হয়। খ্রিস্টান ক্রুসেডাররা আন্তাকিয়া নগর পুনঃদখল করে।
    আলেপ্পোর আমির নুরুদ্দিন জেঙ্গি ও তার ভাই মসুলপতি ইমাদুদ্দিন জেঙ্গি ছাড়া অন্য কোনাে মুসলিম রাজশক্তি ওই দুর্দিনে সিরিয়াবাসীর সাহায্যে আসেনি। দামেশক নগরের কাছে ক্রুসেডাররা যেনগি ভাতৃদ্বয়ের কাছে পরাজিত হয়। আলেপ্পোরাজ নুরুদ্দিন জেঙ্গির সাথে এডেসার ডিউক দ্বিতীয় জোসেলিনের বিবাদ শুরু হয়। নুরুদ্দিন জোসেলিনকে বন্দি করেন। ১১৫১-১১৫৩ সালে জেরুজালেম-রাজা তৃতীয় বল্ডউইন মিশরীয় বাহিনীকে পরাজিত করে ভূমধ্যসাগরের উপকূলবর্তী আস্কালন বন্দর দখল করে।

    দ্বিতীয় ক্রুসেড মুসলমানদের দৃঢ়তা, বিশ্বাস ও জাগরণের কারণে ব্যর্থ হয়েছে। স্যার কনরাড ফ্রান্সে ফিরে আসে। তারপর ফ্রান্সের রাজা সপ্তম লুই তার অনুসরণ করে।

  • #2
    ধারাবাহিকভাবে চলমান থাকুক............এই শুভ কামনা।
    গোপনে আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে বেঁচে থাকার মধ্যেই রয়েছে প্রকৃত সফলতা ৷

    Comment

    Working...
    X