ইদাদ
একটি ভুলে যাওয়া ফরজ
--------------------------------------
শাইখ তামিম আল-আদনানী হাফিজাহুল্লাহু
শাইখ তামিম আল-আদনানী হাফিজাহুল্লাহু
إن الحمد لله - و الصلاة و السلام على رسول الله - أما بعد
উসমানী খেলাফতের পতনের পর মুসলিম বিশ্বে যে সব ঈমান বিধ্বংসী ফিতনা ছড়িয়ে পরে তার মধ্যে অন্যতম হল দ্বীনের খণ্ডিত চর্চা। দ্বীনের খণ্ডিত চর্চা মানে আকীদাহ ও আমলে আংশিক দ্বীন পালন করা এবং এই আংশিক দ্বীনকেই পরিপূর্ণ দ্বীন মনে করা। অথচ খণ্ডিত দ্বীন আসলে কোন দ্বীনই নয়। দ্বীনের কোন অংশকে ছাঁটাই করে ফেললে তা আর দ্বীন থাকে না। ইসলামের কিছু আকীদাহ ও কিছু আহকাম বাদ দিয়ে দিলে সেই ইসলাম আর ইসলাম থাকে না। ইসলামেপ্রবেশ করতে হলে পরিপূর্ণ ভাবে প্রবেশ করতে হবে। কেউ যদি ইসলামের কিছু আকীদাহ ও আহকাম গ্রহণ করে আর কিছু সজ্ঞানে বাদ দিয়ে দেয় তবে সে আর যাই হউক মুসলিম নয়।আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এরশাদ করেন:
أَفَتُؤْمِنُونَ بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُونَ بِبَعْضٍ فَمَا جَزَاء مَن يَفْعَلُ ذَلِكَ مِنكُمْ إِلاَّ خِزْيٌ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يُرَدُّونَ إِلَى أَشَدِّ الْعَذَابِ
'তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশকে বিশ্বাস কর এবং কিছু অংশকে প্রত্যাখ্যান কর? সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এরূপ করে তাদের একমাত্র প্রতিফল পার্থিব জীবনে লাঞ্ছনা এবং কিয়ামতের দিন তারা কঠোরতম শাস্তির দিকে নিক্ষিপ্ত হবে।'[সূরা বাকারা (২):৮৫]
খেলাফতের পতনের শুরুর দিনগুলোতে দ্বীনের খণ্ডিত চর্চার এই ফিতনা কেবল আমলের ময়দানেই সীমাবদ্ধ ছিল অর্থাৎ পরিপূর্ণ দ্বীনের উপর তারা আমল করতে না পারলেও আকীদাহ ও বিশ্বাসে তারা পরিপূর্ণ দ্বীন লালন করতো। কিন্তু সময় যতই গড়িয়েছে মুসলিমরা আমলের ময়দান থেকে তো বটেই আকীদাহ ও বিশ্বাস থেকেও পরিপূর্ণ ইসলামকে হারিয়ে ফেলেছে। আকীদাহ ও আমল উভয় ক্ষেত্রেই তারা খণ্ডিত ইসলামের অনুসারী হয়ে পড়েছে। অসংখ্য ফরজ তো বটেই তাওহীদের মত আকীদাও মুসলিমরা ভুলে গেছে। উম্মাহর আওমরা তো বটেই আলেমরা পর্যন্ত খণ্ডিত দ্বীন চর্চার এই ঈমান বিধ্বংসী ফিতনার শিকার হয়েছে। ফলে ওয়াজের ময়দান, মসজিদের মিম্বর, দারুল ইফতার ফতোয়া, লেখকদের রচনাবলী, তালীম-তা'আল্লুম এর দরজা থেকেও আজ খণ্ডিত ইসলাম প্রচারিত হচ্ছে। তাওহিদুল হাকিমিয়াহ, ওয়ালা-বারা, খিলাফা প্রতিষ্ঠা, ইসলামি অর্থব্যবস্থা, ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থা, ইসলামি দণ্ডবিধি, জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ ইত্যাদির মত দ্বীনের অবিচ্ছেদ্য বিষয়গুলোর আলোচনাও আজ কোথাও পাওয়া যায় না। তাই কুফুরী রাষ্ট্রব্যবস্থায় বসবাসরত মুসলিমরা আজ ইসলামকে অন্যান্য ধর্মের মত ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনে আচরিত কিছু আনুষ্ঠানিকতা ভেবে বসে আছে (নাউযু বিল্লাহি মিন যালিক)। উম্মাহর ভুলে যাওয়া ফরজগুলোর মধ্যে অন্যতম হল ইদাদ। সালাত, সাওম, যাকাতের মত এটিও একটি ফরজ। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় দ্বীনের খণ্ডিত চর্চার ঈমান বিধ্বংসী ফিতনা আমাদেরকে এতটাই ঘিরে ধরেছে যে, উম্মাহর লক্ষ লক্ষ নয় কোটি কোটি সন্তান এমন পাওয়া যাবে যারা এই ফরজটির নামও শোনেনি (নাউযু বিল্লাহি মিন যালিক)।'তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশকে বিশ্বাস কর এবং কিছু অংশকে প্রত্যাখ্যান কর? সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এরূপ করে তাদের একমাত্র প্রতিফল পার্থিব জীবনে লাঞ্ছনা এবং কিয়ামতের দিন তারা কঠোরতম শাস্তির দিকে নিক্ষিপ্ত হবে।'[সূরা বাকারা (২):৮৫]
প্রিয় ভাই ও বোন!
আপনি কি জানেন ইদাদ কি?
আপনি কি জানেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইদাদকে প্রতিটি মুসলিমের উপর ফরজ করেছেন?
আপনি কি জানেন কীভাবে আপনি এই ফরজ আদায় করবেন?
প্রিয় উম্মাহ!
যতদিন খিলাফত ঠিকে ছিল ততদিন ইদাদের ফরজের কথা সবার কাছে স্পষ্ট ছিল। কিন্তু খিলাফতের পতনের পর যখন কুফুরী গণতন্ত্রের শাসন ব্যবস্থার আযাব মুসলিমদের উপর চেঁপে বসে তখন ইদাদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত শুরু হয়। দাজ্জালী মিডিয়া ইদাদ ও জিহাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অপপ্রচার শুরু করে। ইদাদ ও জিহাদকে তারা জঙ্গিবাদ বলে ঘোষণা করে। জাতিসংঘ কেন্দ্রিক কুফুরী বিশ্বব্যবস্থা ইদাদ ও জিহাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা করে। বিশ্বের যেখানেই ইদাদ ও জিহাদের উত্থান ঘঠে তারা যেখানেই হামলা করে ইদাদ ও জিহাদের উত্থানকে রুখে দেওয়ার চেষ্টা করে। দরবারী মাওলানা এবং শাইখরা দ্বীনের নানান অপব্যাখ্যা করে মুসলিম উম্মাহর মন-মানষ থেকে ইদাদের ফরজকে ভুলিয়ে দেয়। তারা প্রচার করে ইদাদ কেবল শাসকদের কাজ জনগণের কাজ নয়। জনগণের কাজ হল শাসকদের আনুগত্য করা। কুফুরী বিশ্বব্যবস্থার স্থায়ী এজেন্ট মুরতাদ-মুনাফিক শাসকরা সব ধরণের ইদাদকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে কাফেরদের নির্দেশনা অনুযায়ী তারা দেশের জনগণকে সামরিক ও বেসামরিক দুইটি ভাগে ভাগ করে। সামরিক ট্রেনিং নেয়া, রণকৌশল আয়ত্ব করা, অস্ত্র চালানো শিখা ইত্যাদির অধিকার কেবল সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেয়। এই বিভাজনের মাধ্যমে মুরতাদ শাসক গোষ্ঠী সাধারণ মুসলিমদের জন্য ইদাদ করা অবৈধ ও বেআইনি সাব্যস্ত করে। এভাবে কুফুরী বিশ্বব্যবস্থা মুনাফিক, শাসক গোষ্ঠী ও দরবারী শাইখদের সম্মিলিত চক্রান্তে আজ মুসলিম উম্মাহ ইদাদের ফরজের কথা ভুলে গেছে। ইদাদের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ ভুলে যাওয়ার পরিণতিও হয়েছে বড়ই ভয়াবহ। আজ কোন মুসলিম ভূখণ্ড আক্রান্ত হলে, দ্বীন ইসলামের বিরুদ্ধে কোন চক্রান্ত হলে বিশাল মুসলিম জনগোষ্ঠীর কিছুই করার থাকে না। এদিকে নামধারী মুসলিম শাসকরা এসব ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেয় না বরং কাফেরদের জবর-দখলকৃত মুসলিম ভূখণ্ড উদ্ধারের জন্য যদি সাধারণ মুসলিমরা জিহাদি কর্মকাণ্ড শুরু করতে চায় সর্বপ্রথম এই মুরতাদ শাসক গোষ্ঠী তাদেরকে বন্দুকের নলের মুখে থামিয়ে দেয়। কারণ এসব নামধারী মুসলিম শাসকরা মূলত কাফেরদের স্থায়ী এজেন্ট। মুসলিম ভূখণ্ডগুলোতে কুফুরী শাসন জারি রাখা এবং জিহাদ ও মুজাহিদদের দমন করাই তাদের দায়িত্ব। ইকটু ভেবে দেখুন তো আজ কেন আপনি জিহাদের ফরজ আদায় করতে পারছেন না? আরাকান পুনরুদ্ধার করে রোহিঙ্গা ভাই-বোনদের মগদের নির্যাতন থেকে বাঁচানোর জন্য আপনি কেন জিহাদ করতে পারছেন না? আপনি কাশ্মীরে গিয়ে কেন জিহাদ করতে পারছেন না? আপনি কেন আফগান জিহাদে শরীক হতে পারছেন না? প্রথম কিবলা বাইতুল মাকদিস উদ্ধারের জন্য কেন মুসলিমরা কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারছে না? সব প্রশ্নের একটিই জবাব মুসলিম নামধারী এসব মুরতাদ শাসক গোষ্ঠী উম্মাহর হাত-পা বেঁধে রেখেছে। তাই বিশ্বের আড়াইশ কোটির এই বিশাল এই মুসলিম জনগোষ্ঠী আজ কাফেরদের গোলামে পরিণত হয়েছে। যেখানেই মুসলিমরা জিহাদ করার সুযোগ পেয়েছে সেখানেই তারা কাফেরদের শায়েস্তা করেছে। আফগানের মুসলিমরা গোটা কাফের বিশ্বের দম্ভকে পায়ের নিচে পিসে ফেলেছে। মাত্র ষাট হাজার আরব-আফগান মুজাহিদ আমেরিকার নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোটকে লাঞ্ছনাদায়ক পরাজয়ের সম্মুখীন করেছে। এখন মুসলিমরা যদি এসব মুরতাদ শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে চায়, তাদেরকে সমূলে উৎখাত করে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর বিধান কায়েম করতে চায় তাও পারবে না। কারণ তাদের শক্তি নেই। তাহলে এই সমস্যার সমাধান কি?
প্রিয় উম্মাহ!
এই সমস্যার একমাত্র সমাধান হল উম্মাহর ভুলে যাওয়া ফরজ ইদাদ। ইদাদের ফরজ তরক করার কারণেই আমাদের উপর নেমে এসেছে এই প্রলয়ংকরী আযাব। আজ ইদাদের অভাবেই যুগ যুগ ধরে মুরতাদ শাসক গোষ্ঠী আমাদের উপর ছড়ি ঘোরাচ্ছে। আমাদের জিহাদ ও শাহাদাতের নিয়ামত থেকে বঞ্চিত করেছে। তাই উম্মাহর পুনরুত্থানের পথে অন্যতম প্রাথমিক পদক্ষেপ হল ইদাদ।
আলহামদুলিল্লাহ! শতাব্দিব্যাপী পরাজয় ও লাঞ্ছনার পর আজ উম্মাহর সন্তানরা আবার জেগে উঠেছে। তারা জাতিসংঘ কেন্দ্রিক কুফরী বিশ্বব্যবস্থা New World Order (NWO) এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে। দাওয়াহ, ইদাদ ও জিহাদের নববী মানহাজ অনুসরণ করে তারা খেলাফত প্রতিষ্ঠার পথে যাত্রা শুরু করেছে। তাই একবিংশ শতাব্দিতে উম্মাহর পুনরুত্থানের এই যুগে ইদাদ সম্পর্কে জানা প্রতিটি মুসলিমের জন্য একান্ত জরুরী।
ইনশাআল্লাহ! এই সিরিজে আমরা ইদাদ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার প্রায়াস পাব। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে আমল করার তাওফিক দিন। আমীন ইয়া রাব্বাল আলামিন।
VIDEO LINK
Comment